Saturday, May 12, 2012

মরে যাচ্ছে মাতামুহুরী

মাতামুহুরীর এখন মরণদশা। অবৈধভাবে পাহাড় খনন করে নির্বিচারে পাথর আহরণ ও গাছ কাটাসহ গাছের শিকড় উত্তোলন করায় পাহাড় ধসে পড়ছে।

বৃষ্টির সময় পাহাড়ের মাটি পানির সঙ্গে মাতামুহুরী নদীতে এসে শাখা খাল ও ছড়াসহ নিম্নাঞ্চল ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এ মৌসুমে তাই মাতামুহুরীর অবস্থা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে স্থানীরা। গত সপ্তাহে কক্সবাজারের চকরিয়ায় সরেজমিন এমন চিত্র দেখা গেছে।
চকরিয়া উপজেলার ঘুনিয়া, প্রপার কাকারা, চকরিয়া পৌরসভার কোচপাড়া, উত্তর লক্ষ্যারচর, পহরচাঁদা অংশে আগামী বর্ষায় ভয়াবহ ভাঙনের আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী। চকরিয়ার পৌর মেয়র নুরুল ইসলাম হায়দার সমকালকে বলেন, গত বছর বন্যায় কোচপাড়া অংশের শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙে গেলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড এখন পর্যন্ত তা সংস্কারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আসছে বর্ষায় এ বাঁধের ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। তখন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক রক্ষা করাও কঠিন হবে।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মোঃ আবদুচ সাত্তার সমকালকে বলেন, কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় নদী খননের কোনো ব্যবস্থা নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ড্রেজিং বিভাগ নদী খননের দিকটি দেখে থাকে। তিনি দাবি করেন, এ নদী জরুরি খনন করা দরকার। অন্যথায় প্রতি বছর মাতামুহুরী নদীর দু'পারের নতুন নতুন এলাকা ভাঙনের শিকার হবে। এ ছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙনরোধে যেটুকু কাজ করা দরকার পর্যাপ্ত অর্থের অভাবে তা করতে পারছে না। ফলে মাতামুহুরী নদীর ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না।
অভিযোগ আছে, চকরিয়া, বান্দরবানের লামা ও আলীকদম উপজেলার কয়েক লাখ একর বনজসম্পদ সমৃদ্ধ পাহাড়ের বৃক্ষরাজি উজাড় করেছে এক শ্রেণীর বনদস্যু। কয়েক যুগ ধরে পাল্লা দিয়ে নির্বিচারে বৃক্ষ উজাড় ও পাহাড় খনন করে পাথর উত্তোলন করায় এ তিন উপজেলার সিংহভাগ বৃক্ষসমৃদ্ধ পাহাড় এখন ন্যাড়া পাহাড়ে পরিণত হওয়ায় মাটি ধসে পড়ছে। এ অবস্থায় প্রতি বছর এসব পাহাড়ের মাটি প্রবল বর্ষণে পানিতে মিশে পলি আকারে ভেসে এসে একসময়ের আলোচিত প্রমত্তা মাতামুহুরীসহ অর্ধশতাধিক শাখা খাল ও ছড়া ভরাট হয়ে যেমন নাব্যতা হারাচ্ছে, তেমনি কোনো কোনো ছড়া চিরতরে মরেও যাচ্ছে।
খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পারমিট নিয়ে বর্তমানে লামা আলীকদমের বিভিন্ন মৌজায় পাথর আহরণে চিরুনি অভিযান চলছে। বিগত সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে পাথর আহরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও বর্তমানে সে আদেশ প্রত্যাহার করায় নির্বিচারে পাথর আহরণ চলছে। এভাবে চলতে থাকলে লামা আলীকদমের সিংহভাগ পাহাড়ের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন পরিবেশবাদীরা।
চকরিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার হোসেন বলেন, মাতামুহুরী চকরিয়া উপজেলার কৃষি অর্থনীতির একমাত্র চালিকা শক্তি। এ নদীর সঙ্গে জড়িয়ে আছে চকরিয়ার কৃষক ও জেলেদের জীবন-জীবিকা।
নানা কারণে বর্তমানে মাতামুহুরী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে একসময় এ নদীর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।
দীর্ঘদিন ধরে মাতামুহুরী নদী ভরাট হতে থাকায় সামান্য বন্যাতেই লোকালয় তলিয়ে যাচ্ছে। বন্যায় এ নদীর পানি উপচে চকরিয়া, লামা ও আলীকদমের সিংহভাগ লোকালয় তলিয়ে যাচ্ছে। চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম সমকালকে বলেন, মাতামুহুরী নদী চকরিয়ার সম্পদ ও শক্তি। প্রতি বছর ভরাট হতে হতে এ নদীর নাব্যতা ব্যাপক হ্রাস পেয়েছে। প্রতি বছর বন্যার সময় নদীর পানি লোকালয়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধনসহ নদীভাঙন সৃষ্টি করছে। এ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে হলে মাতামুহুরী নদী ড্রেজিং করা অত্যন্ত জরুরি। এ প্রস্তাব উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

No comments:

Post a Comment