Friday, June 15, 2012

কক্সবাজারে পাহাড় ধসের ২ বছর: এখনো পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বাস

১৫ জুন কক্সবাজার জেলাব্যাপী ভয়াবহ পাহাড় ধসের ২ বছর পূর্ণ হলো। ২০১০ সালের এদিন ভোরে পুরো কক্সবাজারে পাহাড় ধসের ঘটনায় ৬ সেনা সদস্যসহ ৫৪ জন নিহত হন।

সেই ভয়াবহ পাহাড় ধসের ২ বছরেও কক্সবাজারে পাহাড়ের পাদদেশে ঝূঁকি নিয়ে বাস করছেন প্রায় লক্ষাধিক পরিবার। একই সঙ্গে চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব। ফলে আরো ভয়াবহ পাহাড় ধসের আশঙ্কা করছেন জেলার সচেতন মানুষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের ১৫ জুন পাহাড় ধসের ঘটনায় দেশব্যাপী শোকের ছায়া নেমে আসে। এ শোক এখানো কাটেনি। ওই দিন ভোরে টানা বৃষ্টির কারণে জেলাব্যাপী ব্যাপক জলাবদ্ধতার পাশাপাশি পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। এতে জেলার রামু উপজেলার হিমছড়ি এলাকার ১৭ ইসিবি সেনা ক্যাম্পে মারা যান সেনা বাহিনীর ৬ সদস্য। টেকনাফে মারা যান ৩৩ জন। উখিয়ায় ৯ জন, হিমছড়িতে ৬ জন ও কক্সবাজার সদর উপজেলায় ২ জন মারা যান। এছাড়া, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় মারা যান একই পরিবারে ৪ জন।

২০০৮ সালের ৪ ও ৬ জুলাই টেকনাফে ফকিরা মুরা ও টুন্যার পাহাড় ধসে একই পরিবারের ৪ জনসহ ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। একইভাবে গত ৫ বছরে শতাধিক ব্যক্তি মারা যায় পাহাড় ধসে।

কিন্তু তারপরও কক্সবাজার জেলার ৭ উপজেলায় লক্ষাধিক পরিবার পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে যাচ্ছে। প্রতি বছর বর্ষায় পাহাড় ধসে ব্যাপক প্রাণহানীর ঘটনা ঘটলেও ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস অব্যাহত রয়েছে।

কক্সবাজার বন বিভাগ সূত্র মতে, কক্সবাজার জেলায় প্রায় ১০ হাজার একর বনভূমি অবৈধ দখলে চলে গেছে। বর্ষা শুরুর আগে থেকেই কক্সবাজার জুড়ে চলছে নির্বিচারে পাহাড় কাটা। ফলে একদিকে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে পানির সঙ্গে কাটা মাটি এসে শহরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত ও নালা-নর্দমা ভরাট হয়ে যাচ্ছে।

সরেজমিন দেখা যায়, কক্সবাজার শহর ও আশপাশের এলাকায় নানা কৌশলে চলছে পাহাড় কাটা। শহরের ঘোনার পাড়া, মোহাজের পাড়া, বৈদ্যঘোনা, বইল্যাপাড়া, জাদি পাহাড়, খাজা মঞ্জিল এলাকা, বাদশাঘোনা, ফাতেরঘোনা, ইসলামপুর, হালিমা পাড়া, লাইট হাউজ পাড়া, সার্কিট হাউজ সংলগ্ন এলাকা, আবু উকিলের ঘোনা, রহমানিয়া মাদ্রাসা এলাকা, পাহাড়তলী, বাঁচা মিয়ারঘোনা, হাশেমিয়া মাদ্রাসার পেছনে, সাহিত্যিকা পল্লী, বিডিআর ক্যাম্পের পেছনে, লারপাড়া, সদর উপজেলা কার্যালয়ের পেছনে, পাওয়ার হাউস, লিংকরোড, কলাতলী বাইপাস সড়কের ২ পাশের বিশাল পাহাড়ি এলাকা, হিমছড়িসহ জেলা শহরের বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় পাহাড়কাটা চলছে।

কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র রাজবিহারী দাশ বাংলানিউজকে জানান, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বাসবাসকারীদের ব্যাপারে জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও বন বিভাগের যৌথ প্রচেষ্টার প্রয়োজন রয়েছে। যৌথ প্রচেষ্টা করা না হলে শুধু পৌরসভার পক্ষে তাদের সরিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়।

জেলাব্যাপী পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসের সত্যতা স্বীকার করে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক জয়নুল বারী বাংলানিউজকে বলেন, আশ্রায়ন প্রকল্পের অধীনে জেলায় ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে জেলার মহেশখালী উপজেলায় আশ্রায়ণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এ চলমান প্রক্রিয়ার অধীনে জেলার ঝুঁকিপূর্ণ সব বসবাসকারীদের সরিয়ে নেওয়া হবে। এজন্য একটু সময়ের প্রয়োজন রয়েছে। তবে এবারের বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদে সরে যেতে মাইকিংসহ নানা প্রচারণা চালানো হবে।

No comments:

Post a Comment