Friday, June 15, 2012

মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের মতবিনিময়

কক্সবাজারে কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে জেলা প্রশাসকের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে শুক্রবার সকালে অনুষ্ঠিত সভায় জেলা প্রশাসক মো. জয়নুল বারী জানান, সীমান্তে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল জোরদার করা হয়েছে। সীমান্ত পরিস্থিতি এখন অনেকটা শান্ত।
তিনি বলেন, “সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে পত্রিকা কিংবা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় উস্কানিমূলক সংবাদ পরিহার করতে হবে। কোনো মহলের স্বার্থ হাসিল হয়-এমন সংবাদ পরিবেশন করা থেকেও সংযত হওয়ার আহবান জানান তিনি।

মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, কক্সবাজারের পুলিশ সুপার সেলিম মো. জাহাঙ্গীর, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রফিকুল ইসলাম, সাংবাদিক নুরুল ইসলাম, ফজলুল কাদের চৌধুরীসহ অন্যরা। অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তাসহ কর্মরত সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

অপরদিকে শান্ত হয়ে আসছে মিয়ানমারের সহিংস পরিস্থিতি। মিয়ানমার মংডু জেলার মুসলমানরা তাদের বাড়ি ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। মংডু টাউনশিপে কিছু কিছু দোকানপাঠ খুলছে। স্বাভাবিক হয়ে আসছে জীবনযাত্রা। এ তথ্য জানিয়েছেন টেকনাফস্থ বিজিবি ৪২ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্নেল জাহিদ হাসান।

সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন বিওপি পরিদর্শনকালে আরো জানান, গত শুক্রবার থেকে মিয়ানমারে সহিংসতা শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে বিজিবি ও কোস্টগার্ড সদস্যরা ৬৮৪ জনকে ফেরত পাঠিয়েছে। আরো ৪৪ জন সেন্টমার্টিনে ফেরত পাঠানোর অপেক্ষায় কোস্টগার্ডের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। তাদের আজ যেকোনো সময় মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে।

যুক্তিতর্ক নয়, মানবতার দিকটি বিবেচনায় নিন

প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের আরাকান প্রদেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের উপর রাখাইনরা ভয়াবহ নির্যাতন চালাচ্ছে।

উক্ত ঘটনাবলী নিকট অতীতে ইউরোপের বসনিয়া হারজেগভিনা, ভারতের গুজরাট, এবং ইসরাইল-ফিলিস্তিনের জাতিগত সহিংসতাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে।
মিয়ানমারের এই জাতিগত দাঙ্গা পৃথিবীর সব ধরনের পৈচাশিকতাকে হার মানাচ্ছে। কারণ এক দিকে রোহিঙ্গাদের স্বদেশীরা খুন, ধর্ষণসহ নানা রকম নির্যাতন করেছে। সম্পদ, ঘর-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট চালাচ্ছে, উপাসনালয়ে অগ্নিসংযোগ করছে। নিজ দেশের প্রশাসন তাদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা না দিয়ে বরং রোহিঙ্গাদের শত্রু মগ-রাখাইনদেরকে উসকে দিচ্ছে।

অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশ বিপদগ্রস্তদেরকে আশ্রয় দিচ্ছে না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জাতিগত দাঙ্গা হয়েছে কিন্তু প্রতিবেশীরা আশ্রয় দিচ্ছে না এমন ঘটনার নজির খুব একটা পাওয়া যাবে না।

প্রাণ ভয়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গা শিশু, নারী-পুরুষ দুর্গম পাহাড়-পর্বতে লুকিয়ে আছে অথবা ভঙ্গুর কাঠের ছোট্ট নৌকায় ঝড় বাদলার দিনে নদীতে, সাগরে ভেসে বেড়াচ্ছে। কারো কাছে সামান্য খাবার দাবার আছে কারো কাছে কিছুই নেই। যারা নাফ নদীর ওপাড়ে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে পর্যন্ত আসতে পেরেছিল কিংবা সেন্টমার্টিন উপকুলে আশ্রয়ের জন্য গিয়েছিল তারা মনে করেছিলÑ এ যাত্রায় প্রাণে বেঁচেছে। কিন্তু যখন বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষীদের তথা বাংলাদেশ সরকারের বন্দুক তাদের চোখে পড়েছে। তারা তখন বেঁচে থেকেই মরে গেছে।

এ প্রসঙ্গে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের হাতে লেখা একটি চিঠি পড়লাম। তিনি নাফ নদীতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একটি নৌকার প্রসঙ্গে লিখেছেন। প্রসঙ্গক্রমে তিনি ১৯৭১ সালের মে মাসে তার নিজের জীবনের স্মৃতিচারণ করেছেন। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেছেন, আমরা বাংলাদেশের মানুষরা সেই স্মৃতি ভুলে গেলাম কি করে? আমি জাফর ইকবাল স্যারকে জানাতে চাইÑ বাংলাদেশের মানুষ ভোলেনি। বাংলাদেশের মানুষ এত নিষ্ঠুর নয়। হবেও না কোনো দিন।

শুধুমাত্র আমাদের শাসকরাই সেই কথা ভুলে গেছেন। যদিও বর্তমান সরকারের অনেক মন্ত্রীই ১৯৭১ সালে ভারতে শরণার্থী হয়েছিলেন। শাসকরা কিভাবে ভুলে গেলেন? ‘মানুষ মানুষের জন্য’। মানবতাবাদীদের কাছে আমার প্রশ্ন: বিপন্ন মানুষকে আশ্রয় না দেওয়া কি মানবতা বিরোধী অপরাধ নয়? চল্লিশ বছর পুর্বে সংঘটিত মানবতা বিরোধী অপরাধের জন্য তো এখন বাংলাদেশে বড় বড় রাঘব-বোয়ালদের বিচার হচ্ছে।

যদি কোনো দিন মানবতা বিরোধী অপরাধের সংজ্ঞা পরিবর্তন হয় তাহলে কিন্তু আজকের শাসকরাও একদিন একই বিচারের সম্মুখীন হতে পারেন। বাবার মুখে শুনেছিÑ ১৯৭১ সালে কলকাতা, আগরতলার বাসে বাংলাদেশের শরণার্থীদের দেখলে স্থানীয়রা সিট ছেড়ে দাঁড়িয়ে বসতে দিয়েছিল। আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবা আজ বেঁচে নেই। ভাবতে কষ্ট হয়Ñ এই দেশের জন্যই কি আমার বাবা যুদ্ধে গিয়েছিলেন?

পত্রিকায় খবর এসেছে বাংলাদেশের স্থানীয় জনগণ রোহিঙ্গাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়াতে চাচ্ছে। কিন্তু সেই হাত সরিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীরা তথা সরকার। এ কেমন নিষ্ঠুরতা! এ কেমন অমানবিকতা! বাংলাদেশ সরকার এসব করছে কেন? বরং বাংলাদেশ সরকার মিয়ানমারের উপর কেন কুটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করছে না? এরইমধ্যে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এসেছে যে, দাতা দেশসমুহ মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের বিষয়ে উদ্বিগ্ন।
তাহলে তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে এখনই কেন আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে মিয়ানমারকে কোনঠাসা করা হচ্ছে না? আমরা জানি, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে এরইমধ্যে প্রায় ৬ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী অবস্থান করছে। এটাও স্বীকার করছি বিপুল জনসংখ্যার ভারে নুয়ে পড়া বাংলাদেশের পক্ষে বাড়তি জনসংখ্যার ভার গ্রহণ করা সম্ভব নয়।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে গত শতকের শেষ দিকে যখন রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিল তখন কেন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি? এরইমধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে যে কথা বলেছেন তা নিয়ে অনেক দ্বিমত আছে। তিনি বলেছেনÑ ‘জামায়াত ইসলাম মিয়ানমারের দাঙ্গায় মদদ যোগাচ্ছে।’ জামায়াত ইসলামী নাকি আল-কায়দা মদদ জোগালো সেটা এখানে মুখ্য নয়। মানবতার প্রশ্নে বাংলাদেশকে ভুমিকা রাখতে হবে।

তিনি এও বলেছেন ‘এমন নয় যে সে দেশের সরকার রোহিঙ্গাদের বিতাড়ন করছে।’ আপনার জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি মিয়ানমারের সামরিক জান্তারা ইসরালের ন্যায় মগ ও রাখাইনদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার জন্য এ পর্যন্ত আরাকানে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন চালিয়েছে। তম্মধ্যে, বিটিএফ, ইউএমপি, শিউ কাই, নাগাজিন, মাইয়াট মন, সেব, নাগামিন নামে এমন আরো অনেক অপারেশন পরিচালনা করেছে।

অপারেশনগুলোর মাধ্যমে আরাকানের রোহিঙ্গাদের পুর্বপুরুষের বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করে মগ এবং রাখাইনদের প্রত্যাবাসন করা হয়েছে। বসতভিটা থেকে উচ্ছেদকৃতরাই বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে উদ্বাস্তু হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার কি এসব জানে না? না জানার কথা নয়।

বর্তমানেও আরাকানে রোহিঙ্গাদের সাথে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তিতর্ক নয়, মানবতার দিকটি বিবেচনা করুন। বাংলাদেশের সীমান্ত খুলে দেওয়া কিংবা দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলির প্রশ্ন আসছে কেন? দয়া করে তাদেরকে আশ্রয় দিন। সারা পৃথিবী এখন রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে আছে।

ই-মেইল: nayonshakhawat@yahoo.com

লেখক, গবেষক, ইউনিভার্সিটি অফ নিউক্যাসল, অস্ট্রেলিয়া।

কক্সবাজারে পাহাড় ধসের ২ বছর: এখনো পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বাস

১৫ জুন কক্সবাজার জেলাব্যাপী ভয়াবহ পাহাড় ধসের ২ বছর পূর্ণ হলো। ২০১০ সালের এদিন ভোরে পুরো কক্সবাজারে পাহাড় ধসের ঘটনায় ৬ সেনা সদস্যসহ ৫৪ জন নিহত হন।

সেই ভয়াবহ পাহাড় ধসের ২ বছরেও কক্সবাজারে পাহাড়ের পাদদেশে ঝূঁকি নিয়ে বাস করছেন প্রায় লক্ষাধিক পরিবার। একই সঙ্গে চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব। ফলে আরো ভয়াবহ পাহাড় ধসের আশঙ্কা করছেন জেলার সচেতন মানুষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের ১৫ জুন পাহাড় ধসের ঘটনায় দেশব্যাপী শোকের ছায়া নেমে আসে। এ শোক এখানো কাটেনি। ওই দিন ভোরে টানা বৃষ্টির কারণে জেলাব্যাপী ব্যাপক জলাবদ্ধতার পাশাপাশি পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। এতে জেলার রামু উপজেলার হিমছড়ি এলাকার ১৭ ইসিবি সেনা ক্যাম্পে মারা যান সেনা বাহিনীর ৬ সদস্য। টেকনাফে মারা যান ৩৩ জন। উখিয়ায় ৯ জন, হিমছড়িতে ৬ জন ও কক্সবাজার সদর উপজেলায় ২ জন মারা যান। এছাড়া, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় মারা যান একই পরিবারে ৪ জন।

২০০৮ সালের ৪ ও ৬ জুলাই টেকনাফে ফকিরা মুরা ও টুন্যার পাহাড় ধসে একই পরিবারের ৪ জনসহ ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। একইভাবে গত ৫ বছরে শতাধিক ব্যক্তি মারা যায় পাহাড় ধসে।

কিন্তু তারপরও কক্সবাজার জেলার ৭ উপজেলায় লক্ষাধিক পরিবার পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে যাচ্ছে। প্রতি বছর বর্ষায় পাহাড় ধসে ব্যাপক প্রাণহানীর ঘটনা ঘটলেও ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস অব্যাহত রয়েছে।

কক্সবাজার বন বিভাগ সূত্র মতে, কক্সবাজার জেলায় প্রায় ১০ হাজার একর বনভূমি অবৈধ দখলে চলে গেছে। বর্ষা শুরুর আগে থেকেই কক্সবাজার জুড়ে চলছে নির্বিচারে পাহাড় কাটা। ফলে একদিকে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে পানির সঙ্গে কাটা মাটি এসে শহরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত ও নালা-নর্দমা ভরাট হয়ে যাচ্ছে।

সরেজমিন দেখা যায়, কক্সবাজার শহর ও আশপাশের এলাকায় নানা কৌশলে চলছে পাহাড় কাটা। শহরের ঘোনার পাড়া, মোহাজের পাড়া, বৈদ্যঘোনা, বইল্যাপাড়া, জাদি পাহাড়, খাজা মঞ্জিল এলাকা, বাদশাঘোনা, ফাতেরঘোনা, ইসলামপুর, হালিমা পাড়া, লাইট হাউজ পাড়া, সার্কিট হাউজ সংলগ্ন এলাকা, আবু উকিলের ঘোনা, রহমানিয়া মাদ্রাসা এলাকা, পাহাড়তলী, বাঁচা মিয়ারঘোনা, হাশেমিয়া মাদ্রাসার পেছনে, সাহিত্যিকা পল্লী, বিডিআর ক্যাম্পের পেছনে, লারপাড়া, সদর উপজেলা কার্যালয়ের পেছনে, পাওয়ার হাউস, লিংকরোড, কলাতলী বাইপাস সড়কের ২ পাশের বিশাল পাহাড়ি এলাকা, হিমছড়িসহ জেলা শহরের বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় পাহাড়কাটা চলছে।

কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র রাজবিহারী দাশ বাংলানিউজকে জানান, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বাসবাসকারীদের ব্যাপারে জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও বন বিভাগের যৌথ প্রচেষ্টার প্রয়োজন রয়েছে। যৌথ প্রচেষ্টা করা না হলে শুধু পৌরসভার পক্ষে তাদের সরিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়।

জেলাব্যাপী পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসের সত্যতা স্বীকার করে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক জয়নুল বারী বাংলানিউজকে বলেন, আশ্রায়ন প্রকল্পের অধীনে জেলায় ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে জেলার মহেশখালী উপজেলায় আশ্রায়ণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এ চলমান প্রক্রিয়ার অধীনে জেলার ঝুঁকিপূর্ণ সব বসবাসকারীদের সরিয়ে নেওয়া হবে। এজন্য একটু সময়ের প্রয়োজন রয়েছে। তবে এবারের বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদে সরে যেতে মাইকিংসহ নানা প্রচারণা চালানো হবে।

বিনা বিচারে ১১ বছর জেলে অবশেষে জামিনে মুক্তি পেলেন বন্দি হারুন

'বিনা বিচারে ১১ বছর বন্দি যুবকের আকুতি, ভিখারিনী মাকে একবার দেখার সুযোগ দিন'_শীর্ষক সংবাদটি ২৮ মে কালের কণ্ঠে প্রকাশিত হওয়ার পর অবশেষে গতকাল বৃহস্পতিবার কারাবন্দি হারুন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।

গতকাল তাঁকে মুক্তি দেওয়ার পর কয়েকজন সজ্জন ব্যক্তি তাঁর হাতে কিছু নগদ টাকাও তুলে দেন। মুক্তি পাওয়ার আনন্দে কেঁদে হারুন আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানান এবং তাঁকে মুক্ত করতে যাঁরা ভূমিকা রেখেছেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
সংবাদটি প্রকাশিত হওয়ার পর গত ৫ জুন বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী এবং বিচারপতি এস আর এম নাজমুল আহসানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে হারুনের পক্ষে জামিনের আবেদন করেন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান। শুনানির পর হারুনের জামিন মঞ্জুর করা হয়। এই জামিনের আদেশ গতকাল চট্টগ্রাম আদালতে পৌঁছান বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের নেতা অ্যাডভোকেট জিয়া হাবিব আহসান। পরে দুপুরে জামিননামা কারাগারে পৌঁছানোর পর কারা কর্তৃপক্ষ হারুনকে মুক্তি দেয়।
এ সময় হারুনের বড় ভাই আবদুল হালিম কারা ফটকে হারুনকে দীর্ঘ ১১ বছর পর দেখতে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে সেখানে উপস্থিত হন একটি বেসরকারি কম্পানিতে চাকরিরত কর্মকর্তা এস এম সাবি্বর হোসাইন। তিনি হারুনের হাতে নগদ সাত হাজার টাকা তুলে দেন। ঢাকাস্থ একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলামের পক্ষে হারুনকে আরো ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এ ছাড়া হারুনের জামিনের বিষয়ে সহযোগিতা করেন স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এ ফারুকী।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামের খুলশী থানার পুলিশের হাতে জননিরাপত্তা আইনের একটি মামলায় হারুন ২০০১ সালের ৫ মার্চ গ্রেপ্তার হয়ে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আসেন। ২০০২ সালের ২৩ জানুয়ারির পর হাজিরা না থাকায় হারুনকে আর আদালতে হাজির করা হয়নি। সেই থেকে বিনা বিচারে কারাগারে বন্দি ছিলেন হারুন। গতকাল প্রায় ১১ বছর পর হারুন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন।
মুক্তির পর হারুন বলেন, 'এবার গ্রামে গিয়ে মায়ের কাছে থাকব এবং সেখানে কিছু কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করব।' হারুনের ভাই আবদুল হালিম বলেন, 'আপনাদের (পত্রিকা) এবং কিছু মহৎ মানুষের সহযোগিতায় আমার ভাই মুক্তি পেয়েছে। এ জন্য আমি আল্লাহর কাছে আপনাদের জন্য দোয়া করব।' চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. ছগীর মিয়া বলেন, 'শেষ পর্যন্ত হারুনকে আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্তি দিতে পেরেছি, এটাই বড় আনন্দের।'

পুলিশের ভুলে ৯ বছর জেল খাটলেন কালা মিয়া

বিনা অপরাধে দীর্ঘ ৯ টি বছর কারাভোগের পর কক্সবাজারের জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন মহেশখালী উপজেলার কালা মিয়া।

২০০৩ সালের ১৭ জুন কক্সবাজার সদর থানার পুলিশ তাকে আটক করে। এরপর একটি মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে তিনি কারাভোগ শুরু করেন।
মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা করে জানা যায়, কালু নামের অপর এক ব্যক্তির বাবার নামের সঙ্গে মিল থাকার কারণে কালা মিয়াকে এ ৯ বছর বন্দী জীবন কাটাতে হয়েছে। দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে বৃহস্পতিবার জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।

কালা মিয়া বাংলানিউজকে জানান, তার নাম কালা মিয়া, পিতা- মৃত মিয়া হোসেন। তিনি মহেশখালী উপজেলার ছোট্ট মহেশখালী ইউনিয়নের মুদিছড়ার এলাকার বাসিন্দা। কিন্তু কালু নামে অপর এক ব্যক্তির স্থলে তাকে জেল খাটতে হয়েছে।

জেলা পুলিশ সুপার সেলিম জাহাঙ্গীর স্বাক্ষরিত এক পত্রে বলা হয়েছে, ১৯৮৮ সালে কক্সবাজার সদর থানার অভিযোগপত্র ৩৩ আদালতে দাখিল করা হয়। ৪৬০/৩৮০/৩০২/৩৪ ধারার মামলাটি আদালতে দাখিলকালে সৈয়দুর রহমান নামের এক আসামিকেও আদালতে সোপর্দ করা হয়।

এ মামলায় ১৯৯৬ সালের ৩১ জুলাই আদালত আসামি মহেশখালী উপজেলার শাপলাপুর ইউনিয়নের জেএমঘাট এলাকার বাসিন্দা খুইল্যা মিয়ার ছেলে কালুকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন।

কিন্তু ২০০৩ সালের ১৭ জুন কালুর বদলে কালা মিয়াকে কক্সবাজার সদর থানার পুলিশ গ্রেফতার করে। এরপর থেকে কালা মিয়া সাজাভোগ করতে শুরু করেন।

এদিকে কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট আল নোমান শরীফ বিষয়টি লিখিতভাবে বিভিন্ন দফতরে পাঠান। এরপর বিষয়টির তদন্ত করে জেলা পুলিশ সুপার গত ১৪ মার্চ প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জয়নুল বারী কালা মিয়াকে মুক্ত করার ব্যবস্থা নেন।

এদিকে, এ মামলায় ভুল ব্যক্তিকে গ্রেফতারের ঘটনায় জড়িত পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

কক্সবাজারে ডেসটিনি ভবনের ৪ প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে মামলা

কক্সবাজার সৈকতে ডেসটিনির হোটেল নির্মাণে জড়িত এক পরিচালক ও তিন প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।

পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া ভবন নিমার্ণের দায়ে বৃহস্পতিবার পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর থানায় মামলাটি দায়ের করেন। যার নম্বর ৩৪/১২।

এতে অভিযুক্তরা হলেন,  কনফিগার ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের পরিচালক প্রকৌশলী তৈয়বুর রহমান, প্রধান প্রকৌশলী শাহজাহান, বেস্ট ওয়েস্টার্ন ডেস্টিনি বিচ হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট এর প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী সুশান্ত কুমার দাস ও প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার মাজাহারুল ইসলাম। তাদের বিরুদ্ধে পরিবেশ আদালত আইন ২০০০ এর ধারা ৭(৪) অনুসারে এজাহার দায়ের করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের এক রিট আবেদনে গত ২৫ এপ্রিল হাই কোর্ট কক্সবাজার সৈকতে ডেসটিনির নির্মাণাধীন পাঁচতারকা মানের হোটেলের নির্মাণ কাজ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আদালত কক্সবাজারের ডিসি, এসপি, মেয়র ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।

এছাড়া পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসনের ব্যর্থতাকে কেন দায়ী করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। তিন সপ্তাহের মধ্যে পরিবেশ সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের ডিজি, পরিচালক (মনিটরিং) ও সহকারী পরিচালক, কক্সবাজারের ডিসি, এসপি, মেয়র এবং সদর থানার ওসিকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এর পর গত ২৩ মে ডেসটিনির হোটেল নির্মাণে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয় হাই কোর্টের বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের বেঞ্চ। চট্টগ্রাম বিভাগের পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক এবং কক্সবাজারের সহকারী পরিচালককে এ নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি ১৮ জুন এই রিট আবেদনের পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করে।

হাইকোর্টের ওই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার মামলাটি দায়ের করা হয় বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ও মামলার বাদী আবদুল্লাহ আল মামুন।

উখিয়ায় বসতবাড়ি ভাংচুর নারীসহ আহত ৪

উখিয়ার চাকবৈটা গ্রামে পার্শ্ববর্তী রত্নাপালং ইউনিয়নের শামসুল আলম তার বাহিনী নিয়ে বাড়িঘরে হামলা করে মালপত্র লুটপাট করে। এতে মহিলাসহ ৪ জন গুরুতর আহত হয়েছেন।

তাদের উখিয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনাস্থল পুলিশ পরিদর্শন করেছে। মঙ্গলবার ভোরে রাজাপালং ইউনিয়নের চাকবৈটা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
আলী আকবরের ছেলে আবদুল হাকিম চাকবৈটা গ্রামের আলী হোছনের কাছ থেকে ৪০ শতক জমি ক্রয় করে জমির চারপাশে ঘেরাবেড়া দিয়ে একটি বসতবাড়ী নির্মাণ করে বসবাস করে আসছিলেন। রত্নাপালং ইউনিয়নের শামসুল আলমের নেতৃত্বে ৩০-৩৫ জন ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী নিয়ে বাড়িতে ঘুমিয়ে থাকা কামাল উদ্দিন, বেলাল, শাহেদা বেগম ও আহমদ সাপাকে দরজা ভেঙে ঘুম থেকে উঠিয়ে রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে লাঠি, ছুরি দিয়ে গুরুতর আহত করে পার্শ্ববর্তী একটি খালে ফেলে রাখে। বসতভিটার চারপাশে রোপিত অর্ধশতাধিক আকাশমণিগাছ কেটে নিয়ে যায় তারা।
আহতদের চিৎকারে গ্রামবাসী এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। উখিয়া থানায় খবর দিলে এসআই জয়নালের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পায়। বসতভিটার মালিক আবদুল হাকিম জানান, 'জমির ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও সন্ত্রাসী শামসুল আলম তার দলবল নিয়ে আমাকে বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার জন্য এ হামলা চালিয়েছে।' এ ঘটনায় বশির আহমদ বাদী হয়ে শামসুল আলম, সাকের আলম, মোঃ আলম, কবির আহমদসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন।

রামুতে বলী খেলার নামে জুয়ার আসর

রামু উপজেলার রশিদনগর ইউনিয়নের কয়েকটি জুয়াড়ি সিন্ডিকেট দু'মাস ধরে বলী খেলার নামে কৌশলে জুয়ার আসর চালিয়ে যাচ্ছে।

এতে এলাকার আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও সব বয়সী মানুষের নৈতিক অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। জুয়াড়ি চক্র কৌশলে ওই ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে এসব জুয়ার আসর চালিয়ে যাচ্ছে। জুয়ার আসর অব্যাহত থাকায় এলাকাবাসী ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাভাবিক জীবনযাপন নিয়েও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।
বলী খেলার নামে জুয়ার আসর চলে রশিদনগর পানিরছড়া গ্যারেজ এলাকায়। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশের জমিতে এ জুয়ার আসর আয়োজন করে রশিদনগর ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইরফান, মোস্তাকসহ স্থানীয় কয়েক প্রভাবশালী ব্যক্তি।
মঙ্গলবার বিকেলে ওই বলী খেলায় গিয়ে আদৌ কোনো বলী খেলার দৃশ্য দেখা যায়নি। বরং বলী খেলার নামে অনুষ্ঠানস্থলের পাশে কয়েকটি স্টলে চলে জমজমাট জুয়া খেলা। জুয়ার আসরে শিশু-কিশোর, যুবক, বৃদ্ধসহ সব বয়সী মানুষের ভিড় দেখা গেছে। এর মধ্যে দুটি স্টলের একটিতে ছয় গুটি এবং অন্যটিতে কেরকেরি খেলা চলছিল। এ সময় জুয়ার আসরের ছবি তুললে জুয়াড়ি চক্রের কয়েক সদস্য খেপে গিয়ে বলেন, এ নিয়ে সংবাদপত্রে নিউজ ছাপালে কিছুই হবে না। পুলিশকে ম্যানেজ করেই এ আসর চালানো হচ্ছে। স্থানীয় দুই বাসিন্দা জানান, বলী খেলা দেখতে এসেছিলাম। কিন্তু এখানে বলী খেলার কোনো আয়োজন নেই। চলছে শুধু জুয়ার আসর। তারা এমন জুয়ার আসর বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানান।
এভাবে জুয়ার আসর চালানোর জন্য উপজেলা প্রশাসন, থানা পুলিশ, থানার এক দালাল এবং সংবাদকর্মীকেও টাকা দিতে হয়।
আয়োজক ইরফান আকবর ও মোস্তাক জানান, এটি ৭নং ওয়ার্ডের খেলা। সেখানে উপযুক্ত জমি না থাকায় ৬নং ওয়ার্ড এলাকায় এসে করতে হচ্ছে। তারা জানান, এটা নিয়ে লেখালেখি করবেন না। নিউজ করলে আসর বন্ধ করে দিতে হবে।
রশিদনগর ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল করিম জানান, এখানে কিছুদিন ধরে জুয়ার আসর হচ্ছে। এ নিয়ে অনেকের অভিযোগ পেয়ে কিছুদিন আগে আমি জুয়ার আসর বন্ধ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন আবার হচ্ছে জেনে খারাপ লাগছে।
রামু থানার ওসি একে নজিবুল ইসলাম জানান, এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চকরিয়ায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকালে ট্রাক জব্দ

চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নে ৫টি বালুমহাল থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে পাচারকালে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার জাকির হোসেন একটি ট্রাক জব্দ করেছেন।

এ ছাড়া অবৈধভাবে আহরণকৃত মজুদ বালু জব্দ করে প্রকাশ্য নিলামে বিক্রির মাধ্যমে ১ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করেছেন।
বেশ কিছুদিন ধরে খুটাখালী ইউনিয়নের ৫টি ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ২টিসহ ৭টি বালুমহাল থেকে একদল বালুদস্যু অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করতে গেলে গতকাল বুধবার নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার জাকির হোসেন ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আল আমিনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে সকালে খুটাখালী বালুমহাল থেকে বালু পাচারকালে একটি ট্রাক জব্দ করে মালুমঘাট হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির হেফাজতে রাখেন। এ ছাড়া ওইসব বালুমহাল থেকে অবৈধভাবে আহরণকৃত মজুদ বালু জব্দ করে প্রকাশ্যে বিক্রির মাধ্যমে ১ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করেন।

উখিয়ার মৌসুমি ফল যাচ্ছে সারাদেশে

উখিয়ায় মৌসুমি ফল আম ও কাঁঠালের কদর বেড়েছে। এলাকার চাহিদা মিটিয়ে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে আম, কাঁঠালের চালান ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে।

দামে সস্তা ও ফলন বেশি হওয়ায় সয়লাব হয়ে গেছে মৌসুমি ফলের বাজার। উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের দারোগাবাজার, কোটবাজার, মরিচ্যাবাজার, সোনারপাড়া বাজার, পালংখালী বাজারসহ বিভিন্ন হাটবাজারে উঠেছে প্রচুর আম, কাঁঠাল। উখিয়া বাজারে কাঁঠাল বিক্রি করতে আসা টাইপালংয়ের আলী আহমদ, দরগাহবিলের শাহজাহান ও নূরুল ইসলাম বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মৌসুমী ফলের বাম্পার ফলন হয়েছে।
এসব ফল বাজারে বিক্রি করে বেশ টাকাও পাওয়া যাচ্ছে। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম জানান, উখিয়ার আম ও কাঁঠালের কদর থাকায় দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতি বছরই নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে যে আমের হালি ১২-১৫ টাকা ও কাঁঠাল ২০ থেকে ৬০ টাকায় কেনা যায় তা চট্টগ্রাম ও ঢাকা শহরে বিক্রি করলে দিগুণ মূল্য পাওয়া যায়।

সংরক্ষিত বনের গাছ পাচার চলছেই

কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে প্রতিদিন কাঠ পাচারের মহোৎসব চলছে। ক্ষমতাসীন দলের উপজেলা পর্যায়ের এক শীর্ষ নেতার পরিবারের সদস্যরা প্রতিনিয়ত সংরক্ষিত বনের বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যমান মাদার ট্রিসহ (গর্জন) কচিগাছ কেটে উজাড় করছে।

সম্প্রতি প্রায় ১৫ লাখ টাকা মূল্যের ১৩টি গর্জন গাছ কেটে প্রকাশ্যে পাচার করলেও বন বিভাগসহ পুলিশ কাঠ চোরদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
৫ জুন রাতে ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের সংরক্ষিত এলাকা থেকে ১৩টি গর্জন গাছ কেটে ভোরে ট্রাকে চকরিয়া বদরখালী সড়ক দিয়ে পাচারকালে সাহারবিল রামপুরার নুরুল আমিন চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের কাছে পেঁৗছার পর কাঠভর্তি গাড়িটির চাকা পাংচার হয়ে গেলে জনতার চোখে পড়ে কাঠ পাচারের দৃশ্যটি। ওই সময় স্থানীয় সাংবাদিকরা খবর পেয়ে কাঠগুলোর ছবি তুলতে যায়। ছবি তোলার সময় কাঠের সঙ্গে থাকা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির ছোটভাই নাছির উদ্দিন সাংবাদিকের দিকে তেড়ে আসে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী আলেকশাহ বাজারে বোট তৈরির জন্য ওইসব চোরাই কাঠ নিয়ে যাওয়া হয়েছে । নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, পাচারকারীরা চোরাই কাঠগুলো আরেকটি গাড়িতে ওঠানোর সময় চকরিয়া থানা পুলিশ ও উপকূলীয় কোস্টগার্ডের নজরে পড়লে কাঠ পাচারের ঘটনাটি সংশ্লিষ্ট রেঞ্জ কর্মকর্তাকে জানানো হয়; কিন্তু চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতার ভাইয়ের গাছ জানার পর তারা ওই কাঠ আটক না করে ফিরে যায়।
অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতার সহোদর নাছির উদ্দিন ও তার সহযোগীরা ৫ জুন রাতে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের উচিতারবিল এলাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ১৩টি গর্জন গাছ কেটে গভীর রাতে ট্রাক ভর্তি করে ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ এলাকা অতিক্রমকালে বনকর্মীরা প্রথমে বাধা দিলেও পরে রহস্যজনক কারণে ছেড়ে দেয়। কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ডিএফও আবদুল খালেক খানকে এ ব্যাপারে মোবাইল ফোনে অবহিত করা হলে তিনি ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তাকে গাছ উদ্ধারের নির্দেশ দেন; কিন্তু ডিএফওর নির্দেশ সত্ত্বেও ওই কর্মকর্তা চোরাই কাঠভর্তি গাড়িটি আটক করতে পারেননি।
এ ব্যাপারে ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা শেখ মতিউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, শাসক দলের নেতাকর্মীদের কর্মকাণ্ডে আমরা অতিষ্ঠ, তাদের তাণ্ডব থেকে বনের মূল্যবান গাছপালা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ফাঁসিয়াখালী এলাকার শঙ্কিত লোকজন দাবি করেন, এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে অচিরেই এ রেঞ্জের শতবর্ষী গর্জনসহ মূল্যবান বনজসম্পদ বিরান হতে আর বেশি দিন সময় লাগবে না।