Thursday, May 15, 2014

ভারতের লোকসভা নির্বাচন: সুষমা ও আদভানিকে নিয়ে সমস্যা- সরকার গঠনে মশগুল বিজেপি, বিমর্ষ কংগ্রেস by সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়

বুথ-ফেরত জরিপে উৎফুল্ল বিজেপি সরকার গঠনের চিন্তায় মশগুল। নরেন্দ্র মোদির সরকারে কারা থাকবেন, কে কোন মন্ত্রণালয় পেতে পারেন, বিজেপিতে সাংগঠনিক রদবদল কী রকম হবে বা নতুন কোন কোন দল এ সরকারের সমর্থনে এগিয়ে আসতে পারে, গতকাল বুধবার দিনভর এ বিষয়গুলো নিয়ে বিজেপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা তৎপর থেকেছেন। অন্যদিকে চূড়ান্ত ফল না বেরোলেও কংগ্রেস বেশ বিমর্ষ। আকবর রোডের সদর দপ্তরে বিষণ্নতা ছেয়ে আছে যেন। কংগ্রেস সহসভাপতি রাহুল গান্ধী আজ বৃহস্পতিবার দলের মুখপাত্রদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন। উদ্দেশ্য, ফল নিয়ে সবার এক সুরে কথা বলা। বিজেপির তৎপরতা বহুমুখী। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রিসভায় কাদের স্থান হচ্ছে, সেটাই প্রাধান্য পাচ্ছে। সমস্যা প্রধানত লালকৃষ্ণ আদভানি, মুরিল মনোহর যোশি ও সুষমা স্বরাজকে নিয়ে। তিনজনেই দলে সব সময় মোদিবিরোধী হিসেবে পরিচিত। আদভানি ও যোশি দুজনেই অশীতিপর, বাজপেিয়-মন্ত্রিসভায় আদভানি উপপ্রধানমন্ত্রীও ছিলেন। মোদির মন্ত্রিসভায় তাঁদের স্থান কী হবে, সেটা একটা বড় সমস্যা। দলে দুজনের অবস্থান এমনই যে তাঁদের উপেক্ষা করাও শোভন আর সহজ হবে না। এ মুহূর্তে বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট জাতীয় গণতান্ত্রিক জোটের (এনডিএ) চেয়ারম্যান আদভানি। মোদি জমানায় তাঁকে সেই দায়িত্বে রাখাও মুশকিল হতে পারে। সুষমা ও মোদি প্রায় সমবয়সী। কিন্তু চিরদিন বিরোধী শিবিরের বলে সুষমাকে গুরুত্বপূর্ণ কোনো মন্ত্রণালয় দিতে মোদির বিশেষ আগ্রহ নেই। তাঁকে লোকসভার স্পিকার করে সমস্যার সমাধান করা যায় িক না, সেই ভাবনাও রয়েছে। সুষমা গতকাল আদভানির সঙ্গে দেখা করেছেন। তাঁর সঙ্গে দেখা করেন দলের সাবেক সভাপতি নীতিন গড়কড়িও। নীতিন, অরুণ জেটলি, অমিত শাহ ও দলের সভাপতি রাজনাথ সিংও পরস্পরের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন। দুদিন আগে তাঁরা মোদির সঙ্গেও বৈঠক করেন।
মোদির মন্ত্রিসভায় যাঁদের স্থান প্রায় নিশ্চিত মনে করা হচ্ছে তাঁদের মধ্যে রয়েছেন অরুণ জেটলি, রবিশঙ্কর প্রসাদ, শাহনওয়াজ হুসেন, স্মৃতি ইরানি, অনুরাগ ঠাকুর, সাবেক সেনাপ্রধান ভি কে সিং ও সুব্রানিয়াম স্বামী। রাজনাথ সিং প্রাথমিকভাবে মন্ত্রী হতে গররাজি ছিলেন। কিন্তু ইদানীং তিনিও উৎসাহী হয়েছেন। রাজনাথ মন্ত্রী হলে বিজেপির সভাপতি কে হবেন, দলকে তা ঠিক করতে হবে। সাবেক সভাপতি নীতিন গড়কড়ি তাঁর পুরোনো পদ ফিরে পেতে আগ্রহী। দুর্নীতির অভিযোগে তিনি সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছিলেন। এতে চাপ সৃষ্টি করেছিলেন আদভানি নিজে। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় নীতিন দেখা করেছিলেন প্রভাবশালী রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের নেতাদের সঙ্গে। আদভানির সঙ্গেও তাঁর আলোচনা হয়েছে। নীতিন সংঘের খুবই কাছের। তাই মোদিকে সংঘের প্রতি অনুগত রাখতে তাঁকে আবার সভাপতি করা হলেও হতে পারে। মোদিকে লাগামছাড়া রেখে দিতে সংঘ একেবারেই চায় না। নীতিনকে সভাপতি পদে পুনর্বহাল না করা গেলে তিনি চান অবকাঠামোসংক্রান্ত কোনো মন্ত্রণালয়। বুথ-ফেরত জরিপ আশাতিরিক্ত ফল দেখানোয় বিজেপি ধরেই নিয়েছে, এনডিএ নিজের ক্ষমতাতেই সরকার গঠন করতে পারবে। কিন্তু একান্তই তা না হলে তাদের বন্ধু প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে বিজেপির অধিকাংশ নেতা ওডির বিজু জনতা দল এবং অন্ধ্র প্রদেশের তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি ও ওয়াইএসআর কংগ্রেসের মতো 'নির্ঝঞ্ঝাট' দলের সমর্থন নেওয়ার পক্ষে। এ তিন দল ছাড়া উত্তর-পূর্ব ভারতের ছোট ছোট দলগুলোকেও তারা ধরে রাখছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজেপির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, একান্তই সমর্থন নিতে হলে এদের থেকে নেওয়াই ভালো। কারণ, এদের বায়না কম। জাতীয় স্তরে রাজনীতি করার উচ্চাশাও নেই। তা ছাড়া এ দলগুলো অযথা চাপের রাজনীতি করে না।
অবশ্য জয়ললিতা ও নবীন পট্টনায়েক সব সম্ভাবনার রাস্তা খোলা রাখছেন। বিজেপির সঙ্গে হাত মেলাবেন না, এমন কথা দুজনের কেউই বুধবার বলেননি। বরং দুজনেই বলেছেন, তাঁরা এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। ফল বেরোনোর অপেক্ষায় রয়েছেন। ওডিশায় বিজু জনতা দলের চিফ হুইপ প্রভাত ত্রিপাঠি অবশ্য এক ধাপ এগিয়ে 'রাজ্যের স্বার্থে শর্তাধীন সমর্থনের' কথা শুনিয়ে রেখেছেন। শর্তটা হলো, অনুন্নত ওডিশাকে বিশেষ মর্যাদা দিতে হবে। বিজেপির সঙ্গে ঘেঁষার ইঙ্গিত দিয়ে এনসিপির প্রফুল্ল প্যাটেল ইতিমধ্যেই বলেছেন, তাঁরা একটা স্থায়ী ও শক্তিশালী সরকার গঠনের অপেক্ষায় রয়েছেন। এনসিপি ইউপিএর অনেক দিনের শরিক। মহারাষ্ট্রে কংগ্রেসের সঙ্গে তারা একযোগে সরকার চালাচ্ছে। প্রফুল্লের এ মন্তব্যে তাই ব্যাপক জল্পনা চলছে। বিজেপির এ তৎপরতার উল্টো ছবি কংগ্রেসে। দলকে ঘিরে বিরাজ করছে অদ্ভুত এক নীরবতা। বুথ-ফেরত জরিপ মেনে নিতে অনীহা থাকলেও তৃতীয়বারের ইউপিএ সরকার গঠন নিয়ে তারা একেবারেই আশাবাদী নয়। কংগ্রেস ফল বেরোনোর আগে চুপ থাকাই শ্রেয় মনে করছে। তাদের তৎপরতা একটাই, রাহুল গান্ধীর নেতৃত্ব যেন প্রশ্নের মুখে না পড়ে। এটা নিশ্চিত করতে গান্ধী পরিবারের অনুগতরা আগেভাগেই রাহুলকে রক্ষা করতে নেমে পড়েছেন। বিপর্যয়ের জন্য তাঁরা রাহুল-সোনিয়ার নেতৃত্বকে নয়, দায়ী করছেন মনমোহন-সরকারের ভালো কাজগুলো ঠিকমতো তুলে ধরতে না পারার ব্যর্থতাকে। এ অবস্থায় আজ রাহুল দলীয় মুখপাত্রদের বৈঠক ডেকেছেন। উদ্দেশ্য, সবাই যাতে একরকমভাবে ফলের ব্যাখ্যা করে নেতৃত্বকে রক্ষা করতে পারেন।

প্রধানমন্ত্রীর একনায়কতন্ত্র চলছে-টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদন

নির্বাহী বিভাগের প্রধান হিসেবে দেশে 'প্রধানমন্ত্রীর একনায়কতন্ত্র' প্রতিষ্ঠিত হয়েছে৷ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী একচ্ছত্র ক্ষমতার চর্চা করেন৷ সংবিধান প্রধানমন্ত্রীকে একচ্ছত্র ক্ষমতা দিয়েছে৷ অন্যদিকে বেশির ভাগ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে দলীয়করণ ও দুর্নীতি প্রধান সমস্যা৷ এর সঙ্গে নেতৃত্বের অযোগ্যতা ও অদক্ষতার কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকমতো কাজ করতে পারছে না৷ ফলে দেশের শুদ্ধাচার-ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়েছে৷
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের (টিআইবি) তৈরি 'বাংলাদেশের জাতীয় শুদ্ধাচার-ব্যবস্থার বিশ্লেষণ' শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে৷ প্রতিবেদনে শুদ্ধাচার-ব্যবস্থা বিশ্লেষণের জন্য ১৫টি প্রতিষ্ঠানের চিত্র তুলে ধরা হয়৷ ২০১২ সালে সরকার জাতীয় শুদ্ধাচার বিষয়ে যে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতেই টিআইবি এ গবেষণাটি পরিচালনা করে৷ গতকাল বুধবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে গবেষণাটি তুলে ধরা হয়৷
সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নীতি, নৈতিকতা ও সততার উন্নয়নের জন্য ২০০৮ সালে জাতীয় শুদ্ধাচার-ব্যবস্থার কর্মপরিকল্পনা তৈরি শুরু হওয়ার পর ২০১২ সালে মিন্ত্রপরিষদ এই পরিকল্পনার অনুমোদন দেয়৷ পরিকল্পনার আওতায় প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে শুদ্ধাচার উন্নয়নবিষয়ক কমিটি রয়েছে৷ আর কেন্দ্রীয়ভাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সভাপতিত্বে জাতীয় শুদ্ধাচার উপদেষ্টা কমিটি রয়েছে৷
গতকাল প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় অধিকতর দক্ষ৷ এর পরই অবস্থান নির্বাহী বিভাগ ও সুশীল সমাজের৷ তবে প্রায় সব প্রতিষ্ঠানেই সুশাসনের কার্যকারিতা নিম্ন পর্যায়ে৷ সুশাসনের অভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির সুযোগ বাড়ছে৷ সক্ষমতা ও সুশাসনের তুলনামূলক ঘাটতির পরও গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজ তাদের দুর্নীতিবিরোধী ভূমিকার জন্য যথেষ্ট শক্ত প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে৷ নির্বাহী বিভাগের ইতিবাচক দিক সম্পর্কে বলা হয়েছে, এই বিভাগের বাজেট বরাদ্দ বেড়েছে৷ স্বাধীনভাবে কাজ করার নিরঙ্কুশ ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব রয়েছে৷
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল বলেন, জাতীয় শুদ্ধাচার গঠনের কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয় নেই৷ অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের ক্ষমতার চেয়ে বেশি চর্চা করছে৷ আবার অনেক কমিশন নিজেদের ক্ষমতা নিজেরাই ছোট করে ফেলতে চাইছে৷ অনেক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে স্বাধীনতাবোধেরও অভাব আছে৷ যেকোনো প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা-জবাবদিহির অভাব তৈরি হলেই শুদ্ধাচার-ব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটে—এই মন্তব্য কর সুলতানা কামাল বলেন, যে কারণে লিমনের মতো নিরীহ ছেলের ওপরে মামলার খড়্গ ঝুলছে৷ আর বড় অপরাধীরা নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে৷
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহিমূলক সুশাসন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর উদ্বেগজনক মাত্রায় দলীয় রাজনৈতিক প্রভাব, দুর্বল তদারকি, অপর্যাপ্ত সম্পদ, স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতির বিস্তার ও দুর্নীতির ফলে বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হচ্ছে৷
গবেষণা প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রীর একনায়কতন্ত্রের যে কথা বলা হয়েছে, তা কি সাংবিধানিক কারণে তৈরি হচ্ছে, নাকি এটা চর্চার ব্যাপার—সাংবাদিকেরা এ প্রশ্ন তুললে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সংবিধানে নির্বাহী বিভাগের প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীকে একচ্ছত্র ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে৷ আবার অনেক বিষয় চর্চাতেও আছে৷ যেমন: কোনো একটি খুন বা গুমের মতো বিষয় দেখার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হলেও প্রধানমন্ত্রীকে এসব বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে দেখা যাচ্ছে৷
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১২ সালের আগস্ট থেকে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে গবেষণাটি পরিচালিত হয়৷ বার্লিনভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সহায়তায় একই ধরনের গবেষণা বাংলাদেশ ছাড়াও মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় পরিচালিত হয়েছে৷ গবেষণাটি যুগ্মভাবে পরিচালনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক সালাহউদ্দিন এম. আমিনুজ্জামান এবং টিআইবির উপনির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের৷ তাঁরা গবেষণাটির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন৷
সংসদ: একটি শক্তিশালী সংসদীয় রীতির সরকারের ব্যাপারে বাংলাদেশে সাংবিধানিক ও আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে৷ তবে দ্বন্দ্বমুখর রাজনীতি, দুর্বল সংসদীয় সংস্কৃতি, নির্বাহী বিভাগের বিস্তৃত নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষমতাসীন দলের আধিপত্য এবং বিরোধী দলের অব্যাহতভাবে সংসদ বর্জনের সংস্কৃতির কারণে সংসদীয় ধাঁচে সরকার পরিচালনার স্পৃহা ও পদ্ধতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ নির্বাহী বিভাগের ওপর সংসদের দুর্বল নিয়ন্ত্রণ এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সংসদে খুব কমই আলোচিত হয়৷ জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহির আওতায় আনার ক্ষেত্রে জনগণের জন্য তেমন কোনো সুযোগ নেই৷ জনপ্রতিনিধিরা প্রায়ই দুর্নীতি এবং স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে পৃষ্ঠপোষকতায় নিবেদিত থাকায় আইন প্রণয়নের দায়িত্বের ক্ষেত্রটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷
নির্বাহী বিভাগ: আইনসভা, নির্বাহী ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার বিভাজন পুরোপুরি অসমতল এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রাধান্যকৃত৷ রাষ্ট্রের বা সরকারপ্রধানের এবং মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের সম্পদের বিবরণ প্রকাশের কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থাও নেই৷
বিচার বিভাগ: আনুষ্ঠানিকভাবে পৃথক হলেও নির্বাহী বিভাগ এখনো নিম্ন আদালতকে প্রভাবিত করছে৷ সব সরকারের আমলেই বিচার বিভাগ অব্যাহতভাবে রাজনৈতিকভাবে দলীয়করণ হওয়ায় বিতর্কিত নিয়োগ, পদোন্নতি, চাকরিচ্যুতি এবং বিচারকের আচরণের মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সার্বিকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে৷ উচ্চ আদালতের বিচারকদের সম্পদ বিবরণী প্রকাশিত না হওয়ায় তা বিচারব্যবস্থার অন্যতম দুর্বলতা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে৷
জনপ্রশাসন: বিগত সময়ে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা রাজনীতিকীকরণের শিকার হয়েছেন৷ শুধু রাজনৈতিক বিবেচনা থেকে বিপুলসংখ্যক সরকারি কর্মকর্তাকে ক্ষমতাসীন দল ওএসডি করে রেখেছে৷ কোনো সুনির্দিষ্ট কাজ না থাকলেও তাদের জনগণের অর্থ থেকে বেতন দেওয়া হচ্ছে৷ সরকারি কর্মকর্তাদের সততা ও নিয়োগের প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে৷ পদোন্নতির ব্যবস্থাও অস্বচ্ছ এবং সরকারি সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল৷
স্থানীয় সরকার: স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থ-সংকটে ভুগছে৷ কেন্দ্রীয় সরকারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় বিকেন্দ্রীকরণ হচ্ছে না৷ স্থানীয় সরকারের কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাবও রয়েছে৷ দলীয়করণের কারণে স্থানীয় সরকারপ্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বের ভাবমূর্তির সংকট তৈরি হয়েছে৷
পুলিশ প্রশাসন: নাগরিকদের পুরোপুরিভাবে নিরাপত্তা দেওয়া এবং গণতান্ত্রিক আচরণে ব্যর্থতার কারণে পুলিশ প্রশাসন সব সময়ই সমালোচনার শিকার৷ আইনের শাসন সমুন্নত রাখার পরিবর্তে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে পুলিশ প্রশাসন নির্বিচারে ব্যবহৃত হয়ে আসছে৷ এর ফলে পুলিশ তাদের কর্মতৎপরতায় রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা এবং বিচারের ঊর্ধ্বে থাকার সুযোগ ভোগ করায় বিচারহীনতার সংস্কৃতির প্রসার ঘটছে৷ এতে জবাবদিহির কাঠামো ভেঙে পড়েছে৷
নির্বাচন কমিশন: রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত হওয়ায় নির্বাচন কমিশন তার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিষ্ঠায় সফল হয়নি৷ কমিশনের সদস্যদের নির্দলীয় হওয়ার কথা থাকলেও তাঁদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে৷ এ ছাড়া ভোটার তালিকা প্রণয়ন, নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ, নির্বাচনকালে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং সাধারণভাবে নির্বাচন পরিচালনায় সরকারের ওপর নির্ভরশীল থাকায় নির্বাচন কমিশনের কর্মকাণ্ডের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হচ্ছে৷ প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের নির্বাচন ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করায় নির্বাচন কমিশন নির্বাচনবিধি লঙ্ঘনের ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে অধিকাংশ সময় ব্যর্থ হয়েছে৷
মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক: মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় জনগণের অর্থের অদক্ষ এবং অপব্যবহার রোধে তুলনামূলকভাবে সাফল্যের সঙ্গে তার ভূমিকা পালন করছে৷ যদিও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এই কার্যালয়ে তাদের প্রতিবেদন সঠিক সময়ে পাঠায় না৷
দুদক: 'দন্তহীন বাঘ' হিসেবে চিহ্নিত দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রাতিষ্ঠানিক ও রাজনৈতিক কারণে জর্জরিত, যা তার সার্বিক দক্ষতা ও কার্যকারিতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে৷ দুদকের সমস্যাগুলো হচ্ছে—দৃঢ় রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব, ক্ষমতাসীন দলের দলীয় লোকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগের ব্যপারে কোনো কার্যক্রম গ্রহণ না করা, স্বপ্রণোদিতভাবে তদন্তের উদ্যোগে অনীহা, দক্ষ আইনজীবীর অনুপস্থিতি, গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে সক্ষমতার ঘাটতি এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব৷ প্রতিষ্ঠানটির নেতৃত্ব, দক্ষতা, বিশ্বাসযোগ্যতা ও সততা প্রশ্নবিদ্ধ৷
মানবাধিকার কমিশন: কমিশনের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সততা নিশ্চিতকরণে আইনি কাঠামো অপর্যাপ্ত৷ প্রায়োগিক ক্ষমতাহীন এই কমিশন শুধু সুপারিশকারী সংস্থা হিসেবে কাজ করছে৷ সংস্থাটির তদন্ত খুব দুর্বল এবং ক্রমবর্ধমান অভিযোগ বৃদ্ধির বিপরীতে যথাযথভাবে সাড়া দিতে সক্ষম নয়৷ অন্য সরকারি সংস্থাগুলো এই কমিশনকে সহযোগিতা করছে না৷ মানবাধিকার সম্পর্কে কিছু সচেতনতা বৃদ্ধি এবং পরিবর্তনের পক্ষে ওকালতি প্রয়াস সত্ত্বেও কমিশনের কাজের প্রভাব বাস্তবে তেমন দৃশ্যমান নয়৷
তথ্য কমিশন: তথ্য কমিশনের ব্যাপারে উচ্চ প্রত্যাশা সত্ত্বেও কমিশন সরকার ও অন্যান্য সংস্থা থেকে জাতীয় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্বপ্রণোদিতভাবে তথ্য চাওয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো সাফল্য পায়নি৷ দুর্বল নেতৃত্ব, পেশাগত দক্ষতার অভাব এবং সরকারি সংস্থাগুলোর অসহযোগিতার কারণে কমিশন ঠিকমতো কাজ করতে পারছে না৷
রাজনৈতিক দল: কেন্দ্রীভূত সিদ্ধান্তের প্রক্রিয়া, দলের অভ্যন্তরীণ কাঠামোর ব্যক্তিগতকরণ এবং অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি রাজনৈতিক দলগুলোর বৈশিষ্ট্য৷ দেশের সব ক্ষমতাসীন দলই জনস্বার্থের নামে দলীয় স্বার্থের সম্প্রসারণে জনগণের সম্পদের ওপর একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে৷ আইন মান্য করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলো খুবই দুর্বল৷ রাজনৈতিক ব্যবস্থা 'দুর্বৃত্তায়ন' ও বাণিজ্যিকীকরণের অংশ হয়ে গেছে৷ ভয়ভীতি বা সুবিধা দেওয়ার নামে রাজনৈতিক দলগুলো অস্বচ্ছভাবে দলীয় তহবিল সংগ্রহ করে থাকে৷
সুশীল সমাজ: একটি সুসংহত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় জনদাবি সৃষ্টি, রাজনৈতিক মূল্যবোধের চর্চা, সমান সুযোগের নীতি বজায় রাখা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্বের ওপরে চাপ সৃষ্টিতে সুশীল সমাজ তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে৷ তবে টিকে থাকা এবং কার্যক্রম অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে তারা বিদেশি অনুদাননির্ভর হয়ে পড়ছে৷ সুশীল সমাজভুক্ত সংস্থাগুলোর গঠন ও নিবন্ধনে আইনগত প্রক্রিয়ায় নমনীয়তা ও নিয়ন্ত্রণের মিশ্রণ ঘটায় তাদের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে সরকারের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করেছে৷
গণমাধ্যম: গণমাধ্যম স্বাধীন হলেও নিয়ন্ত্রণমূলক আইনি কাঠামোর কারণে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা, সরকারি গোপনীয়তা ও আদালত অবমাননার অজুহাতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কার্যকরভাবে খর্ব করা হয়েছে৷ বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন গণমাধ্যমে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজনৈতিকীকরণ ঘটেছে৷ কার্যকর স্বনিয়ন্ত্রণী ব্যবস্থার অভাবে গণমাধ্যমের জবাবদিহি ও সততা ক্ষয়িষ্ণু৷ ব্যক্তিমালিকানাধীন গণমাধ্যমগুলো সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি এবং সরকারের বিভিন্ন অনিয়ম ও অন্যান্য বিরোধপূর্ণ বিষয়ে উচ্চকিত হলেও সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর ভয়ে একধরনের সেলফ-সেন্সরিশপের অনুশীলন ও চর্চা করছে৷
ব্যবসা খাত: দেশের ব্যবসা খাতের আইনি কাঠামো একই সঙ্গে সহযোগিতামূলক ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ৷ সরকারি সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে অভিযোগ বা মামলা দায়ের কঠিন হয়ে পড়েছে৷ অনেক ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদদের সঙ্গে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রশ্নবিদ্ধ সম্পর্ক দেখা যায়৷ সরকারি কাজ, পানি-গ্যাস, ফোন, বিদ্যুৎসেবা ও লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতি একটি অতি সাধারণ ঘটনা৷
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় শুদ্ধাচার-ব্যবস্থার অন্তর্গত ১৫টি প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ৬৩টি সুপারিশ উত্থাপন করা হয়৷ উল্লেখযোগ্য সুপারিশ হলো: সংসদকে কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, আইন করে সংসদ বর্জনের সংস্কৃতি বন্ধ করা, সংসদ সদস্যদের আচরণবিধি বিল আইনে রূপান্তর করা; নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করতে কার্যবিধির সংস্কার, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বা বিচারকদের সমন্বয়ে গঠিত স্বাধীন সংস্থার মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ, বিচারকদের আয় ও সম্পদের তথ্য প্রকাশ ইত্যাদি৷

তদন্ত কমিটিসহ বিবাদীদের কার্যক্রমের শুনানি আজ @প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জে সাতজনকে অপহরণ ও খুনের ঘটনায় তদন্ত কমিটিসহ বিবাদীদের কার্যক্রমের অগ্রগতির বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার বেলা দুইটায় শুনানির জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ সময় নির্ধারণ করেন। বেলা ১১টার দিকে বিষয়টি আদালতে উত্থাপিত হলে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ এস এম নাজমুল হক বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল এই মামলায় অংশ নেবেন। তিনি অন্য মামলায় নিয়োজিত থাকবেন। তাই সময় প্রয়োজন। পরে আদালত বেলা দুইটায় সময় নির্ধারণ করেন। গতকাল বুধবার নারায়ণগঞ্জে সাতজনকে অপহরণ ও খুনের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটি ও বিবাদীরা অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে পক্ষগুলো কমিটি গঠনসহ কর্মক্রমের অগ্রগতি বিষয়ে পৃথক প্রতিবেদন জমা দেয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জনপ্রশাসন সচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, আইনসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, র্যাবের মহাপরিচালক, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের পক্ষে প্রতিনিধিরা কার্যক্রম সম্পর্কে অগ্রগতি জানিয়ে গতকাল সংশ্লিষ্ট আইন কর্মকর্তার কাছে পৃথক প্রতিবেদন দাখিল করে। আদালতের নির্দেশ অনুসারে ওই ঘটনার সার্বিক তদন্তে গঠিত সাত সদস্যের কমিটির পক্ষ থেকে একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। ৫ মে বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রকাশিত প্রতিবেদন বিবেচনায় নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত রুল জারির পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনা দেন। এতে সাতজনকে অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কোনো গাফিলতি আছে কি না, এটিসহ পুরো ঘটনা তদন্তে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে সাত সদস্যের কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ঘটনায় র্যাবের সম্পৃক্ততা আছে কি না, এ বিষয়ে বিভাগীয় তদন্ত করতে র্যাবের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া এ ঘটনায় করা মামলা গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) পাশাপাশি সিআইডিকে (অপরাধ তদন্ত বিভাগ) তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। ক্ষতিগ্রস্ত ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা দিতে পুলিশের মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দেন। নির্দেশনার অনুসারে কার্যক্রম বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন সাত দিনের মধ্যে অ্যাটর্নি জেনারেল মাধ্যমে আদালতে দাখিল করতে বিবাদীদের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরবর্তী আদেশের জন্য বিষয়টি ১৫ মে (আজ) কার্যতালিকায় আসবে বলে আদেশে বলা হয়। ওই সাতজনের মৌলিক অধিকার রক্ষায় তাত্ক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণে বিবাদীদের ব্যর্থতা চ্যালেঞ্জ করে ১১ মে হাইকোর্টে রিট করা হয়। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারির পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন। সাত খুনের ঘটনার পর অবসরে পাঠানো র্যাবের তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশের মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দেন আদালত। স্বতঃপ্রণোদিত রুলের সঙ্গে এ বিষয়টি নিয়ে শুনানি হবে বলে জানানো হয়। গত ২৭ এপ্রিল দুপুুরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোড থেকে অপহূত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন। এর তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যায় একে একে ভেসে ওঠে সাতজনের মরদেহ। এই সাতজন হলেন এক গাড়িতে থাকা কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, তাঁর সঙ্গী তাজুল ইসলাম, মনিরুজ্জামান স্বপন, লিটন ও তাঁর গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম এবং আরেকটি গাড়িতে থাকা আইনজীবী চন্দন সরকার ও তাঁর গাড়িচালক ইব্রাহিম। এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করে মামলাও করেছে নজরুলের পরিবার।