Friday, June 22, 2012

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নৌকায় হেলিকপ্টার থেকে গুলি

আশ্রয়প্রার্থী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিজিবি-কোস্টগার্ড মিয়ানমারের জলসীমায় ঠেলে দেয়ার পর (পুশব্যাক) হেলিকপ্টার থেকে তাদের নৌকায় গুলি চালানো হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

স্থানীয় সাংবাদিকদের বরাতে বৃহস্পতিবার ‘রেডিও ফ্রি এশিয়া’ এ খবর দেয়ার পর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে শুক্রবার।
আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় তহবিল ও সমর্থনে পরিচালিত রেডিও ফ্রি এশিয়া জানিয়েছে, রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও সংখ্যাগুরু রাখাইনদের যৌথ সহিংসতার শিকার হয়ে মিয়ানামরের আরাকান প্রদেশের (রাখাইন) রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুরা অজস্র নৌকায় করে টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন উপকূলে আশ্রয় নেয়। এদের মধ্যে ছয়টি নৌকার মধ্যে শেষ পর্যন্ত বেঁচে যাওয়া তিনটি নৌকা আরোহী রোহিঙ্গারা ছয় বারের চেষ্টায় বাংলাদেশী সীমান্তরক্ষীদের এড়িয়ে স্থানীয় বাংলাদেশীদের কাছে পৌঁছে আশ্রয় পান গত বৃহস্পতিবার।

এর আগে বাংলাদেশে ঢুকতে পাঁচবারের ব্যর্থ চেষ্টার মাঝখানের সময়ে তারা নাফ নদী ও বঙ্গোপসগার মোহনায় অসহায়ভাবে ভেসে ছিলেন চারদিন। তারই মধ্যে একদিন একটি হেলিকপ্টার থেকে তাদের নৌকা বহরে গুলি চালানো হয়। তাতে তাদের তিনটি নৌকায় আগুন ধরে ডুবে যায় এবং আরোহীরা মারা যান। তবে তারা বলছেন যে, তারা বাংলাদেশ বা মিয়ানমারের হেলিকপ্টার বলে কিছু শনাক্ত করতে পারছেন না।

রেডিও ফ্রি এশিয়ার সঙ্গে আলাপে ওই বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের কয়েকজন বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন। দশ বছর বয়সী কন্যাশিশু মিনার বেগম এখনো ভুলতে পারছেন না ওই চারদিনের কষ্ট ও তাদের সহযাত্রী তিনটি নৌকা আরোহীর মর্মান্তিক মৃত্যুর কথা। একই ধরনের অনুভূতির কথা জানালেন তরুণ মোহাম্মদ ইসলাম। আকিয়াব (সিতউয়ি) থেকে আসা ইসলাম জানালেন, “জ্বলন্ত বাড়ি ও মসজিদ পেছনে ফেলে আমরা এসেছি এখানে। আকিয়াবে আমার দুই সন্তান ও পঁচিশজন আত্মীয় নিহত হয়েছে।”

তিনি জানান, “প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম এটা বুঝি আমাদের বহরের পেছনে পড়ে যাওয়া নৌকার ইঞ্জিনের শব্দই। কিন্তু পরে ওপরে হেলিকপ্টার দেখতে পেলাম এবং নৌকাগুলো আগুন লেগে ডুবে গেল।”

মিনারা ও ইসলামসহ আরো চারজন ভুক্তভোগী তাদের করুণ অভিজ্ঞতার কথা জানান রেডিও ফ্রি এশিয়াকে।

প্রসঙ্গত, চলমান সহিংসতার শিকার হয়ে এখন পর্যন্ত আসতে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে অস্বীকার করে আসছে বাংলাদেশ সরকার। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সম্প্রতি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ‘ধর্ষক’ ও ‘সন্ত্রাসী’ বলে আখ্যা করেছেন।

অন্যদিকে, সহিংসতা বন্ধে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় বাহিনীর ওপর কোনো ধরনের চাপ সৃষ্টি না করে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের ওপর শরণার্থী গ্রহণে চাপ দেয়ার ওপরই মনোযোগ বহাল রেখেছে বলে দেখা যাচ্ছে।

পেকুয়ার মগনামায় পোনা ধরা বন্ধ

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার উপকূলীয় ইউনিয়ন মগনামার সাগরচরে মৎস্যজীবীদের কাছ থেকে অঘোষিত ট্যাক্স আদায় এবং আধিপত্য বিস্তারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে জেলে ও মৎস্যজীবীরা ১৫-২০ দিন ধরে পোনা ধরা বন্ধ রেখেছেন।

দুই সপ্তাহের ব্যবধানে থানায় দুটি মামলায় অর্ধশতাধিক লোককে আসামি করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আর এতে পক্ষ-বিপক্ষের মধ্যে বেশ কয়েকদফা সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ইউনুচ চৌধুরীসহ অনেকে।
সাগরের নিকটবর্তী মগনামা ইউনিয়নের পশ্চিমের কুতুবদিয়া চ্যানেলের চরে দীর্ঘদিন ধরে বেড়িবাঁধ সংশ্লিষ্ট এলাকার শত শত মৎস্যজীবী সাগরে জাল বসিয়ে গলদা ও বাগদা চিংড়ির রেণু পোনা আহরণ করে আসছিলেন।
পেকুয়া থানার ওসি নুরুল আমিন জানান, মগনামায় জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ শিগগিরই সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে অভিযান চালাবে। কোনোভাবেই সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।

ফেরার অপেক্ষায় ৩৪ রোহিঙ্গা

কক্সবাজারের টেকনাফের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে মিয়ানমার থেকে বৃহস্পতিবার ভোরে অনুপ্রবেশ করা ১৬ জন রোহিঙ্গাকে নিজ হেফাজতে রেখেছে বিজিবি।

এছাড়া আগের আটক করা ১৮ জনসহ বর্তমানে বিজিবি হেফাজতে স্বদেশে ফেরতের অপেক্ষায় রয়েছে ৩৪ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী।

বৃহস্পতিবার ভোরে কক্সবাজারের টেকনাফের নীল ইউনিয়নের জাদিমুরা পয়েন্ট থেকে তিনজন, টেকনাফের নাজিরপাড়া পয়েন্ট থেকে ১১জন ও নাইটংপাড়া পয়েন্ট থেকে দু’জনকে আটক করে হেফাজতে রাখে বিজিবি। এ সময় পাচারের কাজে অনুপ্রবেশের কাজে ব্যবহৃত একটি নৌকাও জব্দ করে। এছাড়া বুধবার এসব পয়েন্ট দিয়ে ৯জন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীকে ফেরত পাঠায় বিজিবি।

বিজিবি-৪২ ব্যাটালিয়ন কমান্ডার লে. কর্ণেল জাহিদ হাসান বার্তা২৪ ডটনেটকে জানান, কিছু অনুপ্রবেশকারী শাহপুরীর দ্বীপ এলাকায় টহল জোরদার থাকায় টেকনাফের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছে। এসব পয়েন্টেও স্পীটবোট নিয়ে টহল জোরদার করা হয়েছে।

এ পর্যন্ত ৯৪৬ জন অনুপ্রবেশকারীর মধ্যে ৯১২ জনকে স্বদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে এবং বর্তমানে বিজিবি হেফাজতে স্বদেশে ফেরতের অপেক্ষায় রয়েছে ৩৪ জন  রোহিঙ্গা।

এদিকে টেকনাফ স্থলবন্দরে একটি মাছ ধরার ট্রলার ও একটি তুলার ট্রলার আসলেও ব্যবসায়ীদের যাতায়াত বন্ধ রয়েছে।

আটকের পর মিয়ানমারের ৭ নাগরিককে দেশে পাঠালো বিজিবি

কক্সবাজারের টেকনাফে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকালে মিয়ানমারের ৭ নাগরিককে আটক করে দেশে টাফিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

শুক্রবার ভোরে টেকনাফ উপজেলার নাইট্যংপাড়া এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। পরে বিকেল ৫টার দিকে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

বিজিবির টেকনাফ ৪২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. জাহিদ হাসান বাংলানিউজকে জানান, অবৈধভাবে আসা মিয়ানমারের ৭ নাগরিককে আটক করার পর স্বদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। রোহিঙ্গা সনাক্ত করণের লক্ষ্যে সীমান্তের বিভিন্ন চেকপয়েন্টেসহ কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও ঢাকাগামী যানবাহনে তল্লাশি করা হচ্ছে।