Monday, May 05, 2014

বিমান নিখোঁজে সম্পৃক্ততা সন্দেহে আল কায়েদা সংশ্লিষ্ট ১১ জন গ্রেপ্তার

মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের নিখোঁজ বিমান নিয়ে রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে। এবারে বিমান নিখোঁজের সঙ্গে সম্পৃক্ততা সন্দেহে আল কায়েদা সংশ্লিষ্ট ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ খবর দিয়েছে বৃটেনের ইন্ডিপেন্ডেন্ট। সন্দেহভাজনদের বয়স ২২ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। তাদের মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর ও কেদাহ অঙ্গরাজ্য থেকে গত সপ্তাহে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে রয়েছে ছাত্র, শ্রমিক, অল্পবয়সী এক বিধবা ও কয়েকজন ব্যবসায়ী। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই ও বৃটেনের গোয়েন্দা সংস্থা এমআই-৬ কে ডাকা হয়েছে। আটক ব্যক্তিরা নতুন একটি সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্য বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। মালয়েশিয়ার বিশেষ বাহিনীর সন্ত্রাস বিরোধী বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেছেন, তাদেরকে গ্রেপ্তারের পর বিমান নিখোঁজের পেছনে সন্ত্রাসীদের হাত থাকতে পারে বলে সন্দেহ আরও বেড়েছে। তিনি বলেন, বিমানটির যাত্রাপথ পরিবর্তনের পেছনে জঙ্গিদের হাত থাকার আশঙ্কা এখনও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, সন্দেহভাজনদের কয়েকজন মালয়েশিয়াতে সন্ত্রাসী কর্মকা-ের পরিকল্পনার কথা স্বীকার করেছে। তবে তারা নিখোঁজ বিমানের সঙ্গে কোন প্রকার সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেছে। ৮ই মার্চ বেইজিংয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে ফ্লাইট এমএইচ-৩৭০। ২৩৯ আরোহী সহ তা নিখোঁজ হয়ে যায়। প্রায় দু'মাস পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত উদ্ধার অভিযানে সুনির্দিষ্ট কোন ফলাফল মেলেনি। বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়া ফ্লাইটটির শেষ মুহূর্তের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে তাদের প্রাথমিক রিপোর্ট প্রকাশ করে। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী ৮ই মার্চ বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার ৪ ঘণ্টা পর কর্মকর্তারা উদ্ধার অভিযান শুরু করে। আন্তর্জাতিক উদ্ধার অভিযানের প্রধান অস্ট্রেলিয়ার অ্যাঙ্গাস হিউস্টন বলেন, কর্তৃপক্ষ এখনও বিমানটি খুঁজে বের করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে কোন ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করতে আরও ৮ থেকে ১২ মাস লাগতে পারে। উদ্ধার অভিযান তৎপরতার পরবর্তী দিকনির্দেশনা নিরূপণ করতে আগামী সপ্তাহে ক্যানবেরাতে মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও চীনের কর্মকর্তাদের একটি বৈঠকে বসার কথা রয়েছে।

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি আঁখি জানে না মা নেই by সাওরাত হোসেন সোহেল

শিশু আঁখি মণি (৩) হাসছে, কাঁদছে, খেলছে। দাদা-দাদী ও বাবার কাছে বায়নাও ধরছে। মাঝে-মধ্যে মায়ের কথাও বলছে। কিন্তু সে এখনও জানে না তার মা সালমা এক বছর আগে সাভার ট্র্যাজেডির 'রানা প্লাজা'র তলে হারিয়ে গেছে। তার দাদী আমিনা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, কি আর কমু বাবা মাঝে-মধ্যে যখন বায়না ধরে আম্মু যাব তখন বুকের ভিতর স্যাদ করে ওঠে, কোথায় পামু তার আম্মুকে। তাই নানান বুঝ দিয়ে শান্ত করে রাখি। এখনও আঁখি বলছে তার আম্মু ঢাকা গেছে কাজ করে অনেক টাকা-পয়সা আর তার জন্য নতুন জামা, আপেল, বিস্কুট আরও অনেক জিনিস আনবে। কিন্তু অবুঝ শিশুটি জানে না যে, তার মা আর কোন দিন তার জন্য জামা নিয়ে আসবে না। সাভার ট্র্যাজেডির ঘটনায় নিখোঁজ সালমার (২২) বাড়ি উপজেলার মাছাবান্দা ন'আড়ীর ভিটা এলাকায়। তার বাবার নাম সোলায়মান। কয়েক বছর আগে একই উপজেলার বড় কুষ্টারী এলাকার আবু তালেব মেকারের ছেলে আতিকুরের বিয়ে হয় বিয়ের কিছু দিন পর তাদের কোল জুড়ে আসে মেয়ে সন্তান সালমা অনেক আগে থেকেই আতিকুর ঢাকায় এক গার্মেন্টে কাজ করতো। সন্তান জন্মের প্রায় দেড় বছর পর দাদীর কাছে মেয়েকে রেখে কাজের সন্ধানে স্বামীর সঙ্গে চলে যায় ঢাকায়। যোগদান করে রানা প্লাজা'র ৩য় তলায়। ঘটনার দিন বুধবার বেতন নিতে গিয়েছিল সালমা। গার্মেন্টে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর ধসে পড়ে 'রানা প্লাজা' আর ফিরে আসেনি বেতন নিয়ে। ওই ভবন ধসের পর থেকে নিখোঁজ হয় সালমা।

আইনশৃঙ্খলার অবনতিতে মানবাধিকার হুমকির মুখে পড়ে: মিজানুর রহমান

একটি রাষ্ট্রে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে সেই রাষ্ট্রের মানবাধিকার হুমকির মুখে পড়ে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান। সম্প্রতি দেশে ঘটে যাওয়া অপহরণ ও হত্যাকাণ্ড এই অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির লক্ষণ বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক গোলটেবিল বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেন মিজানুর রহমান। এর আগে অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকের প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মিজানুর রহমান বলেন, 'জাতীয় মানবাধিকার কমিশন একটি সুপারিশমূলক প্রতিষ্ঠান। তাই আমরা একটি আধাসরকারি পত্রের মাধ্যমে রাষ্ট্র এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি কিছু সুপারিশ করেছি। যেমন, কাউকে গ্রেপ্তার করতে হলে, যিনি গ্রেপ্তার করতে যাবেন তাঁকে অবশ্যই পরিচয়পত্র দেখাতে হবে। কাউকে সাদা পোশাকে গ্রেপ্তার করা যাবে না এবং কাউকে গ্রেপ্তার করতে হলে অবশ্যই স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্য থেকে কমপক্ষে দুজনকে সাক্ষী রেখে গ্রেপ্তার করতে হবে।' তিনি জানান, এসব সুপারিশের মধ্যে দু-একটি কার্যকর হয়েছে। তবে এ বিষয়ে স্পষ্ট করেননি তিনি। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, প্রয়োজনে মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে রাষ্ট্র ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করা হবে এবং আদালতের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কিছু নির্দেশাবলি প্রদান করা হবে।

র‌্যাবের বিরুদ্ধে অপহরণ-খুনের অভিযোগ তদন্তে কমিটি

নারায়ণগঞ্জে সাতজনকে অপহরণ ও খুনের ঘটনায় র‌্যাব সদস্যদের জড়িত থাকার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। র‌্যাবের পক্ষ থেকে আজ সোমবার ওই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এটিএম হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, তদন্ত কমিটির সদস্য চারজন। র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আফতাফ আহমেদকে ওই তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে। গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ আদালত থেকে লিংক রোড ধরে ঢাকায় যাওয়ার পথে অপহূত হন সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম এবং তাঁর চার সহযোগী। প্রায় একই সময়ে একই সড়ক থেকে গাড়িচালকসহ অপহূত হন আইনজীবী চন্দন সরকার। তিন দিন পর গত ৩০ এপ্রিল একে একে ছয়জনের এবং পরদিন ১ মে আরেকজনের লাশ পাওয়া যায় শীতলক্ষ্যা নদীতে। নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম গতকাল রোববার র‌্যাবের বিরুদ্ধে একটি গুরুতর অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেছেন, নজরুলকে র‌্যাব তুলে নিয়ে হত্যা করেছে। এর জন্য আরেক কাউন্সিলর নূর হোসেনসহ কয়েকজনের কাছ থেকে ছয় কোটি টাকা নিয়েছেন র‌্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা। নারায়ণগঞ্জের রাইফেল ক্লাবে গতকাল রোববার সাংবাদিকদের কাছে এই অভিযোগ করেন শহীদুল ইসলাম ওরফে শহীদ চেয়ারম্যান। এ সময় নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের সাংসদ শামীম ওসমান সেখানে উপস্থিত ছিলেন। শহীদুল ইসলাম বলেন, 'কাউন্সিলর নূর হোসেন ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন মিয়ার কাছ থেকে ছয় কোটি টাকা নিয়ে র‌্যাব আমার জামাতা নজরুলসহ সাতজনকে খুন করেছে। ২৭ এপ্রিল দুপুরে যখন নজরুলকে দুটি গাড়িতে করে অপহরণ করা হয়, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন আমাদের জানিয়েছেন, দুটি মাইক্রোবাসে করে ওদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।' আপনি কী করে নিশ্চিত হলেন যে তাঁরা র‌্যাবের সদস্য? উত্তরে তিনি বলেন, র‌্যাব-১১ লেখা একটি গাড়ি সকাল থেকেই সেখানে ছিল। শহীদুল বলেন, 'ঘটনার পরপরই আমরা বিষয়টি এমপি শামীম ওসমানকে জানাই। শামীম ওসমান আমাকে সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীতে র‌্যাব-১১-এর সিও তারেক সাঈদের সঙ্গে দেখা করতে বলেন। আমি সেখানে গেলে সিও আমাকে কয়েক ঘণ্টা আটকে রেখে নানা রকম জিজ্ঞাসাবাদ করেন।'
শহীদুলের ব্যবসায়ী ছেলে সাইদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, 'আমরা বিকেল পাঁচটা-সাড়ে পাঁচটা নাগাদ র‌্যাবে পৌঁছাই। কিন্তু আমাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়। রাত নয়টায় র‌্যাবের সিও আমাদের দেখা দেন। তিনি এ সময় আমাদের বলেন, শামীম ওসমানের সঙ্গে আপনাদের কি কোনো ঝামেলা আছে? আপনারা শামীম ওসমানের কাছে যান। এরপর আমরা রাতে শামীম ওসমানের সঙ্গে রাইফেল ক্লাবে দেখা করতে যাই। তিনি আমাদের সামনেই নানা জায়গায় ফোন করেন।' অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে র্যাবের মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, কেউ অভিযোগ করলেই তা সত্য হয়ে যায় না। ঘটনাটি খুবই স্পর্শকাতর। এখনো তদন্ত চলছে। তদন্ত আগে শেষ হোক, তারপর সব জানা যাবে। এর আগে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না। এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ওই ঘটনার পর সেনাবাহিনীতে ফেরত যাওয়া র‌্যাবের সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মাহমুদ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
পুলিশকে কেন ঘটনা জানালেন না? এ প্রশ্ন করা হলে গতকাল শহীদুল ইসলাম বলেন, 'অপহরণের ঘটনার পরদিন আমি র‌্যাব-১১-এর সিও, মেজর জাহাঙ্গীর, মেজর রানা এবং নূর হোসেন, ইয়াসিনসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করতে পুলিশ সুপারের কাছে যাই। কিন্তু পুলিশ সুপার আমাকে বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিলে মামলা হালকা হয়ে যাবে। এরপর তাঁরা ছয়জন আসামির নাম বাদ দিতে বললে আমরা সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা দিই।' মামলার এজাহার লেখার কাজটি করেছিলেন সাইদুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, 'এসপি ও ডিসি ফতুল্লা থানার ওসিকে মামলা নিতে বলে দেন। আমরা দুপুরে থানায় যাই। কিন্তু পুলিশ মামলা লিখতে লিখতে রাত ১০টা বাজিয়ে দেয়।' শহীদুল ও তাঁর ছেলে সাইদুল দুজনেই অভিযোগ করেন, মামলা হলেও পুলিশ কোথাও অভিযান চালায়নি। অভিযান চালালে অবশ্যই নজরুলকে জীবিত উদ্ধার করা যেত।
সাংসদ শামীম ওসমানের সামনেই নজরুলের শ্বশুর র‌্যাবের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করেন। পরে একই স্থানে শামীম ওসমান বলেন, 'প্রশাসনের অনেকেই অপরাধের সঙ্গে জড়িত। আমি বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী এটা জানেন না।' তিনি বলেন, 'পুলিশের দারোগা যদি অপরাধ করে, আইজির ওপর তা বর্তায় না। সমস্ত বাহিনী সেই দায় বহন করে না। তাই আমি মনে করি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ যদি জড়িত হয়ে থাকে, তাহলে তা তদন্তের মাধ্যমে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।' এরপর বিকেলে রাইফেল ক্লাব থেকে সিদ্ধিরগঞ্জে নজরুল স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভায় শামীম ওসমান বলেন, 'এই হত্যায় নূর হোসেন জড়িত। এর আগে ইকবাল এক কোটি টাকায় র‌্যাবকে দিয়ে নজরুলকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। আমি গিয়ে তাকে বাঁচিয়ে নিয়ে এসেছি। কাজেই এ ঘটনায় ইকবালও জড়িত। মামলার অপর আসামি হাসু হলো বোবা ডাকাত। যাদের নামে মামলা হয়েছে, তারা সবাই জড়িত। তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করতে হবে।'
নারায়ণগঞ্জের আইনজীবীরাও এ ঘটনার সঙ্গে র‌্যাব জড়িত বলে দাবি করেছেন। জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান প্রথম আলোকে বলেন, নজরুলের সঙ্গে আইনজীবী চন্দনের কোনো দিন দেখাও হয়নি। কিন্তু সেদিন চন্দন সরকার হয়তো দেখে ফেলেছিলেন কারা নজরুলকে অপহরণ করেছে। আর এ কারণে তাঁকেও হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারী কারা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'চন্দন সরকার নিখোঁজ হওয়ার পর আমরা র‌্যাবের কার্যালয়ে গিয়ে তাঁর ব্যাপারে জানার চেষ্টা করি। কিন্তু র‌্যাব আমাদের ঢুকতেই দেয়নি। র‌্যাবই এ কাজ করেছে। জড়িতদের বদলি করলেই হবে না, খুনের অভিযোগে তাদের বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।'

শাপলা চত্বরে অভিযানের এক বছর- থিতিয়ে পড়েছে হেফাজত by সেলিম জাহিদ

দেশ কাঁপিয়ে উত্থান, ৫ মে ঢাকা অবরোধ, দিনব্যাপী সহিংসতা, শাপলা চত্বরে অবস্থান, গভীর রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ছত্রভঙ্গ। এরপর এক বছরের মাথায় থিতিয়ে পড়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। উপরন্তু, শীর্ষ নেতৃত্বের কারও কারও বিরুদ্ধে সরকারের কাছ থেকে বৈষয়িক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করে এখন হেফাজতের অভ্যন্তরে ক্ষোভ-হতাশা ও সন্দেহ-অবিশ্বাস প্রকট হয়ে উঠেছে। সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁদের বেশির ভাগ নেতাই বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন, হেফাজতের শীর্ষ নেতৃত্ব সরকারের কবজায় চলে গেছেন। আওয়ামী লীগ, সরকার ও ছাত্রলীগকে হেফাজতের বন্ধু বলে গত ১১ এপ্রিল হেফাজতের আমির শাহ আহমদ শফীর বক্তৃতার পর এ বিশ্বাস আরও জোরালো হয়। এখন অবস্থা এমন পর্যায়ে গেছে যে গত বছরের ৫ মে 'ঢাকা অবরোধ' কর্মসূচিতে হতাহতদের স্মরণে এ দিনটিতে আজ কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো কর্মসূচি দিতে পারেনি হেফাজত।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ সৃষ্টির পর কথিত নাস্তিকদের শাস্তিসহ ১৩ দফা দাবিতে হঠাৎ জেগে ওঠে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক এই অরাজনৈতিক সংগঠনটি। ৬ এপ্রিল ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দেশ-বিদেশে হইচই ফেলে দিয়েছিল। এরপর ৫ মের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি তখন ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারের চরম উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছিল। নানা বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে সারা দেশ থেকে মাদ্রাসার লাখ লাখ ছাত্র-শিক্ষক রাজধানী ঢাকার চারপাশের প্রবেশপথগুলো অবরোধ করেন। একপর্যায়ে তাঁরা মতিঝিলের শাপলা চত্বরে গিয়ে অবস্থান নেন। দিনভর রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে চলে সহিংসতা, সম্পদের ক্ষতি ও প্রাণহানী। এরপর মধ্যরাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে শাপলা চত্বর থেকে সরিয়ে দেয় হেফাজতকে। নিহতদের তালিকা প্রকাশ করেনি: সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ওই রাতের অভিযানে কোনো প্রাণহানি হয়নি। আর হেফাজতের আমির ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ফিরে ৭ মে এক বিবৃতিতে দাবি করেছিলেন, ওই অভিযানের সময় আড়াই থেকে তিন হাজার লোক মারা গেছেন।
পরে হেফাজতের নেতারা জানিয়েছিলেন, তাঁরা হতাহতদের তালিকা করছেন, সেটা যথাসময়ে প্রকাশ করা হবে। হেফাজতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী গত বছরের ৪ জুন এই প্রতিবেদককে বলেছিলেন, প্রশাসনের চাপ ও হয়রানির কারণে তাঁরা ঠিকমতো তথ্য সংগ্রহ করতে পারছেন না। তখন পর্যন্ত ৭৩ জন নিহত হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পেরেছিলেন বলে তিনি দাবি করেন। এগারো মাস পর গত শনিবার রাতে ওই তালিকা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে আজিজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, নিহত ও নিখোঁজদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এর সংখ্যা কত জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'শুনলে গা শিউরে উঠবে।' তালিকাটি চাইলে তিনি বলেন, এটি প্রকাশে এখনো হুজুরের (আমির আহমদ শফী) অনুমতি নেই। হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও ঢাকা মহানগর কমিটির আহ্বায়ক নূর হোসাইন কাসেমী প্রথম আলোকে বলেন, 'কেন্দ্রীয়ভাবে দায়িত্বপ্রাপ্তরা শাপলা চত্বরে শাহাদাতবরণকারী ভাইদের সঠিক তালিকা সংগ্রহের কাজ অনেকটা গুছিয়ে এনেছেন। ইনশাল্লাহ কেন্দ্রীয়ভাবেই তা দেশবাসীর সামনে প্রকাশ করা হবে।'
সরকারি লোকদের যাতায়াত: শাপলা চত্বর থেকে হেফাজতকে সরিয়ে দেওয়ার পর জুন ও জুলাই মাসে পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মাঠপর্যায়ে সক্রিয় ছিল হেফাজত। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীর পরাজয়ের জন্য হেফাজত একটা কারণ হিসেবে আলোচনায় এসেছিল। ফলে হেফাজত আবার সরকারের শীর্ষ মহলের উৎকণ্ঠার কারণ হয়ে ওঠে। অবশ্য ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচনের আগেই হেফাজতকে নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় সরকার। সংগঠনের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় গিয়ে শাহ আহমদ শফীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এর পর থেকে হেফাজতের আন্দোলনমুখী তৎপরতা থিতিয়ে আসে। একই সঙ্গে হেফাজতের আমিরের কাছে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের যাতায়াত বাড়ে। এ সময় সরকারের কাছ থেকে বৈষয়িক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগও ওঠে। ফলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতি অন্যদের সন্দেহ-অবিশ্বাস বাড়তে থাকে। এর মধ্যে গত ১০ এপ্রিল সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী, ২২ এপ্রিল চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, এর আগে ১৭ মার্চ একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুজন পদস্থ কর্মকর্তা হাটহাজারী মাদ্রাসায় গিয়ে হেফাজতের আমিরের সঙ্গে দেখা করেন। প্রায় সব বৈঠকেই আমিরের ছেলে আনাস মাদানী উপস্থিত ছিলেন।
কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা জানান, শুরুর দিকে হেফাজতের আমির সরকারের মন্ত্রী, সাংসদ, সরকারি কোনো সংস্থার লোকজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ দিতে রাজি হতেন না। একদম এড়াতে না পারলে জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের ডেকে আনতেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের কেউ দেখা করতে এলে ছেলে আনাস ছাড়া অন্য কাউকে রাখা হয় না। অবশ্য হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির নূর হোসাইন কাসেমী দাবি করেন, 'হেফাজতের ইমানি আন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রশ্নবিদ্ধ করার দুরভিসন্ধি নিয়ে অনেকে সরকারের সঙ্গে আঁতাত কিংবা অর্থ-সহায়তা গ্রহণের কাল্পনিক ও ভিত্তিহীন তথ্য প্রচার করছে।' বিবৃতিনির্ভর তৎপরতা: সংগঠনের নেতারা জানান, গত ডিসেম্বর মাসের আগ পর্যন্ত হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে সারা দেশের নেতৃস্থানীয় পর্যায়ের অন্তত অর্ধশত আলেম উপস্থিত থাকতেন। বর্তমানে কেবল হাটহাজারী মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষকসহ বৈঠকে উপস্থিতির সংখ্যা ৮-১০ জনে নেমে এসেছে। এ অবস্থায় হেফাজত এখন অনেকটা 'বিবৃতিনির্ভর' সংগঠনে পরিণত হয়েছে। হিসাব কষে দেখা গেছে, গত এক বছরে হেফাজতের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে ৭৫টির মতো বিবৃতি বা বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। এমনকি বৈঠক না করেও শীর্ষস্থানীয় আলেমদের অংশগ্রহণে সভা হয়েছে দাবি করে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়েছে বলে একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সর্বশেষ গত ৩০ এপ্রিল আহমদ শফীর সভাপতিত্বে হাটহাজারী মাদ্রাসায় হেফাজতের জরুরি সভা হয়েছে বলে সংগঠনের প্রচার সম্পাদক আনাস মাদানীর নামে একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। তাতে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে হেফাজতের আমির ও তাঁর ছেলে আনাসের আর্থিক ও সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানানো হয়। 'হেফাজতে ইসলাম সরকারের সাথে আঁতাত বা অর্থনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করেনি' শিরোনামে ওই বিজ্ঞপ্তিতে ২৩ জনের উপস্থিতির কথা উল্লেখ করা হয়। তাঁদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীসহ কয়েকজনের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁরা বলেন, এ ধরনের কোনো সভার কথা তাঁরা জানেন না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আনাস মাদানী গতকাল প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীসহ ওই সভায় যাঁরা আসতে পারেননি, তাঁদের সম্মতি নিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে নাম দেওয়া হয়েছে।
কর্মসূচি নিয়ে দ্বিধাবিভক্তি: কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা জানান, ৫ মে শাপলা চত্বরে হতাহতদের স্মরণে আজ সোমবার সারা দেশে 'দোয়া' কর্মসূচি দেওয়ার প্রস্তাব আসে। এ নিয়ে ২৯ এপ্রিল সকালে হেফাজতের আমিরের সঙ্গে কথা বলেন মহাসচিব মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরীসহ ছয়জনের একটি প্রতিনিধিদল। কিন্তু আমির কর্মসূচি দিতে রাজি হননি। এই অবস্থায় সংগঠনের কিছু নেতা আল-আমানাহ ফাউন্ডেশনের নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে হাটহাজারীর পার্বতী হাইস্কুল মাঠে আজ সোমবার সমাবেশ ডেকেছেন। হেফাজতের ঢাকা মহানগর কমিটিতে বারিধারা ও লালবাগ মাদ্রাসাকেন্দ্রিক দুটি ধারার সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানীর বারিধারার জামিয়া মাদানিয়া মাদ্রাসার প্রধান নূর হোসাইন কাসেমী হেফাজতের মহানগর কমিটির আহ্বায়ক। তিনি জমিয়তে উলামায়ে ইসলামেরও জ্যেষ্ঠ নেতা। আর জুনাইদ আল হাবীব হেফাজতের মহানগর কমিটির সদস্যসচিব, তিনি সম্প্রতি ইসলামী ঐক্যজোট থেকে জমিয়তে যোগ দিয়েছেন। অন্যদিকে হেফাজতের কেন্দ্রীয় ও মহানগর কমিটির নেতাদের বড় অংশ ইসলামী ঐক্যজোটের, তাঁরা লালবাগ মাদ্রাসাকেন্দ্রিক।
উভয় পক্ষ আজ পৃথক কর্মসূচি দিয়েছে। এর মধ্যে বারিধারা মাদ্রাসায় হেফাজতের ব্যানারে আজ '৫ ও ৬ মে শাপলা চত্বরসহ সারা দেশে শাহাদাত বরণকারীদের' স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের কর্মসূচি দেয় একাংশ। আরেক অংশ খেলাফত আন্দোলনের ব্যানারে আজ কামরাঙ্গীরচর মাদ্রাসায় জমায়েত হয়ে শাপলা চত্বরের উদ্দেশে 'কালেমা ও জাতীয় পতাকা' মিছিলের কর্মসূচি দিয়েছে। এ ছাড়া শাপলা চত্বরে 'শহীদদের' স্মরণে কাল মঙ্গলবার ইসলামী ঐক্যজোট ও খেলাফত মজলিসের দুই অংশসহ আরও কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দল যৌথভাবে লালবাগ মাদ্রাসায় দোয়া ও আলোচনার আয়োজন করেছে।

পাচারের আসামিই পার্কের পাখি-রক্ষক by কমল জোহা খান @প্রথম আলো

প্রাণী পাচারের মামলার এক আসামিকে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের পশুপাখি দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছে বন বিভাগ। বন সংরক্ষক তপন কুমার দের দাবি, ওই ব্যক্তি পশুপাখি পালনে 'নিবেদিতপ্রাণ' ও 'অভিজ্ঞ'। দায়িত্ব পাওয়া ওই ব্যক্তি হলেন নাজমুল হুদা। জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৩ জানয়ারি ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১৭০টি বন্যপ্রাণী ও পাখি আটক করেছিল আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। এ ঘটনায় নাজমুল হুদাকে আসামি করে বিমানবন্দর থানায় বন্যপ্রাণী আইনে একটি মামলা করেন বন পরিদর্শক সোহেল রানা। মামলার তদন্তকারী বিমানবন্দর থানার উপপরিদর্শক শফিকুল ইসলাম জানান, মামলাটির চার্জশিট গত ৩১ অক্টোবর আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। তবে কোনো শুনানি হয়নি। নাজমুল হুদার দাবি, মামলায় মিথ্যা অভিযোগে তাঁকে জড়ানো হয়েছে।
এদিকে ২০১৩ সালের ১৪ জানুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন নাজমুল হুদা। এর পর দরপত্র ছাড়াই বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের প্রাণী দেখভালের দায়িত্ব পায় নাজমুলের মালিকানাধীন রাজু ট্রেডার্স। সাফারি পার্কে ম্যাকাও ল্যান্ড, অ্যাকুরিয়াম, প্যাডেল বোট রাইডিং, ময়ূর শেড, শকুন, ধনেশ ও প্যারট অ্যাভিয়ারি টিকিট বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া ফেন্সি ডাক গার্ডেনের দেখাশোনা করছে রাজু ট্রেডার্স। সাফারি পার্কের বেশ কিছু বন্যপ্রাণী সরবরাহ করেছে তারা। ময়ূর, ধনেশ ও প্যারট অ্যাভিয়ারি এবং প্যাডেল বোটের দরপত্র আহ্বান করা হয় গত ৪ নভেম্বর। তবে এর যাচাই-বাছাইপ্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি। এসব প্রক্রিয়ার আগেই বন সংরক্ষক তপন কুমার দে রাজু ট্রেডার্সকে সাতটি প্রাণীর শেড তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দিয়েছেন। বন বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মতে, বন সংরক্ষক তপন কুমার দের একক সিদ্ধান্তে ছয়টি শেডের টিকিট বিক্রি করছে রাজু ট্রেডার্স।
সরেজমিনে দেখা গেছে, একেকটি শেডের প্রবেশমূল্য ১০ টাকা। তারিখ, ক্রমিক নম্বর ছাড়া টিকিট বিক্রি হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, বন্যপ্রাণী কেনাবেচার কাজ সাফারি পার্কের ভেতর থেকেই করছে রাজু ট্রেডার্স। তাই পাখির সংখ্যা বাড়ে আর কমে। এ ব্যাপারে বন সংরক্ষক ও বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের পরিচালক তপন কুমার দের দাবি, রাজু ট্রেডার্সের বিরুদ্ধে মামলা খারিজ হয়ে গেছে। মামলার অভিযোগপত্রের প্রসঙ্গ তুলতে তিনি বলেন, 'ব্যবসা করতে গেলে তো মামলা হবেই। প্রাণীদের কত যত্ন করে ওরা (রাজু ট্রেডার্স)'। দরপত্র ছাড়া রাজু ট্রেডার্সকে প্রাণী দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া সম্পর্কে বন সংরক্ষক তপন কুমার দে বলেন, 'চলার পথে ভুলত্রুটি হতেই পারে।' বন সংরক্ষক তপন কুমার দের সঙ্গে বন্যপ্রাণী পাচারকারীদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এর আগেও উঠেছিল। ২০১২ সালের ১২ জুন র‌্যাবের একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত শ্যামলীর একটি বাসা তিনটি বাঘের বাচ্চা উদ্ধার করে। এর সঙ্গে জড়িত আসামি জাকির হোসেন আদালতে জানান, তপন কুমার দে (মহাখালী বন অফিসে বসে) তাঁদের কাছে লিখিত দিয়ে বাঘসহ বন্যপ্রাণী এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পাঠাতেন। তবে তপন কুমার দে আদালতের কাছে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন।

৬ কোটি টাকায় অপহরণ ও খুন! by শরিফুল হাসান ও আসিফ হোসেন fromনারায়ণগঞ্জ @প্রথম আলো

র‌্যাবের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ করেছেন অপহরণের পরে নিহত নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলামকে র‌্যাব তুলে নিয়ে হত্যা করেছে। এর জন্য আরেক কাউন্সিলর নূর হোসেনসহ কয়েকজনের কাছ থেকে ছয় কোটি টাকা নিয়েছেন র‌্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা। নারায়ণগঞ্জের রাইফেল ক্লাবে গতকাল রোববার সাংবাদিকদের কাছে এই অভিযোগ করেন শহীদুল ইসলাম ওরফে শহীদ চেয়ারম্যান। এ সময় নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের সাংসদ শামীম ওসমান সেখানে উপস্থিত ছিলেন। অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে র‌্যাবের মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কেউ অভিযোগ করলেই তা সত্য হয়ে যায় না। ঘটনাটি খুবই স্পর্শকাতর। এখনো তদন্ত চলছে। তদন্ত আগে শেষ হোক, তারপর সব জানা যাবে। এর আগে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।
শহীদুল ইসলাম বলেন, 'কাউন্সিলর নূর হোসেন ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন মিয়ার কাছ থেকে ছয় কোটি টাকা নিয়ে র‌্যাব আমার জামাতা নজরুলসহ সাতজনকে খুন করেছে। ২৭ মে দুপুরে যখন নজরুলকে দুটি গাড়িতে করে অপহরণ করা হয়, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন আমাদের জানিয়েছেন, দুটি মাইক্রোবাসে করে ওদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।' আপনি কী করে নিশ্চিত হলেন যে তাঁরা র‌্যাবের সদস্য? উত্তরে তিনি বলেন, র‌্যাব-১১ লেখা একটি গাড়ি সকাল থেকেই সেখানে ছিল। শহীদুল বলেন, 'ঘটনার পরপরই আমরা বিষয়টি এমপি শামীম ওসমানকে জানাই। শামীম ওসমান আমাকে সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীতে র‌্যাব-১১-এর সিও তারেক সাঈদের সঙ্গে দেখা করতে বলেন। আমি সেখানে গেলে সিও আমাকে কয়েক ঘণ্টা আটকে রেখে নানা রকম জিজ্ঞাসাবাদ করেন।'
শহীদুলের ব্যবসায়ী ছেলে সাইদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, 'আমরা বিকেল পাঁচটা-সাড়ে পাঁচটা নাগাদ র‌্যাবে পৌঁছাই। কিন্তু আমাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়। রাত নয়টায় র‌্যাবের সিও আমাদের দেখা দেন। তিনি এ সময় আমাদের বলেন, শামীম ওসমানের সঙ্গে আপনাদের কি কোনো ঝামেলা আছে? আপনারা শামীম ওসমানের কাছে যান। এরপর আমরা রাতে শামীম ওসমানের সঙ্গে রাইফেল ক্লাবে দেখা করতে যাই। তিনি আমাদের সামনেই নানা জায়গায় ফোন করেন।' এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ওই ঘটনার পর সেনাবাহিনীতে ফেরত যাওয়া র‌্যাবের সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মাহমুদ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। পুলিশকে কেন ঘটনা জানালেন না? এ প্রশ্ন করা হলে শহীদুল ইসলাম বলেন, 'অপহরণের ঘটনার পরদিন আমি র‌্যাব-১১-এর সিও, মেজর জাহাঙ্গীর, মেজর রানা এবং নূর হোসেন, ইয়াসিনসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করতে পুলিশ সুপারের কাছে যাই। কিন্তু পুলিশ সুপার আমাকে বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিলে মামলা হালকা হয়ে যাবে। এরপর তাঁরা ছয়জন আসামির নাম বাদ দিতে বললে আমরা সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা দিই।'
মামলার এজাহার লেখার কাজটি করেছিলেন সাইদুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, 'এসপি ও ডিসি ফতুল্লা থানার ওসিকে মামলা নিতে বলে দেন। আমরা দুপুরে থানায় যাই। কিন্তু পুলিশ মামলা লিখতে লিখতে রাত ১০টা বাজিয়ে দেয়।' শহীদুল ও তাঁর ছেলে সাইদুল দুজনেই অভিযোগ করেন, মামলা হলেও পুলিশ কোথাও অভিযান চালায়নি। অভিযান চালালে অবশ্যই নজরুলকে জীবিত উদ্ধার করা যেত। বাবা ও ভাইয়ের এই অভিযোগের সঙ্গে একমত কি না, জানতে চাইলে নিহত নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বলেন, 'নূর হোসেন আর ইয়াসিনরাই যে আমার স্বামীকে খুন করেছে, সেটা নিয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই। তাদের হাত অনেক লম্বা। তাদের অনেক টাকা। তারা সব করতে পারে।'
সাংসদ শামীম ওসমানের সামনেই নজরুলের শ্বশুর র‌্যাবের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করেন। পরে একই স্থানে শামীম ওসমান বলেন, 'প্রশাসনের অনেকেই অপরাধের সঙ্গে জড়িত। আমি বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী এটা জানেন না।' তিনি বলেন, 'পুলিশের দারোগা যদি অপরাধ করে, আইজির ওপর তা বর্তায় না। সমস্ত বাহিনী সেই দায় বহন করে না। তাই আমি মনে করি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ যদি জড়িত হয়ে থাকে, তাহলে তা তদন্তের মাধ্যমে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।' এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নূর হোসেন দল করলেও তাঁর লোক নয়। কেউ অন্যায় করলে তিনি তাকে অন্যায় কাজে প্রশ্রয় দেন না।
এরপর বিকেলে রাইফেল ক্লাব থেকে সিদ্ধিরগঞ্জে নজরুল স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভায় শামীম ওসমান বলেন, 'এই হত্যায় নূর হোসেন জড়িত। এর আগে ইকবাল এক কোটি টাকায় র‌্যাবকে দিয়ে নজরুলকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। আমি গিয়ে তাকে বাঁচিয়ে নিয়ে এসেছি। কাজেই এ ঘটনায় ইকবালও জড়িত। মামলার অপর আসামি হাসু হলো বোবা ডাকাত। যাদের নামে মামলা হয়েছে, তারা সবাই জড়িত। তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করতে হবে।' নারায়ণগঞ্জের আইনজীবীরাও এ ঘটনার সঙ্গে র‌্যাব জড়িত বলে দাবি করেছেন। জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান প্রথম আলোকে বলেন, নজরুলের সঙ্গে আইনজীবী চন্দনের কোনো দিন দেখাও হয়নি। কিন্তু সেদিন চন্দন সরকার হয়তো দেখে ফেলেছিলেন কারা নজরুলকে অপহরণ করেছে। আর এ কারণে তাঁকেও হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারী কারা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'চন্দন সরকার নিখোঁজ হওয়ার পর আমরা র‌্যাবের কার্যালয়ে গিয়ে তাঁর ব্যাপারে জানার চেষ্টা করি। কিন্তু র‌্যাব আমাদের ঢুকতেই দেয়নি। র‌্যাবই এ কাজ করেছে। জড়িতদের বদলি করলেই হবে না, খুনের অভিযোগে তাদের বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।'

নূর হোসেনদের অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল দাবি @প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ সাত হত্যা মামলার আসামি ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নূর হোসেন ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সাতজনের অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলের দাবি জানিয়েছে নজরুলের পরিবার। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা সূত্র জানায়, এই আটজনকে গত দুই বছরে ১১টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সাতটি শটগান, দুটি পিস্তল, একটি রাইফেল ও একটি রিভলবার রয়েছে। ২০১২ সালে একটি রাইফেল ও একটি শটগানের লাইসেন্স এবং বাকিগুলোর লাইসেন্স দেওয়া হয় ২০১৩ সালে। নিয়ম অনুযায়ী শটগানের লাইসেন্স দেন জেলা প্রশাসক। পিস্তল ও রিভলবারের লাইসেন্স জেলা প্রশাসকের সুপারিশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেয়। এসব লাইসেন্স দেওয়ার সময় নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক ছিলেন মনোজ কান্তি বড়াল। কাউন্সিলর নজরুলসহ সাতজন অপহরণ ও হত্যার পর তাঁকে প্রত্যাহার করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়েছে।
নূর হোসেন ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সাতজনের অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলের জন্য পুলিশের কাছে আবেদন করার বিষয়টি গত শনিবার সাংবাদিকদের জানান নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম ও তাঁর শ্বশুর শহীদুল ইসলাম। তাঁদের দাবি, নূর হোসেন ও তাঁর অনুসারীদের অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল এবং তাঁদের গ্রেপ্তার করলেই সাত হত্যার রহস্য উন্মোচন হবে। শহীদুল ইসলাম সিদ্ধিরগঞ্জ থানা থেকে সংগ্রহ করা নূর হোসেন ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের লাইসেন্স করা অস্ত্রের একটি তালিকা সাংবাদিকদের দেন। পুলিশ ও জেলা প্রশাসন থেকে ওই তালিকার সত্যতা পাওয়া গেছে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সূত্র জানায়, নূর হোসেন ২০১২ সালে ২২ বোরের একটি রাইফেলের ও গত বছর একটি পিস্তলের লাইসেন্স পান। পলাতক হওয়ার আগ পর্যন্ত এ দুটি অস্ত্র সব সময় তাঁর গাড়িবহরে থাকত। তাঁর ভাই মো. নূরুদ্দিন মিয়া গত বছরের শুরুতে একটি শটগানের লাইসেন্স পান। নূর হোসেনের ভাতিজা ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল ২০১২ সালে একটি শটগানের এবং গত বছর একটি পিস্তলের লাইসেন্স পান। নূর হোসেনের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে পরিচিত মো. শাহজাহান (পিতা-মৃত ইদ্রিস আলী, নয়াআঁটি, সিদ্ধিরগঞ্জ), দেহরক্ষী আলী মোহাম্মদ (পিতা-মৃত আবদুল হক, শিমরাইল, টেকপাড়া), সানাউল্লাহ (পিতা-মৃত জয়নাল আবেদীন, শিমরাইল) ও জামালউদ্দিন (পিতা-সিদ্দিকুর রহমান, মিজমিজি বাতেনপাড়া) গত বছর একটি করে শটগানের লাইসেন্স পান। নূর হোসেনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ও সিদ্ধিরগঞ্জ কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি মো. আরিফুল হক হাসান গত বছর একটি শটগান ও একটি রিভলবারের লাইসেন্স পান। লাইসেন্স বাতিলের ব্যাপারে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মতিন বলেন, 'আমরা অস্ত্রগুলোর লাইসেন্স বাতিলের জন্য পুলিশ সুপারের কাছে প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। প্রতিবেদন সেখান থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যাবে।'

