Sunday, May 15, 2011

পার্লামেন্টে সর্বসম্মত প্রস্তাবঃ যুক্তরাষ্ট্রকে পাকিস্তানের হুমকি

পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ঢুকে আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে হত্যায় মার্কিন কমান্ডোদের একতরফা অভিযানের পর এত দিন চুপচাপ ছিল ওয়াশিংটনের মিত্র ইসলামাবাদ। কিন্তু নিজেদের ক্ষোভ আর চেপে রাখত পারল না তারা। ভবিষ্যতে এ ধরনের অভিযান চালালে এবং মার্কিন ড্রোন হামলা বন্ধ করা না হলে আফগানিস্তানে ন্যাটো বাহিনীর রসদ সরবরাহের পথ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে ইসলামাবাদ।


এ-সংক্রান্ত একটি সর্বসম্মত প্রস্তাব গতকাল শনিবার পার্লামেন্টের যৌথ অধিবেশনে পাস হয়েছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির সম্পর্কের বিষয়টিও পর্যালোচনা করে দেখবে পাকিস্তান। আর, যুক্তরাষ্ট্রের ওই একতরফা অভিযানের তীব্র নিন্দা জানিয়ে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের প্রধান জেনারেল আহমেদ সুজা পাশা পার্লামেন্টের কাছে তাঁর পদত্যাগের ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন। বিন লাদেনের অবস্থান সম্পর্কে জানতে না পারার ব্যর্থতা আর জঙ্গিসংশ্লিষ্টতার অভিযোগে সব সমালোচনার তীর এখন ছুটছে পাশার দিকে।
প্রস্তাব গ্রহণ: ২ মে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যায় মার্কিন কমান্ডোদের অভিযান এবং গত শুক্রবার দুটি বড় আত্মঘাতী বোমা হামলার পর গতকাল পার্লামেন্টের যৌথ অধিবেশন বসে। অধিবেশন চলে ১০ ঘণ্টার বেশি সময়। প্রস্তাবে মার্কিন অভিযানের নিন্দা জানানো হয়। আইনপ্রণেতারা বলেন, ওই অভিযানের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে। পরে তাঁরা একটি সর্বসম্মত প্রস্তাব গ্রহণ করেন।
প্রস্তাবে বলা হয়, পাকিস্তানের জাতীয় স্বার্থ সম্পূর্ণভাবে রক্ষিত হচ্ছে কি না, এ বিষয়টি মাথায় রেখে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়, ‘অ্যাবোটাবাদে যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা অভিযানের মতো কোনো পদক্ষেপ পাকিস্তানের মানুষ আর বরদাশত করবে না। এ ধরনের পদক্ষেপের পুনরাবৃত্তি হলে এ অঞ্চলসহ বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তার ওপর ভয়াবহ প্রভাব পড়বে।’
অ্যাবোটাবাদের অভিযানের দায়দায়িত্ব নিরূপণ ও ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে করণীয় নির্ধারণের জন্য একটি নিরপেক্ষ কমিটি গঠনেরও আহ্বান জানানো হয়েছে প্রস্তাবে।
পাকিস্তান ভূখণ্ডে মার্কিন চালকবিহীন বিমান (ড্রোন) হামলা ‘অগ্রহণযোগ্য’ অভিহিত করে প্রস্তাবে বলা হয়, ড্রোন হামলা বন্ধ করা না হলে আফগানিস্তানে ন্যাটো বাহিনীর রসদ সরবরাহের পথ বন্ধ করে দেওয়ার মতো পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয় বিবেচনা করবে পাকিস্তান সরকার।
