Monday, June 11, 2012

আরাকানে দাঙ্গা, প্রাণহানি, কারফিউঃ ফের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কড়া নজরদারি

টেকনাফের নাফ নদের ওপারে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ার পর সে দেশ থেকে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশঙ্কায় বাংলাদেশ সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

অতীতে বিভিন্ন সময় মিয়ানমার থেকে আসা কয়েক লাখ রোহিঙ্গার ব্যাপারেও সম্ভাব্য সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।
প্রায় এক সপ্তাহ ধরে রক্তাক্ত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মিয়ানমার সরকার দেশটির আরাকান প্রদেশে সেনা পাঠিয়েছে। ইতিমধ্যে সেখানে সামরিক আইন কার্যকর করা হয়েছে এবং সান্ধ্য আইন জারি করা হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় গিয়ে জানা গেছে, গত কয়েক দিনের সহিংসতায় আরাকানের বন্দর শহর মংডুতে হতাহতের সংখ্যা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। গতকাল বিকেল পর্যন্ত অর্ধশতাধিক লোকের প্রাণহানির আশঙ্কা করেছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো। প্রতিনিয়ত সেখানে গোলাগুলি হচ্ছে। রাত নামলেই মিয়ানমারের আরাকানে চালানো গুলির শব্দ নাফ নদের এপারে বাংলাদেশেও স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে। গুলিবিদ্ধ এক ব্যক্তি সীমানা পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে গতকাল শনিবার সকালে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছেন। নাফ নদের ওপারে আরাকানের বিস্তীর্ণ এলাকা বাংলাদেশের মোবাইল টেলিফোন নেটওয়ার্কের আওতায় রয়েছে। তাই আরাকানে কোন সময়ে কী ঘটছে, তা মুহূর্তেই এপারে জানা সম্ভব। গতকাল সকালে আরাকানের মংডু শহরের ডা. নাজিমুদ্দিন ও ডা. নুরুল হক নামের দুজন জনপ্রিয় রোহিঙ্গা নেতাও খুন হয়েছেন।
সেই সঙ্গে ভুচিদং এলাকার একটি ঐতিহ্যবাহী মাদ্রাসা আগুনে পুড়িয়ে দিয়ে কয়েকজন শিক্ষককে পুড়িয়ে হত্যার খবরও এসেছে। প্রতিনিয়ত নানা অঘটনের সংবাদ এবং একের পর এক গুজবে সীমান্তবর্তী জেলা কক্সবাজার ও বান্দরবানে নতুন করে অস্থির পরিস্থিতিরও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, আরাকান রাজ্যে গত ৩ জুন দুপুরে সংঘটিত একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেখানে বহু বছর পর নতুন করে জাতিগত সহিংসতা শুরু হয়েছে। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে নির্যাতিত, নিপীড়িত। মিয়ানমার সরকার তাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না। সীমান্ত এলাকার সূত্রগুলো জানিয়েছে, ৩ জুন তংগু নামক স্থানে রাখাইন সম্প্রদায়ের হাতে নিহত হয়েছিলেন তাবলিগ জামায়াতের অনুসারী ১০ মুসলিম। একটি মাইক্রোবাসে করে তাঁরা অন্যত্র যাওয়ার পথে উগ্র রাখাইন সম্প্রদায়ের হামলার শিকার হন। রাখাইনরা মাইক্রোবাসটিতে আগুন ধরিয়ে দিলে তাঁরা সবাই অগি্নদগ্ধ হয়ে মারা যান বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। সেই ঘটনার জের ধরেই গত শুক্রবার মিয়ানমারের আরাকানে দাঙ্গা নতুন মাত্রা পায়।
ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা : আরাকানের মংডু, ভুচিদং ও আকিয়াব এলাকায় শুক্র এবং শনিবার সকালে সহিংসতা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। তবে বিকেল গড়িয়ে আসার পর গুলির মাত্রা কমেছে বলে জানা গেছে। শুক্রবার রোহিঙ্গাদের বিক্ষোভের সময় রাখাইন সম্প্রদায়ের চারজনের মৃত্যুর পরই সহিংসতা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এমনকি এ সময় সীমান্তরক্ষী (নাসাকা) বাহিনীর সঙ্গে থাকা কয়েকজন সেনা সদস্যও হতাহত হন। এ ঘটনার পর পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটে। রোহিঙ্গা ও রাখাইনরা পরস্পরের ওপর হামলা করতে থাকে। মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়েছে, বিক্ষোভকারীরা বাড়িঘর, দোকানপাট এবং হোটেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ছাড়া ছুরিকাঘাতে এক নারীসহ কমপক্ষে পাঁচজন নিহত হন।
টেকনাফের হোয়াইক্যং উলুবনিয়া গ্রামের বাসিন্দা হারুন সিকদার গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, সীমান্ত এলাকাজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা দলে দলে আবারো এপারে আসার ভয়ে সীমান্ত এলাকার মানুষ উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে।
গুলিবিদ্ধ রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ : গত দুই দিনে মিয়ানমারে আহতদের বেশ কয়েকজন চিকিৎসার জন্য গোপনে টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্তে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানা গেছে। কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে গতকাল শনিবার সকালে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ভর্তি হয়েছেন ছলিম (২৫) নামের এক রোহিঙ্গা যুবক। তাঁর বাড়ি আরাকানের বলিবাজার এলাকায়। বুকে গুলিবিদ্ধ ছলিমের কথা বলতে কষ্ট হচ্ছিল। গতকাল বিকেলে কালের কণ্ঠকে তিনি জানান, শুক্রবার দুপুরে রাখাইন সম্প্রদায়ের অস্ত্রধারী যুবকদের এলোপাতাড়ি গুলিতে বহু রোহিঙ্গা নর-নারী হতাহত হয়েছে।
পুলিশ গতকালই ছলিমকে আটক করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। মিয়ানমারের ভুচিদং এলাকার রোহিঙ্গা যুবক আজিমুল হক এবং নুরুল হকও গুলিবিদ্ধ অবস্থায় টেকনাফের শাহ পরীর দ্বীপ দিয়ে গতকাল সকালে এপারে এসেছেন। গুলিবিদ্ধদের চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়েছে চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন হাসপাতালে। এভাবে আরো অনেক রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটেছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তা : উখিয়া এবং নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ঘুনধুম বিওপির (বর্ডার আউটপোস্ট) বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সুবেদার সোহরাব গতকাল দুপুরে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সারা রাত ঘুমাননি আমার জওয়ানরা। তাঁরা নিরবচ্ছিন্ন সীমান্ত পাহারায় নিয়োজিত রয়েছেন। কোনোভাবেই যাতে সীমান্তে অনুপ্রবেশ না ঘটে সে দিকেই আমাদের দৃষ্টি।'
তবে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত উদ্বেগজনক অবস্থার সৃষ্টি হয়নি।
ঘুনধুম সীমান্তের বাসিন্দা আবদুর রহিম কালের কণ্ঠকে উদ্বেগের সঙ্গে বলেন, 'মিয়ানমার থেকে আবার যদি অনুপ্রবেশ ঘটে তাহলে আমাদের এই ছোট দেশটির বারটা বাজবে। এমনিতেই কমপক্ষে চার লাখ অবৈধ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গার জ্বালায় আমরা অতিষ্ঠ। তার ওপর যদি আবার নতুন করে অনুপ্রবেশ ঘটে তাহলে আমাদের অর্থনীতি ও সমাজ জীবনে ব্যাপক নেতিবাচক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।'
বিজিবির ১৭ ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান কালের কণ্ঠকে জানান, গত ৩ জুন থেকেই সীমান্তে কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সেই থেকে সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। এমনকি সীমান্ত এলাকার লোকজনের চলাচল পর্যন্ত সীমিত রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত মোট ২৪৮ কিলোমিটার। এর মধ্যে কক্সবাজারে ৭২ কিলোমিটার এবং বান্দরবানে ১৭৬ কিলোমিটার পড়েছে। ওদিকে মিয়ানমারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে টেকনাফের নাফ নদের হ্নীলা এলাকার রাখাইন পল্লীতে হামলার আশঙ্কায় সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। টেকনাফ থানার ওসি মাহবুবুল আলম কালের কণ্ঠকে জানান, সুযোগের অপেক্ষায় থাকা তৃতীয় পক্ষের হামলার আশঙ্কা থেকেই সেখানে পুলিশি পাহারা বসানো হয়েছে।
রোহিঙ্গা শিবির পরিস্থিতি : উখিয়ার কুতুপালং শিবিরে শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে রোহিঙ্গারা আরাকানের সহিংসতার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করার চেষ্টা করেছিল। তবে উখিয়া থানার পুলিশ গিয়ে রোহিঙ্গাদের সেই চেষ্টা ভণ্ডুল করে দেয়। উখিয়া থানার ওসি অপ্পেলা রাজু নাহা জানান, রোহিঙ্গারা যখন তখন অঘটন ঘটাতে চায়।
গতকাল কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শিবিরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার জালাল উদ্দিন দফায় দফায় রোহিঙ্গাদের নিয়ে বৈঠক করছেন, তাদের শান্ত থাকার জন্য অনুরোধ করছেন।
রোহিঙ্গা শরণার্থী ও প্রত্যাবাসন কর্মকর্তা (আরআরসি) সরকারের যুগ্ম সচিব ফিরোজ সালাউদ্দিন কালের কণ্ঠকে জানান, দুটি শরণার্থী শিবিরেই কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কোনো শরণার্থীকেই শিবিরের বাইরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।
বাণিজ্য ও ট্রানজিট বন্ধ: টেকনাফ সীমান্ত বাণিজ্যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দুই দিন ধরে বাণিজ্যের মালামাল ওঠানামা বন্ধ রয়েছে। মালামাল বোঝাই তিনটি জাহাজ গতকাল বন্দরে এলেও তা খালাস হয়নি। ওদিকে মিয়ানমারের বন্দর শহর মংডু এবং টেকনাফের সঙ্গে ট্রানজিট নৌকাও দুই দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এর ফলে নৌপথে দুই দেশের মধ্যে কোনো লোক পারাপার হচ্ছে না।

