Tuesday, January 11, 2011

অস্ট্র্রেলিয়ায় বন্যা: ব্রিসবেন ছেড়ে গেছে হাজার হাজার মানুষ

স্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের রাজধানী ব্রিসবেনে বন্যার পানি বাড়তে থাকায় মঙ্গলবার এলাকা ছেড়ে চলে গেছে হাজার হাজার মানুষ। ব্রিসবেনের পশ্চিমে ছোট শহর টুউমবাতে সোমবার রাতে আকস্মিক বন্যায় ৯ জনের প্রাণহানি এবং ৭২ জন নিখোঁজ হয়।

বন্যা পরিস্থিতি আরো মারাত্মক আকার ধারণ করার আলামত পেয়ে লোকজনকে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। ব্রিসবেন নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকায় বন্যার পানিতে ৬ হাজার ৫০০ বাড়িঘর ভেসে যেতে পারে বলে সতর্ক করেন ব্রিসবেনের মেয়র ক্যাম্পবেল নিউম্যান।

এর পরপরই বাসে, ট্রেনে এবং গাড়িতে করে হাজার হাজার মানুষ ব্রিসবেন ছেড়ে যায় বলে জানিয়েছে এএফপি। পুলিশ জানিয়েছে, বাড়িঘরের ছাদ থেকে হেলিকপ্টারে করে ৪০ জনেরও বেশি মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু ৫৯ জনের হদিস এখনো পাওয়া যায়নি।

গত ৫০ বছরের মধ্যে কুইসল্যান্ডে ভয়াবহ এ বন্যায় গত দু' সপ্তাহে ১৩ জনের প্রাণহানি হয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। পুলিশের এক কর্মকর্তা টুউমবাত শহরের পরিস্থিতিকে স্থল সুনামি অভিহিত করে বলেন, "সুনামির মতো তুফান লকিয়ার উপত্যকার দিকে ধেয়ে গেছে।"

লকিয়ারের মেয়র স্টিভ জোনস এ ঘটনাকে পরমাণু বোমার আঘাতের সাথে তুলনা করে বলেন, পরিস্থিতির তীব্রতা বর্ণনা করা অসম্ভব। টিভিতে প্রচারিত দৃশ্যে দেখা যায়, বাদামি রংয়ের পানি প্রবলভাবে টুউমবা টাউনের কেন্দ্রের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে, লোকজন টেলিফোনের থাম ধরে ও ছাদের উপর উঠে আত্মরক্ষার চেষ্টা করছে।

গাড়ির ভয়ার্ত যাত্রীরা গাড়ির ছাদে উঠে এই প্লাবন থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করছে। এই এলাকায় নদীর পানি কোথাও কোথাও এক ঘণ্টায় ২৫ ফুটের মত বেড়ে গিয়ে এলাকাবাসী ও কর্তৃপক্ষকে হতভম্ব করে দেয়। মঙ্গলবার অস্ট্রেলিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম শহর ব্রিসব্রেনের দিকেও বন্যার পানি সুনামির মতো ধেয়ে যায়। ফলে শহরের নিুাঞ্চলের বাসিন্দারা বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে।

ব্রিসবেনের বন্যা পরিস্থিতি বুধ অথবা বৃহস্পতিবার নাগাদ সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছতে পারে বলে জানিয়েছেন নিউম্যান। ধ্বংসাত্মক এ বন্যা গত মাসের খ্রিস্টীয় বড়দিনের আগে থেকে শুরু হয়। এতে এ পর্যন্ত ৬শ' কোটি ইউএস ডলার সমপরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রায় দুই লাখ মানুষ এই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রে থাকুন: বিএনপি

পৌর নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে থাকার আহবান জানিয়েছে বিএনপি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নয়া পল্টনের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিঙে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এ আহবান জানান।

তিনি বলেন, "কেউ যাতে কারচুপি করতে না পারে সেজন্য ফলাফল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে অবস্থান করতে হবে। সবাই যেন নির্বিঘেœ ভোট দিতে পারে সেজন্য আমরা দেশবাসী ও ভোটারদের সোচ্চার হওয়ার আহবান জানাচ্ছি।'' বিএনপি তার নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে পৌর নির্বাচন মনিটর করবে বলেও জানান এই জ্যেষ্ঠ বিএনপি নেতা।

বুধবার সারাদেশে পৌর নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হচ্ছে। চলবে ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রথম দিন রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬টি জেলার পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নজরুল ইসলাম খান অভিযোগ করেন, ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে। বিরোধী দলের প্রার্থীদের হুমকি দিচ্ছে, মারধর করছে। প্রচারণায় বাধার সৃষ্টি করছে। এ পরিস্থিতিতে সুষ্ঠুভাবে পৗর নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়েও তিনি সংশয় প্রকাশ করেন।

এ প্রসঙ্গে তিনি ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, বগুড়া, যশোর, নড়াইল, লক্ষ্মীপুর, কিশোরগঞ্জ, ঝিনাইদহ, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, টাঙ্গাইল, রাজশাহী, জামালপুর, পিরোজপুর, বরিশাল, বাগেরহাট, ঠাকুরগাঁওসহ বিভিন্ন পৌর এলকায় দলীয় প্রার্থীদের প্রচারণায় কথিত বাধাদান ও হামলার চিত্র তুলে ধরেন।

নজরুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবারও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে বিভিন্ন অভিযোগ তাকে অবহিত করেছেন। "তিনি (সিইসি) বলেছেন, আমি দেখছি। কিন্তু কোনো কিছু করছেন কিনা তা আমরা দেখছি না", বলেন তিনি।

প্রেস ব্রিফিংয়ে অন্যান্যের মধ্যে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক আবুল খায়ের ভুঁইয়া, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাধারণ সম্পাদক শরাফত আলী সপু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ওয়ান ইলেভেনের 'কুশীলবদের' বিচার দাবি বিএনপি'র

য়ান ইলেভেনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে 'রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী' অভিহিত করে এর 'কুশীলবদের' বিচার দাবি করেছে বিএনপি। বিএনপি'র স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ মঙ্গলবার বলেছেন, "দুই নেত্রী নয়, জাতীয়তাবাদী দলের নেত্রী খালেদা জিয়াকে মাইনাস করতেই ষড়যন্ত্রকারীরা ১/১১ এর মাধ্যমে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ধ্বংস করেছিলো।"

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বড় পরিবর্তনগুলোর একটি ঘটে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি। চার বছর আগের এ দিনেই জরুরি অবস্থা জারি করা হয়, যা বহাল ছিলো পরবর্তী দুই বছর। ২০০৬ সালের শেষ ভাগে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতা ছাড়ার পর সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতা-হানাহানির আপাত অবসান ঘটে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের জরুরি অবস্থা জারি করার মধ্যে দিয়ে। একইসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ ছেড়ে দেন তিনি। বাতিল করা হয় ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন।

সেনা বাহিনীর সমর্থন নিয়ে নতুন প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফখরুদ্দীন আহমদ। এই সরকার নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে দুই বছর পর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর, আবার গণতন্ত্রে ফেরে দেশ। ১১ জানুয়ারি ক্ষমতার পালাবদলের পর জরুরি ক্ষমতার আওতায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ হয়েছিলো। শুরুতে দেশের মানুষ সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সমর্থন করলেও ধীরে ধীরে তা কমতে শুরু করে।

১১ জানুয়ারিকে 'গণতন্ত্র হত্যা দিবস' অভিহিত করে এ উপলক্ষে মঙ্গলবার রাজধানীর মুক্তাঙ্গনে বিএনপি আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে কথা বলছিলেন খন্দকার মোশাররফ। সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ অভিযোগ করেন, সরকার ১/১১ এর ষড়যন্ত্রকারী অবৈধ সরকারের ধারাবাহিক সরকার বলেই তাদের [তত্ত্বাবধায়ক সরকারের] অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিচার করছে না। উল্টো বিগত অবৈধ সরকারের মতোই বিরোধী দলের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও মিথ্যা মামলা দিয়ে যাচ্ছে।

এভাবে নির্যাতন চালিয়ে বিরোধী দলকে দমানো যাবে না বলেও হুশিয়ারি দেন তিনি। ওয়ান ইলেভেনের সরকার শেখ হাসিনাকে বন্দি করে নির্যাতন চালিয়েছে উল্লেখ করে তাদের বিচার করতে শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মওদুদ আহমদ। তিনি বলেন, "সুযোগ আসলে বিএনপি অবশ্যই ১/১১-এর ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার করবে।" বিগত তত্বাবধায়ক সরকারের ওপর শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবিও জানান তিনি।

বিএনপির সহসভাপতি শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, মিজানুর রহমান মিনু, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, এম ইলিয়াস আলী, অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক আবুল খায়ের ভূঁইয়া, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলম প্রমুখ বক্তব্য দেন।

মোবাইল ফোনে হুমকিদাতাদের ধরা হবে

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু বলেছেন, মানবতাবিরোধী বিচারকাজে যুক্ত কর্মকর্তা ও ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদেরকে মোবাইল টেলিফোনে হুমকি-ধামকি দেওয়া হচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এই হুমকিদাতাদের ধরে আইনের হাতে সোপর্দের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে 'ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেল স্থাপন' সংক্রান্ত আন্ত:মন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। তিনি বলেন, "যুদ্ধাপরাধীদের বিচার রোধে চারদলীয় জোট নানা চক্রান্ত করে যাচ্ছে। মোবাইল ফোনে চাঁদাবাজি, হুমকি বা প্রযুক্তির ব্যবহার করে যারা অপরাধ করছে তাদেরকে ধরার ক্ষেত্রে কী ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে-এ প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, "এসব ব্যাপারে কোনো কিছু জানানো হবে না। তবে এদের কেউ ছাড়া পাবে না।"

বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল উল্লেখ করে টুকু বলেন, "দেশের মানুষই এ কথা বলছে। "ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। তবে চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আটকের চেষ্টা করা হচ্ছে।"

মাঝে মধ্যে সন্ত্রাসীরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠছে। তাদের প্রতিহত করতে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীকে সজাগ থাকার নির্দেশ দেন তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকারসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকায় ও চট্টগ্রামে দুটি সুড়ঙ্গ পথ নির্মাণের সিদ্ধান্ত

যানজট নিরসনে ঢাকা মহানগরীতে একটি এবং চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর নিচে একটি সুড়ঙ্গ পথ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মঙ্গলবার রাজধানীর বনানীতে সেতু ভবনে মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সেতু বিভাগ এবং সড়ক ও রেলপথ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন।

সেতু বিভাগ এ বৈঠকের আয়োজন করে। মন্ত্রী জানান, ঢাকা মহানগরীতে জাহাঙ্গীর গেইট থেকে রোকেয়া সরণি পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এবং চট্টগ্রামে কর্ণফুলীর নদীর নিচে আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ দুটি সুড়ঙ্গ পথ (টানেল) নির্মাণ করা হবে। এ লক্ষ্যে কর্ম পরিকল্পনা (অ্যাকশন প্ল্যান) চূড়ান্ত করা হয়েছে।

আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তা অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে বলে জানান তিনি। তবে সুড়ঙ্গ পথ দুটি নির্মাণে অর্থায়নের বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। বর্তমান সরকারের মেয়াদেই এই পথ নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, "সুড়ঙ্গ পথ দুটি নির্মাণ করা হলে ঢাকায় এবং চট্টগ্রামে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি যানজট নিরসন হবে।"

সড়ক ও রেলপথ বিভাগ এই সুড়ঙ্গ পথ দুটি নির্মাণ করবে বলে মন্ত্রী জানান। বৈঠকে সড়ক ও রেলপথ বিভাগের সচিব মো. মোজাম্মেল হক খান, সেতু বিভাগের সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, সেতু বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল ওয়াদুদসহ উভয় বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

'তলস্তয়' গল্প এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ by নূরুল ইসলাম নূরুচান

লস্তয় গল্প প্রসঙ্গে কিছু বলব। তবে এর আগে অন্যান্য প্রসঙ্গ নিয়ে কিছু কথা বলে নিই। গুণবিচারি সম্পাদক শামীম রেজার সম্পাদনায় শিলালিপি শুরু থেকে এ পর্যন্ত নব নব বিষয় নিয়ে আবির্ভূত হচ্ছে তার পাঠকদের সামনে। শিলালিপির নতুন যে কয়টি বিষয় পাঠক হিসেবে আমার ভালো লাগে তা হলো পাঠ প্রতিক্রিয়া, যা পড়ছি যা লিখছি এবং যেভাবে লেখা হলো।

শিলালিপির আগে আর কোনো সাহিত্য সাময়িকী এ ধরনের বিভাগ চালু এবং বিষয়ভিত্তিক সংখ্যা করেছে বলে আমার জানা নেই।
কালের কণ্ঠের সাহিত্য সাময়িকী শিলালিপির ৪৪তম সংখ্যা (২৬ নভেম্বর ২০১০) 'বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক', লেখকদের ঈশ্বর তলস্তয়-এর মৃত্যু-শতবর্ষের শ্রদ্ধা নিবেদন আয়োজনটি আমাদের মুগ্ধ করেছে। প্রধান কবি বেলাল চৌধুরীর 'তলস্তয় : মৃত্যু শতবর্ষের শ্রদ্ধাঞ্জলি', দেবেশ রায়ের 'তলস্তয়ের হৃদয়সংবেদী ডায়েরি' এবং কায়সার আহমেদ দুলালের লেখা 'কবি সুফিয়া কমালের অপ্রকাশিত কবিতা' অনন্য সংযোজন। এদিকে আন্দালিব রাশদী লেখকদের ঈশ্বর তলস্তয়কে নিয়ে 'তলস্তয়' শিরোনামের একটি গল্প (!) লিখে মহান দায়িত্বটি পালন করেছেন? আমরা জানি, একজন লেখকের সৃষ্টি এবং তাঁর জীবনস্মৃতি নিয়ে প্রবন্ধ-নিবন্ধ লেখা যায়; কিন্তু লেখককে নিয়ে গল্প লেখা যায়_এটা অজানাই ছিল। আন্দালিব রাশদীর গল্পটি পড়ে মনে হয়েছে, তলস্তয়ের লেখা একান্ত ব্যক্তিগত ডায়েরিটি তাঁর মৃত্যুর শতবর্ষ পর গল্প লেখকের (আন্দালিব রাশদী) হাতে এসে পড়েছে তাঁর সৌভাগ্যের কারণে (!)। গল্প পড়ে আবার এও মনে হয়েছে, 'লেখকদের ঈশ্বর' তলস্তয়ের নৈতিক চরিত্র হননের মাধ্যমে পুরো লেখকগোষ্ঠীকে বারবনিতাপাড়ায় যাওয়া বা বেদেনিদের কাছে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে, যাতে লেখকরা নোংরা যৌন অভিজ্ঞতার কথা তাঁদের গল্প-উপন্যাসে লিখতে পারেন (!)। দেওয়ান আতিকুর রহমানের চমৎকার অলংকরণে 'তলস্তয়' গল্পটির বারবনিতা চন্দ্র বানুর প্রশ্নোত্তরে গল্পের প্রধান চরিত্র জানায়, তাঁর নাম 'লেভ তলস্তয় এবং মানবধর্ম।' চন্দ্র বানু বলে, '...সব ধর্মের মানুষই এই কাম করে। আমার কাছে আসে।' 'মানবধর্ম' বলে এখানে লেখক আন্দলিব রাশদী মানুষকে সব ধর্মের ঊধর্ে্ব তোলার চেষ্টা করেছেন, যা ধ্রুব সত্য। যা হোক, 'তলস্তয়' গল্পটি একটি গাঁজাখোরি গল্প বলেই আমার মনে হয়েছে। এবং এও মনে হয়েছে যে ওই গল্পের মাধ্যমে আন্দলিব রাশদী পুরো লেখকগোষ্ঠীকে হেয়প্রতিপন্ন করেছেন, যা আদৌ যুক্তিযুক্ত হয়নি।

নূরুল ইসলাম নূরুচান
সাধারচর
শিবপুর, নরসিংদী

পাঠক ও লেখক সৃষ্টিতে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র বিভিন্ন ইভেন্টের আয়োজন করতে পারে

মাদের দেশ অনেক মানুষের দেশ। মানুষের অভাব হওয়ার কথা নয়। অন্তত ঢাকায় যত মানুষ বাস করে, প্রতিটি পরিবার থেকে গড়ে একজনকে মেলায় আনতে পারলে মানুষের স্থান সংকুলানের কথা নয়। সর্বশেষ খবর হলো, ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেলা জমেনি।

এক পত্রিকার মাধ্যমে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক বলেছেন, 'মেলায় দর্শনার্থী আকর্ষণের জন্য সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা শুরু হচ্ছে।' এটা তো মেলা শুরু হওয়ার আগে নিশ্চিত করার বিষয়। আয়োজকদের অবশ্য মেলা শুরু করতে কোনো গাফিলতি নেই। তবে যে জন্য আয়োজন, যাঁদের জন্য আয়োজন, যেভাবে আয়োজন করা দরকার, সে বিষয়ে কী কী করেছেন, বোঝা কঠিন। স্পষ্টই বলা যায়, আয়োজকরা গণমাধ্যমকে কার্যকরভাবে সম্পৃক্ত করতে পারেননি। প্রকাশকদের মাথায় হাত। আয়োজনে যত টাকা খরচ করা হচ্ছে, তত টাকার বই বিক্রি হলেও একটা সান্ত্বনা পাওয়া যেত।
ফেব্রুয়ারিতে বাংলা একাডেমী আয়োজিত একুশে বইমেলা জাতীয় উৎসবে রূপ নিয়েছে। আয়োজকরা ডিসেম্বরের মেলায় পাঠক টানতে সক্ষম হবেন? আবার নাগরিকদের বই নিয়ে বাজেট ভাবনার একটা বিষয়ও এখানে বিবেচ্য হওয়া জরুরি। অন্যদিকে ডিসেম্বর মাসে বড় সংখ্যায় ছেলেমেয়েরা বার্ষিক পরীক্ষার জন্য ব্যস্ত থাকে। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাড়া পাওয়াও কঠিন। তাদেরও পাঠক হিসেবে আমরা তৈরি করিনি। সেদিক থেকে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র একুশে বইমেলা সামনে রেখে ঢাকা আন্তর্জাতিক বইমেলার বিকল্প কিছু ভাবতে পারে। প্রথমত, ব্যাপকভাবে পাঠক সৃষ্টি এবং পাঠকদের নিয়মিত পাঠে অভ্যস্ত করার জন্য জন-অংশগ্রহণমূলক বিভিন্ন ইভেন্টের আয়োজন করতে পারে। দেশব্যাপী প্রতিভাবান লেখকদের পাঠকদের কাছে পরিচিত করে তুলতে কর্মসূচি নিতে পারে, নতুন লেখক সৃষ্টিতে কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারে, প্রকাশনা শিল্পের উৎকর্ষ অর্জনে দক্ষ সম্পাদক, সম্পাদনা সহকারী, কম্পোজিটর ইত্যাদি সৃষ্টিতে প্রশিক্ষণ বা স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের আয়োজন করতে পারে। প্রকাশিত বই রিভিউ প্রোগ্রাম চালু করতে পারে। ফলে মানসম্মত বই প্রকাশে প্রকাশকরা উৎসাহিত হতে পারেন। শিশুসাহিত্য নিয়ে অনেক কাজ করার আছে বলে মনে হয়। শিশুদের জন্য যাঁরা লিখছেন, তাঁদের নিয়ে বিভিন্ন কর্মশালা করা যেতে পারে। কারণ অনেক বিখ্যাত লেখা পড়ে দেখা গেছে, শিশুদের নৈতিক শিক্ষায় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে; যদিও সেগুলো সাহিত্যের মানদণ্ডে বা সাহিত্যিকের নামের কারণে পাঠক এখনো গ্রহণ করছেন। এ ছাড়া শিশুদের মধ্যে শিশুসাহিত্যিক সৃষ্টিতে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র বিশেষ অবদান রাখতে পারে। ঢাকা আন্তর্জাতিক বইমেলাকে পরীক্ষামূলকভাবে 'জাতীয় শিশু বইমেলায়' রূপান্তর করে দেখা যেতে পারে। তবে মেলার সময় নিয়ে বিশেষভাবে ভাবতে হবে। এ আয়োজনে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর সহযোগিতা নিতে পারে।
ঢাকা আন্তর্জাতিক বইমেলা ২০১০ যে যে উদ্দেশ্য নির্ধারণ করে শুরু হয়েছে, সে উদ্দেশ্য অর্জনে আয়োজকরা সফল হলে খুশি হবেন সবাই। মেলা শেষে আয়োজকরা প্রকাশক ও পাঠকদের নিয়ে একটা রিভিউ সভা করলে কিছু মূল্যবান দিকনির্দেশনা পেতে পারেন।
যা-ই হোক, ঢাকা আন্তর্জাতিক বইমেলা ২০১০ শুরু হয়েছে ১ ডিসেম্বর। ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র এর আয়োজক। প্রতিদিন বেলা ২টা থেকে রাত ৯টা এবং ছুটির দিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে। এবারের মূল থিম 'রূপকল্প-২০২১ রূপায়ণে গ্রন্থ'। মেলা ব্যবস্থাপনায় আয়োজকরা অনেক অনেক বেশি দায়িত্বশীল হবেন_এটাই সবার আশা।
মোহম্মদ মারুফ খান
ঢাকা।

জীবনের অঙ্ক জনমাঙ্ক by অপূর্ব কুমার কুণ্ডু

বিশ্বায়নের ব্যাপ্তির কথা বলতে গিয়ে বলাটা সংকীর্ণ গণ্ডিতে হবে না কি উদার দৃষ্টিভঙ্গিতে হবে, সেটি একটি অমীমাংসিত প্রশ্ন। মীমাংসিত সমাধান একটিই আর তা হলো, আধার অনুপাতে ধারণক্ষমতা। জেমস ক্যামেরনের টাইটানিক চলচ্চিত্রে দেখতে পাই, ডুবন্ত জাহাজযাত্রীদের বাঁচানোর লাইফবোটে প্রথম জায়গা পায় শিশু।

তারপর নারী এবং অবশেষে অবশিষ্ট বোটে পুরুষ। পক্ষান্তরে পদাতিক নাট্য সংসদের সদ্য প্রযোজিত নাট্যকার নাসরীন মুস্তাফা রচিত, মীর মেহবুব আলম নাহিদ নির্দেশিত নাটক 'জনমাঙ্ক'তে দেখতে পাই, সমুদ্রতীরবর্তী মানুষের সমুদ্রের গ্রাসের হাত থেকে বাঁচতে, বাঁচার অবলম্বন সমুদ্রে নারীর বিসর্জন। পুরুষ নারীর ঊধর্ে্ব উঠে মানবের মধ্যে মনুষ্যত্বের জাগরণের নাটক জনমাঙ্ক মঞ্চস্থ হলো গত ৮ নভেম্বর শিল্পকলা একাডেমীর এঙ্পেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে।
নাটকের কাহিনীতে দেখা যায়, সমুদ্রবেষ্টিত এক জনপদের মানুষের জীবনযাত্রা। সমুদ্রের কড়াল গ্রাসের হাত থেকে বাঁচতে তাদের পরম নির্ভরতা সমুদ্রের দেবতায়। জনপদবাসীর কাছে বিপন্ন সময়ে নারীরা যে কত তুচ্ছাতিতুচ্ছ তা বোঝা যায় তখন, যখন সমুদ্রের গ্রাসের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া খণ্ডভূমিতে বাঁচতে মরিয়া পুরুষ-নারীর স্থানাভাবে ডুবিয়ে মারা হয় নারীদের। দুর্বল নারীদের ওপর আঘাত হেনে সবল পুরুষরা বেঁচে যায় নিজেদের মতো করে। পোয়াতি বউকে বাঁচানোর প্রশ্নে স্বামী করুণ মিনতি জানালে পোয়াতি বউকে ঠিকই বাঁচানো হয়। কিন্তু নৃশংস পুরুষ ডুবিয়ে মারে স্বামীটিকে। বিপন্ন সময় পার হলে জনপদবাসীর একমাত্র চাওয়া ভাবী সন্তান যেন কন্যা হয়। তবেই অস্তিত্বে বেঁচে রবে ভগি্ন, প্রিয়া, মায়ের ভাবী সম্ভাবনা। সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়, মা জানায় সন্তানটি তার পুত্র। শুধু পুরুষ নিয়ে কি জনপদ বাঁচে। লোকচক্ষুর আড়ালে মায়ের বুকে লালন-পালনে বেড়ে ওঠা সন্তানটি যে আসলে পুত্র না কন্যা, সেটি প্রকাশিত হয় ভূমিষ্ঠের ১২ বছর পর। পুরুষের লেলিহান লোলুপ দৃষ্টির হাত থেকে কন্যাকে বাঁচাতেই মায়ের এই মিথ্যা আশ্রয়। পুরুষ লোকের হাত থেকে নারীকে বাঁচাতে সক্ষম হলেও সমুদ্র পুরুষ দেবতার হাতে কন্যা হয় বলিদান। জনপদবাসীকে বাঁচাতেই পুরুষ সমুদ্রের দেবতার কাছে এই কন্যা বলিদান।
কন্যার বলির মধ্য দিয়ে জনপদবাসী যে শুধু সুরক্ষিত হয় তা নয়, বরং সমুদ্র দেবের আশীর্বাদে মাতৃজঠরে আসে নতুন ভ্রূণ। কিন্তু ঘুরে দাঁড়ায় জনপদবাসী। ভবিষ্যৎ সমুদ্র গ্রাসের মুখে সুনিশ্চিত মৃত্যুর সম্ভাবনা তৈরি হলেও কোনো নারীকেই যে জনপদবাসী আর সমুদ্রে বিসর্জন দেবে না, সেই দীপ্ত প্রত্যয় ঘোষণার মধ্য দিয়ে শেষ হয় নাট্যকার নাসরীন মুস্তাফা রচিত জীবনের অঙ্কের উত্তর মেলানোর নাটক 'জনমাঙ্ক'।
আলো জ্বাললেই যে আঁধার কেটে যায়, এই সহজ কথাটা জানা না থাকলে অনেক সময় ধরেই সম্ভব আঁধার দিয়ে আঁধার সরানো। নাট্যকার নাসরীন মুস্তাফা পুরো নাটকে পুরুষের নৃশংসতা আর নারীর লাঞ্ছনা-বঞ্চনা দেখাতে যত দৃশ্য, সংলাপ রচনা করলেন তাতে স্পষ্ট নাট্যকার আধুনিক সময়ে দাঁড়িয়েও মান্ধাতা আমলের বিশ্বাসে বিশ্বাসী। অন্য দেশ তো দূর অস্ত, এক বাংলাদেশের প্রশাসনে, অফিসে, ক্রীড়াঙ্গনে, ব্যবসায় এমনও বহু নারী আছেন, যাঁদের ব্যক্তিত্বের সামনে দাঁড়িয়ে কোনো পুরুষের পক্ষে বলা অসম্ভব, 'আমি নারী স্বাধীনতা চাই কি চাই না।' আমেরিকান পটভূমিতে নাট্যকার নাটক শিখলে সেখানে তিনি হয়তো দেখাতেন, ডেমোক্র্যাট থেকে হিলারি ক্লিনটন নির্বাচিত হলেন না। কারণ, তিনি নারী। কিন্তু মেজরিটি মানুষ বিশ্বাস করে, সক্ষমতার জোরেই, বর্ণ-গোত্রের ঊধর্ে্ব উঠে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। পুরুষ হওয়াটাই একমাত্র যোগ্যতা নয়।
বাংলার লোক আঙ্গিকে নাটকটি উপস্থাপনায় নির্দেশক মীর মেহবুব আলম নাহিদ যত্নবান, কল্পনাপ্রবণ, বহুমাত্রিক_কিন্তু সব মিলেমিশে গতানুগতিক। অভিনেতা-অভিনেত্রীদের গতিশীল করেছেন, দৃশ্যের ভাবের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ আলো-আঁধারির ব্যবহার এনেছেন, সরাসরি আবহ সংগীতে অবস্থাকে বিশ্বস্ত করেছেন। জনপদের নাম না বলে জনপদবাসীকে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের মানুষ বোঝাতে চেয়েছেন, পক্ষান্তরে ধুতি-শাড়ি পরিয়ে নির্দিষ্ট কমিউনিটির প্রতিনিধিত্বও করিয়েছেন। প্রপসের প্রয়োগ (মোরগ, শিয়াল...) যতটা প্রয়োজনীয়, সেটের প্রয়োগক্ষেত্র বিশেষ আরোপিত। জনমাঙ্ক নাটকটি দেখে একটাই অনুভূতি, পল্লবিত বৃক্ষকে দেখা যায়, কিন্তু মাটির তলে থাকা শিকড় দেখা যায় না। অথচ কে না জানে, শিকড়ই বৃক্ষের প্রাণভোমরা। নাট্য প্রযোজনা পল্লবিত বৃক্ষের মতো। প্রযোজনার প্রাণভোমরা নাটক তথা নাট্যকারের লেখা। সেই লেখাই কিভাবে শত-সহস্র মানুষকে শত-সহস্র অবস্থান থেকে এনে এক বিন্দুতে এক করে দিতে পারে, সেটাই হোক আপাত একমাত্র আত্মজিজ্ঞাসা।

