Saturday, May 05, 2012

কক্সবাজারে দরিদ্র মহিলাদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ

কক্সবাজারে আ্যাপেক্স ক্লাবের উদ্যোগে দরিদ্র মহিলার মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ ও অসহায় রোগীদের নগদ অর্থ দেযা হয়েছে।

রোববার দুপুরে শহরের একটি হোটেলে ক্লাবের ২১তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ সহায়তা দেয়া হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, কক্সবাজার-রামু আসনের সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজল। ক্লাবের জেলা গভর্নর আ্যাডভোকেট রমিজ আহমদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

টেকনাফে ২ দল গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ-গুলি: আহত ৩০

কক্সবাজারের টেকনাফে ২ দল গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। এসময় ২০ রাউন্ডের বেশি গুলিবর্ষণ, একটি পেট্রোল পাম্প ও ২০টি দোকান ভাঙচুরে ঘটনা ঘটেছে।

২টি প্রভাবশালী পরিবারের সন্তানের মধ্যে সৃষ্ট তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকেলে টেকনাফ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোদার বিল এলাকার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর ছোট ভাই জিয়াউর রহমানের সঙ্গে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও পৌর বিএনপি সাবেক সভাপতি লেঙ্গুর বিল এলাকার জাফর আহমদের ছেলে দিদারের কথা কাটাকাটি হয়।

এর জের ধরে সন্ধ্যা ৬টার দিকে টেকনাফ বাস স্টেশন সংলগ্ন জাফর আহমদের মালিকানাধীন মার্কেটের সামনে লেঙ্গুর বিলের কয়েকশ লোক সশস্ত্র অবস্থান নেন।

এ খবর পেয়ে গোদার বিল এলাকার কয়েকশ লোক সশস্ত্র অবস্থায় টেকনাফ পৌরসভার শাপলা চত্বর এলাকায় অবস্থান নেন।

পরে রাত ৮টার দিকে লেঙ্গুর বিলের লোকজন টেকনাফ উপজেলা পরিষদ গেট এলাকায় অবস্থিত আবদুল্লাহর মালিকাধীন পেট্রোল পাম্পে হামলা চালায়।

খবর পেয়ে গোদার বিল এলাকার লোকজন সামনে এগিয়ে গেলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।

বাস স্টেশনের ব্যবসায়ী আবদুল করিম বাংলানিউজকে জানান, এসময় উভয় পক্ষের মধ্যে অন্তত ২০ রাউন্ড গুলি বিনিময় হয়। এসময় ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়ায় অনেকেই আহত হন।

তিনি জানান, এসময় বাস স্টেশনের ২০টি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। বিপুল সংখ্যক পুলিশ এবং বিজিবি সদস্য ঘটনাস্থলে এসে অবস্থান নিলে রাত ১০টায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

এ ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় সাংবাদিক জেড করিম জিয়া বাংলানিউজকে জানিয়েছেন।

এবিষয়ে টেকনাফ থানার পরিদর্শক (ওসি) মাহবুবুল হক বাংলানিউজকে জানান, পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ ঘটনায় আহত হওয়ার কোনো খবর তিনি জানেন না। আটকও নেই।

এদিকে, ঘটনাস্থলে পুলিশ ও বিজিবির টহল অব্যাহত রয়েছে।

প্রসঙ্গত, টেকনাফ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোদার বিল এলাকার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর পরিবার এবং টেকনাফ সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও পৌর বিএনপি সাবেক সভাপতি লেঙ্গুর বিল এলাকার জাফর আহমদ পরিবারের মধ্যে অনেকদিন ধরেই বিরোধ চলে আসছিল।

বর্তমান মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর জাফর আহমদ বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন।

কক্সবাজারে চাঁদাবাজমুক্ত মার্কেটের দাবিতে কালো পতাকা উত্তোলন


কক্সবাজারে ব্যবসায়ী বেলাল হোসেনের ওপর হামলাকারীদের গ্রেফতার ও চাঁদাবাজমুক্ত বার্মিজ মার্কেট গড়ার দাবিতে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেছে ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা।
শনিবার সকাল থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত প্রায় পাঁচ শতাধিক দোকান বন্ধ রেখে কালো পতাকা উত্তোলন করে কর্মসূচি পালন করা হয়।


ব্যবসায়ীরা জানান, স্থানীয় সন্ত্রাসী নজরুল গ্রুপকে চাঁদা না দেয়ায় তারা শুটকি ব্যবসায়ী বেলালের ওপর ২৯ এপ্রিল হামলা চালায়। এ ঘটনায় ১৪ জনকে আসামি করে থানায় মামলা  দেয়া হয়। কিন্তু পুলিশ আজ পর্যন্ত  কোনো আসামিকেই গ্রেফতার করতে পারেনি। এ নিয়ে ব্যবসায়ীরা শঙ্কায় রয়েছেন।

পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ বার্মিজ মার্কেটে নিরাপদে ব্যবসা করার লক্ষ্যে নিয়মিত পুলিশ টহল জোরদার করারও দাবি জানান ব্যবসায়ী নেতারা।

রামুতে নির্বিচারে পাহাড় কাটা হচ্ছেঃ এক ব্যক্তির দুই বছরের সাজা

কক্সবাজারের রামু উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ি এলাকায় পাহাড় কাটা বন্ধে অভিযান চালিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। এ সময় পাহাড় কাটায় জড়িত থাকার অভিযোগে হাবিবুর রহমান নামের এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। পরে তাকে দুই বছরের সাজা দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত।

গত বৃহস্পতিবার রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শহীদ মোহাম্মদ ছাইদুল হক এ অভিযান চালান।

জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের চাইল্যাতলী, বারইয়াপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় নির্বিচারে পাহাড় কাটায় মেতে উঠেছে একাধিক পাহাড়খেকো চক্র। বিষয়টি অবহিত হয়ে উপজেলা প্রশাসন এ অভিযান চালায়। অভিযানে বারইয়াপাড়ায় পাহাড় কাটার সময় হাবিবুর রহমানকে পাহাড় কাটার সরঞ্জামসহ আটক করা হয়। হাবিবুর রহমান (৭০) স্থানীয় মৃত আবদুল মতলবের ছেলে। এ সময় ইউএনও পাশের চাইল্যাতলী এলাকায় আরও কয়েকটি পাহাড় কাটার ঘটনা সরেজমিন পরিদর্শন করেন। এ সময় এসব পাহাড় কাটায় জড়িতরা পালিয়ে যান। বৃহস্পতিবার বিকালে রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শহীদ মোহাম্মদ ছাইদুল হক পাহাড় কাটার ঘটনায় আটক হওয়ায় হাজী হাবিবুর রহমানকে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০-এর ৪ (চ) ১৫ ধারায় দুই বছরের সাজা দেন।

দুই হাজার ১১৪ একর বনাঞ্চল চিংড়ি চাষের জন্য ইজারা!

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন গত দেড় বছরে দুই হাজার ১১৪ একর বনভূমি চিংড়িঘেরের জন্য ইজারা দেওয়ার সুপারিশ করেছে।

এই সুপারিশ বাতিলের জন্য বন বিভাগ জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন-নিবেদন করলেও কোনো লাভ হয়নি। ইজারার প্রস্তাব ভূমি মন্ত্রণালয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছে জেলা প্রশাসন। কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলার জোয়ার-ভাটাবিধৌত এসব প্রাকৃতিক বন উপকূলের প্রাচীর হিসেবে ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে মূল ভূখণ্ডকে রক্ষা করে আসছে। এসব বন কেটে এখন চিংড়িঘের করা হচ্ছে।