মিয়ানমারে দাঙ্গা অব্যাহত, সীমান্তে বিজিবির টহল জোরদার

মিয়ানমারে ব্যাপকভাবে মুসলিম-রাখাইন সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে মংডু টাউনশিপ ও এর আশপাশের এলাকা সেনাবাহিনী তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। দাঙ্গা এখনো অব্যাহত আছে। এদিকে বিজিবি তাদের টহল জোরদার করেছে।

জানা যায়, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী মংডু এলাকায় প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত কার্ফু জারি বলবত রেখেছে। এর মাঝেও বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে। শনিবার সেদেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী, সেনাবাহিনী ওয়েস্টার্ন জোন কমান্ডার মেজর জেনারেল টোন নে লিনসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তারা মংডু এলাকা সফর করে শান্তি ফিরিয়ে আনতে তৎপরতা শুরু করেছে বলে জানা গেছে।
তারা উত্তেজিত মুসলমান ও রাখাইন গ্রামগুলো পরিদর্শন করে জনতাকে শান্ত থাকার আহবান জানিয়েছেন। বিশেষ করে তারা মুসলমানদের বড় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সিকদারপাড়া মারকাজ মসজিদ পরিদর্শন করে ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে মুসলমান, রাখাইন ও শিক্ষক প্রতিনিধির সমন্বয়ে গ্রামে গ্রামে শান্তি কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

বৈঠকে মুসলিমদের পক্ষে শাহনেওয়াজ, মাস্টার জমিল আহমদ, মাস্টার জাহাঙ্গীর, মাওলানা আব্দুল্লাহ, হাজি কলিম উল্লাহ, মোহাম্মদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন বলে অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে একজন নিশ্চিত করেছেন।

এর মাঝেও শনিবার বিকেলে মংডু হাইন্দাপাড়া এলাকায় রাখাইনদের হামলায় দুই মুসলমান যুবকের মৃত্যু ঘটেছে বলে বিভিন্ন সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। নিহতদের একজন হলেন খাইন্দা পাড়ার নুরুল হকের ছেলে মো. নুর। অন্যজনের পরিচয় জানা যায়নি। শুক্রবারের সহিংস ঘটনার পর এখনো সর্বত্র আতঙ্ক বিরাজ করছে।

