Saturday, January 22, 2011

নারী শিক্ষার সাফল্য ও সীমাবদ্ধতা

০১০ সালের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় পাসের হার, উপস্থিতি ও ভাল ফলাফলসহ বিভিন্ন দিক হইতে মেয়েরা কিছুটা পিছাইয়া পড়িয়াছে। নারী শিক্ষার উন্নয়নে সংশিস্নষ্ট ব্যক্তিবর্গ এ ব্যাপারে হতাশা প্রকাশ করিয়াছেন।

সদ্য সমাপ্ত বৎসরে জেএসসি পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করিয়াছিল ১২ লক্ষ ৩৪ হাজার ২৫৬ জন শিক্ষার্থী। ইহার অর্ধেকেরও বেশি অর্থাৎ ৬ লক্ষ ৫০ হাজার ৭৮৯ জন ছিল ছাত্রী। কিন্তু অনুপস্থিত ও অকৃতকার্য হওয়া ২ লক্ষ ৩৪ হাজার ৫৯১ জন ছাত্রী নবম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হইতে ব্যর্থ হইয়াছে। ইহা নিবন্ধিত মোট ছাত্রীর ৩৬.০৪ শতাংশ। অন্যদিকে জেএসসি পরীক্ষায় ছেলেদের অকৃতকার্যের হার ৩০ শতাংশ। এখানে ছেলে-মেয়ের মধ্যে প্রতিযোগিতা বড় কথা নয়। নারী শিক্ষার উন্নয়নে সরকারের সবিশেষ প্রযত্নশীলতা সত্ত্বেও মেয়েদের ঝরিয়া পড়ার হার দেখিয়া অনেকে বিচলিত। তাহাদের নিকট এরূপ ফলাফল অপ্রত্যাশিত বৈকি।

শিক্ষা-দীক্ষায় আজকের নারী সমাজ এ দেশে নারী আন্দোলনের পথিকৃত বেগম রোকেয়ার সময়কালের তুলনায় অনেকদূর অগ্রসর হইয়াছে। ফলে ঘরের বাহিরে বিভিন্ন কর্মস্থলে তাহাদের অংশগ্রহণের আনুপাতিক হার বাড়িয়াছে। সেইসঙ্গে বৃদ্ধি পাইয়াছে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা। ইহা স্বাধীনতা-উত্তর নারী শিক্ষার উন্নয়নে বিভিন্ন সময় গৃহীত কর্মসূচীরই সুফল। গত মাসে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার যে রেজাল্ট প্রকাশিত হইয়াছে তাহাতে দেখা যায়, মেয়েরা মেধা তালিকায় ভাল অবস্থানে আছে। এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ছেলেদের চাইতে তাহাদের সংখ্যা ছিল দেড় লক্ষ বেশি। ২০০৮ সালের হিসাব অনুযায়ী মাধ্যমিকে ভর্তির ক্ষেত্রে মেয়ে ও ছেলের অনুপাত ৫৪: ৪৬। কিন্তু এই পর্যায়ে মেয়েদের ঝরিয়া পড়ার হার সর্বাধিক, ৪২ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে এশিয়া সাউথ প্যাসিফিক অ্যাসোসিয়েশন ফর বেসিক অ্যান্ড অ্যাডাল্ট এডুকেশন নামক এক সংস্থার পর্যবেক্ষণ হইল, এই স্তরে বাংলাদেশের মেয়েদের ঝরিয়া পড়ার প্রধান কারণ বাল্যবিবাহ। আর এই বাল্যবিবাহেরও রহিয়াছে নানা সামাজিক বাস্তবতা। ইভটিজিং ও নানা পারিবারিক চাপের কারণে অনেক মেয়ের বিবাহ সম্পন্ন হয় ১৮ বৎসরের আগেই। উপরোক্ত আন্তর্জাতিক সংস্থার হিসাব মতে, ইহার হার ৬৪ শতাংশ। যদি মাধ্যমিক পর্যায়ে অধ্যয়নরত ছাত্রীদের নানা সমস্যা দূর করা সম্ভব হয়, তাহা হইলে নারী শিক্ষার কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সহজতর হইবে।

স্কুল পর্যায়ে মেয়েদের জন্য উপবৃত্তি চালু রহিয়াছে যাহার প্রভাব সুদূরপ্রসারী। নারী শিক্ষার অগ্রগতিতে ইহার অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু গ্রামে-গঞ্জে এমনকি শহরাঞ্চলেও এমন মেয়ে রহিয়াছে, যাহারা শুধু উপবৃত্তির টাকার জন্যই স্কুলে যাইয়া থাকে। তাহাদের কাছে পড়াশোনা এখনও গৌণ। ঝরিয়া পড়ার হারে তাহারাই অগ্রগামী। সাধারণত আমাদের দেশে দরিদ্র পরিবারগুলিতে লেখাপড়ার গুরুত্ব আজও সেভাবে দৃঢ়মূল হয় নাই। এজন্য নারী শিক্ষার প্রসারে জনসচেতনতা তৈরি ও উপবৃত্তির সদ্ব্যবহারও প্রয়োজন। শিক্ষার আবশ্যকতা সকলের অন্তমর্ূলে জাগাইতে হইবে। ইহাছাড়া গত্যন্তর নাই।

গত বৎসর নিউজউইকের আলোচিত একটি শিরোনাম ছিল_'উইমেন উইল রুল দি ওয়ার্ল্ড'। অর্থাৎ বিশ্ব শাসন করিবে নারীরা। কয়েক দিন আগে বিকাশমান অর্থনীতির দেশ ব্রাজিলে প্রথমবারের ন্যায় একজন মহিলা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হইয়াছেন দিলমা রৌসেফ। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, আরব আমিরাত ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত বিভিন্ন দেশে নারী গ্রাজুয়েটের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় অর্থনীতি ও রাজনীতিতে তাহাদের প্রভাব বাড়িতেছে। বাংলাদেশে শিক্ষাক্ষেত্রে মাধ্যমিক পর্যায়ে নানা সমস্যা কাটাইয়া উঠিতে পারিলে নারীরা উচ্চশিক্ষায়ও আশানুরূপ সাফল্য লাভ করিবে। ১৯৯০-৯৫ সালে উচ্চশিক্ষায় মেয়ে ও ছেলের অনুপাত ছিল ২৫: ৭৫। এক যুগেরও বেশি সময় পর এ ক্ষেত্রেও নারীদের অগ্রগতি হইয়াছে। কিন্তু সেই গতি অত্যন্ত শস্নথ। এতদসত্ত্বেও আমরা মনে করি, হতাশ হওয়ার কিছু নাই। মেয়েরা শিক্ষা-দীক্ষায় আরও উন্নতি লাভ করিবে এবং পুরুষের সঙ্গে মিলিয়া-মিশিয়াই সুন্দর ও সমৃদ্ধ দেশ গঠনে ভূমিকা রাখিবে।

No comments:

Post a Comment