Thursday, January 20, 2011

ভরা মৌসুমেও লবণের অর্ধেক মাঠ খালি

বণ উৎপাদনের মৌসুম শুরুর পর দেড় মাস পেরিয়ে গেছে। তবে লবণচাষিদের বেশির ভাগই এখনো হাত গুটিয়ে রয়েছে। অথচ প্রতিবছরই এই মৌসুমটা চাষিদের চরম ব্যস্ততায় কাটে। এ বছর এই ভিন্ন চিত্রের কারণ লবণের অতি নিম্নদাম।

চলতি মৌসুমে এ পর্যন্ত শুধ কুতুবদিয়া দ্বীপে দুই হাজার ২৪০ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদিত হয়েছে। অথচ গত বছর এ সময় পর্যন্ত লবণ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প সংস্থা (বিসিক) ও চাষিদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, এ বছর মাঠপর্যায়ে প্রতি মণ কালো লবণ ৬০ টাকায় এবং সাদা লবণ ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ চাষিদের কালো লবণের ক্ষেত্রে মণপ্রতি চাষিদের ৯০ থেকে ১০০ টাকা এবং সাদা লবণের ক্ষেত্রে ১২০ থেকে ১২৫ টাকা খরচ পড়ে। লবণের দাম উৎপাদন খরচের চেয়েও অস্বাভাবিক কম হওয়ায় উৎপাদনকারীরা মাঠে নামছে না। তারা জানায়, জমি লাগিয়তসহ অন্য উৎপাদন খরচ মিটিয়ে উৎপাদনকারীরা কিছুতেই এবার পুষিয়ে উঠতে পারবে না।
গত মৌসুমে উৎপাদিত লবণ কিনে যারা মাঠে মজুদ করেছিল, এবার তাদের বিপুল অঙ্কের টাকা গচ্চা দিতে হচ্ছে। উৎপাদন খরচের তুলনায় মণপ্রতি লবণের বাজারে দাম অন্তত ৪০ টাকা কম। বাংলাদেশ লবণ উৎপাদনকারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক কায়সার ইদ্রিস কালের কণ্ঠকে বলেন, 'প্রতিবছরের ডিসেম্বরে কঙ্বাজারের উপকূলীয় মাঠে লবণের উৎপাদন শুরু হয়। এবার উৎপাদিত লবণ নিয়ে অনিশ্চয়তার আশঙ্কায় চাষিরা মাঠে নামছে না। এবার দাম সর্বনিম্ন হওয়ায় চাষিরা হতাশ।'
কঙ্বাজারে বিসিকের লবণ প্রকল্প থেকে পাওয়া তথ্যমতে, কঙ্বাজারের কুতুবদিয়া দ্বীপ, মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, কঙ্বাজার সদর, টেকনাফ ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার কিয়দংশসহ প্রায় ৭০ হাজার একর ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমি লবণ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। বিসিকের কঙ্বাজারে বিসিকের লবণ প্রকল্পে ভারপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) আবদুল বাসেত কালের কণ্ঠকে জানান, চলতি মৌসুমে এ পর্যন্ত শুধ কুতুবদিয়া দ্বীপে দুই হাজার ২৪০ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদিত হয়েছে। কুতুবদিয়া দ্বীপ ছাড়া জেলার অন্যান্য স্থানে এখন পর্যন্ত উৎপাদন শুরুই হয়নি। অথচ গত বছর এ সময় পর্যন্ত লবণ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন। গত মৌসুমে ৭০ হাজার একর জমিতে সরকারের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন লবণ। আর সে সময় উৎপাদন ১৭ লাখ মেট্রিক টনে পেঁৗছেছিল। বিসিকের তথ্যানুযায়ী, দেশে বার্ষিক ১৩ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন লবণের চাহিদা রয়েছে। এবার বিসিক ১৩ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন লবণের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু লবণের নায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত না হওয়ায় উৎপাদনকারীরা মাঠে না নামায় এবার অর্ধেকেরও বেশি পরিমাণ জমি অব্যবহৃত থেকে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তা ছাড়া আগের মৌসুমের চাহিদার চেয়েও অতিরিক্ত চার লাখ মেট্রিক টন লবণ মাঠে উৎপাদনকারীদের কাছে মজুদ রয়েছে বলে লবণ উৎপাদনকারী সমিতির কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছ্।ে কঙ্বাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুল শুক্কুর বলেন, 'ভারত থেকে বৈধ-অবৈধ পন্থায় বিপুল পরিমাণ লবণ দেশের বাজারে ঢুকে পড়ছে বলেই দেশীয় লবণ শিল্পে এমন বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।' তিনি উল্লেখ করেন, কেবল শিল্প-কারখানায় ব্যবহারের অজুহাতেই ভারতে উৎপাদিত লবণ দেদার ঢুকে পড়ছে দেশীয় বাজারে। তিনি বলেন, 'লবণের উৎপাদন, পরিবহন ও মজুদ থেকে শুরু করে এ শিল্পে কমপক্ষে অর্ধকোটি মানুষের ভাগ্য জড়িত।' এদিকে কঙ্বাজারের জেলা প্রশাসক মো. গিয়াস উদ্দিন আহমদ জানান, লবণ শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তিনি জানান, সরকার লবণ শিল্পের সমস্যা সমাধানের জন্য একটি নীতিমালা প্রণয়ন করতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে মাঠপর্যায় থেকে বিসিক বা টিসিবির মাধ্যমে চাষিদের উৎপাদিত লবণ ক্রয় এবং আমদানির ক্ষেত্রে উচ্চ হারে করারোপসহ বেশ কিছু সুপারিশও করা হয়েছে। নীতিমালাগুলো বাস্তবায়নের শুরু হলেই সমস্যা কিছুটা কাটিয়ে ওঠা যাবে বলে তিনি মনে করেন।
অপরদিকে রাজধানী ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তৃণমূলের উৎপাদনকারীদের রক্ষার জন্য অবিলম্বে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি সম্পূর্ণভাবে বন্ধের দাবি জানানো হয় গত শনিবার। কঙ্বাজার লবণ চাষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম ও বাংলাদেশ লবণ চাষিকল্যাণ পরিষদের সভাপতি মোস্তফা কামাল চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'আগের মৌসুমের উৎপাদিত কমপক্ষে আট লাখ মেট্রিক টন লবণ মাঠে মজুদ রয়েছে। চাষিরা লবণ বিক্রি করতে পারছে না। তারা সরকারের কাছে দাবি জানায়, নায্যমূল্যে যাতে উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে সরকারিভাবে লবণ কেনার ব্যবস্থা নেওয়া হয়।' সেই সঙ্গে মাঠপর্যায়ের উৎপাদন এবং বিপণনের ক্ষেত্রে সরকারিভাবে তদারকির দাবিও জানান তাঁরা।

No comments:

Post a Comment