Thursday, January 20, 2011

তাহলে মাশরাফি ছাড়াই...

ক্রীড়া প্রতিবেদক : নতুন পোশাকে ঝলমলে মুখগুলোর পাশে বড়ই বিবর্ণ আর মলিন দেখাচ্ছিল পুরনো পোশাকের মাশরাফি বিন মুর্তজাকে। বিশ্বকাপ খেলার জন্য শেষবিন্দু দিয়ে লড়বেন জানিয়েছিলেন। কিন্তু সেই লড়াইয়ে ক্রমেই একা হয়ে পড়েছেন বারবার ইনজুরি দুর্ভাগ্যের শিকার এ ফাস্ট বোলার।

আর সে একাকিত্বের খণ্ড চিত্রগুলো কাল দুপুরের অনুশীলনে কখনো কখনো আলোকচিত্রীদের স্থিরচিত্রও হলো। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের স্পনসর বেক্সিমকোর পক্ষ থেকে ভিডিওচিত্র ধারণ করার সময়ও ক্যামেরা তাঁকে খুঁজল না। স্পনসরের লোগো সংবলিত নীল রঙা নতুন প্র্যাকটিস জার্সি গায়ে চড়িয়ে সাকিব-তামিম-ইমরুল-রকিবুলরা যখন ক্যামেরার সামনে দাঁড়াচ্ছেন, তখন মিরপুর একাডেমীর মাঠে পুরনো পোশাকেই নেটে ব্যাট করতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন মাশরাফি!
তারও আগে হাঁটুর চোটের পর এই প্রথম বল হাতে তুলে নিয়েছিলেন। তিন-চার পা দৌড়ে নেটে প্রায় চার ওভার বোলিংও করেছেন। কিন্তু সকালেই পত্রপত্রিকা দেখে তাঁর জেনে যাওয়ার কথা যে নির্বাচকদের গড়া ১৫ জনের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে তিনি নেই। এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ফিজিও মাইকেল হেনরির দেওয়া তিন পাতার একটি রিপোর্টেই আস্থা রেখেছেন নির্বাচকরা। যাতে ৭ ফেব্র“য়ারি নাগাদ মাশরাফি পুরোদমে বোলিং শুরু করতে পারবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। তবুও আশার সলতে জ্বলছিল। কিন্তু সেটিও নিভতে সময় লাগেনি। বিসিবির টেকনিক্যাল কমিটিও যে নির্বাচকদের দেখানো যুক্তির সঙ্গে একমত হয়ে গেছে বলে খবর!
যে কোচ দুই দিন আগে মাশরাফির জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষার পক্ষপাতী ছিলেন, সেই জেমি সিডন্সও কাল সমর্থনের হাত তুলে নিলেন, ‘আমরা ওকে ধরে রাখতে চাই না। তবে নির্বাচকরা যদি এখন তাকে দলে না-ও নেয়, তবুও আমরা মাশরাফিকে রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে দলভুক্ত করতে পারি যদি সে বিশ্বকাপ শুরুর আগে ফিট হয়ে যায়।’ কিন্তু সে সময় ইনজুরির কারণে অন্য কারো খেলার সম্ভাবনা নাকচ হয়ে গেলেই না কেবল রিপ্লেসমেন্ট নেওয়া যাবে। তাই এখন মাশরাফিকে দলে রেখে ফিট না হলে তাঁর রিপ্লেসমেন্ট চাওয়াই কি বেশি সুবিধাজনক ছিল না?
প্রশ্নটা আরো বেশি করে উঠছে কারণ কোচ-নির্বাচক থেকে শুরু করে নির্বিশেষে সবাই মানছেন যে বিশ্বকাপে তাঁর মতো একজন অভিজ্ঞ পারফরমারকে ভীষণ প্রয়োজন বাংলাদেশের। কিন্তু কার্যত এর কোনো প্রমাণ নেই। ওদিকে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচকদের দেখুন। কাল সবে ঊরুতে অস্ত্রোপচার হয়েছে মাইকেল হাসির। বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডের ম্যাচগুলোতে তাঁর খেলা নিয়েও আছে ঘোরতর সংশয়। অথচ নির্বাচকরা তাঁর জন্য যথাসম্ভব অপেক্ষার সিদ্ধান্তই নিয়ে রেখেছেন। এটাও জানিয়ে রেখেছেন যে শেষপর্যন্ত হাসির পুরো সুস্থতা নিশ্চিত না হলে তাঁর জায়গায় দলভুক্ত হবেন শন মার্শ। হাতের কাছে এমন নজির থাকা সত্ত্বেও অন্য পথে হেঁটেছেন বাংলাদেশের নির্বাচকরা।
সব মিলিয়ে সময়টাকে মাশরাফির জন্য ‘আনফরচুনেট টাইমিং’ উল্লেখ করে সিডন্স ম্যাচ প্র্যাকটিসের দোহাইও দিয়েছেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে দ্বৈতনীতির অভিযোগও তো উঠতে পারে। কয়েক মাস পেছনে ফিরে গিয়ে দেখা যাচ্ছে যে কবজির অস্ত্রোপচারের পর কোনো ম্যাচ প্র্যাকটিস ছাড়াই সরাসরি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলতে নেমে গিয়েছিলেন তামিম ইকবাল। কয়েক দিন আগেও মাশরাফি প্রসঙ্গে সে উদাহরণই দিয়েছিলেন প্রধান নির্বাচক রফিকুল আলম, ‘মাশরাফি এমন একজন ক্রিকেটার, যাকে কিনা সরাসরিই মাঠে নামার সুযোগ দেওয়া যায়। যেমনটা জিম্বাবুয়ে সিরিজে দেওয়া হয়েছিল তামিমকে।’ এখন দেখা যাচ্ছে দল ঘোষণার সময় যতই ঘনিয়ে এসেছে, ততই নিজেদের অবস্থান থেকে সরে এসেছেন নির্বাচকরা। তাঁদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখন বোর্ডও।
এই যখন অবস্থা, তখনো মাশরাফি শুকনো মুখে বলছিলেন, ‘কাল (আজ) বোলিংয়ে জোর আরেকটু বাড়াব। এ আÍবিশ্বাস আমার আছে যে বিশ্বকাপের আগেই ম্যাচ খেলার মতো ফিট হয়ে যাব।’ কেউ পাশে নেই, তবুও ঘোষণা। যেন একাই খাড়া পাহাড় পেরোনোর সংকল্প নিয়ে দাঁড়ানো এক নিঃসঙ্গ শেরপা!

No comments:

Post a Comment