জেলার মহেশখালী উপজেলার ঘটিভাঙার সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় পুরান খালের দুই পাশে ঘন বাইন ও কেওড়াগাছের সারি। বিএস ৩৩৮১ দাগের অন্তর্ভুক্ত আরও পাঁচ হাজার ৫৫৯ একর প্রাকৃতিক বনভূমিকেও ‘বনাঞ্চল নেই’ উল্লেখ করে ক্রমান্বয়ে চিংড়ি চাষের জন্য ইজারা দেওয়ার প্রস্তাব করেছে স্থানীয় ভূমি দপ্তর। প্রস্তাবটি এখন জেলা প্রশাসকের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
২০০৬-০৭ সালে একই প্রক্রিয়ায় ওই দাগের ১০৯ একর বনভূমিকে ‘বনাঞ্চল নেই’ দেখিয়ে স্থানীয় ১০ ব্যক্তিকে ইজারা দেওয়া হয়।
বনভূমি ইজারা প্রদানে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও জেলা প্রশাসকের চিংড়ি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন কমিটি গত ১৮ মাসে দুই হাজার ১১৪ একর বনভূমি ইজারা দিয়েছে। উন্নয়ন কমিটির সপ্তম থেকে ১২তম সভায় এসব বনভূমি ইজারা দেওয়া হয়। সপ্তম সভাটি হয় ২০১০ সালের আগস্ট মাসে। ওই সভায় ৩৯২ দশমিক ৫০ একর, অষ্টম সভায় ৩৭১ একর, নবম সভায় ৮৪ একর, দশম সভায় ২১৪ একর, ১১তম সভায় ৬৭৫ একর ও গত জানুয়ারির ১২তম সভায় ৩৭৬ একর বনভূমি চিংড়িঘেরের জন্য ইজারার সুপারিশ করে ভূমি মন্ত্রণালয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। এসব ভূমির ইজারা প্রক্রিয়া বাতিলের জন্য বন বিভাগ জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি দিয়েছে।
উপকূলীয় বন বিভাগের নথিপত্র থেকে দেখা যায়, ঘটিভাঙা এলাকার (৩৩৮১ বিএস দাগের) ১০৯ একর উপকূলীয় বনভূমি চিংড়ি চাষের জন্য ২০০৭ সালে ইজারা দেওয়া হয়। এই ইজারাটি বাতিলের জন্য বন বিভাগ থেকে বারবার চিঠি চালাচালি করা হয়। সর্বশেষ গত ১২ মার্চ এই উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) সুনীল কুমার কুণ্ডুর সই করা একটি চিঠি দেওয়া হয় জেলা প্রশাসক বরাবর। ওই চিঠিতে ১০৯ একরের ইজারা বাতিল ও একই দাগের পাঁচ হাজার ৫৫৯ একরের ইজারা সুপারিশ বাতিলের অনুরোধ করা হয়।
চিঠিতে বলা হয়, ‘৩৩৮১ দাগের ১০৯ একর বনভূমি আবুল কালামসহ ১০ জনের নামে বন্দোবস্ত দেওয়ার দলিল সম্পাদন করা হয়েছে। একই দাগের অনুকূলে বাটা দাগ দেখিয়ে আরও পাঁচ হাজার ৫৫৯ একর বনভূমি বাগান নেই বলে চিংড়ি চাষের জন্য ইজারা দেওয়ার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এসব বনভূমি বন আইনের ৪ ধারায় বিজ্ঞাপিত।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে বনভূমি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ইজারা না দেওয়ার সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। তাই ইজারা প্রস্তাব গ্রহণ না করার অনুরোধ করা হলো।’
উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় বন সংরক্ষক (ডিএফও) সুনীল কুমার কুণ্ডু প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইজারা পাওয়ার আগেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ঘটিভাঙার ওই বনাঞ্চলের পাশের খালে বাঁধ দিয়ে বন দখল শুরু করেছে। আমরা জেলা প্রশাসনকে ইজারা বন্ধের অনুরোধ করেছি। কিন্তু কোনো ফল এখনো পাইনি।’
সুনীল কুমার কুণ্ডু বলেন, ‘গত দেড় বছরে উন্নয়ন কমিটির সভায় দুই হাজার ১১৪ একর বনভূমি চিংড়ির জন্য ইজারার সুপারিশ করে ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এসব বনভূমি রক্ষায় বন বিভাগ আপত্তি দিয়েছে।’
জানা গেছে, কোনো ভূমি চিংড়িঘেরের জন্য ইজারা দেওয়ার আগে প্রথমে সহকারী কমিশনার, ভূমি (এসি ল্যান্ড) কার্যালয় থেকে জরিপ বা তদন্ত প্রতিবেদন চাওয়া হয়। এসি ল্যান্ড প্রস্তাব করলে তা জেলা প্রশাসকের কাছে যায়। জেলা প্রশাসকের চিংড়ি ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন কমিটির সভায় অনুমোদিত হয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ে ইজারা দেওয়ার সুপারিশ করে পাঠানো হয়। সেখান থেকে অনুমোদনের পর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ইজারা দলিল সম্পাদন করে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঘটিভাঙার বনাঞ্চলের ভেতরের পুরান খালে তিন ফুট চওড়া দুটি মাটির বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। বনের গাছ কেটে ওই বাঁধ রক্ষার জন্য খুঁটি পোঁতা হয়েছে। বন বিভাগের কর্মীরা জানান, মাস খানেক আগে তারা ওই বাঁধ ভেঙে দিলেছিল। কিন্তু আবার বাঁধ দেওয়া হচ্ছে।
জানতে চাইলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘কিছু কিছু জমি চিংড়িঘেরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছে। এর অনেকখানেই বনাঞ্চল নেই।’ তবে বন বিভাগের রেকর্ডের বাইরেও কিছু জমিতে বনাঞ্চল রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
ঘটিভাঙাতে বন থাকা অবস্থায় ইজারা প্রস্তাব দেওয়া প্রসঙ্গে মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘যদি বন থেকে থাকে তাহলে আপত্তি দিলে আমরা চিংড়িঘেরের ইজারা বাতিল করে দেব। আমি আবার গিয়ে সরেজমিনে দেখব।’
এসি ল্যান্ডের দায়িত্বে থাকা মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ টি এম কাউছার হোসেন বলেন, ‘ঘটিভাঙার চিংড়িঘের ইজারা প্রস্তাবটি আগে করা হয়েছিল। এখন পর্যন্ত ওগুলো অনুমোদিত হয়নি। আর যেগুলো ইজারা দেওয়া হয়েছে সেখানে বন বিভাগের বাধার মুখে এখনো অনেকে ঢুকতে পারেনি।’
বন আছে বন নেই: জানা গেছে, সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘোষণার প্রাথমিক প্রক্রিয়া হিসেবে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। ওই কমিটির মধ্যে স্থানীয় জরিপকারক (সার্ভেয়ার), তহসিলদার ও বন বিভাগের বিট কর্মকর্তাকে রাখা হয়েছে।
সরেজমিনে মহেশখালী গোরকঘাটা জেটির দুই পাশে যতদূর চোখ যায় গাঢ় বন দেখা যায়। এখানে ১৫০ একর বন রয়েছে বলে দাবি করেছে বন বিভাগ। কিন্তু ভূমি কার্যালয়ের তহসিলদার ও সার্ভেয়ার প্রতিবেদন দিয়েছেন, ওখানে বন আছে মাত্র ৩২ একর।
একইভাবে আদিনাথ মন্দির জেটির পাশে পাহাড় ঠাকুরতল ও ঠাকুরতল মৌজায় বিএস ৭০২, ৭২৪ ও ৭২৬ দাগে ১৭৫ একর বন রয়েছে বলে বন বিভাগের দাবি। কিন্তু ভূমি দপ্তর মাত্র ৩০ একর বন রয়েছে বলে প্রতিবেদন দেয়। সার্ভেয়ার ও তহসিলদার বন বিভাগের মানচিত্রও কলমের কালি দিয়ে কেটে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বন বিভাগের বিট কর্মকর্তা এ নিয়ে আপত্তি করেছেন, কিন্তু আপত্তি টেকেনি।
বনাঞ্চল কম দেখানোর কথা স্বীকার করে মহেশখালী ভূমি কার্যালয়ের তহসিলদার মোক্তারুল ইসলাম বলেন, ‘আদিনাথ মন্দিরের আশপাশে ৭০ একরেরও বেশি বনাঞ্চল রয়েছে। কিন্তু এগুলো ৪ ধারায় গেজেট নোটিফিকেশন হলেও বন বিভাগ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। যেসব দাগে বনাঞ্চল আছে বলে তাঁরা দাবি করছেন সেগুলোতে সেভাবে বন নেই। আশপাশের অন্যান্য দাগেও বনাঞ্চল রয়েছে।’
তহসিলদার আরও বলেন, ‘আমরা প্রাথমিক একটি প্রতিবেদন দিয়েছি। প্রয়োজনে সহকারী জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) পরিদর্শনের পর নতুনভাবে প্রতিবেদন দেব।’
বিট কর্মকর্তা অসীম কান্তি দাশ বলেন, ‘এ জায়গায় বন যে রয়েছে তা তো দেখাই যায়। আমি এ নিয়ে তাদের সঙ্গে বাগিবতণ্ডা করেছি। কিন্তু তারা মানতে চায় না।’
ইউএনও এ টি এম কাউছার হোসেন বলেন, ‘ঘটিভাঙা, গোরকঘাটা ও আদিনাথ মন্দিরের আশপাশে শত শত একর বনাঞ্চল আছে। কিন্তু এগুলো এখনো খাসখতিয়ানভুক্ত না হওয়ায় বনাঞ্চল কম দেখানো হতে পারে। কিন্তু বন আছে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই।’

সৈকতের ঝাউ বাগান প্রভাবশালীদের দখলে

কক্সবাজার-টেকনাফ পর্যন্ত দীর্ঘ ১২০ কিলোমিটার সৈকতের ঝাউবন দিন দিন দখল হয়ে যাচ্ছে। নতুন ঘর তৈরি করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
এসব দখলদার বেশিরভাগই মিয়ানমার নাগরিক। কর্তৃপক্ষ এতদিন নীরব দর্শকের ভূমিকায় থাকলেও গত বুধবার সৈকত এলাকার অবৈধ দখলদারের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। এ অভিযানের প্রথম দিনে ৬-৭টি দোকান তুলে দেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজার-ইনানী-মোহাম্মদ শফির বিল-মনখালী দখলকৃত সৈকতের ঝাউবন এলাকায় অবৈধভাবে বসবাসকারীদের উচ্ছেদ করতে অভিযান চালানো হলেও টেকনাফ সৈকত দখলকারীদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়নি কোনোদিন। ফলে সম্প্রতি সৈকত দখলদারদের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। তারা শুধু সৈকত দখল করে দীর্ঘ সমুদ্রসৈকতের সৌন্দর্য ও পরিবেশ বিনষ্ট করছে না, ঝাউবীথি কেটে উজাড় করছে। যে এলাকায় ঝাউবীথি কেটে ফেলা হয়েছে সে সৈকতের অনেক অংশ সাগরগর্ভে চলে গেছে। পরিবেশবিদ আবদুল মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, উপকূলীয় এলাকার জমি হলো সরকারের এবং গাছগুলো উপকূলীয় বন বিভাগের। পৃথক দুটি দফতরের সমন্বয়হীনতার ফলে সৈকতের জমি ও ঝাউবীথি রক্ষা করা যেত। রাজনীতিতে স্বার্থের বাইরে কেউ নয়।
দখলদাররা কোনো না কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তির ছত্রছায়ায় থেকে সৈকত দখল করছে প্রতিনিয়ত। আর প্রভাবশালীরা রাজনৈতিক নেতা। তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় অসংখ্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে সাইন বোর্ড দিয়ে সৈকত দখল করা হচ্ছে। টেকনাফে বগদা হ্যাচারি, সোনারগাঁ হ্যাচারি, সোনার পাড়ায় সিমিজু হ্যাচারি, হোয়াইট গোল্ড হ্যাচারি ও বেঙ্গল হ্যাচারির নামে বিশাল আয়তনের সমুদ্রসৈকতের জমি দখল করে রাখা হয়েছে। এসব হ্যাচারির লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা এসব জবর-দখল বলে স্বীকার করে না। তার মনে করে, সৈকতের ঝাউবীথি রক্ষা করছে। আবার অনেকে জানায়, ওই সব দখলদার প্রথমে সৈকতের ঝাউবীথির যত্ন নেওয়ার কথা বলে বেড়া দিয়ে পরে ঝাউগাছ উজাড় করে বিভিন্ন কায়দায় ইজারা নিয়ে সেখানে স্থাপনা গড়ে তুলছে। তা ছাড়া প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ভূমিহীন মানুষকে আশ্রয় দিয়ে সেখানে খড়ের ঘর করে দখল নিশ্চত করে। তারা বেশির ভাগই মিয়ানমার নাগরিক।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক জয়নুল বারী বলেন, অবৈধভাবে যারা দখল করেছে বিচ এলাকা তাদের ধারাবাহিকভাবে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। তিনি জানান, এ উচ্ছেদ অভিযানের কার্যক্রম কেবল শুরু হয়েছে। পুরো সৈকত এলাকা দখলমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত এ কাজের ধারাবাহিকতা থাকবে।

১২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভাঙা

কক্সবাজারের সমুদ্র উপকূলীয় উপজেলা পেকুয়ার প্রায় ১২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভাঙা ও ঝুঁকিপূর্ণ। এতে উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ দুর্যোগ-ঝুঁকিতে আছে।

এত মানুষের প্রাণ রক্ষায় উপজেলায় প্রয়োজনীয়সংখ্যক ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রও নেই। মগনামা ইউনিয়নের কাকপাড়ার জেলে আবদুল মাজেদ ও আবুল কালাম জানান, তাঁদের বাড়ির পাশে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নির্মিত প্রায় এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধের ৮০ শতাংশ ইতিমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। এখন সামান্য জোয়ারের পানিতে ভাঙা বাঁধ প্লাবিত হয়ে যায়। আসন্ন বর্ষায় উত্তাল সাগরের ঢেউয়ে এ বাঁধ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। সাগরে হারিয়ে যাবে এ গ্রামের দেড় শতাধিক বসতবাড়ি।
স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধি জানান, উপজেলার সমুদ্র উপকূলবর্তী ইউনিয়ন মগনামা, উজানটিয়া, রাজাখালী, পেকুয়া সদর ও বারবাকিয়ার লক্ষাধিক মানুষ এখন আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছে। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে এসব গ্রামের সাত হাজার মানুষ মারা যায়। সেই স্মৃতি এখনো মোছেনি। তাই ঘরে ঘরে দুর্যোগ-আতঙ্ক লেগে আছে। উপজেলায় ৪৫ কিলোমিটার উপকূলীয় বেড়িবাঁধ আছে। এর মধ্যে প্রায় ১২ কিলোমিটার মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। আরও ১১ কিলোমিটার বাঁধ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় পড়ে আছে বলে জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।
মগনামা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান শহিদুল মোস্তফা জানান, এই ইউনিয়নের কাকপাড়া পয়েন্টে এক কিলোমিটার, শরৎঘোনা পয়েন্টে এক কিলোমিটার ও পশ্চিমকুল এলাকার আধা কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভাঙাচোরা। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ভাঙা এই বাঁধ মেরামত করা না হলে ৪০ হাজার মানুষের ঘরবাড়ি সাগরে তলিয়ে যাবে।
উজানটিয়া ইউপির চেয়ারম্যান এ টি এম শহিদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, এ ইউনিয়নের করিয়ারদিয়ায় দেড় কিলোমিটার ও গোদারপাড় এলাকায় দেড় কিলোমিটার বাঁধ ভাঙা। বর্ষার আগে সংস্কার জরুরি। নয়তো ইউনিয়নের ৪০ হাজার মানুষ ঝুঁকির মুখে পড়বে। রাজাখালী ইউপির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম সিকদার জানান, তাঁর ইউনিয়নের বকশিয়া ঘোনারটেক থেকে নতুনঘোনা পর্যন্ত সাত কিলোমিটার বাঁধ ভাঙাচোরা। বর্ষার আগে মেরামত না করলে ইউনিয়নের ৪৫ হাজার মানুষ দুর্যোগের কবলে পড়বে। চেয়ারম্যান নজরুল জানান, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হলেও এই ইউনিয়নে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র আছে মাত্র পাঁচটি। জরুরি ভিত্তিতে বকশিয়াঘোনা, নতুন ঘোনা ও মাতবরপাড়ায় আরও তিনটি আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপনের জন্য লেখালেখি করেও সাড়া মিলছে না।
পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুর-ই খাজা আলামীন জানান, জলোচ্ছ্বাস থেকে লোকজনকে রক্ষার জন্য এই উপজেলায় নতুন করে সাতটি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করা হবে। এর মধ্যে মগনামায় তিনটি, রাজাখালীতে দুটি এবং উজানটিয়া ও বারবাকিয়ায় একটি করে কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। সম্প্রতি ভাঙা বাঁধ পরিদর্শন করে দ্রুত সংস্কারের জন্য ঊর্ধ্বতন মহলে তাগাদা দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে অতি ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধের নির্মাণকাজ শেষ করা না গেলে বর্ষায় সেই কাজ সম্ভব হবে না।
পাউবো কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মইনুদ্দিন জানান, মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ ও নড়বড়ে বেড়িবাঁধ দ্রুত সময়ের মধ্যে ঠিক করার চেষ্টা চলছে।

মহেশখালীতে চার কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক!

দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার যাতায়াতের একমাত্র প্রধান সড়কের (গোরকঘাটা-জনতাবাজার) চার কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

এ ছাড়া সড়কের বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং উঠে গিয়ে খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। তা সংস্কারের ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ উঠেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার প্রধান সড়ক গোরকঘাটা-জনতাবাজার সড়কের বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং উঠে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গত বছর বর্ষার মৌসুমে বৃষ্টির পানি ও পাহাড়ি ঢলে সড়কটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া গোরকঘাটা-জনতাবাজার সড়কের মধ্যে হোয়ানকের ধলঘাটপাড়া, পানিরছড়া, কেরুনতলী বাজারের দুটি অংশ, ছনখোলাপাড়া ও কালারমারছড়া এলাকার মাইজপাড়া সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভেঙে গেছে। কালারমারছড়া উত্তরনলবিলার এলাকার বাসিন্দা মোহামঞ্চদ আলমগীর হোসেন বলেন, বিকল্প যাতায়াতের উপায় না থাকায় বাধ্য হয়ে স্থানীয় এলাকাবাসী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ সড়ক দিয়ে উপজেলা সদরে যাতায়াত করছে। আর সড়কের করুণ অবস্থার কারণে ৩০ মিনিটের পথ যেতে এখন সময় লাগে দুই ঘণ্টার বেশি। একদিকে সময় নষ্ট, অন্যদিকে গাড়ির ঝাঁকুনিতে যাত্রীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে বলে তিনি জানান।
হোয়ানক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনামুল করিম চৌধুরী জানান, সড়কগুলো সংস্কারের ব্যাপারে উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় অনেকবার উত্থাপন করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ টি এম কাউসার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সড়ক সংস্কারের ব্যাপারে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

রামুতে পাহাড় কাটার দায়ে একজনের কারাদণ্ড

কক্সবাজারের রামু উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নে পাহাড় কাটার দায়ে হাবিবুর রহমান (৭০) নামের এক ব্যক্তিকে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী হাকিম শহীদ মো. ছাইদুল হক জানান, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে বসতঘরসংলগ্ন একটি পাহাড় কাটার সময় হাবিবুর রহমানকে হাতেনাতে আটক করা হয়।
তবে অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে কয়েকজন আগেভাগেই পালিয়ে যান। এ সময় পাহাড় কাটার কিছু সরঞ্জামও জব্দ করা হয়। পরে হাবিবুরকে দুই বছরের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
ইউএনও শহীদ মো. ছাইদুল হক আরও জানান, দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের চাইল্যাতলী ও বারইয়াপাড়াসহ বিভিন্ন জায়গায় নির্বিচারে পাহাড় কাটা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে এই অভিযান চালানো হয়।