Friday, July 15, 2011

কান্নাভরা স্মৃতিচারণা by প্রণব বল ও শারফুদ্দীন কাশ্মীর

ঝোরে কাঁদছে জেসমিন আক্তার। মাইক্রোফোনের সামনে কান্না চাপতে চোখ ও মুখে হাত চাপা দেয় সে। কান্নার শব্দ আসতে থাকে মঞ্চ ও সামনের দিক থেকেও। নিঃশব্দেও চোখ থেকে পানি পড়তে থাকে অনেকের। জেসমিন মিরসরাইয়ের আবুতোরাব বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী। মিরসরাইয়ে গত সোমবার মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্রদের স্মরণে গতকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত শোকসভায় স্মৃতিচারণা করছিল সে। কিন্তু বারবার কান্না থামিয়ে দেয় তাকে। স্মৃতিচারণা করতে আসা অন্য শিক্ষার্থীরাও কেঁদেছে। কেঁদেছেন শিক্ষক-অভিভাবকেরা। স্মৃতিচারণা শুনে কেঁদেছেন সমবেত মানুষেরা।

এই শোকসভা হয় আবুতোরাব বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে। নিহত শিক্ষার্থীদের স্মরণে উপজেলা পরিষদের তিন দিনের শোক কর্মসূচির শেষ দিন ছিল গতকাল।
সকালে প্রথমে হয় শোকযাত্রা। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সকাল ১০টায় স্কুল থেকে শুরু হয় শোকযাত্রা। আবুতোরাব ও আশপাশের এলাকা প্রদক্ষিণ করে এটি স্কুলমাঠে গিয়ে শোকসভায় মিলিত হয়। গতকালও ওই বিদ্যালয়ে ক্লাস হয়নি। ওই দুর্ঘটনায় সরকারি হিসাবে নিহত ৩৯ জনের মধ্যে ৩৭ জনই শিক্ষার্থী। এদের বেশির ভাগই আবুতোরাব উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র।
বেলা সাড়ে ১১টায় শুরু হয় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আয়োজিত শোকসভা। এলাকার মতোই শোকের আবহ মাঠজুড়ে। কালো ব্যানারে শোকবার্তা। উপস্থিত সবার বুকে কালো ব্যাজ। মুখে শোকের গভীর ছায়া, যা কান্না হয়ে বেরিয়েছে স্মৃতিচারণার সময়।
শোকসভার শুরুতে ন্যাশনাল ব্যাংকের দেওয়া নিহত ছাত্রদের পরিবারপ্রতি ২০ হাজার টাকা অনুদানের চেক প্রদান করা হয়। এই চেক হাতে নিয়ে নিহত সাইদুলের মা জাহানারা বেগম বলেন, ‘আমার টাকার দরকার নেই। আমার সাইদুলকে এনে দাও।’
শোকসভায় নিহত সহপাঠীদের স্মৃতিচারণার সময় জেসমিনের মতো নুসরাত জাহান, তানভির হোসেন, সাইদুর রহমান, সৌরভ হোসেনরা কেঁদেছে। কেঁদেছে অন্য সহপাঠীরাও। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তাদের সামলানোর চেষ্টা করে অন্যরা। কালো ব্যাজ ধারণ করে একসময় মঞ্চে ওঠে ওই দুর্ঘটনায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া কয়েকজন ছাত্র।
শোকসভার সভাপতি আবুতোরাব উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাফর সাদেকও কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রাণের যেসব শিক্ষার্থী হারিয়েছি, তাদের আমরা কোনো দিন ভুলব না। তবে এই শোক আমাদের কাটিয়ে উঠতে হবে। সবাইকে আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানমুখী হতে হবে।’ তিনি অভিভাবকদেরও সহযোগিতা কামনা করেন। দুর্ঘটনার পর আর্থিক ও মানসিক সহযোগিতা দেওয়ায় তিনি সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ধন্যবাদ জানান।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ লকিয়ত উল্লাহ বলেন, ‘দুর্ঘটনায় এত প্রাণ চলে যাওয়া কেউ মেনে নিতে পারে না। আমরা নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।’
বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোমিনুল হকের পরিচালনায় শোকসভায় আরও বক্তব্য দেন সহকারী প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর কবির, শিক্ষক সমিতির সীতাকুণ্ড শাখার সভাপতি হাবিবুল্লাহ, চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সাধারণ সম্পাদক জানে আলম, প্রফেসর কামাল উদ্দিন চৌধুরী কলেজের অধ্যক্ষ মো. নুরুল আবছার, মিরসরাই পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি উত্তম শর্মা, স্কুল পরিচালনা পরিষদের সদস্য সুভাষ নাথ, মফিজুল ইসলাম, গোলাম সরওয়ার, শিক্ষক সমীরণ বড়ুয়া, রবিউল হোসেন নিজামী প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, আমরা যেসব ছাত্রকে হারিয়েছি, তারা ভবিষ্যতে দেশকে নেতৃত্ব দিত। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য। আমরা আর এমন মৃত্যু চাই না। বক্তারা শিক্ষার্থীদের সাবধানতার সঙ্গে চলাফেরা করার পরামর্শ দেন।
সভার শুরুতে নিহত ছাত্রদের স্মরণে দোয়া মাহফিল ও নিহত অন্য ধর্মাবলম্বীদের জন্য প্রার্থনা এবং শেষে মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। বেলা দুইটার দিকে শেষ হয় শোকসভা।
সর্বত্র শোক: মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়া সড়ক দিয়ে ঢুকতেই দুই পাশে কালো ব্যানার। দুর্ঘটনাস্থল আবুতোরাবের সৈদালী এলাকার ওই ডোবায়ও কালো ব্যানারে শোকবার্তা। এর কিছুদূরে আবুতোরাব বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়। বিদ্যালয়ে কালো ব্যানার, শিক্ষার্থীদের সাদা পোশাকের সঙ্গে কালো ব্যাজ। মাইকে ভেসে আসে শোক কথামালা।
এলাকার দোকান, স্কুল-কলেজ, খেলার মাঠ, মিরসরাইয়ের প্রতিটি বাজার, উপজেলা পরিষদ—সর্বত্র উড়ছে কালো পতাকা। নিহত ছাত্রদের বাড়িতে বাড়িতে মাতম।
শোকাবহ পরিবেশে গতকাল নিহত ছাত্রদের কুলখানি ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়।
সরকারটোলা এলাকায় নিহত সূর্য নাথের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার শ্রাদ্ধানুষ্ঠান চলছে। কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন তার মা ডলি ও বাবা খোকন নাথ। ওই দুর্ঘটনা থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়া সূর্যর বড় ভাই দশম শ্রেণীর ছাত্র শুভ নাথ বসে ছিল বিমর্ষ মনে।
আবুতোরাব উচ্চবিদ্যালয়ে যোগাযোগমন্ত্রী: বেলা দুইটার দিকে আবুতোরাব স্কুলে যান যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়ে বসে শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর সঙ্গে দুর্ঘটনার বিষয়ে কথা বলেন। তিনি এ সময় সাংবাদিকদের বলেন, দুর্ঘটনা রোধে যানবাহন চালানোর সময় চালকদের মুঠোফোন ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হবে। এ নিয়ে বুধবার একটি আইন প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। শিগগির এটি মন্ত্রিপরিষদে উত্থাপন করা হবে।
মন্ত্রী আরও বলেন, লাইসেন্সবিহীন চালককে যে মালিক গাড়ি চালাতে দেবেন, সেই মালিকের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে নিহত ছাত্রদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা ও আহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি আশ্বাস দেন, নিহত শিক্ষার্থীদের ভাইবোনদের কেউ উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে চাইলে মন্ত্রীর নিজস্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিনা খরচে তাদের পড়ার ব্যবস্থা করবেন।