 টেকনাফ সীমান্ত পরিস্থিতি

টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে ট্রানজিট যাতায়াত শনিবার দ্বিতীয় দিনের মতো বন্ধ ছিল। এছাড়া টেকনাফ স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন দিয়ে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের যাতায়াত ৮ জুন থেকে বন্ধ রয়েছে। শুক্রবার বাংলাদেশ থেকে সাত ব্যবসায়ী মংডু নৌ ঘাটে গিয়েও ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাবে সেদেশের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাদের  ঢোকার অনুমতি না দেয়ায় তার ফিরে এসেছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া বৈধভাবে মিয়ানমারে যাওয়া ৫৫ জন বাংলাদেশী ব্যবসায়ী ও মিয়ানমারের ২৭১ ব্যক্তি এদেশে রয়েছেন।

ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা আব্দুল কাদের বার্তা২৪ ডটনেটকে জানিয়েছেন, রোববার এসব ব্যবসায়ীরা স্ব স্ব দেশে যাতায়াতের জন্য মিয়ানমার ইমিগ্রেশনের সঙ্গে কথা হয়েছে। টেকনাফ স্থলবন্দরে শুক্রবার দুটি ও শনিবার একটি পণ্যবাহী জাহাজ মিয়ানমার থেকে এসেছে বলে বন্দর ম্যানেজার আবু নুর মো. খালেদ জানিয়েছেন। তবে সহিংস ঘটনা অব্যাহত থাকলে আমদানি-রফতানিতে প্রভাব পড়বে বলে তিনি জানান।

টেকনাফস্থ বিজিবি ৪২ ব্যাটালিয়ন উপ-অধিনায়ক মেজর মো. শফিকুর রহমান জানান, যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় সীমান্তে বিজিবি সতর্কাবস্থায় রয়েছে এবং টহল জোরদার করা হয়েছে।

এদিকে টেকনাফে বসবাস ও কর্মরত রাখাইনরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। এদিনও তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ছিল। শনিবার টেকনাফে জুয়েলারি কাজে নিয়োজিত কক্সবাজার ও মহেশখালী এলাকার বেশকিছু রাখাইন স্বর্ণকার আতঙ্কিত হয়ে স্ব-স্ব বাড়ি ঘরে চলে যেতে চাইলে পথিমধ্যে যেকোনো ধরনের সহিংস ঘটনার আশঙ্কায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার আশ্বাস দিলে তারা কর্মস্থলে থেকে যায়।

রাখাইন কমিউনিটি লিডার মং উইন মিনথ রাখাইন জনগোষ্ঠীর পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বিধানে প্রশাসনের তৎপরতাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। এছাড়া টেকনাফের নয়াপাড়া ও লেদা উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।

কক্সবাজার সহকারী পুলিশ সুপার শনিবার টেকনাফের রাখাইন গ্রাম হ্নীলা চৌধুরীপাড়া ও হোয়াইক্যং খারাংখালী, নয়াপাড়া ও কুতুপালী রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন করে সবাইকে ধৈর্য ধরে শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বজায় রাখার আহবান জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গত শুক্রবারের মুসলমান-রাখাইন জাতিগত সংঘর্ষে মুসলমান ও রাখাইনরা পরস্পরের শতাধিক বাড়ি-ঘরে আগুন দেয়। এ সময় মুসলিম-রাখাইন ও মুসলমানদের সঙ্গে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যের সংঘর্ষে ২০ জনের মতো নিহতের ঘটনা ঘটে বলে মিয়ানমার সীমান্তের বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।

মিয়ানমার থেকে ৩৯ ব্যবসায়ী দেশে ফিরেছেন

মিয়ানমারের মংডু টাউনশিপে আটকেপড়া ৫৫ বাংলাদেশী ব্যবসায়ীর মধ্যে ৩৯ জন রোববার দুপুরে টেকনাফ ট্রানজিট ঘাট দিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন।

অপরদিকে বাংলাদেশে আটক থাকা মিয়ানমারের ২৭১ ব্যবসায়ীর মধ্যে ১০ জন নিজ দেশে ফিরে গিয়েছেন।
টেকনাফ স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন ইনচার্জ মো. কাদের সিদ্দিকী বার্তা২৪ ডটনেটকে জানান, বাংলাদেশী ৫৫ জন ব্যবসায়ীর মধ্যে ৩৯ জন ফিরে এলেও বাকি ১৬ জনের ব্যাপারে এখনো আলোচনা চলছে।

ফেরত আসা ব্যবসায়ীরা জানান, মিয়ানমারে মংডু শহরসহ বিভিন্ন এলাকায় অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে।