Tuesday, February 21, 2012

সৈকতে ভাসছে মৃত কচ্ছপ-জেলি ফিশ

কক্সবাজারের টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন উপকূলের সমুদ্রসৈকতের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন ভেসে আসছে মৃত কচ্ছপ ও জেলি ফিশ।
সাগরে দেশি-বিদেশি মাছ ধরা ট্রলারে এগুলো আটকা পড়লে জেলেরা তা পিটিয়ে মারেন। পরে সেগুলো সৈকতে ভেসে ওঠে।


এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. শাহ আলম প্রথম আলোকে বলেন, সাগরে মাছ শিকারের জন্য বড় বড় জাল ব্যবহার করছেন জেলেরা। এসব জালে আটকা পড়া কচ্ছপ ও জেলি ফিশ দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত জীবিত থাকতে পারে। এরপর সেগুলো মারা যায় বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, কচ্ছপ সমুদ্রের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করে আর জেলি ফিশের ডিম ও বাচ্চা মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহূত হওয়ায় এগুলো মাছের বংশবিস্তারে সহায়তা করে। তাই কচ্ছপ ও জেলি ফিশ রক্ষা করা না গেলে মাছের সংকট দেখা দিতে পারে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গত এক সপ্তাহে টেকনাফে সমুদসৈকতের শাহপরীর দ্বীপ, খুরের মুখ, মহেশখালিয়াপাড়া, লম্বরী, মিঠাপানির ছড়া, রাজার ছড়া, কচ্ছপিয়া, জাহাজপুরা, বড় ডেইল, শীলখালী ও সেন্ট মার্টিন দ্বীপ এলাকার বিভিন্ন স্থানে ২৬টি মৃত কচ্ছপ ও দেড় শতাধিক জেলি ফিশ ভেসে উঠেছে। ঢাকা থেকে আসা পর্যটক হুমায়ুন কবির (৪৫) বলেন, মৃত কচ্ছপ ও জেলি ফিশ সৈকতে পড়ে থাকায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এগুলো পুঁতে ফেলার কোনো ধরনের ব্যবস্থা না থাকায় সৈকতের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এ কারণে খোলামেলাভাবে যাতায়াত করা সম্ভব হচ্ছে না।
উপজেলার মৎস্য জোন হিসেবে পরিচিত উপকূলের ৫৮ কিলোমিটার এলাকায় পাঁচ হাজারের বেশি ট্রলার ও ছোট-বড় নৌকায় কারেন্ট জাল ব্যবহার করে মাছ ধরা হয়। পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কচ্ছপ শীত মৌসুমে প্রজননের সময় বালুময় সৈকতে গর্ত খুঁড়ে ডিম পাড়ে। এ সময় অধিকাংশ মা-কচ্ছপ জেলেদের মাছ ধরার জাল ও ট্রলারের কারণে বিপদে পড়ে। যন্ত্রচালিত ট্রলারগুলোর চলাচলের সময় আঘাতে মারা পড়ছে অনেক মা-কচ্ছপ। এ ছাড়া জেলেদের জালে আটকা পড়ে প্রচুর কচ্ছপ, যার বেশির ভাগই তাঁদের হাতে মারা পড়ে।
এ প্রসঙ্গে শাহপরীর দ্বীপের জেলে সেলিম উল্লাহ বলেন, বড় কচ্ছপ জালে আটকা পড়লে জাল ছিঁড়ে ফেলে। তাই সেগুলো মেরে ফেলা হয়। আটকা পড়া কচ্ছপ ও জেলি ফিশের ওজন ১৫ থেকে ৩০ কেজি পর্যন্ত হয়। পুরো কক্সবাজার জেলায় উপজাতীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সুস্বাদু খাদ্য হিসেবে কচ্ছপের ডিমের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। ছোট-বড় কচ্ছপে ডিম থাকে ৩০০ থেকে ৪০০টি। এসব ডিম বস্তায় ভরলেও ভাঙে না। কারণ, এগুলো রাবারের মতো নরম। পরে এসব ডিম ঘাটে এনে বিক্রি করা হয়।
টেকনাফের পরিবেশ অধিদপ্তরের সিবিএইসিএ প্রকল্পের প্রশাসনিক সহকারী সাঈদ আল শাহীন প্রথম আলোকে জানান, এ এলাকায় কচ্ছপ সংরক্ষণের জন্য ১৭টি গ্রামে কমিটি রয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর কাজ চলছে। কিছুদিনের মধ্যে প্রায় চার হাজার বাচ্চা সাগরে ছাড়া হবে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শরিফ উদ্দিন উপকূলীয় এলাকার কারেন্ট জাল ও ট্রলারের জালে আটকে পড়ে কচ্ছপ ও জেলি ফিশ মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও পুলিশ অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অবৈধ কারেন্ট জাল জব্দ করলেও এর ব্যবহার রোধ করা যাচ্ছে না। কিন্তু বর্তমানে সেন্ট মার্টিনে অবৈধ কারেন্ট জালের ব্যবহার প্রায় বন্ধ বলে তিনি দাবি করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা ইসিএ কমিটির সভাপতি আ ন ম নাজিম উদ্দিন জানান, উপকূলীয় এলাকায় মৃত কচ্ছপ ও জেলি ফিশ ভেসে আসার খবর তাঁরা পেয়েছেন। অবৈধ কারেন্ট জালের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের জালে ডিম ছাড়তে আসা মা-কচ্ছপ আটকা পড়লে এগুলো যাতে মারা না হয়, সে ব্যাপারে জেলেদের উদ্বুদ্ধকরণে জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিংয়ের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

আদিনাথ মন্দিরে শিবচতুর্দশী মেলাঃ তীর্থযাত্রী সমাগমে মুখর মহেশখালী

কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর মৈনাক পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত আদিনাথ মন্দিরে শুরু হয়েছে হিন্দুসম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী শিবচতুর্দশী মেলা। ১০ দিনব্যাপী এই মেলার দ্বিতীয় দিনে গতকাল সোমবার বিপুলসংখ্যক তীর্থযাত্রীর সমাগম হয়।


স্থানীয় সূত্র জানায়, মেলার প্রথম দিনে গত রোববার লোকসমাগম কম হলেও গতকাল হাজারো মানুষের ঢল নামে। আদিনাথ মন্দিরের শিবদর্শন করতে প্রতিবেশী ভারত, নেপালসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিবছরের মতো এবারও এসেছেন তীর্থযাত্রীরা। শিবদর্শনের জন্য তাঁরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেন। মেলার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উপজেলা প্রশাসন এ বছর আশপাশে লটারি, সার্কাস, পুতুলনাচ, যাত্রা প্রভৃতি বিনোদনমূলক বিভিন্ন আয়োজনের অনুমতি দেয়নি। তীর্থযাত্রীদের ভোগান্তি দূর করতে স্বেচ্ছাসেবক সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন। মেলায় বিভিন্ন ধরনের পণ্যের পসরা নিয়ে বসানো হয়েছে ৮০০ স্টল। তীর্থযাত্রী ছাড়াও কেবল মেলা দেখতে এসেছে অসংখ্য মানুষ। মেলা চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
উপজেলার গোরকঘাটার বাসিন্দা মনির হোসেন ও আবদুল খালেক মেলা থেকে কিনেছেন আদিনাথ মন্দিরের ঐতিহ্যবাহী জিলাপি। চকরিয়ার বদরখালী থেকে মেলা দেখতে এসেছেন তাছনিয়া আবেদীন খান। তিনি বলেন, যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় এ বছর মেলায় এসেছেন তিনি। এই মেলায় বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী পাওয়া যায়।
ঢাকার ধানমন্ডি থেকে আসা তীর্থযাত্রী মণীন্দ্রলাল শীল ও কালিচরণ দে বলেন, সকালে কক্সবাজার কস্তুরাঘাটে পর্যাপ্ত নৌযান না থাকায় তাঁদের দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে।
আদিনাথ মেলা তদারক কমিটির সহসভাপতি দীপক পাল বলেন, তীর্থযাত্রীর সংখ্যা এ বছর তুলনামূলক বেশি। সড়ক যোগাযোগে উন্নতির ফলেই এমনটা হয়েছে।
মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রণজিৎ কুমার বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, মেলা প্রাঙ্গণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ টি এম কাউসার হোসেন বলেন, হিন্দুসম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী এই অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে একটি তদারক কমিটি গঠন করা হয়েছে।