আফগানিস্তানে ন্যাটোর নেতৃত্বাধীন বিদেশি বাহিনীর জন্য খাদ্য, গোলাবারুদ ও অস্ত্রসরঞ্জাম পাঠানোর জন্য পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত এলাকা ব্যবহার করা হয়। ওই পথে সরবরাহ-বহরের ওপর মাঝেমধ্যেই হামলা চালায় জঙ্গিরা।
গত এক বছরে পাকিস্তান ভূখণ্ডে ড্রোন হামলা দ্বিগুণ করেছে মার্কিন বাহিনী। এ পর্যন্ত ১০০-র বেশি ড্রোন হামলায় মারা গেছে প্রায় ৭০০ মানুষ। গত বৃহস্পতিবারও উত্তর ওয়াজিরিস্তানে ড্রোন হামলায় তিন জঙ্গি নিহত হয়। গোয়েন্দাসূত্র বলে থাকে, পাকিস্তান সরকার কৌশলে ওই হামলার অনুমোদন দেয়। তবে পাকিস্তানি নেতারা বরাবর তা অস্বীকার করে এসেছেন। আর এ ধরনের একের পর এক হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ক্ষুব্ধ পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ।
সুজার পদত্যাগের প্রস্তাব: গতকাল পার্লামেন্টে প্রস্তাব গ্রহণের আগে শুক্রবার আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে কথা বলেন আইএসআইয়ের প্রধান আহমেদ সুজা পাশা। তাঁদের আলোচনার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমকে কিছু জানানো হয়নি। তবে পার্লামেন্টের একটি সূত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানায়, আইএসআই-প্রধানের পদ ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন সুজা পাশা। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, অ্যাবোটাবাদের ঘটনা তদন্তে পার্লামেন্টের গঠিত যেকোনো কমিশনের সামনে তিনি হাজির হবেন।
অন্য একটি সূত্র জানায়, পার্লামেন্ট চাইলে যেকোনো সময় পদত্যাগ করবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন আইএসআই-প্রধান।
গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি ও সেনাপ্রধান জেনারেল আশফাক কায়ানি আইএসআইয়ের প্রধানকে পদত্যাগ না করার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে এ তথ্য নিরপেক্ষভাবে খতিয়ে দেখা সম্ভব হয়নি।
তথ্যমন্ত্রী ফেরদৌস আশিক আওয়াজন জানান, আইএসআই-প্রধান পাশা আইনপ্রণেতাদের কাছে বলেছেন, যেকোনো ধরনের ব্যর্থতার দায় নিতে তিনি প্রস্তুত আছেন। পাশা বলেন, তাঁদের পূর্ণ অবগতি ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএকে পাকিস্তানে কোনো অভিযান চালাতে দেওয়া হবে না।
নওয়াজ শরিফের অবস্থান: বিরোধী দল মুসলিম লীগের (এন) নেতা নওয়াজ শরিফ বলেছেন, কোনো বিদেশি শক্তিকে পাকিস্তানে কর্মকাণ্ড চালাতে দেওয়া হবে না। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে নওয়াজ বলেন, ‘মার্কিনদের বুঝতে হবে, সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে পাকিস্তান কোনো ছাড় দেবে না। আর যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শে চলার নীতিও পাকিস্তান সরকারকে ছাড়তে হবে।’
নওয়াজ শরীফ জানান, পার্লামেন্টে গৃহীত প্রস্তাব বাস্তবায়নের মাধ্যমেই জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

