Wednesday, December 29, 2010

‘রাজধানীর দক্ষিণখানে খুন ও ডাকাতির মামলা রাজনৈতিক বিবেচনার শিকার’: পলাতক আসামিকেও মামলা থেকে খালাস

‘রাজনৈতিক বিবেচনায়’ রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বহুল আলোচিত প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ বিশ্বাস হত্যা মামলার প্রধান পাঁচ আসামির নাম প্রত্যাহারের আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক কানিজ আখতার নাসরীনা খানম এই আদেশ দেন। এতে বিচারাধীন মামলাটির এজাহারভুক্ত এই পাঁচ আসামি— জয়নাল আবেদীন মোল্লা, শাহীন, শরীফ, হুমায়ুন ও ইকবাল হোসেন খালাস পেলেন। তাঁদের মধ্যে হুমায়ুন ও শাহীন প্রায় ছয় বছর ধরেই পুলিশের খাতায় পলাতক আসামি।

মামলার নথিপত্রে দেখা যায়, রাজধানীর দক্ষিণখানে ডাকাতিকালে চিনে ফেলায় আসামিদের মধ্যে শাহীন নিজ হাতে প্রকৌশলী হামিদকে গুলি করেছেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ রয়েছে। উত্তরা থানার এই মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত মোট ১০ জন আসামির মধ্যে বাকি পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা চলবে। তাঁরা হলেন লিটন ওরফে সুন্দরী লিটন, আশরাফুল ইসলাম ওরফে দীপু, জাকির হোসেন, ফিরোজ মিয়া ও নিরঞ্জন চন্দ্র পাল। তাঁদের মধ্যে জাকির ও নিরঞ্জন পলাতক। নথিপত্রে দেখা যায়, এই পাঁচজনের নাম এজাহারে ছিল না, তদন্তে তাঁদের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে বলে অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে।
এদিকে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, ডাকাতি ও হত্যার অভিযোগে করা এই মামলার বাদী ও আসামিদের কেউই কোনো রাজনৈতিক দলের কোনো পদে নেই। তবু আসামিদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ২৬ আগস্ট এ মামলাটি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ বিচারিক আদালতে প্রত্যাহারের আবেদন করে।
এ ঘটনায় প্রথম আলোতে গত ২২ ডিসেম্বর ‘খুন ও ডাকাতির মামলা রাজনৈতিক বিবেচনার শিকার’ শিরোনামে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
ঘটনা: ২০০৫ সালের ২৯ জানুয়ারি রাজধানীর দক্ষিণখানের আনল এলাকায় নিজ বাসায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ বিশ্বাস। আহত হয় তাঁর স্কুলপড়ুয়া মেয়ে। দুর্বৃত্তরা আলমারি ভেঙে বিভিন্ন মালামাল নিয়ে যায়। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নিহতের স্ত্রী সাঈদা হামিদ বাদী হয়ে উত্তরা থানায় হত্যা ও ডাকাতির মামলা করেন। একই বছরের ৮ আগস্ট পুলিশ ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। এরপর মামলাটির বিচার শুরু হয়। ২০০৬ সালে মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে যায়। ইতিমধ্যে তদন্ত কর্মকর্তা ছাড়া বাকি সব সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। মামলাটি প্রায় শেষপর্যায়ে ছিল বলে আইনজীবীরা জানান।
বাদী সাঈদা হামিদের ভাই আফজাল হোসেন জানান, খুনের মামলাটি তুলে নিতে আসামি জয়নাল মোল্লা ও তাঁর পরিবার নানাভাবে চাপ দিচ্ছিল। চাপের মুখে ২০০৭ সালে সাঈদা হামিদ বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে মেয়েদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান।
সাঈদা হামিদ টেলিফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘জয়নাল মোল্লা তাঁর দুই ছেলে, জামাতাসহ অন্য কয়েকজনকে নিয়ে রাত তিনটার দিকে আমাদের বাসার ভেতরে ঢোকেন। শব্দ শুনে আমরা বাতি জ্বালিয়ে দেখতে যাই, কী হচ্ছে। আমি, আমার দুই মেয়ে ও কাজের মেয়ের চোখের সামনেই জয়নাল মোল্লার ছেলে শাহীন নিজ হাতে গুলি চালিয়েছেন।’
প্রতিক্রিয়া: এদিকে ‘রাজনৈতিক হয়রানির বিবেচনায়’ মামলার পলাতক আসামিসহ প্রধান পাঁচ আসামির নাম প্রত্যাহারে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী যুক্তরাষ্ট্র-প্রবাসী সাঈদা হামিদ। তিনি গতকাল টেলিফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘তারা আমার স্বামীকে আমার চোখের সামনে গুলি করে হত্যা করেছে। এ জন্য রাষ্ট্রের কাছে বিচার চাইলাম। রাষ্ট্রই মামলা তুলে নিল। এখন কার কাছে যাব?’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমরা রাজনীতি করি না বলে কি আমরা বিচার পাব না? আমরা কি বাংলাদেশের মানুষ না!’
সাঈদা হামিদ এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
বাদীর পক্ষে মামলাটির তদারককারী সাঈদার ভাই আফজাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন করবেন।
এই ব্যাপারে ট্রাইব্যুনালের বিশেষ কৌঁসুলি সামছুল হক সাংবাদিকদের বলেন, সরকার মামলাটি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ কারণে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৪ ধারায় আবেদন করা হয়েছে। আদালত যাঁদের নাম প্রত্যাহারযোগ্য মনে করেছেন, তাঁদের নাম প্রত্যাহার করে খালাস দিয়েছেন।

চিঠিকে স্বাগত জানিয়েছে টিআইবি। আজই তথ্য উপাত্ত পাঠাবেঃ টিআইবির প্রতিবেদনের তথ্য উপাত্ত চেয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সাম্প্রতিক জরিপের প্রতিবেদন ও তথ্য-উপাত্ত চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পত্রবাহকের মাধ্যমে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বরাবর এ চিঠি পাঠানো হয়।

সূত্র জানায়, ডেপুটি রেজিস্ট্রার বদরুল আলম ভুঞা স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ‘২৪ ডিসেম্বর বিভিন্ন দৈনিকে বিচার বিভাগের দুর্নীতি-সংক্রান্ত সংবাদ আমাদের নজরে এসেছে। এ বিষয়ে অবগত হয়েছি। প্রতিবেদনের অনুলিপি ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র প্রেরণ করে বাধিত করবেন। যেসব তথ্য-উপাত্ত ও সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে ওই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে, তা সরবরাহ করে সহযোগিতা করুন। অভিযোগের সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেলে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তথ্য-উপাত্ত চেয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বরাবর এই চিঠি পাঠানো হয়। সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি রেজিস্ট্রার বদরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, টিআইবির প্রতিবেদন ও তথ্য-উপাত্ত চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এতে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ জন্য চিঠিতে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে পাঠানো চিঠি ইতিবাচক। এটাকে স্বাগত জানাই।’ টিআইবির প্রতিবেদন ও তথ্য-উপাত্ত আজ সকালে সুপ্রিম কোর্টে পাঠানো হবে বলে জানানো হয়। তিনি বলেন, প্রতিবেদনের বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত চেয়ে চিঠি পাঠানো উৎসাহব্যঞ্জক।
টিআইবির প্রতিবেদন: টিআইবি ২৩ ডিসেম্বর সেবা খাতে দুর্নীতিসংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বলেছে, দেশের ১৩টি সেবা খাতের মধ্যে বিচার বিভাগে গিয়ে সবচেয়ে বেশি হয়রানি, অনিয়ম, ঘুষ দেওয়া তথা দুর্নীতির শিকার হয়েছে সাধারণ মানুষ। ২০০৯-১০ সালে বিচারপ্রার্থীদের ৮৮ শতাংশ শুনানির সময় নির্ধারণ থেকে শুরু করে নথিপত্র গায়েব, উৎকোচ দেওয়াসহ নানা অনিয়মের শিকার হয়েছে। নিম্ন আদালত থেকে শুরু করে উচ্চ আদালত—বিচার বিভাগের প্রতিটি স্তরে ঘুষের দৃষ্টান্ত থাকলেও জরিপের শীর্ষে রয়েছেন উচ্চ আদালত।
২০০৯ সালের ৯ জুন থেকে এ বছরের ২০ জুলাই পর্যন্ত দেশের সব বিভাগীয় শহর ও গ্রামাঞ্চলের ছয় হাজার খানার (পরিবার) ওপর পরিচালিত জরিপের ভিত্তিতে ‘সেবা খাতে দুর্নীতি: জাতীয় খানা জরিপ ২০১০’ প্রকাশ করা হয়।
টিআইবি বলছে, ২০০৭ সালের খানা জরিপে ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ পরিবার বিচার বিভাগের দুর্নীতির শিকার হয়েছিল। কিন্তু এ দফায় তা বেড়েছে। জরিপে অংশ নেওয়াদের শতকরা ১০ দশমিক ৯ শতাংশ বিচার বিভাগ থেকে সেবা নিয়েছে। তাদের ৮৮ শতাংশ দুর্নীতির শিকার হয়েছে।
টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, জুন ২০০৯ থেকে মে ২০১০ পর্যন্ত যারা বিচার বিভাগের শরণাপন্ন হয়েছে, তাদের মধ্যে ৮৮ শতাংশ মানুষ ঘুষ ও অনিয়মের শিকার। ২০০৭ সালের তুলনায় এই হার অনেক বেশি। তিন বছর আগে পরিচালিত ওই জরিপে ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ ঘুষ ও অনিয়মের শিকার হয়।

উপনির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি

বিগঞ্জ-১ ও ব্রাক্ষণবাড়িয়া-৩ আসনের উপনির্বাচনে অংশ নেবে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। বুধবার রাতে গুলশানের কার্যালয়ে জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান স্থায়ী কমিটির সদস্য আর এ গনি। বৈঠক শেষে আর এ গনি সাংবাদিকদের বলেন, "বৃহস্পতিবার বিকাল তিনটায় নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত ও প্রস্তাবসমূহ সংবাদ ব্রিফিংয়ে গণমাধ্যমকে জানানো হবে।"

তিনি আরো বলেন, খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে পার্লামেন্টারি বোর্ড এই সাক্ষাৎকার দেবে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে। এর আগে বুধবার রাতে গুলশানের কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

রাত ৮টা ২০ মিনিট থেকে ১০টা পর্যন্ত বৈঠকে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, উপনির্বাচন ও পৌর নির্বাচনের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আর এ গনি, এম শামসুল ইসলাম, মাহবুবুর রহমান, এম কে আনোয়ার, জমিরউদ্দিন সরকার, আ স ম হান্নান শাহ, সারোয়ারি রহমান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও রফিকুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।

মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন অসুস্থ থাকায় বৈঠকে আসতে পারেননি। এর আগেও শূন্য আসনের উপনির্বাচনে অংশ নিয়েছিলো বিএনপি। সর্বশেষ এ বছরের ২৪ এপ্রিল ভোলা-৩ আসনের উপনির্বাচনে দলটি অংশ নেয়। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নূরন্নবী চৌধুরী শাওন বিএনপির হাফিজ উদ্দিন আহমেদকে হারিয়ে নির্বাচিত হন।

গত বছরের ১৫ জুন সুনামগঞ্জ-৪ আসনের উপনির্বাচনে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগের মতিউর রহমান। বিএনপি থেকে নির্বাচন করেন ফজলুল হক আসপিয়া। ওই বছরের ২ এপ্রিল হয় রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের ছেড়ে দেওয়া ছয়টি আসনে।

এ ছয়টি আসন হল- রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের ছেড়ে দেওয়া কিশোরগঞ্জ-৬, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রংপুর-৬, সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার বগুড়া-৬ ও ৭, জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের রংপুর-৩ ও কুড়িগ্রাম-২।

এর মধ্যে আওয়ামী লীগ তিনটি, বিএনপি দুটি ও জাতীয় পার্টি একটি আসন পায়। জামায়াত নেতাদের সঙ্গে বৈঠক: জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল হোসেন ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক পরপরই খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার গুলশানের কার্যালয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে উপনির্বাচন ও পৌর নির্বাচন বিষয়ে আলোচনা হয়।

টিআইবি জরিপের নথি চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট

টিআইবি'র সা¤প্রতিক জরিপের সংশ্লিষ্ট তথ্য চেয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, এতে অভিযোগের প্রমাণ পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তথ্য-উপাত্ত চেয়ে টিআইবি'র নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বরাবর মঙ্গলবার চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের ডিপুটি রেজিস্ট্রার বদরুল আলম ভুউঞা।

এ বিষয়ে ড. ইফতেখারুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে টেলিফোনে বলেন, "চিঠিটা বিকালে আমার কাছে এসেছে। আমরা আগামীকাল (বুধবার) সকালে সুপ্রিম কোর্টের কাছে এ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত জমা দেবো।" সুপ্রিমকোর্টের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে তিনি আরো বলেন, "বিষয়টিকে আমরা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসেবেই দেখছি।"

টিআইবি'র চেয়ারম্যান এম হাফিজউদ্দিন খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আশা করছি সুপ্রিম কোর্ট এটা বিবেচনায় নেবে। ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবে।" সুপ্রিম কোর্টের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, প্রধান বিচারপতির উপস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের নিয়ে পর্যালোচনা করে এ চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) প্রকাশিত ওই জরিপে বলা হয়, সেবা খাতের মধ্যে বিচার বিভাগেই দুর্নীতি বেশি হয়। এর মধ্যে ঘুষ লেনদেন বেশি হয় উচ্চ আদালতে। জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, "টিআইবির জরিপ দুর্নীতির সার্বিক চিত্র নয়। এটা আংশিক চিত্র। দেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা আরো অনেক বেশি।"

জরিপ প্রসঙ্গে রোববার আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেন, "কিছু লোকের দোষ পুরো বিচার বিভাগের ওপর চাপানো হয়েছে।" ডেপুটি রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত সুপ্রিম কোর্টের মঙ্গলবারের চিঠিতে বলা হয়েছে, "গত ২৪ ডিসেম্বর বিভিন্ন দৈনিকে বিচার বিভাগের দুর্নীতি সংক্রান্ত সংবাদ আমাদের নজরে এসেছে। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তি টিআইব'র প্রতিবেদন বলে প্রতীয়মান হয়েছে।

"ওই প্রতিবেদনের সংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেলে এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হবে।" "তাই অনুগ্রহ করে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও সংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ করে বাধিত করবেন," বলা হয় চিঠিতে। ডেপুটি রেডিজস্ট্রার বদরুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমক বলেন, তথ্য-উপাত্ত চাওয়া হয়েছে সহযোগিতার জন্য। এতে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

রোববার চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় দুটি মামলায় টিআইবিপ্রধান এম হাফিজউদ্দিন খান, নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান ও গবেষক ওয়াহিদ আলমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। কুমিল্লার যে মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয় সেটি সেদিন সন্ধ্যায় আবার বাতিল করে আদালত। এছাড়া চট্টগ্রামে টিআইবিপ্রধান হাফিজউদ্দিন খানসহ তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আরো দুটি মামলা হয়। ওই দুই মামলায় তাদের জানুয়ারি মাসের দুটি আলাদা তারিখে আদালতে সশরীরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

২০১১ সালে 'দুঃশাসন' থেকে সরে আসুন: খালেদা জিয়া

'দুঃশাসন' এর পথ থেকে সরে এসে সরকারকে নতুন বছরে (২০১১ সালে) গণতান্ত্রিকভাবে দেশ পরিচালনা করার আহ্বান জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া। মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এই আহ্বান জানান।

নতুন বছরে সরকার দুঃশাসনের পথ থেকে সরে এসে সঠিকভাবে দেশ পরিচালনা করবে- এই আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, "নইলে জনগণই তাদের বিরুদ্ধে রাজপথে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।'' 'দেশ রক্ষার' চলমান আন্দোলনে খ্রিষ্টান স¤প্রদায়ের সহযোগিতা চান তিনি।

বড়দিন উপলক্ষে খ্রীষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের সঙ্গে এই শুভেচ্ছা বিনিময় করেন খালেদা জিয়া। এ সময় আর্চ বিশপ পৌলিনিস কস্তা, এলার্ট পি কস্তাসহ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বিরোধীদলীয় নেতা খ্রিস্টান স¤প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে বড়দিনের কেক কাটেন এবং কুশল বিনিময় করেন।

খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের কাছে দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে খালেদা জিয়া বলেন, "দেশের মানুষ ভালো নেই, কষ্টের মধ্যে আছেন। দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি কেমন তা সবাই টের পাচ্ছেন। কেবল তাই নয়, দেশে গণতন্ত্রও নেই। গণতন্ত্র থাকলে জনগনকে সভা-সমাবেশ করায় বাধা দেওয়া হতো না।''

সারাদেশে সরকারি দলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজি ও দখলবাজির অভিযোগ তুলে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, "তারা কেবল টেন্ডারবাজিই নয়, মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডাসহ ধর্মীয় জায়গা-জমিও দখল করছে। আওয়ামী লীগ, ছাত্র লীগ ও যুবলীগের হাতে আজ বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত হচ্ছে।"

বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও তাদেরকে হয়রানি করা এবং সরকারের দমননীতির কঠোর সমালোচনাও করে তিনি বলেন, "সরকারের এহেন অত্যাচার-নির্যাতন চলতে থাকলে জনগনই প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।" এসময় অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ, আবদুল মঈন খান ও সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন বক্তব্য রাখেন।

'সরকার অপকর্মের সমালোচনা সহ্য করছে না'

'বর্তমান সরকার অতীতের মতো অপকর্মের সমালোচনা' সহ্য করছে না বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার। এমকে আনোয়ার বলেন, ''১৯৭২-৭৫ সালের সরকার ভিন্নমতের সমালোচনা সহ্য করতো না। আজো নির্যাতন চালিয়ে তারা সব কিছু দাবিয়ে রাখতে চায়।''

মঙ্গলবার বিকালে নয়াপল্টনে মহানগর নাট্যমঞ্চে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর তিন দশক উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এই অভিযোগ করেন। আগামী ৩০ ডিসেম্বর কৃষক দলের ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। বর্তমান প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে দলীয়করণের মাধ্যমে এক দলীয় শাসনে সরকার দেশ পরিচালনা করছে বলেও অভিযোগ করেন এমকে আনোয়ার।

বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থাকে সংকটজনক অভিহিত করে তিনি বলেন, "দেশে কোনো দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ নেই। ভারতীয় ব্যাংকের দেওয়া ঋণের প্রকল্প অনুমোদন করতে হবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এভাবে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে বিকিয়ে দিয়ে দেশকে সরকার অকার্যকর করে ফেলেছে।"

সরকারের বিরুদ্ধে দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, "আওয়ামী লীগ বহুদল ও গণতন্ত্র বিশ্বাস করে না। আওয়ামী লীগে থাকলে রাজাকারও মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যায়।" উচ্চতর আদালতে জামিন আদেশ সরকারের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তার কার্যালয়ে স্থগিত করে রাখছে অভিযোগ তুলে প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে আনোয়ার বলেন, "প্রধান বিচারপতি নিজেই বলেছেন, কেউ বিচারের ঊর্ধ্বে নয়। তাহলে আপনার অথবা হাইকোর্টের জামিন আদেশ কিভাবে অ্যার্টনি জেনারেল আটকিয়ে রাখেন তা আমরা জানতে চাই।"

বিএনপির জ্যেষ্ঠ এ সাংসদ বলেন, "রাজনেতিক বিবেচনার নামে সরকার ছয় হাজার সাতশ মামলা প্রত্যাহার করে বিচার বিভাগের ওপর অনাস্থা প্রকাশ করেছে। এসব মামলায় দেড় লাখ দাগী আসামিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের মুক্তির ফলে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি, খুন ও ধর্ষণ বেড়েছে।" রাষ্ট্রপতি বির্তকিত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে নাটোরের ২০ ফাঁসির আসামিকে ক্ষমা করে দেওয়া আইনসম্মত হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, "ওই আসামিরা মুক্তি পেয়ে নাটোরের উপজেলা চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ নুর বাবুকে হত্যা করেছে।"

সভাপতির বক্তব্যে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, "টিআইবি প্রতিবেদনে দেশে দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছেÑ প্রকাশ হওয়ার পর তাদের ওপরও সরকারের মন্ত্রীরা বিষোদ্গার করছেন। নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের মতো গর্বিত ব্যক্তিকেও তারা প্রশ্নের মুখে ফেলে বির্তকিত করছেন।"

আলোচনা সভায় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপির উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য শামসুজ্জামান দুদু, অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম, যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সালাম আজাদ, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শরফত আলী সপু, ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এ্যাব'র সদস্য সজিব হাসান জাফির তুহিন প্র্রমুখ বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে সাবেক প্রতিমন্ত্রী গৌতম চক্রবর্তী, সাংসদ শাম্মী আখতার, মহিলা দলের সভাপতি নুরে আরা সাফা, কৃষক দলের সহসভাপতি এমএ তাহের, সৈয়দ মেহেদি আহমেদ রুমি, সহ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তকদির হোসেন মো. জসিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।