Saturday, January 22, 2011

প্রত্যয় বাড়ছে বিএনপির by মোশাররফ বাবলু

পৌর নির্বাচনে সাফল্যের পর এবার জাতীয় সংসদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ ও হবিগঞ্জ-১ আসনে উপনির্বাচনে বিজয়ের টার্গেট নির্ধারণ করেছে বিএনপি। দুটি আসনেই জয়লাভের জন্য মরিয়া চেষ্টা করবে দলটি। বিএনপির নেতারা মনে করছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অবস্থা ভালো হলেও হবিগঞ্জে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন তাঁরা।
এ ছাড়া হবিগঞ্জে জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের প্রার্থী সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেওয়ায় বিএনপির প্রত্যয় আরো বেড়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারলে পৌর নির্বাচনের মতো হবিগঞ্জ-১ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের উপনির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত।’
উপনির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি নেতারা নির্বাচনী এলাকায় এরই মধ্যে সাংগঠনিক সফর শুরু করেছেন। এরই মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ঘুরে এসেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দলীয় প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার খালেদ মাহমুদ শ্যামলসহ স্থানীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে তিনি চষে বেড়াচ্ছেন পুরো নির্বাচনী এলাকা। হবিগঞ্জ-১ আসনেও যাওয়ার কথা রয়েছে তাঁর। ২৪ জানুয়ারি হবিগঞ্জ যাচ্ছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহিরুল ইসলাম হবিগঞ্জ অবস্থান করছেন। বিএনপির সমমনা জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের মাওলানা আবদুল মালিক চৌধুরী হবিগঞ্জ-১ আসনে প্রার্থী হয়েছেন। জানা গেছে, মালিক চৌধুরীকে নিবৃত্ত করে তাঁর সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে জহিরুল ইসলাম হবিগঞ্জ গেছেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের অনুরোধে আবদুল মালিক চৌধুরী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে বিএনপিকে সমর্থনের ঘোষণা দিতে পারেন বলে বিএনপির ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে।
আগামী ২৭ জানুয়ারি এ দুই আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য লুৎফুল হাই সাচ্চু ও দেওয়ান ফরিদ গাজীর মৃত্যুতে এ দুটি আসন শূন্য হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পৌর নির্বাচনে বিজয়ের পর বিএনপির জনসমর্থন আরো বেড়ে গেছে। দলের নেতা-কর্মীরা আÍপ্রত্যয়ী হয়ে উঠেছেন। দলের মধ্যে ঐক্য গড়ে উঠেছে।’
বিএনপির নেতা হারুন আল রশীদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসন থেকে এর আগেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ নেতা লুৎফুল হাই সাচ্চুর কাছে পরাজিত হন। বিএনপি হারুন আল রশীদকে প্রথমে মনোনয়ন দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তিনি একপর্যায়ে অনীহা প্রকাশ করেন। তাঁর পরিবর্তে ইঞ্জিনিয়ার খালেদ মাহমুদ শ্যামলকে এ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। শ্যামলের পক্ষে কাজ করছেন হারুন আল রশীদ। এ জন্যই বিএনপি মনে করছে, এখানে তারা ভালো করবে।
হবিগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচনে জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের মাওলানা আবদুল মালিক চৌধুরী প্রার্থী থাকলে বিএনপির জন্য ক্ষতি হতো। এ জন্য তাঁর সমর্থন আদায়ের জোর চেষ্টা চালান বিএনপি নেতারা। মাওলানা আবদুল মালিক চৌধুরীর প্রার্থিতা প্রত্যাহার নিয়ে জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের নেতাদের সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার উমেদনগর মাদ্রাসায় বৈঠক করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহিরুল ইসলাম। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জমিয়তের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মাওলানা তাফাজ্জল হক, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শেখ মুজিবুর রহমান, হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও নবনির্বাচিত মেয়র জি কে গউস, বিএনপি প্রার্থী শেখ সুজাত মিয়া, জমিয়তে ওলামায়ের প্রার্থী আবদুল মালিক চৌধুরী প্রমুখ। অবশেষে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ওই মাদ্রাসায়ই এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন মালিক চৌধুরী। বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে কাজ করারও ঘোষণা দেন তিনি। পরে ফোনে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে ভবিষ্যৎ ঐক্যের স্বার্থে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছি।’
হবিগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী ও বিএনপির প্রার্থী শেখ সুজাত মিয়ার মধ্যে নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালে বিএনপি প্রার্থীর অবস্থান আরো ভালো হবে বলে দাবি করছেন বিএনপি নেতারা। দীর্ঘদিন ধরে এ আসন থেকে নির্বাচন করে আসছেন শেখ সুজাত মিয়া। ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেওয়ান ফরিদ গাজীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি। কাছাকাছি ভোট পেয়ে পরাজিত হন তিনি। কিন্তু দেওয়ান ফরিদ গাজীর অবর্তমানে সুজাত মিয়া ভালো করবেন বলে আশাবাদী বিএনপি।
এ ব্যাপারে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘গত দুবছরে আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারের একটিও বাস্তবায়ন করতে পারেনি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাÍক অবনতির কারণে দেশের মানুষ সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ। এ কারণে আওয়ামী লীগের ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে জনগণ। পৌর নির্বাচনে জনগণ বিএনপিকে সমর্থন দিয়েছে। আসন্ন দুটি উপনির্বাচনেও বিএনপি প্রার্থীকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবে বলে আশা করি।’

No comments:

Post a Comment