নওয়াজের চাপে নত সরকার by হামিদ মির

পাকিস্তানে গত শুক্রবার যখন পার্লামেন্টের যৌথ অধিবেশন চলছিল, তখন সেখান থেকে কয়েক শ মাইল দূরে রাইউইন্ড শহরে নিজের বাসায় ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) দলের প্রধান নওয়াজ শরিফ। তার পরও সেখান থেকেই তিনি সরকারকে বারবার চাপ দিচ্ছিলেন, ২ মে অ্যাবোটাবাদে মার্কিন বাহিনীর অভিযানের ঘটনা তদন্তে একটি নিরপেক্ষ কমিটি গঠনের জন্য।

ওই সময়ে তিনি নিজের দলের নেতা চৌধুরী নাসির আলী খান ও ইসহাক দারকে ১২ বারের বেশি টেলিফোন করেন। নিরপেক্ষ কমিশন গঠনে সরকারের দিক থেকে বেশ অনীহা ছিল। কেননা পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ইতিমধ্যে ঘটনা তদন্তের একটি ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু নওয়াজ শরিফ গত বুধবারই সেনাবাহিনীর এ তদন্ত নাকচ করে দেন। এ ছাড়া আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সরকারকে চাপ দেন তিনি। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো মার্কিন ড্রোন (চালকবিহীন বিমান) হামলা।
দলীয় নেতাদের নওয়াজ শরিফ জানিয়ে দেন, আবারও ড্রোন হামলা হলে আফগানিস্তানে ন্যাটো বাহিনীর রসদ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়টি যদি প্রস্তাবে থাকে, কেবল তখনই ওই প্রস্তাবে সম্মতি দেওয়া যাবে। এমনকি তিনি প্রস্তাবের দাঁড়ি, কমা, পূর্ণচ্ছেদ পর্যন্ত ধরে ধরে অবহিত করেন নেতাদের।
পার্লামেন্টের প্রায় ১০ ঘণ্টা অধিবেশনের পর গতকাল শনিবার একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেন পাকিস্তানি আইনপ্রণেতারা। ওই প্রস্তাবে শুধু একতরফা মার্কিন অভিযানের নিন্দাই করা হয়নি, এতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের বিষয়টি নতুন করে পর্যালোচনারও আহ্বান জানানো হয়েছে। ইসলামাবাদে নিযুক্ত একজন ইউরোপীয় শীর্ষ কূটনীতিক বলেছেন, ‘পাকিস্তানের ৬৪ বছরের ইতিহাসে এই প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বিপর্যয়।’
পার্লামেন্টে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত এই অনাকাঙ্ক্ষিত প্রস্তাবের ফলে ইসলামাবাদের কূটনৈতিক মহলের মধ্যে বেশ উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। পাকিস্তান-মার্কিন সম্পর্ক সবচেয়ে ভয়াবহ কী অবস্থায় পৌঁছাতে পারে, তা পর্যালোচনা করে মূল্যায়ন প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য ইসলামাবাদে নিযুক্ত কূটনীতিককে নির্দেশ দিয়েছে বিশ্বের ক্ষমতাধর বিভিন্ন দেশ। অনেক কূটনীতিক এখন বোঝার চেষ্টা করছেন, এখন পাকিস্তানে যদি আবারও ড্রোন হামলা হয়, তাহলে কী ঘটতে পারে। পাকিস্তান সঙ্গে সঙ্গে ন্যাটোর সরবরাহ পথ বন্ধ করে দেবে? বেশির ভাগ কূটনীতিক নিশ্চিত, পাকিস্তান এখন তা-ই করবে। কেননা পাকিস্তানের সরকার ও সেনাবাহিনীর এখন দেশের মানুষের কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা পুনরুদ্ধার করতে হবে।
জানা গেছে, অনেক পশ্চিমা কূটনীতিক ইতিমধ্যে তাঁদের দেশকে জানিয়ে দিয়েছেন, পাকিস্তানের পার্লামেন্ট দেশের সেনাবাহিনীকে পূর্ণাঙ্গ সমর্থনই দিয়েছে এবং আইএসআই এখন একা নয়। ১০ ঘণ্টার অধিবেশনের প্রথম তিন ঘণ্টায় অনেক কঠিন প্রশ্নের জবাব দিতে হয়েছে আইএসআইয়ের প্রধানকে। কিন্তু এরপর পাকিস্তান মুসলিম লীগ (এন) নেতা জাভেদ হাশমি, সাদ রফিক ও ইশহাক দার তাঁদের বক্তব্যে এটা পরিষ্কার করেছেন যে তাঁরা এত সব প্রশ্ন তুলছেন কোনো খারাপ উদ্দেশ্যে নয়, ভালোর জন্যই।
