Saturday, January 22, 2011

ক্ষুদ্রঋণ: দারিদ্র্য কমিয়েছে কতখানি

ক্ষুদ্র ঋণ দরিদ্র মানুষের মঙ্গলের জন্য দেয়া হচ্ছে বলে যে কথাটা প্রচলিত তা সম্পূর্ণ অসত্য। কারণ এ সামান্য ঋণ নিয়ে কোন প্রকল্প তা করতে পারে না। ক্ষুদ্র ঋণের উপকারিতা নিয়ে যে হারে ঢাক-ঢোল পিটানো হচ্ছে সে হারে দরিদ্র জনগণের উপকার হচ্ছে না।

বরঞ্চ দরিদ্র জনগণ ঋণ নিয়ে মহাবিপদে পড়েছে। এ ঋণ নিয়ে যেসব প্রকল্প করা হচ্ছে এবং তা থেকে যে পণ্য তৈরি হচ্ছে তা বিক্রি হচ্ছে না। কারণ এসব পণ্যের কোন ব্যাপক বাজার নেই, ক্রেতা নেই। ফলে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে দরিদ্র জনগণ আরো দরিদ্র হচ্ছে।

উদারণস্বরূপ বলতে চাই যে, আমি তাঁত শিল্পের জন্য ৫০ জন তাঁতীকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে দিয়েছিলাম; কিন্তু তারা সে ঋণ আর ফেরত দিতে পারেনি। কারণ তারা কাপড় তৈরি করে দোকানদারকে দিয়ে আসে। দোকানদার কাপড় বিক্রি না করা পর্যন্ত সে টাকা দেয় না। আর বিক্রি করার পরও কিস্তিতে টাকা দেয়। যার ফলে তারা আর ঋণ শোধ করতে পারে না।

পলস্নী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) তাদের সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে দরিদ্র জনগণের মধ্যে ঋণ দিচ্ছে। যেমন 'ঠেঙ্গামারা মহিলা সমিতি' (টিএমএসএস) এনজিওর মাধ্যমে পিকেএসএফ আমাদের এলাকায় হাজার কোটি টাকার উপরে নাকি ঋণ দিয়েছে; কিন্তু আমি নিজে দেখেছি সেখানে দরিদ্র মানুষের কোন উন্নতি হয়নি। এটা খুবই সন্দেহাতীত যে, এখানে স্বল্প সুদে সরকারের এতগুলো টাকা দেয়া এবং এর কোন সুপারভিশন না থাকাটার মধ্যে অন্তর্নিহিত কোন কারণ থাকতে পারে কি না? এর একটা সঠিক তদন্ত হওয়া দরকার। আমরা জানি সেখানে এ টাকা দিয়ে পেট্রোল পাম্প করা হচ্ছে, মেডিক্যাল কলেজ করা হচ্ছে। বড় পুঁজির ব্যবসা করা হচ্ছে। তাদের পুঁজি বাড়ছে। দরিদ্র মানুষের নামে নিয়ে নিজেরা বিশাল বিত্ত-বৈভবের মালিক হচ্ছে; কিন্তু দরিদ্র মানুষের জন্য কিছুই হয়নি। তবে একটি জিনিস দেখেছি। সেখানে টুপি তৈরী হচ্ছে। টুপিগুলো বিদেশে যাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে বলা যায়, ব্র্যাক নিজেরা দোকান করেছে। তারা অগ্রিম দিয়ে পণ্য তৈরি করে নেয় এবং অন্যদের কাছ থেকে পণ্য ক্রয় করছে। তারপর তারা বিক্রি করছে। তাদের অনেক দোকান রয়েছে যদিও চাহিদার তুলনায় খুবই কম; কিন্তু এটাই বিদেশে যাওয়ার সময় বাংলাদেশীরা উপহার হিসাবেও নিয়ে যায়।

গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে যে কেলেংকারির কথা শোনা যাচ্ছে তা খুবই উঁচু স্তরের ব্যাপার। আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রফেসর ড. ইউনূস সাহেবকে শ্রদ্ধা করি। তিনি সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার নিমগাছীতে সরকারি খাস দীঘি ও প্রায় ৪০০ পুকুর নিয়ে একটি প্রকল্প করেছিলেন। এ প্রকল্পটি ব্যর্থ হয়। উলেস্নখ্য যে, ব্রিটিশ গভর্নমেন্ট উক্ত দীঘি ও পুকুরগুলো প্রায় দশ কোটি টাকা খরচ করে মৎস্য চাষের উপযোগী করে তুলেছিলেন দরিদ্র জনগণের জন্য। তিনি গ্রামীণ চেক প্রকল্প করবেন বলে বিশাল প্রচার করেন। এটাও ব্যর্থ হয়। টাঙ্গাইলে তিনি একটি সুতার মিল করেছেন। সেটার সুদের হার খুব কম; কিন্তু সেটাতেও তিনি ফবভধঁষঃবৎ হয়েছেন। তার প্রকল্পে তিনি নিজেই যখন ফবভধঁষঃবৎ হন তখন গরিব মানুষ ৩৩% সুদ দিয়ে কিভাবে ঋণমুক্ত হবেন! তিনি গরীব মানুষের কাছ থেকে ৩৩% সুদ নিয়ে থাকেন। মানুষ বলছে, তার প্রতিষ্ঠানের সুদের হারের হিসাব-নিকাশ বুঝা যাচ্ছে না; কিন্তু এটা শোনা যায় যে, তিনি তার লবিস্টদের জন্য অসম্ভব ব্যয় করে থাকেন এবং তার 'পাবলিসিটি ব্যয়ের কোন হিসাব নেই।

বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য তিনি নোবেল পুরস্কার পান। অথচ তিনি এখন আমেরিকার গরীব মানুষকে ধনী করার চেষ্টা করছেন। চীনের গরীব লোকদের ধনী করার ঋণ প্রকল্প নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। গত আগস্ট মাসে চীনের দারিদ্র্য দূরীকরণ ও উন্নয়ন মন্ত্রী ঢাকা সফর করেন। সে সময় তার সাথে আলোচনায় তাদের দেশের দরিদ্র জনগণের বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম। জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তাদের দেশে কত ভাগ লোক গরিব আছে। তিনি জানান, তাদের দেশে শতকরা এক ভাগ লোক গরিব রয়েছে। তারা খেতে পাচ্ছেন, কোন কোন জায়গায় তাদের বিদু্যৎ রয়েছে, কোন কোন জায়গায় বিদু্যৎ নেই। এসব দরিদ্র লোকের বসবাস প্রধানত পাহাড়ী এলাকায়।

আরডিআরএস (রংপুর)-কে ইফাদ ও অন্যান্য সংস্থা থেকে অনেক টাকা ঋণ দেয়া হয়েছিল এ এলাকার দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য। কুড়িগ্রামে তারা সবচেয়ে বেশি টাকার অপব্যয় করেছে; কিন্তু দরিদ্র জনগণ যারা ঋণ নিয়েছেন তারা আরো বেশি গরিব। আসলে এসবের পুরো তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। আরডিআরএস দরিদ্র জনগণের জন্য কিছু না করে দরিদ্র মানুষের টাকা দিয়ে তারা নিজেরা বিরাট গেস্ট হাউজ করেছেন, কনফারেন্স হল করেছেন। সে আয় দিয়ে আরডিআরএস-এর কর্মকর্তারা এখন বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন।

অনেক পরিকল্পনা ও অর্থনৈতিক উন্নতির নানা সূচকের কথা বলা হলেও দেশে এখনো অভাবী মানুষের সংখ্যা কমছে না। দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে হাজারো প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে, তবু কমছে না দারিদ্র্যের হার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর উদ্যোগে (বিবিএস) পরিচালিত 'মৌলিক সুযোগ-সুবিধা পরিবীক্ষণ জরিপ: ২০০৯' -এর প্রতিবেদনে যে চিত্র উঠে এসেছে তা থেকে জানা যায়, দেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ৭৫ শতাংশ এখনো কাঁচাঘর ও ঝুপড়িতে বসবাস করে। ৬.৫ কোটি লোক অভুক্ত থাকে। সঠিক পরিকল্পনা না থাকার জন্য আসলে কিছুই হচ্ছে না। সঠিকভাবে পরিকল্পনা নিয়ে বৃহদাকারে বাস্তবমুখী কিছু পদক্ষেপ না নিতে পারলে শুধু ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ সম্ভব হবে না।

আমি একবার থাইল্যান্ডে রাষ্ট্রীয় সফরে রাষ্ট্রপতির সফরসঙ্গী হিসাবে গিয়েছিলাম। সেখানে থাই রাজকুমারীর সাথে আমার কথা হয়েছিল। আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, তাদের রাজপরিবার এত জনপ্রিয় কেন? তিনি বললেন, আমরা সকলেই জনগণের জন্য কিছু না কিছু কাজ করি। রাজাও গ্রামে যান, কাজ করেন। আমি বললাম, আপনি কি কাজ করেন? তিনি জানালেন, তিনি বেশ কিছু মহিলা নিয়ে কাজ করছেন যারা রুমাল তৈরি করে। তিনি সে রুমালের নিচে স্বাক্ষর দেন। রুমালে রাজকুমারীর স্বাক্ষর দেখে লোকজন আগ্রহ করে বেশি দামে কেনেন। রুমাল তৈরি করতে যে খরচ হয় তার চেয়ে অনেক বেশি দামে দেশ-বিদেশে বিক্রি হয়। আর এ আয় থেকে গরীব মানুষকে সাহায্য করে থাকেন। তিনি আমাকেও একটি রুমাল উপহার দিয়েছিলেন। যাহোক, আমাদের তো আর এরকম প্রকল্প করার সুযোগ নেই। আমাদেরকে বাস্তবমুখী প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।

ভারতে তারা ডযরঃব জবাড়ষঁঃরড়হ করেছে। 'আমুল' নামে বিখ্যাত দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদন করে আসছে। 'আমুল' অর্থ প্রতিজ্ঞা। ১৯৪৬ সালে গুজরাটে সমবায় দুগ্ধ বাজারজাত ফেডারেশন চালু হয়। এর দায়িত্বে ছিলেন ড. ভারগিজ কুরিয়েন। বর্তমানে সেখানে ২.৮ মিলিয়ন গ্রামবাসী এই ফেডারেশনের মালিক।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী এ প্রকল্পটি চালু করেছিলেন। পরে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী এ প্রকল্পের বিস্তৃতি ঘটান। তিনি গোটা ভারতেই সমবায়ের ভিত্তিতে এ প্রকল্পের মডেলে দুগ্ধ খামার স্থাপন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সমবায় করে এক এক জনকে একটি/দুইটি করে মহিষ দেয়া হয়। প্রতিদিন সকালে তারা তাদের মহিষের দুধ সমবায় খামারে এসে দিয়ে যান, বিকালেও দিয়ে যান এবং টাকা নিয়ে যান। তাদের প্রত্যেককেই একটি করে দুধ পরীক্ষা করার মেশিন দেয়া হয়েছে যার দ্বারা তারা নিজেরাই দুধ পরীক্ষা করে তাতে কত ভাগ ফ্যাট, কতভাগ শর্করা ইত্যাদি নির্ণয় করে সমবায় খামারে সরবরাহ করে থাকেন। এতে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে তাদের সময় নষ্ট করতে হয় না। এছাড়াও সরকার বিনা পয়সায় গবাদি পশুর জন্য ওষুধ সরবরাহ করে থাকে। এভাবে পরবতর্ীতে ভারত বিশ্বের মধ্যে অন্যতম দুগ্ধ উৎপাদনকারী দেশে পরিণত হয়। সুতরাং গরিবদের জন্য কিছু করতে হলে এ ধরনের বাস্তবমুখী প্রকল্প গ্রহণ করা দরকার। আমাদের দেশে এরকম প্রকল্প করা যায়। প্রত্যেককে একটি করে গরু দেয়া যায়।

চর জীবিকায়ন কর্মসূচি (সিএলপি)'র মাধ্যমে সরকারের বহু টাকা অপচয় হচ্ছে। কারণ আমাদের এখানে দেখা যায়, ব্রহ্মপুত্র নদের বালুতে সিএলপি চরবাসীদের জন্য ঘর তৈরি করে দিচ্ছে। আবার বর্ষায় পানি এলেই ঘরবাড়ি ভেঙ্গে যায়। এক বছরও টিকে না। সুতরাং এ খাতে ব্যয় করার কোন অর্থ হয় না। এ টাকা চরবাসীকে বিতরণ করে দিলেও তারা কিছু একটা করে খেতে পারবে।

