Saturday, January 22, 2011

ক্ষুদ্রঋণ: দারিদ্র্য কমিয়েছে কতখানি

ক্ষুদ্র ঋণ দরিদ্র মানুষের মঙ্গলের জন্য দেয়া হচ্ছে বলে যে কথাটা প্রচলিত তা সম্পূর্ণ অসত্য। কারণ এ সামান্য ঋণ নিয়ে কোন প্রকল্প তা করতে পারে না। ক্ষুদ্র ঋণের উপকারিতা নিয়ে যে হারে ঢাক-ঢোল পিটানো হচ্ছে সে হারে দরিদ্র জনগণের উপকার হচ্ছে না।

বরঞ্চ দরিদ্র জনগণ ঋণ নিয়ে মহাবিপদে পড়েছে। এ ঋণ নিয়ে যেসব প্রকল্প করা হচ্ছে এবং তা থেকে যে পণ্য তৈরি হচ্ছে তা বিক্রি হচ্ছে না। কারণ এসব পণ্যের কোন ব্যাপক বাজার নেই, ক্রেতা নেই। ফলে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে দরিদ্র জনগণ আরো দরিদ্র হচ্ছে।

উদারণস্বরূপ বলতে চাই যে, আমি তাঁত শিল্পের জন্য ৫০ জন তাঁতীকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে দিয়েছিলাম; কিন্তু তারা সে ঋণ আর ফেরত দিতে পারেনি। কারণ তারা কাপড় তৈরি করে দোকানদারকে দিয়ে আসে। দোকানদার কাপড় বিক্রি না করা পর্যন্ত সে টাকা দেয় না। আর বিক্রি করার পরও কিস্তিতে টাকা দেয়। যার ফলে তারা আর ঋণ শোধ করতে পারে না।

পলস্নী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) তাদের সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে দরিদ্র জনগণের মধ্যে ঋণ দিচ্ছে। যেমন 'ঠেঙ্গামারা মহিলা সমিতি' (টিএমএসএস) এনজিওর মাধ্যমে পিকেএসএফ আমাদের এলাকায় হাজার কোটি টাকার উপরে নাকি ঋণ দিয়েছে; কিন্তু আমি নিজে দেখেছি সেখানে দরিদ্র মানুষের কোন উন্নতি হয়নি। এটা খুবই সন্দেহাতীত যে, এখানে স্বল্প সুদে সরকারের এতগুলো টাকা দেয়া এবং এর কোন সুপারভিশন না থাকাটার মধ্যে অন্তর্নিহিত কোন কারণ থাকতে পারে কি না? এর একটা সঠিক তদন্ত হওয়া দরকার। আমরা জানি সেখানে এ টাকা দিয়ে পেট্রোল পাম্প করা হচ্ছে, মেডিক্যাল কলেজ করা হচ্ছে। বড় পুঁজির ব্যবসা করা হচ্ছে। তাদের পুঁজি বাড়ছে। দরিদ্র মানুষের নামে নিয়ে নিজেরা বিশাল বিত্ত-বৈভবের মালিক হচ্ছে; কিন্তু দরিদ্র মানুষের জন্য কিছুই হয়নি। তবে একটি জিনিস দেখেছি। সেখানে টুপি তৈরী হচ্ছে। টুপিগুলো বিদেশে যাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে বলা যায়, ব্র্যাক নিজেরা দোকান করেছে। তারা অগ্রিম দিয়ে পণ্য তৈরি করে নেয় এবং অন্যদের কাছ থেকে পণ্য ক্রয় করছে। তারপর তারা বিক্রি করছে। তাদের অনেক দোকান রয়েছে যদিও চাহিদার তুলনায় খুবই কম; কিন্তু এটাই বিদেশে যাওয়ার সময় বাংলাদেশীরা উপহার হিসাবেও নিয়ে যায়।

গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে যে কেলেংকারির কথা শোনা যাচ্ছে তা খুবই উঁচু স্তরের ব্যাপার। আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রফেসর ড. ইউনূস সাহেবকে শ্রদ্ধা করি। তিনি সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার নিমগাছীতে সরকারি খাস দীঘি ও প্রায় ৪০০ পুকুর নিয়ে একটি প্রকল্প করেছিলেন। এ প্রকল্পটি ব্যর্থ হয়। উলেস্নখ্য যে, ব্রিটিশ গভর্নমেন্ট উক্ত দীঘি ও পুকুরগুলো প্রায় দশ কোটি টাকা খরচ করে মৎস্য চাষের উপযোগী করে তুলেছিলেন দরিদ্র জনগণের জন্য। তিনি গ্রামীণ চেক প্রকল্প করবেন বলে বিশাল প্রচার করেন। এটাও ব্যর্থ হয়। টাঙ্গাইলে তিনি একটি সুতার মিল করেছেন। সেটার সুদের হার খুব কম; কিন্তু সেটাতেও তিনি ফবভধঁষঃবৎ হয়েছেন। তার প্রকল্পে তিনি নিজেই যখন ফবভধঁষঃবৎ হন তখন গরিব মানুষ ৩৩% সুদ দিয়ে কিভাবে ঋণমুক্ত হবেন! তিনি গরীব মানুষের কাছ থেকে ৩৩% সুদ নিয়ে থাকেন। মানুষ বলছে, তার প্রতিষ্ঠানের সুদের হারের হিসাব-নিকাশ বুঝা যাচ্ছে না; কিন্তু এটা শোনা যায় যে, তিনি তার লবিস্টদের জন্য অসম্ভব ব্যয় করে থাকেন এবং তার 'পাবলিসিটি ব্যয়ের কোন হিসাব নেই।

বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য তিনি নোবেল পুরস্কার পান। অথচ তিনি এখন আমেরিকার গরীব মানুষকে ধনী করার চেষ্টা করছেন। চীনের গরীব লোকদের ধনী করার ঋণ প্রকল্প নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। গত আগস্ট মাসে চীনের দারিদ্র্য দূরীকরণ ও উন্নয়ন মন্ত্রী ঢাকা সফর করেন। সে সময় তার সাথে আলোচনায় তাদের দেশের দরিদ্র জনগণের বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম। জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তাদের দেশে কত ভাগ লোক গরিব আছে। তিনি জানান, তাদের দেশে শতকরা এক ভাগ লোক গরিব রয়েছে। তারা খেতে পাচ্ছেন, কোন কোন জায়গায় তাদের বিদু্যৎ রয়েছে, কোন কোন জায়গায় বিদু্যৎ নেই। এসব দরিদ্র লোকের বসবাস প্রধানত পাহাড়ী এলাকায়।

আরডিআরএস (রংপুর)-কে ইফাদ ও অন্যান্য সংস্থা থেকে অনেক টাকা ঋণ দেয়া হয়েছিল এ এলাকার দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য। কুড়িগ্রামে তারা সবচেয়ে বেশি টাকার অপব্যয় করেছে; কিন্তু দরিদ্র জনগণ যারা ঋণ নিয়েছেন তারা আরো বেশি গরিব। আসলে এসবের পুরো তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। আরডিআরএস দরিদ্র জনগণের জন্য কিছু না করে দরিদ্র মানুষের টাকা দিয়ে তারা নিজেরা বিরাট গেস্ট হাউজ করেছেন, কনফারেন্স হল করেছেন। সে আয় দিয়ে আরডিআরএস-এর কর্মকর্তারা এখন বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন।

অনেক পরিকল্পনা ও অর্থনৈতিক উন্নতির নানা সূচকের কথা বলা হলেও দেশে এখনো অভাবী মানুষের সংখ্যা কমছে না। দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে হাজারো প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে, তবু কমছে না দারিদ্র্যের হার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর উদ্যোগে (বিবিএস) পরিচালিত 'মৌলিক সুযোগ-সুবিধা পরিবীক্ষণ জরিপ: ২০০৯' -এর প্রতিবেদনে যে চিত্র উঠে এসেছে তা থেকে জানা যায়, দেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ৭৫ শতাংশ এখনো কাঁচাঘর ও ঝুপড়িতে বসবাস করে। ৬.৫ কোটি লোক অভুক্ত থাকে। সঠিক পরিকল্পনা না থাকার জন্য আসলে কিছুই হচ্ছে না। সঠিকভাবে পরিকল্পনা নিয়ে বৃহদাকারে বাস্তবমুখী কিছু পদক্ষেপ না নিতে পারলে শুধু ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ সম্ভব হবে না।

আমি একবার থাইল্যান্ডে রাষ্ট্রীয় সফরে রাষ্ট্রপতির সফরসঙ্গী হিসাবে গিয়েছিলাম। সেখানে থাই রাজকুমারীর সাথে আমার কথা হয়েছিল। আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, তাদের রাজপরিবার এত জনপ্রিয় কেন? তিনি বললেন, আমরা সকলেই জনগণের জন্য কিছু না কিছু কাজ করি। রাজাও গ্রামে যান, কাজ করেন। আমি বললাম, আপনি কি কাজ করেন? তিনি জানালেন, তিনি বেশ কিছু মহিলা নিয়ে কাজ করছেন যারা রুমাল তৈরি করে। তিনি সে রুমালের নিচে স্বাক্ষর দেন। রুমালে রাজকুমারীর স্বাক্ষর দেখে লোকজন আগ্রহ করে বেশি দামে কেনেন। রুমাল তৈরি করতে যে খরচ হয় তার চেয়ে অনেক বেশি দামে দেশ-বিদেশে বিক্রি হয়। আর এ আয় থেকে গরীব মানুষকে সাহায্য করে থাকেন। তিনি আমাকেও একটি রুমাল উপহার দিয়েছিলেন। যাহোক, আমাদের তো আর এরকম প্রকল্প করার সুযোগ নেই। আমাদেরকে বাস্তবমুখী প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।

ভারতে তারা ডযরঃব জবাড়ষঁঃরড়হ করেছে। 'আমুল' নামে বিখ্যাত দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদন করে আসছে। 'আমুল' অর্থ প্রতিজ্ঞা। ১৯৪৬ সালে গুজরাটে সমবায় দুগ্ধ বাজারজাত ফেডারেশন চালু হয়। এর দায়িত্বে ছিলেন ড. ভারগিজ কুরিয়েন। বর্তমানে সেখানে ২.৮ মিলিয়ন গ্রামবাসী এই ফেডারেশনের মালিক।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী এ প্রকল্পটি চালু করেছিলেন। পরে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী এ প্রকল্পের বিস্তৃতি ঘটান। তিনি গোটা ভারতেই সমবায়ের ভিত্তিতে এ প্রকল্পের মডেলে দুগ্ধ খামার স্থাপন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সমবায় করে এক এক জনকে একটি/দুইটি করে মহিষ দেয়া হয়। প্রতিদিন সকালে তারা তাদের মহিষের দুধ সমবায় খামারে এসে দিয়ে যান, বিকালেও দিয়ে যান এবং টাকা নিয়ে যান। তাদের প্রত্যেককেই একটি করে দুধ পরীক্ষা করার মেশিন দেয়া হয়েছে যার দ্বারা তারা নিজেরাই দুধ পরীক্ষা করে তাতে কত ভাগ ফ্যাট, কতভাগ শর্করা ইত্যাদি নির্ণয় করে সমবায় খামারে সরবরাহ করে থাকেন। এতে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে তাদের সময় নষ্ট করতে হয় না। এছাড়াও সরকার বিনা পয়সায় গবাদি পশুর জন্য ওষুধ সরবরাহ করে থাকে। এভাবে পরবতর্ীতে ভারত বিশ্বের মধ্যে অন্যতম দুগ্ধ উৎপাদনকারী দেশে পরিণত হয়। সুতরাং গরিবদের জন্য কিছু করতে হলে এ ধরনের বাস্তবমুখী প্রকল্প গ্রহণ করা দরকার। আমাদের দেশে এরকম প্রকল্প করা যায়। প্রত্যেককে একটি করে গরু দেয়া যায়।

চর জীবিকায়ন কর্মসূচি (সিএলপি)'র মাধ্যমে সরকারের বহু টাকা অপচয় হচ্ছে। কারণ আমাদের এখানে দেখা যায়, ব্রহ্মপুত্র নদের বালুতে সিএলপি চরবাসীদের জন্য ঘর তৈরি করে দিচ্ছে। আবার বর্ষায় পানি এলেই ঘরবাড়ি ভেঙ্গে যায়। এক বছরও টিকে না। সুতরাং এ খাতে ব্যয় করার কোন অর্থ হয় না। এ টাকা চরবাসীকে বিতরণ করে দিলেও তারা কিছু একটা করে খেতে পারবে।

এখন যে ক্ষুদ্র ঋণ দেয়া হচ্ছে তাতে দেখা যায়, ঋণ নিয়ে লোকজন কি করবে তা ঠিক করতে পারে না। কারণ তারা যা কিছু তৈরি করবে সেটার বাজারে চাহিদা নেই। বিক্রি হয় না। যেমন বাঁশের তৈরি পণ্য, পাটের তৈরি ব্যাগ, ছিকা ইত্যাদি। (আগামিকাল সমাপ্য)

আমাদের নদী ভাঙ্গন এলাকা। এখানে কোন প্রকল্প করা খুব কঠিন। কারণ আজকে এখানে জনপদ আছে, কালকে সেখানে নদী ভেঙ্গে সব শেষ করে ফেলে। ভাঙ্গনের ফলে লোকজন কে কোথায় চলে যায় তার আর কোন হদিস থাকে না। ফলে ঋণের খোঁজ-খবর থাকে না। তাই নদী ভাঙ্গন রোধ, সারফেস ওয়াটার সেচ ব্যবস্থা এবং মৎস্য চাষ বৃদ্ধি ইত্যাদির জন্য আমাদেরকে বাঁধ এবং সেচ প্রকল্পের উপর জোর দিতে হবে; কিন্তু সেখানে যথাযথ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না।

এনজিওগুলো ক্ষুদ্র ঋণের নামে কোথায় কোথায় কি প্রকল্পে ঋণ দিয়েছে এবং বিদেশ থেকে কত টাকা নিয়ে এসেছে সে সবের একটা হিসাব নেয়া প্রয়োজন, তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। কারণ কোন প্রকল্প আসলে ইউএনডিপি অথবা আমাদের শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে স্টাডি করে দেখতে পারি যে, কি কি জিনিস ব্যবহার করতে পারি এবং কি কি জিনিস রফতানি করতে পারি। এছাড়া আমাদের দেশের প্রতিটি এলাকায়, বিশেষ করে এলাকা ভিত্তিক অর্থাৎ কোন্ কোন্ এলাকায় কোন্ কোন্ পণ্য তৈরির কাঁচামাল রয়েছে সেটা নির্ধারণ করে সেভাবে স্থানীয় জনগণকে প্রশিক্ষণ দিয়ে উপযুক্ত ছোট ছোট প্রকল্প তৈরি করে এসবের উপর ঋণ কার্যক্রম চালানো দরকার।

চীন দেশে তাদের একটা সুবিধা রয়েছে- সেটা হলো মিলের পাশেই লেবার কলোনী থাকে। অবসর সময়ে তারা সবাই কুটির শিল্পের কাজ করেন। এতে করে তারা সস্তা দামে তাদের তৈরি পণ্য বিক্রি করতে পারে; কিন্তু আমাদের দেশে এক সাথে এত লোক পাওয়া সম্ভব নয়।

আমাদের দেশের কাঁঠালের বিদেশে প্রচুর চাহিদা রয়েছে; কিন্তু আমাদের দেশের কাঁঠালের আকার এক নয়। কিছু বড় কিছু ছোট আকারের। এগুলোর প্যাকেজ করা খুবই দুরূহ, খরচ বেশি পড়ে। এজন্য বিদেশে রফতানি করা যায় না। আবার মালয়েশিয়ায় তারা কলম দিয়ে জেনোটিক পদ্ধতিতে চাষ করে তাদের সব কাঁঠাল একই সাইজে নিয়ে এসেছে। এতে প্যাকেজিংয়ের সুবিধা হয়। ফলে তারা বিদেশে রফতানি করার সুযোগ পাচ্ছে।

একইভাবে, আমাদের দেশের পেঁপে বিদেশে রফতানির খুব সুযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র চাষীদের ঋণ দিয়ে প্রচুর পেঁপে উৎপাদন করতে পারি, বিদেশে রফতানি করতে পারি। ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে আমরা এ সব চাষের ক্ষেত্রে অনেক উৎপাদন বাড়াতে পারি। 'একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে'র জন্য যে জায়গার দরকার হবে সে পরিমাণে জায়গা দরিদ্র জনগণের নেই। অনেক লোক একসঙ্গে থাকতে পারে সে হিসাবে লোকজনকে পাশাপাশি বসবাসের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।

দেশের দরিদ্র জনগণকে সুদি ব্যবসার এ নির্যাতন থেকে বাঁচানোর দায়িত্ব সরকারেরই। কারণ যারা মাইক্রো ক্রেডিটের ব্যবসা করছে তারা অনেক শক্তিশালী। তাদের সঙ্গে যুদ্ধটা একমাত্র সরকারই করতে পারে। এ অনিয়ন্ত্রিত সুদের ব্যবসা গরিব মানুষের সব সৃজনীশক্তি শেষ করে দিচ্ছে। আমাদের দেশে অতি দরিদ্র গ্রামীণ জনগণকে এনজিওদের উপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। হাজার হাজার এনজিও হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করছে। সে হারে দারিদ্র্য কমছে কই! অথচ দরিদ্র জনগণের নামে এনজিওগুলো নিজেদেরকে সরকারের চেয়ে বেশি শক্তিশালী মনে করছে। তারা নানা ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়ছে। এমনকি গার্মেন্টস সেক্টরে শ্রমিক আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ছে। দেশের ক্ষতি করছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের তরফ থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও মূল্যায়নের ব্যবস্থা থাকা দরকার। তাহলে দুনর্ীতি ও অনিয়ম রোধ করা সম্ভব। তাতে জাতীয়ভাবে আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।

এনজিওগুলোর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের কাজের মনিটরিং করতে হবে। মূল্যায়ন করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক, বিআইডিএস ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যম প্রতি বৎসব মূল্যায়ন করে জনসম্মুখে রিপোর্ট পেশ করতে হবে। এ জন্য ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের মত মাইক্রো ফাইন্যান্স (নিয়ন্ত্রণ ও মূল্যায়ন) আইন নামে একটি আইন পাস করা যেতে পারে।

দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারকে এলাকা ভিত্তিক অথবা প্রতিটি গ্রামে কি কি সম্পদ রয়েছে এবং সেই সম্পদ কিভাবে সদ্ব্যবহার করে সর্বোচ্চ উন্নয়ন করা যাবে তা সমীক্ষার মাধ্যমে নির্ধারণ করে পরিকল্পিতভাবে ব্যাপক প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।

মানুষের চাহিদা ও সামর্থ্য অনুযায়ী সেব প্রকল্পে ঋণ দিতে হবে। ঋণ খাটানোর জন্য সঠিক পরামর্শ দিতে হবে। মূল্যায়ন করতে হবে। তবেই ইপ্সিত সাফল্য আসবে। এভাবে এনজিওগুলোকে একেবারে সার্বভৌম ক্ষমতা দেয়া যায় না। এগুলোতে সরকার বিশেষ করে স্থানীয় সরকারের মনিটরিং থাকতে হবে। এনজিওদের উপর নির্ভরতা কমাতে আমাদের পুরাতন সমবায় সমিতিগুলোকে জাগিয়ে তুলতে হবে। জোরদার করতে হবে। কৃষি ব্যাংক এবং অন্যান্য ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ক্ষুদ্র ঋণ চালু করতে হবে।

সুপারিশ:

১. শরে বাংলা একে ফজলুল হক যেভাবে ঋণ সালিসি বোর্ড করে এদেশের কৃষকদেরকে বাঁচিয়েছিলেন, তেমনিভাবে অবিলম্বে একটি ঋণ সালিসি বোর্ড গঠন করে এনজিওদের চড়া সুদের হাত থেকে দরিদ্র জনগণকে মুক্ত করার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

২. ক্ষুদ্র ঋণের সকল সুদ মওকুফ করতে হবে।

৩. সম্ভব হলে আসল ও সুদ উভয়ই মওকুফ করা যাতে করে প্রায় আড়াই কোটি মহিলা যারা ঋণ শোধ করতে পারছে না, তারা যেন আবার স্বাভাবিক জীবন যাপনে ফিরে আসতে পারে এবং নতুন করে কিছু একটা করতে পারে।

জনস্বার্থে সরকার আশা করি এ ব্যাপারে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
----------
লেখকঃ এ,কে,এম মাঈদুল ইসলাম এম,পি
সদস্য, অর্থমন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ও সাবেক মন্ত্রী

শিক্ষার হার ও মান দুই-ই বাড়াতে হবে by মাহমুদুল বাসার

০১১ সালের প্রথম মাসের প্রথম সপ্তাহেই সরকার শিক্ষাথর্ীদের হাতে বিনামূল্যে পাঠ্যবই তুলে দিয়েছেন। ১৯৭২ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত শুধু প্রাইমারি স্কুলে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত বিনামূল্যে বই দেয়া হত। এবার দেয়া হলো নবম শ্রেণী পর্যন্ত।

নবম শ্রেণীর বই বিতরণ করা মানে এসএসসি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার বই সরকার ছাত্রছাত্রীদের বুঝিয়ে দিলেন। নতুন বই বিনামূল্যে হাতে পেয়ে ছেলে-মেয়েরা কতটা খুশি এবং উলস্নসিত হয়েছে, তা নিজের চোখে দেখেছি। এই চিন্তাটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মাথায় ছিলো। একজন বিজ্ঞ কলাম লেখক বলেছেন, ১৯৯২ সাল থেকে পদক্ষেপটি নেয়া হয়েছে। না, মোটেও নয়। ১৯৯২ সাল থেকে মেয়েদের অবৈতনিক শিক্ষা এবং উপবৃত্তি প্রদান শুরু হয়, একথা সত্য। ক্রমে তা সম্প্রসারিত হয়। কোনো সরকারই শিক্ষার এই কল্যাণকর নীতিমালাকে সংকুচিত করেনি। এজন্য আমরা সব সরকারকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

তবে বিনামূল্যে বই বিতরণ শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর সরকারের আমলে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত। বর্তমান মহাজোট সরকারের আমলে শুরু হলো নবম শ্রেণী পর্যন্ত বিনামূল্যে পাঠ্যবই দেয়া। ভবিষ্যতে এই পদক্ষেপ আরো সম্প্রসারিত হবে, আশা করতে পারি আমরা। বর্তমান সরকার চেষ্টা চালাচ্ছেন শিক্ষাকে আধুনিক, গণমুখী এবং কর্মমুখী করার জন্য। ইংরেজ সরকার চালু করেছিলো কেরানি তৈরির শিক্ষা ব্যবস্থা। একথা দুঃখের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন। সৈয়দ মুজতবা আলী বলেছেন, ইংরেজ চেয়েছিলো আমাদের মাছি মারা কেরানি বানাতে। পাকিস্তান সরকার যা চেয়েছিলো তা আর বলে লাভ নেই, আমাদের রক্তঝরা আন্দোলনের ইতিহাসে সে সব লেখা আছে।

সরকার চাচ্ছেন শিক্ষাকে মুখস্থ নির্ভরতা বাতিল করতে। রবীন্দ্রনাথই বলেছেন, পরীক্ষার হলে পেটে করে নেয়া আর পকেটে করে নেয়া একই কথা। দুটোই নকল। তাই ছাত্র-ছাত্রীরা বুঝে উপলব্ধি করে, আয়ত্ত করে, বার বার রিডিং পড়ে গভীরভাবে ধারণা নিয়ে নিজস্ব ক্ষমতা দিয়ে প্রশ্নের উত্তর লিখবে। তাই আমাদের বিদ্বান এবং শিক্ষানীতির চিন্তকরা চেষ্টা করছেন মুখস্থবিদ্যাকে নিশ্চিহ্ন করতে।

বর্তমান সরকার যে মাধ্যমিক পর্যন্ত পরীক্ষার তিনটি স্তরের চূড়ান্ত ব্যবস্থা করেছেন, এটা একটা কাজের কাজ করেছেন। এতে শিক্ষার কাঙ্ক্ষিত মানোন্নয়ন ঘটবে। অতীতে এই সিস্টেম না থাকাতে গোঁজামিল দিয়ে, ফাঁকি দিয়ে, চৌর্যবৃত্তির মাধ্যমে জাতি ভুয়া এসএসসি উত্তীর্ণ প্রজন্ম পেয়েছে। এই সিস্টেমে ৫ম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষায় উন্মোচন ঘটবে একজন শিক্ষাথর্ীর সার্বিক অবস্থান। ৫ম শ্রেণী ঠিকমত পার হলে, ৮ম শ্রেণীও ঠিকমত পার হতে পারবে, মাধ্যমিকে যেয়ে আরো পরিপক্ব হয়ে উত্তীর্ণ হবে। উচ্চ মাধ্যমিকে যেয়ে একজন শিক্ষাথর্ী পরিপূর্ণ মেধাবী হয়ে উঠবে সহজভাবে। কিন্তু এই তিনটি স্তরের চূড়ান্ত পরীক্ষা না থাকলে শিক্ষাথর্ীর ভেতরে আধাসেদ্ধ মাংসের মত আধাশিক্ষার গোঁজামিল থেকে যেতো। আমরা চাই, শিক্ষিত মুর্খ, ফাঁকিবাজরা ৫ম শ্রেণীতে ঝরে যাক। একটি জাতীয় পত্রিকায় দেখলাম, 'উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে ১৯ প্রকল্পে অর্থায়ন করবে সরকার'। এই প্রতিবেদনে পেলাম, দেশের উচ্চ শিক্ষার মানোন্নয়নে ৬৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯১টি প্রকল্পভিত্তিক গবেষণা করবে সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, শিক্ষার মানোন্নয়নে গবেষণার বিকল্প নেই। শিক্ষা নিয়ে অনেক ভাবনার বিষয় আছে। শিক্ষা নিয়ে ভেবেছেন রাজা রামমোহন রায়, বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ, প্রমথ চৌধুরী, মনীষী মোতাহের হোসেন চৌধুরী প্রমুখ বাঙালি। তাদের ভাবনাগুলো আমাদের সামনে থাকলে ভালো হয়। তারা তাদের সময়ে যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা চেয়েছিলেন। আমরাও চাই যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা।

বিদ্যাসাগর শাস্ত্র নির্ভর শিক্ষা চাননি, রবীন্দ্রনাথ চাননি ইংরেজি নির্ভর শিক্ষা, মোতাহের হোসেন চৌধুরী চাননি অমানবিক শিক্ষা। এসব দৃষ্টিভঙ্গিতো আমরা উপেক্ষা করতে পারি না। শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন যে, ৫ম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা নিয়ে বুঝতে পারলাম, গ্রামেও মেধা আছে। তাদের বিকাশের সুযোগ করে দিতে হবে। এটা পারে শুধু বৈষম্যহীন শিক্ষানীতি। সরকার মনে-প্রাণে চাচ্ছেন না যে, শিক্ষাকে পণ্যের মত বাজার থেকে কিনে নিয়ে যাক বিত্তবানরা।

বর্তমান শিক্ষামন্ত্রীকে ভাবতে হবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই যাতে শিক্ষকরা শিক্ষাথর্ীদের পড়া আদায় করে নেন একজন ধাত্রীর মত। একটি গরিব পরিবারের সন্তানকে গণিত, জ্যামিতি, ইংরেজি, বাংলা, ব্যাকরণ, বানান কৌশল শেখাবে? তার মা, বাবা, বড় ভাই যদি হয় নিরেট নিরক্ষর; যদি তার প্রাইভেট টিউটর রাখার সামর্থ্য না থাকে, তাহলে ঐসব টেকনিক্যাল বিষয়গুলো। হাতে ধরে কে শেখাবে? এই প্রশ্ন মাথায় রেখে, যারা শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে গবেষণা করছেন সরকারি অর্থায়নে, তাদের সমাধানের পথ বাতলে দিতে হবে। ব্যবস্থা করতে হবে গরিবের সন্তান যেনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষাটা পায়। তাতেই দেশ উপকৃত হবে। মনে রাখা দরকার : শিক্ষার মান যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি শিক্ষার হারও বাড়াতে হবে। দেশের প্রতিটি নাগরিক যদি সুশিক্ষিত হয়, দক্ষ জনশক্তি হয়, তাহলেই দেশের উন্নতি হবে। সুসাহিত্যিক ডাঃ লুৎফর রহমান বলেছেন, শতকরা ৫ জন উচ্চশিক্ষিত হয়ে লাভ কী দেশের? কথাটা মনে রাখা জরুরি।

প্রতিক্রিয়া বনাম রাজনৈতিক প্রক্রিয়া by ড. ইশা মোহাম্মদ

স্থানীয় সরকার নিয়ে নানান কিসিমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে বহুকাল যাবৎ। কোন একটিতে কেউই স্থির থাকতে পারছে না। স্থানীয় সরকারকে স্বায়ত্তশাসন কিংবা স্বাধীনতা দেয়া হবে কিনা, দিলে তার চেহারা কেমন হবে- তা নিয়ে চিন্তা কিংবা দুশ্চিন্তার শেষ নেই।

স্থানীয় সরকারের নির্বাচন এলেই এটি নিয়ে আবার পুরানো কথাগুলো ওঠে। কোন কোন রাজনৈতিক দল রাজনৈতিক পরিচয়ে নির্বাচন পছন্দ করে। কোন কোন রাজনৈতিক দল অরাজনৈতিক নির্বাচন পছন্দ করে। এটি খুবই রহস্যময় মনে হয়। রাজনৈতিক দল কেন, কোন গোপনপ্রিয়তায় অরাজনৈতিক নির্বাচন পছন্দ করবে_ তা বোঝা যায় না। নির্বাচন কমিশন অরাজনৈতিক, স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ। তারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অরাজনৈতিক নির্বাচন পছন্দ করতেই পারে। আবার বাংলাদেশের আইনেও স্থানীয় নির্বাচনকে অরাজনৈতিক নির্বাচনের বিধি-বিধান আছে। বিষয়টি অনেকটা সোনার পাথরবাটির মত। কেননা, স্থানীয় নির্বাচন, তা সে পৌরসভা কিংবা ইউনিয়ন পরিষদ, যাই হোক না কেন, কোনদিনই অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের নির্বাচন হবে না। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তি মাত্রই রাজনৈতিক। কোন না কোন রাজনৈতিক দলের সাথে তাদের সম্পর্ক আছে। না থাকলে প্রকাশ্যে, গোপনে তারা সম্পর্ক রক্ষা করে। জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচনে তারা সবাই প্রত্যক্ষভাবে কোন না কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষে অবস্থান নেয়। এরা এখন আর কেউ তাদের পছন্দের দলের প্রতীক না নিয়ে নির্বাচন করবে না। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রদত্ত প্রতীক তালিকা থেকে একটা বেছে নেবে। ধরে নেয়া হয় যে, যেহেতু এরা স্থানীয় পর্যায়ে খুবই পরিচিত তাই যে-কোন প্রতীকই এদের জন্য একই প্রকার তাৎপর্য বহন করে। স্থানীয় পর্যায়ে প্রতীক প্রধান নয়, ব্যক্তিই প্রধান। স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনের ক্ষেত্রে আবার অসংখ্য স্বতন্ত্র প্রাথর্ী থাকে। এদের মধ্যে কেউ কেউ নির্বাচিত হয়েও আসে। এসব বিষয়-আশয় দেখে-শুনে কি নির্দিষ্ট করে বলা যায় যে, স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচন প্রকৃত অর্থে অরাজনৈতিক? আসলে এটি খুবই নিম্নমানের প্রতারণা। বাংলাদেশের কোন নির্বাচনই আর অরাজনৈতিক হবে না। নির্বাচন কমিশন 'অরাজনৈতিক নির্বাচন' বলে সাধারণ মানুষকে ধাপ্পা দিচ্ছে। প্রাথর্ী নিজে নিজেকে অরাজনৈতিক বলে সাধারণ মানুষকে ধাপ্পা দিচ্ছে। যেখানে ব্যক্তি ও প্রত্যাশা রাজনৈতিক সেখানে অরাজনৈতিক নির্বাচনের কথা বলা মানেই প্রতারণা। আর তাদের এই নিকৃষ্ট পর্যায়ের গণপ্রতারণায় সরকার ও রাষ্ট্র নির্বিকারচিত্তে অংশগ্রহণ করছে। ভাবা যায়, বিশ্বায়নের এই যুগে, যেখানে মানবাধিকার নিয়ে ছোট-বড় কথার সমুদ্র সৃষ্টি হচ্ছে। সেখানে সাধারণ মানুষকে অরাজনৈতিক নির্বাচনের কথা বলে ভাঁওতা দিয়ে তাদের মানবাধিকার লংঘন করা হচ্ছে নির্বিকারচিত্তে।

হয়ত অনেকেই জানে না যে, বিশ্বের সব 'সভ্য' দেশে স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচন রাজনৈতিক। তবে ইউরোপ আমেরিকার রাজনৈতিক ও আমাদের রাজনৈতিকতা এক ও অভিন্ন নয়। তারপরও রাজনৈতিক নির্বাচন হলে আজকের দিনের বিবেচনায় মানবাধিকার সংরক্ষিত হয়। নইলে যারা রাজনৈতিক পরিচয়ে নির্বাচন করতে চায়, তাদের মানবাধিকার লংঘিত হয়।

প্রথম কথা হচ্ছে, নির্বাচন অরাজনৈতিক হবে কেন? অনেকেই প্রত্যাশা করেন, কেন্দ্রীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক চাপে তাপে স্থানীয় 'স্বাধীনতা' নোংরা হয়ে যাবে। তাই কেন্দ্রীয় পর্যায়ের রাজনীতি যতই নোংরা ও অকল্যাণকর হোক না কেন, তার প্রভাব যেন স্থানীয় সুখ-শান্তিকে নষ্ট না করে দেয়। দ্বিতীয়, চিন্তা হচ্ছে বিভাজনে অপচয়ের চিন্তা। 'স্থান' যদি রাজনৈতিকভাবে বিভাজিত হয়ে যায় তবে সামাজিক পরিবেশও বিভাজিত হবে। স্থানের আবহমান কালব্যাপী ঐক্য বিনষ্ট হবে। স্থানীয় পর্যায়ের উন্নয়নক্ষেত্রে যেটি দেখা গেছে। বিরোধী দলের সাংসদের এলাকায় উন্নয়ন চোখে দেখা যায় না। স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচন রাজনৈতিক হলে ঐ রকম বক্র দৃষ্টির কারণে কোন কোন এলাকা উন্নয়ন বর্জিত হতে পারে। এটি একটি ভয় এবং অভাবিত নয়। কিন্তু এই ভয় সনাতন, সমকালীন ও আধুনিক চিন্তার সাথে মেলে না।

বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্যে প্রথম প্রয়োজন প্রতিক্রিয়া তথা মৌলবাদকে ধ্বংস করা। রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমেই স্থানীয় পর্যায়ের 'প্রতিক্রিয়াকে' তৃণমূল থেকে নির্মূল করা সম্ভব। বাংলাদেশে মৌলবাদ কেন্দ্রে প্রবল নয় কিন্তু প্রতন্তে প্রবল। কিন্তু মৌলবাদকে সরকার ইচ্ছামত পিটিয়ে দেশ ছাড়া করতে পারবে না। দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই ধীরে সুস্থে প্রত্যন্ত থেকে প্রতিক্রিয়া তথা মৌলবাদকে উচ্ছেদ করা সম্ভব। তাই এখন যখন সুযোগ আছে, তখন প্রয়োজন হল, পৌর ও ইউনিয়ন পর্যায়ের সবকটি নির্বাচনকে 'রাজনৈতিক' করা।

প্রথম বাধা আসবে নির্বাচন কমিশন থেকে তারা আইন মোতাবেক চলতে চাইবে। তাই প্রথম প্রয়োজন আইনটাকে সংশোধন। আইন সংশোধন করাও অসম্ভব হবে না, যদি হাইকোর্টে একটা মামলা ঠুকে দেয়া যায়, তবে হয়ত একটা পরিত্রাণ সূত্র পাওয়া যায়। সংসদে আইন পাস করেও স্থানীয় নির্বাচনকে রাজনৈতিক করা যায়। কিন্তু হাইকোর্টে মামলা কে করবে? আইন পাসইবা কে করবে? এ গুরুদায়িত্ব মহাজোট সরকার, তথা আওয়ামী লীগকেই করতে হবে। সংসদে তাদের যথেষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। দেশ ও জাতির কল্যাণে স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে রাজনৈতিক করার জন্যে যে কোন পদক্ষেপই নেয়া যায়। তবে প্রবল বাধা আসবে বিরোধী রাজনৈতিক দল থেকে। এই ভয়ে তারা রাজনৈতিক নির্বাচনে প্রবল বাধা সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু তাই বলে ভয় পেলে চলবে না। মহাজোটের হাতে অনেক সময় নেই। সময় কম, কাজ বেশি। এখনই এখনকার কাজটা করা দরকার। আশা করি জাতীয় নেতৃত্ব বিষয়টি বুঝবে এবং জাতিকে 'প্রতিক্রিয়া'মুক্ত করার জন্যে স্থানীয় নির্বাচনকে রাজনৈতিক করবে।

যানজটের আরেক নাম মন্থরতা by এমজি মহিউদ্দিন আহম্মদ

দেশের রাজধানী বিধায় ঢাকার পরিকল্পিত উন্নয়নের বিকল্প নেই। এ কাজটি ইতিমধ্যে বিলম্বিত হয়ে গেছে। চার দশক আগে এ নগরীতে দশ-বার লাখ মানুষের বসবাস থাকলেও বর্তমান সময়ে তা প্রায় দেড় কোটিতে উন্নীত হয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন কাজে ঢাকায় আসা-যাওয়া করছে লাখ লাখ মানুষ।

এ বিপুল জনসংখ্যার কবলে সৃষ্ট যানজট নিরসনে আমাদের যথার্থ উদ্যোগ নেয়া অপরিহার্য। দেশের সব এলাকায় বিভিন্নমুখী অর্থনৈতিক উন্নয়ন তৎপরতা কার্যকর করতে সময় লাগবে এবং এসময়ে ঢাকামুখী মানুষের স্রোত চলতেই থাকবে। আমাদের এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এখানে কত মানুষের জায়গা করা যেতে পারে। ধরা যাক কম-বেশি তিন কোটি মানুষ ঢাকায় বসবাস করবে। এ বিপুল জনগোষ্ঠীর স্বাভাবিক চলাচল নিশ্চিত করতে ঢাকার রাস্তার উন্নয়নে পরিকল্পিত উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। একই সাথে সারাদেশ থেকে জীবিকার সন্ধানে ঢাকায় আসা মানুষের স্রোত বন্ধ করার লক্ষ্যে দেশের সর্বত্র অর্থনৈতিক উন্নয়ন তৎপরতা ত্বরান্বিত করতে হবে। যাতে দেশের মানুষ নিজেদের বাড়ির কাছাকাছি কর্মসংস্থানের সুযোগ পেতে পারে। ঢাকার চারপাশে স্যাটেলাইট শহর গড়ে তোলার কথা শুনা যায়। যা বাস্তবায়নে ঢাকার যানজট নিরসনে ইতিবাচক ভূমিকা না থাকাই স্বাভাবিক।

ঢাকার যানজট নিরসনে দেশের সার্বিক উন্নয়ন তৎপরতার সাথে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। যানজট নিরসনে ধারাবাহিকভাবে অব্যাহত সমন্বিত তৎপরতা নিশ্চিত করতে হবে। প্রথমতঃ ঢাকায় বসবাসকারী ও চলাচলকারী মানুষের স্বাভাবিক চলাচলের জন্য (১) তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা (২) মধ্য মেয়াদী ব্যবস্থা এবং (৩) দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থাসহ এগোতে হবে। দ্বিতীয়তঃ দেশের সকল এলাকায় শিল্পায়নসহ বহুমাত্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন তৎপরতা নিশ্চিত করতে ধারাবাহিকভাবে প্রতিটি উপজেলায় অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ার উদ্যোগ নিয়ে এগোতে হবে। স্থানীয়ভাবে গড়ে উঠা অর্থনৈতিক অঞ্চলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হলে মানুষ কর্মসংস্থানের সুযোগ পেতে পারে এবং ঢাকামুখী তৎপরতার অবসান হতে পারে। স্থানীয়ভাবে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ার পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থায়ও বিকেন্দ্রীকরণ করা দরকার। তাছাড়া দেশের সর্বত্র স্বাস্থ্য সেবার মান বাড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়াও অপরিহার্য। এসব উদ্যোগই কেবল ঢাকার যানজট নিরসনে মৌলিক ভূমিকা রাখতে পারে। ঢাকার যানজট নিরসনে তাৎক্ষণিক পরিকল্পনার আওতায় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বাড়াতে হবে। বর্তমানে ঢাকার বড় বড় রাস্তাসহ প্রায় সব রাস্তায়ই গাড়ি পার্কিং করতে দেখা যায়। যানজট সৃষ্টিতে এ ধরনের পার্কিং ভূমিকা রাখছে। রাস্তার পাশের ফুটপাত ও বহুমুখী ব্যবহারে থাকায় পথচারী রাস্তায় চলতে দেখা যায়। ছিনতাই ও অব্যবস্থাপনায় ফুট ওভারব্রিজ ও আন্ডারপাসেও মানুষের চলাচল কম। তাছাড়া সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে প্রচারেও ঘাটতি বিদ্যমান। এ অবস্থার অবসানে যথার্থ ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করা দরকার। যানজট নিরসনে মধ্য মেয়াদী পরিকল্পনার আওতায় ঢাকায় বিদ্যমান রাস্তাগুলোর সংস্কার করা দরকার। বিদ্যমান রাস্তায় কোন প্রতিবন্ধকতা থাকলে সেগুলো সরাতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া দরকার। দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ নিতে সুপরিকল্পিতভাবে নতুন রাস্তা নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। উলেস্নখ্য, প্রাদেশিক রাজধানী হবার পরই মিরপুর রোড, এয়ারপোর্ট রোড নির্মিত হলেও স্বাধীনতা উত্তরকালে এ ধরনের কোন উদ্যোগ দৃশ্যমান হয়নি। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় দূরদৃষ্টিসহ এ শূন্যতার অবসান ঘটানো অপরিহার্য।

ঢাকায় যানজট একদিনে নয় বরং দীর্ঘদিনের অবহেলায় সৃষ্ট। তাই এর হাত থেকে তাৎক্ষণিক পরিত্রাণের সুযোগ নেই। বিদ্যমান রাস্তায় দক্ষ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা গড়ার জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। বিদ্যমান রাস্তাগুলোর সংস্কার করতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে এবং পরিকল্পিতভাবে নতুন রাস্তা নির্মাণের ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি ঢাকায় জীবিকার সন্ধানে আসা মানুষের স্রোত বন্ধ করতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আর মানুষের ঢাকামুখী স্রোত বন্ধ করতে হলে দেশের সব এলাকায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে অব্যাহত তৎপরতা চালাতে হবে। আর এ কাজটিও অপরিহার্য।

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ও রবীন্দ্র একাডেমি কতদূর? by ড. সৌমিত্র শেখর

মরা যারা দীর্ঘদিন ধরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ও রবীন্দ্র একাডেমি প্রতিষ্ঠার জন্য লিখছিলাম, দাবি জানিয়ে আসছিলাম, আন্তরিকভাবে কামনা করছিলাম তাদের সবাইকে খুশি করেছে গত পঁচিশে বৈশাখে প্রদত্ত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা।

তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারিভাবে রবীন্দ্র একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হবে। এর চেয়ে খুশির সংবাদ আর কী হতে পারে ? এ বছর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশত জন্মবার্ষিকী। এ মাহেন্দ্র ক্ষণ আর আসবে না। রবীন্দ্রনাথ প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থাকার পরও পশ্চিমবঙ্গ সরকার রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষে (১৯৬১) সেখানে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশত জন্মবার্ষিকীতে বাংলাদেশে তাঁর নামাঙ্কিত একটি বিশ্ববিদ্যালয় ও একাডেমি স্থাপিত হলে সেটাও ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর প্রায় বছর ঘুরতে চলল।

ইতোমধ্যে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশত জন্মবার্ষিকী পালনের ঘোষণা এসেছে। আশ্চর্য! এই ঘোষণার পর মনে হচ্ছে, সারা বাংলাদেশ রবীন্দ্রনাথ নিয়ে অনুষ্ঠান করার স্পৃহা যেন হারিয়ে ফেলেছে (একমাত্র ব্যতিক্রম ছায়ানট)। কেন এমনটি হলো বোঝা মুশকিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরম্ভ করে দেশের আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয় রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর সৃষ্টিকর্মের উপর কোনো অনুষ্ঠান বা সভা-সেমিনার করেছে বা অদূর ভবিষ্যতে করবে বলে আমাদের কাছে খবর নেই। অথচ, এ বছর আন্তর্জাতিক মানের সেমিনার আয়োজন করা উচিত। আমি নিজে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও বেজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে সেখানে রবীন্দ্রনাথের উপর অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশ নিয়ে এসেছি। সারাবিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দেশসমূহে যে বছর রবীন্দ্রনাথের উপর নানা আয়োজন চলছে, সে বছর শুধু বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠান হবে_ এই কথা বলে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে নিজেদের দায় থেকে মুক্তির উপায় নেই। দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানসমূহের উচিত হবে এ বছরটাকে রাঙিয়ে দেয়া_ পুরো বছর রবীন্দ্রময় করে তোলা। দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রনাথের উপর সভা-সেমিনার-গবেষণা করা তাই বাঞ্ছনীয় হবে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে যে অনুষ্ঠান হবে তাতে জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে পত্র-পত্রিকায় দেখেছি। প্রথমে একশজনের নামের তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, পরে নাকি আরো পঞ্চাশজনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কারা এ কমিটির নাম প্রস্তাব করেছেন আমি জানি না। তবে ধারণা করি, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেই বিষয়টি অনুমোদন পেয়েছে। আমার ধারণা যদি সত্য হয়, তাহলে বলবো, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় দেশের সংস্কৃতির ঠিকঠাক খবর জানে না। কোন্ ব্যক্তি কোন্ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ বা কার আগ্রহ কী নিয়ে নাম প্রস্তাবের আগে এটা তাদের ভেবে দেখা উচিত ছিল। একটি 'গড় কমিটি' গঠন করলেই দায়িত্ব সুচারুভাবে পালিত হয়েছে তা বলতে পারছি না। আমার এ কথা বলার যৌক্তিক কারণ আছে। আমি জানি, বাংলাদেশের প্রধান প্রধান রবীন্দ্র-বিশেষজ্ঞদের অনেকেই এ জাতীয় কমিটির বাইরে আছেন। সারা জীবন যাঁরা রবীন্দ্রনাথ নিয়ে কাজ করেছেন, তাঁকে নিয়ে ভেবেছেন, বিপদ-আপদের সময় সব ছেড়েছেন কিন্তু রবীন্দ্রনাথকে ছাড়েননি তাঁদের রাখা হলো না কেন এ কমিটিতে? অথচ এ কমিটিতে স্থান পেয়েছেন এমন অনেকে যাঁরা রবীন্দ্রনাথের উপর সারা জীবনেও তেমন ভাবেননি। অনেকের আত্মীয়-স্বজনও কমিটিতে আছেন। অনেকে আবার তথাকথিত 'সর্ববিশেষজ্ঞ' হিসেবে আছেন। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, ফররুখ, তালিম হোসেন_ যাঁর উপর কমিটিই হোক-না কেন, এঁরা থাকেনই। আর রাজনীতির বিবেচনাতেও অনেকে প্রবেশ করেছেন এই কমিটিতে_ কিছু নাম দেখে তেমনি বোধ হচ্ছে। তাই 'সভা হচ্ছে' এমন সংবাদ পেয়ে যখন কমিটির সদস্যদের কাছে সভার সিদ্ধান্ত জানতে আগ্রহ প্রকাশ করি, তখন তারা যে সিদ্ধান্তের কথা শোনান তাতে জমকালো গান-বাজনা, কিছু লোকের ভারত ভ্রমণ ছাড়া আর কিছু হবে বলে বিশ্বাস হয় না। আর এ কারণেই সন্দেহ থেকে যায়, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা সত্ত্বেও দেশে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ও রবীন্দ্র একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হবে কি-না! আমার এ সন্দেহের আর একটি কারণ হলো, এখনও রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের স্থানটি নির্দিষ্ট হয়নি। কুষ্টিয়াতে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। তাছাড়া শিলাইদহ কুঠিবাড়িটিও নদীর অপর পাড়ে বলে সেখানে যোগাযোগ কষ্টসাধ্য। অন্যদিকে সিরাজগঞ্জ জেলায় কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই। শাহজাদপুর কুঠিবাড়ি সুযোগাযোগ ব্যবস্থাসম্পন্ন। এ কারণে সহজেই শাহজাদপুর রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার স্থান নির্বাচনের ঘোষণা দেয়া যেতে পারে। আর ঢাকায় রবীন্দ্র একাডেমি স্থাপনের উদ্যোগ নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নের সূচনা করা খুবই সম্ভব। মনে রাখতে হবে, আগামী মে মাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশত জন্মবার্ষিকী পূর্ণ হয়ে যাবে। এর পর সব আয়োজনই গুরুত্ব হারাবে।

বাঘাবাড়ি নৌবন্দরে নাব্যতা সংকট

মুনা নদীতে নাব্যতা সংকট দেখা দেওয়ায় বাঘাবাড়ি নৌবন্দর হইতে উত্তরাঞ্চলে জ্বালানি তেল ও সারের স্বাভাবিক সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হইতেছে। এই খবর প্রকাশিত হইয়াছে গত সোমবার একটি সহযোগী দৈনিকে। রিপোর্টে বলা হয়, যমুনা নদীতে বিভিন্নস্থানে ডুবোচর ও চর জাগিয়া উঠায় গত চার-পাঁচ দিন ধরিয়া বাঘাবাড়ি নৌ বন্দরে কোনো কার্গো জাহাজ ভিড়িতে পারিতেছে না। এখানে আটকা পড়িয়া রহিয়াছে কম করিয়া হইলেও তেত্রিশটি কার্গো জাহাজ।

জানা যায়, তেল ও সারবাহী বার্জ এবং কার্গোগুলি নৌবন্দরে ভিড়িতে না পারায় সমগ্র উত্তরাঞ্চল জ্বালানি তেলশূন্য হইয়া পড়িবার আশঙ্কা দেখা দিয়াছে। যমুনা নদীর নাব্যতা রক্ষার্থে বেড়া উপজেলার মোহনগঞ্জ এবং মানিকগঞ্জের শিবালয় এলাকায় দুই মাস ধরিয়া ড্রেজিং কাজ চলিতেছে। এখানে ৪ লক্ষ ঘনফুট বালি অপসারণও করা হইয়াছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত দুই/তিন দিন পরেই খনন করা নদী আবার বালিতে ভরিয়া গিয়াছে। এই ড্রেজিংয়ের জন্য ব্যয় করা হইয়াছে ১৮ কোটি টাকা। সাম্প্রতিক তথ্যানুসারে জানা যায়, নদীর নাব্যতা সংকটের কারণে বাঘাবাড়ি বন্দরের বিশ কিলোমিটার ভাটিতে বেড়া উপজেলার মোহনগঞ্জ, পেঁচাখোলা, নাকালিয়া ও কৈটোলায় প্রায় ৬১ লক্ষ লিটার জ্বালানির তেলবাহী ১৭টি কার্গোসহ ৩৩টি জাহাজ প্রায় এক সপ্তাহ ধরিয়া আটকা পড়িয়া রহিয়াছে। অপরিকল্পিত ড্রেজিংয়ের ফলে নদীর নাব্যতা বজায় রাখা সম্ভব হইতেছে না। এমতাবস্থায় ঐ ড্রেজার দিয়া যেভাবে মাটি বা বালি কাটা হইতেছে তাহাতে সরকারের কেবল টাকাই গচ্চা যাইতেছে। আশানুরূপ ফল পাওয়া যাইতেছে না মোটেও। একই সূত্রমতে, গত রবিবার পর্যন্ত বাঘাবাড়ি অয়েল ডিপোর তিনটি কোম্পানির বিপণন কেন্দ্রে ২ কোটি ৫৭ লক্ষ ৩৪ হাজার ডিজেল মজুদ ছিলো। এইরূপ মজুদ থাকা সত্ত্বেও উত্তরাঞ্চলে জ্বালানি সংকট ঘনীভূত হইবার আশঙ্কা রহিয়াছে।

এখানে বিশেষভাবে উলেস্নখ্য যে, বাঘাবাড়ি নৌ-বন্দরে প্রতি বৎসরই এই নাব্যতা সংকট দেখা দেয়। বাঘাবাড়ি উত্তরাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ নৌ-বন্দর এবং এই বাঘাবাড়ি নৌ-বন্দর হইতেই উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় জ্বালানি ও সার সরবরাহ করা হইয়া থাকে। বর্তমানে যদিও সড়ক ও রেলপথেও তেল-সার সরবরাহ সম্ভব, তাহা হইলেও বাঘাবাড়ির গুরুত্ব হ্রাস পায় নাই। কিন্তু এই নৌ অঞ্চলের নাব্যতা ধরিয়া রাখিতে না পারায় সমস্যা দেখা দিয়াছে। প্রসঙ্গত বলা বাঞ্ছনীয় যে, ইরি-বোরো চাষের মৌসুম শুরু হইয়াছে। সেচযন্ত্রের বেশিরভাগই চলিয়া থাকে ডিজেলে। ডিজেলের সরবরাহ বিঘি্নত হইলে বোরোচাষে তার বিরূপ প্রভাব যে পড়িবে তাহাতে আর সন্দেহ কী! নাব্যতা সংকটের কারণে সারের সমস্যাও প্রকট হইবে। এমতাবস্থায় বাঘাবাড়ি নৌবন্দর সচল রাখার জন্য প্রয়োজন কার্যকর ড্রেজিং-এর মাধ্যমে নাব্যতা বজায় রাখিবার বাস্তবোচিত এবং আধুনিক প্রযুক্তিসম্মত উপায় খুঁজিয়া বাহির করিতে হইবে। নচেত পুনরায় বালু আসিয়া সংকট তৈরি করিবে ইহা জানা কথা। একই সাথে ড্রেজিং-এর ধারাবাহিকতাও রক্ষা করিতে হইবে। আমরা আশা করি সংশিস্নষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করিবেন।

নারী শিক্ষার সাফল্য ও সীমাবদ্ধতা

০১০ সালের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় পাসের হার, উপস্থিতি ও ভাল ফলাফলসহ বিভিন্ন দিক হইতে মেয়েরা কিছুটা পিছাইয়া পড়িয়াছে। নারী শিক্ষার উন্নয়নে সংশিস্নষ্ট ব্যক্তিবর্গ এ ব্যাপারে হতাশা প্রকাশ করিয়াছেন।

সদ্য সমাপ্ত বৎসরে জেএসসি পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করিয়াছিল ১২ লক্ষ ৩৪ হাজার ২৫৬ জন শিক্ষার্থী। ইহার অর্ধেকেরও বেশি অর্থাৎ ৬ লক্ষ ৫০ হাজার ৭৮৯ জন ছিল ছাত্রী। কিন্তু অনুপস্থিত ও অকৃতকার্য হওয়া ২ লক্ষ ৩৪ হাজার ৫৯১ জন ছাত্রী নবম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হইতে ব্যর্থ হইয়াছে। ইহা নিবন্ধিত মোট ছাত্রীর ৩৬.০৪ শতাংশ। অন্যদিকে জেএসসি পরীক্ষায় ছেলেদের অকৃতকার্যের হার ৩০ শতাংশ। এখানে ছেলে-মেয়ের মধ্যে প্রতিযোগিতা বড় কথা নয়। নারী শিক্ষার উন্নয়নে সরকারের সবিশেষ প্রযত্নশীলতা সত্ত্বেও মেয়েদের ঝরিয়া পড়ার হার দেখিয়া অনেকে বিচলিত। তাহাদের নিকট এরূপ ফলাফল অপ্রত্যাশিত বৈকি।

শিক্ষা-দীক্ষায় আজকের নারী সমাজ এ দেশে নারী আন্দোলনের পথিকৃত বেগম রোকেয়ার সময়কালের তুলনায় অনেকদূর অগ্রসর হইয়াছে। ফলে ঘরের বাহিরে বিভিন্ন কর্মস্থলে তাহাদের অংশগ্রহণের আনুপাতিক হার বাড়িয়াছে। সেইসঙ্গে বৃদ্ধি পাইয়াছে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা। ইহা স্বাধীনতা-উত্তর নারী শিক্ষার উন্নয়নে বিভিন্ন সময় গৃহীত কর্মসূচীরই সুফল। গত মাসে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার যে রেজাল্ট প্রকাশিত হইয়াছে তাহাতে দেখা যায়, মেয়েরা মেধা তালিকায় ভাল অবস্থানে আছে। এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ছেলেদের চাইতে তাহাদের সংখ্যা ছিল দেড় লক্ষ বেশি। ২০০৮ সালের হিসাব অনুযায়ী মাধ্যমিকে ভর্তির ক্ষেত্রে মেয়ে ও ছেলের অনুপাত ৫৪: ৪৬। কিন্তু এই পর্যায়ে মেয়েদের ঝরিয়া পড়ার হার সর্বাধিক, ৪২ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে এশিয়া সাউথ প্যাসিফিক অ্যাসোসিয়েশন ফর বেসিক অ্যান্ড অ্যাডাল্ট এডুকেশন নামক এক সংস্থার পর্যবেক্ষণ হইল, এই স্তরে বাংলাদেশের মেয়েদের ঝরিয়া পড়ার প্রধান কারণ বাল্যবিবাহ। আর এই বাল্যবিবাহেরও রহিয়াছে নানা সামাজিক বাস্তবতা। ইভটিজিং ও নানা পারিবারিক চাপের কারণে অনেক মেয়ের বিবাহ সম্পন্ন হয় ১৮ বৎসরের আগেই। উপরোক্ত আন্তর্জাতিক সংস্থার হিসাব মতে, ইহার হার ৬৪ শতাংশ। যদি মাধ্যমিক পর্যায়ে অধ্যয়নরত ছাত্রীদের নানা সমস্যা দূর করা সম্ভব হয়, তাহা হইলে নারী শিক্ষার কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সহজতর হইবে।

স্কুল পর্যায়ে মেয়েদের জন্য উপবৃত্তি চালু রহিয়াছে যাহার প্রভাব সুদূরপ্রসারী। নারী শিক্ষার অগ্রগতিতে ইহার অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু গ্রামে-গঞ্জে এমনকি শহরাঞ্চলেও এমন মেয়ে রহিয়াছে, যাহারা শুধু উপবৃত্তির টাকার জন্যই স্কুলে যাইয়া থাকে। তাহাদের কাছে পড়াশোনা এখনও গৌণ। ঝরিয়া পড়ার হারে তাহারাই অগ্রগামী। সাধারণত আমাদের দেশে দরিদ্র পরিবারগুলিতে লেখাপড়ার গুরুত্ব আজও সেভাবে দৃঢ়মূল হয় নাই। এজন্য নারী শিক্ষার প্রসারে জনসচেতনতা তৈরি ও উপবৃত্তির সদ্ব্যবহারও প্রয়োজন। শিক্ষার আবশ্যকতা সকলের অন্তমর্ূলে জাগাইতে হইবে। ইহাছাড়া গত্যন্তর নাই।

গত বৎসর নিউজউইকের আলোচিত একটি শিরোনাম ছিল_'উইমেন উইল রুল দি ওয়ার্ল্ড'। অর্থাৎ বিশ্ব শাসন করিবে নারীরা। কয়েক দিন আগে বিকাশমান অর্থনীতির দেশ ব্রাজিলে প্রথমবারের ন্যায় একজন মহিলা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হইয়াছেন দিলমা রৌসেফ। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, আরব আমিরাত ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত বিভিন্ন দেশে নারী গ্রাজুয়েটের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় অর্থনীতি ও রাজনীতিতে তাহাদের প্রভাব বাড়িতেছে। বাংলাদেশে শিক্ষাক্ষেত্রে মাধ্যমিক পর্যায়ে নানা সমস্যা কাটাইয়া উঠিতে পারিলে নারীরা উচ্চশিক্ষায়ও আশানুরূপ সাফল্য লাভ করিবে। ১৯৯০-৯৫ সালে উচ্চশিক্ষায় মেয়ে ও ছেলের অনুপাত ছিল ২৫: ৭৫। এক যুগেরও বেশি সময় পর এ ক্ষেত্রেও নারীদের অগ্রগতি হইয়াছে। কিন্তু সেই গতি অত্যন্ত শস্নথ। এতদসত্ত্বেও আমরা মনে করি, হতাশ হওয়ার কিছু নাই। মেয়েরা শিক্ষা-দীক্ষায় আরও উন্নতি লাভ করিবে এবং পুরুষের সঙ্গে মিলিয়া-মিশিয়াই সুন্দর ও সমৃদ্ধ দেশ গঠনে ভূমিকা রাখিবে।

ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের হয়ে বাবার সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন

ট্টগ্রামের একটি প্যাকেজিং প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনার জন্য গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ড. ইউনূস চুক্তিস্বাক্ষর করেন তার বাবার সঙ্গে। প্যাকেজিং প্রতিষ্ঠানটি তাদের পারিবারিক। যদিও গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নিয়ম অনুযায়ী এটি করা হয়েছে। 'প্যাকেজেস কর্পোরেশন' পরিচালনার চুক্তি হয় ২০ বছর আগে।

এর মাধ্যমে গরীবের ব্যাংকটি এমন এক দায়িত্ব নেয় যার সঙ্গে এর মূল কর্মকান্ডের কোন সম্পর্কই নেই। গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষে ব্যবস্থাপনা দায়িত্বের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন এর প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস। চুক্তিতে গ্রামীণ ব্যাংককে মালিকানা ছাড়া প্যাকেজিং প্রতিষ্ঠানটি চালানোর বাকি সব ক্ষমতাই দেয়া হয়। চুক্তিতে প্যাকেজেস কর্পো-রেশন নামের ওই প্রতি-ষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে স্বাক্ষর করেন গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বাবা দুলা মিয়া সওদাগর; যা ছিলো স্পষ্টতই পরস্পর সংশিস্নষ্ট স্বার্থের সংঘাত।

চুক্তিতে সাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষর দেন ইউনূসের তিন ভাই- মুহাম্মদ ইব্রাহীম, মুহাম্মদ আজম ও মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর। ১৯৬১ সালে পাকিস্তান প্যাকেজেস কর্পোরেশন নামে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানটির মালিক ছিলেন দুলা মিয়া আর তার ছেলেরা।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর হাতে আসা নথি থেকে জানা গেছে, ওই পরিবার এখনো প্রতিষ্ঠানটির মালিক। শেয়ারহোল্ডার হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা বোর্ডে মুহাম্মদ ইউনূস এখনো আছেন। গ্রামীণ ব্যাংক ও প্যাকেজেস কর্পোরেশনের মধ্যে ১৫ বছরের জন্য ব্যবস্থাপনা চুক্তিটি হয় ১৯৯০ সালের ১৭ জুন। ১৯৯৭ সালে প্যাকেজেস কর্পোরেশনের পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয় গ্রামীণ ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ সামগ্রীকে।

মুহাম্মদ ইউনূসকে পাঠানো প্রশ্নমালার উত্তরে গ্রামীণ ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূরজাহান বেগম জানান, 'ওই হস্তান্তর' প্যাকেজেস কর্পোরেশনের 'মালিকদের সম্মতিতে হয়েছিলো'। ১৯৯০ সালের চুক্তি অনুযায়ী প্যাকেজেস কর্পোরেশনে ইউনূসের মুনাফার জন্য নয় এমন প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংক থেকে কর্মীদের 'প্রেষণে' নিয়োগেরও অনুমতি ছিলো যা তাদের পারিবারিক ব্যবসার জন্য লাভজনক।

গ্রামীণ ব্যাংক জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ছয়জন ব্যবস্থাপক বা নির্বাহী 'প্রেষণে' গেছেন। প্যাকেজেস কর্পোরেশনে গ্রামীণ ব্যাংকের বিনিয়োগের সুযোগও রাখা হয় ১৯৯০ সালের চুক্তিতে। চুক্তি অনুযায়ী গ্রামীণ ব্যাংকের বিনিয়োগ বিবেচ্য হবে ওই ব্যবসায় ব্যাংকটির দেয়া ঋণ হিসেবে। গত সোমবার গ্রামীণ ব্যাংক বলেছে, প্যাকেজেস কর্পোরেশনকে গ্রামীণ ব্যাংক যে ঋণ দিয়েছে তা দেয়া হয় গ্রামীণ ব্যাংকের এসভিসিএফ (সোশ্যাল ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড) থেকে। ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত এসভিসিএফ থেকে দেয়া ঋণের পরিমাণ দুই কোটি ৯৯ লাখ ১০ হাজার ৮৬ টাকা। প্যাকেজেস কর্পোরেশনকে গত ১৭ বছর ধরে ঋণ দিয়েছে গ্রামীণ ফান্ড। '৯৩ সালের পর কতো টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে তা জানায়নি গ্রামীণ ব্যাংক।

প্যাকেজেস কর্পোরেশনের 'উৎপাদন বৃদ্ধি ও ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড গতিশীল' করতে গ্রামীণ ব্যাংক নতুন কর্মী নিয়োগেরও অধিকার পায় চুক্তিতে। তবে চুক্তিশেষে ওই কর্মীদের চাকরিতে বহাল রাখার কোনো বাধ্যবাধকতা ছিলো না ইউনূসের পারিবারিক ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের। চুক্তিতে স্পষ্টভাবে উলেস্নখ রয়েছে, চুক্তির ফলে প্যাকেজেস কর্পোরেশনের মালিকানায় কোনো পরিবর্তন আসবে না। প্যাকেজেস কর্পোরেশনের মালিকানা দুলা মিয়া সওদাগর এবং তার ছেলেদের যাদের মধ্যে মুহাম্মদ ইউনূসও আছেন। মুহাম্মদ ইউনূসের বাবা দুলা মিয়ার মৃত্যুর পর মুহাম্মদ আইয়ূব প্যাকেজেস কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব নেন।

১৯৯০ সালের চুক্তিতে এইচআই লতিফী নামে এক ব্যক্তিকে সালিশ কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়। লতিফী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের তখনকার সহযোগী অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এর চার বছর পর লতিফী গ্রামীণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে যোগ দেন। গ্রামীণ ট্রাস্ট গ্রামীণ ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান। গত ১৬ বছর ধরে গ্রামীণ ট্রাস্টের প্রধান হিসাবে আছেন লতিফী। চুক্তি অনুযায়ী ব্যবসায় লাভ-লোকসান গ্রামীণ ব্যাংক ও প্যাকেজেস কর্পোরেশনের সমানভাবে (৫০:৫০) ভাগ করে নেয়ার কথা। তবে লোকসানের ক্ষেত্রে কোনোপক্ষই নগদ অর্থ দেবে না। লোকসান হলে তা পরবর্তী বছরের লাভের হিসাব থেকে মিলিয়ে নেয়ার কথা।

গ্রামীণ ব্যাংক থেকে পাওয়া আয় অনুদান

১৯৯০ সালের চুক্তি অনুযায়ী, গ্রামীণ ব্যাংকের প্রয়োজনীয় মুদ্রণ কাজের বিনিময়ে প্যাকেজেস কর্পোরেশন যে লাভ করবে তা গ্রামীণ ট্রাস্টের তহবিলে যাওয়ার কথা। তবে গ্রামীণ ব্যাংক সোমবার জানিয়েছে, গত ২০ বছরে গ্রামীণ ট্রাস্টে কোনো অর্থ দেয়া হয়নি।

প্রশ্নের লিখিত উত্তরে গ্রামীণ ব্যাংক বলেছে, যেহেতু প্যাকেজেস কর্পোরেশন লাভে যেতে পারেনি তাই এ পর্যন্ত মুনাফা বণ্টনের প্রশ্ন ওঠেনি এবং গ্রামীণ ট্রাস্টের কোনো অনুদান পাওয়ারও সুযোগ হয়নি।

২০০৯ সালে প্যাকেজেস কর্পোরেশনের পুঞ্জিভূত মুনাফা ছিলো ২৪ লাখ টাকা। ২০০৮ সালে এর পরিমাণ ছিলো ৩৭ লাখ টাকা। গ্রামীণ ব্যাংকের দেয়া তথ্য অনুযায়ী প্যাকেজেস কর্পোরেশন ১৯৯৮ সাল থেকেই মুনাফা করছে। ২০০০ ও ২০০২ সালে এর লোকসান হয়। গ্রামীণ ব্যাংক দাবি করেছে ২০০৯ সালে প্যাকেজেসের পুঞ্জিভূত লোকসান ছিলো এক কোটি ৪০ লাখ টাকা।

ভূস্বামীদের তালিকা হচ্ছে

ব্যক্তি মালিকানায় একশ' বিঘার বেশি জমি না রাখা সংক্রান্ত যে আইন রয়েছে তা প্রয়োগ করার সুপারিশ করেছে ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। আগামী জুন মাসের মধ্যে যারা একশ' বিঘার বেশি ভূ-সম্পত্তির মালিক তাদের তালিকা চূড়ান্ত করার জন্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
অপরদিকে, ব্যক্তি মালিকানায় ৬০ বিঘার অতিরিক্ত অব্যবহূত কৃষি জমি যাদের আছে তারা জমি দিয়ে কি করবে তা সরকারকে জানাতে হবে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে জানাতে ব্যর্থ হলে সরকার সে জমি অধিগ্রহণ করবে।

মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনে আ,ক,ম, মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে এসব তথ্য জানানো হয়। বৈঠকশেষে কমিটির সভাপতি সাংবাদিকদের বলেন, এসএএন্ডটি অধ্যাদেশ বা জমিদারি অধিকরণ ও প্রজাস্বত্ব আইন-১৯৫০, প্রেসিডেন্সিয়াল অর্ডার-৭২ এবং ভূমি অধ্যাদেশ-১৯৮৪ অনুযায়ী কোন ব্যক্তি একশ' বিঘার বেশি ভূ-সম্পত্তি রাখতে পারবে না। বহুদিন ধরেই এ সংক্রান্ত আইনের যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে না।

তিনি বলেন, একজন সবের্াচ্চ ৬০ বিঘা কৃষি জমি ও সবের্াচ্চ ৪০ বিঘা অকৃষি জমির মালিক থাকতে পারবেন। কেউ এর বেশি ভূ-সম্পত্তির মালিক হলে সরকার তার বাড়তি জমি অধিগ্রহণ করতে পারবে যা সরকারি খাস জমি হিসেবে গণ্য হবে। দীর্ঘদিন ধরে এই আইন বিদ্যমান থাকলেও আজ অবধি তার যথাযথ প্রয়োগ সম্ভব হয়নি। কমিটি এই আইন কার্যকর করার সুপারিশ করেছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা বেশি জমির মালিক তারা নিজেদের পছন্দ মতো জায়গা থেকেই একশ' বিঘা জমি রাখতে পারবেন। তবে অবশিষ্ট জমি সরকারকে অবশ্যই দিয়ে দিতে হবে।

বিপুল পরিমাণ জমি অব্যবহূত থাকায় দেশ অর্থনৈতিক দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই আইন কার্যকর হলে বৈষম্য কমে আসবে বলেও মনে করে সংসদীয় কমিটি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আবাসন প্রকল্পের নামে অনেক এলাকার নিচু জমি ভরাট করা হচ্ছে। মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে, জেলা প্রশাসকদের নিচু জমি ভরাট বন্ধ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করতে। সেই সাথে বিভিন্ন এলাকায় দখল হয়ে যাওয়া খাল উদ্ধারের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। কমিটির সভাপতি বলেন, বৈঠকে তিনটি সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রাজধানীতে ৪৩টি খালের জমি বিভিন্ন ব্যক্তির নামে রেকর্ড হয়েছে বলে আমরা প্রমাণ পেয়েছি। এর সাথে জড়িতদের খুঁজে করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে একটি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলের খতিয়ান বিক্রির অনিয়ম ও ময়মনসিংহের ভূমি সংক্রান্ত অপর এক অভিযোগের প্রেক্ষিতে আরো দুটি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে।

তবু পোসাদা সন্ত্রাসী না!