জাভেদ হাশমি বলেন, ‘পার্লামেন্ট আপনাদের মায়ের মতোই। এখানে আপনাদের প্রশ্ন করার অধিকার আমাদের আছে। তাই বলে বাইরের কাউকে আপনাদের ওপর দোষারোপ করার সুযোগ আমরা দেব না।’ দেশের ৬৪ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম জবাবদিহির স্বার্থে পার্লামেন্টের কাছে আত্মসমর্পণ করলেন আইএসআইয়ের প্রধান।
রাজনীতিতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ভূমিকা নিয়ে গত শনিবার বিকেলে নওয়াজ শরিফ বেশ কঠোর মন্তব্য করেন। নওয়াজ পরিষ্কার করে দেন, তিনি সেনাবাহিনীর বিপক্ষে নন, তবে অবশ্যই রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর নাক গলানোর বিরুদ্ধে। পিপিপির মন্ত্রী ফেরদৌস আশিক আওয়ান অবশ্য চেষ্টা করেছিলেন নওয়াজ এই বক্তব্যকে একটু অন্যভাবে ব্যবহার করতে। কিন্তু তাঁর সেই উদ্যোগ ভেস্তে যায়। পার্লামেন্টের অনেক সদস্যই লক্ষ করেছেন, ক্ষমতাসীন পিপিপির সদস্যরা সেনা নেতৃত্ব ও নওয়াজের দলের মধ্যে একটা উত্তেজনা তৈরির চেষ্টা চালিয়ে গেছেন।
উপজাতি-অধ্যুষিত এলাকা থেকে নির্বাচিত পার্লামেন্ট সদস্য মুনির ওরাকজাইয়ের অভিযোগ, ‘আইএসআইয়ের মহাপরিচালককে যখন পিএমএল(এন) নেতা চৌধুরী নিসার আলী খান প্রশ্ন করছিলেন, তখন পিপিপির সদস্য ফৌজিয়া ওহাব পিএমএল(কিউ) সদস্যদের নিয়ে এর বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়ার ষড়যন্ত্র করেছেন।’ এসব সত্ত্বেও অধিকাংশ পার্লামেন্ট সদস্য খুশি এই কারণে যে তাঁরা শেষ পর্যন্ত একটা মতৈক্যে পৌঁছাতে পেরেছেন।
পার্লামেন্টে গৃহীত সর্বসম্মত প্রস্তাবের ব্যাপারে দুই বড় দলের (পিপিপি ও পিএমএল-এন) অভিন্ন অবস্থানে অনেক কূটনীতিকই বিস্মিত। তাঁরা ভেবেছিলেন, এই বিষয়ে দুই দলের মধ্যে পার্লামেন্টে বেশ জোরালো মতানৈক্য ও বাক্যবিনিময় হবে। এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে, ২ মের (বিন লাদেনের হত্যার দিন) ঘটনার তদন্তে স্বাধীন কমিশন গঠনের ব্যাপারে সরকারপক্ষ কবে নওয়াজের দলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করবে। প্রধানমন্ত্রী গিলানির ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানাচ্ছে, ‘আমরা গোটা জাতির কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। তাই এ থেকে সরে আসার কোনো উপায় নেই আমাদের। শিগগিরই এ ব্যাপারে আমরা কাজ শুরু করব।’
গতকাল এক কূটনীতিক চুপিচুপি ইসলামাবাদে এক মন্ত্রীর বাসভবনে গিয়েছিলেন। ওই কূটনীতিক জানতে চান, আসলেই ন্যাটোর সরবরাহ লাইন বন্ধ করে দেওয়ার ব্যাপারে সরকার কতটা কঠোর অবস্থানে আছে। ওই মন্ত্রীর জবাব ছিল এ রকম, ‘কিছুদিনের মধ্যে সব দল নির্বাচনের মুখোমুখি হতে চলেছে। তাই আমরা আর ভোটারদের সামনে পুরোনো তামাশা দেখাতে পারি না। ওই দিন শেষ। এখন আমরা যদি ন্যাটো বা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিই, তবে ভোটাররাই ধর্মীয় দলগুলোকে ভোট দিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। তার চেয়ে দয়া করে যুক্তরাষ্ট্রকে চালকবিহীন বিমান থেকে হামলা চালানো বন্ধ করতে বলুন, না হলে এখানে আমরা শেষ হয়ে যাব, আর আফগানিস্তানে আপনারা ধ্বংস হয়ে যাবেন।’
হামিদ মির: পাকিস্তানি সাংবাদিক, জিয়ো টিভিতে কর্মরত।

ওবামাকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন ওসামা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তাদের হত্যা করতে চেয়েছিলেন আল-কায়েদার শীর্ষনেতা ওসামা বিন লাদেন। ২০১২ সালে অনুষ্ঠেয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বানচাল করার জন্যই তিনি ওবামাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল এরিক হোল্ডার ব্লুমবার্গ টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন।
ওসামাকে হত্যার পর তাঁর কম্পিউটারসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। সেগুলো থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে এসব বিষয় জানা যায় বলে উল্লেখ করেন এরিক হোল্ডার। তিনি জানান, ওসামার কম্পিউটারসহ অন্যান্য সরঞ্জাম গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এখনো পর্যালোচনা করে দেখছেন। জব্দ করা সরঞ্জামসহ বিভিন্ন নথি সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা পেতে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পর্যালোচনা করা হতে পারে। এরিক হোল্ডার জানান, নাইন-ইলেভেনের দশম বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে হামলা চালানোরও পরিকল্পনা ছিল ওসামার।
হোল্ডার বলেন, একজন ব্যক্তিকে নিয়ে তিনি এখনো উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন। সেই ব্যক্তি হলেন আল-কায়েদার অন্যতম নেতা আনোয়ার আল আওলাকি। ২০০৯ সালে ডেট্রয়েটগামী একটি বিমানে নাইজেরিয়ার একজন নাগরিকের হামলা চালানোর চেষ্টার সঙ্গে আওলাকির সম্পৃক্ততা রয়েছে। ওই হামলার চেষ্টারও মূল হোতা ছিলেন ওসামা বিন লাদেন। কমান্ডোদের জব্দ করা নথি থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি আরও বলেন, এটা একেবারেই স্পষ্ট যে, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ওসামা আল-কায়েদা পরিচালনা করছিলেন।
জিজ্ঞাসাবাদের নিষ্ঠুর কৌশল ব্যবহার করেই ওসামার অবস্থান সম্পর্কে জানা গেছে কি না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে হোল্ডার বলেন, ‘এ বিষয়টি আমার কাছে স্পষ্ট নয়।’ তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় সিআইএর কর্মকর্তারা কোনো ভুল করেছেন কি না, তার তদন্ত চলছে। এ ব্যাপারে অনেক অগ্রগতিও হয়েছে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ওই তদন্ত শেষ হতে পারে।
ওসামার কম্পিউটারে পর্নোগ্রাফি?: মার্কিন কমান্ডোদের জব্দ করা ওসামার কম্পিউটারে পর্নোগ্রাফির ভিডিওচিত্র ছিল। গতকাল শনিবার মার্কিন প্রভাবশালী দৈনিক দ্য নিউইয়র্ক টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করে মার্কিন এক কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, ওসামা বা ওই বাড়িতে থাকা অন্য লোকজন পর্নো ভিডিওচিত্র সংগ্রহ করেছেন বা দেখেছেন, এমন কোনো প্রমাণ আছে কি না, তা জানাতে অস্বীকৃতি জানান ওই মার্কিন কর্মকর্তা।
গত ২ মে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের অদূরে অ্যাবোটাবাদের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ওসামাকে হত্যা করে মার্কিন কমান্ডোরা।