এখন যে ক্ষুদ্র ঋণ দেয়া হচ্ছে তাতে দেখা যায়, ঋণ নিয়ে লোকজন কি করবে তা ঠিক করতে পারে না। কারণ তারা যা কিছু তৈরি করবে সেটার বাজারে চাহিদা নেই। বিক্রি হয় না। যেমন বাঁশের তৈরি পণ্য, পাটের তৈরি ব্যাগ, ছিকা ইত্যাদি। (আগামিকাল সমাপ্য)

আমাদের নদী ভাঙ্গন এলাকা। এখানে কোন প্রকল্প করা খুব কঠিন। কারণ আজকে এখানে জনপদ আছে, কালকে সেখানে নদী ভেঙ্গে সব শেষ করে ফেলে। ভাঙ্গনের ফলে লোকজন কে কোথায় চলে যায় তার আর কোন হদিস থাকে না। ফলে ঋণের খোঁজ-খবর থাকে না। তাই নদী ভাঙ্গন রোধ, সারফেস ওয়াটার সেচ ব্যবস্থা এবং মৎস্য চাষ বৃদ্ধি ইত্যাদির জন্য আমাদেরকে বাঁধ এবং সেচ প্রকল্পের উপর জোর দিতে হবে; কিন্তু সেখানে যথাযথ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না।

এনজিওগুলো ক্ষুদ্র ঋণের নামে কোথায় কোথায় কি প্রকল্পে ঋণ দিয়েছে এবং বিদেশ থেকে কত টাকা নিয়ে এসেছে সে সবের একটা হিসাব নেয়া প্রয়োজন, তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। কারণ কোন প্রকল্প আসলে ইউএনডিপি অথবা আমাদের শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে স্টাডি করে দেখতে পারি যে, কি কি জিনিস ব্যবহার করতে পারি এবং কি কি জিনিস রফতানি করতে পারি। এছাড়া আমাদের দেশের প্রতিটি এলাকায়, বিশেষ করে এলাকা ভিত্তিক অর্থাৎ কোন্ কোন্ এলাকায় কোন্ কোন্ পণ্য তৈরির কাঁচামাল রয়েছে সেটা নির্ধারণ করে সেভাবে স্থানীয় জনগণকে প্রশিক্ষণ দিয়ে উপযুক্ত ছোট ছোট প্রকল্প তৈরি করে এসবের উপর ঋণ কার্যক্রম চালানো দরকার।

চীন দেশে তাদের একটা সুবিধা রয়েছে- সেটা হলো মিলের পাশেই লেবার কলোনী থাকে। অবসর সময়ে তারা সবাই কুটির শিল্পের কাজ করেন। এতে করে তারা সস্তা দামে তাদের তৈরি পণ্য বিক্রি করতে পারে; কিন্তু আমাদের দেশে এক সাথে এত লোক পাওয়া সম্ভব নয়।

আমাদের দেশের কাঁঠালের বিদেশে প্রচুর চাহিদা রয়েছে; কিন্তু আমাদের দেশের কাঁঠালের আকার এক নয়। কিছু বড় কিছু ছোট আকারের। এগুলোর প্যাকেজ করা খুবই দুরূহ, খরচ বেশি পড়ে। এজন্য বিদেশে রফতানি করা যায় না। আবার মালয়েশিয়ায় তারা কলম দিয়ে জেনোটিক পদ্ধতিতে চাষ করে তাদের সব কাঁঠাল একই সাইজে নিয়ে এসেছে। এতে প্যাকেজিংয়ের সুবিধা হয়। ফলে তারা বিদেশে রফতানি করার সুযোগ পাচ্ছে।

একইভাবে, আমাদের দেশের পেঁপে বিদেশে রফতানির খুব সুযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র চাষীদের ঋণ দিয়ে প্রচুর পেঁপে উৎপাদন করতে পারি, বিদেশে রফতানি করতে পারি। ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে আমরা এ সব চাষের ক্ষেত্রে অনেক উৎপাদন বাড়াতে পারি। 'একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে'র জন্য যে জায়গার দরকার হবে সে পরিমাণে জায়গা দরিদ্র জনগণের নেই। অনেক লোক একসঙ্গে থাকতে পারে সে হিসাবে লোকজনকে পাশাপাশি বসবাসের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।

দেশের দরিদ্র জনগণকে সুদি ব্যবসার এ নির্যাতন থেকে বাঁচানোর দায়িত্ব সরকারেরই। কারণ যারা মাইক্রো ক্রেডিটের ব্যবসা করছে তারা অনেক শক্তিশালী। তাদের সঙ্গে যুদ্ধটা একমাত্র সরকারই করতে পারে। এ অনিয়ন্ত্রিত সুদের ব্যবসা গরিব মানুষের সব সৃজনীশক্তি শেষ করে দিচ্ছে। আমাদের দেশে অতি দরিদ্র গ্রামীণ জনগণকে এনজিওদের উপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। হাজার হাজার এনজিও হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করছে। সে হারে দারিদ্র্য কমছে কই! অথচ দরিদ্র জনগণের নামে এনজিওগুলো নিজেদেরকে সরকারের চেয়ে বেশি শক্তিশালী মনে করছে। তারা নানা ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়ছে। এমনকি গার্মেন্টস সেক্টরে শ্রমিক আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ছে। দেশের ক্ষতি করছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের তরফ থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও মূল্যায়নের ব্যবস্থা থাকা দরকার। তাহলে দুনর্ীতি ও অনিয়ম রোধ করা সম্ভব। তাতে জাতীয়ভাবে আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।

এনজিওগুলোর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের কাজের মনিটরিং করতে হবে। মূল্যায়ন করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক, বিআইডিএস ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যম প্রতি বৎসব মূল্যায়ন করে জনসম্মুখে রিপোর্ট পেশ করতে হবে। এ জন্য ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের মত মাইক্রো ফাইন্যান্স (নিয়ন্ত্রণ ও মূল্যায়ন) আইন নামে একটি আইন পাস করা যেতে পারে।

দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারকে এলাকা ভিত্তিক অথবা প্রতিটি গ্রামে কি কি সম্পদ রয়েছে এবং সেই সম্পদ কিভাবে সদ্ব্যবহার করে সর্বোচ্চ উন্নয়ন করা যাবে তা সমীক্ষার মাধ্যমে নির্ধারণ করে পরিকল্পিতভাবে ব্যাপক প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।

মানুষের চাহিদা ও সামর্থ্য অনুযায়ী সেব প্রকল্পে ঋণ দিতে হবে। ঋণ খাটানোর জন্য সঠিক পরামর্শ দিতে হবে। মূল্যায়ন করতে হবে। তবেই ইপ্সিত সাফল্য আসবে। এভাবে এনজিওগুলোকে একেবারে সার্বভৌম ক্ষমতা দেয়া যায় না। এগুলোতে সরকার বিশেষ করে স্থানীয় সরকারের মনিটরিং থাকতে হবে। এনজিওদের উপর নির্ভরতা কমাতে আমাদের পুরাতন সমবায় সমিতিগুলোকে জাগিয়ে তুলতে হবে। জোরদার করতে হবে। কৃষি ব্যাংক এবং অন্যান্য ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ক্ষুদ্র ঋণ চালু করতে হবে।

সুপারিশ:

১. শরে বাংলা একে ফজলুল হক যেভাবে ঋণ সালিসি বোর্ড করে এদেশের কৃষকদেরকে বাঁচিয়েছিলেন, তেমনিভাবে অবিলম্বে একটি ঋণ সালিসি বোর্ড গঠন করে এনজিওদের চড়া সুদের হাত থেকে দরিদ্র জনগণকে মুক্ত করার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

২. ক্ষুদ্র ঋণের সকল সুদ মওকুফ করতে হবে।

৩. সম্ভব হলে আসল ও সুদ উভয়ই মওকুফ করা যাতে করে প্রায় আড়াই কোটি মহিলা যারা ঋণ শোধ করতে পারছে না, তারা যেন আবার স্বাভাবিক জীবন যাপনে ফিরে আসতে পারে এবং নতুন করে কিছু একটা করতে পারে।

জনস্বার্থে সরকার আশা করি এ ব্যাপারে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
----------
লেখকঃ এ,কে,এম মাঈদুল ইসলাম এম,পি
সদস্য, অর্থমন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ও সাবেক মন্ত্রী

No comments:

Post a Comment