ত শতাব্দীর অন্যতম ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী লুইস পোসাদা ক্যারিলেসের বিচার শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। গত বৃহস্পতিবার টেঙ্াসের একটি আদালতে তাঁর শুনানি শুরু হয়। তবে তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের কোনো অভিযোগ আনা হয়নি। অভিবাসন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিথ্যা বলায় তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে বিভিন্ন মহল। তারা বলছে, এর মাধ্যমে আবারও প্রমাণ হলো 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ' স্লোগান দিলেও এক্ষেত্রে দ্বৈত নীতি অনুসরণ করে যুক্তরাষ্ট্র। তাই নিজেদের পক্ষে কাজ করা সন্ত্রাসী পোসাদাকে শাস্তি দিতে চায় না দেশটি।
কিউবার নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের 'সেরা অস্ত্র' হিসেবে বিবেচনা করা হত সিআইএয়ের সাবেক এজেন্ট পোসাদাকে। শতাধিক ব্যক্তিকে হত্যার পরিকল্পনার কথা স্বীকারও করেছেন তিনি।
ভেনিজুয়েলার নাগরিক হলেও পোসাদার জন্ম কিউবায়। দেশটিতে ১৯৫৯ সালের বিপ্লবের পর কিউবার অন্য অনেক প্রবাসীর মতো তাঁকেও নিজেদের দলে অন্তর্ভুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। কাস্ত্রো সরকারের পতন ঘটানোর লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে ১৯৬১ সালের 'বে অব পিগস' হামলায়ও অংশ নেন পোসাদা। এ হামলা ব্যর্থ হলেও পরবর্তী সময়ে পোসাদা কিউবাকে অস্থিতিশীল করার জন্য বেশ কয়েকটি হামলার পরিকল্পনা করেন। তাঁর পরিকল্পনায় সবচেয়ে বড় হামলা হয় ১৯৭৬ সালের ৬ অক্টোবর। পোসাদার নির্দেশে পেতে রাখা বোমায় ওইদিন কিউবার একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ৭২ জন মারা যায়। এ ঘটনায় ভেনিজুয়েলায় তাঁর কারাদণ্ড হয়। কিন্তু পাদ্রী সেজে জেল থেকে পালিয়ে যান তিনি। ১৯৯৭ সালে কিউবার বেশ কয়েকটি হোটেল ও নৈশক্লাবে হামলা হয় পোসাদার নির্দেশে। এসব হামলায় একজন ইতালীয় পর্যটকসহ বেশ কয়েকজন নিহত হয়। ১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমস-এ দেওয়া সাক্ষাৎকারে পোসাদা বলেন, 'কিউবার পর্যটন ব্যবসাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতেই এ হামলা চালিয়েছিলাম। যাতে পর্যটকরা ভয়ে আর সেখানে না যায়।' সর্বশেষ ২০০০ সালে পানামা সফরের সময় কাস্ত্রোকে হত্যা পরিকল্পনার অভিযোগে কারাদণ্ড দেওয়া হয় পোসাদাকে। চার বছর সাজা ভোগের পর পানামার প্রেসিডেন্ট তাঁকে ক্ষমা করে দেন।
সিআইএয়ের অবমুক্ত করা বিভিন্ন দলিলেও এসব হামলার সঙ্গে ৮২ বছর বয়সী পোসাদার সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে। কিউবা ছাড়া মধ্য ও লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশেও নানা অপকর্মের সঙ্গে তাঁর জড়িত থাকার অভিযোগ আছে।
তাঁর বিরুদ্ধে যে ১১টি অভিযোগ আনা হয়েছে সবই অভিবাসন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিথ্যা বলা নিয়ে। ২০০৫ সালে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের দায়ে মিয়ামিতে গ্রেপ্তার হন পোসাদা। ভেনিজুয়েলা তাঁকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানালেও তা নাকচ করে দেন যুক্তরাষ্ট্রের আদালত। আদালত জানান, ভেনিজুয়েলায় ফেরত পাঠালে পোসাদাকে নির্যাতন করা হতে পারে। তখন ভেনিজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পোসাদাকে 'আমেরিকার লাদেন' হিসেবে অভিহিত করেন। অনেকে তাঁকে 'এ যুগের ফ্রাংকেনস্টেইন'ও বলে থাকেন।
পোসাদার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ না আনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে তঁাঁর পরিকল্পিত হামলায় নিহত ব্যক্তিদের স্বজনরা। বিমান হামলায় নিহত একজনের মেয়ে মার্গারিটা মোরালেস বলেন, 'ন্যায়বিচারের আশায় ৩৪ বছর কাটল। মনে হচ্ছে, বাবা হত্যার বিচার আর পাব না।' যুক্তরাষ্ট্রে ভেনিজুয়েলার পক্ষের আইনজীবী পারতিয়েরা বলেন, 'সন্ত্রাসীর মধ্যে আপনি ভালোমন্দ বাছাই করতে পারেন না। কারো বিচার করবেন, আবার কাউকে রক্ষা করবেন_এটা উচিত নয়।' সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস, আল জাজিরা।

রাজনীতিকে মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়া রাজনীতিকের সবচেয়ে বড় কাজ: আবেদ খানরা

রাজনীতিকে সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়া রাজনীতিকের সবচেয়ে বড় কাজ। এ কাজটি করতে পেরেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর আগে এ কাজটি পেরেছেন শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক।

গতকাল শুক্রবার বঙ্গবন্ধু শিক্ষা গবেষণা পরিষদ রংপুর শাখা আয়োজিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্ম নিয়ে মুক্ত আলোচনায় কালের কণ্ঠ সম্পাদক আবেদ খান এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ব্যক্তি নিধন আর আদর্শ নিধন কিন্তু এক নয়। বঙ্গবন্ধুকে তারা নিধন করতে পারলেও তাঁর আদর্শকে কেউ কোনো দিন নিধন করতে পারবে না। বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুর সেই আদর্শ নিয়েই চিরকাল বেঁচে থাকবে।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সভাপতি বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মু. আবদুল জলিল, কলামিস্ট সৈয়দ মাহবুবুর রশীদ, সিরাজুল ইসলাম আলো। সংগঠনটির রংপুর শাখার সভাপতি ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর মোজাম্মেল হক এতে সভাপতিত্ব করেন।
অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না হলে এ দেশে কোনো দিনও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে না। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তুলতে এর কোনো যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কোনো বিকল্প নেই।
মফস্বল সাংবাদিকতা বলতে কিছু নেই : কালের কণ্ঠ সম্পাদক আবেদ খান বলেছেন, পত্রিকার পাঠক হচ্ছে হাঙ্গর। হাঙ্গর যেমন যা পায় তাই খেয়ে নেয়। তেমনি পাঠকও তাই। প্রতি মুহূর্তে নিত্যনতুন খবর চান তাঁরা। তাই সাংবাদিকদের নিত্যনতুন খবর উদ্ভাবনে প্রতি মুহূর্তে সতর্ক থাকতে হবে। গতকাল শুক্রবার রংপুর প্রেসক্লাবে সাংবাদিক এবং সুধী সমাজের সঙ্গে মতবিনিময়কালে আবেদ খান এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, মফস্বল সাংবাদিকতা বলতে এখন আর কিছু নেই। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ মোনাজাতউদ্দিন। মোনাজাত এই রংপুর থেকে এটাই প্রমাণ করে গেছেন।
রংপুর প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে আবেদ খানকে ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করে নেন রংপুরের সাংবাদিকরা ও ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের কমার্শিয়াল এঙ্িিকউটিভ শামস মো. আরমানুল হক। সভার শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন কালের কণ্ঠের নিজস্ব প্রতিবেদক মানিক সরকার মানিক ও ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি পরিমল মজুমদার, প্রেসক্লাবের সভাপতি সদরুল আলম দুলু, সাংবাদিক রশীদ বাবু, জয়নাল আবেদীন, মাহবুব রহমান, আবদুর রউফ সরকার, আবদুর রহমান মিন্টু, নজরুল মৃধা। মতবিনিময়ে অংশ নেন অধ্যাপক আলীম উদ্দিন, এম এ বাশার, বিপ্লব প্রসাদ, ডা. মফিজুল ইসলাম মান্টু, মাহমুদ হাসান খোকন, রথীশ চন্দ্র ভৌমিক, মনোয়ারা বেগম। এর আগে আবেদ খান কালের কণ্ঠ রংপুর অফিসে গিয়ে সহকর্মী সাংবাদিকদের বিভিন্ন পেশাগত দিকনির্দেশনা দেন। শুভসংঘ কারমাইকেল কলেজ ইউনিটের পক্ষে আবেদ খানেক ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান তাজমিন নাহার তিথি ও মাহবুবার রহমান সায়ন।

প্রত্যয় বাড়ছে বিএনপির by মোশাররফ বাবলু

পৌর নির্বাচনে সাফল্যের পর এবার জাতীয় সংসদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ ও হবিগঞ্জ-১ আসনে উপনির্বাচনে বিজয়ের টার্গেট নির্ধারণ করেছে বিএনপি। দুটি আসনেই জয়লাভের জন্য মরিয়া চেষ্টা করবে দলটি। বিএনপির নেতারা মনে করছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অবস্থা ভালো হলেও হবিগঞ্জে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন তাঁরা।
এ ছাড়া হবিগঞ্জে জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের প্রার্থী সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেওয়ায় বিএনপির প্রত্যয় আরো বেড়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারলে পৌর নির্বাচনের মতো হবিগঞ্জ-১ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের উপনির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত।’
উপনির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি নেতারা নির্বাচনী এলাকায় এরই মধ্যে সাংগঠনিক সফর শুরু করেছেন। এরই মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ঘুরে এসেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দলীয় প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার খালেদ মাহমুদ শ্যামলসহ স্থানীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে তিনি চষে বেড়াচ্ছেন পুরো নির্বাচনী এলাকা। হবিগঞ্জ-১ আসনেও যাওয়ার কথা রয়েছে তাঁর। ২৪ জানুয়ারি হবিগঞ্জ যাচ্ছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহিরুল ইসলাম হবিগঞ্জ অবস্থান করছেন। বিএনপির সমমনা জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের মাওলানা আবদুল মালিক চৌধুরী হবিগঞ্জ-১ আসনে প্রার্থী হয়েছেন। জানা গেছে, মালিক চৌধুরীকে নিবৃত্ত করে তাঁর সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে জহিরুল ইসলাম হবিগঞ্জ গেছেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের অনুরোধে আবদুল মালিক চৌধুরী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে বিএনপিকে সমর্থনের ঘোষণা দিতে পারেন বলে বিএনপির ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে।
আগামী ২৭ জানুয়ারি এ দুই আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য লুৎফুল হাই সাচ্চু ও দেওয়ান ফরিদ গাজীর মৃত্যুতে এ দুটি আসন শূন্য হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পৌর নির্বাচনে বিজয়ের পর বিএনপির জনসমর্থন আরো বেড়ে গেছে। দলের নেতা-কর্মীরা আÍপ্রত্যয়ী হয়ে উঠেছেন। দলের মধ্যে ঐক্য গড়ে উঠেছে।’
বিএনপির নেতা হারুন আল রশীদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসন থেকে এর আগেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ নেতা লুৎফুল হাই সাচ্চুর কাছে পরাজিত হন। বিএনপি হারুন আল রশীদকে প্রথমে মনোনয়ন দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তিনি একপর্যায়ে অনীহা প্রকাশ করেন। তাঁর পরিবর্তে ইঞ্জিনিয়ার খালেদ মাহমুদ শ্যামলকে এ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। শ্যামলের পক্ষে কাজ করছেন হারুন আল রশীদ। এ জন্যই বিএনপি মনে করছে, এখানে তারা ভালো করবে।
হবিগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচনে জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের মাওলানা আবদুল মালিক চৌধুরী প্রার্থী থাকলে বিএনপির জন্য ক্ষতি হতো। এ জন্য তাঁর সমর্থন আদায়ের জোর চেষ্টা চালান বিএনপি নেতারা। মাওলানা আবদুল মালিক চৌধুরীর প্রার্থিতা প্রত্যাহার নিয়ে জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের নেতাদের সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার উমেদনগর মাদ্রাসায় বৈঠক করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহিরুল ইসলাম। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জমিয়তের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মাওলানা তাফাজ্জল হক, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শেখ মুজিবুর রহমান, হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও নবনির্বাচিত মেয়র জি কে গউস, বিএনপি প্রার্থী শেখ সুজাত মিয়া, জমিয়তে ওলামায়ের প্রার্থী আবদুল মালিক চৌধুরী প্রমুখ। অবশেষে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ওই মাদ্রাসায়ই এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন মালিক চৌধুরী। বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে কাজ করারও ঘোষণা দেন তিনি। পরে ফোনে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে ভবিষ্যৎ ঐক্যের স্বার্থে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছি।’
হবিগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী ও বিএনপির প্রার্থী শেখ সুজাত মিয়ার মধ্যে নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালে বিএনপি প্রার্থীর অবস্থান আরো ভালো হবে বলে দাবি করছেন বিএনপি নেতারা। দীর্ঘদিন ধরে এ আসন থেকে নির্বাচন করে আসছেন শেখ সুজাত মিয়া। ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেওয়ান ফরিদ গাজীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি। কাছাকাছি ভোট পেয়ে পরাজিত হন তিনি। কিন্তু দেওয়ান ফরিদ গাজীর অবর্তমানে সুজাত মিয়া ভালো করবেন বলে আশাবাদী বিএনপি।
এ ব্যাপারে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘গত দুবছরে আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারের একটিও বাস্তবায়ন করতে পারেনি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাÍক অবনতির কারণে দেশের মানুষ সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ। এ কারণে আওয়ামী লীগের ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে জনগণ। পৌর নির্বাচনে জনগণ বিএনপিকে সমর্থন দিয়েছে। আসন্ন দুটি উপনির্বাচনেও বিএনপি প্রার্থীকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবে বলে আশা করি।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জ উপনির্বাচন-সতর্ক আওয়ামী লীগ

দ্য সমাপ্ত পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির কাছে বড় ধরনের ধাক্কা খেয়ে জাতীয় সংসদের দুটি আসনে উপনির্বাচন সামনে রেখে অনেক সতর্ক আওয়ামী লীগ। এ উপনির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। হবিগঞ্জ-১ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে উপনির্বাচন হবে এ মাসেই।

পৌর নির্বাচনের ফলের পুনরাবৃত্তি এড়াতে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা চষে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনী এলাকা। সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মিছবাহ্ উদ্দিন সিরাজ সার্বক্ষণিক আছেন মাঠে।
হবিগঞ্জ-১ আসনে নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে মিছবাহ্ উদ্দিন সিরাজ বলেন, ‘বিএনপির শাসনামলে ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি গ্রেনেড হামলায় খুন হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া। সেই ২৭ জানুয়ারিই নির্বাচন হচ্ছে বলে নবিগঞ্জ ও বাহুবলের মানুষ কিবরিয়া হত্যার প্রতিশোধ নেবেন ব্যালটে।’
এদিকে মহাজোটগতভাবে নির্বাচন করতে আওয়ামী লীগ উদ্যোগ নিলেও মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে এখনো এ ব্যাপারে কাক্সিক্ষত সাড়া মেলেনি। গত রবিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের এক বৈঠকে দুটি আসনে উপনির্বাচনে মহাজোটগতভাবে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জাতীয় পার্টির প্রার্থী সরে দাঁড়ালেও হবিগঞ্জে সমঝোতার ব্যাপারে এখনো কোনো আলোচনাই হয়নি দুই দলের মধ্যে।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নির্বাচনে প্রার্থী প্রত্যাহার হলেও হবিগঞ্জে আমাদের প্রার্থী প্রত্যাহারের ব্যাপারটা বিবেচনায় আসেনি।’ তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ রংপুর থেকে ফিরলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
পৌর নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতাকারী মন্ত্রী-এমপিদের তালিকা চেয়েছেন শেখ হাসিনা
এদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নির্বাচনের কৌশল ঠিক করতে ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির অফিসে দফায় দফায় বৈঠক করছেন দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ।
গত বুধবার রাতে গণভবনেও তাঁরা উপনির্বাচন এবং সদ্যসমাপ্ত পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার সঙ্গে। বৈঠক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী যেকোনো মূল্যে উপনির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অবাধ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি তিনি কেন্দ্রীয় নেতাদের উপনির্বাচনে প্রচারে নামার নির্দেশ দেন। নির্বাচনী এলাকায় সরকারের দুই বছরের কর্মকাণ্ডের বিবরণ জনগণের সামনে তুলে ধরার নির্দেশনাও দেন তিনি।
এ ছাড়া বৈঠকে শেখ হাসিনাকে পৌর নির্বাচনের ফল, প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোট, দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোটের হিসাব সম্পর্কে অবহিত করা হয়। বৈঠকে শেখ হাসিনা পৌরসভা নির্বাচনে কোন কোন কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রী ও দলীয় এমপি দলের প্রার্থীর বিরোধিতা করেছেন তাঁর জেলাভিত্তিক তালিকা চেয়েছেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। এ ছাড়া প্রভাবশালী নেতা ও মন্ত্রীদের এলাকায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর পরাজয়ের কারণ চিহ্নিত করে তাঁকে জানানোর নির্দেশ দেন তিনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জাপার সঙ্গে সমঝোতা : আগামী ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ-১ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর) আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে হবিগঞ্জ উপনির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. মুসফিক হোসেন চৌধুরী এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কেন্দ্রীয় নেতা উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মহাজোটগতভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের কথা বলা হলেও হবিগঞ্জ-১ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবদুল মমিন বাবু প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী রেজাউল ইসলাম মনোনয়ন প্রত্যাহার না করলেও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি নির্বাচনের মাঠ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন। দুই আসনেই আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির শেখ সুজাত মিয়া ও ইঞ্জিনিয়ার খালেদ মাহমুদ শ্যামল।
আসন্ন দুই উপনির্বাচনে বিজয় অর্জনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিলেও হঠাৎ করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং সদ্যসমাপ্ত পৌর নির্বাচনে দলের পরাজয় নিয়ে শঙ্কায় আছে শাসক দলটি।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘উপনির্বাচনে জয়লাভের জন্য আওয়ামী লীগের তরফ থেকে সব রকমের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতারা যাবেন প্রচারণায়।’ তবে দুই উপনির্বাচনে প্রশাসনিকভাবে কোনো রকম হস্তক্ষেপ করা হবে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।
জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাব নির্বাচনের ফল পক্ষে আনার জন্য, তবে জনগণের রায় যাই হোক তা মেনে নেবে দল।’
জানা গেছে, নির্বাচনে প্রচারের জন্য আজ কাজী জাফরুল্লাহ এবং মাহবুব-উল-আলম হানিফের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল যাবে হবিগঞ্জে। এরই মধ্যে মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ এবং দলের অন্য কয়েকটি অঙ্গসংগঠনের নেতারা দুই নির্বাচনী এলাকায় গেছেন।

অকল্পনীয়, অবিশ্বাস্য

হাস্থানগড়সংলগ্ন প্রাচীন নিদর্শন 'নেতাই ধোপানীর পাট'। এর পাশে আরেকটি অতিপ্রাচীন নিদর্শন 'গোকুল মেধ বা বেহুলা লখিন্দরের বাসরঘর'। কথিত আছে, 'নেতাই ধোপানীর পাট ছিল বেহুলা-লখিন্দর রূপকথার চরিত্র মনসা দেবীর সহচরী নেতাই ধোপানীর আবাসস্থল।

মনসার বস্ত্রাদি ধোলাইকালে বেহুলা নাকি মৃত স্বামীসহ এই ঘাটে উপস্থিত হয়ে তারই সাহায্যে মনসা দেবীকে তুষ্ট করে মৃত স্বামীর জীবন ফিরে পান।' বগুড়া সদর উপজেলার গোকুল ইউনিয়নের গোকুল সরকারপাড়ার ১৬০০ বছরের পুরনো সেই নিদর্শন 'নেতাই ধোপানীর পাট’-এর মাটি কেটে রাস্তা বানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। সদর থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খোকন সরকার ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সবুজ সরকার এ কাজের নেতৃত্ব দেন। ঢিবি খননের সময় বের হওয়ায়
পুরাকীর্তিগুলো নিয়ে গেছে এলাকাবাসী।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন এ ধ্বংসযজ্ঞ চললেও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ সেদিকে কোনো নজরই দেয়নি। শেষ মুহূর্তে এসে বিষয়টি নজরে এসেছে তাদের। ইতিমধ্যে মাটির ঢিবি কেটে বের করা হয়েছে চাপাপড়া পুরাকীর্তির নিদর্শন।
গত বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উঁচু ঢিবি কেটে এক দফা মাটি ফেলা হয়েছে পাশের নবনির্মিত রাস্তায়। এখন চলছে দ্বিতীয় দফা মাটি খননকাজ। মাটি কেটে নেওয়ার পর সেখানে বেরিয়ে এসেছে প্রাচীন স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ। এ স্থাপনার প্রশস্ত দেয়াল ও চওড়া ইটের প্রাচীর দেখে প্রত্নতাত্ত্বিকরা ধারণা করছেন, স্থাপনাটি গুপ্ত আমলেরও আগে নির্মিত। সে হিসাবে এটি প্রায় ১৬০০ বছরের পুরনো।
স্থানীয় বাসিন্দা আইয়ুব আলী, লোকমান হোসেন, আমজাদ হেসেনসহ অনেকেই বলেন, জন্মের পর থেকেই তাঁরা ঢিবিটি দেখে আসছেন। অনেক আগে থেকেই এ ঢিবির মালিকানা নিয়ে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সঙ্গে সরকার পরিবারের দ্বন্দ্ব। সেই সরকার পরিবারেরই সদস্য খোকন সরকার ও সবুজ সরকার এর আগে প্রশাসনের নেওয়া ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পের সময় মাটি কেটে রাস্তা করেছেন। ওই রাস্তার ওপর এবার দ্বিতীয় দফা মাটি ফেলার জন্য আবারও তাঁরা ঢিবি কেটে নিচ্ছেন।
ওই এলাকার বাসিন্দা ও গোকুল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আলী আযম তোতা মিয়া বলেন, ‘এর আগে কর্মসৃজন প্রকল্পের মাধ্যমে রাস্তাটি আমার এলাকায় নির্মাণ করা হলেও আমাকে সেই কাজের কমিটিতে রাখা হয়নি। আওয়ামী লীগ নেতা সবুজ সরকার ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা সেখানে কাজ করেছেন। এ কারণে সেদিকে আমি যাইনি।’ তিনি জানান, ওই ঢিবিটি যে প্রত্নসম্পদ, সে বিষয়টি তিনি এর আগে একাধিকবার এলাকার লোকজনকে জানিয়েছেন। তার পরও নিজেদের জমি দাবি করে সেখানকার মাটি কেটে এনে রাস্তায় ফেলেছেন তাঁরা।
ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সোলাইমান আলী বলেন, ‘ঢিবিটি যে প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের, তা আমাকে জানানো হয়নি। এ কারণে সেখানে মাটি কাটা দেখলেও আমি বাধা দিতে যাইনি।’
পুরাকীর্তি ধ্বংস করা সম্পর্কে সবুজ সরকার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রাস্তাটি নির্মাণ করা জরুরি ছিল। এ ছাড়া ওই ঢিবিটি পৈতৃক সূত্রেই আমাদের। এর সব কাগজই আমাদের কাছে আছে। এ কারণে সেখান থেকে মাটি কেটে রাস্তায় ফেলা হয়েছে।’
খোকন সরকারও মাটি কেটে রাস্তা নির্মাণের বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘এর আগেও ওই জায়গার মালিকানা দাবি করে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ জেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছিল। সে সময় আমরা জেলা প্রশাসনের কাছে আমাদের কাগজপত্র জমা দিয়েছি। তখন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ থেকে জায়গাটি অধিগ্রহণ করার প্রস্তাব দেওয়া হলেও এ পর্যন্ত সে বিষয়ে তারা কোনো উদ্যোগই নেয়নি। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ যদি জায়গাটি অধিগ্রহণ করে, তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।’
বগুড়া প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কর্মকর্তা ও মহাস্থান জাদুঘরের জিম্মাদার (কাস্টডিয়ান) নাহিদ সুলতানা বলেন, ‘প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপে ১৯২২ সালে নেতাই ধোপানীর পাটকে পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে উšে§াচন করা হলে আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অনেক প্রাচীন নিদর্শন বেরিয়ে আসত। কিন্তু চুপিসারে জঙ্গলে ঘেরা ওই পুরাকীর্তি কেটে ফেলেছে সেখানকার কিছু লোকজন।’ সেখানে মাটি কাটার বিষয়টি জানার পর তা বন্ধ করতে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক বদরুল আলম বলেন, সেখান থেকে যে নিদর্শনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, তারা থেকে অনুমান করা হচ্ছে, এটি গুপ্ত আমলেরও আগে নির্মিত। প্রত্ন নিদর্শন সমষ্টি নিয়ে এ পাট গঠিত। এখানে বেশ কয়েকটি স্থাপনা রয়েছে। এর পশ্চিম পাশের বিশাল প্রাচীরটি প্রচীনত্বের প্রমাণ বহন করছে। ১৯৬৮ সালের সংরক্ষিত পুরাকীর্তি আইন (১৯৭৬ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাই ধ্বংস করা যাবে না। এর পরও নেতাই ধোপানীর পাটকে ধ্বংস করার চেষ্টা চলছে। তিনি অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেন, ‘সেখানে বাধা দিতে গেলে আমাদের কর্মীদের হুমকিও দেওয়া হয়। এ কারণে প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে যেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।’
বগুড়া সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুলতানা পারভীন অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পরপরই স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে পুরার্কীতি ধ্বংস বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

শেয়ারবাজারে- বিশেষ গোষ্ঠীর কারসাজি!

দেশের শেয়ারবাজার চরম এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। অব্যাহত দরপতনের ফলে লাখ লাখ সাধারণ বিনিয়োগকারী এখন সর্বস্বান্ত হওয়ার পথে। এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার ধরা পড়েছে অভিনব কারসাজির ঘটনা। বেরিয়ে আসছে আরো অনেক তথ্য। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বর মাসে ‘একটি গোষ্ঠী’ শেয়ারবাজারে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে শুরু করে।

নামে-বেনামে বিপুলসংখ্যক বিও অ্যাকাউন্ট খুলে তারা বিপুল পরিমাণ শেয়ার কিনে মূল্যবৃদ্ধি ঘটায় এবং একপর্যায়ে মুনাফা নিয়ে সটকে পড়ে। এ ছাড়া কর্তৃপক্ষের কিছু সিদ্ধান্তও শেয়ারবাজারকে অস্থিতিশীল করে বলে বিভিন্ন সূত্র জানায়। গতকাল শুক্রবার অর্থমন্ত্রীও স্বীকার করেছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ তাঁরও এ ক্ষেত্রে কিছু ভুল ছিল।
১৯৯৬ ও ২০১১ সালÑদুই বারই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। তাই ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের কেউ কেউ এ দুই কেলেঙ্কারির দায় আওয়ামী লীগের কাঁধে চাপাচ্ছে। বিষয়টিকে পুঁজি করতে চাইছে প্রধান বিরোধী দলও। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই শেয়ারবাজারে কেলেঙ্কারি হয়। নিজেদের দলের লোকদের টাকা বানানোর সুযোগ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে অতিমুনাফার ফাঁদ পেতে সাধারণ মানুষকে শেয়ারবাজারে ডেকে আনে। আর সুযোগ মতো টাকা উঠিয়ে বাজার থেকে সরে পড়ে। পথে বসে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
আবার অনেক বিনিয়োগকারী বলছে, বিএনপিপন্থী একটি গোষ্ঠী অব্যাহতভাবে এ কারসাজি করে যাচ্ছে, যাতে ১৯৯৬ সালের মতো আরেকটি কেলেঙ্কারির ঘটনা আওয়ামী লীগ সরকারের ঘাড়ে চাপানো যায়। বিশ্লেষক থেকে শুরু করে বহু বিনিয়োগকারী বলছে, এসব কেলেঙ্কারির ঘটনায় কারা জড়িত একটু সক্রিয় হলেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা খুঁজে বের করতে পারে। শেয়ারের লেনদেনের হিসাব পর্যালোচনা করলেই অস্বাভাবিক লেনদেনকারী ব্যক্তি, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও ব্রোকারেজ হাউস শনাক্ত করা সম্ভব। কেউ কেউ এমনও বলছেন, ২০-২৫ জনের সংঘবদ্ধ একটি দল শেয়ারবাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা উঠিয়ে দেশের বাইরে পাচার করেছে। খোদ ডিএসই সভাপতি গত বৃহস্পতিবার এ ঘটনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেছেন। অনেক দেরিতে হলেও এসইসি সন্দেহভাজন ব্রোকারেজ হাউসগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে।
‘একটি গোষ্ঠীর কাজ’ : এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকে একটি গোষ্ঠী শেয়ারবাজারে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে শুরু করে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র দাবি করেছে। ডিএসইর সাধারণ মূল্যসূচক সাড়ে ছয় হাজারের কাছাকাছি থাকা অবস্থায় চক্রটি কয়েকটি মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসের মাধ্যমে ওই টাকা বিনিয়োগ শুরু করে। এর আগে এসব প্রতিষ্ঠানে নামে-বেনামে বিপুলসংখ্যক বিও অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত এসব অ্যাকাউন্ট খোলা ও বিনিয়োগ করা হয়। এসব বিও অ্যাকাউন্টে প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার শেয়ার কেনা হয়। এর মাধ্যমে প্রতিদিনই তালিকাভুক্ত বেশির ভাগ কম্পানির শেয়ারের দর বাড়ানো হয়। এর প্রভাবে তিন মাসের ব্যবধানে ডিএসইর সাধারণ সূচক প্রায় আড়াই হাজার পয়েন্ট বেড়ে প্রায় ৯ হাজারের ঘরে পৌঁছে।
পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এ চক্রটি সম্পর্কে দিয়েছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। তাদের দাবি, বৃহস্পতিবার শাস্তি পাওয়া ছয়টি প্রতিষ্ঠানের কেউ কেউসহ আরো অনেক ব্রোকারেজ হাউসের মালিক বিএনপিপন্থী হিসেবে পরিচিত। তবে তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক একজন সভাপতিসহ আওয়ামী লীগপন্থী হিসেবে পরিচিত ব্রোকারেজ হাউসের কয়েকজন মালিক। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন অতি মুনাফার লোভে শেয়ারবাজারকে অস্বাভাবিক ফুলিয়ে-ফাপিয়ে তুলতে ভূমিকা রাখেন। তাঁদের মধ্যে একজন সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ঘনিষ্ঠতা কাজে লাগিয়ে ডিএসইর নেতৃত্বে নিজের প্রভাব বজায় রেখেছেন। আওয়ামীপন্থী হিসেবে পরিচিত ডিএসইর সামনের সারির অধিকাংশ নেতার বিরুদ্ধে ১৯৯৬ সালের কেলেঙ্কারির মামলা রয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর একাধিক কম্পানির শেয়ারের দর বৃদ্ধির পেছনেও তাঁদের কারসাজি রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাঁরা পুঁজিবাজারে প্রবেশমুখে সরাসরি তালিকাভুক্ত ও বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে তালিকাভুক্ত কয়েকটি কম্পানির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
গত ডিসেম্বরের কিছু ঘটনাকেও আজকের পরিস্থিতির জন্য দায়ী করছেন অনেক বিনিয়োগকারী। গত ৬ ও ৭ ডিসেম্বর এসইসির চেয়ারম্যান জিয়াউল হক খোন্দকারের অনুমোদন ছাড়াই কমিশন সদস্য মনসুর আলম চেক ও নেটিং সুবিধা-সংক্রান্ত দুটি নির্দেশনা জারির ব্যবস্থা করেন। চেয়ারম্যানের বিদেশ সফরের কারণে ওই সময় মনসুর আলম ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করছিলেন। এসইসির এ নির্দেশনাটি ৭ ডিসেম্বর নজিরবিহীনভাবে ডিএসইর ওয়েবসাইটে মোট আটবার প্রদর্শন করা হয়। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বড় রকমের বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে চেকের মাধ্যমে অর্থ জমা দেওয়া যাবে নাÑএ ধরনের গুজবে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। পরদিন লেনদেন শুরুর পর বাজারে বড় ধরনের ধস নামে। সোয়া এক ঘণ্টার মধ্যে ডিএসই সাধারণ সূচক আগের দিনের চেয়ে ৫৪৬ পয়েন্ট কমে যায়। এ ঘটনায় এসইসি চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। ঘটনার জের ধরে গত ১২ জানুয়ারি মনসুর আলম পদত্যাগ করেন।
অনেক বিনিয়োগকারী মনসুর আলমকে বলে থাকে বিএনপিপন্থী। প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচয় প্রদানকারী ডিএসইর সাবেক ওই সভাপতির সঙ্গে মনসুর আলমের বিশেষ ঘনিষ্ঠতার কথা তখন ডিএসই ও এসইসিতে আলোচনার খোরাক ছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসইসির এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান, মনসুর আলমকে দিয়ে ওই নির্দেশনা জারি করাতে ডিএসইর ওই সাবেক সভাপতি বিশেষ ভূমিকা রাখেন। এই নির্দেশনা জারির আগেই তিনি নিজের পোর্টফোলিও থেকে সব শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন বলেও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। ৮ ডিসেম্বরের পর থেকে যে দরপতন ও অস্থিরতা তৈরি হয়, এরই পরিণতিতে ২০ জানুয়ারির সর্বশেষ দরপতন ও লেনদেন বন্ধের ঘটনা ঘটে।
গত বৃহস্পতিবারের দরপতনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ছয়টি ব্রোকারেজ হাউসের লেনদেন কার্যক্রম এক মাসের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের এক মাসের জন্য দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। চার দিন বন্ধ হয়ে গেছে শেয়ারবাজারের লেনদেন। রবিবারও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে লেনদেন। হয়তো এ বন্ধের মেয়াদ আরো বাড়ানো হবে।
ব্যাংকের দায় : বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুঁজিবাজারের মুনাফার বেশির ভাগ টাকা আসলে চলে গেছে মুদ্রাবাজারে। গত বছর ব্যাংকগুলোর মুনাফার সিংহভাগই আসে পুঁজিবাজার থেকে। আলাদা কম্পানি হওয়ার আগ পর্যন্ত মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো বেশ কিছু সুবিধা ভোগ করে। ফলে নিজেদের চ্যানেল থেকে তারা নিজেদের ডিলার অ্যাকাউন্টে ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিওতে মার্জিন ঋণের মাধ্যমে ব্যাপক হারে বিনিয়োগ করে। সেখান থেকেই মুনাফা আসে ব্যাপক। কোনো কোনো মার্চেন্ট ব্যাংক ২০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করে। কিন্তু ডিসেম্বরের পরে আলাদা সাবসিডিয়ারি কম্পানি করার পর এসব ব্যাংকের ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগের সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। একই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কয়েকটি সার্কুলার জারি করে। ফলে কমে যায় ব্যাংকের বিনিয়োগ। এর প্রভাব পড়ে পুঁজিবাজারে। বিভিন্ন সূত্র মতে, শেয়ারবাজারের কিছু সংঘবদ্ধ চক্রও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি নিজেদের অর্থ তুলে নেয়। ফলে বাজার হয়ে পড়ে অর্থশূন্য।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সভাপতি শাকিল রিজভী গত বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, পুঁজিবাজারের বেশির ভাগ টাকা চলে গেছে মুদ্রাবাজারে। আর একটি অংশ তুলে নিয়েছে কারসাজি চক্র। ২০ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন থেকে তিনি এ চক্রের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি করেন।
কারণ আরো আছে : নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসির কয়েকটি সিদ্ধান্তের প্রভাবেও এ পতন ত্বরান্বিত হয় বলে মনে করা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বার্ষিক হিসাব সমাপনী (ইয়ার ক্লোজিং), আইনসীমার অতিরিক্ত অর্থ প্রত্যাহারে বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোরতা আরোপ, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা শিল্পঋণের টাকা ফেরতের সময় বেঁধে দেওয়া, ব্যাংকের নগদ জমা সংরক্ষণের (সিআরআর) হার বৃদ্ধি এবং মার্জিন ঋণ সংকোচন করার প্রভাবও পড়ে বাজারে। এদিকে ডিসেম্বরের মধ্যে ব্যাংকগুলোর মার্চেন্ট ইউনিটকে আলাদা সাবসিডিয়ারি কম্পানি করা হয়েছে। ব্যাংকিং নিয়ম অনুযায়ী পরিশোধিত মূলধনের ১৫ শতাংশের বেশি কোনো কম্পানিকে ঋণ দেওয়ার নিয়ম নেই। ফলে তারাও বিনিয়োগ আর বাড়াতে পারছে না।
ডিএসইর সভাপতি এ প্রসঙ্গে কালের কণ্ঠকে বলেন, একসঙ্গে এতগুলো সিদ্ধান্ত আরোপের কারণেও বাজার অস্থিতিশীল হয়েছে।
কাগুজে বনাম ইলেকট্রনিকস : ১৯৯৬ সালে অল্প কয়েক দিনের মধ্যে কৃত্রিমভাবে কয়েকটি কম্পানির শেয়ারের দাম বাড়িয়ে তা বিক্রি করে বাজার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। ১৯৯৬ সালে ছিল কাগুজে শেয়ার, এবার ইলেকট্রনিক শেয়ার। এবার এক বছর ধরে শেয়ারের দাম বাড়ার ঘটনা ঘটে। বাজার থেকে সরে পড়তে সময় নিয়েছে প্রায় এক মাস। তবে এবারের ভয়াবহ ঘটনা হচ্ছে, স্বেচ্ছায় লোকসান দিয়ে বাজারদরের চেয়ে অনেক কম দামে শেয়ার বিক্রির করে দেওয়া, যা গত বৃহস্পতিবার ধরা পড়েছে কর্তৃপক্ষের নজরদারিতেও।
১৯৯৬ সালে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ছিল ১০ হাজার। আর দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাধারণ মূল্যসূচক ছিল ২০০০ পয়েন্ট। গড়ে প্রতিদিনের লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩০০ কোটি টাকা। কম্পানির সংখ্যাও ছিল কম। এবার বিও অ্যাকাউন্টধারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৩ লাখ। মূল্যসূচক ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সর্বোচ্চ ৮৯০০ পয়েন্টে ওঠে। ডিএসইতে প্রতিদিনের লেনদেনের গড় দাঁড়ায় প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। বাজার মূলধনের পরিমাণ তিন লাখ পাঁচ হাজার কোটির ওপরে ওঠে। তবে বাজারে ধারাবাহিক পতনের ফলে গড় লেনদেন ও বাজার মূলধন দুই-ই অনেক কমে গেছে।
১৯৯৬ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারির ঘটনায় মামলা হলেও এর বিচার হয়নি আজও। আদালতের স্থগিতাদেশের পর বিচার কার্যক্রম থেমে আছে। এ মামলার বিচার কার্যক্রম নিষ্পত্তি করার উদ্দেশ্যে বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে একটি সংসদীয় কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটি এখন পর্যন্ত কোনো কার্যক্রম শুরু করেনি বলে জানা গেছে। তদন্ত কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে এ মামলার পরিণতি নিয়েও দেখা দিয়েছে সংশয়।