ন্যাটোর বোমা আমার নাগাল পাবে নাঃ মুয়াম্মার গাদ্দাফি

লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি বলেছেন, তিনি এখন এমন অবস্থানে রয়েছেন, ন্যাটোর বোমা তাঁর নাগাল পাবে না। গত শুক্রবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক অডিওবার্তায় তিনি এ কথা বলেন। এর আগে ইতালি দাবি করে, গাদ্দাফি আহত হয়েছেন এবং দৌড়ের ওপর রয়েছেন। লিবিয়া সরকার তাদের এ দাবি নাকচ করে দিয়েছে।
গাদ্দাফি বলেন, ‘প্রতিপক্ষ কাপুরুষদের জানাতে চাই, আমি এমন এক স্থানে আছি, যেখানে পৌঁছানো বা আমাকে হত্যা করা সম্ভব না। আমি আছি লাখো মানুষের অন্তরে।’ তিনি বলেন, ন্যাটো জোট বৃহস্পতিবার ত্রিপোলিতে তাঁর বাব আল-আজিজিয়া কম্পাউন্ডে বিমান হামলা চালায়। এতে ‘তিনজন নির্দোষ সাংবাদিক’ নিহত হন।
লিবীয় সরকার অভিযোগ করেছে, দেশটির তেলসমৃদ্ধ নগর ব্রেগায় ন্যাটো জোটের ওই বিমান হামলায় বেসামরিক লোকজন মারা গেছে। তবে এই অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে ন্যাটো জোট।
ইতালি-ভিত্তিক বার্তা সংস্থা এএনএসএ জানায়, দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাঙ্কো ফ্রাত্তিনি বলেছেন, বৃহস্পতিবার চালানো ওই বিমান হামলায় সম্ভবত গাদ্দাফি আহত হয়েছেন এবং তিনি ত্রিপোলি ছেড়ে পালিয়েছেন। এ ব্যাপারে ত্রিপোলির বিশপ বলেন, ‘গাদ্দাফি সম্ভবত আহত’ হয়েছেন। কিন্তু ইতালির কাছে গাদ্দাফির অবস্থান ও তাঁর স্বাস্থ্যের ব্যাপারে ‘বিশ্বাসযোগ্য তথ্য’ নেই।
ফ্রাত্তিনি আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক চাপের মুখে কোনো নিরাপদ স্থানে আশ্রয় খুঁজতে পারেন গাদ্দাফি।’
আল-আরাবিয়া টেলিভিশন জানায়, পশ্চিমাদের এসব প্রতিবেদনের পরপরই লিবীয় সরকারের মুখপাত্র মুসা ইব্রাহিম পশ্চিমাদের দাবি নাকচ করে বলেন, গাদ্দাফি আহত হননি। লিবিয়ার জনগণের মনোবল দুর্বল করার উদ্দেশে পশ্চিমারা গাদ্দাফি আহত হওয়ার খবর ছড়িয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বিমান হামলায় বেসামরিক লোকজন নিহত হওয়ার খবরের জবাবে ন্যাটো জোট গতকাল ব্রাসেলসে এক বিবৃতিতে বলেছে, বেসামরিক লোকজনকে লক্ষ্য করে নয়, ত্রিপোলি থেকে ৭৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি সামরিক নিয়ন্ত্রণকেন্দ্রে এই হামলা চালানো হয়।
দুই সপ্তাহ আগে ন্যাটো জোটের এক বিমান হামলায় গাদ্দাফির ছোট ছেলে সাইফ আল-আরব গাদ্দাফি ও তিন নাতি-নাতনি নিহত হওয়ার পর ওই হামলায় লিবীয় নেতা গাদ্দাফিও মারা গেছেন বলে গুজব ছড়ায়। কিন্তু গত বুধবার টেলিভিশনে প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, লিবীয় নেতা কয়েকজন উপজাতীয় নেতার সঙ্গে বৈঠক করছেন।
লিবিয়ার সরকারি টেলিভিশনে বলা হয়েছে, ব্রেগা নগরে ন্যাটো বিমান হামলায় অন্তত ১৬ জন মারা গেছে। তবে তা এখনো গাদ্দাফি-সমর্থিত বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সেখানকার একটি অতিথিশালাকে লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয়েছে বলে চ্যানেলটি দাবি করেছে।

বামদের কেন এই বিপর্যয়?

মানুষ পরিবর্তন চেয়েছিল। মমতা সেটা বুঝেছিলেন। বামেরা বুঝতে পারেনি। এ কথাই বললেন বাম নেতা গৌতম দেব, যিনি নির্বাচনের আগে অনেক বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন। কিন্তু কেন বিপর্যয় তা নিয়ে বামফ্রন্টের মধ্যেই ‘চুলচেরা’ বিশ্লেষণ চলছে। সেটা জানতে অপেক্ষা করতে হবে। ১৭ মে সিপিআইএম এ ব্যাপারে বৈঠক করবে।

রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতি মানস ভূঁইয়া বলেছেন, শুধু নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠুভাবে ভোট করেছে বলেই এ ফল হয়েছে। আগের নির্বাচনও যদি এমনভাবে হতো, তাহলে তাদের পতন তখনই ঘটত।
বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, ‘এই ফলাফল অপ্রত্যাশিত। দলের যে মূল্যায়নের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার আমরা ১৯৯ আসনের কাছাকাছি আসন পাব বলেছিলাম, সেটি ছিল ভুল।’ ভোটের পরে সাংবাদিকদের সাঁড়াশি প্রশ্নের মুখে তিনি বলেন, ‘পরাজয়ের কারণ আমরা চুলচেরা বিশ্লেষণ করব। সে মতে আমরা শিক্ষা নেব। পরে আপনাদের জানাব।’
দিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি ১৩ মে বলেছেন, বামদের ভোট আগের নির্বাচনের চেয়ে আট শতাংশ কমেছে। মমতার দলের ভোট আট শতাংশ বেড়েছে। এই ভোট কংগ্রেসের। জয়-পরাজয় এ কারণেই।
তবে বামদের পরাজয়ের জমি অনেক আগে থেকেই ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছিল। ২০০৬ সালের ৩০ নভেম্বর হুগলি জেলার সিঙ্গুরে বামফ্রন্ট সরকার টাটাদের মোটর কারখানার জন্য জমি অধিগ্রহণের উদ্যোগ নেয়। মমতা এর বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন করেন। ধর্মতলায় টানা ২৭ দিন অনশন করেন। এর ফলে তৃণমূলের মাটি আস্তে আস্তে শক্ত হতে থাকে। একইভাবে ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসে নন্দীগ্রামে রাজ্যসরকার কেমিক্যাল হাব করতে জমি অধিগ্রহণে উদ্যোগী হন। ওই জমি উর্বর এবং এলাকাটি মুসলিম অধ্যুষিত। সেখানে গুলিতে ১৪ জন নিহত হয়। পশ্চিমবঙ্গের বুদ্ধিজীবীরা মৌনতা ভেঙে রাজপথে নামেন। এর সুফল আসে ২০০৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে। প্রথমবারের মতো তৃণমূল ১৯ জেলার মধ্যে দুটি জেলা পরিষদ দখল করে। অন্যদিকে কংগ্রেস পায় তিনটি জেলা। স্থানীয় সরকারের পঞ্চায়েতব্যবস্থা তিন স্তরের। গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ। প্রায় সব জেলায় প্রথম দুটি স্তরে তৃণমূল ও কংগ্রেস যথেষ্ট সাফল্য পায়। ওই সময় তৃণমূল ও কংগ্রেস অলিখিত আসন সমঝোতা করেছিল। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ওই ধারাবাহিকতায় দুটি দল জোট গড়ে। ওই নির্বাচনে তৃণমূল আগের একটি আসনের পরিবর্তে ১৯টি ও কংগ্রেস সাতটি আসন পায়।
তবে সবচেয়ে বড় কারণ কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসকে কাছে আসতে দেওয়া। ২০০৮ সালে বামদলগুলো কেন্দ্রে কংগ্রেস সরকারের ওপর থেকে বামরা সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়। ওই সময় প্রণব মুখার্জি বামদের বলেছিলেন, ‘কেন্দ্রে আমাদের দূরে ঠেলে দিলেও আমরা বাঁচব। কিন্তু রাজ্যে আপনারা খেসারত দেবেন।’
কংগ্রেসের এই প্রবীণ রাজনীতিকের কথা অক্ষরে অক্ষরে ফলে গেল।

বুধবারের মধ্যে শপথ নেবেন মমতা

গামী বুধবারের আগেই ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে পারেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর গত শুক্রবার সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের সঙ্গে দেখা করেন মমতা। আজ-কালের মধ্যে রাজ্যপাল মমতার দলকে শপথ নেওয়ার আহ্বান জানাতে পারেন।

তৃণমূলের একটি সূত্র জানায়, দিন চূড়ান্ত না হলেও আগামী ১৮ মে বুধবারই নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নিতে পারে। ২০০১ ও ২০০৬ সালের ১৮ মে মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। তবে তৃণমূলের অন্য একটি সূত্র বলেছে, বুধবারের আগেই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে পারেন মমতা। একটি সূত্রে জানা গেছে, প্রথম অবস্থায় ১৫ সদস্যবিশিষ্ট মন্ত্রিসভা গঠিত হতে পারে। বামফ্রন্টের মন্ত্রিসভা ছিল ৪৪ সদস্যের।
এদিকে আজ রোববার বিকেলে তৃণমূল কংগ্রেসের নবনির্বাচিত বিধায়কদের বৈঠক বসার কথা। এই বৈঠকে মমতাকে বিধানসভার নেতা নির্বাচন করা হবে।
মন্ত্রিসভায় কংগ্রেসকে যোগদানের আমন্ত্রণ: তৃণমূল কংগ্রেস জোটের অন্যতম শরিক কংগ্রেসকে রাজ্য মন্ত্রিসভায় যোগদানের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মমতা। গতকাল রাতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জির সঙ্গে বৈঠকে মমতা এ আমন্ত্রণ জানান। মমতা আরও বলেন, ‘আমরা চাই, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং কংগ্রেসের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী আমাদের শপথ গ্রহণের দিন উপস্থিত থাকবেন। আমি প্রণবদার সঙ্গে নয়াদিল্লি যাব এবং তাঁদের আমন্ত্রণ জানাব।’ তবে মন্ত্রিসভায় কংগ্রেস যোগ দেবে কি না, তা এখনো দলটি নিশ্চিত করেনি।
মন্ত্রী হচ্ছেন যাঁরা: মমতা আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, মন্ত্রিসভায় অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা স্থান পাবেন। মন্ত্রী হতে পারেন বলে যাঁদের নাম শোনা যাচ্ছে তাঁদের মধ্যে রয়েছেন: অমিত মিত্র, মনীশ গুপ্ত, রবি রঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, ব্রাত্য বসু, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, শোভন দেব চট্টোপাধ্যায়, জাভেদ খান, ববি হাকিম, মদন মিত্র, সুদর্শন ঘোষ দস্তিদার, সুদীপ্ত রায়, হায়দার আজিজ শফি, অশোক দেব, গৌতম দেব ও তাপস রায়।
এদিকে ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক ইকোনমিক টাইমস গতকাল বলেছে, মন্ত্রিসভার আকার ছোট হবে কি না, সে ব্যাপারে কোনো আভাস না পাওয়া গেলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম দফায় প্রায় ২৪ জন মন্ত্রী নিতে পারেন। নতুন মন্ত্রিসভায় দু-একজন নারীও থাকতে পারেন বলে জানিয়েছে পত্রিকাটি। এ ক্ষেত্রে শশী পাঁজা ও স্বাতী খন্দকারের নাম শোনা যাচ্ছে। স্বাতী হুগলি থেকে নির্বাচিত প্রয়াত তৃণমূল সাংসদ আকবর খন্দকারের স্ত্রী। শশীও তাঁর স্বামীর মৃত্যুর পর তৃণমূলের রাজনীতিতে যোগ দেন।
ইকোনমিক টাইমস বলেছে, ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ফিকি) সাধারণ সম্পাদক অমিত মিত্র এবং বিধানসভার সাবেক বিরোধী নেতা পার্থ চ্যাটার্জি উভয়েই মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর পেতে পারেন। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়টি মমতা নিজের হাতে রাখতে পারেন। মন্ত্রিসভায় গৌতম দেবকে অন্তর্ভুক্ত করে মমতা উত্তর বাংলার জনগণকে সন্তুষ্ট করবেন বলে মনে করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে মমতা ওই অঞ্চলে উন্নয়নমূলক কাজ শুরুর ইঙ্গিত দেবেন।
মুসলমানদের সন্তুষ্ট করতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকেও এক বা দুজন মন্ত্রী নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে মমতার। এ ক্ষেত্রে ববি হাকিমের নাম এখন সবার মুখে। নির্বাচনী প্রচারণায় মমতার খুব ঘনিষ্ঠ হিসেবে দেখা গেছে ববি হাকিমকে। তিনি কলকাতা বন্দর আসন থেকে জয়ী হয়েছেন।
৫৩ মুসলিম বিধায়ক: রাজ্যে এবার ৫৩ জন মুসলিম বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস থেকে ২২, কংগ্রেস থেকে ১৩ এবং বামফ্রন্ট থেকে ১৮ জন।
২৭ মন্ত্রী পরাজিত: মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যসহ ৩৫ জন মন্ত্রী নির্বাচনে অংশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীসহ ২৭ জন পরাজিত হয়েছেন। জয়ী হয়েছেন আবদুর রেজ্জাক মোল্লা, সূর্যকান্ত মিশ্র, আনিসুর রহমান, সুশান্ত ঘোষ, দশরথ তিরকে, দেব লীনা হেমব্রম, পরেশ অধিকারী ও সুভাস নস্কর।