নাট্যকার আতিকুল হক চৌধুরীর জন্য শুভাশীর্বাদ by খান সারওয়ার মুরশিদ

দেশের প্রখ্যাত নাট্যকার, সংস্কৃতিজগতে বিশেষ করে মিডিয়ার ক্ষেত্রে একটি উজ্জ্বল তারকা, আমার পরম স্নেহভাজন আতিকুল হক চৌধুরী ৮০ বছরে পদার্পণ করেছেন_এ কথা ভাবতে আমার বিশেষ আনন্দ হচ্ছে বৈকি। খুশি লাগছে ওর সঙ্গে ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক ধরে সেই পঞ্চাশের দশকে আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে শিক্ষকতার সেই সুন্দর দিনগুলোর দিকে আজ আবার নতুন করে তাকাতে পারছি বলে।
রমনার সবুজ ছড়িয়ে আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই পুরনো বিল্ডিংটা আর্টস বিল্ডিং মেডিক্যাল কলেজের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে। লম্বা লাইব্রেরি ঘর, করিডর, সিঁড়ি। সামনে মাঠ। আমগাছ। মধুর ক্যান্টিন।
বই হাতে কত ছাত্রছাত্রীর মধুর কলবর। টার্নার, মুনীর চৌধুরী, আবু রুশদ, মতিন উদ্দিন সেদিনের আরো কত শিক্ষক বন্ধুরা আমার! তখন আমরা এখনকার মতো এত জটিল ও বিষাক্ত পৃথিবীতে বোধ করি বসবাস করতাম না। এখন পৃথিবী কত বদলেছে। মানুষ বদলেছে। তবে এই কয়েক যুগে আকাশের রং বদলায়নি। পাতাবাহারের হলুদ কালো ছিটে রং বদলায়নি। কৃষ্ণচূড়ার লাল রং বদলায়নি। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই গেটের সামনের রাস্তায় বড় বড় সেই কৃষ্ণচূড়া গাছগুলো আর আগের মতো দাঁড়িয়ে নেই। সেদিনের অনেক কিছুই আজ আর নেই। কিন্তু স্মৃতিগুলো অমলিন। কী একটা অপার শান্তির সচ্ছলতার মাঝে আমরা বসবাস করতাম। চাহিদা ছিল কম। সুযোগ-সুবিধা আর প্রাপ্তির সুযোগও ছিল কম।
কিন্তু সম্ভাবনা ছিল। মেধা ও মনন বিকাশের সম্ভাবনা। এখনো যেন স্পষ্ট দেখতে পাই পুরনো আর্টস বিল্ডিংয়ে ইংরেজি সাবসিডিয়ারি ক্লাসে ডান দিকের বেঞ্চে একটি সুদর্শন ছেলে বসে আছে। কালো চশমা চোখে। আমি ইংরেজি কবিতা পড়াচ্ছি। কিটস্। বায়রন। শেলি। ওয়ার্ডসওয়ার্থ।
ছেলেটি ক্লাসের মধ্যে কোনো কথা বলছে না। কানে কানেও না। বড় বড় চোখ তুলে গভীর মনোযোগ দিয়ে ক্লাসে আমার কথা শুনছে। খাতায় হয়তো টুকটাক লিখছেও বা। ক্লাসের বাইরে এই ছেলেটির সঙ্গে আমার কথাবার্তা যে হতো না তা নয়। হতো। তবে কম। মনে আছে, আমাকে একদিন অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে ও জিজ্ঞেস করেছিল, 'স্যার ঙফব ঃড় রসসড়ৎধষরঃু-তে ডড়ৎফংড়িৎঃয যে ঈবষবংঃরধষ ষরমযঃ সবধহ করেছেন, আসলে এটা কী খরমযঃ?' আমি বোধ করি বলতে চেয়েছিলাম, 'এই আলো আসলে খরমযঃ ঙভ ঞযব ঝড়ঁষ. খরমযঃ ঋৎড়স ঐবধাবহ, যা এই ধূলিধূসরিত পৃথিবীতে বসবাস করতে করতে আস্তে আস্তে হারিয়ে যায় পবিত্র শিশুর মুখাবয়ব থেকে।'
কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, আমার স্নেহময়ী অপূর্ব সুন্দরী মায়ের মুখে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত যে আলো আমি দেখেছি, তা ছিল চিরন্তন মহিমায় অম্লান।
সেই জ্যোতির্ময় আলোর পথের দিকে তাকালে আজ মনে হয়, একটি আলোর রেখা যেন চলে গেছে কোথায় কত দূরে।
পঞ্চাশের দশকে আমার বেশ কয়েকজন ছাত্রের মতো সেদিনের আতিকের মধ্যেও কোথায় যেন একটা আলো দেখেছিলাম। সেই আলোই উজ্জ্বল হতে হতে ওর সামগ্রিক জীবনকে যে আলোকিত করতে সক্ষম হয়েছে, এটা একজন শিক্ষক হিসেবে অবশ্যই আজ আমার কাছে বড় প্রাপ্তি। পঞ্চাশের দশকের আমার ছাত্র আতিকুল হক চৌধুরী আজ দেশের এক বরেণ্য নাট্যকার ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব_এটা অবশ্যই আমার কাছে, আমাদের সবার কাছেই একটি সুসংবাদ।
আতিকুল হক চৌধুরীর নাট্যজীবন বোধ করি শুরু সেই ষাটের দশকে বেতারে। তারপর একটানা টেলিভিশনে, এখন পর্যন্ত। একদম নড়াচড়া নেই। আমার ছাত্রদের মধ্যে আতিকুল হক চৌধুরীই বোধ হয় এখনো গণমাধ্যমে একটানা চাকরিরত। চাকরি থেকে অবসর নেয়নি। নিজেকে গুটিয়ে রাখেনি কোনো কর্মকাণ্ড থেকে। আতিক সক্রিয়। ব্যাপকভাবে সক্রিয়। একেবারে যেন এঁটেসেঁটে বসে আছে তার নিজ স্থানে। নাট্যকার ও নাট্যশিক্ষক আতিকুল হক চৌধুরী, মিডিয়াব্যক্তিত্ব আতিকুল হক চৌধুরী একজন সজ্জন, নিরহংকার, সদা হাস্যময়, শিক্ষকের কাছে এখনো সদা অবনত আতিকুল হক চৌধুরী_কোনটা যে তার বড় পরিচয়, তা কখনো পরিমাপ করে দেখিনি।
ভাবতে অবাক লাগে, দীর্ঘ নাট্যজীবনে আতিক রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, তলস্তয়ের এত সব গল্প-উপন্যাসের নাট্যরূপ দিয়ে তার সফল প্রযোজনা করার দুঃসাহস অর্জন করল কোথা থেকে, কী করে? নিজেই বা এত কালজয়ী সাহসী নাটক লিখল কিভাবে? সব ধরনের সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা পরিহার করে যে মানুষটি নানা প্রতিকূল পরিবেশ ও পরিস্থিতির মধ্যে এখনো একজন আধুনিক মানুষ, একজন মুক্তচিন্তার মানুষ, প্রগতিশীল মানুষ; যে সুরুচি ও নান্দনিকতার সঙ্গে কোনো আপস করেনি সারা জীবনে, তার শুভ জন্মদিনে নাট্যপ্রাণ আতিকুল হক চৌধুরীর ৮০ বছরে পদার্পণে, তার শিক্ষক হিসেবে আমার সবটুকু আশীর্বাদ ও শুভেচ্ছা রইল ওর জন্য। ঊষার শুকতারা আজীবন ওকে সব আঁধারের মধ্যে সত্যের পথে ও কল্যাণের পথে পরিচালিত করুক_এই প্রার্থনা।

রাজশাহী ও রংপুরের ৭২ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ কাল

রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের তফসিলভুক্ত পৌরসভাগুলোতে গতকাল সোমবার থেকে টহল শুরু করেছে সেনা ও বিজিবি (সাবেক বিডিআর) সদস্যরা। এসব এলাকায় গতকাল সোমবার রাত ১২টার পর থেকে নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ হয়ে গেছে। ১২ জানুয়ারি বুধবার এ দুই বিভাগের ৭২ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

ওইদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা চলবে ভোটগ্রহণ। নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন জানিয়েছেন, তফসিলভুক্ত প্রত্যেক পৌরসভায় সেনা ও বিজিবি'র এক পস্নাটুন করে সদস্য নিয়োজিত থাকবে। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে তাদের টহল দেয়ার সময় নেতৃত্বে থাকবেন একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

ইসি সচিবালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ইত্তেফাককে জানান, রাজশাহী বিভাগের ৫ জেলার ১৪টি পৌরসভায় গতকাল সোমবার সকাল ৬টা থেকে নির্বাচনের পরদিন রাত ১২টা পর্যন্ত সেনা মোতায়েন থাকছে। এ সময় রাজশাহী, দিনাজপুর ও গাইবান্ধা জেলার ১১ পৌরসভায় বিজিবি সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করবেন। রংপুর বিভাগের কোন পৌরসভায় সেনা মোতায়েন না থাকলেও ১২ পৌরসভায় দায়িত্ব পালন করবে বিজিবি।

তিনি জানান, নির্বাচনের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর থেকে সংশিস্নষ্ট এলাকায় র্যাব, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন সদস্য ও ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যদের ভ্রাম্যমাণ দল দায়িত্ব পালন করছে। গুরুত্ব বিবেচনায় প্রতিটি পৌরসভার জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক র্যাব, আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যদেরও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে মোতায়েন করা হচ্ছে।

প্রচারণা শেষ : যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা

নিয়মানুযায়ী গতকাল সোমবার রাত ১২টায় শেষ হয়ে গেছে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের নির্ধারিত পৌরসভাগুলোতে নির্বাচনী প্রচারণা। এছাড়া সোমবার রাত ১২টা থেকে শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত সংশিস্নষ্ট এলাকায় মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ থাকবে। আজ মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে ভোটের দিন রাত ১২টা পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় ট্যাক্সিক্যাব, বেবি ট্যাক্সি/অটোরিকশা, মাইক্রোবাস, জিপ, কার, পিকআপ, বাস, টেম্পো, লঞ্চ, ইঞ্জিন বোট ও স্পিডবোট চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

নির্বাচন সামগ্রী পাঠানো সম্পন্ন

ইসি সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের নির্ধারিত পৌরসভাগুলোতে ভোট গ্রহণের লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই সব ধরনের সামগ্রী সংশিস্নষ্ট জেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। ভোটের আগের দিন সব কেন্দ্রে নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যদের প্রহরায় এসব সরঞ্জাম নিয়ে পেঁৗছবেন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা। আজ ১১ জানুয়ারি থেকে ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ভোট কেন্দ্রে পুলিশ, ব্যাটালিয়ন আনসার ও অঙ্গীভূত আনসার নিয়োগ করা হবে বলে জানান ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা।

ভোট কেন্দ্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী

ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পুলিশের একজন উপ-পরিদর্শক (এসআই)/ সার্জেন্ট/ এএসআই/ হাবিলদারের নেতৃত্বে প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে পুলিশ, আনসার ও ভিডিপি সদস্য মোতায়েন থাকবেন। সাধারণ ভোটকেন্দ্রে অস্ত্রধারী পাঁচজন পুলিশসহ ১৯ জন এবং গুরুত্বপূর্ণ ভোট কেন্দ্রে অস্ত্রধারী ছয়জন পুলিশসহ ২০ জন সদস্য নিয়োজিত থাকবেন।

রংপুর-রাজশাহীতে প্রার্থী ৪৭১১

আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের বিভিন্ন পৌরসভায় সবমিলিয়ে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে চার হাজার ৭১১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে রাজশাহী বিভাগের ৪৯টি পৌরসভায় তিন হাজার ১৫৮ জন এবং রংপুরের ২৩ পৌরসভায় এক হাজার ৫৫৩ জন।

সেনা ও বিজিবি থাকছে যে পৌরসভায়

রাজশাহী বিভাগের যেসব পৌরসভায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে সেগুলো হলো নাটোর জেলার সদর, নলডাঙ্গা, সিংড়া, গুরুদাসপুর ও গোপালপুর। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর ও শিবগঞ্জ। সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর ও শাহজাদপুর। বগুড়া জেলার সদর ও শেরপুর এবং পাবনা জেলার সদর, সুজানগর ও ঈশ্বরদী। রংপুর বিভাগের যেসব পৌরসভায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে সেগুলো হলো পঞ্চগড় জেলার সদর, লালমনিরহাটের সদর ও পাটগ্রাম, ঠাকুরগাঁওয়ের সদর, রাণীশংকৈল ও পীরগঞ্জ, নীলফামারীর সদর, জলঢাকা ও সৈয়দপুর, রংপুরের হারাগাছ, কুড়িগ্রামের সদর, গাইবান্ধার সদর ও গোবিন্দগঞ্জ, দিনাজপুরের হাকিমপুর, রাজশাহীর ভবানীগঞ্জ, তাহেরপুর, গোদাগাড়ী, কাঁকনহাট, তানোর, মুণ্ডুমালা, কেশরহাট ও চারঘাট এবং জয়পুরহাট সদর।

যুদ্ধাপরাধের বিচারে সহায়তা করবে যুক্তরাষ্ট্র: আইনমন্ত্রী

কাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ। মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক আম্বাসাডার-অ্যাট-লার্জ স্টিফেন জে র‌্যাপ-এর সঙ্গে বৈঠকের পর মন্ত্রী সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

তিনি বলেন, "মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করতে বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক আম্বাসাডার-অ্যাট-লার্জ স্টিফেন জে. র‌্যাপ।" যে আইনে বিচার হচ্ছে তা নিয়ে স্টিফেন র‌্যাপ কোনো প্রশ্ন তুলেছেন কি না জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, "আইন নিয়ে তারা কোনো প্রশ্ন তোলেননি। আইনটি ঠিকই আছে।

"তবে অভিযুক্তদের আইনজীবীদের পর্যাপ্ত সময় দিতে বলেছেন। ওই আইনের বিধিমালাকে আরো উপযোগী করা হলে ভালো হয় বলে তারা মনে করছেন।" বিধিমালা সংশোধন হবে কি না- প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, সেটা ট্রাইব্যুালের নিজস্ব বিষয়। আইনেই বলা আছে, প্রয়োজন হলে বিধিমালা সংশোধন করা যাবে।

আইনমন্ত্রী বলেন, "অভিযুক্তদের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে সব ধরনের সুযোগই ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনে রয়েছে। যেমন আইনজীবী নিয়োগ, ট্রাইব্যুালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল।" তবে তিনি আলাদা অপিল ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিষয়টি নাকচ করে দেন।

তিনি বলেন, "বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট। তার আপিল বিভাগেই ট্রাইব্যুলের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ রাখা হয়েছে।" আইনমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর স্টিফেন র‌্যাপ সাংবাদিকদের বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া যাতে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানের হয় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আইনমন্ত্রীও এ বিষয়ে নিশ্চয়তা দিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক আম্বাসাডার-অ্যাট-লার্জ আরো বলেন, "আমি এ বিষয়ে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা ও গণমাধ্যমের সঙ্গেও আলোচনা করবো।" এর আগে মঙ্গলবার সকালে তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পরির্দশন করেন। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান, সদস্য, নিবন্ধক এবং আইন কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি।

এছাড়া যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের আইনজীবীদের সঙ্গেও আলোচনা করেন র‌্যাপ। গত ১০ জানুয়ারি সরকারের আমন্ত্রণে তিনি বাংলাদেশ সফরে এসেছেন। সিয়েরা লিওনে গৃহযুদ্ধের সময় সংঘটিত অপরাধের বিচারে গঠিত বিশেষ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী ছিলেন তিনি।

আাগামী ১৩ জানুয়ারি তার ঢাকা ত্যাগ করার কথা রয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারে উদ্যোগ নেয়। গত বছরের ২৫ মার্চ গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, তদন্ত সংস্থা ও আইনজীবী প্যানেল। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ইতোমধ্যে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তারের পর তাদের বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

জেলা কমিটির সমর্থন ছাড়া মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ নয়: কামরুল

ইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন, যেসব মামলায় জেলা কমিটি সুপারিশ করেনি, রাজনৈতিক হয়রানিমূলক বিবেচনায় সেসব মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হবে না। আজ মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক বিবেচনায় প্রত্যাহারের সুপারিশের জন্য গঠিত কমিটির ২৫তম বৈঠক শেষে তিনি এ কথা বলেছেন।

আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন । জানা যায়, রাজনৈতিক হয়রানিমূলক বিবেচনায় প্রত্যাহারের জন্য বৈঠকে আজ এক হাজার ৪৮১টি মামলা উত্থাপন করা হয়। এর মধ্যে মাত্র ৫৬টি মামলা প্রত্যাহারের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। ৫৭৬টি মামলা ফেরত পাঠানো হয়েছে। ৮৪৯টি মামলা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়নি।
রাজনৈতিক হয়রানিমূলক বিবেচনায় এ পর্যন্ত ১০ হাজার ৪৮৯টি মামলা প্রত্যাহারের জন্য উপস্থাপন করা হয়। এর মধ্যে ছয় হাজার ৭৮৮টি মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, রাজনৈতিক হয়রানিমূলক বিবেচনায় প্রত্যাহারের সুপারিশের জন্য আজ বৈঠকে উত্থাপিত এক হাজার ৪৮১টি মামলার মধ্যে ৯০০ মামলায় জেলা কমিটির সুপারিশ নেই, আছে দলীয় নেতাদের সুপারিশ—এমন একটি সংবাদ দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়েছে।

মারফত ও হাশেমকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ

জেল হত্যা মামলায় হাইকোর্টের রায়ে অব্যাহতি পাওয়া দুই আসামি দফাদার মারফত আলী শাহ ও দফাদার মো. আবুল হাশেম মৃধাকে অবিলম্বে মেট্রোপলিটন সেশন জজ আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল শুনানির জন্য মঞ্জুর করে প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে এ আদেশ দেন।

একই সঙ্গে আপিল শুনানির জন্য সারসংক্ষেপ ৩০ দিনের মধ্যে জমা দিতে বলা হয়েছে। এর আগে বিচারিক আদালতের রায়ে এ দুজনের মৃত্যুদণ্ড হয়। লিভ টু আপিলের ওপর আজ সকালে সংক্ষিপ্ত শুনানি শেষে একই বেঞ্চ আদেশের এ ক্ষণ ধার্য করেছিলেন।
আদেশের পর রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি আনিসুল হক প্রথম আলোকে বলেন, লিভ মঞ্জুর করেছেন আদালত। দুই আসামিকে মেট্রোপলিটন সেশন জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সারসংক্ষেপ দাখিল করা প্রশ্নে তিনি বলেন, ১৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই এটি জমা দেওয়া হবে।
৯ জানুয়ারি আপিল বিভাগ আদেশ দেওয়ার জন্য আজ দিন ধার্য করেছিলেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর রাতে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতা—সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে। পরদিন তত্কালীন উপকারা মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) কাজী আবদুল আউয়াল লালবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এরপর ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত রায় ঘোষণা করেন। ওই রায়ে পলাতক আসামি রিসালদার (ক্যাপ্টেন) মোসলেম উদ্দিন, দফাদার মারফত আলী শাহ ও দফাদার মো. আবুল হাশেম মৃধাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এরপর ২০০৮ সালের ২৮ আগস্ট হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মারফত আলী শাহ ও আবুল হাশেম মৃধাকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয় রিসালদার মোসলেহ উদ্দিনের। এ ছাড়া চারজন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড থেকে অব্যাহতি পান। অপর আট আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল থাকে।
এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। পৃথক পাঁচটি লিভ টু আপিল করা হয়। গত বছরের ৪ নভেম্বর আপিল বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন শুনানির দিন নির্ধারণের জন্য আরজি জানায়।
জেল হত্যা মামলায় হাইকোর্টে অব্যাহতি পাওয়া চারজন—সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদের ইতিমধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।

আরজ আলী মাতুব্বর : সীমানা ছাড়িয়ে যাওয়া একজন

বীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন শতবর্ষ পরের কথা, প্রকৃতিও বোধ করি সে হিসাব মিলিয়েছে। বিদ্যাসাগর যখন ল্যাম্পপোস্টের নিচে বসে বই পড়তেন, তার প্রায় শতবর্ষ পরে আরো একজন ফসলের মাঠে দাঁড়িয়ে কিংবা জমির সীমানা মাপতে মাপতে প্রশ্ন করেছেন স্রষ্টা ও তাঁর সৃষ্টি নিয়ে।

জানতে চেয়েছেন জীবনের গূঢ়তম রহস্যের কথা। বরিশালের ছোট্ট একটি চর লামচরে তাঁর জন্ম হলেও জ্ঞানসাধনা ছাড়িয়ে গেছে ৫৬ হাজার বর্গমাইল। তথাকথিত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত না হয়েও আরজ আলী মাতুব্বরই অতিথি শিক্ষক হিসেবে ক্লাস নিয়েছেন ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। অনেক জ্ঞানী আর গুণীজনের চেয়ে তিনি আলাদা। সবচেয়ে যে বিষয়টি তাঁকে মানুষের কাছে এনেছে, তা হলো গভীর ভাবনার সহজ প্রকাশ। যেকোনো বিষয়কে চিরায়ত নিয়মে না মেনে যুক্তি দিয়ে দেখা আর অন্তর্ভেদী ব্যাখ্যাদানই ছিল তাঁর প্রধান বৈশিষ্ট্য। তিনি সহজকে তো বটেই; কঠিনকেও ব্যাখ্যা করেছেন অত্যন্ত সাবলীলভাবে। আরো একটি বিষয় হলো পরিমিতি বোধ, যার অভাব এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে বড় বেশি। তাঁকে যাঁরা দেখেছেন তাঁরাও বর্ণনা করেছেন এই পরিমিতি শুধু তাঁর ভাবনার প্রকাশে নয়, তাঁর শারীরিক অবয়ব, এমনকি আচরণেও প্রকট। যেন পরিমিতি বোধের এক সমন্বয় হলো আরজ আলী মাতুব্বর নামে স্বশিক্ষিত প্রকৃতির সন্তানের মধ্যে। তিনি প্রকৃতিরই বটে, তা না হলে লামচরের মতো প্রত্যন্ত জনপদে প্রতি মুহূর্তে দরিদ্রতাকে একচোট দেখে নেওয়া, নদীর ভাঙনকবলিত আর দুমুঠো খাবার জোগাড়ের জন্য খেটে মরা এক হতদরিদ্র্র কৃষক কি প্রশ্ন করতে পারেন ঈশ্বর কোথায়? স্বরূপ কী? যে সময়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তার দামও দিয়েছেন হাজতবাসের মাধ্যমে। সারা জীবনের উপার্জন দিয়ে জমি না কিনে তৈরি করেছিলেন গ্রামের মানুষের জন্য পাঠাগার। নদীভাঙনে জমি হারিয়ে কাঁদেননি; কিন্তু সংগ্রহ করা বই নদীতে ভেসে যাওয়ায়, ছেলে হারানোর শোকে শোকার্ত হয়েছেন এ চাষি। সন্মাননাও পেয়েছেন বেশ কিছু, তবে মেডেলের চেয়ে তাঁর বড় প্রাপ্তি মানুষের সম্মান। তবে যত সহজেই তিনি কঠিন কথার ব্যাখ্যা দিয়েছেন ততটা সহজ ছিল না তাঁর দর্শন-ধর্ম- আত্মউপলব্ধির ভাবনা। শুরুটা ছিল একটি ব্যক্তিগত ঘটনা থেকে। ছবি তোলার অভিযোগে আরজ আলী মাতুব্বরের মৃত মায়ের দাফন করতে রাজি হয়নি গ্রামের মানুষ। প্রায় একঘরে হয়েছিলেন মাতুব্বর আর সেই আঘাত থেকে শুরু হয় কুসংস্কারের স্বরূপ উন্মোচনের চেষ্টা। তবে তিনি শোধ নিয়েছিলেন নিজের জীবনেই। যে গ্রামে তাঁর মায়ের কবর দেওয়ার জন্য মানুষ পাওয়া যায়নি, সেই ক্ষুদ্র লামচরের এক অশিক্ষিত কৃষক আরজ আলী মাতুব্বরকে ১৯৮৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ঢল নেমেছিল মানুষের। সেদিনই প্রমাণ হয়ে গেছে, আরজ আলী মাতুব্বর বড় হতে ছাড়িয়ে গেছেন ৫৬ হাজার বর্গমাইলের সীমানা। গভীর শ্রদ্ধায় তাঁকে স্মরণ করি।

চলতি বছরে এক লাখ মেট্রিক টন চিনি আমদানির সিদ্ধান্ত

রকার চলতি বছর স্টেট টু স্টেট চুক্তির মাধ্যমে এক লাখ মেট্রিক টন চিনি আমদানি করবে। গতকাল সোমবার শিল্প মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে মন্ত্রণালয়ের বাজেট ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠক শেষে শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া এ কথা বলেন।
দিলীপ বড়ুয়া বলেন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) মাধ্যমে এ চিনি আমদানি করা হবে।

আগামী রমজানকে সামনে রেখে চিনি আমদানির এ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
সভায় জানানো হয়, চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে চাষিদের মধ্যে সুষ্ঠুভাবে সার সরবরাহের জন্য সরকারের কাছে পর্যাপ্ত ইউরিয়া সার মজুদ রয়েছে। ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত বিসিআইসির কাছে নয় লাখ ৪৮ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার মজুদ রয়েছে, যা গত বছরের একই দিনের তুলনায় দুই লাখ ৩৪ হাজার মেট্রিক টন বেশি। চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এক লাখ মেট্রিক টন বেশি আখ মাড়াই করে গত বছরের প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছি চিনি উত্পাদন সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।
সভায় শিল্পমন্ত্রী বলেন, অচিরেই শিল্প মন্ত্রণালয়কে তথ্যপ্রযুক্তিসমৃদ্ধ মন্ত্রণালয় হিসেবে গড়ে তোলা হবে। মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সব সংস্থা ও রাষ্ট্রায়ত্ত কল-কারখানাগুলোর নেটওয়ার্কিং স্থাপনের লক্ষ্যে প্রকল্প প্রণয়নের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।
শিল্পসচিব কে এইচ মাসুদ সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে সভায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সব দপ্তর, অধিদপ্তর ও করপোরেশনের প্রধান এবং মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বাসস।

তাসিরের হত্যাকাণ্ডের সমর্থকরাই প্রকৃত ধর্ম অবমাননাকারী

পাকিস্তানের অন্যতম শীর্ষ রাজনীতিক সালমান তাসিরের হত্যাকাণ্ডে যারা আনন্দ করছে, উৎসব করছে তাদেরকেই আসল ধর্ম অবমাননাকারী আখ্যা দিলেন বিলওয়াল ভুট্টো জারদারি। সেই সঙ্গে পাকিস্তানের ইসলাম ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর কবল থেকে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের রক্ষার কথাও বলেন তিনি।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির ছেলে বিলওয়াল ভুট্টো ক্ষমতাসীন পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান। ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে বেনজির নিহত হওয়ার পর বিলওয়ালকে পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান নির্বাচন করা হয়।

পিপিপির শীর্ষস্থানীয় নেতা পাঞ্জাবের গভর্নর নিহত সালমান তাসিরের স্মরণে লন্ডনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিলওয়াল বলেন, "পাকিস্তানের খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উদ্দেশে বলছি, আমারা আপনাদের নিরাপত্তা দেব।" ইসলামের নামে আত্মঘাতী হামলা এবং হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিলওয়াল আরো বলেন, "এসব অপরাধকে যারা উৎসাহিত করে, বৈধতা দেয়, আমি বলতে চাই, তোমরা যারা শহীদ সালমান তাসিরের হত্যাকারীর পক্ষ নিয়েছ তারাই প্রকৃত ধর্ম অবমাননাকারী।"

লন্ডনে শিক্ষা গ্রহণরত বিলওয়াল আরো জানান, তিনি তার মা ও নানার আদর্শকে সমুন্নত রাখবেন। তিনি বলেন, "ভয়-ভীতি আমার মুখ বন্ধ করতে পারবে না।" তিনি আরো বলেন, "সালমান তাসিরের হত্যাকাণ্ড শুধু উদারপন্থার সঙ্গে রক্ষণশীলদের, সহিষ্ণুতার সঙ্গে উগ্রপন্থার বিষয়মাত্র নয়। এটি ন্যায় ও অন্যায়ের বিষয়।"

বিলওয়ালের নানা জুলফিকার আলি ভুট্টো পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এবং দেশটির প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৭৯ সালে জুলফিকার আলি ভুট্টোকে ফাঁসি দেয় সামরিক সরকার। এর আগে গত রোববার ধর্ম অবমাননা (ব্লাসফেমি ল) আইনে কোনো ধরনের পরিবর্তনের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের করাচিতে মিছিল করেছে ইসলাম ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের অর্ধলক্ষাধিক নেতা-কর্মী-সমর্থক।

বিক্ষোভে পাকিস্তানের কট্টরপন্থী ধর্মীয় দলগুলোর নেতারা দেশটির প্রচলতি ধর্ম অবমাননা আইনে যে কোনো ধরনের পরিবর্তনের বিপক্ষে বক্তৃতা দেন। এসময় তারা পাকিস্তানের বৃহত্তম প্রদেশ পাঞ্জাবের গভর্নর সালমান তাসিরের হত্যাকারী মুমতাজ কাদরিকে সমর্থন জানান।

গত মঙ্গলবার তাসির ইসলামাবাদে দেহরক্ষী মালিক মুমতাজ হুসেইন কাদরির গুলিতে নিহত হন। জামায়াত-ই-ইসলামির প্রধান সৈয়দ মুনাওয়ার হাসান বলেন, তাসিরের মৃত্যুতে শোক করার কোনো দরকার নেই। নিহত গভর্নর সালমান তাসির ধর্ম অবমাননা আইনে পরিবর্তন চেয়েছিলেন।

গত বছর ধর্ম অবমাননা আইনে আয়েশা বিবি নামে এক খ্রিস্টান মহিলাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলে আইনটি আলোচিত হয়ে ওঠে। আয়েশা বিবির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে সালমান তাসির মিথ্যা বলে অভিহিত করেছিলেন।

বায়ান্নতেই আইখম্যানের হদিস জানত জার্মানি

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী অ্যাডলফ আইখম্যানের আর্জেন্টিনায় লুকিয়ে থাকার খবর জানত পশ্চিম জার্মানি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নাৎসি বাহিনীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ কর্নেল দক্ষিণ আমেরিকার দেশটিতে আত্মগোপন করেন। জার্মান গোয়েন্দা সংস্থার অবমুক্ত নথিপত্রের বরাত দিয়ে এ কথা জানিয়েছে দেশটির বিল্ত পত্রিকা।
গত শনিবার পত্রিকাটির খবরে বলা হয়, ১৯৬০ সালে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের হাতে ধরা পড়ার আগে প্রায় এক দশক আর্জেন্টিনায় 'রিকার্ডো ক্লেমেন্ট' ছদ্মনামে আত্মগোপন করে ছিলেন আইখম্যান। তাঁর এ গোপনবাসের কথা পশ্চিম জার্মানি ১৯৫২ সালের গোড়ার দিক থেকেই অবগত ছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় (১৯৩৯-১৯৪৫ সাল) জার্মান অধিকৃত পোল্যান্ডের বিভিন্ন নির্যাতন শিবিরে লাখ লাখ ইহুদিকে হত্যা করে জার্মানির নাৎসি বাহিনী। নিরস্ত্র ইহুদিদের ট্রেনে করে নির্যাতন শিবিরগুলোতে নিয়ে যাওয়া হতো। নাৎসিদের কুখ্যাত এসএস বাহিনীর প্রধান হাইনরিশ হিলমারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন আইখম্যান। যুদ্ধের পর তাঁকে আটক করা হলেও তিনি হাজতখানা থেকে পালিয়ে আর্জেন্টিনায় পাড়ি জমান। সেখান থেকে মোসাদের সদস্যরা তাঁকে অপহরণ করে নিয়ে আসেন। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ দায়ে আইখম্যানকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। ১৯৬২ সালে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
বিল্ত তাদের প্রতিবেদনে জানায়, আইখম্যান-সংক্রান্ত দলিল-দস্তাবেজ পুরোপুরি উন্মুক্ত করতে অনিচ্ছুক ছিল জার্মান গোয়েন্দারা। কারণ, জার্মানি ও ভ্যাটিকান কর্তৃপক্ষ গোপন আঁতাতের মাধ্যমে আইখম্যানকে বিচারের মুখোমুখি না করে আর্জেন্টিনায় পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছিল_এ বিষয়টি প্রকাশিত হয়ে যাবে। তবে জার্মান গোয়েন্দা বিভাগ ১৯৫৮ সালে ওয়াশিংটনকে আইখম্যানের অবস্থান সম্পর্কে জানিয়েছিল বলে বিল্ত জানায়। সূত্র : দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট।

চীনের সঙ্গে দৃঢ় সামরিক মৈত্রীর অঙ্গীকার

চীনের সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক দৃঢ় করার অঙ্গীকার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রবার্ট গেটস। চীনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রী লিয়াং গুয়াংলিও একই মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। গতকাল সোমবার বেইজিংয়ে আলোচনা শেষে তাঁরা এ অঙ্গীকার করেন।

প্রতিরক্ষা বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার জন্য গত রবিবার চার দিনের সফরে বেইজিং পেঁৗছান গেটস। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনার জন্য আগামী ১৯ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন চীনা প্রেসিডেন্ট হু চিনথাও। সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগ হিসেবে তাই এক সপ্তাহ আগে গেটসের এই বেইজিং সফর। ক্রমবর্ধমান সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তির মাধ্যমে চীন হুমকি সৃষ্টি করতে পারে_যুক্তরাষ্ট্রের এমন আশঙ্কাও গেটসের এ সফরের মাধ্যমে কমবে বলে আশা করছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। লিয়াংয়ের সঙ্গে দুই ঘণ্টার বৈঠক শেষে গেটস সাংবাদিকদের বলেন, বারাক ওবামা ও চিনথাওয়ের কাছে দ্বিপক্ষীয় সামরিক সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। লিয়াং বলেন, চীন কারো জন্যই হুমকি হবে না। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি অর্জনের পথে অন্য অনেক দেশের চেয়ে চীন কয়েক দশক পিছিয়ে আছে।
তাইওয়ানের কাছে সাড়ে ৬০০ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রির প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গত বছর সামরিক সম্পর্ক স্থগিত করে চীন। গেটস ও লিয়াং জানান, দুই দেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা আবার শুরু করা হবে এবং রাজনীতির কারণে তা প্রভাবিত হবে না। তবে চীন এখনো তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রির বিরোধিতা করে বলেও জানান লিয়াং। তিনি বলেন, 'অস্ত্র বিক্রির বিষয়টি চীনের স্বার্থ গভীরভাবে ক্ষুন্ন করে। আর কখনো এ রকম ঘটনা দেখতে চাই না আমরা।'
প্রতিরক্ষা খাতে যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করে থাকে। বছরে এ খাতে তারা প্রায় ৭০ হাজার কোটি ডলার ব্যয় করে। যুক্তরাষ্ট্রের পরই চীন এই খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়। এ বছরেও তাদের প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়ানো হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চীনের সামরিক উন্নয়নের বিষয়টি একেবারেই যথাযথ বলেও জানান লিয়াং। চীন সফর শেষে গেটস জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া যাবেন।
সূত্র : এএফপি, বিবিসি।

২১ বছর পর পার্লামেন্ট বসছে মিয়ানমারে

মিয়ানমারে দীর্ঘ ২১ বছর পর পার্লামেন্ট অধিবেশন বসতে যাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম গতকাল সোমবার জানায়, জান্তা প্রধান আগামী ৩১ জানুয়ারি নতুন পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন আহ্বান করেছেন। বিতর্কিত নির্বাচনের দুই মাস পর এ অধিবেশন ডাকা হলো। দেশটিতে ১৯৯০ সালের পর গত ৭ নভেম্বর প্রথম পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জান্তা প্রধান জেনারেল থান শ'য়ের এক আদেশ উদ্ধৃত করে জানায়, আগামী ৩১ জানুয়ারি রাজধানী নেইপিদোতে পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের অধিবেশন বসবে। আঞ্চলিক আইনসভাগুলোর অধিবেশনও একই সময়ে বসবে।
জান্তা সমর্থিত 'ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট পার্টি' দাবি করেছে, নির্বাচনে তারা ৮০ শতাংশ আসন পেয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা করা হয়নি।
জান্তা সরকার বিতর্কিত নির্বাচনী আইনের মাধ্যমে গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী সু চিকে নির্বাচনের বাইরে রাখায় তাঁর দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) ওই নির্বাচন বর্জন করে। ১৯৯০ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া সত্ত্বেও সামরিক জান্তা এনএলডির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি। সূত্র : এএফপি।

মঙ্গলে জৈব পদার্থের প্রমাণ মিলেছিল ৩৪ বছর আগেই

ঙ্গল গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব নিয়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। সম্প্রতি এ গ্রহে প্রাণের অস্তিত্বের স্বপক্ষে কিছু আলামত মিললেও এ কথা আরো ৩৪ বছর আগেই মানুষের কাছে পৌঁছুতে পারত। ১৯৭৬ সালের ২০ জুলাই নাসার মঙ্গলযান 'ভাইকিং-১ ল্যান্ডার' প্রথম মঙ্গলের মাটি স্পর্শ করে।

তারপর ভাইকিং-১ মঙ্গলের পশ্চিমাঞ্চলের কিছু মাটির নমুনা নিয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসার পর গবেষণায় এতে জৈব পদার্থের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায়। মঙ্গলেও জৈব পদার্থ থাকতে পারে_এমন দাবি সে সময় গবেষকরা নস্যাৎ করে দেন। কেননা, তাঁদের মনে হয়েছিল এ লালগ্রহ থেকে নিয়ে আসা মাটির নমুনার সঙ্গে পৃথিবীর পদার্থের হয়তো কোনো ভেজাল ঘটেছে। ফলে গবেষণাগারে পাওয়া জৈব পদার্থ আসলে এ পৃথিবীরই।
এবার নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০৮ সালের আগস্টে নাসার একটি মঙ্গল অভিযানে 'ফিনিঙ্' নভোযান গ্রহটির আরেকটি স্থানে 'পারক্লোরেটস' নামে লবণ জাতীয় রাসায়নিক আবিষ্কার করে।
এই একই 'পারক্লোরেটস' (যা হাইড্রোজেন, অঙ্েিজন ও ক্লোরিনের সমন্বয়ে তৈরি) লবণ পৃথিবীর চিলির আটাকামা মরুভূমিতেও পাওয়া যায়। এটি পৃথিবীর অন্যতম শুষ্ক একটি অঞ্চল_যা পৃথিবীর ভূমিতেই মঙ্গলের কিছু এলাকার সবচেয়ে কাছাকাছি রূপ।
এর পরই সেই একই 'পারক্লোরেটস' রাসায়নিক পদার্থকে শনাক্ত করা হয়, যা ভাইকিংয়ের বিজ্ঞানীরা 'পৃথিবী থেকে ভেজাল ঢুকেছে' বলে মঙ্গলের সেই পদার্থকে বাতিল করে দেন। এ পরীক্ষায় সামান্য পরিমাণ পুষ্টি মেশানো পানি মঙ্গলের মাটির নমুনার ভেতরে ঢেলে দেওয়া হয়। এরপর এর মাটির উপরিস্থিত বায়ুকে নিবিড় পরীক্ষায় দেখা যায় যে, পানির ভেতরে বিদ্যমান পুষ্টি বিপাকীয় ক্রিয়ায় বায়ুতে ছড়িয়ে পড়েছে। এ বিপাক একমাত্র জৈব পদার্থের উপস্থিতিতেই সম্ভব। তবে এ গবেষণা এখনো নিশ্চিতভাবে প্রামাণিক নয়। সূত্র : দ্য মেইল

কালের কণ্ঠের প্রথম বর্ষপূর্তিঃ জীবনে কিছুই পাইনি আজ পেলাম...

‘জীবনে কিছুই পাইনি, আজ পেলাম। আপনারা আমাকে যে সম্মান দিলেন...।’ আর কিছু বলতে পারলেন না আয়েশা বেগম। রুদ্ধশ্বাসে ফুঁপিয়ে উঠলেন। তারপর আকুল কান্নায় ভেঙে পড়লেন ৭০ বছার বয়সী এই মুক্তিযোদ্ধা। হলভর্তি মানুষ স্তব্ধ। পিনপতন নীরবতা। সবার চোখে অশ্রু। মন্ত্রীরাও চোখ মুছলেন। কান্না থামানোর চেষ্টা অতিথিদের। আয়েশা বেগম যেন হাজারো মুক্তিযোদ্ধার হৃদয়ের সমস্ত দুঃখ-কষ্ট-বেদনা ঢেলে দিয়েছেন এখানে।
এখানে বসেছিল নারী মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান। কালের কণ্ঠের প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ছিল গতকাল ১০ জানুয়ারি, সোমবার। এ উপলক্ষে কালের কণ্ঠ আয়োজন করেছিল ‘একাত্তরের বিজয়িনী বিশেষ সম্মাননা’ অনুষ্ঠান। এবারের বিজয়ের মাস ডিসেম্বরজুড়ে ‘একাত্তরের বিজয়িনী’ শিরোনামে যে ৩০ জন নারী মুক্তিযোদ্ধার কাহিনী ছাপা হয় কালের কণ্ঠে, তাঁদের মধ্য থেকে তৃণমূলের ১২ জনকে দেওয়া হয় এই সম্মাননা।
এই হƒদয়গ্রাহী সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের পাশাপাশি গতকাল দিনভর ঢাকার পান্থপথে বসুন্ধরা সিটিতে কালের কণ্ঠের কার্যালয় ছিল আনন্দ-উৎসবে সরগরম। দেশের পত্রিকাজগতের ইতিহাসে নজিরবিহীন সাফল্য দেখিয়ে একটি বছর পার করে কালের কণ্ঠ যে মাইলফলক রচনা করেছে, একে অভিনন্দিত করতে এসেছিলেন সব ক্ষেত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তি থেকে শুরু করে মুগ্ধ পাঠকরা। তাঁদের পদচারণ আর কলকাকলিতে যেন একটি ধ্বনিই প্রতিধ্বনিত হয়েছে বারবারÑ‘কালের কণ্ঠ এগিয়ে চলো।’
একাত্তরের বিজয়িনীদের সম্মাননা : যে আয়েশা বেগম সম্মাননা গ্রহণ করতে এসে কাঁদিয়েছেন সবাইকে, একাত্তরে তিনি যুদ্ধ করেছেন বাগেরহাটের শরণখোলা এলাকায়। পাকিস্তানি হানাদার আর রাজাকারদের হাতে স্বামী ও মেয়েকে হারিয়ে মাত্র ছয় মাসের ছেলেটিকে ঘরে রেখে তিনি যুদ্ধে যান প্রতিশোধ নিতে। অস্ত্রহাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন শত্র“সেনার ওপর। একদিন খবর আসে, তাঁর শিশুপুত্রটিও মারা গেছে; কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্র থেকে তিনি আসতে পারেন না। তিনি বাড়ি ফেরেন বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে; কিন্তু সব হারিয়ে।
১২ জন নারী মুক্তিযোদ্ধার সবারই এ ধরনের মর্মস্পর্শী কাহিনী সংক্ষেপে তুলে ধরা হয় সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানে আগত ব্যক্তিরা রুদ্ধশ্বাসে শোনেন যুদ্ধদিনের সেই সব গল্প। এরই মধ্যে একে একে ১২ জন মুক্তিযোদ্ধার প্রত্যেকের হাতে তুলে দেওয়া হয় সম্মাননার ক্রেস্ট, সনদ আর এক লাখ টাকার চেক। তাঁদের গায়ে জড়িয়ে দেওয়া হয় উত্তরীয়।
সম্মাননা পাওয়া নারী মুক্তিযোদ্ধারা হলেন কুড়িগ্রামের তারামন বিবি বীরপ্রতীক, সুনামগঞ্জের কাকন বিবি, কিশোরগঞ্জের মনোয়ারা বেগম, সিলেটের ছায়ারুন, গোপালগঞ্জের মোমেলা খাতুন ও নাজমা বেগম, বাগেরহাটের আয়েশা খানম, যশোরের ফাতেমা খাতুন, দিনাজপুরের মমতাজ বেগম বেলী, টাঙ্গাইলের জয়নাব বেগম, সিরাজগঞ্জের আমিনা বেগম মিনা এবং চট্টগ্রামের মধুমিতা বৈদ্য। তাঁদের পাশাপাশি বিকেলে বিশেষভাবে সম্মাননা প্রদান করা হয় বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীকে। একই সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হয় তাঁর হাতে।
সম্মাননার জবাবে নারী মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে তারামন বিবি বীরপ্রতীক বলেন, ‘কালের কণ্ঠ আমাদের লড়াই করার সাহস দিয়েছে। সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এ সম্মান শুধু আমাদের একার নয়, দেশের সব নারী মুক্তিযোদ্ধার।’
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘বাধ্য হয়ে কিংবা ঘটনাক্রমে আমরা মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিইনি। বঙ্গবন্ধুর দীক্ষায় দীক্ষিত হয়ে তাঁরই নির্দেশনায় আমরা মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বলতেনÑযে জাতি রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করতে পারে, তাদের কেউ দাবাতে পারবে না। বহু মানুষের রক্তের বিনিময়ে শেখ হাসিনা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছেন। এখন কেউ আমাদের দাবিয়ে রাখতে পারবে না, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। কৃষি ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সূচকেও বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।’
সাফল্যের বিস্ময় উৎসবে প্রকাশ : ২০১০ সালের ১০ জানুয়ারি অনেকটা অনাড়ম্বরেই আÍপ্রকাশ করেছিল কালের কণ্ঠ। প্রকাশনার মাত্র তিন মাসের ব্যবধানেই পত্রিকাটির প্রচারসংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়ে যায়।
এ অনন্য সাফল্যকে অভিনন্দন জানাতে গতকাল সরকারি দল ও বিরোধী দলের রাজনীতিক, লেখক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, মুক্তিযোদ্ধা, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, অভিনেতা-অভিনেত্রী-শিল্পী, সরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের মিলনমেলা বসেছিল কালের কণ্ঠ কার্যালয়ে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আসতে থাকে ফুলেল শুভেচ্ছা। কালের কণ্ঠের কাছে তাঁদের প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন সবাই।
রঙিন সাজে সজ্জিত করা হয় পুরো কার্যালয়। সকাল সাড়ে ১১টায় কয়েক গুচ্ছ বেলুন উড়িয়ে কালের কণ্ঠের সম্পাদক আবেদ খান প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উৎসব শুরু করেন। দুপুর ১২টায় ছিল কেক কাটার পর্ব। শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, কালের কণ্ঠের সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি ও প্রকাশক মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন, সম্পাদক আবেদ খানসহ একাত্তরের বিজয়িনীরা অংশ নেন কেক কাটায়। বিশাল কেকের এক টুকরো আবেদ খানের মুখে তুলে দেন তথ্যমন্ত্রী। এরপর মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো কার্যালয়।
শুরু হয় একাত্তরের বিজয়িনীদের সম্মাননা প্রদান। তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ও ড. মশিউর রহমান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) তাজুল ইসলাম নারী মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন। পুরো অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন কালের কণ্ঠের যুগ্ম সম্পাদক কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন।
কালের কণ্ঠের কাছে প্রত্যাশা অনেক : প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন অনুষ্ঠানের বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ বলেন, কালের কণ্ঠ যেমন বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে, বর্তমান সরকারও তেমনটিই চায়। সরকারও সঠিক সংবাদ পরিবেশনা ও অবাধ তথ্যপ্রবাহে বিশ্বাসী।
শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ‘সংবাদপত্র এখন স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করছে। মানুষের সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসছে। আমার চাওয়া, এখনো যেসব অসভ্যতা ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী জঞ্জাল রয়ে গেছে, সেগুলোকে মুক্ত করতে কালের কণ্ঠ এগিয়ে যাবে।’
নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, একটি ঐতিহাসিক দিনে কালের কণ্ঠের জন্ম। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু বাংলার মাটিতে পা রেখেছিলেন। কালের কণ্ঠ সেই দিনে জন্ম নিয়ে এর তাৎপর্য রেখেছে।
এইচ টি ইমাম বলেন, ‘বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে অনেক নাম না-জানা মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। তাঁদের অনেককেই আমরা এখনো মূল্যায়ন করতে পারিনি। তবে আজকের এ অনুষ্ঠানে এসে নিজেকে গর্বিত মনে করছি। কালের কণ্ঠ যেভাবে বিজয়িনী মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে এগিয়ে এসেছে, সেভাবে ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নেও এগিয়ে আসবে বলে আশা করি।’
ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রনীতি ও আদর্শ বাস্তবায়নের সময় এসেছে। এখন কালের কণ্ঠ সেই আদর্শ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবেÑএমনটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) তাজুল ইসলাম বলেন, কালের কণ্ঠের মতো আরো যদি অনেকে এভাবে এগিয়ে আসে, তাহলে অনেক মুক্তিযোদ্ধা কিছুটা হলেও তাঁদের কর্মের স্বীকৃতি পাবেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার বলেন, ‘কালের কণ্ঠ শুরু থেকেই নিরপেক্ষতা বজায় রেখে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করে আসছে। এই ধারা অব্যাহত রাখবে, এমনটাই আশা করি।’
ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকা বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিত করছে কালের কণ্ঠ। এটা দেখে ভালো লেগেছে।’
সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, ‘দেশে আইনশৃঙ্খলার এখন এমন অবনতি হয়েছে যে সরকারদলীয় সংসদ সদস্যের বাসায়ও ডাকাতি হচ্ছে। অথচ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো। দেশের এমন অবস্থায় কালের কণ্ঠ নিরপেক্ষভাবে এগিয়ে যাবে-এমনটাই প্রত্যাশা।’
কালের কণ্ঠের সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের দিকনির্দেশনায় ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্র“পের পক্ষ থেকে কালের কণ্ঠসহ যেসব মিডিয়া হাউস গড়ে উঠেছে, এর মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন, গণতন্ত্র রক্ষা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখা। আমরা মানুষের মধ্যেও এগুলো ছড়িয়ে দিতে চাই।’
নারী মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানিয়ে এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানমালা উৎসর্গ করা হয়েছে জানিয়ে কালের কণ্ঠের সম্পাদক আবেদ খান বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা কিছু পাওয়ার আশায় যুদ্ধে যাননি। কালের কণ্ঠ তাঁদের জন্য কিছুটা হলেও কৃতজ্ঞতা জানাতে পেরে খুশি। কালের কণ্ঠ উন্নয়নের কথা বলতে চায়। সাধারণ মানুষের কল্যাণচিন্তায় নিজেকে নিবেদন করতে চায়। বসুন্ধরা গ্রুপ একটি দলনিরপেক্ষ পত্রিকা তৈরি করতে এগিয়ে এসেছে, যেটা হবে গণপ্রতিনিধিত্বমূলক। সাংবাদিকতার মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখার জন্যই তারা মিডিয়া জগতে এসেছে। তারা তাদের কথা রেখেছে।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠ কার্যালয়ে আসেন শুভেচ্ছা জানাতে। এ সময় তিনি পত্রিকাটির উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করেন।
শুভেচ্ছার বন্যা
নানা শ্রেণী-পেশার প্রতিনিধিত্বশীল মানুষের মুখরিত উপস্থিতিতে প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছিল কালের কণ্ঠের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন। তাঁরা নবপ্রতিষ্ঠিত দৈনিকটির গুণ ও মানের ভূয়সী প্রশংসা করেন। কামনা করেন সাফল্য।
উপদেষ্টা, মন্ত্রী, সচিব ও কর্মকর্তাদের শুভেচ্ছা : প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ডা. মোদাচ্ছের আলী এসেছিলেন শুভেচ্ছা জানাতে। বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী জি এম কাদের, খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক এসে শুভেচ্ছা জানান। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাসের পক্ষে শুভেচ্ছা পৌঁছে দেন মন্ত্রণালয়ের উপপরিচালক ডা. মোসাদ্দেক হোসেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো. আবদুল করিম, তথ্যসচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান, পর্যটনসচিব শফিক আলম মেহেদী, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক সচিব ও কথাসাহিত্যিক মাসুদ আহমেদ এসে শুভেচ্ছা জানান। পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার রাতে এসে শুভেচ্ছা জানান। আরো আসেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) জিয়া আহমেদ, ডিজিএফআইয়ের ডিজি লে. জেনারেল মোল্লা ফজল আকবর, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ, র‌্যাবের মহাপরিচালক মোখলেসুর রহমান, আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মো. সোহায়েল, গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল জিয়াউল আহসান ও মেজর সাখাওয়াত। এসেছিলেন পুলিশের ডিসি ট্রাফিক (পশ্চিম) সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, ডিসি (সদর দপ্তর) হাবিবুর রহমান, এডিসি মাসুদুর রহমান, এসি সাদিরা খাতুন ও রাসেল শেখ। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আসেন উপপরিচালক ফজলুর রহমান ও মজিবুর রহমান পাটোয়ারী।
বিরোধীদলীয় নেতাদের শুভেচ্ছা : এসেছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এমপি, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি এমপি, যুবদলের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলিম, সহসভাপতি বজলুল করীম আবেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান খোকন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ওবায়দুল হক নাসির ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার খলিলুর রহমান খলিল।
এ ছাড়া রাজনীতিবিদদের মধ্যে শুভেচ্ছা জানাতে আসেন হায়দার আকবর খান রনো, জাসদ নেত্রী শিরীন আক্তার, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) সালাউদ্দিন মতিন প্রকাশ প্রমুখ।
বিশিষ্টজনদের শুভ কামনা : যাঁদের উপস্থিতিতে কালের কণ্ঠের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল, তাঁদের মধ্যে ছিলেন কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হক, ভাষাসৈনিক ও গবেষক ডা. আহমদ রফিক, বিচারপতি গোলাম রব্বানী, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলি খান, সাবেক উপদেষ্টা এ এম এম শওকত আলী, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক হারুন হাবীব, লেখক মোহিত উল আলম, অর্থনীতিবিদ সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ, অ্যাডভোকেট এলিনা খান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম, প্রফেসর এ এন রাশেদা, ব্যাংকার ও লেখক মামুন রশিদ, অধ্যাপক সানজীদা আখতার, কবি নাসির আহমেদ, অধ্যাপক খালেদ হোসাইন, শিল্পী বুলবুল মহলানবীশ, মুক্তিযোদ্ধা বৈমানিক ক্যাপ্টেন (অব.) আলমগীর সাত্তার, এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট এ কে আজাদ, নারী উদ্যোক্তা নাসরীন আউয়াল মিন্টু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মনিরুজ্জামান মিঞা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক হারুন অর রশীদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নোমান উর রশীদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পক্ষে ড. আতিয়ার রহমান, প্রভাষক মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. আমিনুল ইসলাম, ক্রিকেটার হাবিবুল বাশার সুমন, সাবেক ফুটবল তারকা কায়সার হামিদ, সাবেক হকি তারকা রফিকুল ইসলাম কামাল, ক্রিকেটার জাভেদ ওমর বেলিম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. শিফায়েত উল্লাহ, নারীনেত্রী রোকেয়া কবীর ও সালমা খান, কর্মজীবী নারীর সাধারণ সম্পাদক শারমিন কবীর, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহসভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ঝুনা চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক আখতারুজ্জামান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ গিয়াস প্রমুখ।
মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের শুভেচ্ছা : এসেছিলেন ইত্তেফাক সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক শাজাহান সরদার, প্রকাশিতব্য দৈনিক সকালের খবরের সম্পাদক রাশীদ উন নবী বাবু, বৈশাখী টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মনজুরুল আহসান বুলবুল, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, একপক্ষ সম্পাদক মাসুদা ভাট্টি প্রমুখ। আরো এসেছিলেন বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম, ডেইলি সান, বাংলাভিশন, আজকালের খবর, ফোকাস বাংলা, সংবাদপত্র হকার্স কল্যাণ সমিতি প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।
তারকাদের মুখরিত পদচারণ : এসেছিলেন চলচ্চিত্র পরিচালক আমজাদ হোসেন, পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম, পরিচালক কাজী হায়াৎ, পরিচালক সমিতির মহাসচিব এফ আই মানিক, পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান মানিক, পরিচালক আবু সাঈদ, পরিচালক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ হান্নান, পরিচালক গোলাম রব্বানী বিপ্লব, সুরকার আলাউদ্দিন আলী, গীতিকার ও পরিচালক গাজী মাজহারুল আনোয়ার, কণ্ঠশিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদ, তপন চৌধুরী, এন্ড্রু কিশোর, সামিনা চৌধুরী, ফাহমিদা নবী, চন্দনা মজুমদার, পরিচালক আফজাল হোসেন, অভিনেতা পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, নাট্য নির্মাতা শাকুর মজিদ, নাট্যকার বৃন্দাবন দাশ, চিত্রশিল্পী ও পরিচালক খালিদ মাহমুদ মিঠু, পরিচালক গিয়াসউদ্দিন সেলিম, পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, নাট্য নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী, অভিনেতা ও মডেল মুকিত, কণ্ঠশিল্পী বিপ্লব, অভিনেতা হাসান মাসুদ, আরেফিন শুভ, সিদ্দিকুর রহমান, নাট্য নির্মাতা নেয়ামুল, অভিনেতা নাদের চৌধুরী, নাট্য নির্মাতা নোমান রবিন, ফেরদৌস হাসান, অভিনেতা আমিন আজাদ, ফ্যাশন কোরিওগ্রাফার গালিব, অভিনেতা ও পরিচালক শামীম শাহেদ, অভিনেতা সাইদ বাবু, কণ্ঠশিল্পী বেলাল, বিএফডিসির এমডি মমতাজ আলী শাকুর, শিশুশিল্পী দীঘি, আরজে নিরব, অভিনেতা নীরব, নাট্য নির্মাতা এজাজ মুন্না, অভিনেত্রী মম, অভিনেতা উজ্জ্বল, অভিনেত্রী বর্ষা, কণ্ঠশিল্পী পলাশ, অভিনেতা মারজুক রাসেল, ক্লোজআপ ওয়ান তারকা সালমা, পরিচালক অরণ্য আনোয়ার, আবৃত্তিশিল্পী রবি শঙ্কর মৈত্রী, কণ্ঠশিল্পী আরেফিন রুমি, অভিনেত্রী মীম, নাট্য নির্মাতা মোস্তফা কামাল রাজ, কণ্ঠশিল্পী তপু, কণ্ঠশিল্পী কণা, কণ্ঠশিল্পী আবিদ, উপস্থাপক খন্দকার ইসমাইল, অভিনেতা সম্রাট, অভিনেত্রী হুমায়রা হিমু, কণ্ঠশিল্পী মাসুদ কোরাইশি, কণ্ঠশিল্পী রাজীব, মুহিন, নৃত্যশিল্পী ফারহানা চৌধুরী বেবী, নৃত্যশিল্পী ইশা, কণ্ঠশিল্পী কোনাল, আনিক, মুগ্ধ, নৃত্যশিল্পী আমিনুল ইসলাম মণি, ফারজানা খান ইলা, অভিনেত্রী স্বাগতা, শাহনাজ খুশী, তামান্না, যাত্রাশিল্পী উন্নয়ন পরিষদের মিলন কান্তি দে, অভিনেতা নিলয়, রওনক হাসান, নাট্য নির্মাতা মানিক মানবিক, কৌশিক শঙ্কর দাশ, অভিনেতা সজল, কণ্ঠশিল্পী বালাম, পরিচালক শারাফ আহমেদ জীবন, অভিনেতা আজিজুল হাকিম, পরিচালক জিনাত হাকিম, পরিচালক শাহনেওয়াজ কাকলি ও অভিনেতা প্রাণ।
বসুন্ধরা গ্রুপ চেয়ারম্যানের শুভেচ্ছা : বসুন্ধরা গ্র“পের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের পক্ষ থেকে কালের কণ্ঠের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সম্পাদক ও সংবাদকর্মীদের শুভেচ্ছা জানানো হয়। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের পক্ষে ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক বিদ্যুৎ কুমার ভৌমিক, নির্বাহী পরিচালক (হিসাব-ইডাব্লিউপিডি) ইমরুল হাসান, সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার (বিসিডিএল) মেজর (অব.) মেহেদী হাসান, সমন্বয়ক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ শুভেচ্ছা পৌঁছে দেন সম্পাদক আবেদ খান ও ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিনকে।
আরো যাঁরা অভিনন্দন জানিয়েছেন : আশিয়ান সিটি, গণসাক্ষরতা অভিযান, যাত্রী, প্রাইম ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, অ্যাডভারটাইজিং কম্পানি প্রচিত, পপুলার, সাঈদ বাবু, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি, মিডোরি কমিউনিকেশন লি., আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ, এক কাপ চা চলচ্চিত্র, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লি., এশিয়ান ট্রাভেলস নেটওয়ার্ক লি., যুব কর্মসংস্থান সোসাইটি, আখতার ফার্নিচার ও রঙ ফ্যাশন হাউস অভিনন্দনবার্তা পাঠায়।

গাংনীতে চরমপন্থীদের সঙ্গে গোলাগুলিতে ৩ র‌্যাব সদস্য আহত

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় চরমপন্থীদের সঙ্গে গোলাগুলিতে আহত হয়েছে র‌্যাবের তিন জন সদস্য। গাংনীর রামনগর গ্রামে মঙ্গলবার ভোররাতে গোলাগুলির পর নয়টি বোমা ও একটি পিস্তলসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে।

র‌্যাব-৬ এর মেহেরপুর ফাঁড়ির অধিনায়ক এসএসপি শেখ জাহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, রামনগর গ্রামের সড়কে র‌্যাব-পুলিশ সদস্যরা চরমপন্থীদের ধরার জন্য ওঁৎ পেতে ছিলো। "রাত ৩টার দিকে র‌্যাব-পুলিশ সদস্যরা চরমপন্থীদের ঘিরে ফেললে তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ করে দুই রাউন্ড গুলি ও একটি বোমা নিক্ষেপ করে। এতে র‌্যাবের ৩ সদস্য আহত হন। পরে র‌্যাবও সন্ত্রাসীদের লক্ষ করে কয়েক রাউন্ড গুলি চালালে চার চরমপন্থী আহত হয়। পরে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।"

আহতরা র‌্যাব সদস্যরা হলেন- এসআই আব্দুল মজিদ, কনস্টেবল ইয়াছিন আলী ও আব্দুল আজিজ। গ্রেপ্তার চার জন হলেন- পালান মিয়া, লিটন হোসেন, ইমরান আলী ও রেজাউল শেখ। তাদের সবার বাড়ি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার তেকালা গ্রামে। আহত সবাইকে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে।

গোলাগুলির পর ঘটনাস্থল থেকে নয়টি তাজা বোমা, ৫ রাউন্ড গুলিভর্তি একটি নাইন এমএম পিস্তল এবং চরমপন্থী সংগঠন পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির (এমএল-জনযুদ্ধ) লিফলেট উদ্ধার করা হয় বলে র‌্যাব কর্মকর্তা জাহিদুল জানান। তিনি বলেন, গ্রেপ্তার চার জনের বিরুদ্ধে মেহেরপুরের গাংনী, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানায় হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে কয়েকটি মামলা আছে।

গ্রামীণ ডানোনের বিরুদ্ধে মামলা by আরিফুজ্জামান তুহিন

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ভেজাল খাদ্য উৎপাদনের দায়ে ঢাকা সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি) বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতে মামলা হয়েছে। ভেজাল খাদ্য নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী এ মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে তিনি সর্বোচ্চ এক বছরের জেল অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।
বিশুদ্ধ খাদ্য আদালত সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মালিকানাধীন ‘শক্তি দই’-এ ভেজাল ধরা পড়ায় বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ ১৯৬৯-এর ৬(১) ধারা অনুযায়ী উৎপাদক প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ডানোনের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুল আলমের আদালতে মামলা করা হয়। মামলা নম্বর ১০/২০১১। সূত্র জানায়, ঢাকা সিটি করপোরেশনের পরীক্ষাগারে শক্তি দইয়ে ভেজাল ধরা পড়ে। আইন অনুযায়ী সিটি করপোরেশনের মেয়রের পক্ষে প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিরুদ্দিনের অনুমোদনক্রমে মামলা দায়ের করেন স্বাস্থ্য পরিদর্শক মো. কামরুল হোসেন। এ মামলায় আরো দুজনকে আসামি করা হয়েছে। তাঁরা শক্তি দইয়ের পরিবেশক ও বিক্রেতা।
বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ ১৯৬৯ অনুযায়ী গ্রামীণ ডানোনের স্বত্বাধিকারী হিসেবে এ মামলায় ড. ইউনূসকে সশরীরে আদালতে হাজিরা দিতে হবে। তাঁকে সমন জারির প্রস্তুতি চলছে।
ডিসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিরুদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বেশ কয়েক দিন আগে গ্রামীণ ডানোন কম্পানির শক্তি দইয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ডিসিসির পরীক্ষাগারে এ দই পরীক্ষা করা হয়। তাতে দেখা যায়, দইয়ে যে যে উপাদান যে মাত্রায় থাকার কথা, তা এ পণ্যে নেই।’ তিনি আরো বলেন, ‘এ দইয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর বাজার থেকে আরো কয়েকটি ব্র্যান্ডের দইয়ের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তাতে দেখা যায়, কেবল শক্তি দই নয়, বাজারের অনেক দই-ই মানসম্মত নয়। ওই সব দইয়ের উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
২০০৬ সালের মার্চে বগুড়ায় ফরাসি কম্পানি ডানোন ও গ্রামীণ ফুডসের যৌথ উদ্যোগে এ প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়। সে সময় গ্রামীণ ডানোন ফুডসের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে দাবি করা হয়, বাংলাদেশের শিশুদের পুষ্টির বিষয়টি মাথায় রেখেই শক্তি দই উৎপাদনের পদ্ধতিটি বিশেষভাবে তৈরি করেছেন ডানোনের গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের বিশেষজ্ঞরা। এ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশন’-এর কারিগরি সহায়তা নিয়েছে বলে প্রচার চালানো হয়। শক্তি দইয়ের উৎপাদন নিয়ে বলা হয়, এ দই ঝোলাগুড় ও চিনি মিশিয়ে গরুর দুধ থেকে উৎপাদিত হয়। শক্তি দইয়ের বিশেষ উপাদান শিশুদের ডায়রিয়ার তীব্রতা ও স্থায়িত্ব কমিয়ে দেয়। প্রতি ৬০ গ্রাম শক্তি দইয়ে শিশুর প্রতিদিনের ভিটামিন এ, আয়রন, জিংক ও আয়োডিনের ৩০ শতাংশ চাহিদা মেটায় বলে দাবি করা হয়।
দরিদ্র শিশুদের অপুষ্টি দূর করার কথা বলে ২০০৬ সালে শক্তি দইয়ের উদ্বোধনকালে ফরাসি কিংবদন্তি ফুটবলার জিনেদিন জিদানকে ঢাকায় এনেছিল কম্পানিটি। কিন্তু শক্তি দইয়ে ভেজাল শনাক্ত হওয়ার পর কম্পানির প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে তাঁদের দেওয়া সব প্রতিশ্রুতি।
যুক্তরাষ্ট্রেও জরিমানা গুনেছে ডানোন
বাংলাদেশেই প্রথম ডানোনের বিরুদ্ধে ভেজাল পণ্য উৎপাদনের অভিযোগ উঠেনি, যুক্তরাষ্ট্রেও কম্পানিটিকে মোটা অঙ্কের জরিমানা গুনতে হয়েছে। বিশ্বব্যাপী পুষ্টিমান বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিলেও ডানোনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ভেজাল পণ্য বিক্রি করার দায়ে জরিমানা দিতে হয়েছে। গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র থেকে দ্য নিউজ ট্রিবিউন ডটকম-এ প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ‘অ্যাক্টিভিয়া চ্যালেঞ্জ’ দিয়ে হজমে উপকারী এক ধরনের দই বাজারজাত করে ডানোন। তাদের দাবি করা তথ্য চ্যালেঞ্জ করে মামলা করা হয়। মামলায় ডানোন পরাজিত হলে মিথ্যা তথ্য দিয়ে পণ্য বিক্রির দায়ে তাদের দুই কোটি ১০ লাখ ডলার জরিমানা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ৩৯টি অঙ্গরাজ্যে ডানোনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। শুধু ওয়াশিংটনেই ডানোনকে চার লাখ ২৫ লাখ ডলার জরিমানা দিতে হয়েছে। ওয়াশিংটনের অ্যাটর্নি জেনারেলের পক্ষ থেকে মামলাটি করা হয়। কোনো খাদ্য উৎপাদনকারীর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য মিলিয়ে এটিই সর্বোচ্চ জরিমানা আদায়ের নজির।

পাওনা আনতে গিয়ে মার খেল গার্মেন্টস শ্রমিকরা

নারায়ণগঞ্জের আদমজী ইপিজেডের বন্ধ হওয়া হাইল্যান সুয়েটার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড গার্মেন্টসের শ্রমিকরা সোমবার তাদের বকেয়া পাওনা নিতে এসে আদমজী ইপিজেড কতর্ৃপক্ষ ও পুলিশের তোপের মুখে পড়ে। উভয়পক্ষের সংঘর্ষে এ সময় নিরাপত্তা প্রহরী ও শ্রমিকসহ আহত হয় ২০ জন।
পরে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ইপিজেড থেকে বের হয়ে ডেমরা-নারায়ণগঞ্জ সড়কে ব্যারিকেড দেয়। পরে পুলিশ তাদেরকে ধাওয়া করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। হাইল্যান সুয়েটার কারখানা গত ৪ জানুয়ারি বন্ধ করে দেয় কতর্ৃপক্ষ। গতকাল ঐ গার্মেন্টস শ্রমিকদের পাওনা বুঝিয়ে দেয়ার কথা ছিল।

জানা গেছে, ৮ শতাধিক শ্রমিক গতকাল সকালে তাদের পাওনাদি নিতে আদমজী ইপিজেডে যায়। এক পর্যায়ে শ্রমিকদের সাথে ইপিজেড ও গার্মেন্টস কতর্ৃপক্ষ আলোচনায় বসেন। কিন্তু তাদের পাওনাদি নিয়ে ইপিজেড ও গার্মেন্টস কতর্ৃপক্ষ টালবাহানা করতে থাকে বলে শ্রমিকরা অভিযোগ করে। শ্রমিকরা জানায়, তারা তাদের ন্যায্য বকেয়া পাওনা চাইতে থাকলে এক পর্যায়ে ইপিজেড কতর্ৃপক্ষ, নিরাপত্তা প্রহরী ও পুলিশ মারমুখো হয়ে শ্রমিকদের লাঠিপেটা করতে থাকে। এতে দিকবিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে শ্রমিকরা। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পুলিশ ও নিরাপত্তা প্রহরীদের উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এ সময় হাইল্যান সুয়েটার ফ্যাক্টরির কয়েকটি জানালার কাঁচ ভেঙ্গে ফেলে শ্রমিকরা। শ্রমিকরা জানায়, এ সময় মিজানের নেতৃত্বে গার্মেন্টসের ভাড়াটিয়া দালাল বাহিনী শ্রমিকদের ওপর হামলা চালায়। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ডেমরা-নারায়ণগঞ্জ সড়কে এসে ব্যারিকেড দেয়। শ্রমিকদের অভিযোগ, ইপিজেড কতর্ৃপক্ষ গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে উৎকোচ নিয়ে তাদের পাওনা আদায় করে দিচ্ছে না।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম বদরুল আলম জানান, বন্ধ হওয়া গার্মেন্টস শ্রমিকদের ডিসেম্বর মাসের বেতন দেয়ার কথা ছিল ১০ জানুয়ারি। কিন্তু গার্মেন্টস কতর্ৃপক্ষ তাদের বেতন গতকাল না দিতে পেরে ১৬ জানুয়ারি দেয়ার ঘোষণা দিলে শ্রমিকরা বেপজার জিএম, গার্মেন্টস মালিকপক্ষের প্রতিনিধি ও পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। তারপর পুলিশ তাদের ধাওয়া করে।

এ ব্যাপারে ইপিজেড কতর্ৃপক্ষের সাথে সাংবাদিকরা যোগাযোগ করতে চাইলে তাদেরকে ইপিজেড অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে দেয়নি নিরাপত্তা প্রহরীরা। এমনকি সেখানে ফোন করলে সাংবাদিক পরিচয় শুনে ইপিজেড কর্মকর্তারা ফোন রেখে দেন।

অ্যাসাঞ্জসহ উইকিলিকস-সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে তথ্য চায় যুক্তরাষ্ট্র

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জসহ উইকিলিকসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পাঁচ ব্যক্তির বিস্তারিত ব্যক্তিগত তথ্য জানাতে জনপ্রিয় মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটারকে নির্দেশ দিয়েছে মার্কিন সরকার। আদালতের নথি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ, উইকিলিকসের কাছে গোপনীয় নথিপত্র পাচারের জন্য অভিযুক্ত এক মার্কিন সেনা, আইসল্যান্ডের একজন এমপি ও দুজন কম্পিউটার বিশেষজ্ঞের ব্যক্তিগত বার্তা, যোগাযোগের তথ্য, ব্যাংক হিসাব নম্বর ও অন্যান্য ব্যক্তিগত বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়েছেন। ভার্জিনিয়ায় মার্কিন ডিস্ট্রিক্ট আদালতের একজন বিচারক এসব ব্যক্তিগত তথ্য হস্তান্তর করার জন্য টুইটারকে নির্দেশ দেন।
এ সম্পর্কে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে টুইটার। তবে সাইটটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোম্পানির নীতি হচ্ছে, সরকার যদি এ ধরনের কোনো অনুরোধ জানায়, তাহলে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ব্যবহারকারীকে জানানো হয়।
অ্যাসাঞ্জের ধারণা, তথ্য দেওয়ার জন্য ফেসবুক ও গুগলকেও এ ধরনের অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে এ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ওই দুই কোম্পানি। আদালতের এ ধরনের নির্দেশে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ ও আইসল্যান্ডের পার্লামেন্ট সদস্য বিরগিত্তা জোন্সদোত্তির। আদালতের এই নির্দেশের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।
অ্যাসাঞ্জ মার্কিন সরকারের বিরুদ্ধে ‘হয়রানি’র অভিযোগ তুলেছেন। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, ইরান সরকার যদি সাংবাদিক, বিদেশি মানবাধিকারকর্মীর কাছ থেকে জোরপূর্বক এসব তথ্য আদায়ের চেষ্টা করে, তাহলে সারা বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ নিয়ে কথা বলবে।
দুই লাখ ৫০ হাজার গোপনীয় কূটনৈতিক তারবার্তা প্রকাশের ঘটনায় অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র।
আদালতের আদেশে যাঁদের সম্পর্কে তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে, তাঁদের মধ্যে মার্কিন সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বিশ্লেষক ব্র্যাডলি ম্যানিং, ডাচ্ হ্যাকার রোপ গনগ্রিগ্রিজপ ও মার্কিন কম্পিউটার প্রোগ্রামার জ্যাকব অ্যাপেলবাউমের নাম রয়েছে।
জোন্সদোত্তির তাঁর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার জন্য টুইটারকেই বেছে নেন। তিনি বলেন, ২০০৯ সালের ১ নভেম্বর থেকে তাঁর সব টুইট সম্পর্কে জানতে চেয়েছে মার্কিন সরকার। তিনি বলেন, ‘তারা কি বুঝতে পারছে যে আমি আইসল্যান্ডের পার্লামেন্টের সদস্য?’
এই এমপি বলেন, আদালতের এই নির্দেশের বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য তাঁর হাতে ১০ দিন সময় রয়েছে। জোন্সদোত্তির আবারও বলেন, ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের কোনো তথ্য হস্তান্তর করার কোনো ইচ্ছাই তাঁর নেই।
ফাঁস হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ: এদিকে উইকিলিকস শত শত মানবাধিকারকর্মী, বিভিন্ন দেশের সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীর পরিচয় ফাঁস করে দেওয়ায় তাঁদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। তাঁদের নিরাপত্তার ব্যাপারে সম্ভাব্য সব কিছু করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে দেশটির পক্ষ থেকে। ইতিমধ্যে তাঁদের অল্প কয়েকজনকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে গত বৃহস্পতিবার এ কথা জানানো হয়েছে।
মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আফগানিস্তান থেকে জিম্বাবুয়ে পর্যন্ত মার্কিন দূতাবাসকর্মীদের কাছে যেসব বিদেশি মার্কিন স্বার্থসংশ্লিষ্ট মূল্যবান তথ্য সরবরাহ করত, উইকিলিকস তাদের অনেকের পরিচয় প্রকাশ করে দিয়েছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি ওই বিদেশি ব্যক্তিদের জীবনেও নিরাপত্তার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। অবশ্য মার্কিন কর্মকর্তারা স্বীকার করেন, পরিচয় প্রকাশ হয়ে যাওয়া কেউ হামলার শিকার হয়েছেন—এমন তথ্য তাঁরা এখনো পাননি। তবে তাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, ওই ঘটনার পর অনেক ভিন্নমতাবলম্বী নিজ নিজ সরকারের হাতে হেনস্তা হচ্ছেন। যাঁদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, তাঁদের ব্যাপারে কিছু জানাতে অস্বীকার করেন পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তারা।
উইকিলিকস এ পর্যন্ত প্রায় আড়াই লাখ গোপন মার্কিন তারবার্তা প্রকাশ করেছে। এ ঘটনার পর অনেক ক্ষেত্রে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়েছে মার্কিন সরকার এবং এর সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন দেশের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে। টেলিগ্রাফ ও বিবিসি।

হয়রানির প্রতিকারে বিমানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইলেন পাইলটরা

বৈমানিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনসহ তাঁদের বিভিন্ন হয়রানির প্রতিকার চেয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী জি এম কাদের এবং বিমানের প্রধান নির্বাহী এয়ার কমোডর (অব.) জাকিউল ইসলামকে আলাদা দুটি চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ এয়ারলাইনস পাইলটস অ্যাসোসিয়েশন (বাপা)।

বাপার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ক্যাপ্টেন জাকির হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ক্যাপ্টেন এম এ বাসিত মাহতাব স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বৈমানিকরা যাতে হয়রানির শিকার না হন সে জন্য মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে। সম্প্রতি বৈমানিকদের ধর্মঘটের পরিপ্রেক্ষিতে বিমানের প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে যে অভিযোগপত্র গঠন করা হয়, এ প্রেক্ষাপটে বাপা গতকাল রবিবার ওই চিঠি দেয়।
চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হতে বিমানের প্রধান নির্বাহীকে কালের কণ্ঠের পক্ষ থেকে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তবে বিমানের চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) জামালউদ্দীন আহমেদ বাপার দেওয়া চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করেন। আর বৈমানিকদের হয়রানির অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, বিমান থেকে প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে সাতজন পাইলটকে কারণ দর্শানোর চিঠি (শোকজ) দেওয়া হয়েছে। তাঁদের অভিযোগ সম্পর্কে মতামত জানার জন্য এই চিঠি দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিমানমন্ত্রী জি এম কাদের ঢাকার বাইরে অবস্থান করায় তিনি চিঠিটি এখনো হাতে পাননি।
ওই চিঠি দুটির কপি কালের কণ্ঠের হাতে রয়েছে। মন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, 'বৈমানিকদের বয়স বৃদ্ধি-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বৈমানিক এবং বিমান প্রশাসনের মধ্যে সৃষ্ট অচলাবস্থা সম্পর্কে আপনি অবগত আছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈমানিকদের সাক্ষাতের সময় আপনি উপস্থিত ছিলেন, যেখানে প্রধানমন্ত্রীর সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে সমস্যাসমূহ সমাধানের একটি ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়। প্রধানমন্ত্রী আমাদের নির্ভয়ে কাজে যোগদান করতে বলেন এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা নিশ্চিন্ত মনে কাজে যোগ দেই। আপনার অবগতির জন্য আমরা জানাচ্ছি যে, প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের পর থেকেই তাঁর আশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন না করে বিমান প্রশাসন একতরফাভাবে বাপা সদস্যদেরকে নানাবিধ উপায়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং হয়রানিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে চলেছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৬ জানুয়ারি বাপার সাতজন পাইলটের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গঠন করা হয়েছে।...আমরা আশা করছি, আপনি বিষয়টির প্রকৃত গুরুত্ব অনুধাবন করবেন। একই সাথে বিমান প্রশাসনের অনমনীয় অবস্থানের কারণে সৃষ্ট অচলাবস্থা নিরসনে আমরা আপনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।'
বিমানের প্রধান নির্বাহীকে দেওয়া চিঠিতে একই বিষয়বস্তু থাকলেও বাড়তি তথ্য হিসেবে লেখা হয়েছে, 'আমরা সাংবাদিক সম্মেলনের প্রস্তুতি গ্রহণ করছি।'

তিস্তার পানিবণ্টনে অন্তবর্তীকালীন চুক্তি হচ্ছে

তিস্তার পানিবণ্টনে ১৫ বছর মেয়াদি একটি অন্তবর্তীকালীন চুক্তি হচ্ছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের আসন্ন ঢাকা সফরের সময় অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন চুক্তিটি সই হবে। আজ সোমবার বিকেলে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) বৈঠক শেষে পানিসম্পদ সচিব শেখ মো. ওয়াহিদ উজ জামান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।  রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় জেআরসির দিনব্যাপী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তিতে কোন দেশের হিস্যা কত হবে, সেটা পাসিসম্পদ সচিব জানাতে রাজি হননি। তবে ভারতের পানিসম্পদ সচিব ধ্রুব বিজয় সিং সাংবাদিকদের জানান, দুই পক্ষই চুক্তির খুঁটিনাটি বিষয়ে তাদের মতভেদ দূর করে দুই দেশের জনগণের স্বার্থে চুক্তি সইয়ের ব্যাপারে একমত হয়েছেন। শিগগিরই উচ্চতর পর্যায় থেকে চুক্তিটি চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হবে।
জেআরসির বৈঠকে বাংলাদেশের ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন পানিসম্পদ সচিব শেখ মো. ওয়াহিদ উজ জামান। আর ভারতের ছয় সদস্যের নেতৃত্ব দেন ধ্রুব বিজয় সিং।
ওয়াহিদ উজ জামান জানান, তিস্তা ছাড়াও ফেনী নদীর পানিবণ্টনে একটি অন্তবর্তীকালীন চুক্তি সইয়ের ব্যাপারে দুই পক্ষ একমত হয়েছে।