Tuesday, January 11, 2011

পাঠক ও লেখক সৃষ্টিতে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র বিভিন্ন ইভেন্টের আয়োজন করতে পারে

মাদের দেশ অনেক মানুষের দেশ। মানুষের অভাব হওয়ার কথা নয়। অন্তত ঢাকায় যত মানুষ বাস করে, প্রতিটি পরিবার থেকে গড়ে একজনকে মেলায় আনতে পারলে মানুষের স্থান সংকুলানের কথা নয়। সর্বশেষ খবর হলো, ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেলা জমেনি।

এক পত্রিকার মাধ্যমে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক বলেছেন, 'মেলায় দর্শনার্থী আকর্ষণের জন্য সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা শুরু হচ্ছে।' এটা তো মেলা শুরু হওয়ার আগে নিশ্চিত করার বিষয়। আয়োজকদের অবশ্য মেলা শুরু করতে কোনো গাফিলতি নেই। তবে যে জন্য আয়োজন, যাঁদের জন্য আয়োজন, যেভাবে আয়োজন করা দরকার, সে বিষয়ে কী কী করেছেন, বোঝা কঠিন। স্পষ্টই বলা যায়, আয়োজকরা গণমাধ্যমকে কার্যকরভাবে সম্পৃক্ত করতে পারেননি। প্রকাশকদের মাথায় হাত। আয়োজনে যত টাকা খরচ করা হচ্ছে, তত টাকার বই বিক্রি হলেও একটা সান্ত্বনা পাওয়া যেত।
ফেব্রুয়ারিতে বাংলা একাডেমী আয়োজিত একুশে বইমেলা জাতীয় উৎসবে রূপ নিয়েছে। আয়োজকরা ডিসেম্বরের মেলায় পাঠক টানতে সক্ষম হবেন? আবার নাগরিকদের বই নিয়ে বাজেট ভাবনার একটা বিষয়ও এখানে বিবেচ্য হওয়া জরুরি। অন্যদিকে ডিসেম্বর মাসে বড় সংখ্যায় ছেলেমেয়েরা বার্ষিক পরীক্ষার জন্য ব্যস্ত থাকে। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাড়া পাওয়াও কঠিন। তাদেরও পাঠক হিসেবে আমরা তৈরি করিনি। সেদিক থেকে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র একুশে বইমেলা সামনে রেখে ঢাকা আন্তর্জাতিক বইমেলার বিকল্প কিছু ভাবতে পারে। প্রথমত, ব্যাপকভাবে পাঠক সৃষ্টি এবং পাঠকদের নিয়মিত পাঠে অভ্যস্ত করার জন্য জন-অংশগ্রহণমূলক বিভিন্ন ইভেন্টের আয়োজন করতে পারে। দেশব্যাপী প্রতিভাবান লেখকদের পাঠকদের কাছে পরিচিত করে তুলতে কর্মসূচি নিতে পারে, নতুন লেখক সৃষ্টিতে কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারে, প্রকাশনা শিল্পের উৎকর্ষ অর্জনে দক্ষ সম্পাদক, সম্পাদনা সহকারী, কম্পোজিটর ইত্যাদি সৃষ্টিতে প্রশিক্ষণ বা স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের আয়োজন করতে পারে। প্রকাশিত বই রিভিউ প্রোগ্রাম চালু করতে পারে। ফলে মানসম্মত বই প্রকাশে প্রকাশকরা উৎসাহিত হতে পারেন। শিশুসাহিত্য নিয়ে অনেক কাজ করার আছে বলে মনে হয়। শিশুদের জন্য যাঁরা লিখছেন, তাঁদের নিয়ে বিভিন্ন কর্মশালা করা যেতে পারে। কারণ অনেক বিখ্যাত লেখা পড়ে দেখা গেছে, শিশুদের নৈতিক শিক্ষায় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে; যদিও সেগুলো সাহিত্যের মানদণ্ডে বা সাহিত্যিকের নামের কারণে পাঠক এখনো গ্রহণ করছেন। এ ছাড়া শিশুদের মধ্যে শিশুসাহিত্যিক সৃষ্টিতে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র বিশেষ অবদান রাখতে পারে। ঢাকা আন্তর্জাতিক বইমেলাকে পরীক্ষামূলকভাবে 'জাতীয় শিশু বইমেলায়' রূপান্তর করে দেখা যেতে পারে। তবে মেলার সময় নিয়ে বিশেষভাবে ভাবতে হবে। এ আয়োজনে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর সহযোগিতা নিতে পারে।
ঢাকা আন্তর্জাতিক বইমেলা ২০১০ যে যে উদ্দেশ্য নির্ধারণ করে শুরু হয়েছে, সে উদ্দেশ্য অর্জনে আয়োজকরা সফল হলে খুশি হবেন সবাই। মেলা শেষে আয়োজকরা প্রকাশক ও পাঠকদের নিয়ে একটা রিভিউ সভা করলে কিছু মূল্যবান দিকনির্দেশনা পেতে পারেন।
যা-ই হোক, ঢাকা আন্তর্জাতিক বইমেলা ২০১০ শুরু হয়েছে ১ ডিসেম্বর। ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র এর আয়োজক। প্রতিদিন বেলা ২টা থেকে রাত ৯টা এবং ছুটির দিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে। এবারের মূল থিম 'রূপকল্প-২০২১ রূপায়ণে গ্রন্থ'। মেলা ব্যবস্থাপনায় আয়োজকরা অনেক অনেক বেশি দায়িত্বশীল হবেন_এটাই সবার আশা।
মোহম্মদ মারুফ খান
ঢাকা।

No comments:

Post a Comment