নূহার জন্য শোকগাথা by ওমর ফারুক

'মা, তুমি কক্সবাজার চলে এসেছ। একবার চোখ মেলে তাকিয়ে দেখো তোমার প্রিয় কক্সবাজার। আমার কথা যেন বুঝতে পারছিল ও। গুলিতে তার ডান চোখটা বেরিয়ে গিয়েছিল। আমার চিৎকার শুনে সে বাঁ চোখ দিয়ে তাকাল। তখন যেন সারা দুনিয়াকে দেখে নিয়েছিল ওই একটি চোখেই, এক তাকানোতেই। শেষ পর্যন্ত চোখ খোলা রেখেই আমাদের সবাইকে বিদায় জানিয়ে চলে যায় আমার প্রিয় সন্তান। আমার হৃদয়ের টুকরো।' বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো কম্পানির কর্মকর্তা মো. জহিরুল হক তরুণ।
মেয়ের বায়না ছিল কক্সবাজার বেড়াতে যাবে। গত ৩০ জুন কক্সবাজারের চকরিয়া এলাকা দিয়ে মাইক্রোবাসে যাচ্ছিলেন তাঁরা। হঠাৎ ডাকাতরা গুলি চালায়। একটি গুলি তরুণের বাঁহাত ভেদ করে তাঁর কোলে ঘুমিয়ে থাকা নুহার মাথায় আঘাত করে।
'নূহা প্রায় দিনই আমার বুকের ওপর ঘুমাত। মেয়ে সামান্য ব্যথা পেলেও সে ব্যথা যেন লাগত আমার গায়ে। আর সেই সন্তানের মৃত্যু হলো আমার কোলেই।' কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলেন জহিরুল হক তরুণ। 'ক্ষুধার যন্ত্রণা সহ্য করে আমার কোলে ঘুমিয়ে গিয়েছিল ও। কিন্তু আর জেগে দেখতে পেল না পৃথিবীর আলো। ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি বাবার কোলে শিশুরা নিরাপদ। কিন্তু আমার কোলে থাকা অবস্থায় আমার মেয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। আমি কেন পারলাম না আমার প্রিয় সন্তানকে বাঁচাতে?' তরুণের কণ্ঠে হাহাকার।
নূহার মা মুনমুন ওরফে মুনও শোকে পাথর। তিনি কী বলবেন, কোনো ভাষাই যেন খুঁজে পাচ্ছিলেন না। শুধু বললেন, 'কোনো দিন গুলির শব্দ শুনিনি। সে দিন শুনলাম। আর সেই গুলিই কেড়ে নিল আমার সন্তানকে। এই কষ্ট কিভাবে সহ্য করব আমি।'
যেভাবে ঘটনা : তরুণ কালের কণ্ঠকে জানান, ৩০ জুন একটি মাইক্রোবাস ভাড়া নিয়ে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি, তাঁর স্ত্রী মুনমুন, মেয়ে নূহা, বন্ধু রিপন, সহকর্মী জাফর ও রিপনের ছোট ভাই সাজ্জাদ ও আজাদ। বিকেল ৩টার দিকে তাঁরা ঢাকা থেকে রওনা দেন। ওই দিন ছিল প্রচণ্ড বৃষ্টি। রাস্তার অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে গাড়ি খুব দ্রুত যেতেও পারছিল না। পথে মিরসরাইসহ কয়েকটি স্থানে সড়ক দুর্ঘটনার কারণে যেতে আরো দেরি হয়। রাত হয়ে যাওয়ায় ও বৃষ্টির কারণে রাস্তার পাশের হোটেলগুলোও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। যে কারণে সবাই ক্ষুধার্তও ছিলেন সে দিন। চকরিয়ায় গিয়ে ভালো হোটেলে খাওয়া-দাওয়া করবেন_এ চিন্তায় চালক জাকিরকে দ্রুত চালাতেও তাড়া দিচ্ছিলেন তরুণ। চট্টগ্রাম পেরোতে পেরোতে রাত দেড়টা বেজে যায়। পটিয়ায় গিয়ে মাইক্রোবাসে গ্যাস নেওয়ার সময় নূহা পেছনে তার মায়ের কোল থেকে গিয়ে বাবার কোলে ওঠে। তরুণ তাকে নিয়ে চালকের পাশের সিটে বসেন। কিছু দূর গিয়ে দেখতে পান একটি ট্রাক অ্যাক্সিডেন্ট করেছে। যে কারণে সেখানে অনেক গাড়ি সারিতে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় অনেকটা সময়। ক্ষুধার কথা বলে বাবার কোলেই একপর্যায়ে ঘুমিয়ে যায় নূহা।
সেই মুহূর্তটি : ডুলাহাজারার পর খুটাখালী মেদাকচ্ছপিয়া এলাকায় মোড় নেওয়ার সময় দেখা যায় রাস্তার ওপর গাছের ডাল ফেলে রাখা হয়েছে। তখন রাত ৩টার মতো বাজে। তরুণ সমূহ বিপদের আশঙ্কার কথা জানিয়ে চালককে বললেন, ডালটি পেরিয়ে দ্রুত চলে যাওয়ার জন্য। চালক খানিকটা ধীর গতিতে ডাল পেরিয়েও যায়। ঠিক ওই সময় বিকট একটি শব্দ হয়। ভেঙে যায় গাড়ির গ্লাস। সবাই বুঝতে পারেন গাড়িতে গুলি করা হয়েছে। তীব্র ব্যথা অনুভব করে তরুণ বললেন, তাঁর বাঁহাতে গুলি লেগেছে। ঠিক তখন তাঁর বন্ধু রিপন চিৎকার করে উঠে বলেন, তোমার মেয়ের দিকে তাকাও। তরুণ দেখেন, নূহা কোলেই ঢলে পড়েছে। মাথা থেকে রক্ত ঝরছে। বুঝতে বাকি রইল না গুলি তাঁর হাত ভেদ করে মেয়ের মাথায় আঘাত করেছে। দ্রুত কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সেখানেই নূহাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
তরুণ বলেন, 'আমি কী মনে করে মেয়ের বুকে চাপ দিয়েছিলাম। দেখলাম সে শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছে। হাসপাতালে যখন চিকিৎসা দিচ্ছিল ডাক্তার তখন আমি চিৎকার করে বললাম, 'মারে তুমি কক্সবাজার চলে এসেছো। একবার চোখ মেলে তাকিয়ে দেখো। আমার মেয়ে যেন তখন আমার কথা বুঝতে পারছিল। সে বাঁ চোখ দিয়ে তাকায়। চোখ খোলা রেখেই আমাদের সবাইকে বিদায় জানিয়ে চলে যায় সে।'
তরুণ বলেন, 'সেদিন যদি ডাল দেখে দাঁড়িয়ে যেতাম, তাহলে হয়তো এমন ঘটনা ঘটত না। আমি আবার যদি সেই দিনটিতে ফিরে যেতে পারতাম।'
মর্মান্তিক এ ঘটনার পর মেয়ের লাশ নিয়ে তরুণ নোয়াখালী গ্রামের বাড়ি চলে যান। সেখানে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করে ফিরে আসেন ঢাকায়। ঘটনার পর থেকে তিনি ও তাঁর স্ত্রী স্বাভাবিক হতে পারছেন না। পুরো পরিবার বিপর্যস্ত। কান্না যেন তাঁদের সঙ্গী হয়ে গেছে।
গত সোমবার দুপুরে রাজধানীর হাতিরপুলের ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের ৩৭৩/১৭ নম্বর বাড়ির চতুর্থ তলায় গিয়ে দেখা গেছে তরুণ তাঁর মেয়ের পুতুল জড়িয়ে ধরে ডুকরে ডুকরে কাঁদছেন। বন্ধু ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার ডা. তৌফিক জোয়ার্দার সান্ত্বনা দিচ্ছেন তাঁকে। কিন্তু কোনো সান্ত্বনাই তাঁকে শান্ত করতে পারছিল না।
বেড়ানো পছন্দ ছিল নূহার : তরুণ জানান, ২০০৭ সালের ৭ আগস্ট জন্মগ্রহণ করে নূহা। জন্মের পর তাকে নিয়ে চারবার কক্সবাজার বেড়াতে গেছেন। নূহা যখন বুঝতে শিখেছে, তখনই কক্সবাজারের কথা বলতেই খুব খুশি হতো। মেয়ের আনন্দ দেখার জন্যই তাঁরা কক্সবাজার যেতে আগ্রহী ছিলেন বেশি। তিনি জানান, ২৯ জুন রাতে নূহা ঘুমাতে পারছিল না। তখন তরুণ জানতে চান সে ঘুমাচ্ছে না কেন। জবাবে নূহা বলে, 'কাল কক্সবাজার যাব, এই আনন্দে ঘুম আসছে না। খুব আনন্দ লাগছে।' এই আনন্দই যে তার শেষ আনন্দ হবে সেটা কে জানত_বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তরুণ। আর তাঁর মুখ দিয়ে যেন কথা বেরোচ্ছিল না। শুধু তরুণ কেন, তাঁর বাসায় উপস্থিত তাঁর বন্ধু ডা. তৌফিক জোয়ার্দারেরও অশ্রু ঝরছিল।
চার ডাকাত গ্রেপ্তার : মর্মস্পর্শী এ ঘটনায় কক্সবাজার থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন তরুণের বন্ধু রিপন। পরে সেটিকেই এজাহার হিসেবে ধরে নিয়ে চকরিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ফরহাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ঘটনার দুই দিন পরই আমরা চার ডাকাতকে গ্রেপ্তার করেছি।' জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তারা জানিয়েছে, তারা ১৬ থেকে ১৭ জন ডাকাতির উদ্দেশ্যে রাস্তায় গাছের ডাল ফেলে রেখেছিল। গাড়িটি ডাল পেরিয়ে চলে যাওয়ার কারণে গুলি করেছে। তিনি জানান, এই ডাকাতদের এর আগেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কয়েক মাস আগে জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও ডাকাতি শুরু করেছে। তিনি আরো জানান, তাদের অন্য সহযোগীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

বিদ্রোহীরা দখল নিলে ত্রিপোলি উড়িয়ে দেবেন গাদ্দাফি

লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি ‘আত্মঘাতী পরিকল্পনা’ নিয়েছেন। বিদ্রোহীরা রাজধানী ত্রিপোলি দখল করে নিলে তিনি এ শহর উড়িয়ে দেবেন। লিবিয়ায় নিযুক্ত রাশিয়ার বিশেষ দূতের বরাত দিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার রাশিয়ার একটি সংবাদপত্রে এ খবর প্রকাশিত হয়।

সমঝোতার মাধ্যমে গাদ্দাফিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া ও বিদ্রোহীদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করতে কয়েকটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা আজ শুক্রবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলে আলোচনায় বসছেন।
লিবিয়ায় নিযুক্ত রাশিয়ার বিশেষ দূত মিখাইল মারগেলভ রাশিয়ার ইজভেস্তিয়া পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমার ধারণা, গাদ্দাফি সরকারের আত্মঘাতী পরিকল্পনা রয়েছে। এখনো তাদের হাতে প্রচুর ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলাবারুদ মজুদ রয়েছে।’ তিনি বলেন, গাদ্দাফির সেনারা এখনো ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপণযোগ্য একটি ক্ষেপণাস্ত্রও ব্যবহার করেনি। তাদের ট্যাংকের জন্য রাখা গোলা ও রাইফেলের গুলি ফুরিয়ে যেতে পারে। কিন্তু ক্ষেপণাস্ত্র ও বিস্ফোরকের প্রচুর মজুদ রয়েছে।
গত ১৬ জুন ত্রিপোলিতে লিবিয়ার প্রধানমন্ত্রী বাগদাদি আল মাহমুদির সঙ্গে বৈঠক করেন মারগেলভ। তবে তিনি গাদ্দাফির সঙ্গে দেখা করতে পারেননি।
আজ ইস্তাম্বুলে লিবিয়ার বিষয়ে আলোচনায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আঁলা জুপ্পে, ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হগ ও ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাঙ্কো ফ্রাত্তিনি অংশ নেবেন বলে জানা গেছে। এতে সামরিক জোট ন্যাটোর মহাসচিব আন্দ্রেস ফগ রাসমুসেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক প্রধান ক্যাথেরিন অ্যাস্টন ও আরব লিগের প্রধান নাবিল আল আরবিরও অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।
এই আলোচনায় অংশ নিতে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে রাশিয়া ও চীনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে তাদের অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত নয়।
তুরস্কের একজন কূটনীতিক জানান, ইস্তাম্বুলের আলোচনায় লিবিয়ায় নিযুক্ত জাতিসংঘের দূত আবদুল ইলাহ সম্প্রতি তাঁর ত্রিপোলি ও বেনগাজি সফরের বিষয় তুলে ধরবেন। এ ছাড়া মুসলমানদের জন্য আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে লিবিয়ায় মানবিক সহায়তা বাড়ানো ও বিদ্রোহীদের সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।
লিবিয়ার বিদ্রোহীদের গঠিত অন্তর্বর্তী জাতীয় পরিষদের (টিএনসি) জ্যেষ্ঠ সদস্য মাহমুদ জিবরিল ইস্তাম্বুলের আলোচনায় যোগ দেবেন। তিনি বিভিন্ন দেশের নেতাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় অংশ নেবেন।
ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাউরিজিও মাসারি বলেন, জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় লিবিয়া পরিস্থিতির রাজনৈতিক সমাধানের পরিকল্পনা এগিয়ে চলছে।
গত মঙ্গলবার ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আঁলা জুপ্পে বলেন, ‘আমরা লিবিয়ার প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তাঁরা আমাদের বলেছেন, গাদ্দাফি ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছেন। সে বিষয় নিয়ে আলোচনা হোক।’

খরায় ধুঁকছে সোমালিয়া, অগণিত মৃত্যুর আশঙ্কা

ফ্রিকার পূর্বাঞ্চলে খরা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া না হলে অগণিত মানুষ মারা যেতে পারে। ব্রিটেনের টেলিভিশন চ্যানেল 'চ্যানেল ফোর'কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সোমালিয়ায় কর্মরত এক ত্রাণকর্মী এ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। জেন্স ওপারম্যান নামের এ কর্মী শিগগিরই সেখানে আন্তর্জাতিক সাহায্য বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

আফ্রিকার পূর্বাঞ্চলের হর্ন অব আফ্রিকাভুক্ত দেশগুলোতে গত ৬০ বছরের মধ্যে ভয়াবহতম খরা দেখা দিয়েছে। সোমালিয়া, কেনিয়া, ইথিওপিয়া ও জিবুতি খরার আক্রমণে পড়েছে। তবে সোমালিয়ার পরিস্থিতি সবচেয়ে মারাত্মক। খাদ্য ও পানির আশায় লাখ লাখ লোক সেখানে ছোটাছুটি করছে। সোমালিয়ায় 'অ্যাকশন অ্যাগেইনস্ট হাঙ্গার' নামের দাতব্য সংস্থার প্রধান হিসেবে কাজ করছেন ওপারম্যান। চ্যানেল ফোর নিউজকে তিনি জানান, 'সোমালিয়ার পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে। মানুষ এখানে অকল্পনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।' সোমালিয়ায় প্রায় ২৮ লাখ লোকের জরুরি মানবিক সাহায্যের প্রয়োজন বলে জানান তিনি। দেশটিতে গড়ে প্রতি তিন শিশুর একটিই অনাহারে দিন কাটাচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
ওপারম্যান জানান, 'খরা-আক্রান্ত এলাকার ত্রাণকর্মীরা মানুষকে সাহায্য করার ব্যাপারে হিমশিম খাচ্ছে। আমাদের কাছে আসা শিশু ও পরিবারগুলো মানসিক ও শারীরিকভাবে পুরোপুরি বিপর্যস্ত। অনেকেই মারাত্মকভাবে অসুস্থ বা আহত। অনেক লোককেই সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে অনাহারে থাকতে হয়।
ত্রাণ শিবিরগুলোতে আসা লোকদের প্রাণ বাঁচানোই দুষ্কর হয়ে পড়েছে।' সোমালিয়ার দক্ষিণাঞ্চল ও প্রত্যন্ত গ্রামগুলোর খরা পরিস্থিতি মারাত্মক এবং শিশু, গর্ভবতী নারী ও বয়স্ক লোকরাই এর সবচেয়ে বড় শিকার বলে জানান ওপারম্যান।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার প্রধান আন্তোনিও গুতিয়েরেস আফ্রিকার খরাকে 'বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবীয় বিপর্যয়' বলে উল্লেখ করেন গত সোমবার। সোমালিয়ার জঙ্গিগোষ্ঠী আল-শাবাব তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় বিদেশি ত্রাণকর্মী প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে অধিকসংখ্যক সাহায্য সংস্থাকে সোমালিয়ায় যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন গুতিয়েরেস।
আন্তর্জাতিক সাহায্যের অপরিহার্যতা উল্লেখ করে জেন্স ওপারম্যান বলেন, 'এই পরিস্থিতিকে বিবেচনায় না নিলে আমার আশঙ্কার হচ্ছে, অকল্পনীয় মাত্রায় মৃত্যুর ঘটনা দেখতে হবে আমাদের।'

পাখিঃ- পাহাড়ের নীলপরী by আলম শাইন

রব্য উপন্যাসে 'কোকাফ' শহর নামের একটি জায়গার বর্ণনা আছে। শহরটির অবস্থান ঠিক কোন দেশে সে সম্পর্কে কোনো কিছুই জানা যায়নি। তবে লেখক ইশারা-ইঙ্গিতে বুঝিয়েছেন, এটি মর্ত্যলোকের কোনো শহর নয়। ওখানে সাধারণ মানুষ স্বেচ্ছায় যেতে পারে না, যেতে হলে একটা মাধ্যম লাগে। আর সেই মাধ্যমটি হচ্ছে পরী, (ওটা নাকি পরীরাজ্য।

ওখানে শুধু লালপরী, নীলপরীদের বাস) অর্থাৎ লেখক স্পষ্ট বুঝিয়েছেন, পরীদের পেতে হলে যেতে হবে কোকাফ শহরে। তাঁর হয়তো জানা ছিল না, নীলপরীদের বাস বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলেও আছে। জানা থাকলে নিশ্চয়ই সেটা তুলে ধরতে তিনি কৃপণতা করতেন না।
একেবারেই সত্যি কথা, এ দেশের পাহাড়ি অঞ্চলে বিশেষ করে কঙ্বাজার, হিমছড়ি, টেকনাফের অরণ্যে নীলপরীদের বিচরণ লক্ষ করা যায়। এরা কোনো কল্পলোকের পরী নয়, এরা হচ্ছে 'আইরেনিদি' গোত্রের একধরনের অপ্সরী পাখি। ইংরেজি নাম 'এশিয়ান ফেইরি ব্লুবার্ড'। এই পাখিরা বাংলাদেশের স্থায়ী বাসিন্দা হলেও এদের কোনো বাংলা নাম নেই। বিষয়টি মাথায় এনে বিশিষ্ট পাখিপ্রেমিক অজয় হোম ওদের নাম রেখেছেন নীলপরী। সেই থেকে এ পাখি নীলপরী নামেই পরিচিত। তবে অজয় হোমের দেওয়া নামের সঙ্গে যথার্থ মিল রয়েছে নীলপরী পাখির। যেমনি রূপ তেমনি গানের গলা। মৃদু শিস বাজিয়ে মিষ্টি সুরে গান গায় এরা। গানের ভাষা কিছুটা দুর্বোধ্য হলেও শুনতে বেশ লাগে। অন্যদিকে ওদের রূপের যে ঝলকানি, তা দেখলে চোখে ধাঁধা লেগে যায়। তখন দেখে মনে হয়, সত্যি বুঝি ওরা কল্পলোক থেকে মর্ত্যে বিচরণ করতে এসেছে।
নীলপরীর পুরো শরীরটা নীল পালকে আবৃত নয়। ঘাড়ের নিচ থেকে পিঠ ধরে লেজ পর্যন্ত নীলচে বর্ণের। ঠোঁট ও পা তদ্রূপ। চোখ ফিকে লাল। লম্বায় আট থেকে দশ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়। পুরো শরীরটা বেশ তাগড়া মনে হয়। ছেলে-মেয়ে দেখতে একই রকম। সূর্যের আলো নীলপরী পাখির পিঠে পড়লে নীলাভ দ্যুতি ঠিকরে বের হয়। তখন যে কেউ দেখলে ওদের প্রেমে পড়তে বাধ্য। খেয়ে-না খেয়ে জঙ্গলে পড়ে থাকতে চাইবেন। আর তিনি যদি পাখিপ্রেমিক হয়ে থাকেন, তাহলে তো কথাই নেই।
নীলপরী মোটামুটি সামাজিক পাখি। গাছে গাছেই এদের বিচরণ। বুনো ফল, ফুলের মধু এদের প্রিয়। মাটিতে খুব একটা নামে না এরা। শুধু জলপানের তাগিদ অনুভব করলে তবে নিচে নেমে আসে। একসঙ্গে তখন আরো একটি কাজ সেরে নেয়। জলপান শেষে গোসলাদিও সেরে নেয় ওরা। নীলপরীদের প্রজনন মৌসুম হচ্ছে মার্চ থেকে এপ্রিল। এ সময় এরা
তুলনামূলক ছায়াযুক্ত জায়গায় বাসা বাঁধে। সরু কাঠি, গাছের শুকনো লতাপাতা এদের বাসা তৈরির উপকরণ। বেশ সুন্দর বাসা বাঁধতে পারে এরা। বাসা তৈরি শেষে দুই দিন বিরতি দিয়ে দুটি মাত্র ডিম পাড়ে। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৮ থেকে ২০ দিন। বাচ্চারা স্বাবলম্বী না হওয়া পর্যন্ত মা-বাবার সঙ্গে থাকে।

দুর্বল গোয়েন্দাব্যবস্থার কারণে ভারত ঝুঁকির মধ্যে থাকবে

ন্ত্রাসবাদবিরোধী নীতিতে মৌলিক পরিবর্তন না আনা পর্যন্ত ভারত জঙ্গি হামলার সহজ লক্ষ্যবস্তু থাকবে; যে নীতিতে কার্যকর গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা এ কথা বলেন।

বিশ্লেষকেরা বলেন, ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পদ্ধতি এখনো দুর্ভাগ্যজনকভাবে পরিপূর্ণ নয়।
গত বুধবার ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইয়ে তিনটি বিস্ফোরণে ১৭ জন নিহত হন। আহত হন আরও কমপক্ষে ১৩১ জন। আহত ব্যক্তিদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
নয়াদিল্লির ইনস্টিটিউট অব কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্টের নির্বাহী পরিচালক আজাই সাহনি বলেন, ২০০৮ সালে মুম্বাই হামলার পর নেওয়া নতুন পদক্ষেপ পুলিশব্যবস্থা ও তৃণমূল পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে প্রধান দুর্বলতার ‘একটি ক্ষুদ্র অংশ’ দূর করেছে মাত্র।
সাহনি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আপনি অবশ্যই সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে শতভাগ নিশ্চয়তা পাবেন না; তবে এটা বলা যায়, নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আমাদের প্রচণ্ড দুর্বলতা রয়েছে।’ তিনি বলেন, ভারতের পুলিশ বাহিনী অনেক ক্ষেত্রে ‘অনুপযুক্ত’। সাহনি বলেন, পুলিশের ফরেনসিক সামর্থ্য সামান্য বা একেবারেই নেই। গোয়েন্দা প্রশিক্ষণের অবস্থাও একই রকম।
দেশে কার্যকর জাতীয় অপরাধ ও সন্ত্রাসবাদবিষয়ক ডেটাবেস না থাকার কথা উল্লেখ করে সাহনি বলেন, সরকারগুলো অতীত থেকে শিক্ষা নিতে দৃশ্যমানভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা কয়েক দশক ধরে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়ছি। কিন্তু পুলিশের জন্য সন্ত্রাসবাদবিরোধ বিষয়ে কোর্স চালু করা হয়েছে ২০১০ সালে।’
দিল্লিভিত্তিক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ উইলসন জন বলেন, সরকার জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর জন্য অনেক বেশি জায়গা খালি রেখেছে।

থেমে নেই মুম্বাইয়ের জীবন

জীবন থেমে থাকে না। আপন গতিতেই তার পথচলা। গতকালও মুম্বাইয়ের আকাশে সূর্য উঠেছে। আলোকিত হয়েছে সেখানকার অলিগলি, রাজপথ। দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে। দিনভর কোলাহল ছিল ফুটপাতে। ট্রেন চলেছে অন্যান্য দিনের মতোই।

সিরিজ বোমা হামলার এক দিন পরই মুম্বাইয়ের জীবনযাত্রা ছিল এমনই। অন্য ১০ দিনের মতোই মুম্বাইবাসী স্বাভাবিক থাকায় স্বয়ং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরমও মুম্বাইবাসীর দৃঢ় মনোবলের প্রশংসা করেছেন।
মুম্বাইয়ের আবাসন ব্যবসায়ী ভিনোদ হিরানান্দিনি বলেছেন, ‘জীবন তাঁর স্বাভাবিক গতিতেই চলবে। যারা দিন আনে দিন খায়, জীবিকার তাগিদে তাদের ঘরের বাইরে যেতেই হয়। জীবনের জন্য এটা (মুম্বাই) খুব কঠিন একটা জায়গা।’
অবশ্য মুম্বাইয়ের জন্য এ রূঢ় অভিজ্ঞতা নতুন নয়। এর আগেও বহুবার রক্তাক্ত হয়েছে এই নগর। স্বজন হারানোর বেদনায় বারবার কেঁদেছে মুম্বাইবাসী। তবে সন্ত্রাসীদের এ ধরনের হামলার বিষয়টি অনেকটা নিয়তি বলে ধরে নিয়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা।
টাইমস অব ইন্ডিয়া এ হামলার ঘটনাকে বর্ণনা করেছে এভাবে—‘আবারও’। ট্যাবলয়েড মুম্বাই মিরর শিরোনাম করেছে ‘আবারও হামলা’ বলে। আরেক ট্যাবলয়েড মিড-ডে বলেছে, ‘কোনো শিক্ষাই হলো না, কখন ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ হবে।’
এর আগে মুম্বাই সর্বশেষ সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয় ২০০৮ সালে। প্রায় ১০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তিনটি বিলাসবহুল হোটেল, রেলস্টেশন, রেস্তোরাঁ ও ইহুদিদের সংস্কৃতি কেন্দ্রে হামলা চালায়। এতে ১৬৬ জন নিহত ও তিন শতাধিক আহত হয়।
ওই হামলার ক্ষতচিহ্ন এখনো বয়ে বেড়াচ্ছে ১৩ বছরের কিশোরী দেবিকা। বুধবারের হামলার ভয়াবহতা টেলিভিশনে দেখামাত্র সে তার বাবা নটবরলাল রতোয়ানের কাছে জানতে চায়, ‘সরকার কেন সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।’
জবাবে নটবরলাল রতোয়ান বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা মুম্বাই শহর ও সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের রাজনীতিবিদেরাই এর জন্য দায়ী। দরিদ্র-নিরীহ লোকজনের মৃত্যুতে তাদের তো কিছু যায়-আসে না।’
ভয়াবহ হামলার সেই বিভীষিকাময় স্মৃতি ভুলতে না ভুলতেই বুধবার আবারও কেঁপে উঠল মুম্বাই। তিনটি পৃথক বিস্ফোরণে এখন পর্যন্ত ১৭ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছে।
মহারাষ্ট্রের গণপূর্তমন্ত্রী চাগান ভূজপাল বলেছেন, সন্ত্রাসীরা হামলার জন্য প্রধান লক্ষ্যস্থল হিসেবে মুম্বাইকে বেছে নিয়েছে। এখানে হামলা চালালে তা পুরো জাতিকে কাঁপিয়ে দেবে, একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বিশ্বেরও মনোযোগ কাড়তে পারবে। আর সন্ত্রাসীরা সেটাই চাইছে।