Thursday, January 20, 2011

ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার খসড়া নিয়ে জাতীয় সংলাপ শুরু

ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার ওপর জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন আলোচকরা। তাঁরা খাদ্যের আপদকালীন মজুদের পরিমাণ ১৫ লাখ টন থেকে বাড়িয়ে ২২ লাখ টন করা দরকার বলে মত দিয়েছেন। খাদ্য মজুদ বাড়াতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক গুদাম তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন।

গতকাল শেরেবাংলা নগরের পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০১১-১৫) দলিলের খসড়া নিয়ে জাতীয় সংলাপে অংশ নিয়ে বক্তারা খাদ্যের মজুদ বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে আরো বলেন, 'উন্নত কৃষিবীজ উদ্ভাবন, কৃষি বিপণন, শস্যবীমা, সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনাকে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় গুরুত্বসহকারে তুলে ধরতে হবে।'
সভায় খাতভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা ধরে তা বাস্তবায়ন কর্মসূচি গ্রহণের ওপর আলোচকরা গুরুত্ব দেন। তাঁরা লবণাক্ততা, খরা, বন্যা ও শীত সহিষ্ণু বিভিন্ন ফসলের জাত উদ্ভাবনের জন্য প্রয়োজনীয় গবেষণা পরিচালনার দিকনির্দেশনা রাখার মত দেন।
সংলাপে সভাপতির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার বলেন, 'ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাকে আরো বাস্তবায়নমুখী করতে বিশেষজ্ঞপর্যায়ে এ জাতীয় সংলাপের আয়োজন করা হয়েছে। আগামী মার্চের মধ্যে পাঁচ বছরের এ পরিকল্পনার চূড়ান্ত দলিল প্রণয়ন করা সম্ভব হবে।'
জাতীয় সংলাপে আলোচকরা জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি ব্যবস্থাপনার ওপরও গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁরা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, ভূমির ব্যবহার, নদী খনন, জলাশয় সংরক্ষণ, মৎস্যজীবী নিবন্ধন, সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকা ও চরাঞ্চলের জমির যথাযথ উন্নয়ন ও ব্যবহার, উন্নত পশু-পাখির জাত উদ্ভাবনের বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে পরিকল্পনায় তুলে ধরার পক্ষে মত দিয়েছেন। জাতীয় সংলাপে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, পানিসম্পদ মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন, ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হীরা, প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সংলাপে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সচিব, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, অর্থনীতিবিদ, বিশেষজ্ঞ ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

তাহেরের বিচারঃ মার্কিন সাংবাদিককে বক্তব্য দিতে হাইকোর্টের অনুরোধ

র্নেল তাহেরের গোপন বিচার সম্পর্কে বক্তব্য রাখতে হাইকোর্ট মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফসুজকে অনুরোধ জানিয়েছেন। ২৬ জানুয়ারির মধ্যে সুবিধাজনক সময়ে তাঁকে বক্তব্য উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে। পররাষ্ট্রসচিবকে এ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতেও বলা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও শেখ. মো. জাকির হোসেন সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ অনুরোধ জানান।

এদিন শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান বলেন, ‘ওই সময় লরেন্স লিফসুজ তাহেরের বিচার পর্যবেক্ষণ করেন এবং এ নিয়ে তিনি একটি প্রামাণ্যচিত্র (ডকুমেন্টারি) তৈরি করেছেন। তাঁর বক্তব্য শোনা হলে অনেক অজানা তথ্য পাওয়া যাবে।’ এ পরিপ্রেক্ষিতে আদালত লিফসুজের প্রতি অনুরোধ জানান।
এ ছাড়া আজ আদালতের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঢাকার জেলা প্রশাসক মহিবুল হক ও তাহেরের সঙ্গে বিচারের মুখোমুখি হওয়া তত্কালীন করপোরাল মজিদ আদালতে বক্তব্য দেন।
জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, নিয়ম অনুসারে রায়ের অনুলিপি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আসার কথা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তিনি রায়ের কপি তাঁর কার্যালয়ে পাননি। বেসামরিক প্রশাসনকে বিষয়টি না জানিয়েই এ কাজটি করা হয়েছে। এটি আইনের বিচ্যুতি বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
মজিদ বলেন, ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য জিয়াউর রহমান এটা করেছেন। যারা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ছিল তাদের খুশি করার জন্য এটা করা হয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
গতকাল বুধবার এ দুজনকে হাইকোর্টে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৬ সালের ১৭ জুলাই সামরিক আদালতের গোপন বিচারে লে. কর্নেল তাহেরকে সাজা দেওয়া হয়। ওই বছরের ২১ জুলাই ভোরে তাহেরের ফাঁসি কার্যকর হয়। তাহেরের গোপন বিচারের বৈধতার প্রশ্নে তাঁর ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন, তাহেরের স্ত্রী লুত্ফা তাহের ও সামরিক আদালতের বিচারে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আরেক ভাই প্রয়াত ফ্লাইট সার্জেন্ট আবু ইউসুফ খানের স্ত্রী ফাতেমা ইউসুফ গত বছরের আগস্টে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৩ আগস্ট হাইকোর্ট তাহেরের গোপন বিচারের জন্য ১৯৭৬ সালের ১৬ নম্বর সামরিক ফরমানের আওতায় আদালত গঠন, বিচার ও ফাঁসি কার্যকর করা কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না—জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। এখন রিটের ওপর চূড়ান্ত শুনানি চলছে।

দ্রব্যমূল্যে প্রভাব পড়বে

লমানি মার্কেটের পর এবারে ডলার মার্কেট অস্থির হয়ে উঠছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ডলারের দাম হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে। ডলারের চাহিদা থাকলেও বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে ডলার সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নীতি অব্যাহত থাকলে ডলার সংকট তীব্র হবে পাশাপাশি ডলারের দাম অতিমাত্রায় বেড়ে যাবে।

গতকাল রবিবার ব্যাংকে ৭১ টাকা ৩০ পয়সা পর্যন্ত ডলারের দাম ওঠে। আগে ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের দাম ছিল কমবেশি ৭০ টাকা। ডলারের দাম বাড়তে থাকলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক টেলিফোনে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার নিয়ন্ত্রণ করতো; কিন্তু গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোন ভূমিকাই ছিল না। ব্যাংকে ডলারের দাম বাড়ার ফলে কার্ব মার্কেটেও ডলারের দাম বেড়ে যায়। গতকাল কার্ব মার্কেটে ৭৩ টাকারও বেশি দামে ডলার কেনাবেচা হয়। আমদানির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোতে ডলারের চাহিদা বৃদ্ধি পায়; কিন্তু ব্যাংকগুলো চাহিদামত ডলার পাচ্ছে না। ফলে ব্যাংকেই ডলারের দাম ঊধর্্বমুখী হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্লিপ্ততায় ব্যাংকিং খাতের সংশিস্নষ্টরা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, শুরুতে কলমানি বাজারের উলস্নম্ফন নিয়েও কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্লিপ্ত ছিল। যে কারণে কলমানি বাজারে সর্বোচ্চ রেকর্ড সুদে লেনদেনের উদাহরণ সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশে ২০০৩ সালে মুদ্রার ফ্লোটিং এক্সচেঞ্জ রেট বা ভাসমান বিনিময় হার বা বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালু করা হয়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপে এটি করা হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে হস্তক্ষেপ করতো। প্রতিদিন টেলিফোন যোগা-যোগের মাধ্যমে মুদ্রা বাজার নিয়ন্ত্রণ করতো। গতকাল বাজারে ডলারের দাম বেড়ে গেলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। যদিও ভাসমান বিনিময় হারে বাজারে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই; কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক রপ্তানিকারক ও রেমিট্যান্স গ্রাহকদের সুবিধার্থে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম কার্যকর বিনিময় হারের তুলনায় বেশি রেখে আসছে।

কার্যকর বিনিময় হার ধরলে ডলারের দাম ৪/৫ টাকা কমে আসবে; কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্লিপ্ততার কারণে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন হবে। তাতে দ্রব্যমূল্যের ঊধর্্বগতি রোধ করা যাবে না, মূল্যস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাহিদামত ডলার বাজার না ছাড়লে বাড়তি দামে ব্যাংকগুলো অপরাপর ব্যাংকের কাছ থেকে ডলার কিনবে। তাতে আমদানি ব্যয় বাড়বে। আমদানিকৃত পণ্য দেশীয় বাজারেও বেশি দামে বিক্রি করতে হবে, যা ভোক্তা পর্যায়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সেক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি কার্যকারিতা হারাবে।

চুক্তি, মিটারে প্রতারণা, গন্তব্যে না যাওয়ার হয়রানিতে যাত্রীরা

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আল-আমিন মতিঝিল শিল্প ব্যাংক ভবনের সামনে সিএনজিচালিত অটোরিকশার খোঁজ করতেই পেয়ে যান (ঢাকা মেট্রো থ-১২-৭২৫৮)। একেবারেই মিটারে যেতে রাজি হয়েছেন চালক। যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি! তবে অটোরিকশাটি ফকিরাপুল পানির ট্যাংক পর্যন্ত আসার পর ভ্রাম্যমাণ আদালতের সামনে পড়ে।

আদালত দেখতে পান, আধা কিলোমিটার রাস্তা পার হয়েছে, কিন্তু ভাড়া উঠেছে ২৯ টাকা। অর্থাৎ মিটার কারসাজি করা। চালক মামুনুর রশিদ বলেন, ‘অফিস থেকে মিটার ঠিক করে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু সিলগালা করা হয়নি।’ আদালত চালককে ৫০০ টাকা জরিমানা করেন।
বিআরটিএর পরিদর্শক জয়নাল আবেদীন বলেন, প্রথম দুই কিলোমিটারের ভাড়া ২৫ টাকা। এ দুই কিলোমিটার পার না হওয়ার আগ পর্যন্ত মিটারে ওয়েটিংয়ের ভাড়া উঠবে না। সে ক্ষেত্রে ২৯ টাকা ওঠা মানে মিটার কারসাজি করা। অর্থাৎ মিটারে অতিরিক্ত ভাড়া উঠবে।
বিআরটিএ ও ঢাকা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে রাজধানীতে পাঁচটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয় গতকাল। এসব আদালত যেকোনো গন্তব্যে যাত্রী বহন না করা, চুক্তিতে যাত্রী বহন ও মিটারে কারসাজির অনিয়ম পেয়েছেন।
গতকাল বিকেলে যখন শাহবাগে ভ্রাম্যমাণ আদালত চলছিল, তখন একটু দূরের কাঁটাবন মোড়ে আধঘণ্টা অপেক্ষা করে পুরান ঢাকার বংশালে যাওয়ার জন্য কোনো চালককে রাজি করাতে পারেননি আনিসুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালত নির্দিষ্ট স্থানে থাকেন। তাঁদের কাছ থেকে ৫০০ মিটার দূরে গিয়ে কোনো চালককে বলেন, দেখবেন যাবে না। তাদের সঙ্গে তো মারামারি করতে পারব না।’
নিউমার্কেটের সামনে সারিকা সরকার বলেন, ঢাকা মেট্রো থ-১৪-০৬৭৩ অটোরিকশার চালক যাওয়া তো দূরের কথা, রীতিমতো তাঁকে বকাঝকা করেছেন। তিনি জানান, পুলিশে খবর দেওয়ার কথা বলায় ওই চালক উল্টো তাঁকে অপমান করেন।
রাজধানীর ফকিরাপুল, রমনা, শাহবাগ, তেজগাঁও বিজি প্রেস ও মানিক মিয়া এভিনিউয়ে পাঁচটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। এতে ১৩২টি মামলা এবং ৯২ হাজার ৬৯০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একটি অটোরিকশা জব্দও করা হয়েছে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে ফকিরাপুল এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত চলাকালে প্রায় ২৫-৩০টি অটোরিকশা থামানো হয়। এর মধ্যে মাত্র দুটি অটোরিকশার মিটার সঠিক পাওয়া যায়। ঢাকা মেট্রো থ-১৪-৩৭১৭ অটোরিকশার কাগজ পরীক্ষা করে দেখা যায়, গাড়িটির বিরুদ্ধে তিনটি মামলা রয়েছে। এগুলোর কোনোটিই নিষ্পত্তি হয়নি। মিটার ঠিক না থাকায় আদালত ওই গাড়ির চালক মোজাম্মেল হককে ৫০০ টাকা জরিমানা করেন।
রমনা এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সেলিম হোসেন। তিনি বলেন, অধিকাংশ অটোরিকশা মিটারের পরিবর্তে চুক্তিতে এসেছে। এ ছাড়া গাড়িগুলোর কাগজপত্র সঠিক পাওয়া যায়নি।
মানিক মিয়া এভিনিউয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তোফায়েল ইসলাম। দুপুর দুইটা পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালত সিএনজিচালিত প্রায় ৫০টি অটোরিকশা পরীক্ষা করে মাত্র তিনটির মিটার বিআরটিএর সিল করা পায়। ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, অধিকাংশ মিটারই কারসাজি (টেম্পারিং) করা। তবে তোফায়েল ইসলাম অভিযোগ করেন, অটোরিকশা দাঁড় করানোর পর ঝামেলা এড়ানোর জন্য অনেক যাত্রী মিটারে না এসেও মিথ্যা বলেন। এতে চালকেরা পার পেয়ে যায়। জনস্বার্থে হলেও ভ্রাম্যমাণ আদালতকে সাহায্য করার আহ্বান জানান তিনি।
এ ছাড়া শাহবাগ এলাকায় রনি চাকমা ও তেজগাঁওয়ে সাকিল আহমেদ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
মিটার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত সিএনজিচালিত অটোরিকশার চাকা এক হাজার ৬৫০ বার ঘুরলে এক পালস বা এক কিলোমিটার হিসেবে গণ্য হয়। কিন্তু কারসাজি করা মিটারগুলোতে কোনো কোনোটা ৯০০ বার ঘোরার পরই এক কিলোমিটার দেখায়। কিছু মিটারে এক হাজার ৩০০ থেকে এক হাজার ৪০০ বার ঘোরার পর এক কিলোমিটার হচ্ছে।
বিআরটিএর চেয়ারম্যান আয়ুবুর রহমান খান প্রথম আলোকে বলেন, মালিক-চালক দুই পক্ষই মিটারে যাওয়া ও সরকার নির্ধারিত হারে জমা নেবে বলে অঙ্গীকার করেছে। প্রথম দিন ভ্রাম্যমাণ আদালতে চালকের কারাদণ্ড বা অটোরিকশা ডাম্পিং করা হয়নি। তবে আজ বৃহস্পতিবার থেকে তা হবে।
তবুও তাঁরা যান না: সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশা দৈনিক ১৫০ কিলোমিটার চলে—এটাকে ভিত্তি ধরেই বিআরটিএ ভাড়ার হার নির্ধারণ করেছে। সঙ্গে মালিকের লাভ, জ্বালানি খরচ, চালকের বেতন, খরচসহ অন্য ব্যয়ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
তবে অটোরিকশাচালকেরা জানিয়েছেন, দৈনিক তাঁরা গড়ে ১৭০ কিলোমিটার পথ চালান। এই পথের মধ্যে অন্তত ২৫ বার নতুন যাত্রী তুলে থাকেন।
বর্তমানে অটোরিকশায় প্রথম দুই কিলোমিটারের ভাড়া ২৫ টাকা। ২৫ বার নতুন যাত্রী তুললে প্রথম দুই কিলোমিটারের ভাড়া আসে ৬২৫ টাকা। পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া সাত টাকা। সেই হিসাবে বাকি ১২০ কিলোমিটারের ভাড়া আসে ৮৪০ টাকা। সারা দিনে ওয়েটিংয়ে (যাত্রাবিরতী, সিগনাল ও যানজট) আরও অন্তত ২০০ টাকা ভাড়া আসে। সেই হিসাবে দিন শেষে তাঁদের আয় হয় এক হাজার ৬৬৫ টাকা। জ্বালানি খরচ দৈনিক ১৫০ টাকার বেশি হয় না।
বিআরটিএর কর্মকর্তাদের হিসাব মতে, মিটার অনুযায়ী চলাচল করলে সারা দিনের খাওয়ার খরচ, জ্বালানি ও সামান্য মেরামত বাদ দিলে দৈনিক অন্তত ৫০০-৬০০ টাকা থাকে চালকের। এত টাকা আয়ের পরও চালকেরা মিটারে না গিয়ে যাত্রীদের পকেট কাটছেন। স্বল্প দূরত্বের ক্ষেত্রে তো একেবারে ‘না’ বলে দিচ্ছেন।
চালকদের দাবি, যানজটের কারণে বেশি ট্রিপ দেওয়া যায় না। এত দিন মালিকেরা বেশি জমা নিতেন। এখন অধিকাংশ মালিক ৬০০ টাকা জমা নেন। তবে তাঁরা ১২ ঘণ্টার বেশি চালাতে দেন না।
মালিকদের নতুন ফন্দি: রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, খিলগাঁও ও মান্ডা এলাকায় সবচেয়ে বেশি অটোরিকশার গ্যারেজ। এসব এলাকায় ঘুরে জানা গেছে, এত দিন মালিকেরা সকাল থেকে গভীর রাত অবধি ৭০০-৮০০ টাকা জমা নিতেন। সরকার জমা ৬০০ টাকা নির্ধারণ করার পর তাঁরা নতুন ফন্দি এঁটেছেন। অনেকেই চালকদের ৬০০ টাকার বিনিময়ে সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টা বেঁধে দিয়েছেন।
মানিক মিয়া এভিনিউয়ে বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালতের সামনে চালক আবদুর রব, মহিরউদ্দিন, শাহজাহান ও জসিম উদ্দিনও দাবি করেন, ১২ ঘণ্টার পালা শেষ হওয়ার পর মালিক পুনরায় অন্য চালককে অটোরিকশা ভাড়া দিয়ে থাকেন।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দৈনিক বাংলার মোড়ে ঢাকা মেট্রো থ-১৪-০৭৭৫ নম্বরের অটোরিকশার চালককে পায়ে ধরার বাকি রাখেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ফুজায়েল আহমেদ। কিন্তু চালকের এক কথা, যাবেন না। কেন যাবেন না প্রশ্ন করা হলে বলেন, মালিক সন্ধ্যার পর চালাতে নিষেধ করেছেন।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর সিএনজিচালিত অটোরিকশা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি বরকত উল্লাহ ভুলু প্রথম আলোর কাছে স্বীকার করেন, কিছু কিছু মালিকের বিরুদ্ধে দুই ভাগে ভাগ করে অটোরিকশা ভাড়া দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এসব মালিককে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানোর আহ্বান জানান তিনি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মিলি বিশ্বাস বলেন, যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী চালকেরা যেতে বাধ্য। যাঁরা মিটার অনুযায়ী যান না, তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। পর্যায়ক্রমে আইনের প্রয়োগ আরও কঠিন হবে।

ভরা মৌসুমেও লবণের অর্ধেক মাঠ খালি

বণ উৎপাদনের মৌসুম শুরুর পর দেড় মাস পেরিয়ে গেছে। তবে লবণচাষিদের বেশির ভাগই এখনো হাত গুটিয়ে রয়েছে। অথচ প্রতিবছরই এই মৌসুমটা চাষিদের চরম ব্যস্ততায় কাটে। এ বছর এই ভিন্ন চিত্রের কারণ লবণের অতি নিম্নদাম।

চলতি মৌসুমে এ পর্যন্ত শুধ কুতুবদিয়া দ্বীপে দুই হাজার ২৪০ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদিত হয়েছে। অথচ গত বছর এ সময় পর্যন্ত লবণ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প সংস্থা (বিসিক) ও চাষিদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, এ বছর মাঠপর্যায়ে প্রতি মণ কালো লবণ ৬০ টাকায় এবং সাদা লবণ ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ চাষিদের কালো লবণের ক্ষেত্রে মণপ্রতি চাষিদের ৯০ থেকে ১০০ টাকা এবং সাদা লবণের ক্ষেত্রে ১২০ থেকে ১২৫ টাকা খরচ পড়ে। লবণের দাম উৎপাদন খরচের চেয়েও অস্বাভাবিক কম হওয়ায় উৎপাদনকারীরা মাঠে নামছে না। তারা জানায়, জমি লাগিয়তসহ অন্য উৎপাদন খরচ মিটিয়ে উৎপাদনকারীরা কিছুতেই এবার পুষিয়ে উঠতে পারবে না।
গত মৌসুমে উৎপাদিত লবণ কিনে যারা মাঠে মজুদ করেছিল, এবার তাদের বিপুল অঙ্কের টাকা গচ্চা দিতে হচ্ছে। উৎপাদন খরচের তুলনায় মণপ্রতি লবণের বাজারে দাম অন্তত ৪০ টাকা কম। বাংলাদেশ লবণ উৎপাদনকারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক কায়সার ইদ্রিস কালের কণ্ঠকে বলেন, 'প্রতিবছরের ডিসেম্বরে কঙ্বাজারের উপকূলীয় মাঠে লবণের উৎপাদন শুরু হয়। এবার উৎপাদিত লবণ নিয়ে অনিশ্চয়তার আশঙ্কায় চাষিরা মাঠে নামছে না। এবার দাম সর্বনিম্ন হওয়ায় চাষিরা হতাশ।'
কঙ্বাজারে বিসিকের লবণ প্রকল্প থেকে পাওয়া তথ্যমতে, কঙ্বাজারের কুতুবদিয়া দ্বীপ, মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, কঙ্বাজার সদর, টেকনাফ ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার কিয়দংশসহ প্রায় ৭০ হাজার একর ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমি লবণ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। বিসিকের কঙ্বাজারে বিসিকের লবণ প্রকল্পে ভারপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) আবদুল বাসেত কালের কণ্ঠকে জানান, চলতি মৌসুমে এ পর্যন্ত শুধ কুতুবদিয়া দ্বীপে দুই হাজার ২৪০ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদিত হয়েছে। কুতুবদিয়া দ্বীপ ছাড়া জেলার অন্যান্য স্থানে এখন পর্যন্ত উৎপাদন শুরুই হয়নি। অথচ গত বছর এ সময় পর্যন্ত লবণ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন। গত মৌসুমে ৭০ হাজার একর জমিতে সরকারের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন লবণ। আর সে সময় উৎপাদন ১৭ লাখ মেট্রিক টনে পেঁৗছেছিল। বিসিকের তথ্যানুযায়ী, দেশে বার্ষিক ১৩ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন লবণের চাহিদা রয়েছে। এবার বিসিক ১৩ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন লবণের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু লবণের নায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত না হওয়ায় উৎপাদনকারীরা মাঠে না নামায় এবার অর্ধেকেরও বেশি পরিমাণ জমি অব্যবহৃত থেকে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তা ছাড়া আগের মৌসুমের চাহিদার চেয়েও অতিরিক্ত চার লাখ মেট্রিক টন লবণ মাঠে উৎপাদনকারীদের কাছে মজুদ রয়েছে বলে লবণ উৎপাদনকারী সমিতির কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছ্।ে কঙ্বাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুল শুক্কুর বলেন, 'ভারত থেকে বৈধ-অবৈধ পন্থায় বিপুল পরিমাণ লবণ দেশের বাজারে ঢুকে পড়ছে বলেই দেশীয় লবণ শিল্পে এমন বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।' তিনি উল্লেখ করেন, কেবল শিল্প-কারখানায় ব্যবহারের অজুহাতেই ভারতে উৎপাদিত লবণ দেদার ঢুকে পড়ছে দেশীয় বাজারে। তিনি বলেন, 'লবণের উৎপাদন, পরিবহন ও মজুদ থেকে শুরু করে এ শিল্পে কমপক্ষে অর্ধকোটি মানুষের ভাগ্য জড়িত।' এদিকে কঙ্বাজারের জেলা প্রশাসক মো. গিয়াস উদ্দিন আহমদ জানান, লবণ শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তিনি জানান, সরকার লবণ শিল্পের সমস্যা সমাধানের জন্য একটি নীতিমালা প্রণয়ন করতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে মাঠপর্যায় থেকে বিসিক বা টিসিবির মাধ্যমে চাষিদের উৎপাদিত লবণ ক্রয় এবং আমদানির ক্ষেত্রে উচ্চ হারে করারোপসহ বেশ কিছু সুপারিশও করা হয়েছে। নীতিমালাগুলো বাস্তবায়নের শুরু হলেই সমস্যা কিছুটা কাটিয়ে ওঠা যাবে বলে তিনি মনে করেন।
অপরদিকে রাজধানী ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তৃণমূলের উৎপাদনকারীদের রক্ষার জন্য অবিলম্বে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি সম্পূর্ণভাবে বন্ধের দাবি জানানো হয় গত শনিবার। কঙ্বাজার লবণ চাষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম ও বাংলাদেশ লবণ চাষিকল্যাণ পরিষদের সভাপতি মোস্তফা কামাল চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'আগের মৌসুমের উৎপাদিত কমপক্ষে আট লাখ মেট্রিক টন লবণ মাঠে মজুদ রয়েছে। চাষিরা লবণ বিক্রি করতে পারছে না। তারা সরকারের কাছে দাবি জানায়, নায্যমূল্যে যাতে উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে সরকারিভাবে লবণ কেনার ব্যবস্থা নেওয়া হয়।' সেই সঙ্গে মাঠপর্যায়ের উৎপাদন এবং বিপণনের ক্ষেত্রে সরকারিভাবে তদারকির দাবিও জানান তাঁরা।

শেয়ারবাজারে দরপতন নির্বিচারে গাড়ি ভাঙচুর

ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে গতকাল বুধবার লেনদেন শুরু হওয়ার দেড় ঘণ্টার মধ্যে সূচক সর্বনিম্ন সীমায় (সার্কিট ব্রেকার) পৌঁছে যায়। ফলে বন্ধ হয়ে যায় শেয়ার লেনদেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বিনিয়োগকারীরা রাজধানীর মতিঝিল, দিলকুশা, দৈনিক বাংলার মোড়সহ আশপাশের এলাকায় বিক্ষোভ ও বেপরোয়া ভাঙচুর শুরু করে।

তাদের তাণ্ডবে অতিষ্ঠ হয়ে প্রতিরোধ করতে রাস্তায় নামেন ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ির মালিক, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তাকর্মী ও কর্মচারীরা। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করেও ইটপাটকেল ছোড়ে। পুলিশ একজনকে আটক করে।
পুঁজিবাজারে অস্বাভাবিক উত্থান-পতন ঠেকাতে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) এক দিনে সূচক হ্রাস-বৃদ্ধির সীমা (সার্কিট ব্রেকার) নির্ধারণ করে। এসইসি সিদ্ধান্ত নেয়, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সাধারণ সূচকের হ্রাস বা বৃদ্ধি আগের দিনের তুলনায় ২৩৭ পয়েন্ট হলেই লেনদেন বন্ধ করে দেওয়া হবে। এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছে গতকাল থেকে। এ দিন শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার দেড় ঘণ্টার মধ্যে দরপতন হয়ে এ সীমা ছুঁয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায় দুই স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেন।
সাত কর্মদিবসের ব্যবধানে গতকাল তৃতীয়বারের মতো বন্ধ হয় লেনদেন। আগের দিন মঙ্গলবার ও গত ১০ জানুয়ারি (সোমবার) অস্বাভাবিক দরপতনের কারণে লেনদেন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
বিনিয়োগকারীরা জানায়, সকালে নির্ধারিত সময়ে লেনদেন শুরু না হলেও তারা ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছিল। অর্থমন্ত্রীর বাসভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠক থেকে বাজারের জন্য ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত আসবে বলে প্রত্যাশা ছিল তাদের। পরে এসইসি ও বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন কোনো সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলে লেনদেন শুরু হবে বলে ধারণা করছিল তারা। কিন্তু শুধু সূচক হ্রাস-বৃদ্ধির সীমা আরোপ করে লেনদেন শুরু এবং এর পরই ব্যাপক দরপতনের কারণে বিনিয়োগকারীদের ক্ষোভ সহিংস রূপ ধারণ করে।
বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, এসইসি ও ডিএসই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে। তবে তারা পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য প্রধানত বাংলাদেশ ব্যাংককেই দায়ী করে। তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানের পদত্যাগও দাবি করে।
দুপুরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা মতিঝিল, দিলকুশা, দৈনিক বাংলার মোড় ও ফকিরাপুলে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে শুরু করে। দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা ওই সব এলাকায় ব্যাপক গাড়ি ভাঙচুর এবং আগুন লাগানো হয়। এ ঘটনায় চার পুলিশ সদস্য আহত হন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে এক বিক্ষোভকারীকে আটক করে।
দুপুর আড়াইটার দিকে বিনিয়োগকারীরা ঢাকা স্টক এক্সেচেঞ্জের সামনে টায়ার, কাগজ ও কাঠে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। এরপর বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে মতিঝিল শাপলা চত্বর, দৈনিক বাংলার মোড় ও ফকিরাপুল এলাকায়। বিনিয়োগকারীদের একটি দল লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল নিয়ে ওই সব এলাকায় পার্কিং করা গাড়ি ভাঙতে শুরু করে। এরপর আরেকটি দল রাস্তায় চলাচলরত যানবাহন ভাঙচুর করতে থাকে। এ ঘটনায় মতিঝিল, দৈনিক বাংলার মোড়সহ আশপাশ এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রাস্তায় গাড়ি, রিকশা ও মোটরসাইকেল রেখেই দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে লোকজন। এলাকার বিভিন্ন ব্যাংক, অফিস, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মুহূর্তের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়।
মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায় অগ্রণী ব্যাংক প্রধান শাখা এবং শিল্প মন্ত্রণালয় ও পূবালী ব্যাংক লিমিটেডের প্রধান শাখার নিচে পার্কিং করা গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। বিনিয়োগকারীরা ইটপাটকেল ও লাঠিসোঁটা দিয়ে ভাঙচুর চালায়। একই সময়ে বিক্ষোভকারীরা ভাঙচুর শুরু করে দিলকুশা এলাকায়ও। ওই এলাকায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্টাফ বাস, প্রাইভেট কার ও বিআরটিসির দুটি বাসসহ শতাধিক গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। ফুটপাতের দোকানপাটও ভাঙচুর করে বিক্ষোভকারীরা। ফুটপাতের দোকানিরা এগিয়ে গেলে বিক্ষোভকারীরা তাঁদের মারধর করে। এ সময় ওই এলাকা ছিল পুলিশশূন্য। মতিঝিল থানার অদূরে এ ঘটনা ঘটলেও পুলিশ এগিয়ে যায়নি। এতে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ দেখা দেয় মানুষের মধ্যে। অসহায় হয়ে পড়ে সাধারণ মানুষ। একপর্যায়ে মতিঝিল এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ির মালিক, বিভিন্ন অফিসের কর্মচারী, ভবনগুলোর নিরাপত্তাকর্মী ও সাধারণ মানুষ মিলে বিক্ষোভকারীদের পাল্টা ধাওয়া দেয়। শুরু হয় দ্বিতীয় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ। একপর্যায়ে শ্রমিক-কর্মচারীরা বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া করেন। এ সময় পুলিশ গিয়ে তাঁদের লাঠিপেটা করে।
সোনালী ব্যাংকের (মিরপুর শাখা) এজিএম এস এম গোলাম মোস্তফা জানান, তিনি অফিসের গাড়ি নিয়ে মতিঝিল শাখায় কাজের জন্য যান। বাইরে হৈচৈ শুনতে পেয়ে বের হন ব্যাংক থেকে। দেখতে পান বিক্ষোভকারীরা তাঁর গাড়িটিও ভাঙচুর করছে। বাধা দিতে গেলে তাঁকে গালমন্দ করে বিক্ষোভকারীরা। ব্র্যাক ব্যাংকের এক নারী কর্মকর্তা অফিস থেকে বেরিয়ে তাঁর গাড়িটি রক্ষা করার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। বিক্ষোভকারীরা তাঁর সামনেই প্রাইভেট কারটি ভেঙে ফেলে। এই দৃশ্য দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন ওই নারী।
এদিকে দুপুরেই শতাধিক বিনিয়োগকারী ধানমণ্ডিতে মীনাবাজারের সামনে রাস্তা অবরোধ করে ১০-১২টি গাড়ি ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় ওই এলাকায়ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ধানমণ্ডি থানার ওসি শাহ আলম জানান, এ ঘটনায় তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে কিছুক্ষণ রাস্তা অবরোধ করে রাখা হয়েছিল। পরে তা তুলে নেওয়া হয়।
এসইসির নির্বাহী পরিচালক আনোয়ারুল কবীর ভুঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, পুঁজিবাজারে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি এড়াতে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থেই সূচক হ্রাস-বৃদ্ধির সীমা আরোপ করা হয়েছে। বুধবার এসইসির বাজার পর্যালোচনা কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরপরই তা কার্যকর করা হয়েছে। তিনি বলেন, লেনদেন চলাকালে প্রতি পাঁচ মিনিট পরপর সূচক সমন্বয় করা হয়। এ কারণে কোনো একটি পয়েন্টে সূচকের সীমা নির্দিষ্ট করে দেওয়া যায়নি। একবার সমন্বয়ের পর পরের পাঁচ মিনিটের মধ্যে যাতে বড় ধরনের উত্থান বা পতন ঘটতে না পারে সে জন্য ২৩৭ পয়েন্টকে ভিত্তি ধরা হলেও হ্রাস-বৃদ্ধির পরিমাণ ২২৫ পয়েন্টের বেশি হলেই লেনদেন বন্ধ করে দেওয়া হবে।
আনোয়ারুল কবীর আরো বলেন, বাংলাদেশে সূচক হ্রাস-বৃদ্ধির সীমা আরোপের ধারণা নতুন হলেও বিশ্বের অনেক দেশে এ ধরনের ব্যবস্থা চালু রয়েছে। এর ফলে এক দিনের মধ্যে শেয়ারবাজারে অস্বাভাবিক দরপতন বা উত্থানের প্রবণতা অনেকটা রোধ করা সম্ভব হবে।
বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কায় আগের দিন (মঙ্গলবার) শেয়ারবাজারে লেনদেন স্থগিত রাখার পর গতকাল নির্ধারিত সময়ে (সকাল ১১টা) যথারীতি লেনদেন শুরুর ঘোষণা দিয়েছিল এসইসি ও ডিএসই। কিন্তু সকাল থেকেই পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণের লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে একের পর এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যেকোনো ধরনের বিভ্রান্তি এড়াতে শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরুর সময় পিছিয়ে দেওয়া হয় দুই ঘণ্টা। শেষ পর্যন্ত সূচক হ্রাস-বৃদ্ধির সীমা আরোপের পর দুপুর ১টা থেকে দুই শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয়।
সূচক হ্রাস-বৃদ্ধির সীমা আরোপের প্রথম দিনে লেনদেন শুরুর পর দেড় ঘণ্টার মধ্যেই শেয়ারবাজারে সর্বোচ্চ দরপতনের ঘটনা ঘটেছে। পাঁচ মিনিটের মধ্যে সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৬০ পয়েন্ট বেড়ে ৭৩০০ পয়েন্টের ঘর ছুঁয়ে যায়। এরপর শুরু হয় দরপতন। একটানা দরপতনে ২০ মিনিটে সূচক কমে যায় ২৮০ পয়েন্ট। এটা আগের দিনের তুলনায় ১২০ পয়েন্ট কম। এ সময় লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ কম্পানির দরপতন ঘটে। এর ২০ মিনিটে আবার সামান্য বৃদ্ধি পায় লেনদেন। এ সময় সূচক প্রায় ১২০ পয়েন্ট বেড়ে ৭১২৫-এর ঘরে পৌঁছায়। এরপর আবার শুরু হয় পতন। এ পতন শেষ হয় আড়াইটায়। এ সময় এ সূচক আগের দিনের চেয়ে ২৩১ পয়েন্ট কমে ৬৯০২.৪৮-এ দাঁড়ায়। ফলে ওই অবস্থায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে দিনের লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় পর্যন্ত লেনদেন হওয়া ২৪০টি কম্পানির মধ্যে ২৩০টিরই শেয়ারের দর ব্যাপক মাত্রায় কমে। এর বিপরীতে সাতটির দর বাড়ে এবং তিনটির অপরিবর্তিত থাকে।
অর্থমন্ত্রীর বাসায় বৈঠক : পুঁজিবাজার পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল সকালে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বাসায় একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, ড. মশিউর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শফিকুর রহমান পাটোয়ারী, এসইসি চেয়ারম্যান জিয়াউল হক খোন্দকার, সদস্য মো. ইয়াসিন আলী, মো. আনিসুজ্জামানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে পুঁজিবাজারের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। এ ছাড়া পুঁজিবাজারে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরির পেছনে কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর কারসাজি রয়েছে কি না তা খুঁজে বের করার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
ডিএসইর ব্রিফিং : বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে বিকেলে ডিএসইর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সতিপতি মৈত্র সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তিনি সূচকের সার্কিট ব্রেকার আরোপের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, যাদের হাতে ভালো কম্পানির শেয়ার আছে, কোনোভাবেই আতঙ্কে তা বিক্রি করা ঠিক হবে না।

ইউনিভার্সেল ভাষায় পরিণত হচ্ছে বাংলা by আজিজুল পারভেজ

বাংলা ভাষা ও বাংলা ভাষার সৃষ্টিসম্ভারকে ইন্টারনেটে বিশ্বের সব ভাষার মানুষের কাছে পাঠযোগ্য করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ উদ্যোগ সফল হলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সারা বিশ্বের মানুষ তাদের নিজ নিজ ভাষায় বাংলা ভাষার সৃষ্টিসম্ভার যেমন পাঠ করতে পারবে, তেমনি অন্যান্য ভাষার সৃষ্টিসম্ভারও বাংলা ভাষায়ই পাঠ করা সম্ভব হবে।

বাংলাকে ‘ইউনিভার্সেল নেটওয়ার্কিং ল্যাঙ্গুয়েজ’ (ইউএনএল)-এ পরিণত করার কাজ শুরু করেছে এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ। কাজটি সম্পন্ন করতে আরো এক বছর সময় লাগতে পারে বলে জানা গেছে। এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলা ভাষাকে ইউএনএলে পরিণত করার উদ্যোগ একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এ কাজ সফল হলে সারা বিশ্বের মানুষের কাছে বাংলা ভাষা অবারিত হবে। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক, বাংলা ভাষা শহীদ দিবস আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হলেও এবং বাংলা ভাষা জনসংখ্যা বিবেচনায় বিশ্বের চতুর্থ ভাষা হলেও এতদিন আমরা অন্য ভাষার মানুষের কাছে এ ভাষাকে বোধগম্য করে তুলতে পারিনি।’
‘ইউনিভার্সেল নেটওয়ার্কিং ল্যাঙ্গুয়েজ’ (ইউএনএল) একটি ইন্টারনেট প্রোগ্রাম। এর মাধ্যমে একটি ভাষার টেক্সট স্বয়ংক্রিয়ভাবে অন্য ভাষায় বদলে যায়। ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, চায়না, আরবি, হিন্দিসহ বিশ্বের প্রায় দেড়শ ভাষা এরই মধ্যে এই প্রোগ্রামের আওতায় এসে গেছে।
এই প্রোগ্রামের আওতায় আসা ভাষাগুলোর কোনো কিছু যে কেউ তার মাতৃভাষায় পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন। বিনা মূল্যে এ সেবা পাওয়া যায়। বর্তমানে গুগল বাণিজ্যিকভাবে কয়েকটি ভাষার ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিচ্ছে।
জানা যায়, ১৯৯৬ সালে এই প্রোগ্রাম উদ্ভাবন করে টোকিওর ইউনাইটেড নেশন ইউনিভার্সিটি। বিষয়টির গুরুত্ব বুঝতে পেরে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে এই প্রোগ্রাম প্রসারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০০১ সালে জেনেভায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ইউনিভার্সেল নেটওয়ার্কিং ল্যাঙ্গুয়েজ ফাউন্ডেশন। এরাই এখন এ বিষয়ক নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এরা একটি দেশের রাষ্ট্রীয় ভাষাকে ইউএনএল-এ পরিণত করার বিষয়ে অনুমোদন ও সহযোগিতা দিয়ে থাকে। ভারতের রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে হিন্দি এরই মধ্যে ইউএনএল-এ পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে বাংলাকে ইউএনএল-এ পরিণত করার অনুমোদন পেয়েছে এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ। এ ব্যাপারে কলকাতার একদল বাংলাভাষী আইটি বিশেষজ্ঞ এশিয়াটিক সোসাইটিকে সহযোগিতা দিচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার এ প্রকল্পে অর্থ সহযোগিতা দিচ্ছে।
এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম জানান, একটি ভাষাকে ইউএনএল-এ পরিণত করতে হলে সে ভাষার মরফোলজিকেল গ্রামার ও মরফোলজিকেল ডিকশনারি তৈরি করতে হয়। প্রায় ছয় মাস ধরে এ কাজটি চলছে। কাজটি সম্পন্ন করতে আরো বছরখানেক সময় লাগবে। তিনি জানান, এ কাজের জন্য সরকারের কাছে তিন কোটি টাকা চাওয়া হয়েছিল। এরই মধ্যে দেড় কোটি টাকা পাওয়া গেছে।

ফেলানী হত্যার ঘটনায় ভারতের দুঃখ প্রকাশ

কুড়িগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানী হত্যার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে ভারত। একই সঙ্গে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে সীমান্তে গুলি না চালানোর আশ্বাস দিয়েছে দেশটি। গতকাল বুধবার বিকেলে ঢাকায় শেরাটন হোটেলে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ভারত স্বরাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে ভারতীয় পক্ষ এ আশ্বাস দেয়।
জানা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার সকালে যৌথ সংবাদ সম্মেলনেও ভারতের পক্ষ থেকে সীমান্তে গুলি না চালানোর আশ্বাস দেওয়া হতে পারে। এদিকে বৈঠকে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক দুই আসামি ক্যাপ্টেন (অব.) মাজেদ ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তরের জন্য ভারতের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। বৈঠক সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ওই দুই খুনি বর্তমানে ভারতে আছে বলে বাংলাদেশ সরকারের কাছে তথ্য রয়েছে। এর ভিত্তিতেই বাংলাদেশ ভারতের কাছে ওই খুনিদের গ্রেপ্তার করে হস্তান্তরের অনুরোধ জানায়। তাদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি আছে বলে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ। তবে ভারত এ ব্যাপারে আরো তথ্য চেয়েছে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, গত ১২ ফেব্র“য়ারি ঢাকায় আইন মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার সফিক আহমেদ বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামিকে এ বছরের মধ্যেই ফিরিয়ে আনার
ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ক্যাপ্টেন (অব.) মাজেদ ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিন ছাড়া পলাতক ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন লে. কর্নেল (বরখাস্ত) নূর চৌধুরী, মেজর (বরখাস্ত) শরিফুল হক ডালিম, লে. কর্নেল (বরখাস্ত) খন্দকার আবদুর রশিদ ও লে কর্নেল (অব.) এ এম রাশেদ চৌধুরী।
এদিকে ভারতীয় পক্ষ বাংলাদেশের কারাগারে আটক অনুপ চেটিয়াকে ফেরত চেয়েছে। গতকালের বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন স্বরাষ্ট্রসচিব আবদুস সোবহান সিকদার। তিনি কালের কণ্ঠকে জানান, সীমান্ত সমস্যার সমাধানে পৌঁছানো যাবে বলে তিনি আশা করছেন। এ বৈঠকের ধারাবাহিকতায় আগামী দেড় মাসের মধ্যে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় আসবেন।
বাংলাদেশ-ভারত স্বরাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকের আগে গতকাল দুপুরে দুই দেশের যুগ্ম সচিবদের নেতৃত্বে যৌথ ওয়ার্কিং গ্র“পের বৈঠক শেষ হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে স্বরাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে আলোচ্যসূচি হিসেবে নির্ধারিত সুপারিশমালায় সই করেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (রাজনৈতিক) ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ এবং ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (উত্তর-পূর্ব) শম্ভু সিং। স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা নিয়ে অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে বলে দাবি করেন দুই দেশের প্রতিনিধিদলের প্রধানরা।
ফেলানী হত্যার জন্য ভারত দুঃখ প্রকাশ করেছে কি না জানতে চাইলে যুগ্ম সচিব সুস্পষ্টভাবে কিছু বলেননি। অন্যদিকে ভারতের যুগ্ম সচিব শম্ভু সিং বলেন, ‘আমি দুঃখিত। কারণ আমি এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য যথার্থ ব্যক্তি নই।’ তবে অনুষ্ঠান শেষে দেওয়া যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিএসএফের হাতে নিহত নির্দোষ বাংলাদেশি নাগরিকদের মৃত্যুর বিষয়ে আলোচনার সময় বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন এবং অবশ্যই হত্যা বন্ধের অনুরোধ জানিয়েছে। অন্যদিকে ভারতের প্রতিনিধিদল সম্প্রতি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তের কাছে বাংলাদেশি কিশোরী (ফেলানী) হত্যার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং সমবেদনা জানিয়েছে। সেই সঙ্গে সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার জন্য বৈধ পথগুলো ব্যবহার করতে এবং বিশেষ করে রাতে সীমান্তে চলাচলে নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে জনগণকে অবহিত করতে অনুরোধ জানিয়েছে।
গতকাল বিকেলে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রসচিব আবদুস সোবহান সিকদার সাংবাদিকদের বলেন, ফেলানী হত্যার জন্য ভারত দুঃখ প্রকাশ করে গুলি না চালানোর আশ্বাস দিয়েছে। ১৯৭৪ সালের সীমান্ত চুক্তির আওতায় অপদখলীয় ভূমি, ছিটমহল বিনিময়ের মতো বিষয়ে এ বৈঠক থেকেই সিদ্ধান্তে পৌঁছা যাবে বলে তিনি আশাবাদী। আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে আসবেন বলে আশা প্রকাশ করে স্বরাষ্ট্রসচিব বলেন, তখন সব সমস্যার সমাধান চূড়ান্ত হবে।
বৈঠক সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার যুগ্ম সচিবদের নেতৃত্বে বৈঠকের সময়ই ফেলানী হত্যার ঘটনায় বিব্রত বোধ করেছিল ভারতীয় প্রতিনিধিদল। গতকাল সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ফেলানী হত্যার বিষয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত ছবি ও খবর ভারতীয় প্রতিনিধিদলের সামনে তুলে ধরা হয়। এ সময় ভারতীয় পক্ষ এ ব্যাপারে বিব্রত বোধ করে দুঃখ প্রকাশ করে বলে, এমন হত্যা তারা সমর্থন করে না।
বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা ভারতের স্বরাষ্ট্রসচিব জি কে পিল্লাইয়ের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলকে ফেলানী হত্যার ছবি দেখানোর সময় দুইবার বলেছেন, ‘বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়ার সময় তাঁরা ফেলানী হত্যার কারণ জানতে চাইবেন। আপনারা উত্তর নিয়ে আসবেন।’
সূত্র জানায়, আজ ভারতীয় পক্ষ সাংবাদিকদের সামনে সীমান্তে গুলি বন্ধের আশ্বাস দেওয়ার পাশাপাশি ফেলানীকে হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিএসএফ সদস্যের বিরুদ্ধে নেওয়া ব্যবস্থার কথা জানাতে পারে। গতকালের বৈঠকে তারা ফেলানীর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে এসেছিল।
এদিকে মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ, নারী ও শিশু পাচার, বন্দি প্রত্যর্পণ, নিরস্ত্র বাংলাদেশিদের হত্যা, সীমান্তে বেড়া, অভিবাসন ইস্যু বিশেষ করে ভিসাব্যবস্থা সহজীকরণ বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। ভারতের মূল দাবি ছিল, বাংলাদেশ থেকে কথিত ভারতীয় জাল মুদ্রা তৈরির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। অন্যদিকে বাংলাদেশের দাবি ছিল, সীমান্তে সব ধরনের হত্যা বন্ধ করা।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র বলেছে, ভারত অনুপ চেটিয়াকে ফেরত চায়। তবে বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থায় আছে।
জানা গেছে, ভারতের কারাগারে মোট ৫২৬ জন বাংলাদেশি আটক আছে। তাদের পরিচয় নিশ্চিত করে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
জানা গেছে, ভারতের স্বরাষ্ট্রসচিব আজ সকালে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এরপর শেরাটন হোটেলে দুই দেশের প্রতিনিধিদল আবার বৈঠকে বসবে।

ইউনিপে টুইউর ওপর নজরদারি বাড়ানোর অনুরোধ

'অতি লাভের আশায় আমরা অবুঝের মতো বিনিয়োগ করেছি। আমাদের অর্থ আত্মসাৎ করে কেউ যাতে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য ইউনিপে টুইউর ওপর ২৪ ঘণ্টা নজরদারি রাখতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ জানাচ্ছি।' গতকাল বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ইউনিপে টুইউর সাধারণ সদস্য ও ট্রেডার্স ফোরামের ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনে কয়েকজন গ্রাহক এসব কথা বলেন।

উচ্চ মুনাফার প্রলোভনে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া ইউনিপে টুইউ নিজেদের স্বচ্ছতা তুলে ধরার জন্য কৌশলে কিছু গ্রাহককে দিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে পাঠানো দাওয়াতপত্রে কম্পানিটির ম্যানেজার (অপারেশন) মালিক হাসান নোমান স্বাক্ষর করলেও তিনি এবং কর্তৃপক্ষের কেউই উপস্থিত ছিলেন না। বরং তাঁদের পছন্দের কিছু গ্রাহক সংবাদ সম্মেলনে ইউনিপে টুইউর প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন!
পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে তাঁরা স্বীকার করেছেন, বিনিয়োগ করা অর্থ নিয়ে ইউনিপে টুইউ প্রতারণা করতে পারে। এটা ভেবে তাঁরা আতঙ্কিত। অনলাইনে স্বর্ণ কেনার জন্য ইউনিপে টুইউ টাকা নিলেও ওই স্বর্ণ কোনো দিন কোনো গ্রাহক দেখতে পাবেন না। সকাল ১১টায় এ সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগে ইউনিপে টুইউর প্রায় দুই হাজার সদস্য প্রেসক্লাবের সীমানার ভেতরে ঢুকে নিজেদের মধ্যে মারামারি এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু করেন। প্রেসক্লাবের নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হওয়ার পর পুলিশ ও র‌্যাব এসে তাঁদের প্রেসক্লাব থেকে বের করে দেয়। সংবাদ সম্মেলনের পরও গ্রাহকরা বিভিন্ন গ্রুপে জোট বেঁধে পরস্পরের সঙ্গে তর্কাতর্কি ও ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন।
সংবাদ সম্মেলন শেষে একজন গ্রাহক অভিযোগ করে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ইউনিপে টুইউ কর্তৃপক্ষ নিজেদের অবৈধ বাণিজ্য টিকিয়ে রাখার স্বার্থে এসব গ্রাহককে ব্যবহার করছে। কিছু লোককে ইউনিপে টুইউর পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়ার জন্য টাকা দেওয়া হয়েছে।'
আসাদুজ্জামান নামের এক গ্রাহক (আইডি নম্বর-বি-৮৪৬৫১১এফ) বলেন, 'মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম)-এর কথা বলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সময় গ্রাহকদের টাকা নিয়ে পালিয়েছে। আমরা প্রতারণার শিকার হতে চাই না। আমরা সরল বিশ্বাসে টাকা দিয়েছি, আমাদের বাঁচান।'
তিনি বলেন, 'ইতিমধ্যে ইউনিপে টুইউ প্রায় চার লাখ গ্রাহকের কাছ থেকে ৪৫০ কোটি টাকা নিয়েছে। এই টাকায় কঙ্বাজারের রামুতে রাবার বাগান, কঙ্বাজার সমুদ্রসৈকতে হোটেল নির্মাণের জন্য জায়গা, ঢাকার ধানমণ্ডিতে নিজস্ব ভবন ক্রয়, নরসিংদী ও ফরিদপুরে জমি কিনেছে কম্পানিটি। আমাদের বলা হয়েছে, অনলাইনে স্বর্ণ কিনতে টাকা দিলেই ১০ মাসে দ্বিগুণ অর্থ দেওয়া হবে; কিন্তু ওই স্বর্ণ কোনো দিন পাওয়া বা দেখা যাবে না।'
সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিতে যশোর থেকে আসা আরেক সদস্য জাবেদ বলেন, 'গত ১৪ মাসে কম্পানিটি তাঁদের সঙ্গে কোনো প্রতারণা করেনি। ভবিষ্যতে যাতে প্রতারণা করতে না পারে_সেজন্য সরকারের নজরদারি চান দরকার।'
তাহের নামে এক সদস্য সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্যে ইউনিপে টুইউর প্রশংসা করে বলেন, 'কম্পানিটির উন্নতিতে ঈর্ষান্বিত হয়ে কিছু ব্যক্তি সরকারি সংস্থাকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করছে। কোনো গ্রাহকই ক্ষতিগ্রস্ত বা প্রতারিত হননি।' ১০ মাসে দ্বিগুণ অর্থ কিভাবে কম্পানিটি তার গ্রাহকদের দিচ্ছে, তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'কম্পানি কিভাবে ব্যবসা করে তার গ্রাহকদের মুনাফা দেবে, তা কম্পানির নিজস্ব বিষয়। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে মুনাফা অর্জন ও বণ্টনে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার ক্ষমতা কোনো সংস্থার নেই। দুঃখজনক হলো, কিছু সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া ইউনিপে টুইউর বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রচার করছে।'

মনীষার সব আকাঙ্ক্ষা সুন্দরবনের জন্য

‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি। আমি এসেছি সুন্দর নেপাল থেকে ঐশ্বর্যময় বাংলাদেশে। প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচনে সুন্দরবনকে এইমাত্র ভোট দিলাম। আমার হৃদয়ের সব আকাক্সক্ষা সুন্দরবনের জন্য।’ সুন্দরবন ও বাংলাদেশের প্রতি এভাবেই নিজের অনুভূতি প্রকাশ করলেন ভারতীয় চিত্রতারকা মনীষা কৈরালা।

জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) শুভেচ্ছা দূত হিসেবে ‘সুন্দরবনকে ভোট দিন’ প্রচারাভিযানে বাংলাদেশে এসে তিনি ভোট দিলেন সুন্দরবনকে। বিনিময়ে বাংলাদেশের মানুষ করতালি আর হৃদয়ের উষ্ণ শুভেচ্ছায় ভরিয়ে দিল তাঁকে। গতকাল বুধবার শান্ত-মারিয়াম ফাউন্ডেশন রাজধানীর নভো কনভেনশন সেন্টারে সুন্দরবনের জন্য ভোট প্রচার কার্যক্রম অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সুন্দরবনকে ভোট দেন সাবেক প্রধান বিচারপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান। এ ছাড়া অন্য অতিথিদের মধ্যে ভোট দেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট প্রমোদ মানকিন, সংগীতশিল্পী মমতাজ বেগম এমপি প্রমুখ। এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মনীষার সঙ্গে এসেছিলেন তাঁর মা সুষ্মা কৈরালা ও বাবা প্রকাশ কৈরালা।
অনুষ্ঠানে দর্শক-শ্রোতাদের মধ্যে দারুণ সাড়া লক্ষ করা গেছে। নিজের দেশকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে তাঁরা এ অনুষ্ঠানে অংশ নেন। ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় তাঁরা চিৎকার করে বলে ওঠেন, ‘ভোট ফর সুন্দরবন’।
মনীষা কৈরালা বলেন, ‘বাঙালি ও বাংলাদেশ আমার হৃদয়জুড়ে রয়েছে। বঙ্গোপসাগর, ম্যানগ্রোভ বনভূমি সুন্দরবনসহ বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি সুন্দরবনকে ভোট দিলাম। আপনারা তো অবশ্যই দেবেন। আমি চাই সুন্দরবন বিশ্বের প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে স্থান করে নিক। শান্ত-মারিয়ামের এই ক্যাম্পেইন সার্থক হোক। বাংলাদেশ ও নেপালের বন্ধুত্ব দৃঢ় হোক।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘পৃথিবীর নানা দেশের উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় বস্তু দেখতে পেয়েছি বলে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি। এর মধ্যে আমি অনেক বনও দেখেছি, কিন্তু সুন্দরবনের মতো এমন সুন্দর বন আর দেখিনি। আমি তাকে স্নেহময়ী সুন্দরবন বলে ডাকি। ভোট দিয়ে বাঙালি অনেক কিছুই করেছে। তবে শুধু ভোট দিলেই হবে না, সুন্দরবনের শুশ্রৃষা ও দেখভাল করতে হবে। কেননা সে (সুন্দরবন) আমাদের দেখভাল করে। আইলার সময় নিজে ক্ষতবিক্ষত হয়ে সে আমাদের রক্ষা করেছে। সুন্দরবনকে ভোট দেওয়ায় মনীষাকে অনেক ধন্যবাদ। আসুন সবাই সুন্দরবনের জন্য কাজ করি।’
আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে ইন্টারনেটে ক্লিক করে প্রথম ভোট দিয়ে এই প্রচার কার্যক্রম উদ্বোধন করেন মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান। এরপর ভোট দেন মনীষা কৈরালা। অতিথিদের মধ্যে এরপর একে একে ভোট দেন অ্যাডভোকেট প্রমোদ মানকিন, সংগীতশিল্পী মমতাজ বেগম, ভাষাসৈনিক আবদুল মতিন, শিল্পী হাশেম খান, তারামন বিবি বীরপ্রতীক, বিটিআরসির সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ প্রমুখ।
শান্ত-মারিয়াম ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে অতিথিদের হাতে ফুল, ক্রেস্ট ও রয়েল বেঙ্গল টাইগারের প্রতিকৃতি তুলে দেন এর চেয়ারম্যান ইমামুল কবীর শান্ত এবং ভাইস চেয়ারম্যান তাহমিন কবীর চৌধুরী মারিয়াম।
সুন্দরবনকে নিয়ে মমতাজের গানের মধ্য দিয়ে শেষ হয় অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের মিডিয়া পার্টনার ছিল বৈশাখী টিভি। তারা অনুষ্ঠানটির ধারণ করা অংশ প্রচার করে রাত সাড়ে ১২টায়।
ইন্টারনেটে সুন্দরবনকে ভোট দেওয়া যাবে www.new7wonders.com এই ওয়েবসাইটে। এ ছাড়া টেলিফোনে ভোট দিতে +৪১৭৭৩১২৪০৪১ নম্বরে ফোন করতে হবে। এরপর একটি বার্তা শোনা যাবে। পরে চাপতে হবে সুন্দরবনের সাংকেতিক নম্বর ৭৭২৪-এ।

প্রচারের অংশ হিসেবে চিত্রকর্ম ও স্থিরচিত্র প্রদর্শনী : ‘সুন্দরবনকে ভোট দিন’ প্রচারাভিযানের অংশ হিসেবে আয়োজন করা হয়েছে চিত্রকর্ম ও স্থিরচিত্র প্রদর্শনীর।
সকালে প্রধান অতিথি হিসেবে মনীষা কৈরালা হাজির হয়েছিলেন উত্তরায় শান্ত-মারিয়াম ফাউন্ডেশনের চিত্রকর্ম ও স্থিরচিত্র প্রদর্শনী উদ্বোধন করতে। সে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন নেপালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত অধ্যাপক নিমচন্দ্র ভৌমিক। শুভেচ্ছা বক্তব্য শেষে তিনি ফিতা কেটে প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন। তার পর নেপালের শিল্পী গনেশ চিত্রকর, কিরণ চিত্রকর ও দীর্গা চিত্রকরের তোলা ছবি এবং জাপান প্রবাসী মোস্তাফিজুল হকের চিত্রকর্ম ঘুরে দেখেন। সবার জন্য প্রদর্শনীটি খোলা থাকবে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। ২৫ জানুয়ারি প্রদর্শনীর শেষ দিন।

আওয়ামী লীগ উদ্বিগ্ন বিএনপি উৎফুল্ল

দ্য সমাপ্ত পৌর নির্বাচনে জয় পেয়ে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতা-কর্মীরা উৎফুল্ল। প্রত্যাশিত ফলাফল না পাওয়ায় আশাহত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিএনপি নেতারা বলছেন, পৌর নির্বাচনে জনগণ সরকারকে হলুদ কার্ড দেখিয়েছে। সামনে লাল কার্ড দেখানোর অপেক্ষায়।

আওয়ামী লীগ নেতারা এই ফলাফলকে দলের জন্য সতর্কসংকেত হিসেবেই দেখছেন। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, এই ফলাফলে ঘুরে দাঁড়াবে বিএনপি। ভবিষ্যতে ইউনিয়ন পরিষদ, সিটি করপোরেশন এমনকি জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এর প্রভাব পড়বে। উদ্বিগ্ন আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, পরাজয় থেকে শিক্ষা নিয়ে দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে হবে। রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, বরিশাল, ঢাকা, চট্টগ্রাম বিএনপিরও অন্তত দুটি পৌরসভা হাতছাড়া হয়েছে বলে নেতা-কর্মীরা মনে করছেন।
মেয়র পদে সিলেট বিভাগের ১৬টি পৌরসভার মধ্যে ৯টিতে বিএনপি এবং ছয়টিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। একটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জয়লাভ করেছেন।
বিভাগের ১৬ পৌরসভার মধ্যে সিলেটের দুটিতেই আওয়ামী লীগ, মৌলভীবাজারের পাঁচ পৌরসভার সবকটিতে বিএনপি, সুনামগঞ্জের চার পৌরসভার তিনটিতে আওয়ামী লীগ ও একটিতে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হবিগঞ্জ জেলার পাঁচ পৌরসভার তিনটিতে বিএনপি, একটিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী এবং একটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জয়লাভ করেছেন।
সিলেটে কানাইঘাট এবং জকিগঞ্জ পৌরসভায় নির্বাচন হয়। দুটিতেই আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। শেষ মুহূর্তে কানাইঘাট আওয়ামী লীগের কোন্দল মেটাতে উদ্যোগী হন দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ও জেলা সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার হোসেন শামীম। এ সময় থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি জমির উদ্দিন প্রধানকে দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়। ফলে দলীয় প্রার্থী লুৎফুর রহমানের বিজয় অনেকটা সহজ হয়ে যায়। এখানে বিএনপির প্রার্থী নির্বাচনে ভুল এবং একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী থাকার কারণে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চলে আসেন জামায়াতের প্রার্থী মো. ওলিউল্লাহ। কানাইঘাটে এবারই প্রথম নির্বাচন হলো।
জকিগঞ্জ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের আনোয়ার হোসেন সোনা উল্লা বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান মেয়র ইকবাল আহমদ। মাত্র ২১৫ ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। এখানে বিএনপির মূল প্রার্থী বদরুল হক বাদল পেয়েছেন সাকল্যে ৩৫১ ভোট।
বিএনপির তৃণমূল নেতাদের মতে, প্রার্থী নির্বাচনে ভুল না করলে এ পৌরসভায় বিএনপি মেয়র পদটি লাভ করত। থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সদস্য অ্যাডভোকেট কাওসার রশীদ বাহার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনে দল ব্যর্থ হওয়ায় এই ভরাডুবি হয়েছে। বর্তমান মেয়র ইকবাল আহমদ বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েও সামান্য ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন।’ দলীয় প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা না থাকা এবং ভুল সিদ্ধান্তের খেসারত হিসেবে মেয়র পদ হাতছাড়া হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
সুনামগঞ্জে পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির অবস্থা ছিল নাজুক। জেলার চারটি পৌরসভার মধ্যে একমাত্র জগন্নাথপুর পৌরসভায় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। কারণ এখানে সাত প্রার্থীর মধ্যে ছয়জনই ছিলেন আওয়ামী লীগের। দলীয় কোন্দলের কারণে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী পরাজিত হন। ছাতক ও সুনামগঞ্জ সদরে কোনো প্রার্থীই দিতে পারেনি বিএনপি। ছাতকে আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছে। অন্যদিকে দিরাই পৌরসভায় প্রার্থী দিলেও গ্র“পিংয়ের কারণে জয়লাভ সম্ভব হয়নি।
মৌলভীবাজার জেলায় যে পাঁচ পৌরসভায় নির্বাচন হয়েছে তার চারটিতে আগেই বিএনপি সমর্থিত মেয়র ছিলেন। এবার পাঁচটিতেই বিএনপির প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। তৃণমূল নেতাদের মতামতকে মূল্যায়ন না করে কেন্দ্র থেকে প্রার্থী চাপিয়ে দেওয়ায় এই ভরাডুবি হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মনে করেন। প্রায় প্রতিটি পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। কমলগঞ্জ পৌরসভায় দলের প্রার্থী চতুর্থ স্থানে রয়েছেন। এই পরাজয়ের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে জেলার সাবেক কমিটির সহ-প্রচার সম্পাদক নজরুল ইসলাম নাজমুল বলেন, ‘তৃণমূল পর্যায় থেকে যেসব প্রার্থী নির্বাচন করা হয়েছিল, তাঁর একজনকেও কেন্দ্র মনোনয়ন দেয়নি। ভুল প্রার্থী নির্বাচনের কারণে এমন দুরবস্থা হয়েছে।’ দলের ভরাডুবির জন্য অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি।
হবিগঞ্জ জেলার পাঁচ পৌরসভার মধ্যে তিনটিতেই বিএনপির প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন। পরপর দুবার মেয়র থাকার সুবাদে একমাত্র নবীগঞ্জ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। তাও মাত্র ১১২ ভোটের ব্যবধানে। মাধবপুর পৌরসভায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত বর্তমান মেয়রকে পরাজিত করেছেন একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থী। শায়েস্তাগঞ্জ ও চুনারুঘাটে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় ভোট ভাগাভাগির সুবাদে বিএনপি প্রার্থীদের জয়ের পথ সুগম হয়।
সদর পৌরসভায় আওয়ামী লীগে কোন্দল না থাকলেও নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে এসে প্রার্থী নির্বাচন এবং বিএনপি আমলের উন্নয়নের বিষয়টি ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। ফলে প্রায় দ্বিগুণ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বর্তমান মেয়র জি কে গউছ। স্থগিত একটি কেন্দ্র ছাড়াই বর্তমান মেয়র গউছ পেয়েছেন ১৬ হাজার ৫৬০ ভোট। আওয়ামী লীগ প্রার্থী শরীফ উল্লাহ পেয়েছেন ৮ হাজার ৬৩৪ ভোট।
সিলেট বিভাগে পৌর নির্বাচনে নিজ দলের পিছিয়ে পড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, ‘সিলেট অঞ্চলের নির্বাচনে কালো টাকার ছড়াছড়ি ছিল। টাকার কাছে অনেক প্রার্থীই দাঁড়াতে পারেননি।’ তবে নিজেদেরও ব্যর্থতা রয়েছে বলে স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমরা মূল্যায়ন করছি।’

ভারতে মন্ত্রিসভায় চমকহীন রদবদল

ভারতের মন্ত্রিসভায় বড় ধরনের রদবদল হয়েছে। গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বেশ কয়েকটি দপ্তর পুনর্বণ্টন করেছেন। তিনজন প্রতিমন্ত্রীকে মন্ত্রী হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছেন নতুন তিনজন।

তবে পুরনো মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েননি কেউ। গতকালই নয়াদিলি্লর রাষ্ট্রপতি ভবনে রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাতিল নতুন দায়িত্ব পাওয়া মন্ত্রীদের শপথ পড়ান।
কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চা (ইউপিএ) সরকারের মন্ত্রিপরিষদে রদবদল হবে_কয়েক দিন ধরেই এমন কথা শোনা যাচ্ছিল। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ও মন্ত্রিপরিষদের কয়েকজনের পদত্যাগের ফলে এ রদবদল অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল। ২০০৯ সালের মে মাসে দায়িত্ব নেওয়ার পর বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভায় এটিই প্রথম রদবদল। যদিও এতে অনেক মন্ত্রীর দায়িত্ব পরিবর্তন হলেও তেমন কোনো চমক ছিল না। তবে প্রত্যাশিতভাবেই একাধিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর দায়িত্ব কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এবার স্বল্প পরিসরে রদবদল করা হলো। আগামী মার্চে বাজেট অধিবেশনের পর মন্ত্রিসভায় বড় ধরনের রদবদল করা হবে।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুসারে সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রফুল প্যাটেল, শ্রীপ্রকাশ জয়সাল ও সালমান খুরশিদ মন্ত্রী হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। এর মধ্যে প্যাটেল ভারী শিল্প ও সরকারি উদ্যোগ, জয়সাল কয়লা এবং খুরশিদ পানিসম্পদবিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। মন্ত্রিসভায় নতুন যুক্ত হওয়া বেনি প্রসাদ বার্মা ইস্পাত মন্ত্রণালয়ের (পূর্ণ দায়িত্ব), কে সি বেনুগোপাল বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের এবং অশ্বিনী কুমার পরিকল্পনা ও পার্লামেন্টবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। এ ছাড়া সাবেক প্রতিমন্ত্রী অজয় মাকেনকে যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং কে ভি থমাসকে ভোক্তা, খাদ্য ও সরকারি বণ্টনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ দায়িত্বে প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে।
যাঁদের দায়িত্ব কমল
শারদ পাওয়ারকে ভোক্তা, খাদ্য ও সরকারি বণ্টনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তিনি কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পবিষয়ক মন্ত্রী থাকবেন। কপিল সিবালকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে শুধু টেলিযোগাযোগ ও মানবসম্পদ উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে রাখা হয়েছে। বি কে হাণ্ডিককে খনিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে শুধু উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী করা হয়েছে। কুমারী শেলজাকে পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে গৃহায়ণ ও শহুরে দারিদ্র্য নিরসনবিষয়ক মন্ত্রী করা হয়েছে। এ ছাড়া পবন কুমার বানসালকে পানিসম্পদবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে অব্যাহতি দিয়ে কেবল পার্লামেন্টারি কার্যক্রমবিষয়ক মন্ত্রী রাখা হয়েছে।
দায়িত্ব পুনর্বণ্টন
শহর উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে জয়পাল রেড্ডিকে পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাসবিষয়ক, ইস্পাত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে বীরভদ্র সিংকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগবিষয়ক, ভারী শিল্প ও সরকারি উদ্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে বিলাসরাও দেশমুখকে গ্রামীণ উন্নয়নবিষয়ক এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে এম এস গিলকে পরিসংখ্যান ও কর্মসূচি বাস্তবায়নবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সি পি যোশীকে গ্রামীণ উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে সড়ক পরিবহন ও জনপথবিষয়ক মন্ত্রী করা হয়েছে। এ ছাড়া সুবোধ কান্ত সাহাকে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া বেশ কয়েকজন প্রতিমন্ত্রীরও দায়িত্ব পুনর্বণ্টন করা হয় গতকাল। সূত্র : দ্য হিন্দু, টাইমস অব ইন্ডিয়া।

সুইস ব্যাংকে দুই হাজার হিসাবধারীর গোপন তথ্য উইকিলিকসের হাতে

সুইজারল্যান্ডের সাবেক এক ব্যাংকার বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের দুই হাজার অ্যাকউন্টের গোপন তথ্য উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের কাছে হস্তান্তর করেছেন। ওই সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কর ফাঁকি দিতে সুইস ব্যাংকগুলোতে বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত রেখেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অ্যাসাঞ্জ বলেছেন, তথ্যগুলো যাচাই-বাচাই করে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে প্রকাশ করা হবে। রুডলফ এলমার নামের ওই ব্যাংকার লন্ডনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গত সোমবার দুটি সিডি করে এ সব তথ্য হস্তান্তর করেন। তিনি জানান, তথ্যগুলো ১৯৯০ থেকে ২০০৯ সালের। এতে বিভিন্ন দেশের বড় বড় ব্যবসায়ী, রাজনীতিক ও খ্যাতনামা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য কী পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন, তা বেরিয়ে আসবে। অ্যাকাউন্টধারীদের তালিকায় বেশ কিছু তারকার নামও রয়েছে। তবে অ্যাকাউন্টধারীদের সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানাননি এলমার।
তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশের প্রায় ৪০ জন রাজনীতিকসহ, খ্যাতনামা ব্যবসায়ী, বহুজাতিক কম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে প্রায় দুই হাজার অ্যাকাউন্টধারীর গোপন তথ্য রয়েছে সিডি দুটিতে।
লন্ডনে সংবাদ সম্মেলনে এলমারের পাশেই ছিলেন অ্যাসাঞ্জ। তিনি বলেন, 'আমি এলমারকে সমর্থন দিতে এখানে উপস্থিত হয়েছি। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তথ্যগুলো প্রকাশ করা হবে। কূটনীতিক তথ্যের মতোই এ সব তথ্যকে সমান গুরুত্ব দেওয়া হবে।' অ্যাসাঞ্জ ব্রিটেনে কয়েক দিন আটক থাকার পর এখন জামিনে রয়েছেন। যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগের বিচার করতে তাঁকে ব্রিটেন থেকে সুইডেনে প্রত্যর্পণের চেষ্টা চলছে। আগামী ৭ থেকে ৮ ফ্রেব্রুয়ারি এ ব্যাপারে লন্ডনের আদালতে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকিং ব্যবস্থা সম্পর্কে এলমার বলেন, 'আমি সেখানে ছিলাম। চাকরি করেছি। আমি জানি, আজকাল ব্যবসা কিভাবে চলে। আমি এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। আমি জানি, এ ব্যবস্থা কিভাবে কাজ করে। এটা আমাদের সমাজের ক্ষতি করছে। একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক রয়েছে যারা বিশ্বের অবৈধ সব অর্থ গোপন অ্যাকাউন্টে রাখার ব্যবস্থা করে। একজন ব্যাংকার হিসেবে যেকোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে আমার দাঁড়ানোর অধিকার রয়েছে।'
এলমার সুইজারল্যান্ডের বেসরকারি জুলিয়াস বায়ের ব্যাংকের কেইম্যান দ্বীপপুঞ্জ শাখায় চিফ অপারেটিং অফিসার হিসেবে আট বছর কর্মরত ছিলেন। ২০০২ সালে তাঁকে বহিষ্কার করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। তিনি ২০০৭ সালেও উইকিলিকসকে তথ্য সরবরাহ করেন। এ কারণে সুইস ব্যাংকের গোপনীয়তা ভঙ্গের অভিযোগে এলমার বিচারের মুখোমুখি রয়েছেন। আজ বুধবার জুরিখের একটি আদালতে এ সম্পর্কিত শুনানিতে তাঁকে হাজির হতে হবে। সূত্র : এএফপি।

তাহলে মাশরাফি ছাড়াই...

ক্রীড়া প্রতিবেদক : নতুন পোশাকে ঝলমলে মুখগুলোর পাশে বড়ই বিবর্ণ আর মলিন দেখাচ্ছিল পুরনো পোশাকের মাশরাফি বিন মুর্তজাকে। বিশ্বকাপ খেলার জন্য শেষবিন্দু দিয়ে লড়বেন জানিয়েছিলেন। কিন্তু সেই লড়াইয়ে ক্রমেই একা হয়ে পড়েছেন বারবার ইনজুরি দুর্ভাগ্যের শিকার এ ফাস্ট বোলার।

আর সে একাকিত্বের খণ্ড চিত্রগুলো কাল দুপুরের অনুশীলনে কখনো কখনো আলোকচিত্রীদের স্থিরচিত্রও হলো। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের স্পনসর বেক্সিমকোর পক্ষ থেকে ভিডিওচিত্র ধারণ করার সময়ও ক্যামেরা তাঁকে খুঁজল না। স্পনসরের লোগো সংবলিত নীল রঙা নতুন প্র্যাকটিস জার্সি গায়ে চড়িয়ে সাকিব-তামিম-ইমরুল-রকিবুলরা যখন ক্যামেরার সামনে দাঁড়াচ্ছেন, তখন মিরপুর একাডেমীর মাঠে পুরনো পোশাকেই নেটে ব্যাট করতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন মাশরাফি!
তারও আগে হাঁটুর চোটের পর এই প্রথম বল হাতে তুলে নিয়েছিলেন। তিন-চার পা দৌড়ে নেটে প্রায় চার ওভার বোলিংও করেছেন। কিন্তু সকালেই পত্রপত্রিকা দেখে তাঁর জেনে যাওয়ার কথা যে নির্বাচকদের গড়া ১৫ জনের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে তিনি নেই। এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ফিজিও মাইকেল হেনরির দেওয়া তিন পাতার একটি রিপোর্টেই আস্থা রেখেছেন নির্বাচকরা। যাতে ৭ ফেব্র“য়ারি নাগাদ মাশরাফি পুরোদমে বোলিং শুরু করতে পারবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। তবুও আশার সলতে জ্বলছিল। কিন্তু সেটিও নিভতে সময় লাগেনি। বিসিবির টেকনিক্যাল কমিটিও যে নির্বাচকদের দেখানো যুক্তির সঙ্গে একমত হয়ে গেছে বলে খবর!
যে কোচ দুই দিন আগে মাশরাফির জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষার পক্ষপাতী ছিলেন, সেই জেমি সিডন্সও কাল সমর্থনের হাত তুলে নিলেন, ‘আমরা ওকে ধরে রাখতে চাই না। তবে নির্বাচকরা যদি এখন তাকে দলে না-ও নেয়, তবুও আমরা মাশরাফিকে রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে দলভুক্ত করতে পারি যদি সে বিশ্বকাপ শুরুর আগে ফিট হয়ে যায়।’ কিন্তু সে সময় ইনজুরির কারণে অন্য কারো খেলার সম্ভাবনা নাকচ হয়ে গেলেই না কেবল রিপ্লেসমেন্ট নেওয়া যাবে। তাই এখন মাশরাফিকে দলে রেখে ফিট না হলে তাঁর রিপ্লেসমেন্ট চাওয়াই কি বেশি সুবিধাজনক ছিল না?
প্রশ্নটা আরো বেশি করে উঠছে কারণ কোচ-নির্বাচক থেকে শুরু করে নির্বিশেষে সবাই মানছেন যে বিশ্বকাপে তাঁর মতো একজন অভিজ্ঞ পারফরমারকে ভীষণ প্রয়োজন বাংলাদেশের। কিন্তু কার্যত এর কোনো প্রমাণ নেই। ওদিকে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচকদের দেখুন। কাল সবে ঊরুতে অস্ত্রোপচার হয়েছে মাইকেল হাসির। বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডের ম্যাচগুলোতে তাঁর খেলা নিয়েও আছে ঘোরতর সংশয়। অথচ নির্বাচকরা তাঁর জন্য যথাসম্ভব অপেক্ষার সিদ্ধান্তই নিয়ে রেখেছেন। এটাও জানিয়ে রেখেছেন যে শেষপর্যন্ত হাসির পুরো সুস্থতা নিশ্চিত না হলে তাঁর জায়গায় দলভুক্ত হবেন শন মার্শ। হাতের কাছে এমন নজির থাকা সত্ত্বেও অন্য পথে হেঁটেছেন বাংলাদেশের নির্বাচকরা।
সব মিলিয়ে সময়টাকে মাশরাফির জন্য ‘আনফরচুনেট টাইমিং’ উল্লেখ করে সিডন্স ম্যাচ প্র্যাকটিসের দোহাইও দিয়েছেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে দ্বৈতনীতির অভিযোগও তো উঠতে পারে। কয়েক মাস পেছনে ফিরে গিয়ে দেখা যাচ্ছে যে কবজির অস্ত্রোপচারের পর কোনো ম্যাচ প্র্যাকটিস ছাড়াই সরাসরি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলতে নেমে গিয়েছিলেন তামিম ইকবাল। কয়েক দিন আগেও মাশরাফি প্রসঙ্গে সে উদাহরণই দিয়েছিলেন প্রধান নির্বাচক রফিকুল আলম, ‘মাশরাফি এমন একজন ক্রিকেটার, যাকে কিনা সরাসরিই মাঠে নামার সুযোগ দেওয়া যায়। যেমনটা জিম্বাবুয়ে সিরিজে দেওয়া হয়েছিল তামিমকে।’ এখন দেখা যাচ্ছে দল ঘোষণার সময় যতই ঘনিয়ে এসেছে, ততই নিজেদের অবস্থান থেকে সরে এসেছেন নির্বাচকরা। তাঁদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখন বোর্ডও।
এই যখন অবস্থা, তখনো মাশরাফি শুকনো মুখে বলছিলেন, ‘কাল (আজ) বোলিংয়ে জোর আরেকটু বাড়াব। এ আÍবিশ্বাস আমার আছে যে বিশ্বকাপের আগেই ম্যাচ খেলার মতো ফিট হয়ে যাব।’ কেউ পাশে নেই, তবুও ঘোষণা। যেন একাই খাড়া পাহাড় পেরোনোর সংকল্প নিয়ে দাঁড়ানো এক নিঃসঙ্গ শেরপা!

বাংলাদেশে বিনিয়োগ করুন, সব ধরনের সুবিধা দেবে সরকার

সংযুক্ত আরব আমিরাতের ব্যবসায়ীদের প্রতি বাংলাদেশে গ্যাস অনুসন্ধান, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও অবকাঠামো নির্মাণের মতো সম্ভাবনাময় খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি বাংলাদেশের গ্যাস উত্তোলনে আবুধাবির সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি। আবুধাবির ক্রাউন প্রিন্স শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান এ বিষয়ে সহায়তার আশ্বাসও দিয়েছেন।

আমিরাতের ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে আসুন এবং বিনিয়োগ করুন। সরকার আপনাদের সব ধরনের সুবিধা দেবে।’ গতকাল মঙ্গলবার আবুধাবির হোটেল বিচ রোটানায় বাংলাদেশ ও আরব আমিরাতের ব্যবসায়ীদের যৌথ অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) ও ফেডারেশন অব ইউএই চেম্বার অব কমারস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ইউএইএফসিসিআই) এই যৌথ বৈঠকের আয়োজন করে।
বৈঠকে দুদেশের ব্যবসায়ী সংগঠনের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এফবিসিসিআই সভাপতি এ কে আজাদ এবং ইউএইএফসিসিআইয়ের সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল্লাহ সুলতান সমঝোতা স্মারকে সই করেন। এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহসভাপতি জসিম উদ্দিন, বিজিএমইএ সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদীসহ বাংলাদেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের সদস্যরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য এরই মধ্যে কর অবকাশসহ বিভিন্ন সুবিধা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। এখানে রয়েছে বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার। বিনিয়োগের মুনাফার পুরো অর্থ দেশে ফেরত নিতে পারা, কর অবকাশ, আমদানি খাতে কম শুল্ক, সস্তা শ্রম প্রভৃতি সুবিধার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ওষুধ, সিরামিক, অবকাঠামো, হালকা প্রকৌশল, গার্মেন্ট প্রভৃতি খাতে বিনিয়োগের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষি, শিক্ষা, তেল-গ্যাস খাতে বিপুল বিনিয়োগের সম্ভাবনাও তুলে
ধরেন তিনি।
বাংলাদেশ ও আরব আমিরাতের দীর্ঘদিনের সম্পর্কের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু সরকারের সময়ই দুদেশের মধ্যে সম্পর্কের সূচনা হয়। তিনি বলেন, ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশ ‘আঞ্চলিক হাব’ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে দরকার এর অবকাঠামো উন্নয়ন। এখানে বিশ্বমানের একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্থাপনেরও প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। আমরা এ ধরনের একটি সর্বাধুনিক বিমানবন্দর স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছি।’
এফবিসিসিআই সভাপতি এ কে আজাদ আবুধাবির ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারাবাহিকতায় এগিয়ে যাচ্ছে। এর আর্থ-সামাজিক অবস্থার ক্রমোন্নতি এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থাভাজন হওয়ায় বিনিয়োগের নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সরকারি নীতিগত সহায়তার পাশাপাশি রয়েছে নানামুখী প্রণোদনা, যা বিদেশি বিনিয়োগের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন আরব আমিরাতের উইমেন চেম্বার সভাপতি ফাতেমা ওবায়েদ আল জাবের।
তেল-গ্যাস উত্তোলনে সহায়তার আশ্বাস : আবুধাবি সরকারের তেল-গ্যাস উত্তোলন সংস্থা বাংলাদেশে তেল-গ্যাস উত্তোলনে সহায়তা দেবে। এ কাজে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হবে বলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে আশান্বিত করেছেন আবুধাবির ক্রাউন প্রিন্স শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠককালে তিনি এ আশ্বাস দেন।
তেল-গ্যাস উত্তোলনে আমিরাতের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে পারে আবুধাবি সরকার। এ খাতে বিনিয়োগ করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবের পর শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান বলেন, সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে এ ব্যাপারে দায়িত্ব দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ থেকে আরো কর্মী নেওয়ার বিষয়েও ক্রাউন প্রিন্সের সঙ্গে কথা বলেন শেখ হাসিনা। এ ছাড়া সে দেশের শ্রমমন্ত্রীর সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি জানান, অভিবাসী কর্মীর বিষয়ে আবুধাবি সরকার নীতিমালা শিথিল করেছে। আইনেও ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে, যা অভিবাসী কর্মী ভাইদের জন্য সহায়ক হবে।
বান কি মুনের সঙ্গে সাক্ষাৎ : বাংলাদেশ থেকে শান্তিরক্ষী মিশনে আরো সৈন্য নিতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সকালে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের সঙ্গে হোটেল কক্ষে এক বৈঠকে তিনি এ আহ্বান জানান। বান কি মুন সহস্রাব্ধ উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশের অগ্রগতির ধারাবাহিকতার প্রশংসা করেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শান্তিরক্ষার কাজে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বাড়ানোর প্রস্তাব দিলে বান কি মুন তা সমর্থন জানান।
দুপুরে শেখ জায়েদ আল নাহিয়ানের সমাধিস্থল পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী।