Tuesday, August 16, 2011

ছায়ানৃত্য by দ্রাবিড় সৈকত

চিত্রশিল্পের ভাষা বৈশ্বিক হওয়ার পরও থাকে কিছু স্থানীয় বৈশিষ্ট্য, সমসাময়িকতার গন্ধ ও শিল্পীমানসের ব্যক্তিক অনুভূতি। শিল্পী সিলভিয়া নাজনীনের চলমান একক প্রদর্শনী এমনই এক আয়োজন; ধানমন্ডির ক্যাফে ম্যাংগোতে চলছে।

প্রথাগত গ্যালারিতে ছবি দেখা দর্শক প্রথমে কিছুটা হোঁচট খেতে পারেন; পেইন্টিং দেখতে গিয়ে হয়তো দেখা যাবে, ছবিটির ঠিক নিচে দুজন কফি খাচ্ছেন কিংবা একান্ত আলাপচারিতায় মগ্ন। গ্যালারিতে চিত্রপ্রদর্শনী দেখা থেকে একটু আলাদা প্রস্তুতি নিতে হবে এই প্রদর্শনীতে। ‘ছায়া নৃত্য’ শিরোনামে শিল্পী সিলভিয়া নাজনীনের এই প্রদর্শনীতে উপস্থাপিত হয়েছে বিবিধ বৈচিত্র্যপূর্ণ বিষয়ের পঁচিশটি শিল্পকর্ম। বিষয়বস্তু, বিন্যাস, রং ও উপস্থাপনের ভিন্নতায় এই প্রদর্শনী তারুণ্যের গতিময়তায় উচ্চকিত। ‘ড্যান্সিং উইথ শ্যাডো’ শিরোনামের একটি শিল্পকর্মে দেখা যায় বর্তমান নারীর একাকিত্ব ও মগ্নতার পশ্চাৎপটে একটি বিশাল কাকের অশুভ প্রতিকৃতি। মিশ্র মাধ্যমে সম্পন্ন করা এই শিল্পকর্মটি বর্তমান নারীসমাজের প্রতিকূল বাস্তবতার প্রতীকী উপস্থাপন। এ ছাড়া ‘আই হ্যাড ড্রিম’, ‘ম্যালাঙ্কলি মিউজিক’, ‘মুড’ শিরোনামের পেইন্টিংগুলো দর্শকমানসে ছড়িয়ে দেয় এক অদ্ভুত বিষণ্নতা। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারী যেন এক ভিনদেশি পাখি। কখনো তার সৌন্দর্যের বন্দনা, কখনো বৃক্ষ হয়ে যাওয়া, কখনো বা নৌকা হয়ে জল ছেড়ে কল্পিত ডানায় অন্তরিক্ষে উড়ে যাওয়ার চিত্রকল্পে রুক্ষ বাস্তবতাই প্রতিধ্বনিত হয় সিলভিয়ার অধিকাংশ শিল্পকর্মে। সৌন্দর্য উপাসনার ছন্দায়িত রং-রেখায় সময়ের কর্কশ আঁচড় আমাদের মনে করিয়ে দেয়, এই সমাজ পুরোপুরি মানবিক নয়, এখানে বৈষম্যের খড়্গ ধারালো হয় প্রতিনিয়ত, সমাজের সুবিধাভোগী অংশ যা মানতে প্রস্তুত নয়।

No comments:

Post a Comment