Saturday, January 22, 2011

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জ উপনির্বাচন-সতর্ক আওয়ামী লীগ

দ্য সমাপ্ত পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির কাছে বড় ধরনের ধাক্কা খেয়ে জাতীয় সংসদের দুটি আসনে উপনির্বাচন সামনে রেখে অনেক সতর্ক আওয়ামী লীগ। এ উপনির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। হবিগঞ্জ-১ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে উপনির্বাচন হবে এ মাসেই।

পৌর নির্বাচনের ফলের পুনরাবৃত্তি এড়াতে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা চষে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনী এলাকা। সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মিছবাহ্ উদ্দিন সিরাজ সার্বক্ষণিক আছেন মাঠে।
হবিগঞ্জ-১ আসনে নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে মিছবাহ্ উদ্দিন সিরাজ বলেন, ‘বিএনপির শাসনামলে ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি গ্রেনেড হামলায় খুন হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া। সেই ২৭ জানুয়ারিই নির্বাচন হচ্ছে বলে নবিগঞ্জ ও বাহুবলের মানুষ কিবরিয়া হত্যার প্রতিশোধ নেবেন ব্যালটে।’
এদিকে মহাজোটগতভাবে নির্বাচন করতে আওয়ামী লীগ উদ্যোগ নিলেও মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে এখনো এ ব্যাপারে কাক্সিক্ষত সাড়া মেলেনি। গত রবিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের এক বৈঠকে দুটি আসনে উপনির্বাচনে মহাজোটগতভাবে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জাতীয় পার্টির প্রার্থী সরে দাঁড়ালেও হবিগঞ্জে সমঝোতার ব্যাপারে এখনো কোনো আলোচনাই হয়নি দুই দলের মধ্যে।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নির্বাচনে প্রার্থী প্রত্যাহার হলেও হবিগঞ্জে আমাদের প্রার্থী প্রত্যাহারের ব্যাপারটা বিবেচনায় আসেনি।’ তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ রংপুর থেকে ফিরলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
পৌর নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতাকারী মন্ত্রী-এমপিদের তালিকা চেয়েছেন শেখ হাসিনা
এদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নির্বাচনের কৌশল ঠিক করতে ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির অফিসে দফায় দফায় বৈঠক করছেন দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ।
গত বুধবার রাতে গণভবনেও তাঁরা উপনির্বাচন এবং সদ্যসমাপ্ত পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার সঙ্গে। বৈঠক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী যেকোনো মূল্যে উপনির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অবাধ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি তিনি কেন্দ্রীয় নেতাদের উপনির্বাচনে প্রচারে নামার নির্দেশ দেন। নির্বাচনী এলাকায় সরকারের দুই বছরের কর্মকাণ্ডের বিবরণ জনগণের সামনে তুলে ধরার নির্দেশনাও দেন তিনি।
এ ছাড়া বৈঠকে শেখ হাসিনাকে পৌর নির্বাচনের ফল, প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোট, দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোটের হিসাব সম্পর্কে অবহিত করা হয়। বৈঠকে শেখ হাসিনা পৌরসভা নির্বাচনে কোন কোন কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রী ও দলীয় এমপি দলের প্রার্থীর বিরোধিতা করেছেন তাঁর জেলাভিত্তিক তালিকা চেয়েছেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। এ ছাড়া প্রভাবশালী নেতা ও মন্ত্রীদের এলাকায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর পরাজয়ের কারণ চিহ্নিত করে তাঁকে জানানোর নির্দেশ দেন তিনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জাপার সঙ্গে সমঝোতা : আগামী ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ-১ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর) আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে হবিগঞ্জ উপনির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. মুসফিক হোসেন চৌধুরী এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কেন্দ্রীয় নেতা উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মহাজোটগতভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের কথা বলা হলেও হবিগঞ্জ-১ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবদুল মমিন বাবু প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী রেজাউল ইসলাম মনোনয়ন প্রত্যাহার না করলেও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি নির্বাচনের মাঠ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন। দুই আসনেই আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির শেখ সুজাত মিয়া ও ইঞ্জিনিয়ার খালেদ মাহমুদ শ্যামল।
আসন্ন দুই উপনির্বাচনে বিজয় অর্জনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিলেও হঠাৎ করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং সদ্যসমাপ্ত পৌর নির্বাচনে দলের পরাজয় নিয়ে শঙ্কায় আছে শাসক দলটি।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘উপনির্বাচনে জয়লাভের জন্য আওয়ামী লীগের তরফ থেকে সব রকমের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতারা যাবেন প্রচারণায়।’ তবে দুই উপনির্বাচনে প্রশাসনিকভাবে কোনো রকম হস্তক্ষেপ করা হবে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।
জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাব নির্বাচনের ফল পক্ষে আনার জন্য, তবে জনগণের রায় যাই হোক তা মেনে নেবে দল।’
জানা গেছে, নির্বাচনে প্রচারের জন্য আজ কাজী জাফরুল্লাহ এবং মাহবুব-উল-আলম হানিফের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল যাবে হবিগঞ্জে। এরই মধ্যে মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ এবং দলের অন্য কয়েকটি অঙ্গসংগঠনের নেতারা দুই নির্বাচনী এলাকায় গেছেন।

No comments:

Post a Comment