গুরুত্বহীন নিরীক্ষা, আইন ঝুলে আছে দুই বছর by মোর্শেদ নোমান @প্রথম আলো

সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার জন্য পরিচালিত নিরীক্ষা (অডিট) কার্যক্রমকে গুরুত্ব দিতে চান না অনেক কর্মকর্তা। অনেক ক্ষেত্রেই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের যেসব অডিট আপত্তি ওঠে, মন্ত্রণালয়গুলো তার জবাব এড়িয়ে যায়। মহাহিসাব নিরীক্ষকের (সিএজি) কার্যালয়ের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা জানান, বর্তমান আইন অনুযায়ী অনিয়মের কোনো আপত্তি উঠলে সর্বোচ্চ ৯০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জবাব দেওয়ার কথা উল্লেখ আছে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ওই সময়ের মধ্যে কোনো জবাব আসে না। যে কারণে জবাব ছাড়াই নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করতে হয়। এতে করে প্রতিবেদনগুলো অর্থবহ হয় না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, নানা কারণে অডিট আপত্তিগুলোর নিষ্পত্তি হয় না। বিষয়গুলো গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এ ক্ষেত্রে ঘাটতি মন্ত্রণালয় ও অডিট বিভাগ দুই পক্ষেরই থাকে। তিনি মনে করেন সমন্বয় সভাগুলো ঠিকমতো হলে অনেক আপত্তিই নিষ্পত্তি হয়ে যায়। অডিটে অসহযোগিতা এবং আরও বেশ কিছু জটিলতার কথা মাথায় রেখে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি কার্যকরভাবে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ২০১২ সালে অডিট আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয় সিএজি অফিস। প্রস্তাবিত এ আইন দুই বছর ধরে ঝুলে আছে। নবম সংসদেই আইনটি উত্থাপন করার কথা থাকলেও হয়নি। এটি এখনো অর্থ মন্ত্রণালয়ে আটকে আছে।
সাবেক মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরে আইনটি ঝুলে থাকা অত্যন্ত দুঃখজনক। গত সংসদে আইনটি উত্থাপন করার কথা থাকলেও কেন আইনটি আটকে আছে, সেটা আমার বোধগম্য নয়। তবে আর্থিক খাতের দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আরও নিশ্চিত করার জন্য আইনটি খুবই জরুরি।' সংবিধানের ১২৭ থেকে ১৩২ অনুচ্ছেদের আলোকেই সিএজি তথা মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সংবিধানের ১২৮(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, 'মহা-হিসাব-নিরীক্ষক প্রজাতন্ত্রের সরকারী হিসাব এবং সকল আদালত, সরকারী কর্তৃপক্ষ ও কর্মচারীর সরকারী হিসাব নিরীক্ষা করিবেন ও অনুরূপ হিসাব সম্পর্কে রিপোর্ট দান করিবেন এবং সেই উদ্দেশ্যে তিনি কিংবা সেই প্রয়োজনে তাঁহার দ্বারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তি প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত যে কোন ব্যক্তির দখলভুক্ত সকল নথি, বহি, রসিদ, দলিল, নগদ অর্থ, স্ট্যাম্প, জামিন, ভান্ডার বা অন্য প্রকার সরকারী সম্পত্তি পরীক্ষার অধিকারী হইবেন।' কিন্তু এ ক্ষেত্রে কাজ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন নিরীক্ষকরা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সহযোগিতা পান না বলে জানান তাঁরা।
সিএজি অফিসের প্রস্তুত করা নিরীক্ষা প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেখান থেকে ওই প্রতিবেদনটি যায় সরকারি হিসাব-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে। সংসদীয় কমিটি অডিট আপত্তিগুলো নিষ্পত্তি করে থাকে। কমিটিতে শুনানির সময় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং দপ্তরের কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকতে হয়। প্রস্তাবিত অডিট আইনে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকছে। এ আইনে বলা হয়েছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে অবশ্যই জবাব দিতে হবে। যদি জবাব না পাওয়া যায়, তাহলে ওই সব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে নিরীক্ষা কর্তৃপক্ষের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা প্রতিষ্ঠান অসহযোগিতাকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। না হলে মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক সরকারি হিসাব-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির কাছে রিপোর্ট দিতে পারবেন। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আইনটি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। তবে আইনের খসড়ায় কিছু বিষয়ে অস্পষ্টতা আছে। সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলেই প্রস্তাবিত আইনটি মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রণজিত কুমার চক্রবর্তী বলেন, 'জাতীয় নির্বাচনসহ নানা কারণে দেরি হয়েছে। নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আইনটি দ্রুত কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, শিগগিরই এর অনুমোদন দেওয়া হবে।'

নারায়ণগঞ্জে স্বামী-স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ভোলাইলের গেদু মিয়ার বাজার এলাকায় গতকাল রোববার দিবাগত রাতে স্বামী-স্ত্রীকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহত দুজন হলেন আমান উল্লা (৬০) ও তাঁর স্ত্রী হোসনে আরা। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন দুই ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল দিবাগত রাতের কোনো একসময় এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশের ধারণা। ফতুল্লা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম জানান, পারিবারিক কলহ ও জমিসংক্রান্ত বিরোধের কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে।
পুলিশ ও এলাকাবাসীর ভাষ্য, ভোলাইলের গেদু মিয়ার বাজার এলাকায় চারতলার একটি ভবনের মালিক আমান উল্লা। দ্বিতীয় স্ত্রী হোসনে আরাকে নিয়ে নিচতলায় থাকতেন তিনি। গতকাল দিবাগত রাতে কে বা কারা ধারালো অস্ত্র নিয়ে কুপিয়ে ও গলা কেটে তাঁদের দুজনকে হত্যা করেছে। আশপাশের লোকজন আজ ভোর ছয়টার দিকে ঘটনা জানতে পারেন। তাঁরা পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে।