Monday, January 17, 2011

অমানুষিক পন্থায় ভিক্ষাবৃত্তি

ভিক্ষার পাত্র হাতে অন্ধ-বধির কিংবা বিকলাঙ্গ অনেক শিশুকে দেখিতে পাওয়া যায় শহরাঞ্চলে, জনাকীর্ণ স্থানে। এইসব হতভাগ্য শিশুর কেহ কেহ জন্মগতভাবেই প্রতিবন্ধী। কাহারো কাহারো অঙ্গহানি হয়তো ঘটিয়াছে জন্মের পরে নানান রোগে ভুগিয়া।

কিন্তু ইহার বাহিরেও ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত শিশুদের একটি শ্রেণী রহিয়াছে, যাহারা পথে বসিয়াছে অভাবনীয় নিষ্ঠুরতার শিকার হইয়া। পথে তাহারা ইচ্ছাকৃতভাবে বসিয়াছে, তাহাও বলা যাইবে না। প্রকৃতপক্ষে তাহাদের অপহরণ করিয়া হাত-পা ভাঙ্গিয়া দিয়া কিংবা অঙ্গচ্ছেদন করিয়া বিকলাঙ্গ বানান হইয়াছে। তাহাদের চলৎশক্তিহীন করিয়া হাতে ধরাইয়া দেওয়া হইয়াছে ভিক্ষাপাত্র এবং বসাইয়া দেওয়া হইয়াছে পথে, রেল স্টেশনে, স্টিমারঘাটে অথবা অন্য কোনো জনাকীর্ণ স্থানে। উদয়াস্ত ভিক্ষা করিয়া এই নিষ্পাপ শিশুরা যাহা পায় তাহা চলিয়া যায় নির্দয় দুষ্টচক্রের হাতে। র্যাব সদর দফতরে আহূত এক সংবাদ সম্মেলনে সম্প্রতি রক্ত হিম হইয়া আসা এহেন অমানুষিকতার তথ্য প্রকাশ করা হয়। দুইটি মানবাধিকার সংস্থার সহযোগিতায় র্যাব কামরাঙ্গিরচর হইতে এই বর্বরতার হোতাদের একজনকে গ্রেফতার করে। অভিযুক্ত পালের গোদাটিকে র্যাব সদর দফতরে সাংবাদিকদের সামনে হাজিরও করা হইয়াছিল। সেখানে সেই-ই তাহাদের এইরূপ অপকর্মের বিবরণ দিয়াছে। দুষ্কৃতকারী এই চক্রটি যে শুধু শিশুদের অপহরণ করিয়া ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত করে তাহা নয়, ইহারা মেয়েদেরও তুলিয়া নিয়া গিয়া অনৈতিক কাজে নিয়োজিত করিয়া অর্থ উপার্জন করিয়া থাকে।

এই ধরনের নিষ্ঠুরতার সংবাদে সামান্য মানবিক বোধসম্পন্ন ব্যক্তিমাত্রই বিমর্ষ-বিচলিতবোধ করিবেন, ইহাই স্বাভাবিক। তবে ইহাও সত্য যে, বিষয়টি বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের এক রূঢ় বাস্তবতা। আর, এই অনভিপ্রেত বাস্তবতার মূলে যে কারণটি ক্রিয়াশীল তাহা আর কিছু নয়, দারিদ্র্যের তীব্র কশাঘাত। বাস্তবিপক্ষেই দারিদ্র্য এক ভয়ংকর অভিশাপ। সত্য বটে, কঠিন দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করিয়াও সমাজের এক বৃহৎ অংশ সাধু জীবন-যাপনের চেষ্টা করিয়া থাকেন। কিন্তু দারিদ্র্যের আরেক ধরনের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়া থাকে অপরাধপ্রবণতা এবং ভিক্ষুক মানসিকতার মধ্য দিয়া। এইজন্যই বলা হইয়া থাকে, দারিদ্র্য মানবজীবনে অনেক ক্ষেত্রে পাপের পথ খুলিয়া দেয়। তৃতীয় বিশ্বের গরীবীলাঞ্ছিত দেশসমূহে ভিক্ষাবৃত্তি করিয়া জীবনধারণ করিয়া থাকে, এমন লোকের সংখ্যা অনুলেস্নখ্য নয়। কালক্রমে তাহারা ভাবিতে ও বিশ্বাস করিতে শুরু করে যে, ভিক্ষাও একটি পেশা। এই কাজ করিয়াও আয়-রোজগার করা যায়। এইরূপ মানসিকতাই দুষ্টচক্রকে নিষ্ঠুর পন্থায় অন্যকে, সমাজের অসহায়দের ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত করিয়া আয় করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়া থাকে। যাহারা এহেন নির্দয় পন্থা অবলম্বন করে, তাহারাও যে অর্থনৈতিকভাবে খুব সচ্ছল-সম্পন্ন, তাহা নয়। উহারাও আদতে দরিদ্র, কিন্তু চতুর এবং নিষ্ঠুর।

কাজেই সমস্যাটি মূলত:দারিদ্র্যের। যাহারা অপরাধ করে, যাহারা শিশু ও নারী অপহরণ করে, যাহারা শিশুদের বিকলাঙ্গ করিয়া ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত করে, তাহাদের পাকড়াও করিয়া দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি; সে-তো দিতেই হইবে। কিন্তু মূল যে সমস্যা দারিদ্র্য; সেই বৃত্ত হইতেও বাহির হইয়া আসিতে হইবে। উৎপাদন বৃদ্ধি এবং ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করিতে না পারিলে এই সমস্যার টেকসই সমাধান অসম্ভব।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সদ্য সমাপ্ত নির্বাচন প্রসঙ্গে by আবদুল গাফফার চৌধুরী

ইংরেজি নতুন বছরের প্রথম দিনটিতেই ঘুম থেকে জেগে ঢাকা থেকে যে প্রথম খবরটি পেয়েছি, তাতে খুব একটা স্বস্তি পাইনি। ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের নতুন কর্মকর্তা নির্বাচনের খবরটি আমাকে খুশি করেনি। মনে হলো নতুন বছরের পয়লা দিনে টেলিফোনে অসংখ্য হ্যাপি নিউ ইয়ার মেসেজ পেতে পেতে একটি আনহ্যাপি খবর পেলাম।

আগেই বলে রাখি কেউ যেন আমাকে ভুল না বোঝেন। নির্বাচনে কারা জিতেছেন বা কারা হেরেছেন, তার ভিত্তিতে আমার এই খুশি বা অখুশি হওয়া নয়। নির্বাচনে হার-জিত আছেই। সেদিক থেকে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের যারা নতুন কর্মকর্তা হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন তাদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাই এবং জাতীয় প্রেসক্লাবের অতীত ঐতিহ্য এবং সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি ধরে রাখা ও বাড়ানোর কাজে তাদের সাফল্য কামনা করি।

আমার অস্বস্তিতে ভোগা ও অখুশি হওয়ার কারণ, দেশ ও জাতির অন্যতম প্রধান দিশারি বলা হয় যে সাংবাদিকদের, বাংলাদেশে তাদের একটি প্রধান কেন্দ্রের বা সংগঠনের নির্বাচন পেশাদারিত্বের ভিত্তিতে নয়, দলীয় ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হওয়ার অভিযোগ। স্বাধীনতার আগে কেবল সাংবাদিক সংগঠন নয়, পেশাজীবী কোনো সংগঠনেই যেমন শিক্ষক সমিতি, আইনজীবী সমিতি, চিকিৎসক সমিতি ইত্যাদি কোনো সমিতি-সংগঠনের মধ্যে রাজনৈতিক কোনো দলের প্রতি আনুগত্যের ভিত্তিতে বিভাজন ছিলো না। সংগঠনগুলোর সদস্য সংগ্রহ বা কর্মকর্তা নির্বাচনেও দলীয় আনুগত্য নয়, পেশাদারি যোগ্যতাই বিবেচনা লাভ করতো।

তা বলে কি সাংবাদিক, শিক্ষক বা আইনজীবীরা রাজনীতি করতেন না, তাদের নিজেদের পছন্দের রাজনৈতিক দলের প্রতি আনুগত্য দেখাতেন না? অবশ্যই দেখাতেন। দেশের প্রত্যেকটি ছোট-বড় রাজনৈতিক দলেই প্রত্যেক পেশার লোকজন ছিলো, এখনো আছে। রাজনৈতিক দলে তারা নেতৃত্বও দিয়েছেন এবং এখনো দেন। কিন্তু পেশার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক মত ও দলের আনুগত্য দ্বারা বিভক্ত ছিলেন না। সেখানে পেশাদারি সমিতিগুলো পেশার ও পেশাজীবীদের স্বার্থ ও অধিকার রক্ষার লক্ষ্যকে সামনে রেখে গঠিত এবং পরিচালিত হতো। এই সংগঠনগুলোতেও রাজনৈতিক মতপার্থক্য টেনে আনলে পেশা ও পেশাজীবীদের স্বার্থ ও ঐক্য যে রক্ষা করা যাবে না এটা তারা বুঝতেন।

পাকিস্তান আমলে মিডিয়ার সম্পাদক থেকে শুরু করে সর্বস্তরের সাংবাদিকেরা রাজনীতি-নিরপেক্ষভাবে পেশাজীবী ঐক্যের গুরুত্ব বুঝতেন বলেই ঢাকায় প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক ইউনিয়নের কর্মকর্তা নির্বাচনে বা মনোনয়নে লক্ষ্য রাখা হতো যাদের কর্মকর্তা পদে বসানো হচ্ছে, তারা মর্যাদাবান সম্পাদক অথবা সাংবাদিক কিনা অথবা সাংবাদিকদের পেশাদারি ঐক্য ও স্বার্থ রক্ষার ক্ষেত্রে উপযুক্ত নেতৃত্ব দেওয়ায় যোগ্যতা রাখেন কিনা?