একদল তরুণের স্বপ্নযাত্রা by অরুণ কর্মকার

তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে দেশে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করছেন একদল তরুণ পেশাজীবী। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ ডিগ্রিধারী এই তরুণ দলের গড় বয়স ৩০-এর কিছু বেশি। তাঁরা রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের কর্মকর্তা ও ভূকম্পন জরিপ দলের সদস্য। মৌলভীবাজারের রশীদপুর গ্যাসক্ষেত্রে ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ পরিচালনা করছেন তাঁরা।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই জরিপের মাধ্যমে বাপেক্সের তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হচ্ছে। কারণ, এ কাজের জন্য যে প্রযুক্তি ও দক্ষতা দরকার, তা আন্তর্জাতিক মানের। এর মাধ্যমে বাপেক্স স্থলভাগে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের উচ্চমান ও সামর্থ্য অর্জন করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, যেসব ক্ষেত্রের বিশেষ কোনো অর্জন দেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সম্মানের আসনে বসাতে পারে, ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ এর একটি। এ দেশে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের ১০০ বছরের ইতিহাসে রাষ্ট্রীয় কোম্পানির পরিচালিত ত্রিমাত্রিক জরিপ এই প্রথম।
এ কাজে উপগ্রহভিত্তিক ‘ট্র্যাকিং সিস্টেম’ (পৃথিবীর অবস্থান সাপেক্ষে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো স্থান নির্ধারণের পদ্ধতি) থেকে শুরু করে সর্বাধুনিক সব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। ভূগর্ভে ডিনামাইট ফাটিয়ে শব্দসংকেতের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হচ্ছে ৩২৫ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত রশীদপুর গ্যাসক্ষেত্রের আট কিলোমিটার (আট হাজার মিটার) গভীরের প্রতি ইঞ্চি জায়গার তথ্য। এটি এতই নিবিড় অনুসন্ধান জরিপ, যাতে ভূগর্ভের একেকটি জায়গার তথ্য ৪৮ বার করে সংগৃহীত হবে।
এর আগে দেশে মাত্র পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্রে (বিবিয়ানা, ছাতক, বাঙ্গুরা, ফেনী ও সাগরবক্ষের মগনামা) ত্রিমাত্রিক জরিপ করা হয়েছে। ওই ক্ষেত্রগুলো উৎপাদন অংশীদারি চুক্তির (পিএসসি) ভিত্তিতে পরিচালনা করছে বিদেশি কোম্পানি (আইওসি)। তবে এসব জরিপে ছয় হাজার মিটারের বেশি গভীরতার তথ্য সংগৃহীত হয়নি।
রশীদপুরে বাপেক্সের তরুণ দলের কাজের পরিকল্পনা, ব্যবস্থাপনা ও মান সম্পর্কে জানতে চাইলে ওই জরিপকাজ পরিদর্শন করে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের কাজ বাপেক্সকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছে দিচ্ছে। বাপেক্সের ওই অনুসন্ধানী দল দেশের বিদ্যমান গ্যাসক্ষেত্রগুলোর প্রকৃত মজুদের চিত্র আরও সুনির্দিষ্টভাবে তুলে আনতে পারবে। এরপর দেশের স্থলভাগে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বিদেশি কোম্পানির দরকার হবে না। বরং বিদেশি কোম্পানির হয়েও বাপেক্সই ত্রিমাত্রিক জরিপ করে দিতে পারবে।
রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস ও খনিজ করপোরেশন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান অধ্যাপক হোসেন মনসুর বলেন, ‘ত্রিমাত্রিক জরিপ, অনুসন্ধান কূপ খনন, পুরোনো কূপের সংস্কার (ওয়ার্কওভার) প্রভৃতিসহ বাপেক্সের কাজের যে ধারা আমরা লক্ষ করছি, তাতে শিগগিরই এটি একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হতে পারবে। এর জন্য সরকারি যে সহায়তা দরকার, তা দেওয়ার সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারক পর্যায় থেকে পাওয়া গেছে। দেশে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের কাজ যথাসম্ভব দ্রুততর করা হচ্ছে।’
রশীদপুর গ্যাসক্ষেত্র: মৌলভীবাজার জেলার এই গ্যাসক্ষেত্রের অবস্থান ঢাকা থেকে প্রায় ১৭০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে। এটি রাষ্ট্রীয় খাতের সেই পাঁচটি পুরোনো গ্যাসক্ষেত্রের একটি, যেগুলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালে মাত্র ৪৫ লাখ পাউন্ডে কিনে রেখেছিলেন আন্তর্জাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানি শেল অয়েলের কাছ থেকে। ক্ষেত্রটি এখন পরিচালনা করছে পেট্রোবাংলার অন্যতম প্রতিষ্ঠান সিলেট গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (এসজিএফএল)।
রশীদপুর গ্যাসক্ষেত্রটি ১৯৬০ সালে আবিষ্কার করে তৎকালীন পাকিস্তান শেল অয়েল কোম্পানি। তখন ওই ক্ষেত্রে গ্যাসের মোট মজুদ নির্ধারণ করা হয়েছিল ২ দশমিক ০০১ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ)। এর মধ্যে উত্তোলনযোগ্য মজুদ নির্ধারণ করা হয় ১ দশমিক ৪০১ টিসিএফ। ক্ষেত্রটিতে এখন পর্যন্ত সাতটি কূপ খনন করা হয়েছে, যার পাঁচটি থেকে বর্তমানে গ্যাস তোলা হচ্ছে প্রতিদিন পাঁচ কোটি (৫০ মিলিয়ন) ঘনফুট করে। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ক্ষেত্রটি থেকে গ্যাস তোলা হয়েছে প্রায় ৪৭০ দশমিক ৫ বিলিয়ন ঘনফুট (বিসিএফ)। উত্তোলনযোগ্য মজুদ অবশিষ্ট আছে ৯৩০ দশমিক ৫৯ বিসিএফের মতো। এই গ্যাসক্ষেত্রে আরেকটি নতুন কূপ খনন এবং পুরোনো একটি কূপ সংস্কারের প্রক্রিয়া চলছে।
ত্রিমাত্রিক জরিপ কেন: ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপের মূল উদ্দেশ্য কোনো ক্ষেত্রে গ্যাসের প্রকৃত মজুদ নির্ণয় এবং ভূগর্ভের গ্যাসসমৃদ্ধ বালু ও স্থানগুলো সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা। ত্রিমাত্রিক জরিপের ফলে একদিকে যেমন দেশে গ্যাসের প্রকৃত মজুদ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে, তেমনই গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য উন্নয়ন কূপ খননের ক্ষেত্রে কোনো কূপ গ্যাসশূন্য (ড্রাই হোল) পাওয়ার আশঙ্কা থাকবে না।
কিন্তু প্রযুক্তির অভাব ও আর্থিক দৈনতার কারণে এর আগে রাষ্ট্রীয় কোনো গ্যাসক্ষেত্রে ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ করা যায়নি। রশীদপুরে বাপেক্সের পরিচালিত জরিপে ২৯ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ১১ কিলোমিটার প্রস্থ ভূ-কাঠামোর বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে। এরপর এই তরুণ দল একে একে আরও চারটি ক্ষেত্রে (কৈলাশটিলা, হরিপুর, বাখরাবাদ ও তিতাস) ত্রিমাত্রিক জরিপ চালাবে।
এই জরিপে রশীদপুর ক্ষেত্রের নতুন কী তথ্য জানার সম্ভাবনা রয়েছে, জানতে চাইলে জরিপ দলের প্রধান (ভূকম্পন জরিপের ভাষায় ‘পার্টি চিফ’) মেহেরুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, রশীদপুর গ্যাসক্ষেত্রের ভূ-কাঠামোটির অবস্থান ভূগর্ভের একটি চ্যুতির দুই পাশজুড়ে। কিন্তু শুরুতে যে জরিপ হয়েছে, তাতে এক পাশের তথ্য আছে। এখন সম্পূর্ণ কাঠামোটি জরিপের আওতায় আসায় পুরো ক্ষেত্রটির প্রকৃত মজুদ এবং ঠিক কোন জায়গায় কূপ খনন করলে গ্যাস পাওয়া নিশ্চিত হবে, তা জানা যাবে।
কীভাবে করা হয়: ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ প্রকল্পে বাপেক্সের পক্ষ থেকে নিযুক্ত পরিচালক আনোয়ারুর রহমান বলেন, কারিগরি ও ব্যবস্থাপনাগত দিক দিয়ে এই জরিপ এক বিরাট কর্মযজ্ঞ। রশীদপুরে এই কর্মযজ্ঞ সাফল্যের সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে।
সরেজমিন রশীদপুর পরিদর্শনের সময় বাপেক্সের জরিপ দলের কর্মকর্তারা জানান, জরিপের প্রধান উপাদানগুলো হচ্ছে উপগ্রহভিত্তিক ট্র্যাকিং সিস্টেম ব্যবহার করে ডিনামাইট বিস্ফোরণ ও এর শব্দসংকেত থেকে পাওয়া তথ্য সংগ্রহের জন্য জিওফোন স্থাপনের সুনির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করা; বিস্ফোরক স্থাপনের জন্য নির্দিষ্ট দূরত্বে ১২ মিটার গভীর (রশীদপুর ক্ষেত্রের জন্য নির্ধারিত) গর্ত করা; সেখানে ৫০ মিটার পর পর বিস্ফোরক স্থাপন ও বিস্ফোরণ ঘটানো; ওই বিস্ফোরণের শব্দসংকেতের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য ৫০ মিটার পর পর রেকর্ড করা; কম্পিউটারে সেই তথ্যের মান যাচাই; প্রয়োজনে নতুন করে কোনো স্থানের তথ্য সংগ্রহ ও পুনরায় তা যাচাই করা এবং সবশেষে ওই তথ্য বিশ্লেষণ করার জন্য ল্যাবরেটরিতে পাঠানো।
১৪ সদস্যের তরুণ বিশেষজ্ঞ ও কর্মকর্তার দলটি সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি পরিচালনা করলেও প্রতিটি উপাদানের জন্য রয়েছে আলাদা কর্মী দল। রশীদপুরে এই কর্মী দলের সদস্যসংখ্যা এক হাজার ২৪২ জন। অবশ্য মূল প্রকল্প প্রস্তাবে এই সংখ্যা নির্ধারিত ছিল প্রায় দুই হাজার ৩০০ জন। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে লোকবল কমানো হয়েছে। এতে কর্মীদের সবাইকে অনেক বেশি সময় কাজ করতে হচ্ছে।
মার্কিন সেনাবাহিনীর অনুমতি: ত্রিমাত্রিক জরিপের প্রথম ধাপ পৃথিবীর অবস্থান সাপেক্ষে রশীদপুর গ্যাসক্ষেত্রের অবস্থান নির্ণয় করা। এর জন্য এবং পরে তথ্য সংগ্রহের জন্য ক্ষেত্রটির কোথায় কোথায় বিস্ফোরক ও জিওফোন বসাতে হবে, তা নির্ধারণের জন্য উপগ্রহভিত্তিক ‘ট্র্যাকিং সিস্টেম’ ব্যবহার অপরিহার্য। কিন্তু জাতিসংঘের অনুমোদন নিয়ে এই পদ্ধতি পৃথিবীব্যাপী তৈরি করে রেখেছে মার্কিন সেনাবাহিনী। এই পদ্ধতি ব্যবহার করেই তারা পৃথিবীর যেকোনো লক্ষ্যে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। বাংলাদেশেও এ রকম ৪০টি পয়েন্ট রয়েছে, যেখানে ‘রিয়াল টাইম কিনেমেটিকস (আরটিকে)’ নামক যন্ত্র স্থাপন করে পৃথিবীর অবস্থান সাপেক্ষে যেকোনো স্থান নির্ভুলভাবে নির্ণয় করা যায়।
তবে এসব পয়েন্ট ব্যবহার করার জন্য মার্কিন সেনাবাহিনীর অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক। তারা অনুমোদন দিলেই শুধু উপগ্রহ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য আরটিকেতে আসবে। পরে ওই তথ্য ব্যবহার করে স্থান নির্ধারণ করতে হবে। সাধারণত তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য মার্কিন সেনাবাহিনী এই অনুমোদন দেয়। তবে শর্তও দিয়ে দেয় যে এই পদ্ধতি অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না।
কাজ শুরু হয় গত বছর: রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্রে ত্রিমাত্রিক জরিপের প্রকল্প নেওয়া হয় ২০০৬ সালে। ২০১০ সালে এই কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু প্রকল্প অনুমোদন, সংশোধন, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ঋণসহায়তা গ্রহণ প্রভৃতি কারণে এই কাজ শুরু হয় গত বছরের মে মাসে। কিন্তু বর্ষাকাল হওয়ায় মাঠপর্যায়ে এই কাজের উপযুক্ত সময় সেটি ছিল না। তার পরও ৫৩ বর্গকিলোমিটার এলাকায় তখনই জরিপ সম্পন্ন করা হয়। এরপর বিরতি শেষে গত বছরের ৫ অক্টোবর পুনরায় কাজ শুরু হয়।
শুরুতে উপগ্রহভিত্তিক ‘ট্র্যাকিং সিস্টেম’ ব্যবহার করে রশীদপুর গ্যাসক্ষেত্রের প্রকৃত অবস্থান নির্ণয় করা হয়। এর পাশাপাশি চলতে থাকে বিস্ফোরক আমদানি ও সংরক্ষণের জায়গা (পিট ম্যাগাজিন) তৈরির কাজ। এরপর ক্ষেত্রটির মাঠপর্যায়ে পাশাপাশি চলতে থাকে সার্ভে অর্থাৎ কোথায় কোথায় গর্ত করে বিস্ফোরক বসানো হবে, কোথায়ই বা বসানো হবে জিওফোন।
সার্ভে অনুযায়ী প্রতিটি পয়েন্টে ১২ মিটার গভীর করে প্রতিদিন প্রায় ২০০ গর্ত করে ‘ড্রিলিং টিম’। ওই গর্তে বিস্ফোরক স্থাপন করে ‘লোডিং টিম’। এলাকাভেদে আধা কেজি থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত বিস্ফোরক স্থাপন করা হয়। ‘শ্যুটিং টিম’ বিস্ফোরক স্থাপন ঠিকমতো হয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করে বিস্ফোরণ ঘটানোর প্রস্তুতি নিয়ে বেতারের মাধ্যমে যোগাযোগ করে ‘রেকর্ডিং ওয়াগন’-এর সঙ্গে।
এই রেকর্ডিং ওয়াগনটি স্থাপন করা হয় জরিপ এলাকার ঠিক মধ্যস্থানে। জরিপের কাজ এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে এই ওয়াগনের অবস্থানও বদলায়। সেখানে সর্বাধুনিক সফটওয়্যার-সমৃদ্ধ কম্পিউটারের সামনে বসে থাকেন দুজন তরুণ বিশেষজ্ঞ। তাঁরা রেডিও সংকেতের মাধ্যমে নির্দেশ দিলে শ্যুটিং টিম একেকটি স্থানে বিস্ফোরণ ঘটায়। একেকটি বিস্ফোরণের শব্দতরঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে ভূগর্ভের আট কিলোমিটার গভীরে এবং চারপাশের নির্দিষ্ট এলাকায়। একেকটি বিস্ফোরণের শব্দতরঙ্গ মোট এক হাজার ৪৪০টি চ্যানেলের মাধ্যমে তথ্যসংকেত পৌঁছে দেয় জিওফোন বা রিসিভিং পয়েন্টে।
এই পুরো প্রক্রিয়াটি রেকর্ডিং ওয়াগনে বসে পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেখানে তথ্য সন্নিবেশিত হয়। এই তথ্য পাঠানো হয় বেইজ ক্যাম্প-১-এ। অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিসজ্জিত ওই ক্যাম্পে রাতভর চলে তথ্যের মান যাচাই। তাতে কোনো তথ্যের মান খারাপ দেখা গেলে সেখানে আবার পরদিন বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নতুন করে তথ্য নেওয়া হয়। আর সব ঠিক থাকলে ওই তথ্য ঢাকার বিশ্লেষণ কেন্দ্রে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করা হয়।
সাড়ে ২৮ মানবমাসের পরামর্শক: পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্রের মোট এক হাজার ২৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ত্রিমাত্রিক জরিপ চালানোর জন্য মোট বরাদ্দ রয়েছে ১৬৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এ ছাড়া আরও ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ফরাসি প্রতিষ্ঠানকে পরামর্শক নিয়োগ করা হয়েছে, যারা পাঁচটি ক্ষেত্রের জন্য মোট সাড়ে ২৮ মানবমাস (একজন মানুষের সাড়ে ২৮ মাস কাজ করার সমান) কাজ করে দেবে। সিজিজি ভেরিতাস নামক ওই প্রতিষ্ঠানের কেউ বাংলাদেশে থাকেন না। কোনো করিগরি বিষয়ে সন্দেহ বা অস্পষ্টতা দেখা দিলেই শুধু তাঁদের পরামর্শ নেওয়া হয়।
আইওসি ছেড়ে বাপেক্সে: এই জরিপ দলের ‘পার্টি চিফ’ মেহেরুল হোসেন ১৯৯৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার পর বিদেশি কোম্পানিতে (আইওসি) কাজ শুরু করেন এবং আইওসিদের পরিচালিত চারটি ত্রিমাত্রিক জরিপে অংশ নেন। অনেকে যেখানে দেশীয় কোম্পানি ছেড়ে আইওসির চাকরি নেন, সেখানে তিনি আইওসির চাকরি ছেড়ে দেশীয় কোম্পানিতে এলেন কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর চাকরি করার পর আমার বাবা বললেন, বিদেশি কোম্পানির জন্য অনেক কাজ করেছ। এখন দেশের জন্য কিছু করো। তাই বাপেক্সে চাকরি নিয়েছি।’
মেহেরুল বলেন, তিনি মনে করেন, তাঁর বাবার প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে। এই দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি আনার জন্য কাজ করতে হবে তাঁদের প্রজন্মকে। মেহেরুলের বাবা মো. আবু বকর হাওলাদার ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বরিশালের কামারখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন তিনি।
মেহেরুলের নেতৃত্বাধীন জরিপ দলের সদস্যরা বলেন, তাঁদের স্বপ্ন হচ্ছে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে দেশকে স্বয়ম্ভর করে তোলা। শুধু স্থলভাগে নয়, তাঁরা সমুদ্রবক্ষেও ত্রিমাত্রিক জরিপ চালানোর স্বপ্ন দেখেন।
এরপর কৈলাশটিলা: রশীদপুরে জরিপের কাজ শেষ পর্যায়ে। সেখানে মোট ১৮ হাজার ৮১৬টির মধ্যে সাড়ে ১৮ হাজারেরও বেশি ডিনামাইট বিস্ফোরণ ঘটানো হয়ে গেছে। ২১ হাজার ৭৮০টির মধ্যে সাড়ে ২১ হাজারের বেশি জিওফোন পয়েন্টে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করাও শেষ। এরপর জরিপ শুরু হবে সিলেটের কৈলাশটিলা ক্ষেত্রে। চলতি শুকনো মৌসুমের মধ্যেই যাতে কৈলাশটিলার জরিপও শেষ করা যায়, সেই লক্ষ্যে সব প্রস্তুতি চলছে।
সিলেট গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানির পক্ষ থেকে নিযুক্ত এই জরিপের প্রকল্প পরিচালক প্রদীপ কুমার বিশ্বাস বলেন, একটি মৌসুমে দুটি ক্ষেত্রের জরিপ শেষ করতে পারলে তা হবে আরেকটি নতুন ইতিহাস।

পাহাড় আবার অশান্ত বন্দুকযুদ্ধে নিহত ৬

রাঙামাটির জুরাছড়ি ও কাপ্তাই উপজেলায় গতকাল শুক্রবার বন্দুকযুদ্ধে ছয় আদিবাসী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় একজন আহত ও একজন অপহূত হয়েছেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) সশস্ত্র কর্মীদের মধ্যে এ বন্দুকযুদ্ধ হয় বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় ওই দুটি এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

জনসংহতি সমিতি ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতা-কর্মীরা জুরাছড়িতে তাঁদের কর্মীদের হত্যার প্রতিবাদে রাঙামাটি শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন। ইউপিডিএফের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তাঁদের নিরস্ত্র সদস্যদের হত্যা করেছে বলে তাঁরা অভিযোগ করেন। তবে ইউপিডিএফের সহযোগী সংগঠন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের রাঙামাটি জেলা সমন্বয়ক মাইকেল চাকমা দাবি করেন, এসব ঘটনা চাঁদাবাজির কারণে জনসংহতির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ফসল। তাঁদের কোনো সদস্য এ ঘটনায় জড়িত নন।
রাঙামাটির পুলিশ সুপার (এসপি) মাসুদ-উল হাসান গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘জেএসএস ও ইউপিডিএফের সশস্ত্র কর্মীদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে ছয় আদিবাসী নিহত হয়েছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি।’
জুরাছড়িতে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় নিহত পাঁচজনের মধ্যে তিনজনের এবং কাপ্তাইয়ে বন্দুকযুদ্ধে নিহত একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন, জুরাছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের লুলংছড়ি গ্রামের কালাচান চাকমা (৩৬), বরকল উপজেলার আইমাছড়া ইউনিয়নের পদুছড়া গ্রামের রতন চাকমা (৩০) ও মৈদং ইউনিয়নের বস্তিপাড়ার নিরঞ্জয় চাকমা (৪০)। তাঁরা জনসংহতি সমিতির সমর্থক বলে জানা গেছে। জুরাছড়িতে নিহত অপর দুজন হলেন, জীবন তঞ্চঙ্গ্যা (৪০) ও লুলংকর চাকমা (৪০)। তাঁদের মধ্যে লুলংকর চাকমা ইউপিডিএফের সমর্থক বলে জানা গেছে। জীবন ও লুলংকরের লাশ উদ্ধারে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলের আশপাশ এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছেন। একই ঘটনায় জনসংহতি সমিতির সমর্থক জুরাছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের লুলংছড়ি গ্রামের সন্তোষ চাকমা (৪০) প্রতিপক্ষের হাতে অপহূত হয়েছেন।
একই দিন ভোর ছয়টায় কাপ্তাইয়ের দুই আদিবাসী দলের বন্দুকযুদ্ধে বিনোদ চাকমা (৩০) নামের জনসংহতি সমিতির এক সদস্য নিহত ও অপর একজন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে তাঁর নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জুরাছড়ি উপজেলা সদর থেকে ৬০ কিলোমিটারের বেশি দূরে মৈদং ইউনিয়নের ফকিরাছড়া বাজারে গতকাল ছিল হাটের দিন। জনসংহতি সমিতির একটি সশস্ত্র দল ওই বাজারের দিকে আসার সময় ভোর রাত চারটার দিকে বস্তিপাড়া এলাকায় ওত পেতে থাকা ইউপিডিএফের একটি দলের সামনে এসে পড়ে। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ৪৫ মিনিটের বেশি বন্দুকযুদ্ধ চলার সময় ওই পাঁচজন মারা যান। এ সময় সন্তোষ চাকমা বিপক্ষ দলের হাতে ধরা পড়েন।
খবর পেয়ে সকালে সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত পাঁচজনের মধ্যে তিনজনের লাশ উদ্ধার করে। পরে পুলিশ সেখানে গেলে সেনাবাহিনী লাশগুলো পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। জুরাছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিক এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। ঘটনার পর থেকে ওই এলাকার লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।
জনসংহতি সমিতির রাঙামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নীলোৎপল চাকমা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দুটি ঘটনার জন্য পার্বত্য চুক্তিবিরোধী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটি ফ্রন্টকে (ইউপিডিএফ) দায়ী করা হয়েছে।
তবে জনসংহতি সমিতি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করে, মৈদং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য অরুণ চাকমার বাড়ি থেকে তাঁদের সদস্যদের অপহরণের পর গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
কাপ্তাইয়ে বন্দুকযুদ্ধ: সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রমতে, কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনা থানার রাইখালী ইউনিয়নের গবছড়ি এলাকায় ভোর ছয়টার দিকে জনসংহতি সমিতি ও ইউপিডিএফের সমর্থক আদিবাসীদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ হয়। কাপ্তাই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা হাজেরা খাতুন ও চন্দ্রঘোনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিক উল্লাহ জানান, ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর একটি যৌথ দল ঘটনাস্থলে গিয়ে একটি লাশ ও একজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছে। পরে আহত ব্যক্তিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। নিহত ব্যক্তি জনসংহতি সমিতির সদস্য বিনোদ চাকমা বলে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতর রাঙামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নিলোৎপল চাকমার গতকাল স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়েছে। তিনি খাগড়াছড়ি থেকে বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন বলে সমিতি দাবি করে।
চার মাসে নিহত ১৫: এর আগে গত বুধবার রাতে বরকল উপজেলার সদর ইউনিয়নের লতিবাঁশছড়া গ্রামে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির অঙ্গ-সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বিক্রম চাকমাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। গত অক্টোবর থেকে চার মাসে রাঙামাটি জেলায় জেএসএসের দুই পক্ষ ও ইউপিডিএফের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে কমপক্ষে ১৫ জন নিহত হয়েছে।
দীঘিনালায় এক ছাত্র গুলিবিদ্ধ: দীঘিনালা (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি জানান, উপজেলার মেরুং ইউনিয়নের দাঙ্গাবাজার এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহীর গুলিবর্ষণে রোনাল চাকমা (১৮) নামের এক ছাত্র গুলিবিদ্ধ হয়েছে। সে হেডম্যান পাড়ার দীপন চাকমার ছেলে এবং খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণীর ছাত্র। ঘটনার পর তাকে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সকাল সাড়ে আটটায় মোটরসাইকেলযোগে কয়েকজন আদিবাসী অস্ত্রধারী লংগদু উপজেলার দিক থেকে এসে দাঙ্গাবাজারে অতর্কিত গুলি ছোড়ে। তখন বাজারের দিকে আসার সময় রোনাল চাকমা গুলিবিদ্ধ হয়। এরপর অস্ত্রধারীরা আবার লংগদু উপজেলার দিকে চলে যায়।
মেরুং পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (আইসি) সুবেদার সামছুল হক প্রত্যক্ষদর্শীর উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, দাঙ্গাবাজার এলাকায় জেএসএস (সন্তু লারমা) ও জেএসএস (এম এন লারমা) গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এ গুলির ঘটনা ঘটেছে। এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য সন্ত্রাসীরা গুলি ছুড়ে থাকতে পারে। এরা আগে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দাঙ্গাবাজার এলাকায় দুটি ঘটনায় জনসংহতি সমিতি (এম এন লারমা) গ্রুপের তিন কর্মী নিহত হয়েছিলেন।

ব্যাংকখাতের দরদী চোখ : উন্নয়নের নতুন মাত্রা by ওয়াহিদ মুরাদ

তানুগতিক ব্যাংকিং কার্যধারার বাইরেও ব্যাংসমুহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ অত্যাবশ্যকীয় কাজ করতে পারে এবং করে যাচ্ছে। এ নজির আমরা দেখে যাচ্ছি। বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে তথা আধুনিকায়নে সহায়তা রাখতে ব্যাংকসমূহ একের পর এক নতুন নতুন কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে চলছে।

বলতে দ্বিধা নেই, এসব কর্মকাণ্ডকে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সরসারি পরামর্শ, উপদেশ এবং উদ্যোগ সকল ব্যাংকসমূহকে সাহায্য করছে নিরন্তর। আমাদের দেশে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধনী ব্যক্তিরা আর্থিক সহায়তা দিয়ে সমাজে অনেক বড় বড় জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। সে কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডেরই নতুন দিকমাত্রা কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা দেশে প্রায় ৫০টির মতো সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক কাজ করছে। এদের কর্মকাণ্ড এখন টাকা জমা নেয়া কিংবা ঋণ প্রদান অথবা সে ঋণ আদায় কিংবা বলা যায় বিদেশ থেকে প্রেরিত কষ্টার্জিত রেমিটেন্স সংগ্রহই নয় বরং সমাজের প্রতিটি মানুষের সার্বিক উন্নয়নই এখন ব্যাংকের লক্ষ্য এবং অভীষ্ট। হোক সে গ্রামের অথবা শহরের কোনো লোক। এ লক্ষ্যের ফলেই অবহেলিত অনাদরে বেড়ে উঠা আদিবাসী মানুষরাও পাচ্ছে জীবনে নতুন রঙিন আকাশ। যেখানে তারা ব্যাংক ঋণ নিয়ে নিজেদের উৎপাদিত পণ্য বিদেশে পাঠিয়ে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সহায়তা পাচ্ছে এবং সহায়তা নিচ্ছে।

আদিবাসীদের মাঝে হস্তশিল্পের কাজ ব্যাপকভাবে প্রসার ঘটানোর পাশাপাশি আদিবাসীদের শ্রমকে আরো নিরিড়ভাবে কর্মে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে আদিবাসীদের দুঃখের রাত অনেকটাই কেটে যাওয়ার পথে। গ্রাম থেকে উঠে আসা মানুষ শহরে এস হয়ে যায় বস্তিবাসী। সে সব মানুষদের ঋণ সহায়তা দিয়ে পুনরায় গ্রামে ফিরিয়ে দেয়ার মতো মহৎ কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশে কৃষি ব্যাংক। গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক ভিখারীকে ঋণ দিয়ে কর্মে নিয়োগের ফলে, সব মহল থেকে এ উদ্যোগ প্রশংসিত হয়েছে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ঠোঁট কাটা শিশুদের চিকিৎসা সহায়তা তাদের জীবনে এনে দিয়েছে এক বিশাল মানসিক শক্তি। প্রতিবন্দ্ধী মানুষদের দাঁড়াবার জায়গা ছিল না বললে অতু্যক্তি হয় না। সেই প্রতিবন্দ্ধী মানুষদের বিভিন্ন ধরনের ঋণ সহায়তা দিয়ে স্বানির্ভর করার উদ্যোগ নিয়েছে দেশের সকল রাষ্ট্রীয় ব্যাংক। এ এক অনন্য নজির ব্যাংক সেবার। এ ধরনের দরদী চোখ নিপতিত হয়েছে গরীব, দুস্থ, অসচ্ছল মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের বেলায়ও। যাদের লেখা-পড়ার কোনো সুযোগই হতো না- যদি না ব্যাংকসমূহ শিক্ষা ঋণ দিয়ে (কোনো কোনো ক্ষেত্রে সুদবিহীন) এগিয়ে না আসতো।

ব্যাংকের উন্নয়নের দরদী ছোঁয়া বিভিন্ন মাধ্যমে দেয়া যেতে পারে। যেমন দেশের যে উপজেলাটি কৃষি উৎপাদনে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে, সে উপজেলাকে চিহ্নিত করে, একটি ব্যাংককে সে দায়িত্বটি দিয়ে দেয়া। অপরপক্ষে যে উপজেলাটি শিক্ষায় কিংবা শিল্পে সবচেয়ে অবহেলিত সেই উপজেলাটিকে চিহ্নিত করে সেখানে একটি ব্যাংক পাঁচ বছর মেয়াদী কিংবা দশবছর মেয়াদী কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। এরকম দায়-দায়িত্ব নিয়ে একটি ব্যাংক যখন কাজ করে সফল হবে তখন একটি জেলাভিত্তিক কর্মসূচী নেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। বিষয়টি দেশের সংশিস্নষ্ট সকলের জন্য প্রস্তাব আকারে রাখলাম। যদি এ থেকে কোনো রকম উপকার কোনো মানুষের হয়, যে জন্যই এ প্রস্তাবনা উত্থাপিত হলো।

বর্তমান সময়ে গাভীর দুধের আকাল প্রচণ্ড। বাজারেও এর চাহিদা ব্যাপক। এই দুধের সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্য একটি উপজেলাকে কিংবা একটি জেলাকে চিহ্নিত করে সংশিস্নষ্ট কৃষক-কৃষাণীদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে ঋণ সহায়তার মাধ্যমে জেলাটিকে দুগ্ধে স্বনির্ভর করা সম্ভব বলে মনে করি। এটিও বিবেচনায় নেয়ার জন্য সংশিস্নষ্ট সবার কাছে উদাত্ত আহবান জানাই। কারণ শিশু খাদ্য হিসাবে মায়ের দুধের বিকল্প এই গাভীর দুধই একমাত্র সম্বল। সরকার তথা বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারে দরদী চোখ রাখবে বলে আশা রাখি।

আমরা কি জানতাম, আমদানি বিকল্প তৈলবীজ, আদা, ডাল, মুগ, গরম মশলা, ভুট্টা, পিয়াজ, রসুন ইত্যাদি আমদানি করতে বাংলাদেশের মতো একটি গরীব দেশের বছরে প্রায় সাড়ে বারো হাজার কোটি টাকা চলে যেত। এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান মাত্র ২% সুদে এ সব ফসলাদি উৎপাদনে ঋণ সহায়তা দিয়ে যাওয়ার যে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, তাকি কখনো কল্পনা করা যেত? দেশের রেডিও -টেলিভিশনে এ সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন দেখে আমাদের একটি তৃতীয় চোখ খুলে দিলেন গভর্নর মহোদয়। দেশের সব ব্যাংক যথা সময়ে যথার্থ ব্যক্তিকে যথেষ্ট তদারকির মাধ্যমে স্বচ্ছতার সাথে এ ঋণ সহায়তা যদি দিয়ে যায় তাহলে সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন বাংলাদেশ তৈলবীজ, আদা, ডাল, মুগ, গরম মশলা, ভুট্টা, পিয়াজ, রসুন ইত্যাদি রফতানিকারক দেশে পরিণত হবে।

অত্যন্ত আশার কথা, যেখানে কারো চোখ পড়ে না, সেখানে ব্যাংকের দরদী চোখ পড়তে শুরু করেছে। ফলে ধীরে ধীরে সামাজিক দায়বদ্ধতা পালনের পাশাপাশি ব্যাংক এগিয়ে যাচ্ছে একটি দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে। সে উন্নয়নে জড়িয়ে আছে হতদরিদ্র, দরিদ্র, মধ্যম আয়ের ব্যাপক জনগোষ্ঠী। আমরা আশা করছি, আগামী দিনগুলোতে নতুন নতুন উদ্ভাবন এবং উদ্যোগ গ্রহণ করে ১৬ কোটি মানুষের ছোট্ট এ দেশ -বাংলাদেশ একদিন ব্যাপক উন্নয়নের সূর্যালোক গ্রহণ করবে। আমরা সে দিনটির অপেক্ষায় আছি, যে দিন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ সমগ্র এশিয়ার মধ্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে সুন্দর বনের বাঘ্রের মতোই। আর সে জন্য আজকের ব্যাংকের নানাবিধ বিভিন্নমুখী কর্মসূচী এবং দরদী চোখ নতুন করে সবার কাছে আলোকবর্তিকা হয়ে ধরা দেবে বলেই আশা করি।