Friday, May 11, 2012

সরকারি দল নানা সমস্যা সৃষ্টি করছেঃ হাসিনা আহমদ

কক্সবাজারের দুই নারী এমপির রাজনীতির শুরু শ্বশুর বাড়িতেই! অ্যাডভোকেট হাসিনা আহমদ রাজনীতিতে এসেছেন শ্বশুর বাড়িতে আসার পর। কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার সিকদার পাড়া গ্রামের শিক্ষাবিদ মরহুম মৌলভী সাঈদুল হকের বড়ো সন্তান এবং বিএনপির বর্তমান কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী আহমদ তাঁর স্বামী।

রাজধানী ঢাকার পুরানো পল্টন এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হাসিনার জন্ম ১৯৬৫ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি (অনার্স) সহ এল এল এম ডিগ্রি লাভ করেন। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়ের করা দুর্নীতির মামলায় স্বামী সালাহউদ্দিন আহমদ কারাগারে থাকায় কক্সবাজারের চকরিয়া-পেকুয়া আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সরাসরি ভোটযুদ্ধে তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। এর আগে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে তাঁর স্বামী সালাহউদ্দিন আহমদ এ আসনে এমপি নির্বাচিত হন। হাসিনা আহমদ বৃহত্তর চট্টগ্রামের প্রথম নির্বাচিত মহিলা এমপি। বর্তমানে তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য।
তিনি বলেন, 'এলাকায় আমি কম আসি বলে আমার বিরুদ্ধে যে প্রচারণা তা সাধারণ মানুষের নয়, আমার প্রতিপক্ষের। যা সত্যি নয়। আমি হয়তোবা প্রতি মাসে আসি না। তবে জাতীয় দিবসসহ দলীয় কর্মসূচি এলাকায় এসে পালনের চেষ্টা করি।'
এলাকায় জনগণের সেবা দিতে গিয়ে সরকারি দলের কোনো বাধার মুখে পড়েন কিনা?-প্রশ্নের জবাবে হাসিনা আহমদ বলেন, 'এরকম সরাসরি বাধার মুখে না পড়লেও আমি যাতে এলাকায় না আসি সেরকম নানাভাবে আমাকে বাধার সৃষ্টি করা হয়।'
বিরোধী দলীয় এমপি হিসেবে সরকারি উন্নয়ন বরাদ্দের ব্যাপারে তিনি বলেন, 'উন্নয়ন বরাদ্দ বলতে টিআর ও কাবিখা প্রকল্প ছাড়া আর কিছুই দেওয়া হয় না। ফলে অনেক উন্নয়ন প্রকল্প আমার নির্বাচনী এলাকায় বরাদ্দের অভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।' এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, কাটাফাড়ি সেতু, উজানটিয়া-করিয়ারদিয়া সেতু, উজানটিয়া-মাতারবাড়ী সেতু, সাহারবিল সেতুসহ বেশ কিছু বড় বড় ও গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। তাছাড়া গত কয়েক বর্ষা ও বন্যায় ক্ষতবিক্ষত সড়কগুলোও সংস্কার করা হয়নি। বর্তমান সরকারের গত তিন অর্থ বছরে প্রাপ্ত পেকুয়া-চকরিয়ার ১৩৭৮টি প্রতিষ্ঠানে ১২৮৭.৫ মেট্রিক টন চাল ও ৭৫০ মেট্রিক টন গম বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে চকরিয়া পেকুয়া আসনে। এ বরাদ্দ তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে পেয়েছেন। তিনি জানান, তবে দুটি উপজেলার জন্য এ বরাদ্দ যথেষ্ট নয়। টিআর, কাবিখা ও টাবিকা ছাড়া অন্য কোন উন্নয়ন বরাদ্দ এ পর্যন্ত চকরিয়া-পেকুয়া আসনের এমপি হাসিনা আহমদকে প্রদান করা হয়নি।
তার আসনে সরকার দলীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত মহিলা এমপি সম্পর্কে হাসিনা আহমদ বলেন, 'নির্বাচিত বিরোধী দলীয় এমপির আসনে একজন দলীয় অনির্বাচিত সংসদ সদস্যকে দায়িত্ব দিলেও তিনি এ পর্যন্ত কোনো উন্নয়ন করতে পারেননি।' এমনকি পেকুয়া-চকরিয়ার কোথাও একটি ইটও লাগানো সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ উত্থাপন করেন তিনি। বরং এলাকায় সন্ত্রাসের মদদ দিয়ে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি করা হচ্ছে বলে তার অভিযোগ। তিনি বলেন, 'বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে চকরিয়া-পেকুয়ায় বিএনপির শত শত নেতা-কর্মীকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।'

সুযোগ সন্ধানীরা মাঝে মাঝে বাধার কারণ হয়ে দাঁড়ানঃ এথিন রাখাইন

শ্বশুর বাড়ি কক্সবাজারে এসে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন অধ্যাপিকা এথিন রাখাইন। শহরের চাউল বাজার সড়কের বাসিন্দা এবং কক্সবাজার সিটি কলেজের অধ্যক্ষ ক্য থিং অং হচ্ছেন তার স্বামী।

দেশের উপকূলীয় জেলা বরগুনার আমতলী উপজেলার আগাঠাকুর পাড়ায় ১৯৬২ সালে জন্ম তাঁর। ১৯৮৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ (দর্শন) ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। ১৯৯১ সালে কক্সবাজার মহিলা কলেজে তিনি যোগদান করেন অধ্যাপনায়।
কলেজ জীবনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন অধ্যাপিকা এথিন। বর্তমানে কক্সবাজার
জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। সপ্তম জাতীয় সংসদেও তিনি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য। সপ্তম সংসদে মহিলা ও শিশু বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন এবং বর্তমান নবম সংসদে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সদস্য তিনি।
তিনি বলেন, 'প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েছি বার বার। তবে পরিবার এবং সমাজ থেকে কখনও বাধার সম্মূখীন হইনি। এলাকার সাধারণ মানুষের কাছ থেকে যথেষ্ট সমর্থন পেয়ে এসেছি।'
অধ্যাপিকা এথিন বলেন, 'আসলে রাজনীতি যারা করেন, তারা সকলে সচেতন মানুষ। আমি মনে করি রাজনীতিবিদদের উদ্দেশ্যই হলো সমাজ এবং এলাকার সার্বিক উন্নয়ন করা। এক্ষেত্রে পথ ও মতের ভিন্নতা থাকতে পারে। কিন্তু উদ্দেশ্য হবে একই। তাই আমি প্রকৃত রাজনীতি যারা করেন, সেটা যে পক্ষই হোক- তাদের পক্ষ থেকে প্রত্যাশিত ব্যবহারই পেয়েছি।'
এলাকার উন্নয়ন কাজ করতে গিয়ে কোনো বাধার সম্মুখীন হয়েছেন কিনা? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'উন্নয়ন করতে গিয়ে বাধা পাবো কেন? তবে হ্যাঁ, যারা সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন অর্থাৎ ঘন ঘন রঙ বদলান এবং মৌসুমি রাজনীতিবিদ সেজে জনদরদী হয়ে যান, তাদের নিকট থেকে মাঝে মধ্যে বাধা পাই। কারণ তাতে তাদের উদ্দেশ্যে ব্যাঘাত ঘটে থাকে।'
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ''সুযোগ সন্ধানীদের চিনে ফেলেছি এবং তাদের কৌশলে এড়িয়ে যেতেও তেমন কষ্ট হয় না।' উন্নয়ন কাজের ব্যাপারে এলাকার গ্রামীণ রাস্তাঘাট ও বেড়িবাঁধসমূহ উন্নয়ন করে চলেছি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নে অবদান রাখছি। কক্সবাজার সিটি কলেজের অনার্স কোর্স প্রবর্তন এবং অবকাঠামো উন্নয়ন করেছি। এলাকার মসজিদ, মন্দির, বৌদ্ধ বিহার ও গির্জা উন্নয়নে অবদান রাখছি। সর্বোপরি কক্সবাজার সরকারি মেডিক্যাল কলেজের নিজস্ব ক্যাম্পাস নির্মাণ কাজেও অবদান রয়েছে আমার।'
কক্সবাজার দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থান তাই এখানকার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ কী মনে করেন?-এ প্রশ্নের জবাবে রাথাইন বলেন, 'কক্সবাজার যেহেতু দেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র তাই এখানকার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দরে উন্নীত করাই হবে অন্যতম প্রধান কাজ। কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন সমপ্রসারণ করা হলে পর্যটনের প্রসার হবে আরো ব্যাপক।'

রোহিঙ্গাদের জন্য বিশেষ ফরমঃ চকরিয়ায় ভোটার তালিকা হালনাগাদ শুরু

উপজেলার ১৮ ইউনিয়ন ও এক পৌরসভায় শুরু হয়েছে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ। তথ্য সংগ্রহকারীরা ৩ মে থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছেন।

তথ্য সংগ্রহের কাজ চলবে আগামী ১২ মে পর্যন্ত। ইতিমধ্যে উপজেলাজুড়ে ব্যাপক মাইকিংও করা হয়েছে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু হওয়ার বিষয়ে। তবে এবারের হালনাগাদ ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গা নাগরিকেরা যাতে অন্তর্ভুক্ত হতে না পারে সেজন্য নির্বাচন কমিশন বেশকিছু শর্ত আরোপ করেছে।
উপজেলায় ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম সমন্বয়কারী চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার জাকির হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ভোটার তালিকায় যাতে রোহিঙ্গা নাগরিকেরা কৌশলে অন্তর্ভুক্ত হতে না পারে সেজন্য তথ্য সংগ্রহকারীদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।'
তিনি জানান, নতুন করে ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে মা-বাবার ভোটার আইডি কার্ড, ভূমি দলিল, জায়গার খতিয়ান, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ ও জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র দেখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এক্ষেত্রে নির্বাচনী ২ নম্বর ফরম ও বিশেষ ফরম পূরণ করতে হবে।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান জানান, উপজেলার সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সমন্বয়ে ২২৫ জন তথ্য সংগ্রহকারী ও ৪৫ জন সুপারভাইজার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করার আগে তাদেরকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কর্মকর্তা জানান, ১২ তারিখ পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষে চলবে যাচাই-বাছাই। এরপর আগামী ১৫ মে থেকে শুরু হবে ছবি তোলার কাজ।