এই বিবেচনা বাংলাদেশের সাংবাদিকদের মধ্যে সেই পাকিস্তান আমলেই অভূতপূর্ব ঐক্য গড়ে তুলেছিল এবং কেবল সাংবাদিকদের স্বার্থ ও অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে নয়, গণঅধিকার ও স্বার্থ রক্ষার ক্ষেত্রেও অগ্রণী ভূমিকা পালনে তাদের এগিয়ে দিয়েছিল। রাজনৈতিক পরিচয়ের বিবেচনায় নয়, পেশার ক্ষেত্রে নিজেদের বিরাট মর্যাদা ও নেতৃত্বগুণের জন্যই তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া ও আবদুস সালামের মতো তৎকালীন সম্পাদকেরা সর্বসম্মতভাবে তখনকার ঢাকা প্রেসক্লাবের সভাপতি হতে পেরেছিলেন।

অথচ মানিক মিয়া ও আবদুস সালাম ছিলেন তখনকার পরস্পর বিরোধী রাজনৈতিক মতের দুই সংবাদপত্রের সম্পাদক। প্রতিদিন তারা পরস্পরের রাজনৈতিক মত ও কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তীব্র তীক্ষ্ন ভাষায় কলম চালাতেন, তারপর যখন প্রেসক্লাবে আসতেন তখন তারা শুধু ব্যক্তিগত বন্ধুত্বের পরিচয় দিতেন না, পরিচয় দিতেন সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, সাংবাদিকদের স্বার্থ ও অধিকার রক্ষার ব্যাপারে ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধার।

পাকিস্তান আমলে শুধু ঢাকা প্রেসক্লাবের নয়, সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের সকল জেলা ও মফস্বল এলাকার প্রেসক্লাবগুলোরও একটা বিরাট প্রোপিউপল রোল ছিলো। গণঅধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে দলমত নির্বিশেষে সকল সাংবাদিকই ছিলেন একাট্টা। সেকারণে অনেক প্রলোভন এবং ভয় দেখিয়েও আইয়ুব, ইয়াহিয়া বা মোনেম খানের মতো তৎকালীন স্বৈর শাসকেরা ঢাকা প্রেসক্লাবে আসার জন্য কোনো আমন্ত্রণ পাননি এবং তারা আসতে চেয়েও আসতে পারেননি। গভর্নর মোনেম খানের কাগজ দৈনিক পয়গামের (অধুনালুপ্ত) সাংবাদিকেরাও মোনেম খানের প্রেসক্লাবে আসার ব্যাপারে বিরোধিতাকে সমর্থন দিয়েছেন।

ফলে শুধু সারা পাকিস্তানে নয়, সারা উপমহাদেশেই ঢাকার প্রেসক্লাব একটি অনন্য ভূমিকার মর্যাদা লাভ করেছিল। দিলিস্নর ইংরেজি দৈনিক প্রেট্রিয়টের এক সম্পাদক ঢাকার প্রেসক্লাব দেখে দিলিস্নতে ফিরে গিয়ে তার কাগজে লিখেছিলেন, ঢাকা প্রেসক্লাব কেবল সিটি জার্নালিস্টদের একটি কেন্দ্র নয়, এটি শহরের বুদ্ধিজীবীদেরও একটি প্রাণকেন্দ্র এবং বাঙালির জাতীয় জীবনে এর রয়েছে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এই গুরুত্বের কথা জেনেই পাকিস্তানি হানাদারেরা একাত্তর সালে মার্চের সেই ভয়াল রাতগুলোর একটিতে এই প্রেসক্লাবকেই তাদের গোলাবর্ষণের অন্যতম প্রধান টার্গেট করেছিলো।"

বিস্ময়ের কথা এই যে, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ঢাকা প্রেসক্লাব জাতীয় ইনস্টিটিউশনের মর্যাদায় উন্নীত হওয়ায় যেখানে এর ঐক্য ও মর্যাদা আরও বহুগুণ বেড়ে যাওয়া উচিত ছিলো, পরিবর্তে তা নিম্নমুখী হয়। আগের ভবনের বদলে নতুন সুরম্য ভবন তৈরি হয়েছে, কিন্তু স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার নতুন ইমেজ গড়ে ওঠেনি। বরং দলীয় রাজনীতির প্রতি আনুগত্য সাংবাদিকদের একটা বড় অংশের মধ্যে প্রধান্য লাভ করায় দেশের অন্যান্য পেশাজীবী সংগঠনের মতো সাংবাদিক ইউনিয়ন এবং জাতীয় প্রেসক্লাবেও অনৈক্য ও দলাদলির সূত্রপাত হয়। ফলে জাতীয় প্রেসক্লাবের যেখানে হয়ে ওঠা উচিত ছিলো সাংবাদিকতায় জাতীয় ঐক্যের প্রতীক, তা হয়ে দাঁড়ায় অনৈক্যের প্রতীক।

পৃথিবীর আর কোনো গণতান্ত্রিক দেশে সাংবাদিকেরা তো বটেই, কোনো পেশার মানুষই রাজনৈতিক দলের প্রতি আনুগত্যের ভিত্তিতে বিভক্ত নয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশে তারা বিভক্ত। সামরিক ছাউনিতে জেনারেল জিয়াউর রহমানের বিএনপি গড়ে উঠতেই পেশাজীবী সংগঠনগুলোর মধ্যে ভাঙন ও বিভক্তি শুরু হয়। গড়ে উঠতে থাকে নামের আগে জাতীয়তাবাদী ছাপ মেরে বিভিন্ন সংগঠন। কোনো সংগঠনের নামের আগে জাতীয়তাবাদী ছাপ দেখলেই বুঝতে হবে এটা বিএনপিপন্থী পেশাজীবীদের সংগঠন। জাতীয় প্রেসক্লাব এই জাতীয়তাবাদী ছাপটি লাগিয়ে এখনো বিভক্ত হয়নি। তার কারণ সম্ভবত: এটি এখনো জাতীয়তাবাদীদের কব্জায়।

আগেই বলেছি, পৃথিবীর আর কোনো গণতান্ত্রিক দেশে আইনজীবী, শিক্ষক, ব্যবসায়ী বা সাংবাদিক প্রমুখ পেশাজীবী শ্রেণী রাজনৈতিক দলের আনুগত্যের ভিত্তিতে বিভক্ত নয়। একমাত্র এই বিভক্তি ঘটেছিল গত শতকের ত্রিশের দশকে জার্মানীতে হিটলারের ন্যাশনালিস্ট সোসালিস্ট পার্টি বা নাৎসিদের শাসনামলে। নাৎসিদের প্রতি আনুগত্যের প্রমাণ হিসেবে জার্মানীর প্রত্যেকটি পেশাজীবী সংগঠন তাদের নামের আগে ন্যাশনালিস্ট বা জাতীয়তাবাদী লাগাতে বাধ্য হয়েছিলো। এমনকি জার্মানীর পতিতাদের সংগঠন (তখনও যৌনকমর্ী কথাটির প্রচলন ও ব্যবহার শুরু হয়নি) তাদের পতিতা সমিতির নামের আগে জাতীয়তাবাদী কথা লাগিয়ে জাতীয়তাবাদী পতিতা সমিতি হয়েছিলো।

কোনো ফ্যাসিস্ট দেশের এই প্রথা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে অনুসৃত হতে পারে না এবং রাজনৈতিক দলের প্রতি আনুগত্যের ভিত্তিতে পেশাজীবী শ্রেণীগুলো বিএনপিপন্থী (জাতীয়তাবাদী) বা আওয়ামী পন্থী হিসেবে বিভক্ত ও পরিচিত হতে পারে না। যদি হয় তাহলে পেশাজীবীদের ঐক্য, স্বার্থ ও অধিকারের যেমন গুরুতর ক্ষতি হবে, তেমনি ক্ষতি হবে স্বাধীন পেশাদারিত্বের ও জাতীয় ঐক্যের। পেশাজীবীরা তাদের পছন্দমতো রাজনৈতিক দলে যোগ দিন এবং রাজনীতি করুন, গণতান্ত্রিক দেশেও কেউ তাতে আপত্তি করবে না। কিন্তু পেশার ক্ষেত্রে নিরপেক্ষভাবে শুধু পেশার স্বার্থ ও অধিকার রক্ষার লক্ষ্যেই তারা ঐক্যবদ্ধ হবেন এবং থাকবেন। তাহলেই মাত্র বৃহত্তর ক্ষেত্রে জাতীয় ঐক্য ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষা পাবে।

আমার দুঃখ, বাংলাদেশ আজ শুধু রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত ও অবিরাম সংঘাতে লিপ্ত নয়, তারা, যে পেশাগুলো জাতীয় স্বার্থ ও অধিকার রক্ষা করে সেগুলোর ক্ষেত্রেও বিভক্ত। জাতীয় প্রেসক্লাবের সদ্য সমাপ্ত নির্বাচন দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হওয়ায় এবং যোগ্যতার ও নেতৃত্বগুণের বদলে বিশেষ দলের অনুসারীদের অধিকাংশ পদে বিজয়কে সেই দলের রাজনৈতিক বিজয় বলে প্রচারিত হওয়ায় মনে হয়, জাতিকে যারা পথ দেখাবেন, সেই সাংবাদিকদের একটা বড় অংশই সাংবাদিকতা পেশার নিরপেক্ষতার মর্যাদা রক্ষার বদলে দলীয় স্বার্থে এখনো পরিচালিত হচ্ছেন এবং পেশার ও দেশের অবর্ণনীয় ক্ষতি সম্পর্কে এখনো সচেতন হননি।

যে দু'জন প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক (সম্পাদক) তাদের নেতৃত্ব, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা দ্বারা জাতীয় প্রেসক্লাবের পূর্ব মর্যাদা ফিরিয়ে আনতে পারতেন, তারা দু'জনেই দু'টি গুরুত্বপূর্ণ পদে পরাজিত হয়েছেন। এটা তাদের ব্যক্তিগত পরাজয় নয় এবং তাদের ব্যক্তিগত মর্যাদা ও সুনামেরও কোনো হানি হয়নি। তারা দেশের অন্যান্য পেশার ক্ষেত্রে যা ঘটেছে, সাংবাদিকতার পেশার ক্ষেত্রেও সেই বিচারবুদ্ধিহীন অশুভ দলবদ্ধতার শিকার হয়েছেন। এতে সম্পাদক দু'জনের কোনো ক্ষতি হবে না। ক্ষতি হবে দেশের সাংবাদিকতা ও প্রেসক্লাবের সুনামের।

আমাকে কয়েকজন নিরপেক্ষ সাংবাদিক বলেছেন, জাতীয় প্রেসক্লাব বর্তমানে এমনভাবে একটি দলের অনুসারীদের কব্জাবন্দি হয়ে আছে যে, কোনো অত্যন্ত জনপ্রিয় সাংবাদিকের পক্ষেও সাধারণ ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকদের ভোটে নির্বাচিত হওয়া অসম্ভব। দল সমর্থক প্রাথর্ী যোগ্য-অযোগ্য যাই হোক তাকে জেতাতেই হবে। এই অন্ধ উন্মাদনা থেকে একটি দৈনিকের সাবেক মালিক বিদেশে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় একদিনের জন্য ঢাকায় ছুটে এসেছিলেন। আরেক প্রেসক্লাব সদস্য গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় এম্বুলেন্সে চেপে এসেছিলেন ভোট দিতে। জাতীয় প্রেসক্লাবের নির্বাচনেই যদি এই অবস্থা দাঁড়ায়, তাহলে আগামী সাধারণ নির্বাচনে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সে কথাও ভেবে দেখার মতো।

জাতীয় প্রেসক্লাবকে দলীয় কব্জা থেকে মুক্ত করে পূর্ব মর্যাদায় ফিরিয়ে আনা দেশের সাধারণ সাংবাদিকদেরই কর্তব্য। তারা পাল্টা দলীয় ভিত্তিতে নয়, সাংবাদিকতার নিরপেক্ষ পেশাদারিত্বের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হোন এবং জাতীয় প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্র সংশোধনসহ তার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় গণতান্ত্রিক পরিবর্তন ঘটানোর জন্য প্রচেষ্টা শুরু করুন। প্রেসক্লাব বিএনপি বা আওয়ামী লীগ কোনো দলেরই রাজনৈতিক স্বার্থে পরিচালিত হতে পারে না। জাতীয় প্রেসক্লাব পরিচালিত হবে জাতীয় সাংবাদিকতার নিরপেক্ষতা এবং পেশাদারিত্বের নিভর্ীকতার ভিত্তিতে। প্রেসক্লাব কেন, কোনো পেশাজীবী সংগঠনেরই দলদাস হওয়া উচিত নয়।

তারল্য সংকট, বিক্রির চাপ: ফের শেয়ারের দরপতন

রপতন দিয়ে সপ্তাহ শেষ হয়েছিল বৃহস্পতিবার। সেই ধারা থেকে বেরোতে পারেনি গতকাল রবিবারের শেয়ারবাজার। বাজার বিশ্লেষকদের ধারণা, গত সোম ও মঙ্গলবার দরপতনের সুযোগ নিয়ে যেসব বিনিয়োগকারী (প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ) শেয়ার কিনেছিলেন, গতকাল তাঁদের অনেকেই লাভ উঠিয়ে নিয়েছেন।

বিশেষ করে প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে অতিমাত্রায় শেয়ার বিক্রির কারণে অল্প সময়ের ব্যবধানে গতকাল অধিকাংশ কম্পানির শেয়ারের দরপতন ঘটে বলেও কেউ কেউ মনে করছেন। এদিকে বর্ধিত মার্জিন ঋণ প্রদানে গতকালও বিভিন্ন মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসগুলোর ছিল অনীহা। ফলে বিক্রি আর ক্রয়ের মধ্যে ভারসাম্য থাকেনি। ঘটে দরপতন।
পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, এখনো বিনিয়োগকারীদের মন থেকে আতঙ্ক দূর হয়নি। তিনি বলেন, সরকারের চাপে বাজারের পতন ঠেকাতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কিনেছিল। এখন হয়তো সেগুলো বিক্রি করে দিচ্ছে। এ কারণে গতকাল বিক্রির চাপ ছিল বেশি। এ ছাড়া মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটের কারণে ঋণ দিতে পারছে না। এসব ঘটনা বাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে।
দুই স্টক এক্সচেঞ্জেই গতকাল শুরু থেকে বিক্রির চাপ বেড়ে যায়। ফলে দরপতন শুরু হয়। এ পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের মনে আগের সপ্তাহের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন শুরু হওয়ার মাত্র ৪৫ মিনিটের মধ্যে আগের দিনের তুলনায় সূচক ২০০ পয়েন্ট কমে ৭৩৭৫ পয়েন্টে নামে। এ সময় সাতটি কম্পানি বাদে লেনদেন হওয়া বাকি ২৪০টি কম্পানির শেয়ারের দাম কমে যায়। এর আধঘণ্টায় সূচক আবার ৯০ পয়েন্ট বেড়ে ৭৪৬৫ পয়েন্টে ওঠে। কিছুক্ষণ পর আবার নামতে থাকে সূচক। দুপুর পৌনে ২টার দিকে ৩১২ পয়েন্ট কমে সূচক ৭২৬৩ পয়েন্টে নামে।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেন হওয়া ১৮৪টি কম্পানির শেয়ারের মধ্যে কমে ১৬৯টির, বেড়েছে মাত্র ১৩টির। অপরিবর্তিত ছিল দুটি কম্পানির শেয়ারের দাম।
গতকাল পতনের শুরু থেকেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) চেয়ারম্যান জিয়াউল হক খোন্দকার ও সদস্য ইয়াসিন আলীসহ অন্য কর্মকর্তাদের উদ্বিগ্ন চেহারায় সার্ভিল্যান্স রুমে বারবার ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। এ সময় কমিশনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে শেয়ারবাজারে অর্থপ্রবাহ বাড়ানোর চেষ্টা চালানো হয়। এ ছাড়া বিক্রির হার কমিয়ে শেয়ার কেনার চাপ বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানকে অনুরোধ জানানো হয়।
সূত্র জানায়, সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনায় পুঁজিবাজারে অস্থিরতা সামাল দিতে একপর্যায়ে বাংলাদেশ ব্যাংকও তৎপর ছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) তাৎক্ষণিকভাবে ২০০ কোটি টাকা তহবিল ঋণ দেওয়া হয়। এ তহবিল ব্যবহার করে দিনের লেনদেনের মাঝামাঝি সময়ে আইসিবি শেয়ার কিনতে শুরু করে। এ কারণে দুপুর ২টার দিকে শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শুরু হয়। পৌনে ২টা থেকে অধিকাংশ শেয়ারের হারানো দর পুনরুদ্ধার শুরু হয়। এর মধ্যে ব্যাংকিং খাতের দর বৃদ্ধির মাত্রা ছিল অন্যান্য খাতের তুলনায় বেশি। একই সঙ্গে বীমাসহ মৌল ভিত্তিসম্পন্ন বেশ কিছু কম্পানির শেয়ারের হারানো দর কিছুটা পুনরুদ্ধার হলে সূচক বড় ধরনের পতনের হাত থেকে রক্ষা পায়। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসই সাধারণ সূচক আগের দিনের চেয়ে ১৪১ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ৭৪৩৪ পয়েন্টে।
গতকাল ডিএসইতে ২৪৭টি কম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের আট কোটি ৬৯ লাখ ৫৮ হাজার ৮৪৫টি শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল এক হাজার ১৬৬ কোটি ৬১ লাখ ৮৭ হাজার ৫১ টাকা। এটা আগের দিনের চেয়ে ১০৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা বেশি। শেষ পর্যন্ত লেনদেনকৃত ২৪৭টি কম্পানির মধ্যে দাম কমেছে ২১৫টি কম্পানির শেয়ার। বেড়েছে ৩২টির।
গতকালের বাজার মূলধনের পরিমাণ ছিল তিন লাখ ২২ হাজার ৭৮৪ কোটি ২৭ লাখ ৩১ হাজার ২৯৬ টাকা।
এদিকে এসইসির পক্ষ থেকে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হলেও পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট কাটছে না। প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় করতে না পেরে অধিকাংশ মার্চেন্ট ব্যাংকই মার্জিন ঋণের হার বাড়াতে পারেনি। গত এক মাসের মধ্যে মার্জিন ঋণের হার ১ঃ০.৫ থেকে তিন দফায় বাড়িয়ে ১ঃ২ করা হয়েছে। এ ছাড়া মার্জিন নির্ধারণের ক্ষেত্রে শেয়ারের প্রকৃত সম্পদ মূল্যভিত্তিক (এনএভি) হিসাব পদ্ধতির কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়েছে। ওই পদ্ধতি কার্যকর থাকায় গত ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত মার্জিন ঋণের প্রকৃত হার ছিল ১ঃ০.২৫। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে মার্জিন ঋণের হার প্রায় আট গুণ বেড়ে যাওয়ায় সে অনুযায়ী তহবিল সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। এ কারণেই অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান বর্ধিত হারে ঋণ দিতে পারছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অর্থ সংকটের কারণে কোনো প্রতিষ্ঠানই এখন পর্যন্ত এসইসির ঘোষণা অনুযায়ী বর্ধিত হারে ঋণ দিতে পারেনি। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই ১ঃ০.৭৫ থেকে ১ঃ১ হারে ঋণ প্রদান করছে।
মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংক ঋণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকটি নির্দেশনার কারণে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের চাহিদা অনুযায়ী ঋণ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। গত ১ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের মাস্টার সার্কুলারে ব্যাংকগুলোকে তাদের সাবসিডিয়ারি মার্চেন্ট ব্যাংক বা ব্রোকারেজ হাউসকে ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে একক গ্রাহক ঋণসীমা মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়। একক গ্রাহক সীমা অনুযায়ী ব্যাংকগুলো একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে তার মূলধনের ১৫ শতাংশের বেশি ঋণ দিতে পারে না।
এর আগে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসগুলো বাণিজ্যিক ব্যাংকের নিজস্ব বিভাগ বা ইউনিট হিসেবে কাজ করায় তাদের দেওয়া মার্জিন ঋণ ব্যাংকের নিজস্ব বিনিয়োগ হিসাবে ধরা হতো। ফলে এ ক্ষেত্রে ঋণের কোনো সীমা নির্ধারিত ছিল না। কিন্তু মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসগুলো সাবসিডিয়ারি কম্পানি হয়ে যাওয়ায় মার্জিন ঋণ দেওয়ার জন্য তাদের ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নিতে হয়। সে ক্ষেত্রে আলাদা কম্পানি হিসেবে এসব প্রতিষ্ঠানও তাদের মূলধনের ১৫ শতাংশের বেশি ঋণ নিতে পারে না। পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে গত সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ বিধানের প্রয়োগ শিথিল করার ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কার্যকর কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসগুলো তাদের মূল ব্যাংক থেকে অতিরিক্ত ঋণ নিতে পারছে না। এ কারণে এসব প্রতিষ্ঠান মার্জিন ঋণের হার বাড়াতে পারছে না।
এদিকে ডিএসইর লেনদেন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ডিএসইর সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজ সবচেয়ে বেশি শেয়ার বিক্রি করেছে। প্রতিষ্ঠানটি সর্বমোট ৯৪ কোটি ৮৩ লাখ ৫৭ হাজার ৮৬৮ টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে। এর বিপরীতে লঙ্কাবাংলার কেনা শেয়ারের মূল্য ছিল ৭৩ কোটি ২৩ লাখ ৬৪ হাজার ১৮ টাকা। প্রতিষ্ঠানটি শেয়ার ক্রয়ের তুলনায় বিক্রির পরিমাণ ছিল ২১ কোটি ৫৯ লাখ ৯৩ হাজার ৮৫০ টাকা বেশি। বিক্রির পরিমাণের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা আল আরাফা ব্যাংক ৩৬ কোটি ১৭ লাখ ৬৩ হাজার ৬৯০ টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে। কিনেছে ১৯ কোটি ১০ লাখ ১৩ হাজার ৪২৪ টাকার শেয়ার। এ প্রতিষ্ঠানের নিট বিক্রির পরিমাণ ১৭ কোটি সাত লাখ ৫০ হাজার ২৬৬ টাকা বেশি। এ ছাড়া পিএফআই সিকিউরিটিজ ২৬ কোটি টাকা, আইআইডিএফসি সিকিউরিটিজ ২৬ কোটি, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ২৩ কোটি, ফারইস্ট স্টক অ্যান্ড বন্ড ২৮ কোটি, আইডিএলসি ২১ কোটি, ফখরুল ইসলাম সিকিউরিটিজ ২৩ কোটি, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ২৩ কোটি এবং ওইফ্যাং সিকিউরিটিজ ২৬ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে। এর বিপরীতে এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কেনার পরিমাণ ছিল অনেক কম।
এ ছাড়া শাহজালাল ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, এসইএস সিকিউরিটিজ, এনসিসি ব্যাংক, সিএমএসএল সিকিউরিটিজ, এসসিএল সিকিউরিটিজ, ন্যাশনাল ব্যাংক, রয়েল ক্যাপিটাল, ঢাকা ব্যাংক এবং হ্যাক সিকিউরিটিজে শেয়ার বিক্রির পরিমাণ ছিল কেনার তুলনায় অনেক বেশি।
অন্যদিকে সরকারি প্রতিষ্ঠান আইসিবি সিকিউরিটিজ এককভাবেই শেয়ার কিনেছে ২২৯ কোটি ৩৫ লাখ ৬৮ হাজার ২৩০ টাকার। এর বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটি মাত্র ২৭ কোটি ৪৮ লাখ ৪৭ হাজার ছয় টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে। কেনার দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ব্র্যাক ইপিএল। এই প্রতিষ্ঠান ২৪ কোটি টাকার শেয়ার কিনেছে। এর বিপরীতে বিক্রি করেছে ১২ কোটি টাকার শেয়ার। এ ছাড়া কেনার দিক থেকে শীর্ষ তালিকায় ছিল বিএলআই সিকিউরিটিজ, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, মাল্টি সিকিউরিটিজ, এসএআর সিকিউরিটিজ, এবি সিকিউরিটিজ, সিনহা সিকিউরিটিজ, শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেড ও সুইফট ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট।

গণতন্ত্র রক্ষার দাবিতে ইসরায়েলে বিক্ষোভ

শ হাজারেরও বেশি ইসরায়েলি গত শনিবার তেল আবিবে বিক্ষোভ করেছে। বামপন্থীদের সমর্থিত বেসরকারি সংস্থা ও মানবাধিকার গ্রুপগুলোর তহবিলের উৎস খতিয়ে দেখতে পার্লামেন্টারি তদন্ত কমিটি গঠনের প্রতিবাদে তারা রাস্তায় নামে।

বিক্ষোভকারীরা তাদের বিক্ষোভ সমাবেশকে 'গণতন্ত্র রক্ষার' পক্ষে অবস্থান বলে অভিহিত করে। বিদেশে ইসরায়েলি সেনা সদস্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধবিষয়ক মামলা করার জন্য বামপন্থী কিছু বেসরকারি সংস্থা সাহায্য করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ জন্য সংস্থাগুলোর আর্থিক উৎস খতিয়ে দেখতে গত ৫ জানুয়ারি আইন প্রণেতারা তদন্ত কমিটি গঠনের পক্ষে ভোট দেন। সরকারের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে কয়েকটি সংস্থা ও বামপন্থী দল বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয়। তাদের মূল বক্তব্য, 'গণতন্ত্রকে রক্ষা করুন, এখনো তা সম্ভব।'
সমাবেশের আয়োজক ইয়ারিভ ওপেনহেইমার বলেন, 'কয়েক বছরের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচির মধ্যে এটি একটি। কেননা এর মাধ্যমে আমরা সরকারকে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পেঁৗছে দিতে চাই।' সমাবেশে ১৫ হাজারের মতো বিক্ষোভকারী অংশ নিয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, তাদের অধিকাংশই ইহুদি হলেও আরবরাও এতে অংশ নেয়। শহরের এক জায়গায় মিলিত হয়ে তারা হেঁটে জাদুঘর চত্বরে যায়। পরে সেখানে তারা সমাবেশ করে।
এদিকে কমপক্ষে এক হাজার ৪০০ নতুন বাড়ি নির্মাণের জন্য বড় একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে ইসরায়েল। সূত্র : এএফপি।

সাবমেরিন কেনায় জারদারির কমিশন খাওয়ার খবর ফ্রান্সের পত্রিকায়

পাকিস্তানের কাছে ফ্রান্সের সাবমেরিন বিক্রির চুক্তির মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির গোপনে বিপুল পরিমাণ অর্থ নেওয়ার অভিযোগ ফের আলোচনায় এসেছে। এ-সংক্রান্ত পাকিস্তান সরকারের নথিপত্র ফ্রান্সের তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন। এসব নথিপত্রের ভিত্তিতে জারদারির ওই অর্থ নেওয়ার খবর ফলাও করে প্রচার করেছে ফ্রান্সের সাময়িকী মিডিয়াপার্ট।

অগুস্ত শ্রেণীর তিনটি সাবমেরিন বিক্রির জন্য ১৯৯৪ সালে পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে চুক্তি করে ফ্রান্সের প্রতিরক্ষাসংক্রান্ত ঠিকাদারি বিভাগ ডিসিএন। সুইডেন ও জার্মানির ঠিকাদারদের ডিঙিয়ে ফ্রান্স বিশাল অঙ্কের ওই বিক্রির আদেশ পায়। এ নিয়ে ঘুষ দেওয়ার কেলেঙ্কারির খবর ছড়ায়, যা 'করাচি অ্যাফেয়ার' নামে পরিচিত। প্রতিবেদনে বলা হয়, ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা বিভাগের ঠিকাদাররা জারদারিকে মোট অঙ্কের অর্থ কমিশন দেওয়ার বিনিময়ে চুক্তিটি সই করাতে সক্ষম হন। চুক্তি অনুয়ায়ী জারদারির পাওয়ার কথা ছিল তিন কোটি ৩০ লাখ ইউরো। এই বিষয়ে মধ্যস্থতাকারী ছিলেন পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও জারদারির ঘনিষ্ঠ বন্ধু আমির লোদি।
জারদারিকে দেওয়া কমিশনের অর্থের একটি অংশ ফ্রান্সের বিরোধীদলীয় রাজনীতিক এদুয়ার্দ বালাদুরের কাছে পেঁৗছাবে_ফ্রান্সের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জ্যাক শিরাক এ কথা জানার পর চুক্তিতে দেওয়া কমিশনের শর্ত বাতিল করে দেন। কমিশন বাতিল হওয়ায় ২০০২ সালে করাচিতে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ফ্রান্সের ১১ প্রকৌশলী নিহত হন। ধারণা করা হয়, কমিশন বাতিল করায় ওই হামলা হয়। এই ঘটনার তদন্ত করতে গিয়েই অগুস্ত চুক্তিতে জারদারির ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি সামনে চলে আসে। এ ব্যাপারে ফ্রান্স বিচার বিভাগীয় তদন্ত শুরু করে গত বছর।
গত জুনে ফ্রান্স পুলিশের জাতীয় অর্থ-সংক্রান্ত তদন্ত বিভাগের তদন্তকারীরা প্যারিসে আমির লোদির বাড়িতে তল্লাশি চালান। তাঁরা কমিশন-সংক্রান্ত বেশ কিছু নথিপত্র খুঁজে পান। লোদির কাছে পাকিস্তানের 'দুর্নীতি তদন্তকারী কমিশন' 'এহতেসাব সেল'র তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া যায়। এহতেসাব সেলে'র নথিপত্রে দেখা গেছে, ১৯৯৪ সালের অক্টোবর ও ডিসেম্বর মাসে জারদারি প্রায় ৭০ লাখ ইউরো ঘুষ হিসেবে নিয়েছিলেন। ফ্রান্সের আদালত এই নথিপত্র যাচাই করে দেখছে।
চুক্তিটি যখন হয়, তখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বেনজির ভুট্টো। মিডিয়াপার্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই সময় বিদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের চুক্তি করার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন জারদারি। সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া, দ্য ন্যাশন, মিডিয়াপার্ট ও এএনআই।

নরসিংদীর ২০ কিলোমিটার মহাসড়ক যেন মৃত্যুর মহাফাঁদ

রসিংদীর সদর উপজেলার ভেলানগর থেকে রায়পুরা উপজেলার নারায়ণপুর পর্যন্ত ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ২০ কিলোমিটার অংশে গত দুই বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় দেড় শতাধিক লোক নিহত এবং আহত হয়েছে পাঁচ শতাধিক। শুধু শিবপুর বিসিক শিল্পনগরীর পাশের মহাসড়কে রাস্তা পারাপারের সময় মারা গেছেন আদুরী অ্যাপারেলস নামের তৈরি পোশাক কারখানার ৩২ জন শ্রমিক।

পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন আরো অনেকে। সর্বশেষ গত শনিবার ঘাসিরদিয়া এলাকায় ট্রাকের সঙ্গে পুলিশের পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৯ পুলিশ সদস্যের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।
প্রায় নিয়মিত দুর্ঘটনার কারণে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যাতায়াতকারী বিভিন্ন পরিবহনের যাত্রীসহ নরসিংদীবাসীর কাছে এ এলাকা মৃত্যুফাঁদ হিসেবেই পরিচিত হয়ে গেছে। সম্প্রতি অল্প সময়ের ব্যবধানে কয়েকটি বড় দুর্ঘটনা যাত্রীদের আরো ভীত-সন্ত্রস্ত করে তুলেছে।
পুলিশের সূত্র জানায়, নরসিংদীতে গত দুই বছরে বিভিন্ন সড়ক দুর্ঘটনায় ৮৭টি মামলা হয়। এসব দুর্ঘটনায় ১৫০ জনের বেশি মারা গেছে। বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটেছে মহাসড়কের নরসিংদীর ভেলানগর থেকে বেলাব উপজেলার নারায়ণপুর অংশে। কিছু দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে মামলা না হওয়ায় সেগুলো কর্তৃপক্ষের হিসাবের বাইরে থেকে যায়।
কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ৭ আগস্ট ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার কোন্দালপাড়ায় বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ছাত্রসহ সাতজন নিহত হয়। আহত হয় অন্তত ২০ জন। গত ২ আগস্ট নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার কুমড়াদী নামক স্থানে যাত্রীবাহী টেম্পো ও মালবাহী ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে একই পরিবারের চারজনসহ পাঁচজন নিহত হয়। গত ১৬ মে একই উপজেলার কারারচরে ঈশা খাঁ পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে চলনবিল পরিবহনের বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই ছয় যাত্রী নিহত হয়। আহত হয়েছে অন্তত ৫০ জন। গত ১৭ জুন একই উপজেলার শ্রীফুলিয়া বাসস্ট্যান্ড-সংলগ্ন এলাকায় চলনবিল পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো-ব-১১-৩৮২৬) একটি বাসের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা চালবোঝাই ট্রাকের (ঢাকা মেট্রো-ড-২৪৭০) মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই নাবিলা তাহসিন সরকার নামের মেডিক্যাল কলেজছাত্রীসহ চারজন নিহত হন। আহত হয় আরো ২০ যাত্রী। ৩০ জুন ওই উপজেলার কুন্দারপাড়া এলাকায় চলনবিল পরিবহনের বাসের সঙ্গে পিকআপের সংঘর্ষে কলেজছাত্রীসহ ১০ জন মারা যায়। আহত হয় আরো ২০ জন। গত ১৪ জুন মহাসড়কের পাঁচদোনার ভাটপাড়া এলাকায় চলনবিল পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসের চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে বাসটি সড়কের পার্শ্ববর্তী খাদে পড়ে পানিতে ডুবে যায়। এতে ৩০ যাত্রী গুরুতর আহত হয়। গত ২৮ মে শিবপুর উপজেলার কুন্দারপাড়ায় এবং রায়পুরা উপজেলার নারায়ণপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পৃথক দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত হয়। আহত হয়েছে সাত যাত্রী। গত ২৭ মে সকালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদীর বেলাব উপজেলার নারায়ণপুর বাসস্ট্যান্ডের কাছে বাসের চাপায় এক সবজি ব্যবসায়ী নিহত হন। গত ৮ মে মহাসড়কের নরসিংদী এলাকায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় দুজন।
পুলিশসহ একাধিক সূত্র জানায়, গত ১৬ মে শিবপুর উপজেলার কারারচর এলাকায় দুর্ঘটনায় নিহত ছয়জনের মধ্যে চলনবিল গাড়ির চালক ছিলেন গাজীপুরের জয়দেবপুর উপজেলার পশুগাঁও গ্রামের আবদুল ছালামের ছেলে জান্নাত। ৩০ জুন একই উপজেলার কুন্দারপাড়া এলাকায় চলনবিল পরিবহনের বাসের সঙ্গে পিকআপের সংঘর্ষে কলেজছাত্রীসহ ১০ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় চলনবিলের চালক ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার দাওয়াতপুর গ্রামের মৃত আবদুল মালেকের ছেলে সাহাদাত হোসেন (৩৫)। পুলিশ উভয় দুর্ঘটনায় চালকদের দায়িত্বহীনতাকে দায়ী করেছে। অভিযুক্ত চালকরা বর্তমানে জামিন নিয়ে আবারও চলনবিলের গাড়ি চালাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক বছরের ব্যবধানে শুধু ঢাকা থেকে ভৈরবগামী চলনবিল পরিবহনের বেপরোয়া চালকদের কারণে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান একজন মেডিক্যাল কলেজছাত্রীসহ ২৬ জন। আহত হয় শতাধিক। শুধু চলনবিল পরিবহনই নয়, এ মহাসড়কে যাতায়াতকারী বিভিন্ন পরিবহনের বাসসহ অন্যান্য যানবাহনের বেপরোয়া চলাচলের কারণে দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পুলিশ প্রশাসন ও নিরাপদ সড়ক চাই সংগঠনের একাধিক সংগঠকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সড়ক দুর্ঘটনার জন্য চারটি পক্ষ সমানভাবে দায়ী। পক্ষগুলো হলোÑপথচারী, চালক, মালিক ও সরকার। তাদের যেকোনো একটি পক্ষের অসাবধানতা ও দায়িত্বহীনতার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এ ছাড়া মহাসড়কে বিভিন্ন গতির গাড়ির চলাচল, লেন না থাকা, অসম প্রতিযোগিতা, যাত্রীদের অসচেতনতা, পরিবহন মালিকদের অতি মুনাফা এবং যোগাযোগব্যবস্থার ওপর নিয়মিত মনিটরিং না থাকার কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।
নিরাপদ সড়ক চাই কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আলাল উদ্দিন বলেন, ‘ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ঘন ঘন সড়ক দুর্ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। এ মহাসড়কের ঢাকা থেকে ভৈরব পর্যন্ত অংশে অল্প কয়েক দিনের ব্যবধানে অর্ধশতাধিক লোক নিহত হয়েছে। এগুলোর অধিকাংশই চলনবিল পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসের সংঘটিত দুর্ঘটনা। মহাসড়কে চলাচলরত বিভিন্ন পরিবহনের গাড়িগুলোর অধিকাংশই ফিটনেসবিহীন, যাত্রীদের বীমা নেই এবং আহতদের কোনো ক্ষতিপূরণ প্রদানের ব্যবস্থা নেই।’
চলনবিল পরিবহনের চেয়ারম্যান এস এম শহীদুল হক বলেন, ‘একজন চালক ১৫ থেকে ১৬ বছর ধরে গাড়ি চালাচ্ছে। অসাবধানতার কারণে দুর্ঘটনা ঘটেÑএটা সত্য। কিন্তু একটি ঘটনায় প্রমাণিত হয় না তারা অযোগ্য। আর আমাদের পক্ষেও চালকদের ওপর নজরদারি করা কষ্টকর।’
নরসিংদী জেলা হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ‘ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে কোনো সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলেই আমাদের হাসপাতালে প্রথমে নিয়ে আসা হয়। প্রতিদিনই কোনো না কোনো দুর্ঘটনায় আহত রোগীরা এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। তবে সাম্প্রতিককালে দুর্ঘটনার পরিমাণ বেড়ে গেছে।’
আদুরী অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল কাদির মোল্লা বলেন, ‘গত দুই বছরে আমার কারখানার ২৭ জন শ্রমিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। ট্রাফিক আইন না মেনে গাড়ি চালানোর কারণেই ঘন ঘন দুর্ঘটনা ঘটছে।’
দুর্ঘটনায় শনিবার ৯ পুলিশের মৃত্যু প্রসঙ্গে পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেন, প্রচলিত ট্রাফিক আইন পরিবর্তন ছাড়া কোনো উপায় নেই। সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করতে নতুন করে ভাবতে হবে। সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে বিষয়টি আলোচনা করা হবে। এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা।
ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু বলেন, ‘ট্রাফিক আইন মেনে চালকরা গাড়ি না চালালে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।’
নরসিংদীর পুলিশ সুপার ড. আক্কাছ উদ্দিন ভূঁইয়া কালের কণ্ঠকে জানান, গত এক বছরে নরসিংদীতে সড়ক দুর্ঘটনায় ৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত ৭৪ জন। তবে এর বাইরেও সড়ক দুর্ঘটনায় অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। দুর্ঘটনা রোধে জেলার সব পরিবহন মালিক ও নেতাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠার জন্য করণীয় বের করার প্রচেষ্টা চলছে।

ঢাকায় অপরাধ বাড়ছে-ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে

দাগি অপরাধীরা কারাগার থেকে বের হয়ে আসতে শুরু করেছে। গত ছয় মাসে শুধু ঢাকা মহানগর এলাকাতেই এক হাজারের বেশি অপরাধী ছাড়া পেয়েছে। এদের অনেকেই ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবে অপরাধ করছে। পুলিশের ধারণা, এদের কারণে রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, চলমান পৌরসভা নির্বাচন এবং আসন্ন ইউপি ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে মুখচেনা অপরাধীদের কারাগার থেকে বের করে আনার রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সমর্থন না থাকলে এসব আসামির পক্ষে জামিন পাওয়া সম্ভব নয় বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান।
পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে শুধু ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানায় খুন, ডাকাতি, দস্যুতা, দ্রুত বিচার আইনের মামলা, বিস্ফোরক অপরাধ ও সন্ত্রাসবিরোধী মামলায় গ্রেপ্তার করা এক হাজার ৭২ জন আসামি ছাড়া পেয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন গত শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হকের লাশ দেখতে গিয়ে সংবাদিকদের বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হয়েছে। এর আগে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে খুন, ডাকাতির একাধিক ঘটনা ঘটলেও আইনশৃঙ্খলার অবনতির কথা সরকার স্বীকার করেনি। গত বৃহস্পতিবার এফবিসিসিআই মিলনায়তনে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত ব্যবসায়ীদের সভায় পুলিশের কাজে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধের প্রয়োজনের কথা বলেন সংগঠনের সভাপতি এ কে আজাদ। ব্যবসায়ীরা পুলিশের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর তাগিদ দেন। এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে সংগঠনের পক্ষ থেকে চলমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
নতুন বছর শুরু হতেই হঠাৎ রাজধানীসহ সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। জানুয়ারির প্রথম ১৫ দিনে শুধু রাজধানীতেই ২২টি খুন ও ছয়টি বড় ধরনের ডাকাতি হয়েছে। ছিনতাইয়ের ঘটনাও অসংখ্য। এসব নিয়ে জনজীবনে বিরাজ করছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়া, রাজনৈতিক অস্থিরতা, সন্ত্রাসীদের প্রতি রাষ্ট্রের নমনীয়তা প্রদর্শন ইত্যাদিও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণ।
যোগাযোগ করা হলে স্বরাষ্ট্রসচিব আবদুস সোবহান সিকদার আইনশৃঙ্খলার কিছুটা অবনতির কথা উল্লেখ করে বলেন, উপদলীয় কোন্দল, পারিবারিক-সামাজিক নানা বিরোধে কিছু খুনখারাবি হতে পারে। এসব বিষয় আগে থেকে আঁচ করা সম্ভব নয়।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, দু-একটি বড় খুনের ঘটনা ঘটেছে বটে, কিন্তু এটা সর্বব্যাপী নয়। এসব অপরাধের পেছনে মাদক, ব্যক্তিগত শত্রুতা, তাৎক্ষণিক উত্তেজনা, স্বার্থগত দ্বন্দ্ব কাজ করতে পারে। সব মিলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণেই আছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের কর্মকর্তারা বলেন, নানা কারণে তাঁদের কাজেও শৈথিল্য আছে। যানবাহনের সংকট, পরিদর্শকদের প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা না দেওয়া, পৌর নির্বাচনে ব্যস্ততাসহ বেশ কিছু কারণে পুলিশের কাজে কিছুটা গা ছাড়া ভাব লক্ষণীয়। এ ছাড়া শীতের কারণে রাজধানীর রাস্তায় পুলিশের টহল কমে গেছে। পথে পথে তল্লাশি চৌকি নেই বললেই চলে। পায়ে হেঁটে পাহারা ও সাদা পোশাকের টহলও বন্ধ। এভাবে পুলিশি তৎপরতা থেমে যাওয়ার সুযোগেও বেড়ে গেছে সন্ত্রাসীদের আগাগোনা ও অবৈধ অস্ত্র বহন। বেশির ভাগ পুলিশ, র্যাব, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, আনসার এখন পৌর নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত।
ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের মুখপাত্র ও গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, এমনিতেই শীতের সময় অপরাধ বাড়ে। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসেও এভাবে অপরাধ কিছুটা বেড়েছিল। অল্প দিনের মধ্যে তা ঠিক হয়ে যায়। এবার শীতেই তেমন কিছু ঘটনা ঘটেছে। তবে সব ঘটনাই বিচ্ছিন্ন, একটির সঙ্গে আরেকটির যোগসূত্র নেই।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে এক হাজার ২২ জন অপরাধী ছাড়া পেয়েছে। কেউ জামিনে, আবার রাজনৈতিক বিবেচনায় মামলা প্রত্যাহারের কারণেও অনেকে ছাড়া পাচ্ছে। এসব অপরাধীর মধ্যে ডাকাতি মামলায় ১৩৭, খুনের মামলায় ২৮১, ছিনতাই ও দস্যুতার মামলায় ২৪০, অস্ত্র মামলায় ২৭৯, বিস্ফোরক মামলায় আট, অজ্ঞান পার্টির সদস্য ৪৮, গাড়ি চুরির মামলায় ১০ ও সন্ত্রাসবিরোধী অধ্যাদেশে আটক করা ১৯ জন রয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার বেনজীর আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ খতিয়ে দেখছে, কী কারণে দাগি আসামি বেরিয়ে যাচ্ছে। এই সন্ত্রাসীরাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নতুন করে অপরাধে লিপ্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, একটি প্রতিবেদন তৈরি করে সরকারকে দেওয়া হবে, যাতে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা জামিনের বিরোধিতা করতে পারেন।
মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ভেতরে এখন গা ছাড়া ভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মাঠপর্যায়ে ঠিকমতো অনুসরণ করা হচ্ছে না। পুলিশের কর্মকর্তাদের মতে, এনকাউন্টার বা ক্রসফায়ারের ঘটনা সমালোচিত হওয়ায় র্যাবের কাজেও শৈথিল্য লক্ষ করা যাচ্ছে।
ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম জানান, দুটি কারণে অপরাধ বাড়ছে। একটি হলো, অপরাধীদের মুক্ত হওয়ার ঘটনা বেড়ে গেছে। অন্যটি হলো, পুলিশের টহল কমে যাওয়া।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার খুন হলেন ৪১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক। এই খুনের ঘটনায় ভাড়াটে খুনি ব্যবহূত হয়েছে বলে পুলিশের ধারণা। ১ জানুয়ারি রাতে মিরপুরে গুলিতে নিহত হন জাতীয় অন্ধ সংস্থার মহাসচিব এম কে খলিলুর রহমান। তাঁকেও ভাড়াটে খুনিরা হত্যা করে। ৪ জানুয়ারি রাতে কদমতলীর মুরাদপুর হাইস্কুল সড়কে হাজি ফজর আলীর বাড়িতে ডাকাতি হয়। একই দিন সকালে রাজধানীর বিজয় সরণিতে গুলিবিদ্ধ হন ব্যবসায়ী ইমারত হোসেন। ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়া এলাকায় এক বাসায় হামলা চালিয়ে ডাকাতেরা কয়েক লাখ টাকা লুট করে। ওই সময় গুলিবিদ্ধ হন রাশেদুল হক নামের এক গৃহকর্তা। ৮ জানুয়ারি রাতে পল্লবীতে সংরক্ষিত আসনের মহিলা সাংসদ শাহিদা তারেখ দীপ্তির বাসায় ডাকাতি হয়। ডাকাতেরা সেখান থেকে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা ও ৬৫ ভরি স্বর্ণালংকার লুট করে।
৯ জানুয়ারি কল্যাণপুরে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে নিজাম উদ্দিন খানকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। একই দিন দুপুরে ইন্দিরা রোডের এক বাসায় মা ভার্জিনিয়া রোজারিওকে শ্বাসরোধে আর ছেলে ভ্যালেন্টাইন রোজারিও মিল্টনকে জবাই করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের হাতে তাঁরা খুন হয়েছেন। ১০ জানুয়ারি ঢাকার মতিঝিলে যুবদলের নেতা শহিদ মোল্লাকে সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে। এ ক্ষেত্রে ভাড়াটে খুনিদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে। ১৩ জানুয়ারি বাড্ডায় অজ্ঞাত এক যুবককে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক এলাকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে একজন মোটর পার্টস ব্যবসায়ী আহত হন। ঢাকার বাইরে যশোরের মনিরামপুর, নাটোর, পল্লবীতে কলেজছাত্র খুন; নবাবগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, জগন্নাথপুর, কক্সবাজার, বান্দরবান, রামুতেও ডাকাতি হয়।
সূত্র জানায়, পুলিশ সপ্তাহ শেষ হওয়ার পর থেকেই পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে গা ছাড়া ভাব দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে ওসিদের প্রথম শ্রেণী ও সার্জেন্ট-সাব ইন্সপেক্টরদের দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত না করা নিয়ে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। মাঠপর্যায়ে এর প্রভাব পড়েছে বলেই মনে করছেন অনেকে। তবে একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এখন সন্ত্রাসীদের তৎপরতা পর্যবেক্ষণ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। কারা জামিন পাচ্ছে, কারা পাচ্ছে না, সে খবর কেউ রাখে না। তা ছাড়া অস্ত্র কেনাবেচার সর্বশেষ তথ্যও কারও হাতে নেই। এ কারণে সন্ত্রাসীদের গতিবিধির ব্যাপারে কারও কাছে কোনো তথ্য নেই।
জানতে চাইলে ওয়ারী অঞ্চলের উপকমিশনার গাজী মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, শীতের কারণে পুলিশের অনেক গাড়ি অচল হয়ে পড়েছে। আবার আদালতের নির্দেশে পুলিশ গাড়ি রিকুইজিশন করতে পারছে না। গাড়ি না থাকায় শীতের রাতে পায়ে হেঁটে টহল দেওয়া কমে যাচ্ছে। এ ছাড়া থানায় এত দিন যে সাদা পোশাকের টহল ছিল, তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সাদা পোশাকের পুলিশের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আসায় এসব বন্ধ করে দেওয়া হয়।

তথ্যবিভ্রাটও চালের দাম বাড়ায় by আশরাফুল হক রাজীব

চাল ও গম উৎপাদনের যে তথ্য কৃষি মন্ত্রণালয় ও পরিসংখ্যান ব্যুরো দেয়, তা আমলে নিলে দেশে কোনো খাদ্যঘাটতির কথা থাকে না; বরং ২৫ থেকে ৩৩ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকে। কাজেই অর্থনীতির চিরায়ত সূত্র অনুযায়ী, বাজারে খাদ্য তথা চালের দাম না বেড়ে কমার কথা।

কিন্তু বাস্তবতা উল্টো। দেশে যে খাদ্য উদ্বৃত্ত নেই, বরং ঘাটতি রয়েছে, তার জলজ্যান্ত প্রমাণ হলো বাজার। এই ভরা মৌসুমেও বেশ কিছুদিন ধরে বাজারে চালের দাম বাড়ছেই। গত এক বছরে দাম বাড়ার এ হার ৪৯ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিভিন্ন দপ্তরের ভুল তথ্যের কারণে বাজারের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেই সরকারের। কারণ খাদ্য মন্ত্রণালয় যেসব তথ্যের ওপর ভিত্তি করে পরিকল্পনা করছে, তা সঠিক নয়। এ কারণে খাদ্যশস্য, বিশেষ করে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো পরিকল্পনাই কাজে আসছে না।
অর্থনীতির সূত্র অনুযায়ী, বাজারে খাদ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলে দাম বাড়ার কথা নয়। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, খাদ্য উৎপাদনের যে বাম্পার ফলনের তথ্য সরকারের তরফ থেকে বলা হয়, তা আদৌ ঠিক কি না? অথবা চাহিদার যে হিসাব দেওয়া হচ্ছে, তা সঠিক কি না? কিংবা আরো যেসব জরুরি তথ্য রয়েছে, যেমনÑজনসংখ্যা, মাথাপিছু খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ ইত্যাদি, এগুলো সঠিক কি না, সে প্রশ্নও আছে। খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করলে এ চিত্রই ফুটে ওঠে।
খাদ্যমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক গত শনিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘খাদ্য পরিকল্পনার বিভিন্ন উপাদান, যেমনÑজনসংখ্যা, মাথাপিছু খাদ্য গ্রহণের চাহিদা অথবা খাদ্য উৎপাদনের পরিসংখ্যানে গোলমাল রয়েছে। এ কারণে পরিকল্পনার সঙ্গে বাস্তবতার কিছুটা অমিল রয়েছে। সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা করছি। আশা করি, চলতি বছরের আদমশুমারিতে এর সমাধান বের হয়ে আসবে।’
তবে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী গতকাল রবিবার কালের কণ্ঠকে জোর দিয়ে বলেন, ‘কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যে কোনো গলদ নেই। মাঠপর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। আবার তথ্য সংগ্রহে স্পারসোর সহায়তাও নেওয়া হয়। সমস্যা যদি জনসংখ্যায় হয়, তাহলে আমার কিছু বলার নেই। মাথাপিছু খাদ্য গ্রহণের হারেও সমস্যা থাকতে পারে। তার পরও অস্বীকার করি না, খাদ্য উৎপাদনের পরিসংখ্যানে কিছু সমস্যা আছে। তবে সেটা দিন দিন কমে আসছে। সামনের দিনগুলোতে আরো কমে যাবে।’
কৃষিমন্ত্রী আরো বলেন, পরিসংখ্যানের জটিলতা থাকুক বা না থাকুক, বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে। এই তথ্য সরকারের নয়, এটা জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার। তারা বলেছে, গত দুই বছরে যে চার-পাঁচটি দেশের খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। সরকার কৃষিতে ভর্তুকি দিচ্ছে। ভরা মৌসুমে কৃষক ধানের দাম পাচ্ছে, যা আগে কখনো পায়নি। ঘূর্ণিঝড় আইলা এবং হওরে প্লাবন না হলে কৃষি উৎপাদন গত দুই বছরে কোথায় গিয়ে দাঁড়াত, তা মূল্যায়নের দায়িত্ব সাধারণ মানুষের ওপর ছেড়ে দিলাম।’
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর দেশে বোরো চালের উৎপাদন হয়েছে এক কোটি ৮৭ লাখ টন। আমন হয়েছে এক কোটি ৩৫ লাখ টন আর আউশ ২৫ লাখ টন। মোট উৎপাদন হয়েছে তিন কোটি ৪৭ লাখ টন চাল। এর মধ্যে ১২ ভাগ খাদ্যশস্য বীজ হিসেবে সংরক্ষণ এবং মাঠ থেকে আনা ও মাড়াই প্রক্রিয়ায় নষ্ট হয় বলে ধরা হয়। ফলে এ পরিমাণ খাদ্যশস্য বাজারে আসে না। এ অংশটুকু বাদ দিলে দেশে মোট খাদ্যশস্যের উৎপাদন তিন কোটি পাঁচ লাখ ৩৬ হাজার টন। এর সঙ্গে দেশে উৎপাদিত ১০ লাখ টন গম ও আমদানি করা ৩০ লাখ টন খাদ্যশস্য যোগ করলে মোট খাদ্যশস্যের পরিমাণ দাঁড়ায় তিন কোটি ৪৫ লাখ ৩৬ হাজার টন।
আর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, গত অর্থবছরে (২০০৯-১০) বোরো চাল এক কোটি ৮৩ লাখ টন, আমন এক কোটি ২২ লাখ টন, আউশ ১৭ লাখ টন এবং গমের উৎপাদন ছিল ৯ লাখ ৬৯ হাজার টন। মোট খাদ্যশস্যের উৎপাদন ছিল তিন কোটি ৩১ লাখ ৬৯ হাজার টন।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী দেশের জনসংখ্যা ১২ কোটি ৪৪ লাখ। তাদের গতকালের জনসংখ্যা-ঘড়ি অনুযায়ী দেশের বর্তমান জনসংখ্যা ১৪ কোটি ৯৮ লাখ ৭২ হাজার ৪৪৮ জন। অনেকের ধারণা, আসলে জনসংখ্যা হবে ১৬ কোটি। খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিটের হিসাব মতে প্রতিদিন মাথাপিছু খাদ্যশস্যের চাহিদা ৪৮৯ গ্রাম। অর্থনীতিবিদদের মতে, একজন মানুষের প্রতিদিনের খাদ্য চাহিদা ৫০০ গ্রাম। সেই হিসাবে ১৬ কোটি লোকের জন্য বছরে খাদ্য চাহিদার পরিমাণ দাঁড়ায় দুই কোটি ৯২ লাখ টন। এর মধ্যে প্রায় ২০ লাখ জনসংখ্যা রয়েছে, যাদের বয়স ছয় মাসের নিচে এবং যারা দানাদার খাদ্যশস্য গ্রহণ করে না। জনসংখ্যার এ অংশটুকু বাদ দিলে খাদ্য চাহিদার পরিমাণ দাঁড়ায় দুই কোটি ৮২ লাখ ৬৩০ টন।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের দেওয়া খাদ্যশস্যের উৎপাদনের হিসাব সঠিক হলে দেশে ৩৩ লাখ ৩৫ হাজার ৩৭০ টন খাদ্যশস্য উদ্বৃত্ত থাকার কথা। কাজেই আমদানি তো নয়ই বরং বাংলাদেশ খাদ্য রপ্তানি করতে পারে। আর বাজারে দাম বাড়ারও কারণ নেই।
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক ও কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব হোসেন বলেন, ‘চাহিদার চেয়ে জোগান বেশি হলে চালের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। জোগান কম হলেই দাম বাড়ে। তাই বলা যায়, সঠিক তথ্যের অভাবে সরকারের পরিকল্পনা যথাযথ হয় না। খাদ্যের মতো একটি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তথ্যবিভ্রাট কারোই কাম্য নয়। বিষয়টি সরকারকে আমিও জানিয়েছি। কৃষি মন্ত্রণালয় মাঠকর্মী ও স্পারসোর মাধ্যমে যে পরিসংখ্যান সংগ্রহ করে তা প্রশ্নাতীত নয়। পরিসংখ্যান ব্যুরো জনসংখ্যার যে হিসাব দিচ্ছে তা নিয়ে অনেকের সন্দেহ থাকে। আর খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিট মাথাপিছু খাদ্য চাহিদার যে তথ্য দিচ্ছে তাও শতভাগ ঠিক নয়। এ অবস্থা চলতে দেওয়া উচিত নয়।’
খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশে উৎপাদিত খাদ্য ও আমদানি করা চালের বাইরেও বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা বাংলাদেশকে খাদ্য সহায়তা দেয়, যা তারা বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে বিতরণ করছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কৃৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গ্রাম পর্যায়ের অফিসগুলোর উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার (ব্লক সুপারভাইজার) মাধ্যমে সরকার খাদ্যশস্যের তথ্য সংগ্রহ করে। কৃষক কতটুকু জমিতে কী ফসল চাষ করছে, উৎপাদন কেমন হতে পারে এবং ফসল কাটার সময় প্রকৃত উৎপাদন কেমন হলোÑসে হিসাব দিয়ে থাকেন তাঁরা। অভিযোগ রয়েছে, এসব কর্মকর্তা কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন না। জরিপের জন্য সর্বজনস্বীকৃত কোনো পন্থাও তাঁরা ব্যবহার করেন না। বড় একটি আবাদি মাঠের পাশে গিয়ে সেখানে কতটুকু জমি আছে লোকজনের কাছে শুনে এর ওপর ভিত্তি করে একটি আনুমানিক উৎপাদনের হিসাব দেন। অথবা আগে থেকে সংগ্রহ করা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে অফিসে বসেই একটি কাল্পনিক তথ্য সরকারকে দেন, যার ওপর ভিত্তি করে খাদ্য পরিকল্পনা করা হয়।
সাধারণত কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানের সঙ্গে পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যের মিল থাকে না। এ নিয়ে সব সরকারের সময়ই প্রশ্ন উঠেছে। গত চারদলীয় জোট সরকারের সময় অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান পরিসংখ্যানের অমিল দূর করার জন্য অনেক বৈঠক করেন। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে পরিসংখ্যানগত অমিল দূর করার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটিও তাদের রিপোর্টে বিভিন্ন পরিসংখ্যানগত অমিলের জন্য খাদ্যমূল্য সংকটসহ নানা সংকট সৃষ্টির কথা তুলে ধরে। মহাজোট সরকারের কৃষিমন্ত্রীও গত বছর পরিসংখ্যান ব্যুরোর কর্মকর্তাদের ভর্ৎসনা করেন।
একজন কৃষি অর্থনীতিবিদ জানান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাব মতে যদি বোরো মৌসুমে বাম্পার ফলনই হবে তাহলে চালের দাম চড়া থাকার কোনো কারণ নাই। কৃষক, ব্যবসায়ী বা মজুদদাররা যদি মজুদও করে থাকেন তা সাধারণত আমন মৌসুম পর্যন্ত ধরে রাখেন। অথচ এবার আমন মৌসুমে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে উৎপাদন ভালো হওয়ার কথা জানানোর পরই চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। এমন নজির খুব কম রয়েছে। অপরদিকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের চালের বাজারের তেমন পার্থক্য নেই। তাই ভারত থেকে বৈধ বা অবৈধ কোনোভাবেই তেমন একটা চাল আসছে বা যাচ্ছে না। তাহলে বিপুল পরিমাণ উৎপাদিত খাদ্যশস্য কোথায় যাচ্ছে?

আর্কটিকে তেল অনুসন্ধানে রাশিয়া ও বিপির চুক্তি

রাশিয়ার আর্কটিক অঞ্চলে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানে ব্রিটিশ কম্পানি বিপি এবং ক্রেমলিন নিয়ন্ত্রিত জ্বালানি কম্পানি রোসনেফটের সঙ্গে এক হাজার কোটি পাউন্ডের 'ঐতিহাসিক' এক চুক্তি সই হয়েছে।

চুক্তি অনুযায়ী, রাশিয়ার আর্কটিক অঞ্চলের সাউথ কারা সাগরের এক লাখ ২৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় এ দুই কম্পানি যৌথভাবে তেল ও গ্যাসের অনুসন্ধান চালাবে। রোসনেফট তার শতকরা প্রায় ৯ দশমিক ৫ ভাগ শেয়ারের বিনিময়ে বিপির পাঁচ ভাগ শেয়ার লাভ করবে। অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে পরস্পর দক্ষতা বিনিময় করবে কম্পানি দুটি।
বিপির প্রধান নির্বাহী বব ডাডলি বলেন, 'এই অসাধারণ চুক্তি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি হাইড্রোকার্বন উৎপন্ন দেশের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘমেয়াদি, কৌশলগত এবং গভীর সম্পর্ক তৈরি করবে। এ ছাড়া বিশ্ব জ্বালানির চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখবে ঐতিহাসিক এ চুক্তি।'
রোসনেফটের প্রেসিডেন্ট এদুয়ার্দ খুদিয়ানতোভ বলেন, 'আমরা বিপির অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা ব্যবহার করতে পারব। এ চুক্তিকে বিপির সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের পরবর্তী ধাপ হিসেবে দেখছি।' চুক্তিতে যৌথ গবেষণার জন্য রাশিয়ায় 'আর্কটিক প্রযুক্তি কেন্দ্র' স্থাপনের বিষয়ে সম্মত হয়েছে উভয় কম্পানি।
ব্রিটেনের জ্বালানিমন্ত্রী ক্রিস হিউন এ চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিকরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। ডেমোক্র্যাটদলীয় কংগ্রেসম্যান অ্যাডওয়ার্ড মার্কে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রকদের মাধ্যমে চুক্তিটি পর্যালোচনার আহ্বান জানিয়েছেন।
গত বছরে মেঙ্েিকা উপসাগরে বিপির তেল উত্তোলনের প্ল্যাটফর্ম ডিপওয়াটার হরাইজন বিস্ফোরণের পর বিদেশি কম্পানির সঙ্গে বিপির এটা প্রথম চুক্তি। ওই বিস্ফোরণের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় ঘটে।
বিবিসির বাণিজ্য সম্পাদক রবার্ট পেসটন বলেছেন, 'বিপির নির্বাহীরা তেল দুর্ঘটনার পর এটিকে ভালো খবর হিসেবে দেখছে। তবে চুক্তিটি বিতর্কিত। কারণ রাশিয়াকে পুরো স্বচ্ছ সমাজ হিসেবে দেখা হয় না বা ব্যবসা করার জন্য রাশিয়া স্থিতিশীল কোনো স্থানও নয়।' সূত্র : বিবিসি।

সবরিমালায় নিহতের সংখ্যা শতাধিক

ভারতের দক্ষিণে কেরালা রাজ্যের একটি মন্দির থেকে তীর্থযাত্রীদের ফেরার পথে পদদলনের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা একশ ছাড়িয়েছে। তাদের মধ্যে পাঁচটি শিশু রয়েছে। আহতের সংখ্যাও শতাধিক। গত শুক্রবার রাতে কেরালার ইদ্দুকি জেলার বেঁদিপেরিয়া শহরের কাছে পুল্লুমেদুতে মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা ঘটে।

ইদ্দুকির দুর্গম পার্বত্য এলাকায় সবরিমালা মন্দিরে প্রতিবছরের মতো গত দুই মাস ধরে ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলছিল। এতে জড়ো হয়েছিল হাজার হাজার মানুষ। প্রতিবছর প্রায় ৪০ লাখ মানুষ পরপর কয়েকটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেয়।
শুক্রবার ছিল মকর জ্যোতি উৎসবের শেষ দিন। পূজা শেষে তীর্থযাত্রীরা ফেরার সময় পদদলনের ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানায়, শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় তীর্থযাত্রীবাহী একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ভিড়ের মধ্যে ঢুকে পড়ে। এতে আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি শুরু করলে লোকজন পায়ের নিচে চাপা পড়তে থাকে।
বিশেষ পুলিশ কমিশনার রাজেন্দ্র নায়ার বলেন, 'দুর্ঘটনার কারণে তীর্থযাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এতে পদদলনের ঘটনা ঘটে।' মন্দিরটি দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় হওয়ায় উদ্ধারকাজ চালাতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
রাজ্য স্বরাষ্ট্রসচিব জয় কুমার বার্তা সংস্থা এএফপিকে ১০৪ জন মারা যাওয়ার বিষয় নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। নিহতদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৫৪ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। স্থানীয় পুলিশ সঞ্জয় কুমার বলেন, 'আমরা এ পর্যন্ত ১০২টি মৃতদেহ উদ্ধার করেছি। উদ্ধারকাজ প্রায় শেষ।' কেরালার গভর্নর আর এস গাভাই এ ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
রাজ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কড়িয়ারি বালাকৃষ্ণ জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার এ দুর্ঘটনার তদন্ত করবে। কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি বলেন, মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা মানুষের কল্পনাতীত। সামরিক বাহিনীর স্থানীয় ইউনিটকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে তাদেরও কাজে লাগানো হবে।
দুর্ঘটনার পরপর কেরালার মুখ্যমন্ত্রী ভি এস অচ্যুতানন্দন জরুরি বৈঠক করেন রাজ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'এটা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। আহতদের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমার সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেবে।'
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। পিটিআই জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে এক লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
১৯৯৯ সালে একই ধরনের ঘটনায় সবরিমালা মন্দিরের পাশে পাহাড়ি ভূমিধসে আতঙ্কিত হয়ে সৃষ্ট হুড়োহুড়িতে ৫০ জন নিহত হয়। সূত্র : বিবিসি, এএফপি, রয়টার্স ও দ্য হিন্দু।