Friday, June 01, 2012

চকরিয়ায় চেয়ারকোচ-হাইয়েস মুখোমুখি সংঘর্ষে একই পরিবারের ছয়জনসহ নিহত-৭ ॥ আহত-৫

কক্সবাজার-চট্টগাম মহাসড়কের চকরিয়ায় যাত্রীবাহি শ্যামলী চেয়ারকোচ ও হাইয়েস মুখোমুখি সংঘর্ষে চালকসহ একই পরিবারের ৭জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে চালকসহ তাদেরই ৪ স্বজন।

নিহত ও আহতরা একই পরিবারের সদস্য। গতকাল (১জুন) শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার মালুমঘাট ছগিরশাহ্ কাটা দরগাহ গেট সংলগ্ন টার্নিং পয়েন্টে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে।
সরেজমিন ও আত্মীয় স্বজন সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার ভোরে ফজরের নামাজ শেষে চট্টগ্রাম ফেনীর উদ্দেশ্যে এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে রওয়ানা দিচ্ছিল রিজার্ভ হাইয়েস (মাইক্রোবাস) যোগে। যাত্রাপথে মালুমঘাট ছগিরশাহ্কাটা গেট সংলগ্ন টার্নিং পয়েন্টে পৌঁছলে কক্সবাজার অভিমূখী শ্যামলী পরিবহন (ঢাকা মেট্রো-ব ১৪-৪৭৯৩) দ্রুতগামী চেয়ারকোচটি বেপরোয়াভাবে উল্লেখিত টার্নিং পয়েন্ট অতিক্রম করলে হাইয়েস (চট্ট মেট্রো-চ ১১-৪৮৩৭)’র সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে পতিত হয়ে দুমড়ে-মুছড়ে যায়। হাইওয়ে পুলিশের আইসি নিজাম উদ্দিন ও এস.আই খোরশেদ জানান, সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলে প্রাণ হারায় হাইয়েস যাত্রী ২জন, মালুমঘাট মেমোরিয়াল খৃষ্টান হাসপাতালে ৫জন। নিহতরা হলেন, ইফতেজা হোসেন (৬০), তার স্ত্রী শেফায়েতুল আলম রেনু (৫৫), হোসনে আরা (৬৫), তার মেয়ে কক্সবাজার সরকারী মহিলা কলেজের এইচএসসি ফলপ্রার্থী ছাত্রী সাবরিনা সুলতানা আলাবী (১৯), গোলাম মুর্তজা (৬৫), শাহিদুজ্জামান শাহিনের কন্যা আভা (৩) ও লাদু মিয়ার পুত্র চালক শাহজাহান (৩৫)। এসময় গুরুতর আহত হয়েছে শাহিদুজ্জামান শাহিন (৪০), তার স্ত্রী মাসুমা আফরীন (৩২), ছেলে আবিদ (৭), রেবেকা সুলতানা (৩৫) ও মোকারমা বেগম (৫০)। আহতদের চমেকসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে পরিবার সূত্রে জানা যায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, শ্যামলী পরিবহনটি বেপরোয়াভাবে চালানোতে এ দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়। এদিকে খবর পেয়ে চকরিয়া থানার ওসি মোঃ ফরহাদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং নিহতদের দেখতে হাসপাতালে ছুটে যান। অপরদিকে একসাথে পরিবারের ৬জন প্রাণ হারানো ঘটনায় নিহত হোসনে আরার মেয়ে বিলাপকালে অপরাপর স্বজনদের জড়িয়ে ধরে বলছিলেন, বৃহস্পতিবারের পত্রিকায় দেখে অনেকবার বলেছিলাম না যাওয়ার জন্য- তারপরও আমার অনুরোধ রাখেনি” আল্লাহ একি হলো। মা কি আর আসবেনা! বোনকে আর দেখতে পাবোনা! সবাইকে হারিয়ে বাকরূদ্ধ হয়ে পড়ে নিহতের এ স্বজন। হাসপাতালে দেখতে আসা স্বজনদের মাঝে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

কক্সবাজার-দোহাজারী রেল লাইন খুলে দিতে পারে অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার

দোহাজারী হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটারের রেল লাইন খুলে দিতে পারে দেশের অর্থনীতির স্বর্ণদ্বার। তাই আসন্ন বাজেটে (২০১২-২০১৩) অর্থ বছরে কক্সবাজার-দোহাজারী রেল লাইন সম্প্রসারণের কাজের জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখার দাবী জানিয়ে আসছে জেলাবাসী।

আর যদি বাজেটে এ প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখা না হয় তাহলে ভেস্তে যেতে পারে জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্নের এ প্রকল্পটি।
দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল লাইন স্থাপনের দাবি দীর্ঘদিন ধরে জানিয়ে আসছিল কক্সবাজার জেলাবাসী। আর সে প্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ হাতে শহরের বাস টার্মিনালস্থ নারিকেল বাগানের পাশে রেল লাইন সম্প্রসারন প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর অচিরেই কাজ শুরুর কথা জানান তিনি। দীর্ঘদিনের প্রতিক্ষিত রেল লাইন চালু হলে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে নব দিগন্তের সূচনা হবে। মিয়ানমার হয়ে ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের সংযুক্তি এবং পর্যটন নগরী কক্সবাজারকে রেল যোগাযোগের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এদিকে আসন্ন বাজেটে এ প্রকল্পের জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখার দাবীতে কক্সবাজার সচেতন নাগরিক সমাজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। আগামী ৭ জুন অর্থমন্ত্রী সংসদে বাজেট পেশ করবেন। এর আগে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার হয়ে ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ রাখার দাবীতে শহরে মানব বন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সাথে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও বাণিজ্যিক সুবিধা বাড়াতে কক্সবাজার থেকে দোহাজারী পর্যন্ত রেল লাইন সম্প্রসারণ কাজ শেষ হলে পাল্টে যাবে অর্থনৈতিক চেহারা। কক্সবাজার থেকে মিয়ানমার হয়ে পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সাথে যোগাযোগ ও পণ্য পরিবহনে প্রস্তাবিত এ রেল লাইন খুলে দিতে বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিক সম্ভাবনার স্বর্ণদ্বার। সে সাথে আর্ন্তজাতিক পর্যটন শহর হিসেবে কক্সবাজার ভ্রমণ সুলভ আরামদায়ক ও সহজতর হয়ে উঠবে পর্যটকদের জন্য। প্রাকতিক সৌন্দর্য্যের উজ্জ্বল সম্ভাবনার কথা চিন্তা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩ এপ্রিল শহরের বাস টার্মিনালস্থ নারিকেল বাগান সংলগ্ন স্থানে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। কক্সবাজার থেকে দোহাজারী পর্যন্ত রেল লাইন সম্পসারণ প্রকল্প। এরমধ্যে দিয়ে অর্ধশতাব্দীরও অধিককাল ধরে দোহাজারী কক্সবাজার রেল লাইন প্রকল্প যে ফাইলবন্দি অবস্থায় ছিল তা থেকে উত্তোরণ ঘটলো। তবে এখনো আনুষ্ঠানিক ভাবে কোন কাজ শুরু হয়নি। যদিও বা ভূমি অধিগ্রহনের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জয়নুল বারী।
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নির্দিষ্ট সময়ে ওই প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। ২০১০ সালের ৬ জুলাই এ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হলে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল প্রকল্পের যাচাই বাছাই করা হয়। অনুমোদনের এক বছরের মাথায় শুরু হয়েছে যৌথ জরিপের কাজ। এর আগে ভূমি মালিকদের ৩ ধারায় নোটিশ দেয়া হয়েছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, দোহাজারী শঙ্খতীর থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী ঘুনধুম পর্যন্ত এ রেললাইনের দূরত্ব হবে ১২৮ কিলোমিটার। ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে চলচলের উপযোগী এ রেললাইনে দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ট্রেকের দৈর্ঘ্য ৮৮ কিলোমিটার, রামু থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১২ কিমি এবং রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত ২৮ কিমি।
১২৮ কিলোমিটার প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮২৫ কোটি ৩৪ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। এতে বাংলাদেশ সরকার দেবে ৬শ’ কোটি ৭০ লাখ ৬ হাজার ৬২ টাকা। বাকি ১ হাজার ১৮২ কোটি ২৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা বৈদেশিক সাহায্যে এ রেললাইনের কাজ সম্পন্ন করা হবে। পর্যটন নগরী কক্সবাজার এবং মিয়ানমার সীমান্তবর্তী নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুনধুম পর্যন্ত পর্যটন সম্ভাবনায় এ রেললাইন ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে খুলে দেয়ার কথা রয়েছে।
জানা যায়, দোহাজারী-ঘুমধুম রেললাইন প্রকল্প বাস্তবায়নে ১৪১১ দশমিক ৫১ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। তš§ধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ৩৬০ দশমিক ৩৬ একর ও কক্সবাজার জেলায় ১০৫১ দশমিক ১৫ একর ভূমি রয়েছে। জেলা প্রশাসন ও রেল কর্তৃপক্ষের যৌথ সমন্বয়ে জরিপের কাজ চলছে। চলছে ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়াও। চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত ১০টি রেলস্টেশন রয়েছে। দোহাজারী-ঘুমধুম নতুন এ রেললাইনের জন্য দোহাজারী স্টেশনের পর সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ঈদগাঁও, রামু, কক্সবাজার, উখিয়া ও মিয়ানমার সীমান্তবর্তী নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুনধুম সীমান্ত এলাকায় আরও ৯টি রেলস্টেশন স্থাপন করা হবে। চকরিয়ার মাতামুহুরী নদীর ওপর ২৮৮ মিটার, দোহাজারীর শঙ্খ নদীর ওপর ২৪৭ মিটার, রামুর বাকখালী নদীর ওপর ১০৪ মিটারের তিনটি মেজর ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। মাইনর ব্রিজ নির্মাণ করা হবে ৪৩টি। ১৪৪টি লেভেল ক্রসিংয়ের পাশাপাশি রামু ও কক্সবাজারে দুটি হাইওয়ে ক্রসিং স্থাপন করা হবে। কম্পিউটার বেইজড সিগন্যাল সিস্টেম হবে একটি। ২০১০ সালের ৬ জুলাই দোহাজারী-ঘুনধুম রেললাইন প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হলেও চলতি বছরের ২৫ মার্চ প্রকল্পটির জায়গা জরিপ করা হয়। ৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।

সমিতিপাড়ায় সন্ত্রাসী হামলায় আহত ওয়ার্ড আ. লীগ সহ-সভাপতি মিজান

কক্সবাজার পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের সমিতি পাড়ায় সন্ত্রাসী হামলায় গুরুতর আহত হয়েছে ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান। গতকাল সকাল সাড়ে ৮টায় এ ঘটনা ঘটে।

এদিকে আহত মিজান বাদী হয়ে ৫জনকে আসামী করে কক্সবাজার মডেল থানায় একটি এজাহার দায়ের করেছেন। মামলার এজাহারে জানা যায়, কক্সবাজার পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের সমিতি পাড়ায় আবদুল বারেকের ছেলে বাদল ও তার স্ত্রী এবং আবদুল বারেক ও তার স্ত্রী ছেনুয়ারা বেগম দীর্ঘদিন ধরে মদ, গাজা ও ইয়াবা বিক্রি করে আসছিল। তাদের এ ব্যবসা বন্ধ করার জন্য এলাকার লোকজন বারবার তাগিদ দিলেও তারা তা বন্ধ করেনি।
গত কিছুদিন আগে আহত মিজান তাদের পুনরাই বারণ করেন। এতে সন্ত্রাসীরা তার ফুঁসে উঠতে শুরু করে। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল সকাল সাড়ে ৮টায় মিজান নির্মাণ কাজের সামগ্রী ক্রয় করার জন্য কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হলে পরিকল্পিত ভাবে উৎপেতে থাকা সন্ত্রাসীরা কুড়াল, দা, হাতুড়ী, লোহার রড ও লাঠিসহ অস্ত্র সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তার গতিরোধ করে। কোন কথা ছাড়াই হাতুড়ী, দা, লোহার রড় এবং কুড়াল দিয়ে মারাত্বক আঘাত করতে থাকে। এতে তার শরীরের বিভিন্ন অংশে জখম হয়। তার কপালে কুড়ালের কুপ লেগে মারাত্বক আহত হয়। তাদের হামলায় আহত হয়ে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে অজ্ঞন হয়ে পড়লে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করান। বর্তমানে সে চিকিৎসাধীন রয়েছে। অপরদিকে তার চিৎকারে মিজানের স্ত্রী তাকে ছাড়িয়ে নিতে আসলে সন্ত্রাসীরা তাকেও বেদড়ক মারধর করে। সন্ত্রাসীরা তার স্ত্রীর গলায় থাকা ১ভরি ওজনের ১টি গলার চেইন এবং মিজানের পকেটে থাকা ৫৮হাজার টাকা নিয়ে নেয়। এজাহারে আবদুল বারেকের ছেলে বাদল, আবদুল বারেক, বাদলের স্ত্রী রহিমা, আবদুল বারেকের স্ত্রী ছেনুয়ারা বেগম ও মানিকের স্ত্রী জহুরা খাতুনকে আসামী করা হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় মামলা রেকর্ড হয়নি। এ ব্যাপারে মিজান প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন।