Wednesday, January 12, 2011

২০ কোটি টাকা আত্মসাৎ এর জবানবন্দি দিলেন আবদুস সালাম

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটি) সহকারী হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা আবদুস সালাম খান প্রায় ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

মহানগর হাকিম ইসমাইল হোসেন আজ বুধবার তাঁর খাসকামরায় ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আসামি সালামের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন। আদালত জবানবন্দি গ্রহণ শেষে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
দুই দিনের রিমান্ড শেষে আজ তাঁকে আদালতে হাজির করা হলে আসামি আবদুস সালাম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে চান। এ সময় তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক বেনজীর আহমেদ আসামির জবানবন্দির নেওয়ার আবেদন করেন।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) কর্মকর্তারা জানান, গত শুক্রবার র্যাব ও দুদক যৌথ অভিযান চালিয়ে রাজধানীর তোপখানা সড়ক থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
র্যাবের কর্মকর্তারা জানান, বিআইডব্লিউটিএর প্রাথমিক তদন্তে সালামের আত্মসাতের বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার পর চাকরি থেকে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে একটি প্রতারণা মামলা দায়ের করা হয় রমনা থানায়। পরে মামলাটি দুর্নীতি দমন কমিশনে স্থানান্তরিত করা হয়। এ মামলার আসামি হিসেবেই র্যাব ও দুর্নীতি দমন কমিশনের সদস্যরা তোপখানা রোডে তাঁর নিজের কার্যালয়ের একটি তালাবদ্ধ কক্ষ থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তারের পর তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একটি দল গঠন করা হয়।
র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে সালাম জানান, ১৯৭৬ সালে বিআইডব্লিউটিএতে টাইপিস্ট হিসেবে যোগ দেন। সেখান থেকে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি পান। ২০০৭ সাল থেকে তিনি কর্মচারীদের ভবিষ্যত্ তহবিল দেখাশোনার দায়িত্ব পান।

বন্যায় প্লাবিত অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেন, নিখোঁজ ৭০

স্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড রাজ্যের রাজধানী ব্রিসবেনও বন্যা কবলিত হয়েছে। বুধবার হাজার হাজার ব্রিসবেনবাসী বাসস্থান ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়। আতঙ্কিত শহরবাসীরা খাবার কিনে মজুদ করতে শুরু করেছে।

ব্রিসবেন অস্ট্রেলিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম শহর। বন্যায় শহরটিতে কমপক্ষে ৭০ জন নিখোঁজ হয়েছে বলে জানা যায়। পাশাপাশি ২০ হাজার ঘরবাড়ি ধ্বংসের মুখে রয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী। বন্যার কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়ায় ব্রিসবেন শহরের কেন্দ্রীয় এলাকা ভূতুড়ে নগরীতে পরিণত হয়েছে। অবস্থানকারী হাজার হাজার শহরবাসী শহরটি ছেড়ে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আনা ব্লিজ এই বন্যাকে কুইন্সল্যান্ডের সবচেয়ে বিপর্যয়কর প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে চিহ্নিত করেছেন। গত মাসে শুরু হওয়া একশ' বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ এই বন্যায় এ পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছে বলে জানা যায়। মঙ্গলবার ২০ লাখ অধিবাসীর শহর ব্রিসবেনের দিকে বন্যার পানি সুনামির মতো ধেয়ে যায়। ফলে শহরের নিুাঞ্চলের বাসিন্দারা বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বাধ্য হয়।

ব্রিসবেনের বন্যা পরিস্থিতি বুধ অথবা বৃহস্পতিবার নাগাদ সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছতে পারে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কুইন্সল্যান্ড বিশ্বের সর্ববৃহৎ কয়লা রপ্তানিকারক রাজ্য। এখান থেকে রপ্তানি করা কয়লা ইস্পাত উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। বন্যায় কুইন্সল্যান্ডের কয়লাখনিগুলো ভেসে প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি বাণিজ্য অচল হয়ে গেছে।

বন্যায় রেল ও সড়ক পথগুলো ভেসে গিয়ে অবকাঠামো বিধ্বস্ত করে ফেলেছে। মারাত্মক ব্যাহত হয়েছে গমের উৎপাদন ও অন্যান্য কৃষিশিল্প। এতে বিশ্ব বাজারে দানাদার খাদ্যশস্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক সদস্য বুধবার জানান, এই বিপর্যয়ে ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাবে- যা প্রায় ১ হাজার ৩শ' কোটি মার্কিন ডলারের সমান।

ভোট মোটামুটি শান্তিপূর্ণ, বললো বিএনপি

পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে শঙ্কার কথা আগে প্রকাশ করলে বুধবার দুপুর পর্যন্ত তেমন কোনো অনিয়ম পায়নি বিএনপি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান দুপুরের পর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, "কয়েকটি স্থানে ভোট কেন্দ্রে এজেন্ট বের করে দেওয়া, ভোটারদের অর্থ দিয়ে ভোট দিতে প্রলোভন ও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এছাড়া ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণভাবে হচ্ছে বলে আমরা খবর পেয়েছি।"

তবে ভোটের পুরো চিত্র এখনো পাওয়া যায়নি বলে নজরুল জানান। বুধবার রাজশাহী ও রংপুরের ৭২টি পৌরসভায় একযোগে ভোটগ্রহণ চলছে। নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পৌর নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য একটি কেন্দ্রীয় মনিটরিং কক্ষ খুলেছে বিএনপি। সেখানেই সংবাদ সম্মেলন করেন নজরুল।

ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর বিকাল ৫টায় আবার সংবাদ সম্মেলন করবে বিএনপি। নজরুল বলেন, "আমাদের কাছে প্রাপ্ত অভিযোগগুলো নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছি। এর প্রতিকার হবে বলে আশা করছি।'' সিরাজগঞ্জে বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্য রোমানা মাহমুদ ভোট দিয়ে ফেরার পথে নাজেহাল হয়েছে অভিযোগ করে নজরুল বলেন, "প্রধানমন্ত্রীর একজন ব্যক্তিগত চিকিৎসক একজন এমপিকে অসম্মান করছেন, এটা নিন্দনীয়।"

অভিযোগ রয়েছে, রোমানা নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ করে তার গাড়িতে করে ভোট দিতে গিয়েছিলেন। গাইবান্ধা পৌর নির্বাচনে দুপুরের মধ্যে ব্যালেট পেপার শেষ হয়ে যাওয়ায় নতুন ব্যালট পেপার আনা হচ্ছে জানিয়ে বিএনপি নেতা বলেন, "ওই এলাকার কয়েকটি কেন্দ্র থেকে আমাদের সমর্থক এজেন্ট বের করে দেওয়া হয়।"

এছাড়া সিরাজগঞ্জ, রাজশাহীর দুর্গাপুরের ধরমপুর, রংপুরের চৌপুকুরিয়া কেন্দ্রে অনিয়ম ও এজেন্ট বের করে দেওয়ার অভিযোগ তুলে ধরেন নজরুল। এছাড়া কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীকে প্রচার কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেন তিনি। পটুয়াখালীতে বৃহস্পতিবার পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর সফরে নির্বাচনী আইন লঙ্ঘিত হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলন নজরুলের সঙ্গে ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এমএ কাইয়ুম, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী, অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম, সহ দপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি, আসাদুল করীম শাহিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিবউন নবী খান, সাধারণ সম্পাদত শরাফত আলী সপু, যুব দলের সহসভাপতি আবদুস সালাম আজাদ, ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু।

৪০ হাজারের বেশি কারখানাঃ বিপুল সম্ভাবনার হাতছানি

ষ্ট যন্ত্র বা যন্ত্রাংশের মতো হুবহু আরেকটি যন্ত্র বা যন্ত্রাংশ তৈরিতে প্রয়োজন একই গুণাগুণসম্পন্ন লোহা। লোহায় কার্বন বা অন্যান্য উপাদানের পরিমাণ কত, তা জানতে প্রয়োজন হয় গবেষণাগারে পরীক্ষার। কিন্তু ধোলাইখালের কারিগরদের কোনো গবেষণাগার নেই।

তাঁরা লোহার টুকরোটা ওপরে ছুড়ে মারেন। সেটা নিচে পড়ার পর শব্দ শুনেই 'স্বশিক্ষিত' দক্ষ কারিগররা বুঝে ফেলেন লোহার গুণাগুণ। আবার নমুনা যন্ত্র কাটার সময় আগুনের যে স্ফুলিঙ্গ তৈরি হয়, তার লাল-নীল রং দেখেই বুঝে নেন তাতে কার্বনের মাত্রা কত।
এভাবেই অভিজ্ঞতা, দক্ষতা আর মেধাকে পুঁজি করে শূন্য থেকে মহীরুহে পরিণত হয়েছে দেশের 'হালকা প্রকৌশল শিল্প' খাত। ভাঙা জাহাজের পুরনো লোহা দিয়ে তারা তৈরি করছে দামি সব যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ। সেসব যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ সংযোজন করেই চলছে দেশের ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের কলকারখানা, বাইসাইকেল থেকে রেলগাড়ি পর্যন্ত।
পুরান ঢাকার ধোলাইখালসহ দেশের কয়েকটি জায়গার উদ্যোক্তা ও কারিগরদের এমন অভিনব উদ্ভাবনী ক্ষমতার বহু নজির রয়েছে।
কিন্তু খরচ বেশি হওয়ায় গবেষণা ও উন্নয়নের (আরঅ্যান্ডডি) দিকে মন দিতে পারছেন না এ শিল্পের উদ্যোক্তারা। তাঁরা বরং রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে (অন্যকে অনুসরণ) দক্ষ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এ শিল্পকৌশল প্রচলিত। এ প্রসঙ্গে একজন উদ্যোক্তা বলেন, 'এ শিল্পে করপোরেট বিনিয়োগ না থাকায় আরঅ্যান্ডডি সম্ভব হচ্ছে না। তা ছাড়া নয়া প্রযুক্তি আমদানি করে কাজ করতে গেলেও আমাদের জন্য তা লাভজনক হবে না, বরং ২০ থেকে ৫০ বছরের পুরনো প্রযুক্তি পেলেই আমরা খুশি। তাই আমাদের গবেষণার প্রয়োজন নেই। ভারত, চীনসহ বিভিন্ন দেশ অনেক গবেষণা করছে। আমরা তাদের অনুসরণ করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।'
এ শিল্পের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্বাধীনতার আগে ঢাকার ধোলাইখালে বিহারি ও পাঞ্জাবি মালিকরা গাড়ি মেরামতের জন্য সাত-আটটি ওয়ার্কশপ গড়ে তুলেছিলেন। ওই সময় সারা দেশে এ ধরনের মেরামত কারখানা ছিল ৫০টিরও কম। তখন এসব কারখানায় যাঁরা শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন, স্বাধীনতার পর তাঁরাই উদ্যোক্তা হয়ে নতুন নতুন ওয়ার্কশপ গড়ে তোলেন। তৈরি করেন নানা ধরনের যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ। কিন্তু এ পর্যন্ত এ খাতের উদ্যোক্তারা সরকারের কাছ থেকে কার্যত কোনো সহায়তা পাচ্ছেন না। প্রয়োজন পড়েনি ব্যাংক ঋণেরও। পোশাক খাতসহ
অন্যান্য শিল্পের মতো এ খাতের উদ্যোক্তাদের সমিতি দল বেঁধে যেমন সরকারের কাছে দাবিনামা তুলে ধরেনি, তেমনি সরকারগুলোও কোনো অনুকম্পা দেখায়নি এ খাতের বিকাশে। তা সত্ত্বেও দেশের চাহিদার প্রায় ৫০ শতাংশ পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি করছেন এ শিল্পের উদ্যোক্তারা। আর দেশের বাজারে এ শিল্পের এতটাই চাহিদা যে, ক্রেতারা প্রায়ই যন্ত্রাংশ তৈরির জন্য উদ্যোক্তাদের অগ্রিম অর্থ দিয়ে বুকিং দিয়ে রাখেন।
হালকা প্রকৌশল শিল্পমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্ডাস্ট্রিজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিইআইওএ) সভাপতি আবদুর রাজ্জাক কালের কণ্ঠকে বলেন, এ শিল্পে সারা দেশে গড়ে উঠেছে ৪০ হাজারেরও বেশি কারখানা। এর মধ্যে ৩৬ হাজার প্রতিষ্ঠান রিপেয়ারিং সার্ভিসিং করে থাকে। বাকি প্রায় চার হাজার কারখানা নতুন যন্ত্র উৎপাদন করে। অথচ পুরো সেক্টরে ৫০ জন ইঞ্জিনিয়ারও খুঁজে পাওয়া যাবে না। অদক্ষ, অর্ধশিক্ষিত কারিগরদের হাতেই তৈরি হচ্ছে মূল্যবান সব যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ। তিনি আরো জানান, সরাসরি ছয় লাখ লোক কর্মরত হালকা প্রকৌশল শিল্পে। এ শিল্পে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। বছরে নতুন যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ উৎপাদন হচ্ছে ১২ হাজার কোটি টাকার। ভাঙাচোরা লোহালক্কড় থেকে তৈরি এসব যন্ত্র ও যন্ত্রাংশে মূল্য সংযোজন গড়ে ৮০ শতাংশেরও বেশি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মূল্য সংযোজন হাজার গুণ পর্যন্ত হয়। উৎপাদন ও বিপণনের সঙ্গে মেরামত যোগ করলে এ খাতের বার্ষিক টার্নওভারের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিভিন্ন শিল্প খাত ও পরিবহন সেক্টরের প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের প্রায় ৫০ শতাংশ সরবরাহ হচ্ছে এ শিল্প থেকে। দুই-আড়াই দশক আগেও এর পুরোটাই ছিল আমদানিনির্ভর। যন্ত্রাংশ ছাড়াও আস্ত নতুন যন্ত্রও তৈরি হচ্ছে ঢাকার ধোলাইখাল, বগুড়া ও যশোরের বিভিন্ন কারখানায়। এসব রপ্তানিও হচ্ছে। প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৩০ কোটি ডলার আয় হচ্ছে এ খাতের রপ্তানি থেকে। জিডিপিতে এ শিল্পের অবদান প্রায় ২ শতাংশ বলে বিইআইওএ জানায়। তাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশ বছরে সাত কোটি ৪০ লাখ ডলারের গাড়ির যন্ত্রাংশ আমদানি করে। আর হালকা প্রকৌশল শিল্প থেকেই দেশের বাজারে সরবরাহ করা হয় সাত কোটি ৫০ লাখ ডলারের যন্ত্রাংশ।
ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি), ইউকে ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ও নরওয়ে সরকারের সহযোগিতায় সাম্প্রতিক এক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৫০ হাজার অতি ছোট এবং ১০ হাজার ক্ষুদ্র ও মাঝারি আয়তনের হালকা প্রকৌশল শিল্পে কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা ছয় লাখ। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অন্য এক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, এ শিল্পে কারখানার সংখ্যা ৪০ হাজার আর কর্মরত শ্রমিক আট লাখ।
হালকা প্রকৌশল শিল্পে প্রায় ৩ হাজার ৮০০ রকমের যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনে (বিসিক) নিবন্ধিত এক হাজার ২০০ উদ্যোক্তা বিভিন্ন সরকারি-আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানে সাবকন্ট্রাক্টের মাধ্যমে যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ সরবরাহ করছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে রেলওয়ে, তিতাস, বাখরাবাদ ও জালালাবাদ গ্যাস কম্পানি, চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএ), বন্দর কর্তৃপক্ষ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, সিভিল এভিয়েশন, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি), বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশন (বিটিএমসি), বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন (বিজিএমসি) ইত্যাদি। যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ তৈরি করা ছাড়াও মেরামতের প্রায় ৮০ শতাংশ কাজই করছেন এ শিল্পের উদ্যোক্তারা।
বিইআইওএর সভাপতি আবদুর রাজ্জাক, নিপুণ ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের মালিক আবুল হাশিম, দিদার ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী বাচ্চু মিয়াসহ বিভিন্ন উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্বাধীনতার আগে হালকা প্রকৌশল শিল্পে বাঙালিদের তেমন অবদান ছিল না। বিহারি ও পাঞ্জাবি উদ্যোক্তাদের হাতে ঢাকার ধোলাইখালে ইউনাইটেড ইঞ্জিনিয়ারিং, মডেল ইঞ্জিনিয়ারিং, বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং, ঢাকা ইঞ্জিনিয়ারিং ও মমিন ওয়ার্কশপ গড়ে ওঠে। অবাঙালিদের এসব প্রতিষ্ঠানে পুরান ঢাকার মানুষ শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করে। ওই সময় পাটকলের যন্ত্রাংশ তৈরি করত চট্টগ্রামের ইস্পাহানি ও গালফ হাবিব নামের দুটি প্রতিষ্ঠান। উত্তরাঞ্চলের যানবাহনের যন্ত্রাংশ তৈরি ও মেরামতের জন্য রংপুরে একটি ওয়ার্কশপ ছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রাক্কালে কারখানার মালিকরা শ্রমিকদের হাতে দায়িত্ব দিয়ে দেশ ছাড়েন। তাঁদের অনেকে এখনো সেসব কারখানা চালাচ্ছেন। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় ইস্পাহানি ও গালফ হাবিব বন্ধ হয়ে যায়। যুদ্ধের পর পাটকলগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ যন্ত্রাংশের অর্ডার আসতে থাকে ঢাকার ধোলাইখালের কারখানাগুলোতে। আগে থেকে ধোলাইখালে কাজ করা শ্রমিকরা তখন নতুন নতুন ওয়ার্কশপ স্থাপন করে যন্ত্রাংশ তৈরির কাজ শুরু করেন।
আবদুর রাজ্জাক বলেন, এ শিল্পে সরকারের তেমন কোনো সহযোগিতা নেই। শুল্কমুক্তভাবে কাঁচামাল ও প্রযুক্তি আমদানি, স্থানীয় বাজার থেকে কাঁচামাল সংগ্রহের ক্ষেত্রে ভ্যাট মওকুফ করা কিংবা নিজেদের উৎপাদিত যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ বিপণনেও ভ্যাট অব্যাহতি মেলেনি। ফলে ১০০-২০০ বছরের পুরনো হস্তচালিত মেশিনেই যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ তৈরি করতে হচ্ছে। দু-তিন বছর আগে কেবল রপ্তানি আয়ের ওপর ১০ শতাংশ হারে প্রণোদনা ঘোষণা করে সরকার। তাতে এ খাতের ব্যবসায়ীরা সব মিলিয়ে বছরে পান মাত্র ৫০-৬০ লাখ টাকা।
উদ্যোক্তাদের আরেকটি দাবি, কৃষি ও আইটি খাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে বিনা সুদে ঋণের তহবিল (ইইএফ ফান্ড) আছে, সেখানে হালকা প্রকৌশল শিল্পকেও অন্তর্ভুক্ত করা হোক বা ওই তহবিলের মতো এ শিল্পের জন্যও একটি তহবিল গঠন করা হোক।
শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়ার কাছে জানতে চাওয়া হলে কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, 'দেশে হালকা প্রকৌশল শিল্প থেকে বড় কিছু গড়ে ওঠার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আমরা এটা খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। শিল্পনীতিতে ছোট, মধ্য ও বড় কারখানা গড়ে তোলার যে পরিকল্পনা আছে, সেখানে এ শিল্পকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। এমনকি হালকা প্রকৌশল শিল্পপল্লী গড়ে তোলার পরিকল্পনাও সরকারের আছে।'

বাংলাদেশের সঙ্গে পর্যটন শিল্পের বিকাশে কাজ করতে আগ্রহী ভুটান

ফররত ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লিওনচেন জিগমে ওয়াই থিনলে বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে পর্যটন শিল্পের বিকাশে তাঁর সরকার ঢাকার সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে আগ্রহী। বঙ্গভবনে গতকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সঙ্গে সৌজন্য দেখা করেন।
প্রধানমন্ত্রী থিনলে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানকে বলেন, 'আমাদের আছে পাহাড়-পর্বত আর আপনাদের আছে সমুদ্র। ফলে আকর্ষণীয় বাংলাদেশ-ভুটান ট্যুরিজম প্যাকেজ প্রস্তাব দেওয়ার মাধ্যমে আমরা বিপুল বিদেশি পর্যটককে আকৃষ্ট করতে পারি।' খবর বাসসের।
বৈঠককালে রাষ্ট্রপতি ভুটানের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ ভুটানকে তার অন্যতম ঘনিষ্ঠ বন্ধু মনে করে। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় বাংলাদেশকে রাষ্ট্র হিসেবে প্রথম স্বীকৃতি দেওয়া দুটি দেশের মধ্যে অন্যতম ছিল ভুটান। রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে দেশটির চতুর্থ রাজা জিগমে সিংয়ে ওয়াংচুককে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী তাঁর দেশকে ট্রানজিট সুবিধা দেওয়ায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সাক্ষাৎকালে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী লিওনপো জাংলে ডুকপা ও অন্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ছিলেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপঙ্কর তালুকদার এবং রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সচিবরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
'পাশ্চাত্য মডেলে সুখ-সমৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নয়'
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক জানান, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লিওনচেন জিগমে ওয়াই থিনলে বলেছেন, পাশ্চাত্য মডেল দিয়ে সুখ-সমৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব নয়। পাশ্চাত্য মডেল দীর্ঘমেয়াদি এবং বাস্তবসম্মতও নয়। এ অঞ্চলের মানুষের সুখ-সমৃদ্ধির জন্য আলাদা কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। এই কাঠামো অর্থনৈতিক ও সামাজিক অনুষঙ্গগুলোর ওপরও গুরুত্ব দেবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে আয়োজিত 'গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস' শীর্ষক এক বক্তৃতায় ভুটানের প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি জানান, ভুটান এই দর্শন দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে এবং জনগণ এর ফল ভোগ করছে। সবাই মিলে ভালো থাকাই হচ্ছে সুখ। সুখ অর্জনের জন্য সবার জীবনধারাও পাল্টে ফেলতে হবে। এই অঞ্চলের মানুষ যা চায় সেটাই করতে হবে।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটলেও মানুষ অসুখী রয়ে গেছে। কাজেই প্রতিটি মানুষের সুখের জন্য আলাদা প্যারাডাইস গড়ে তুলতে হবে। জিডিপি অনুসারে এগিয়ে গেলে এ অঞ্চলের মানুষ সুফল পাবে না। তাই জিডিপির ধারণা বাদ দিতে হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পারস্পরিক সম্পর্কসহ নানাবিধ কাজে রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে। কোনো রাজনৈতিক দলের জন্য কাজ না করে মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।

নগরী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে 'আনন্দ প্রেক্ষাগৃহ' by আপেল মাহমুদ

০ বছর বয়সী অবাঙালি খায়রুল আনাম ফার্মগেটের আনন্দ প্রেক্ষাগৃহের সামনে বসে পান-সিগারেট বিক্রি করছিলেন। গত দুই মাস আগে প্রেক্ষাগৃহটি মালিকপক্ষ লে-অফ ঘোষণা করার পর চাকরি চলে গেলেও হলের মায়া ত্যাগ করতে পারেননি।

এ কারণে পান-সিগারেটের ডালা নিয়ে সেখানে বসেছেন। তিনি আনন্দ প্রেক্ষাগৃহে যন্ত্রচালক হিসেবে প্রায় ৩০ বছর চাকরি করেন। তাঁর মতো আরো প্রায় ৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর এমনই পরিণতি হয়েছে। সংসার কিভাবে চলবে, তা নিয়েও তাঁদের চিন্তার অন্ত নেই। অচিরেই সেখানে বহুতল আধুনিক বিপণিবিতান নির্মাণকাজ শুরু হবে।
জানা যায়, বর্তমান মালিকপক্ষ প্রেক্ষাগৃহের চেয়ে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণকে লাভজনক মনে করছে। কেউ কেউ বলছেন, প্রেক্ষাগৃহ ভেঙে সেখানে বিপণিবিতান গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ কারণে ইতিমধ্যে প্রেক্ষাগৃহে কর্মরত ৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর দেনা-পাওনা পরিশোধ করা হয়েছে। কর্মচারী মো. সৈয়দ জানান, তাঁরা কয়েকজন বর্তমানে প্রেক্ষাগৃহের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্বে রয়েছেন। ব্যবস্থাপক শামসুল আলম প্রেক্ষাগৃহটি পুনরায় চালুর কথা জানালেও কখন চালু হবে সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি।
চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নগরীর কেন্দ্রস্থল ফার্মগেটে অবস্থিত আনন্দ প্রেক্ষাগৃহটি বন্ধ হয়ে গেলে নগরবাসীর বিনোদনের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়বে। ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত আনন্দ প্রেক্ষাগৃহ দীর্ঘ ৪২ বছর ধরে চলচ্চিত্র প্রদর্শন করে দর্শকদের মনে স্থান করে নিয়েছিল। অনেক কালজয়ী ও ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র ওই প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শন করা হয়। পাক ফিল্ম করপোরেশন নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার জাহেদ আসগর চৌধুরী এবং রাশেদ আসগর চৌধুরীর প্রচেষ্টায় ঊনসত্তর সালের গণআন্দোলনের সময় আনন্দ প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণ করেন। আনন্দ প্রেক্ষাগৃহের রমরমা ব্যবসায়িক অবস্থার কারণে পরবর্তী সময়ে একই ভবনে ছন্দ নামে আরেকটি প্রেক্ষাগৃহ সংযোজন করা হয়। দুই প্রেক্ষাগৃহই তখন রাজধানীবাসীর কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পায়। তবে আনন্দ প্রেক্ষাগৃহের সঙ্গে ছন্দ সংযোজনের বিষয়টি ছিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সত্য সাহার সুপারহিট চলচ্চিত্র 'অশিক্ষিত' মুক্তির মাধ্যমে ছন্দ প্রেক্ষাগৃহের জমজমাট উদ্বোধন হয়েছিল।
জানা যায়, চট্টগ্রামের জাহেদ আসগর চৌধুরী এবং রাশেদ আসগর চৌধুরীর চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রদর্শন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। চট্টগ্রামে খুরশীদ মহল ও নূপুর প্রেক্ষাগৃহের পাশাপাশি তাঁরা ঢাকায় প্রথমে আনন্দ পরে ছন্দ প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণ করেন। পাক ফিল্ম করপোরেশন নামে একটি প্রোডাক্টশন হাউসের মাধ্যমে তাঁরা 'পালাবদল', 'পিতাপুত্র' ও 'অভিশাপ' নামে কয়েকটি চলচ্চিত্রও নির্মাণ করেন। কিন্তু নানা কারণে তাঁরা চলচ্চিত্রাঙ্গন থেকে ধীরে ধীরে দূরে চলে যান। প্রায় ২০ বছর আগে তাঁরা চলচ্চিত্র ব্যবসা থেকে নিজেদের গুটিয়ে গার্মেন্ট ব্যবসা শুরু করেন।
তৎকালীন লিকার ব্যবসায়ী সম্রাট শাহজাহান ও শফিউল্লাহ রানা তাঁদের কাছ থেকে আনন্দ প্রেক্ষাগৃহ কিনে নেন। পরে সম্রাট শাহজাহান তাঁর অংশ বিক্রি করে চলে যান। শফিউল্লাহ রানা বর্তমানে দেশ-বিদেশে নানা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। এ অবস্থায় তিনি প্রেক্ষাগৃহকে আর লাভজনক মনে করছেন না। বেশ কিছু দিন ধরেই তাঁর মালিকানার আনন্দ প্রেক্ষাগৃহের প্রায় ১৭ কাঠা জমি বিক্রির চেষ্টা চলছিল। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা। নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন সম্প্রতি কিনে নিয়েছেন বলে তাঁর একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে। তবে প্রেক্ষাগৃহের মালিকপক্ষ এ কথা অস্বীকার করে জানিয়েছে, প্রথমে আনন্দ প্রেক্ষাগৃহের জমি বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে সে সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়েছে। চলচ্চিত্র গবেষক অনুপম হায়াৎ বলেন, রাজধানী থেকে ধীরে ধীরে প্রেক্ষাগৃহের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ঢাকার প্রথম প্রেক্ষাগৃহ শাবিস্তান থেকে শুরু করে লায়ন, রূপমহল, নাগর মহল, তাজমহল, গুলিস্তান, নাজ ও শ্যামলী ভেঙে সেখানে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। আরো কিছু প্রাচীন প্রেক্ষাগৃহ ভাঙার পরিকল্পনায় রয়েছে। একের পর এক প্রেক্ষাগৃহ হারিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, 'চলচ্চিত্র ব্যবসার মন্দা ও জমির মূল্য অতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় ঢাকাসহ সারা দেশের অনেক প্রেক্ষাগৃহ হারিয়ে যাচ্ছে।

প্রকল্প বাস্তবায়নে বিদেশি ঋণের ব্যবহার কমছে by রুহুল আমিন রানা

প্রকল্প গ্রহণকালে বৈদেশিক সহায়তা পেতে উৎসাহ ও উদ্যোগের কমতি নেই। অনেক দেন-দরবারের পর নানা শর্তের বেড়াজালে মেলে বিপুল ঋণ। তবে ঋণের বড় অঙ্কের অর্থ সময়মতো কাজে লাগানো যাচ্ছে না। প্রকল্প শুরু করতে বাস্তবায়নকারী সংস্থার ঢিলেমি, নানা ছুতোয় দাতাদের অর্থ ছাড়ে বিলম্ব এবং সরকারের দীর্ঘ অনুমোদন প্রক্রিয়ার কারণে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বৈদেশিক সহায়তার অর্থ ব্যবহারের পরিমাণ কমছে।
এ কারণে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) বৈদেশিক সহায়তা প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা কমে যাচ্ছে। সরকারের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিদ্যুৎ খাতসহ কৃষি, পানিসম্পদ, পরিবহন, স্বাস্থ্য এবং বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে চলতি অর্থবছরের (২০১০-১২) আরএডিপিতে উল্লেখযোগ্যমাত্রায় বৈদেশিক সাহায্য কমতে পারে বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৈদেশিক ঋণ সহায়তা রয়েছে_এমন প্রকল্পে দাতা গোষ্ঠীর শর্তের শেষ নেই। বাস্তবায়নের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দাতাদের নানা পরামর্শ ও সুপারিশ মেনে কাজ করতে হয়। দরপত্র আহ্বান, পরামর্শক ও বিশেষজ্ঞ নিয়োগ, কেনাকাটা এমনকি কোনো দেশ থেকে পণ্য আমদানি করা হবে সেটি নির্ধারণেও দাতাদের শর্ত মেনে চলতে হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রতিটি ধাপে এগুলোকে উটকো ঝামেলা হিসেবেই মনে করে বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো। এসব সমস্যা এড়াতেই বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহ কমছে।
পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তথ্য অনুযায়ী অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে এডিপিতে বরাদ্দ ১৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকার বৈদেশিক সহায়তার বিপরীতে মাত্র দুই হাজার ২৬১ কোটি টাকা ব্যবহার করা সম্ভব হয়েছে। গত অর্থবছরে একই সময়ে ১২ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকার বিপরীতে ব্যয় হয়েছিল দুই হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা। আইএমইডির কর্মকর্তাদের মতে, উন্নয়ন সহযোগীরা নিজস্ব নীতি-নির্দেশনা অনুযায়ী অর্থ ছাড় করছে। এ কারণে প্রশাসনিক জটিলতায় দীর্ঘসূত্রতা বাড়ছে। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের এডিপিতে সরকার নিজস্ব অর্থায়নের বেশ কিছু বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব কারণে এ বছর বিদেশি সহায়তার ব্যবহার কমে গেছে। সরকারের নিজস্ব অর্থে পরিচালিত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে আগ্রহ বেশি মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আরএডিপিতে বৈদেশিক সহায়তা কমলেও প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে আরো প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করেছে। চলতি অর্থবছরে সরকার সাড়ে ৩৮ হাজার কোটি টাকার এডিপি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করে। এর মধ্যে সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে এডিপির ৬০ শতাংশ বা ২৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা এবং বাকি ৪০ শতাংশ বা ১৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা বৈদেশিক সহায়তা হিসেবে জোগান দেওয়ার কথা ছিল। আরএডিপিতে বৈদেশিক বরাদ্দ প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা কমে যাওয়ায় এডিপি বাস্তবায়নে সরকারি তহবিলের হার বাড়ছে বলে কর্মকর্তারা জানান।
অর্থনৈতিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বৈদেশিক সহায়তার ক্ষেত্রে আরএডিপিতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ কমছে বিদ্যুৎ খাতে। এ খাতে এডিপির তুলনায় বৈদেশিক সাহায্য কমছে ৫৩২ কোটি টাকা। এডিপিতে দুই হাজার ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে আরএডিপিতে এ খাতে এক হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া পরিবহন খাতে বৈদেশিক সহায়তা দুই হাজার ৫০৯ কোটি থেকে ৩৪৯ কোটি কমিয়ে আরএডিপিতে দুই হাজার ১৬১ কোটি টাকা, স্বাস্থ্য খাতে ৪৯৬ কোটি টাকা কমিয়ে এক হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা, শিক্ষা ও ধর্ম খাতে এক হাজার ৮৭১ কোটি থেকে কমিয়ে এক হাজার ৭৮৪ কোটি টাকা, কৃষি খাতে ৫১৫ কোটি থেকে কমিয়ে ৪৪৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। অন্য সব খাতের মধ্যে পল্লী উন্নয়ন খাতে এক হাজার ৫৫৩ কোটি থেকে হ্রাস করে এক হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা, পানিসম্পদ খাতে ৫০৫ কোটি থেকে কমিয়ে ৪৩৮ কোটি টাকা, বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তি খাতে ১৯ কোটি টাকা কমিয়ে তিন কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

সা’দত আলি আখন্দ সাহিত্য পুরস্কার প্রদান

বাংলা সাহিত্যের উৎকর্ষ সাধনের লক্ষে বাঙালি মুসলমানের ‘বুদ্ধির-মুক্তি’ আন্দোলনের অন্যতম প্রবক্তা সা’দত আলি আখন্দের নামে বাংলা একাডেমী ১৯৯০ সালে ‘সা’দত আলি আখন্দ সাহিত্য পুরস্কার’ প্রবর্তন করে। এবার কবি মহাদেব সাহা সা’দত আলি আখন্দ সাহিত্য পুরস্কার ২০১০-এ ভূষিত হয়েছেন।

গতকাল মঙ্গলবার বাংলা একাডেমীর সেমিনার হলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তাঁর হাতে পুরষ্কার তুলে দেয়া হয়। পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমীর সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী।
কবীর চৌধুরী বলেন, কবি মানেই যোদ্ধা। তাঁরা সমাজের সকল অসঙ্গতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন এবং প্রেমের জাদুস্পর্শের হাওয়ায় মানুষকে মোহিত করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের কবিতাঙ্গনে কবি মহাদেব সাহার স্থান প্রথম সারিতে। তাঁর কবিতা স্নিগ্ধ ও নিম্নকণ্ঠের অথচ শক্তিশালী প্রতিবাদের ভাষায় সমৃদ্ধ।
স্বাগত ভাষণে শামসুজ্জামান খান বলেন, সা’দত আলি আখন্দ সাহিত্য পুরস্কার দেশের সাহিত্যাঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার। বহুমাত্রিক বিবেচনায় কবি মহাদেব সাহাকে এই পুরস্কার প্রদান করা হলো। এই পুরস্কার বাংলা একাডেমীর গুরুত্ব ও মর্যাদা বহুলাংশে বৃদ্ধি করেছে।
পুরস্কারপ্রাপ্তির অনুভূতি ব্যক্ত করে কবি মহাদেব সাহা বলেন, আজকের দিনটি আমার কাছে অত্যন্ত আনন্দের। আমি পুরস্কারের জন্য লিখি, মানুষের প্রশংসা ও ভালোবাসার জন্য লিখি। এটি আমার উপলব্ধি। কারণ পুরস্কার মানুষকে কাজের অনুপ্রেরণা যোগায়, তার কর্মের মূল্য দেয় এবং তাকে ঋদ্ধ করে। তাই পুরস্কারও সার্থক কাজের একটি অংশ। তিনি বলেন, আমি আমার সকল পুরস্কার এদেশের মানুষের জন্য উৎসর্গ করতে চাই। আজকের পুরস্কারটিও এদেশের মানুষ বিশেষ করে যাঁরা দেশের মুক্তির জন্য প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন তাঁদের অমর স্মৃতির প্রতি উৎসর্গ করছি।
সা’দত আলি আখন্দ কন্যা তাহমিনা হোসেন বলেন, জীবিকার্জনে সা’দত আলি আখন্দ পুলিশের চাকরিতে নিয়োজিত থাকলেও সাহিত্যের প্রতি ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাকে সফলতায় রূপ দেওয়ায় বাংলা একাডেমীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।

ব্যঙ্গচিত্রে মূর্ত হলো ঢাকার দৈনন্দিন জীবন
গ্রাম থেকে ঢাকা শহরে প্রবেশ করছেন এক যুবক। প্রবেশের আগে তাকে স্বাগত জানানোর পালা। কখনও অজ্ঞান পার্টি, কখনও মলমপার্টি, লোডশেডিংসহ নিত্যদিনের ঢাকার নানাবিদ অসংগতি তাকে স্বাগত জানালো। অর্থ্যাৎ ব্যঙ্গচিত্রর মাধ্যমে শিল্পী আবু হাসান তুলে ধরেছেন ঢাকার যাপিত জীবন। প্রদশনীর অন্য ছবিগুলোর বিষয় ‘ঢাকা নগরী’।
নগরবাসীর যাপিতজীবনের নানা সমস্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবের উন্মুক্ত চত্বরে আয়োজন করা হয়েছিলো তিনদিনব্যাপী ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনী। ব্যঙ্গচিত্রশিল্পীদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ কার্টুনিস্ট এসোসিয়েশন’ আয়োজিত এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন শিল্পী কাইয়ূম চৌধুরী। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী, শিশির ভট্টাচার্য এবং আহসান হাবীব। আলোচিত এ প্রদর্শনীর গতকাল ছিলো শেষ দিন।
ঢাকা নিয়ে নগরবাসীর নিত্য জটিলতা, দুর্ভোগ, যানজটসহ নানা বিষয় ব্যঙ্গচিত্রগুলোতে বিদ্রুপের মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন শিল্পীরা। এর মধ্যে রয়েছে: আকাশ ছোঁয়ার নেশায় মত্ত ভবনগুলোর ভূমিকম্পভীতি, ২০৫০ সালের ঢাকা: যেখানে নেই কোন গাছ; স্পেসস্যুট পড়ে হাটছে মানুষ। বুড়িগঙ্গার পাড়ে অক্সিজেন মাস্ক পড়ে প্রেমিকজুটি। পঙ্খিরাজ ঘোড়ায় চড়ে ঢাকার যানজটের কাল্পনিক দৃশ্য। ব্যঙ্গচিত্রে উঠে এসেছে আবাসনের নামে মুরগীর খোপ, লোকাল বাস, মশা নিধনে ঘুমন্ত সিটিকর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোরগুলোর নাজুক পরিস্থিতি, বিদ্যুৎ বিভ্রাটসহ রাজধানীর নাগরিক সকল সমস্যা।

অলিয়ঁস ফ্রঁসেজে মোনালিসা ও গুয়ের্নিকা
একটি উঁচু পাহাড় ঢেকে আছে হলুদাভ তৃণলতায়, এসবের মাঝে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বেশ কয়েকটি লম্বা গাছ। পাহাড়টির পাশ ঘেসে বয়ে যাওয়া মেঠো পথে আছে কয়েকজন পথিক। প্রদর্শনীর শুরুতেই আছে এমন একটি চিত্রকর্ম। এটি বিশ্ববিখ্যাত ফরাসি চিত্রকর অগাস্ত রেনোয়ার ‘পাথ উইন্ডিং থ্রো দ্য হাই গ্রাস’-এর পুনরুৎপাদন। ইউরোপের বিখ্যাত ১৩ জন শিল্পীর চিত্রকর্মের পুনরুৎপাদন প্রর্দশিত হচ্ছে ধানমন্ডির লা গ্যালারিতে। প্রদর্শনীর শিরোনাম ‘পেইন্টিং অব দ্যা পাস্ট’। আয়োজন করেছে ‘আর্ট ক্যাফে’। প্রদর্শনীতে আরও যাঁদের চিত্রকর্মের পুনরুৎপাদন স্থান পেয়েছে, তাঁরা হলেন লিওনার্দো দা ভিঞ্চি, ভিনসেন্ট ভ্যানগগ, এডগার দেগা, পাবলো পিকাসো, সালভাদর দালি, পল গগাঁ, পল সেজান, ক্লদ মনেঁ, ক্যামিল পিসারো, আলফ্রেড সিসলি, পল ক্লি ও হেনরি মাতিস। এতে প্রায় অর্ধশত চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে। এসবের মধ্যে লিওনার্দো দা ভিঞ্চির বিশ্ববিখ্যাত মোনালিসা; পাবলো পিকাসোর গুয়ের্নিকা ও ওল্ড গিটারিস্ট ; সালভাদর দালির পার্সিস্টেন্স অব মেমোরি, ভিনসেন্ট ভ্যানগগের স্টারি নাইট, ইয়েলো হাউজ; এডগার দেগার ব্যালে ড্যান্সার; পল ক্লির মাজারো; পল গগাঁর সেল্ফ পোর্ট্রেট উইথ ইয়েলো ক্রাইস্ট এবং পল সেজানের স্টিল লাইফ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। প্রদর্শনী চলবে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত।

টিআইবির তিন কর্মকর্তাকে সুপ্রিম কোর্টে আমন্ত্রণ

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) পাঠানো উত্তরসংবলিত প্রশ্নগুলো অনুধাবন ও মূল্যায়নের জন্য আলোচনা করতে চিঠি পাঠিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। চিঠিতে কাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটায় জাজেস লাউঞ্জে টিআইবির চেয়ারম্যানসহ তিন শীর্ষ কর্মকর্তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
আজ বুধবার সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. বদরুল আলম ভূঞার স্বাক্ষর করা একটি চিঠি টিআইবির চেয়ারম্যান এম হাফিজউদ্দিন খান বরাবর পাঠানো হয়। এই চিঠির অনুলিপি টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ ও নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বরাবর পাঠানো হয়েছে।
কাল এই তিন শীর্ষ কর্মকর্তা যদি আসতে না পারেন, তবে কবে নাগাদ তাঁরা আসতে পারবেন তা জানাতে চিঠিতে অনুরোধ করা হয়েছে।
সেবা খাতে দুর্নীতিবিষয়ক টিআইবির জাতীয় খানা জরিপের উত্তরসংবলিত প্রশ্নমালার ছাপানো কপি (হার্ড কপি) সুপ্রিম কোর্টে ৯ জানুয়ারি পাঠানো হয়। খানা জরিপ ২০১০-এ প্রাপ্ত বিচার খাত-সম্পর্কিত উত্তরসংবলিত প্রশ্নমালার ৬৫০টি হার্ড কপি পাঠানো হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. বদরুল আলম ভূঞা ৬ জানুয়ারি জরিপের হার্ড কপি চেয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বরাবরে চিঠি পাঠান।
জানা যায়, গত ২৩ ডিসেম্বর প্রকাশিত টিআইবির সেবা খাতে দুর্নীতিবিষয়ক জাতীয় খানা জরিপ ২০১০-এর ফলাফলে দেখা যায়, বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে ৮৮ শতাংশ মানুষকেই ঘুষ দিতে হয় এবং তাদের নানা অনিয়মের শিকার হতে হয়। গত ২৮ ডিসেম্বর টিআইবির সাম্প্রতিক আলোচিত জরিপের প্রতিবেদন ও বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত চেয়ে দুর্নীতির নজরদারি করা সংস্থাটিকে সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে প্রথম চিঠি পাঠানো হয়। টিআইবি ২৯ ডিসেম্বর ওই সব তথ্য ও প্রতিবেদন সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়। ওই দিন টিআইবির জরিপের তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনার জন্য হাইকোর্ট বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতিকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়।
এরপর ২ জানুয়ারি স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বিচার বিভাগের দুর্নীতি সম্পর্কে টিআইবির করা প্রশ্ন এবং খানার দেওয়া উত্তর পাঠানোর জন্য সুপ্রিম কোর্ট টিআইবিকে চিঠি দেন। এতে বলা হয় বিচার বিভাগ-সম্পর্তিক দুর্নীতির খানা জরিপ, তথ্য-উপাত্তসংবলিত খানা জরিপ, ২০১০-এর বিচার বিভাগ-সংক্রান্ত দুর্নীতির ও হয়রানির প্রতিবেদনটি অস্পষ্ট ও অসম্পূর্ণ। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৪ জানুয়ারি ‘সেবা খাতে দুর্নীতি: জাতীয় খানা জরিপ ২০১০’-এর প্রশ্নপত্রের একটি নমুনা কপি এবং বিচার বিভাগ সম্পর্কে উত্তরদাতা খানা (পরিবার) কর্তৃক প্রদত্ত উত্তর সমন্বিত একটি সিডি পাঠায় টিআইবি।
এরপর ৬ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট বিচার বিভাগের দুর্নীতি-সম্পর্কিত উত্তরসংবলিত প্রশ্নমালা (হার্ড কপি) ও উত্তর চেয়ে টিআইবিকে চিঠি দেন। সূত্র জানায়, ওই চিঠিতে বলা হয় কম্পিউটারে প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার না থাকায় সেই সিডি খোলা যায়নি। তাই ছাপা কপি চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বিচার বিভাগের দুর্নীতি-সম্পর্কিত উত্তরসংবলিত প্রশ্নমালা (হার্ডকপি) এবং ওই অভিযোগ-সম্পর্কিত অন্য কোনো তথ্য প্রাসঙ্গিক মনে হলে তা-ও পাঠাতে অনুরোধ করা যাচ্ছে। বিষয়টি জরুরি হিসেবে বিবেচনা করার জন্যও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

ভারতীয়রা ধনী হচ্ছে হারাচ্ছে স্বাস্থ্য

ভারতীয়রা ধনী হচ্ছে। কিন্তু তারা হারাচ্ছে স্বাস্থ্য। অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপনে। যা তাদের জীবন থেকে কয়েক বছর পর্যন্ত কেড়ে নিতে পারে। এতে দেশটির অর্থনীতির বিকাশ হুমকির মুখে পড়তে পারে। ব্রিটেনের ল্যানসেট ম্যাগাজিনে গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে এ দাবি করা হয়েছে।

এদিকে ভারতের গোয়ার সাংগথ সেন্টারের ভিক্রম প্যাটেলের নেতৃত্বে দীর্ঘসূত্রী রোগ ও জখম বিষয়ে করা অপর এক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, আর্থসামাজিক অবস্থার দ্রুত উন্নতি হওয়ায় ভারতীয়রা কায়িক শ্রমবিমুখ হয়ে পড়ছে। এতে স্থূলতার হার বাড়ছে। সেই সঙ্গে ডায়াবেটিক আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বেড়ে চলেছে।
পকেটে অতিরিক্ত টাকা আসার সুবাদে ভারতীয়রা ঝুঁকছে চর্বিযুক্ত খাবারের দিকে। তারা আয়েশ করছে। অপেক্ষাকৃত কম ব্যায়াম করছে। পরিণামে স্থূলতার হার বাড়ছে। শরীরে বাসা বাঁধছে নানা ধরনের রোগ। এদিকে মদ্যপান করে অনেকে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালায়। এতে দুর্ঘটনার হার বাড়ছে।
প্যাটেলদের গবেষণাপত্রে বলা হয়, ভারতে দীর্ঘসূত্রী রোগ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ার প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। বর্তমানে দেশটির প্রতি পাঁচজনের একজন দীর্ঘসূত্রী রোগে ভুগছে। প্রতি ১০ জনের একজন ভুগছে একাধিক রোগে। হূদরোগ, ক্যানসার ও ডায়াবেটিক প্রতিরোধে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারকে আরও সোচ্চার হতে হবে।
ল্যানসেট ম্যাগাজিনে প্রকাশিত গবেষণায় ‘ইন্ডিয়া: টুয়ার্ডস অ্যা ইউনিভার্স হেলথ কেয়ার সিস্টেম বাই ২০২০’ লক্ষ্য অর্জনে আরও উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। এএফপি।

সামরিক শক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে কয়েক দশক পিছিয়ে চীন

চীন বলেছে, সামরিক শক্তি ও প্রযুক্তির দিক দিয়ে তারা এখনো যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য উন্নত দেশের চেয়ে কয়েক দশক পিছিয়ে আছে এবং তারা এখনো পর্যন্ত কোনো দেশের জন্য হুমকি নয়। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রবার্ট গেটসের বেইজিং সফরের সময় এ কথা বলেছেন চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিয়াং গুয়াংলাই।

তিন দিনের সফরে চীনের উদ্দেশ্যে গত শনিবার বিমানে ওঠার পর গেটস বলেছিলেন, চীনের সামরিক শক্তি ও অস্ত্রসম্ভার বৃদ্ধিতে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন। চীন প্রথমবারের মতো রাডার ফাঁকি দিতে পারে—এমন জঙ্গি বিমান বানিয়েছে। একই সঙ্গে তাদের তৈরি আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র যুদ্ধবিমানবাহী মার্কিন রণতরীতে আঘাত হানতে সক্ষম। এসব কারণে তিনি মার্কিন অস্ত্রসম্ভার বৃদ্ধি ও উন্নতির বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করছেন।
চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিয়াং বলেন, ‘অস্ত্রের মানোন্নয়ন ও গবেষণায় আমরা যেসব পদক্ষেপ নিয়েছি, তা কোনো দেশকে লক্ষ্য করে নয় এবং এর জন্য কোনো দেশ হুমকির মুখে পড়বে না।’
চীন গত মাসে প্রথম রাডার ফাঁকি দেওয়ার উপযুক্ত জঙ্গি বিমান তৈরির ঘোষণা দেয়। গতকাল মঙ্গলবার দেশটির সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ‘জে-২০’ নামের ওই জঙ্গি বিমান সফলভাবে প্রথমবারের মতো আকাশে উড়েছে। এ সংক্রান্ত ছবিও ছাপা হয়েছে রাষ্ট্রীয় পত্রিকা গ্লোবাল টাইমস ও বার্তা সংস্থা সিনহুয়ার ওয়েবসাইটে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় চেংদু শহরের আকাশে ১৫ মিনিট ওড়ার পর সফলভাবে তা অবতরণ করে। এ ছাড়া চীন সম্প্রতি তৈরি করেছে আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র, যা যুদ্ধবিমানবাহী মার্কিন রণতরীতে আঘাত হানতে সক্ষম। এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র চীনই প্রথম তৈরি করেছে।
গেটস বলেছেন, ‘সব ক্ষেত্রেই আমরা নজর রাখছি। চীনের রণতরীবিধ্বংসী ও আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নয়নের বিষয়টি প্রতিরক্ষীমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে আমাদের উদ্বিগ্ন করে রেখেছে।’ তবে বেইজিংয়ে চীনা ও মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের বৈঠকে উভয় পক্ষই দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে যৌথ কমিটি গঠনের বিষয়ে রাজি হয়েছে।
গেটস বলেন, ‘যোগাযোগ বৃদ্ধি ও ভুল বোঝাবুঝি কমানোর লক্ষ্যে আমরা জোরালো পদক্ষেপ নিয়েছি। দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে সম্পর্ক খুবই মজবুত এবং এর সঙ্গে রাজনৈতিক পরিবর্তনের সম্পর্ক নেই।’ তাইওয়ানের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত অস্ত্র বিক্রি নিয়ে গত বছর চীন ও মার্কিন সামরিক সম্পর্কের বেশ অবনতি হয়। এ ছাড়া পীতসাগরে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ নৌ-মহড়ার তীব্র প্রতিবাদ জানায় চীন।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার চীনের প্রেসিডেন্ট হু জিনতাওয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন গেটস। এ সময় জিনতাও জানিয়েছেন, গেটসের এই সফর দুই দেশের সামরিক বাহিনীর সম্পর্কের উন্নতির ইঙ্গিত এবং এর মাধ্যমে উভয় পক্ষের মধ্যে বিনিময় বাড়বে। জবাবে গেটস জানিয়েছেন, তাঁর এই সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সামরিক সম্পর্কের দীর্ঘমেয়াদি উন্নতি হবে। এএফপি, রয়টার্স ও টেলিগ্রাফ।

টিআইবির সঙ্গে কথা বলবে সুপ্রিম কোর্ট

বিচার বিভাগের দুর্নীতি নিয়ে জরিপ প্রতিবেদনের তথ্য পাওয়ার পর এবার টিআইবি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলবে সুপ্রিম কোর্ট।
এ জন্য একটি চা চক্রের আয়োজন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবারের ওই চা চক্রে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এম হাফিজউদ্দিন খান, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য মোজাফফর আহমেদ ও নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানকে।

টিআইবির প্রতিবেদন মূল্যায়নে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের কমিটির সদস্যরা টিআইবি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। বুধবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সুপ্রিম কোর্টের উপনিবন্ধক মো. বদরুল আলম ভূঞাঁ স্বাক্ষরিত চিঠি টিআইবির ওই তিন কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে।

বদরুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৪টায় সুপ্রিম কোর্টের জাজেজ লাউঞ্জে টিআইবির প্রতিবেদন মূল্যায়নে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের কমিটির সঙ্গে অলোচনার জন্য দাওয়াত দেওয়া হয়েছে।"

তবে টিআইবি কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার বিকালে সময় দিতে না পারলে কবে পারবেন, তা জানাতেও সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে। গত ২৩ ডিসেম্বর টিআইবি প্রকাশিত এক জরিপে বলা হয়, সেবা খাতের মধ্যে বিচার বিভাগেই দুর্নীতি বেশি হয়। এর মধ্যে ঘুষ লেনদেন বেশি হয় উচ্চ আদালতে।

এরপর গত ২৮ ডিসেম্বর ওই জরিপের সংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্ত চেয়ে টিআইবিকে চিঠি দেয় সুপ্রিম কোর্ট। তবে তথ্য দেওয়ার পর তা অসম্পূর্ণ মনে করে বিস্তারিত তথ্য পাঠানোর জন্য ৩ জানুয়ারি টিআইবিকে দ্বিতীয় চিঠি দেওয়া হয়। এরপর টিআইবি জরিপ সংক্রান্ত সিডি পাঠালে তার ফাইল খোলা না যাওয়ায় গত ৬ জানুয়ারি তৃতীয় বারের মতো চিঠি পাঠায় সুপ্রিম কোর্ট।

ওই জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশের পর গত ২৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে টিআইবিপ্রধান এম হাফিজউদ্দিন খান, নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান ও গবেষক ওয়াহিদ আলমের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়। ওই দুই মামলায় তাদের জানুয়ারি মাসের দুটি আলাদা তারিখে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ রয়েছে।

প্রেম-কাতর গোয়েবলস

নাৎসি জার্মানির প্রচারবিষয়ক হোতা জোসেফ গোয়েবলস একাধিক প্রেম করছেন। খুঁড়িয়ে হাঁটা এই জার্মান নেতার অন্যতম আগ্রহ ছিল নারীদের যৌনমিলনে প্রলুব্ধ করা।

ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের ইতিহাসের অধ্যাপক পিটার লঙেরিচের লেখা একটি বইয়ে এসব কথা বলা হয়েছে। বইয়ে বলা হয়, পোলিওতে আক্রান্ত গোয়েবলস ছিলেন বিকৃত রুচির ও যৌনতায়-আচ্ছন্ন এক ব্যক্তি।
জার্মান অধ্যাপক লঙেরিচ প্রথমবারের মতো গোয়েবলসের রেখে যাওয়া ৩০ হাজারেরও বেশি নথিপত্র দেখার সুযোগ পান। এই অধ্যাপকের লেখা ৯১২ পৃষ্ঠার জোসেফ গোয়েবলস: বায়োগ্রাফি বইতে বলা হয়, ১৬ বছর বয়সে এক সহপাঠীর সৎমায়ের প্রতি আকৃষ্ট হন গোয়েবলস।
নথিপত্রগুলোতে গোয়েবলসের অন্যান্য প্রেম সম্পর্কেও বর্ণনা ছিল। ১৯১৭ সালে বনে পড়াশোনার সময় দুই নারীর সঙ্গে প্রেমের কথাও উল্লেখ ছিল সেখানে।
চেক অভিনেত্রী লিডা রারোভার প্রতিও আকৃষ্ট হন গোয়েবলস, যা হিটলারকে ক্ষুব্ধ করেছিল। পিটিআই।

এসইসি সদস্য মনসুরের পদত্যাগ

পুঁজিবাজারে অস্থিরতার পেছনে যার কয়েকটি সিদ্ধান্ত দায়ী বলে অনেকে মনে করেন, সেই মনসুর আলী পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থা- এসইসির সদস্যের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন।

সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) এক কর্মকর্তা বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, মনসুর আলী মঙ্গলবার এসইসি চেয়ারম্যান জিয়াউল হক খন্দকারের কাছে পদত্যাগপত্র দিয়েছেন।

এ বিষয়ে এসইসি চেয়ারম্যানের বক্তব্য তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে মনসুর আলীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার কার্যালয় থেকে জানানো হয়, তিনি অফিসে আসেননি। গত এক মাস ধরে পুঁজিবাজারে অস্থিরতা চলছে। এর মধ্যে দরপতনের রেকর্ড ভাঙে কয়েকবার। গত সোমবার সর্বোচ্চ দরপতন হয় ঢাকার পুঁজিবাজারে।

বলা হয়, এসইসি চেয়ারম্যান দেশের বাইরে থাকা অবস্থায় দায়িত্বপালনরত মনসুর মেম্বার মার্জিন বাড়ানো এবং নীতিমালায় কিছু পরিবর্তন আনেন। যা বাজারে দরপতন ত্বরান্বিত করে।

আর্থিক ক্ষতি সামাল দেওয়ার ক্ষমতা উইকিলিকসের নেই

যৌন হয়রানির মামলায় উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে সুইডেনে হস্তান্তর করা হবে কি না, সে ব্যাপারে আদালত পূর্ণাঙ্গ শুনানির দিন ধার্য করেছেন আগামী ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি। এ বিষয়ে শুনানির জন্য গতকাল মঙ্গলবার অ্যাসাঞ্জকে লন্ডনের আদালতে হাজির করা হয়। সংক্ষিপ্ত শুনানি শেষে আদালত এই দিন ধার্য করেন। এদিকে গতকাল ফ্রান্সে প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে অ্যাসাঞ্জ বলেছেন, আরও আর্থিক ক্ষতি সামাল দেওয়ার ক্ষমতা উইকিলিকসের নেই।
লন্ডনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে উলভিচ ক্রাউন আদালতে জেলা জজ নিকোলাস ইভান্স ১০ মিনিটের শুনানি শেষে পূর্ণাঙ্গ শুনানির এই দিন ধার্য করেন। আদালতে অ্যাসাঞ্জকে শুধু তাঁর নাম ও ঠিকানা জিজ্ঞেস করা হয়। একই আদালতে পূর্ণাঙ্গ শুনানি হবে। গতকালের শুনানিতে ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারির শুনানির সময় অ্যাসাঞ্জকে জামিনে লন্ডনের ফ্রন্টলাইন ক্লাবে (৬ ও ৭ ফেব্রুয়ারি) রাত কাটানোর অনুমতি দেওয়ার ব্যাপারেও সম্মতি দিয়েছেন বিচারক। সাংবাদিকদের পরিচালিত ওই ক্লাব থেকেই ব্রিটেনে কার্যক্রম পরিচালনা করে উইকিলিকস।
শুনানি শেষে অ্যাসাঞ্জ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আদালতের আজকের (মঙ্গলবার) পদক্ষেপে আমরা সন্তুষ্ট। উইকিলিকসের সঙ্গে আমাদের কার্যক্রম এগিয়ে চলছে।’
গত ১৬ ডিসেম্বর জামিনে মুক্ত হওয়ার পর থেকে ফ্রন্টলাইন ক্লাবের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ভন স্মিথের খামারে অবস্থান করছেন অ্যাসাঞ্জ। যৌন নিপীড়নের মামলায় সুইডেনে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানাবলে গত ৭ ডিসেম্বর লন্ডন থেকে অ্যাসাঞ্জকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গতকাল ফ্রান্সে প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে অ্যাসাঞ্জ বলেছেন, উইকিলিকস আরও আর্থিক ক্ষতি সামাল দেওয়ার অবস্থায় নেই। ফ্রান্সভিত্তিক বেতারকেন্দ্র ইউরোপ ওয়ানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অ্যাসাঞ্জ জানান, গত নভেম্বরে গোপন মার্কিন কূটনৈতিক তারবার্তা প্রকাশ শুরু করার পর থেকে প্রতি সপ্তাহে সাড়ে ছয় লাখ ডলার করে হারাচ্ছে তাঁর প্রতিষ্ঠান। তিনি বলেন, এভাবে চলতে থাকলে উইকিলিকস বেশি দিন টিকে থাকতে পারবে না। প্রতিষ্ঠানের জন্য অনলাইনে বিভিন্ন দাতার পাঠানো অর্থপ্রাপ্তি বন্ধ হয়ে যাওয়াতেই এই বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে উইকিলিকস। তবে ওয়েবসাইটটি গোপন নথি ফাঁস করা চালিয়ে যাবে বলেও জানান তিনি।
মার্কিন গোপন দলিল ফাঁস করার পর যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একাধিক অনলাইন আর্থিক প্রতিষ্ঠান উইকিলিকসের অ্যাকাউন্টে লেনদেন স্থগিত করে।
এ ছাড়া উইকিলিকসের এক বিবৃতিতে গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় মার্কিন কংগ্রেস সদস্য গ্যাব্রিয়েল গিফোর্ডসের প্রতি সহানুভূতি জানিয়েছেন অ্যাসাঞ্জ। ওই ঘটনায় নিহত ছয়জনের প্রতিও শ্রদ্ধা জানান তিনি। বিবৃতিতে অ্যাসাঞ্জ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে কয়েকজন রাজনীতিক উইকিলিকসের কর্মী ও তাঁর বিরুদ্ধে সহিংস বক্তব্য রেখেছেন। তাঁকে তালেবানের মতো খুঁজে বের করে হত্যার আহ্বান জানানো হয়েছে। এ ধরনের বক্তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য মার্কিন কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রে মৃতুদণ্ডের আশঙ্কা: জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের আইনজীবী বলেছেন, অ্যাসাঞ্জকে সুইডেন কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হলে, তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়ে দেওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। মার্কিন গোপন নথি ফাঁসের কারণ দেখিয়ে তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়া হতে পারে। এ ব্যাপারে গতকালের শুনানির নথিতে বলা হয়, মার্কিন কর্তৃপক্ষ সুইডেনের কাছ থেকে অ্যাসাঞ্জকে নিজেদের কাছে নিতে চাইতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হলে সেখান থেকে তাঁকে গুয়ানতানামো বে বন্দিশিবির বা অন্য কোথাও পাঠিয়ে দেওয়া হতে পারে। তাঁকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হতে পারে। একটি ওয়েবসাইটে আসামিপক্ষের এই নথি প্রকাশ করা হয়। এএফপি, বিবিসি।

নিবিড় পরিচর্যার বদলে মিলছে ন্যূনতম সেবা by শেখ সাবিহা আলম

দেশের কিছু হাসপাতাল বা ক্লিনিকের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট-আইসিইউ) মানুষ প্রত্যাশিত সেবা পাচ্ছে না। এসব কেন্দ্রে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয় বা আয়া নেই। অত্যাবশ্যকীয় যন্ত্রপাতিও নেই। বিশেষ সেবা দেওয়ার কথা বলে রোগীর কাছ থেকে এসব প্রতিষ্ঠান প্রচুর অর্থ নিচ্ছে।

রাজধানীর নামী হাসপাতালগুলোতে আইসিইউর দৈনিক খরচ ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। মাঝারি হাসপাতালগুলোতে খরচ ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, জটিল রোগের চিকিৎসায় ও জরুরি প্রয়োজনে আইসিইউর সেবা নিতে হয়। চিকিৎসকেরাও এই সেবার কথা ব্যবস্থাপত্রে লেখেন। কিন্তু অভিযোগ আছে, খরচ করেও কিছু হাসপাতালে সেবা পাওয়া যায় না।
বারডেম হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন বিভাগের প্রধান মো. ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে আইসিইউ একটি ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। আইসিইউগুলো কে কীভাবে চালাচ্ছে, তা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিয়মিত নজরদারিতে থাকা উচিত।
সরকারি-বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে কতগুলো আইসিইউ চালু আছে, তার কোনো পরিসংখ্যান সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে নেই। তবে, আইসিইউ-সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও বিক্রি করে—এমন একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, বর্তমানে ৭০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠানে আইসিইউ আছে।
বারডেম হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন বিভাগ ২০০৭ সালে আইসিইউ নিয়ে দেশব্যাপী সমীক্ষা করে (অ্যান অডিট অব ইনটেনসিভ কেয়ার সার্ভিসেস ইন বাংলাদেশ)। তাতে দেখা গেছে, আইসিইউর ৭৫ শতাংশ শয্যার সঙ্গে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র নেই। ৬০ শতাংশ আইসিইউতে প্রতিটি শয্যার জন্য একজন করে সেবিকা নেই। আর যেসব সেবিকা আছেন, তাঁদের ৬৪ শতাংশের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নেই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) মমতাজ উদ্দিন ভূঞা বলেন, হাসপাতালে আইসিইউ চালু করার জন্য সরকারের অনুমোদনের দরকার হয় না। তিনি বলেন, আইসিইউ পরিচালনা করার নীতিমালা দরকার। সেটি তৈরির চেষ্টা চলছে।
আইসিইউতে কী কী থাকতে হবে: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, একটি আদর্শ আইসিইউ তৈরির চেষ্টা তারা করছে। কামরুল হুদা ও ইকবাল হোসেইন চৌধুরী (সহযোগী অধ্যাপক, অ্যানেসথেসিয়া, অ্যানালজেসিয়া অ্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন) আইসিইউর পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন সাত বছর ধরে। তাঁরা জানান, আইসিইউতে রোগীকে ওঠানো-নামানো, কাত করাসহ বিভিন্ন অবস্থানে রাখার জন্য বিশেষায়িত শয্যার দরকার। প্রত্যেক রোগীর জন্য পৃথক ভেন্টিলেটর (কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র) ও কার্ডিয়াক মনিটর (হূদযন্ত্রের অবস্থা, শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা, কার্বন-ডাই অক্সাইড নির্গমনের মাত্রা, শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি, রক্তচাপ পরিমাপক), ইনফিউশন পাম্প (স্যালাইনের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম মাত্রা নির্ধারণ যন্ত্র) দরকার। আইসিইউতে শক মেশিন (হূদযন্ত্রের গতি হঠাৎ থেমে গেলে তা চালু করার যন্ত্র), সিরিঞ্জ পাম্প (শরীরে ইনজেকশনের মাধ্যমে যে ওষুধ প্রবেশ করানো হয় তার মাত্রা নির্ধারণের যন্ত্র), ব্লাড ওয়ার্মার (রক্ত দেওয়ার আগে শরীরের ভেতরকার তাপমাত্রার সমান করার জন্য ব্যবহূত যন্ত্র) থাকবে। পাশাপাশি কিডনি ডায়ালাইসিস মেশিন, আল্ট্রাসনোগ্রাম, এবিজি মেশিন (মুমূর্ষু রোগীর রক্তে বিভিন্ন উপাদানের মাত্রা নির্ধারণ) থাকতে হবে। তাঁরা বলেন, জরুরি পরীক্ষার জন্য আইসিইউয়ের সঙ্গে একটি পরীক্ষাগার থাকাও আবশ্যক।
বিএসএমএমইউয়ের ১১ শয্যার আইসিইউর জন্য একজন অধ্যাপক, দুজন সহযোগী অধ্যাপক, সাতজন মেডিকেল অফিসার, ৩৫ জন নার্স, ১৬ জন ওয়ার্ডবয় কাজ করেন। দুই ঘণ্টা পরপর প্রতিটি রোগীর অবস্থা জানার ব্যবস্থা রয়েছে। এর বাইরে তিনজন ফিজিওথেরাপিস্ট ও পাঁচজন প্যাথলজি টেকনিশিয়ান এখানে কাজ করেন।
বারডেম হাসপাতালে ১০ শয্যার আইসিইউতে দুজন সার্বক্ষণিক চিকিৎসক, একজন ব্যবস্থাপক চিকিৎসক ও চারজন কনসালটেন্ট আছেন। অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির পাশাপাশি রোগীর অবস্থা ঘণ্টায় ঘণ্টায় পর্যবেক্ষণ করে সেবিকারা লিখে রাখেন।
সেবা বিনা মূল্যের, তাই মান খারাপ: শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কখনো আইসিইউতে স্থায়ী ভিত্তিতে চিকিৎসক, সেবিকা বা ওয়ার্ডবয় নিয়োগ দেয়নি। আট শয্যার এই কেন্দ্রে প্রতিদিন কমপক্ষে ২৪ জন সেবিকার দরকার। আছেন ১৬ জন।
কর্তব্যরত চিকিৎসক এস এম শফিকুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, চিকিৎসকদের রাজধানীর বাইরের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে আনা হয়। সেবিকা কম বলে ভেতরে রোগীর আত্মীয়স্বজন ঢুকতে দিতে হয়। এতে নানা ধরনের সংক্রমণ দেখা দেয়।
আইসিইউতে মনিটর মাত্র তিনটি। ফলে সব রোগীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয় না। এবিজি মেশিনও নেই। একেবারে বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয় বলে হাসপাতালে দরিদ্র অসহায় রোগীরা আসে, কিন্তু তারা প্রাপ্য সেবা পায় না।
পরিচালক শহীদুল হক মল্লিক বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্গানোগ্রামে আইসিইউ ছিল না। সাধারণের চাহিদার কথা বিবেচনা করে এই ইউনিটটি চালু করা হয়। এখন নতুন করে আইসিইউটিকে উন্নত করার সব রকম চেষ্টা চলছে।
ছয় হাসপাতালের দায়িত্বে এক ডাক্তার: মাহমুদুর রহমান এমবিবিএস পাস। তাঁর বিজনেস কার্ডে দেখা যায় তিনি স্নাতকোত্তর চিকিৎসাশিক্ষার ছাত্র। তিনি সাফেনা জেনারেল হাসপাতাল (মালিবাগ), কেয়ারল্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল (খিলগাঁও), বাংলাদেশ হার্ট অ্যান্ড চেস্ট হাসপাতাল (ধানমন্ডি), স্পেশাল কেয়ার অ্যান্ড ক্যানসার হাসপাতাল (পশ্চিম পান্থপথ), অগ্রণী হার্ট সেন্টার অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল (উত্তরা), কিডনি হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়ালাইসিস সেন্টারে (ধানমন্ডি) আইসিইউ পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন।
মাহমুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, জটিল প্রয়োজনে হাসপাতালগুলো থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি তাদের সাহায্য করার চেষ্টা করে থাকেন মাত্র।
আইসিইউ চলছে বিশেষজ্ঞ পরামর্শক ছাড়া: প্রতিটি আইসিইউতে বিশেষজ্ঞ বা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু বেশির ভাগ হাসপাতালে তা নেই। হাসপাতালগুলোতে কিছু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নাম ব্যবহার করা হচ্ছে, কিন্তু তাঁরা হাসপাতালে আসেন মাঝেমধ্যে। গ্রীন রোডের ঢাকা রেনাল অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালের মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) বিশ্বজিৎ বৈদ্য জানান, এখানে আইসিইউর বিষয়ে প্রধান পরামর্শক ফজলুর রহমান। ফজলুর রহমান আরও দুটি হাসপাতালে একই কাজ করেন। প্রধানত, হাসপাতালের আইসিইউটি চালান মো. ইউসুফ জামিল।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ইউসুফ জামিল অ্যানেসথেসিয়ার ওপর ডিপ্লোমা ডিগ্রি নিয়েছেন, বিএসএমএমইউয়ের আইসিইউতে ছয় মাসের কাজের অভিজ্ঞতা আছে। তাঁর অধীনে পাঁচ-ছয়জনের একটি দল কাজ করে থাকে। তাদের কারও ডিপ্লোমা ডিগ্রি নেই।
পান্থপথের স্পেশাল কেয়ার হাসপাতালে ২ জানুয়ারি দুপুর ১২টায় কোনো চিকিৎসক পাওয়া যায়নি। হাসপাতালের উপমহাব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান বলেন, রোগীর চাপ কম থাকায় চিকিৎসক নেই। রোগী এলেই ফোন করে চিকিৎসক আনা হবে। আইসিইউ পরিচালনা করেন মো. মবিনুল ইসলাম ও তাঁর চার সদস্যের একটি দল। প্রত্যেকেই অন্য হাসপাতালে কাজ করেন। তবে তাঁরা প্রতিষ্ঠানটির উন্নতির জন্য চেষ্টা করছেন বলে জানান।
একই অবস্থা মালিবাগের সাফেনা জেনারেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের। হাসপাতালের আইসিইউ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক মাহমুদুর রহমান বলেন, প্রয়োজন হলে বিশেষজ্ঞ ডাকা হয়। একজন সার্বক্ষণিক বিশেষজ্ঞের পেছনে প্রচুর ব্যয়।
যন্ত্রপাতির সংকট: ২ জানুয়ারি খিলগাঁওয়ের কেয়ারল্যান্ড জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হূদরোগে আক্রান্ত এক মুমূর্ষু রোগী। কিন্তু হাসপাতালে কোনো শক মেশিন নেই। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি না থাকলেও রোগী ভর্তি বন্ধ নেই। চার শয্যার আইসিইউতে চারটি ভেন্টিলেটর থাকার কথা, কিন্তু আছে দুটি। এবিজি মেশিন, সিরিঞ্জ পাম্প, ইনফিউশন পাম্প নেই। হাসপাতালে রোগীর জরুরি প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষারও ব্যবস্থা নেই।
যন্ত্রপাতির সংকট আছে স্পেশাল কেয়ার হাসপাতালেও। সাফেনা জেনারেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে আট শয্যার আইসিইউতে চারটি ভেন্টিলেটর। মনিটর, সিরিঞ্জ পাম্প আছে, কিন্তু এবিজি মেশিন নেই।
একজন রোগীকে এসব হাসপাতালকে গড়ে দৈনিক ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা দিতে হয়।
উন্নত সেবা সাধারণের নাগালের বাইরে: কম ব্যয়ে উন্নতমানের সেবা সাধারণ মানুষ পায় বিএসএমএমইউ কিংবা বারডেমে। দুটি হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা ২১টি। দিনে খরচ সর্বোচ্চ ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। মুমূর্ষু রোগীর আত্মীয়স্বজনেরা একটি শয্যার জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা করে।
কিছু বেসরকারি হাসপাতালে সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি ও পর্যাপ্ত লোকবল আছে। স্কয়ার হাসপাতালে ২১ শয্যার আইসিইউতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির পাশাপাশি অ্যাম্বুলেন্স ও হেলিকপ্টারে বহনযোগ্য যন্ত্রপাতি আছে। স্কয়ারের সহযোগী পরিচালক (চিকিৎসা) আমের ওয়াহেদ জানান, এখানে রোগীভেদে দৈনিক খরচ ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। রাজধানীর প্রথম শ্রেণীর বেসরকারি হাসপাতালগুলোর বেশির ভাগের চিত্রই এক রকম। তবে এসব হাসপাতালের সেবা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।

বহুতল ভবন, দোকান ও ঝুপড়িঘরে ঘিঞ্জি কক্সবাজার সৈকত

দুই শতাধিক ভবন, অসংখ্য দোকান ও ঝাউবাগানে প্রায় দুই হাজার ঝুপড়িঘর, যা বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতকে পরিণত করেছে ঘিঞ্জি এলাকায়। সৈকত ঘেঁষে বহুতল আরও ভবন নির্মাণ চলছে। চলছে রাস্তা নির্মাণ। হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ গত সোমবার সৈকতের স্থায়ী-অস্থায়ী সব ধরনের স্থাপনা সাত দিনের মধ্যে উচ্ছেদের জন্য কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন।
কিন্তু গতকাল মঙ্গলবার এই উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়নি। বরং সৈকতে স্থাপনার নির্মাণকাজ চলতে দেখা গেছে। হাইকোর্ট ওই আদেশে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছেন। তিন মাসের মধ্যে সমুদ্র সৈকত এলাকার সীমানা নির্ধারণে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সৈকত রক্ষায় সেখানে স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ এবং নির্মিত স্থাপনা সরানোর নির্দেশনা চেয়ে জনস্বার্থে করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এসব নির্দেশ দেন।
গতকাল সকালে সৈকতে গিয়ে দেখা যায়, কলাতলী পয়েন্টের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় (সাবমেরিন কেবলের ল্যান্ডিং পয়েন্ট) সৈকতের বুকে রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে নির্মাণাধীন সি-ওয়েব লি. হোটেলের মালামাল পরিবহনের জন্য। রাস্তাটি তৈরি করছে সি ওয়েব লি. নামের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। হোটেল সি-ওয়েভ লি.-এর কক্সবাজারের আঞ্চলিক পরিচালক এনামুল হক জানান, পর্যটকদের হাঁটাচলা এবং হোটেলে মালামাল আনা-নেওয়ার সুবিধার্থে রাস্তাটি করা হচ্ছে।
ওই হোটেলের উত্তর পাশে ‘স্বপ্নীল’, ‘ফকির গ্রুপ’, ‘হোটেল বে প্যারাডাইজ’, ‘ডেসটিনি’ ও ‘প্যাসিফিক’ কর্তৃপক্ষও সৈকতের জমিতে রাস্তা তৈরি ও হোটেলের ভিত ভরাট করছে।
সৈকতে রাস্তা তৈরি প্রসঙ্গে হোটেল বে-প্যারাডাইজ লি.-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও জাতীয় পার্টির (এরশাদ) কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মো. নুরুল আমিন বলেন, ‘যা কিছু হচ্ছে, আইনের বিধিবিধান অনুসরণ করেই হচ্ছে।’
সমুদ্রের তীর ঘেঁষে (সুগন্ধা পয়েন্ট) ১৩ তলা হোটেল ‘দ্য সি প্রিন্সেস’ তৈরি করছে নির্মাণ সংস্থা হোম স্টুন। হোম স্টুনের প্রকল্প পরিচালক রবি সাহা বলেন, ‘সিভিল এভিয়েশন অথরিটি আমাদের ১৪০ ফুট উঁচু ভবন নির্মাণের অনুমতি দিয়েছে। কক্সবাজার পৌরসভা তা অনুমোদন দিয়েছে। আমরা এই জমিতে ভবন নির্মাণের কাজ শেষ করেছি।’ প্রতিষ্ঠানের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা একরামুল বশর চৌধুরী বলেন, ‘এই হোটেলের নির্মাণকাজ শেষ হবে চলতি বছরের ডিসেম্বরে। এই ভবনটি কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে ৪৫০০ ফুট দক্ষিণ-পশ্চিমে বলে ১৪ তলা পর্যন্ত নির্মাণ করা যাবে।’ সৈকতে রাস্তা নির্মাণ প্রসঙ্গে তিনি জানান, মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী প্রস্তাবিত শহররক্ষা বাঁধ লাইন অনুসরণ করে ৮০ ফুট প্রস্থের রাস্তাটি হচ্ছে। হোটেলে যাতায়াতের জন্য এ রাস্তা দরকার।
দ্য সি প্রিন্সেসের উত্তর পাশ ঘেঁষে তৈরি হচ্ছে ডেসটিনি গ্রুপের ডেসটিনি ক্রাউন প্যাসিফিক বিচ হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট। ইতিমধ্যে এর নয়তলা পর্যন্ত উঠেছে। ডেসটিনি ২০০০ লি.-এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান ডেসটিনি ডেভলপার্স লি. এর নির্মাণকাজ করছে। বেলা ১১টায় গিয়ে ভবনটির নির্মাণকাজ বন্ধ দেখা যায়। ভবন রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বরত আবু জাফর জানান, ভবনটির নির্মাণকাজ প্রায় শেষ।
সকাল সাড়ে ১০টায় সুগন্ধা পয়েন্টে কথা হয় ঢাকার বাড্ডা থেকে সপরিবারে বেড়াতে আসা কাদির মোল্লার (৪০) সঙ্গে। সৈকতের বর্তমান চেহারায় হতাশা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ছয় বছর আগে নিরিবিলি ঝাউবাগানের বালিয়াড়িতে কচ্ছপের ডিম পাড়ার দুর্লভ দৃশ্য দেখেছি। আর এখন কচ্ছপ ও লাল কাঁকড়ার চলাচলের দৃশ্য দেখা তো দূরের কথা, এত বহুতল ভবনের ভিড়ে সমুদ্রও দেখা যাচ্ছে না।’
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. গিয়াস উদ্দিন আহমদ হাইকোর্টের নির্দেশকে সময়োপযোগী এবং ভালো উদ্যোগ উল্লেখ করে বলেন, ‘শিগগির শহরের নাজিরারটেক থেকে ফদনারডেইল হয়ে পুরো সৈকতের সব স্থায়ী-অস্থায়ী স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। ফদনারডেইলের কয়েক শ শুঁটকি মহাল উচ্ছেদ করতে সমস্যা হলেও হাইকোর্টের নির্দেশ আমাদের না মানার কোনো কারণ নেই। নাজিরারটেক, ফদনারডেইল চরে অন্তত ৭০ হাজার ভাসমান মানুষের বসবাস রয়েছে।’ তিনি জানান, হাইকোর্টের নির্দেশমতো আগামী তিন মাসের মধ্যে বিশেষ কমিটি করে পুরো সৈকতের সীমানা নির্ধারণ করা হবে।
পুলিশ সুপার নিবাস চন্দ্র মাঝিও একই ধরনের কথা জানান।
ভবনের ভিড়ে ঘিঞ্জি সৈকত: অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত পাঁচ-ছয় বছরে সাগরপাড়ের হোটেল মোটেল জোনের নিরিবিলি অর্কিড রেস্তোরাঁর চারপাশে প্রায় এক বর্গকিলোমিটার এলাকায় দুই শতাধিক হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউসসহ অসংখ্য ভবন নির্মিত হয়েছে। আরও ৫০-৬০টি বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ১৪ তলা ভবনও রয়েছে। সৈকতের আশপাশ, পাহাড় ও পাহাড়টিলায় বিভিন্ন আবাসন নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ছয় থেকে ১২ তলা ভবন (অ্যাপার্টমেন্ট) নির্মাণ করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কক্সবাজার বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা জানান, সমুদ্রসৈকতের পাশে স্থাপিত বিমানবন্দর থেকে বিমান ওঠানামায় সমস্যা হয় বলে যেখানে বিমানবন্দরের পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশের ২০-৩০ ফুট উঁচু ঝাউ গাছের মাথা কেটে ফেলতে হয়েছে, সেখানে ১০-১২ তলা অনেক ভবন নির্মিত হওয়ায় ঝুঁকি বাড়ছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শুকুর আলী বলেন, কক্সবাজার পৌরসভার ছয়তলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণের অনুমতি দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু তারা ২০-২২ তলার অনুমোদনও দিচ্ছে। সৈকতপাড়ের নরম বালিতে ১৮-২০তলা ভবন মারাত্মক ঝুঁকির।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের (ইসিএ) অঞ্চলের ম্যানেজমেন্ট অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সৈকত পাড়ে এত বেশি হোটেল-মোটেল নির্মাণ ঝুঁকিপূর্ণ। অতীতে যা হয়েছে, এখন নতুন করে নির্মাণ করা হোটেল-মোটেলের ব্যাপারে আমরা নজর রাখছি।’
জেলা প্রশাসক জানান, সৈকতের অল্প জায়গায় অতীতে অসংখ্য হোটেল-মোটেল করে এটিকে ঘিঞ্জি শহর বা উন্নতমানের বস্তিতে পরিণত করা হয়েছে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে এসে পর্যটকেরা উল্টো অস্বস্তিবোধ করেন। সুনামি কিংবা ভূমিকম্প হলে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তিনি বলেন, সৈকত এলাকায় সমপ্রতি বাতিল করা ৫৯টি প্লটের জমি ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত করা হয়েছে। এসব জমি খালি রেখে সেখানে বিনোদন পার্ক নির্মাণসহ জনকল্যাণমূলক বিভিন্ন কার্যক্রমে পরিচালনার জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাবনামা পাঠানো হয়েছে। অচিরেই এর বাস্তবায়ন শুরু হবে।
নিয়ম না থাকলেও ছয়তলার বেশি ঊঁচু ভবন নির্মাণের অনুমতি দেওয়া প্রসঙ্গে কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র রাজ বিহারী দাশ জানান, এ কারণে দুই মাস আগের ভারপ্রাপ্ত মেয়র সরওয়ার কামালকে দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এখন বহুতল ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া বন্ধ রাখা হয়েছে।
তবে সরওয়ার কামাল বলেন, পৌরসভার নীতিমালা অনুসরণ করেই তিনি বহুতল ভবন নির্মাণের অনুমতি দেন। জামায়াতে ইসলামীর এই নেতা ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচনে মেয়র পদে চারদলীয় জোটের সমর্থিত প্রার্থী।
ঝাউবাগানে হাজারও বস্তি: সমুদ্র সৈকতের ডায়াবেটিক হাসপাতাল-সংলগ্ন ঝাউবাগানে গিয়ে দেখা গেছে, দেড় হাজারের মতো ঝুপড়িঘর তৈরি করে বাস করছে ভাসমান ৮-১০ হাজার মানুষ। এর উত্তরে সমিতি পাড়া ঝাউবাগানেও রয়েছে চার শতাধিক ঝুপড়ি। এর উত্তরপাশে ফদনারডেইল, নাজিরারটেক এলাকার বিস্তীর্ণ সৈকত দখল করে অসংখ্য ঘরবাড়ি তৈরি করে বাস করছে ৫০ হাজারের বেশি ভাসমান মানুষ।
সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে বিশাল বালুচর দখল করে তৈরি করা হয়েছে শতাধিক দোকানপাট। সৈকতের লাবণী, বালিকা মাদ্রাসা, শৈবাল ও কলাতলী পয়েন্টরও একই অবস্থা। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু হয়নি।
হাইকোর্টের নির্দেশকে স্বাগত: সৈকত এলাকার মোটেল নিটল বে রিসোর্টের ব্যবস্থাপক সোহরাব হোসেন জানান, ‘সৈকতের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে হাইকোর্টের নির্দেশকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। ঝাউবাগানে অবৈধ স্থাপনা তৈরি করে ভাসমান লোকজনের বসবাসের কারণে চুরি-ছিনতাই যেমন বাড়ছে, তেমনি মাদকদ্রব্যের বেচাকেনা ও অপরাধকর্মও বাড়ছে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হলে এসব বন্ধ হবে।’
কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার জানান, সৈকত পাড়ে ইতিমধ্যে যেসব হোটেল, মোটেল তৈরি করা হয়েছে, তাও প্রয়োজনের তুলনায় বেশি হয়ে গেছে। ছোট এ জায়গায় (সৈকতে) আরও হোটেল-মোটেল নির্মাণ হলে পুরো শহর ঝুঁকির মুখে পড়বে।
পরিবেশবাদী সংগঠন কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি ও গ্রিন কক্সবাজারের নির্বাহী পরিচালক যথাক্রমে দীপক শর্মা ও ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, ‘হাইকোর্টের নির্দেশে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে। আমরা দ্রুত এর বাস্তবায়ন চাই।’
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি যথাক্রমে মো. আয়াছুর রহমান ও আবু তাহের চৌধুরী জানান, পরিবেশবিধ্বংসী এসব অপতৎপরতা অবিলম্বে বন্ধ করা না হলে বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকতকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। দ্রুত সৈকতের সীমানা নির্ধারণও জরুরি।

শিক্ষা:শিক্ষায় নৈতিকতা by ড. আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেক

শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। উন্নয়নের সোপান। কিন্তু শিক্ষা মানে কি? শিক্ষার সংজ্ঞায়নে বেশ ভুল বুঝাবুঝি আছে। অনেক সময় আমরা শিক্ষার প্রকৃত অর্থ বুঝি না। কখনো যা বুঝি, তা ভুল করে বুঝি। এই ভুল বুঝার কারণে কোন কোন দেশে শিক্ষার হার বেশি মনে করি।

কিন্তু সে তথাকথিত শিক্ষা জাতীয় ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে না। সুতরাং শিক্ষার সঠিক সংজ্ঞায়ন প্রয়োজন। গোড়ার কথা হলো, শিক্ষা ও সাক্ষরতা সমার্থক নয়। সাক্ষরতা দ্বারা পেশাগত জ্ঞান বুঝায়। আর শিক্ষা হলো পেশাগত দক্ষতার সাথে এমন গুণাবলীর সমন্বয়, যা মানুষকে প্রকৃত মানুষ বানায়। এ অর্থে শিক্ষা হলো মানবীয় গুণাবলী সমন্বিত জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও পেশাগত দক্ষতা। মানবীয় গুণাবলীর মধ্যে নৈতিকতা হলো সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ গুণ। এই নৈতিকতার অভাবে অনেক সম্ভাবনাময় দেশও পেছনে পড়ে আছে।

নৈতিকতা বিবর্জিত শিক্ষা থেকে অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষাহীনতা উত্তম। কারণ, পেশাগত দক্ষতা মানুষকে দক্ষ করে তোলে, যার ফলে একজন মানুষ নিজের এবং দেশ ও জাতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। আবার কেউ যদি দুর্নীতির মাধ্যমে জাতির সর্বনাশ করে নিজ সম্রাজ্য কায়েম করতে চায়, তাও সে দক্ষতার সাথে করতে পারে। একজন অদক্ষ ও মূর্খ চোর দ্বারা বড় চুরি সম্ভব নয়। একজন দক্ষ ও পেশাগত জ্ঞানসম্পন্ন মানুষই বড় ধরনের দুর্নীতি করতে পারে। যে কোন দেশের দুর্নীতিবাজদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে যে, তাতে মূর্খ মানুষের সংখ্যা হবে অত্যন্ত নগণ্য, আর তথাকথিত শিক্ষিতদের সংখ্যাই হবে অধিক।

এ সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় কি? এ সমস্যার সমাধান শিক্ষা বন্ধ করা নয়, বরং শিক্ষার সংস্কার। শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও মানবীয় গুণাবলীর সমন্বয় প্রয়োজন। আসলে শিক্ষা হলো একটা ব্যাপক পরিভাষা। কোন বিষয়ের জ্ঞানকে সে বিষয়ে পেশাগত জ্ঞান বলা যায়। যখন এর সাথে নৈতিকতা ও প্রয়োজনীয় মানবীয় গুণাবলীর সমন্বয় হয়, তখনই তাকে শিক্ষা বলা যায়।

কিছুদিন আগে কাতারে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন হয়। এতে পৃথিবীর নানা দেশ থেকে শিক্ষাবিদ, বিশেষজ্ঞ ও নীতি নির্ধারক ব্যক্তিত্বগণ উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ করে অংশগ্রহণকারী নির্বাচনে সকল ধর্মের প্রতিনিধিত্বের উপর গুরুত্ব দেয়া হয়। কাজেই সেখানে সকল প্রধান প্রধান ধর্মের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাবিদ, শিক্ষানুরাগী ও নীতি নির্ধারকগণ উপস্থিত ছিলেন। যেমন ইসলাম ধর্ম, হিন্দু ধর্ম, খ্রীষ্টান ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম ও ইহুদী ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বগণ উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ থেকে সে সম্মেলনে আমার অংশগ্রহণের সৌভাগ্য হয়েছে। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে মতানৈক্য থাকলেও একটি বিষয়ে সবাই ঐক্যমত পোষণ করেছেন। তা হলো এই যে, শিক্ষা ব্যবস্থার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সর্বপর্যায়ে নৈতিকতার সমন্বয় প্রয়োজন। এছাড়া কোন সমাজ ও জাতি কাঙ্ক্ষিত মানের উন্নয়ন সম্ভব নয়। দুর্নীতির কারণে শত চেষ্টা সত্ত্বেও উন্নয়ন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়। এছাড়া আরেকটি বিষয়ে ঐক্যমত স্থাপিত হয়েছে। তা হলো, যে জাতির মানুষ যে ধর্মে বিশ্বাসী তাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় সে ধর্মভিত্তিক নৈকিতার শিক্ষার সমন্বয় বাঞ্ছনীয়। কারণ, নৈতিকতার সাথে ধর্মীয় ভাবধারার জবাবদিহির বিশ্বাস অন্তভর্ুক্ত হলে সে নৈতিকতার কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।

রাজধানীর মতিঝিলে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ একজন নিহত

রাজধানীর মতিঝিলে র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ হুমায়ুন কবির ওরফে বিপ্লব (৩৭) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। সিগমা হাসপাতাল-সংলগ্ন রেললাইনের পাশে গতকাল মঙ্গলবার গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল ও দুটি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।

র্যাব সূত্র জানায়, গতকাল রাত সাড়ে তিনটার দিকে তিনটি মোটরসাইকেলে ছয়জন আরোহী শাহজাহানপুরে রেললাইনের পাশে র্যাবের চেকপোস্ট অতিক্রম করার সময় র্যাব থামার সংকেত দেয়। কিন্তু সংকেত অমান্য করে তারা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে র্যাব-৩-এর একটি দল তাদের ধাওয়া করে। এ সময় একটি মোটরসাইকেলের পেছনে বসা ব্যক্তি র্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। র্যাবের পাল্টা গুলিতে ওই ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়ে যায়। অন্যরা মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়। পরে ওই ব্যক্তিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিত্সক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মতিঝিল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইদ্রিস আলী জানান, র্যাব-৩-এর কাছে খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে আসেন এবং ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল ও দুটি গুলি উদ্ধার করেন।
এ ঘটনায় র্যাবের সহকারী উপপরিচালক মিজানুর রহমান বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় একটি মামলা করেছেন।

অ্যাসাঞ্জের ঠাঁই হবে গুয়ানতানামো বন্দি শিবিরে!

ইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান আ্যাস্যাঞ্জকে যদি সুইডেনে প্রত্যার্পণ করা হয় তবে তার শেষ আশ্রয় হতে পারে কিউবার গুয়ানতানামো কারাগার! অ্যাসাঞ্জের আইনজীবীরা গতকাল মঙ্গলবার এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

তারা বলেছেন, সুইডেন যদি অ্যাসাঞ্জকে হাতে পায়, তবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তাকে ওয়াশিংটনে ফিরিয়ে নেয়া কঠিন কিছু হবে না। কারণ, উইকিলিকসের মাধ্যমে অ্যাসাঞ্জ এমন কিছু কাজ করেছেন যাকে মার্কিন আইনে অপরাধ হিসেবে প্রমাণ করা সম্ভব। এমনকি মৃতু্যদণ্ডের আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা। খবর বিবিসি ও রয়টার্সের।

অ্যাসাঞ্জকে সুইডেনের হাতে তুলে দেয়া হবে কি না সে প্রশ্নে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি শুনানির দিন নির্ধারণ করেছে ব্রিটেনের একটি আদালত। অ্যাস্যাঞ্জের বিরুদ্ধে সুইডেনের দুই নারীর যৌন অসদাচরণ মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে সুইডেনে নিতে চায় সুইডিশ কর্তৃপক্ষ। ওই মামলায় বর্তমানে কঠোর শর্তাধীনে যুক্তরাজ্যে জামিনে মুক্ত রয়েছেন অ্যাস্যাঞ্জ। ব্রিটেন যাতে তাকে সুইডেনের হাতে তুলে না দেয় সে ব্যাপারে জোর আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি শুরু করেছে অ্যাসাঞ্জের প্রতিরক্ষা টিম। তার প্রতিরক্ষা টিমের প্রধান আইনজীবী বলেছেন, আল-কায়েদা ও তালেবান বিদ্রোহীদের মার্কিন সিআইএ গোয়েন্দারা যে অভিযোগে দোষী প্রমাণ করে গুয়ানতানামোতে পাঠিয়েছে তারা ইচ্ছা করলে অ্যাসাঞ্জকেও দোষী প্রমাণ করে সেখানে বন্দি করতে পারে। তাই তাকে সুইডেনে পাঠানো ঠেকাতে হবে।

উলেস্নখ্য, গত বছর ইরাক ও আফগান যুদ্ধ নিয়ে পেন্টাগনের কয়েক লাখ গোপন নথি এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের সঙ্গে ওয়াশিংটনের বিনিময় করা আড়াই লাখ গোপন তারবার্তা ফাঁস করে দুনিয়া জুড়ে হৈচৈ ফেলে দেয় উইকিলিকস। এতে ওয়েবসাইটটির প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাস্যাঞ্জের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয় যুক্তরাষ্ট্র। অ্যাস্যাঞ্জের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ওয়াশিংটন।

অর্থ জালিয়াতির কথা স্বীকার করলেন সাবেক ব্রিটিশ এমপি

ব্রিটেনের একজন এমপি প্রতারণার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অর্থ হাতিয়ে নেয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি হলেন লেবার পার্টির সাবেক পার্লামেন্ট সদস্য এরিক এলসলি।

বিভিন্ন মিথ্যা অজুহাতে তিনি ১৪ হাজার পাউন্ডের বেশি অর্থ জালিয়াতি করেছেন বলে স্বীকার করেছেন। সোমবার সাউথওয়ার্ক ক্রাউন কোর্টে এলসলির কৌসুলি উইলিয়াম কোকার কিউসি বলেন, পার্লামেন্ট সদস্যদের ব্যয়ের খাত থেকে প্রতারণামূলকভাবে ১৪ হাজার পাউন্ড নেয়ার করার কথা স্বীকার করেছেন এলসলি। তবে এর আগে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন ওই এমপি। খবর বিবিসি ও টেলিগ্রাফের।

সূত্র জানায়, গত বছর মে মাসের জাতীয় নির্বাচনে বার্নসলি সেন্ট্রাল থেকে পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হন এলসলি। কয়েকমাস পর অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠার পর লেবার পার্টি তাকে দল থেকে বহিস্কার করে। পরে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে পার্লামেন্টারি দায়িত্ব পালন শুরু করেন। তিনি স্বীকার করেছেন, কাউন্সিল ট্যাক্স, রক্ষণাবেক্ষণ, সংস্কার এবং দ্বিতীয় বাসভবনের পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিলের কথা বলে তিনি অবৈধ অর্থ নিয়েছেন। এ জালিয়াতির কারণে ১২ মাস বা তার বেশি মেয়াদে সাজা হলে যুক্তরাজ্যের প্রচলিত আইনে সংসদ সদস্য পদের জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবেন তিনি। তবে লেবার পার্টির শীর্ষ নেতা এড মিলিব্যান্ড বলেছেন, তার এখনই সংসদ সদস্যের পদ ছেড়ে দেয়া উচিত। কারণ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার নৈতিক অধিকার তিনি আর পেতে পারেন না।

৭২ পৌরসভায় ভোট গ্রহণ চলছে

রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ৭২টি পৌরসভায় আজ বুধবার সকাল আটটা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। বিরতিহীনভাবে চলবে বিকেল চারটা পর্যন্ত। সকাল থেকে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ চলছে, কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। প্রচণ্ড শীতে ভোটার উপস্থিতি সকালের দিকে খানিকটা কম ছিল।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, রংপুর বিভাগের ২৩টি পৌরসভায় মেয়র পদে ১৩১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মেয়র পদে সর্বাধিক ১২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দিনাজপুরের বীরগঞ্জে। নারীদের জন্য সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩১৬ জন প্রার্থী। সর্বাধিক ২৬ জন নারী প্রার্থী রয়েছেন নীলফামারীর সৈয়দপুরে। এ ছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এক হাজার ১০১ জন। এ পদে সর্বাধিক ৮৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন নীলফামারীর সৈয়দপুরে। এই ২৩ পৌরসভায় মোট ভোটার সাত লাখ ১৯ হাজার ৪১ জন।
রাজশাহী বিভাগের ৪৯টি পৌরসভায় মেয়র পদে ২৩২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ পদে সর্বাধিক নয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জয়পুরহাটের কালাই পৌরসভায়। নারীদের জন্য সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৬৭৩ জন। সর্বাধিক ৪৪ জন নারী প্রার্থী রয়েছেন বগুড়া সদর পৌরসভায়। সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দুই হাজার ২৬৫ জন। এ পদে সর্বাধিক ১৬১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন নীলফামারীর সৈয়দপুরে। এই ৪৯ পৌরসভায় মোট ভোটার ১৪ লাখ চার হাজার ৯৯০ জন।
কাল বৃহস্পতিবার খুলনা ও বরিশাল বিভাগে ভোট হবে। এরপর ১৭ জানুয়ারি ঢাকা বিভাগ এবং ১৮ জানুয়ারি চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের পৌরসভার ভোট গ্রহণ হবে।
এ ছাড়া পুনর্নির্ধারিত তফসিল অনুযায়ী ২৭ জানুয়ারি ১৪টি পৌরসভায় ভোট হবে।
নিরাপত্তাব্যবস্থা: ভোটকেন্দ্রের আশপাশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করছেন সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ (বিজিবি) ও আনসার সদস্যরা।
এ ছাড়া ভোটের দিন নির্বাচনী অপরাধের তাত্ক্ষণিক বিচারের জন্য রাজশাহী বিভাগে ৫৭ জন এবং রংপুর বিভাগে ৭৬ জন নির্বাহী হাকিমকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া বিচারিক হাকিমেরাও দায়িত্ব পালন করবেন।
নকনে শীতের মধ্যেই উৎসব আমেজে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ৭২ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দেশে পৌর নির্বাচন শুরু হয়ে গেলো। বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এসব পৌরসভায় একটানা ভোটগ্রহণ চলবে বলে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব আব্দুল বাতেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।

এ দুই বিভাগের নির্বাচনযোগ্য পৌরসভাগুলোয় মোট ২১ লাখ ২৪ হাজার ৩১ ভোটার রয়েছে। রংপুর বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপ নির্বাচন কমিশনার সুভাষ চন্দ্র সরকার সকাল সোয়া ৮টায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে।

তীব্র শীতের কারণে শুরুতে কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি কম হলেও সময় গড়ালে তা বাড়বে বলে তিনি আশাবাদী। রংপুর বিভাগীয় কমিশনার জসিমউদ্দিন আহমেদ মঙ্গলবার রাতে জানান, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। কোনো ধরনের গোলযোগের আশঙ্কা করছেন না তিনি।

নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন জানিয়েছেন, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য যা যা প্রস্তুতির প্রয়োজন তার সবই নেওয়া হয়েছে। ভোটারা যাতে নির্বিঘেœ ভোট কেন্দ্রে যেতে পারেন এবং ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরতে পারেন সে লক্ষ্যে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

রংপুর ও রাজশাহী বিভাগ

এ দুই বিভাগের ৭২ পৌরসভায় মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলরের ৯৯২ পদে প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছে ৪ হাজার ৭২৩ জন।

রংপুরের ২৩ পৌরসভায় মেয়র প্রার্থী ১৩১ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর ৩১৬ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১১০১ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এসব পৌরসভায় মেয়র ছাড়া ২১৯টি সাধারণ ও ৭৩টি সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে লড়ছেন তারা।

এসব পৌরসভায় ৭ লাখ ১৯ হাজার ৪১ জন ভোটারের বিপরীতে ভোট কেন্দ্র ৩৬৩ ও ভোট কক্ষ রয়েছে ২২০১টি।

রাজশাহী বিভাগের ৪৯ পৌরসভায় মেয়র পদে ২৩২, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৬৭৩ ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২২৬৫ জন প্রার্থী রয়েছে। পৌরসভায় ৪৯ মেয়র, ৪৭১ সাধারণ ও সংরক্ষিত ১৫৭ পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তারা।

এ বিভাগের পৌরসভাগুলোর ১৪ লাখ ৪ হাজার ৯৯০ ভোটারের বিপরীতে ৭৩২ ভোটকেন্দ্র ও ৪৪২৮টি ভোটকক্ষ রয়েছে।

যে সব পৌরসভায় নির্বাচন হচ্ছে: রংপুর বিভাগের পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, পাটগ্রাম, ঠাকুরগাঁও, রানীশংকৈল, পীরগঞ্জ, নীলফামারী, জলঢাকা, সৈয়দপুর, হারাগাছ, বদরগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, উলিপুর, নাগেশ্বরী, গাইবান্ধা, গোবিন্দগঞ্জ, সুন্দরগঞ্জ, দিনাজপুর, সেতাবগঞ্জ, ফুলবাড়ী, বিরামপুর, হাকিমপুর ও বীরগঞ্জ পৌরসভায় নির্বাচন হবে।

দিনাজপুরের পার্বতীপুর পৌরসভায় নির্বাচন হবে ২৭ জানুয়ারি।

রাজশাহী বিভাগের ভবানীগঞ্জ, কাটাখালী, গোদাগাড়ী, কাঁকনহাট, তানোর, মুন্ডুমালা, কেশরহাট, দুর্গাপুর, আড়ানী, তাহেরপুর, চারঘাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, শিবগঞ্জ, রহনপুর, নাচোল, নাটোর, বড়াইগ্রাম, সিংড়া, গুরুদাসপুর, নলডাঙ্গা, গোপালপুর, জয়পুরহাট, আক্কেলপুর, কালাই, পাঁচবিবি, সিরাজগঞ্জ, উল¬াপাড়া, কাজীপুর, শাহজাদপুর, রায়গঞ্জ, বেলকুচি, নওগাঁ, নজীপুর, বগুড়া, শেরপুর, সান্তাহার, শিবগঞ্জ, সারিয়াকান্দি, ধুনট, নন্দীগ্রাম, কাহালু, গাবতলী, পাবনা, ভাঙ্গুরা, ফরিদপুর, সুজানগর, ঈশ্বরদী, চাটমোহর ও সাঁথিয়া।

সেনা ও বিডিআর থাকছে যে পৌরসভায়

রাজশাহী বিভাগের যে সব পৌরসভায় সেনা মোতায়েন: নাটোর জেলার নাটোর সদর, নলডাঙ্গা, সিংড়া, গুরুদাসপুর ও গোপালপুর। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ। সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর ও শাহজাদপুর। বগুড়া জেলার বগুড়া সদর ও শেরপুর এবং পাবনা জেলার পাবনা সদর, সুজানগর ও ঈশ্বরদী।

রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের যেসব পৌরসভায় বিডিআর মোতায়েন: পঞ্চগড় জেলার পঞ্চগড়, লালমনিরহাটের লালমনিরহাট ও পাটগ্রাম, ঠাকুরগাঁওয়ের ঠাকুরগাঁও, রাণীশংকৈল ও পীরগঞ্জ, নীলফামারীর নীলফামারী, জলঢাকা ও সৈয়দপুর, রংপুরের হারাগাছ, কুড়িগ্রামের কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধার গাইবান্ধা ও গোবিন্দগঞ্জ, দিনাজপুরের হাকিমপুর, রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার ভবানীগঞ্জ ও তাহেরপুর, গোদাগাড়ী ও কাঁকনহাট, তানোর ও মুন্ডুমালা, কেশরহাট ও চারঘাট এবং জয়পুরহাটের জয়পুরহাট সদর।

দেশে সর্বশেষ পৌর নির্বাচন হয়েছিলো ২০০৪ সালের মে মাসে। বছর দুয়েক আগে অধিকাংশ পৌরসভা নির্বাচনের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়।

এ দফায় পাঁচ দিনে সারাদেশে আড়াই শতাধিক পৌরসভায় নির্বাচন হচ্ছে। ১৩ জানুয়ারি খুলনা ও বরিশাল বিভাগে, ১৭ জানুয়ারি ঢাকা বিভাগে, ১৮ জানুয়ারি চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে এবং ২৭ জানুয়ারি বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি পৌরসভায় নির্বাচন হবে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও ভোট কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার এবং কোনো ধরনের সহিংসতা ও অনিয়ম রোধে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

এছাড়া সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পাশাপাশি নির্বাচন বিধি লঙ্ঘনের তাৎক্ষণিক বিচার ব্যবস্থার জন্য দায়িত্ব পালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদেরও সব সময় সতর্ক থাকতে নিদের্শ দিয়েছে কমিশন। সংশি¬ষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছে ইসি।

অ্যাস্যাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে হস্তান্তর ও মৃত্যুদণ্ডের আশঙ্কা

ইকিলিকস ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাস্যাঞ্জ যুক্তরাষ্ট্রে গেলে তার মৃত্যুদণ্ড হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তার আইনজীবীরা। আইন বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ফিনার্স স্টিফেনের ইনোসেন্ট ওয়েবসাইটে মঙ্গলবার প্রকাশিত আইনজীবীদের বক্তব্যে বলা হয়েছে, "অ্যাস্যাঞ্জকে সুইডেনের কাছে হস্তান্তর করা হলে তাকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তরে বাস্তব ঝুঁকি রয়েছে।

"মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে না- এ নিশ্চয়তা ছাড়া অ্যাস্যাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে দেওয়া হলে তার মৃত্যুদণ্ডের ঝুঁকি রয়েছে।" যৌন অপরাধের অভিযোগে ব্রিটেন থেকে সুইডেনের কাছে হস্তান্তরের বিষয়ে ৭ ফেব্র"য়ারি অনুষ্ঠেয় শুনানিতে হস্তান্তরের আবেদনের বিরোধিতায় এ যুক্তি তুলে ধরবেন অ্যাস্যাঞ্জ।

অ্যাস্যাঞ্জের বিরুদ্ধে সুইডেনের দুই নারীর যৌন অসদাচরণ মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে যুক্তরাজ্য থেকে সুইডেনে নিতে চায় সুইডিশ কর্তৃপক্ষ। ওই মামলায় বর্তমানে কঠোর শর্তে জামিনে মুক্ত রয়েছেন অ্যাস্যাঞ্জ। যৌন অসদাচরণের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন তিনি।

পরবর্তী শুনানির জন্য আইনজীবীদের চিহ্নিত যুক্তিগুলোর মধ্যে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাস্যাঞ্জের মৃত্যুদণ্ডের আশঙ্কা রয়েছে। এক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত রিপাবলিকান নেতা সারাহ পেলিন ও মাইক হুকাবির উদ্ধৃতি তুলে ধরেন তারা। এ দুই রিপাবলিকান নেতা যুক্তরাষ্ট্রের গোপন তথ্য ফাঁস করায় অ্যাস্যাঞ্জকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পক্ষে।

ফিনার্স স্টিফেনের ইনোসেন্টের বিবৃতিতে আরো বলা হয়, অ্যাস্যাঞ্জের ঠিকানা যুক্তরাষ্ট্র হলে সেখানে তাকে নির্যাতন করা হবে এবং গুয়ানতানামো বে কারাগারও হতে পারে তার ঠিকানা যা মানবাধিকার বিষয়ক ইউরোপীয় কনভেশনের ৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নিষিদ্ধ।

গত বছর ইরাক ও আফগান যুদ্ধ নিয়ে পেন্টাগনের কয়েক লাখ গোপন নথি এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের সঙ্গে ওয়াশিংটনের বিনিময় করা কয়েক হাজার গোপন বার্তা ফাঁস করে দুনিয়া জুড়ে হৈচৈ ফেলে দেয় উইকিলিকস।

এতে উইকিলিকস ও ওয়েবসাইটটির প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাস্যাঞ্জের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয় যুক্তরাষ্ট্র। অ্যাস্যাঞ্জের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশটি। উইকিলিকস ও অ্যাস্যাঞ্জের বিরুদ্ধে তদন্তের অংশ হিসেবে স¤প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারের কাছে উইকিলিকস সংশ্লিষ্টদের তথ্য চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

মঙ্গলবার আদালতের বাইরে অ্যাস্যাঞ্জ সাংবাদিকদের বলেন, নিজের আইনি লড়াই চলা সত্ত্বেও গোপন তথ্য ফাঁস করে যাবে উইকিলিকস। ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংকের 'অনৈতিক কর্মকাণ্ড' নিয়ে তথ্য ফাঁসের ঘোষণা দিয়েছে উইকিলিকস। অ্যাস্যাঞ্জ বলেন, "উইকিলিকস নিয়ে আমাদের কাজ চলতে থাকবে এবং বার্তাসহ অন্যান্য বিষয়ে গোপন তথ্য প্রকাশের ব্যাপারে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি।"

জলদস্যুর কবলে ভয়-আশার ৮ মাস by মিঠুন চৌধুরী

সোমালীয় জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত দুই বাংলাদেশি নাবিকের একজন ছিলেন মৃত্যুভয়ে, অন্যজন ছিলেন ফেরার ব্যাপারে আশাবাদী। নাবিক জাফর ইকবাল বলেছেন, আট মাসের প্রতিটি দিন কেটেছে মৃত্যুভয়ে। অন্যদিকে দেশে ফেরার বিষয়ে আশাবাদী ছিলেন নাবিক গিয়াসউদ্দিন আজম খান। তিনি বলেছেন, টাকা পেলেই ওরা বন্দিদের ছেড়ে দেয়। তাই দেশে ফেরার বিষয়ে কোন সন্দেহ ছিল না।

সোমালি জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্ত এই দুই নাবিক পৃথকভাবে মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে জাহাজ ছিনতাই ঘটনার বর্ণনা দেন। চট্টগ্রাম নগরীর সুগন্ধা আবাসিক এলাকায় নিজ বাসায় বসে ঘটনার বর্ণনা দেন জাফর ইকবাল। আর মেহেদীবাগ সিডিএ আবাসিক এলাকার বাসায় কথা বলেন গিয়াসউদ্দিন আজম খান।

'এমভি মারিয়া মার্গারেট' নামের জার্মান পতাকাবাহী জাহাজের প্রধান কর্মকর্তা জাফর ইকবাল সোমবার বিকালে দেশে ফেরেন। এর আগে ৮ জানুয়ারি ওমানের মালাল থেকে দেশে ফেরেন জাহাজের দ্বিতীয় প্রকৌশলী গিয়াসউদ্দিন আজম খান। তারা সোমালি জলদস্যুদের হাত থেকে এক সঙ্গেই মুক্তি পেয়েছেন। তাদের দুজনের বাড়িই চট্টগ্রামে।

জাফর ইকবাল বলেন, "গত বছর ৫ মে আমরা ভারত কানলা বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করি। ৮ মে সকালে এডেন উপসাগরে পৌঁছানোর পর রাডারে আমাদের অনুসরণকারী একটি স্পিড বোট দেখতে পাই।" "সাথে সাথে এডেন সাগরে নিরাপত্তায় নিয়োজিত আইএমও এবং ন্যাটোর যৌথ টহল দলের ওয়ারশিপ ও হেলিকপ্টারে খবর দিই। কিন্তু ১৫ মিনিটের মধ্যে আমাদের জাহাজের কাছে এসে পৌঁছে জলদস্যুদের স্পিড বোটটি।"

জাফর ইকবাল জানান, "ভারি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অ্যালুমিনিয়ামের মই (ল্যাডার) দিয়ে জাহাজে উঠে পড়ে ছয় জলদস্যু। এর আগে রকেট লঞ্চারে গোলা ছুড়ে জাহাজের গতিপথ পরিবর্তনে বাধ্য করে তারা।"

সোমালি জলদস্যুরা জাহাজটি ছিনতাই করে এর মোট ২২ জন নাবিককে জিম্মি করে ফেলে। এই ২২ নাবিকের মধ্যে কেবল জাফর ইকবাল ও গিয়াসউদ্দিন আজম খান বাংলাদেশের নাগরিক। গত ২৮ ডিসেম্বর মুক্তিপণের বিনিময়ে ২২ নাবিকসহ জাহাজ মারিয়া মার্গারেটকে ছেড়ে দেয় জলদস্যুরা। জাফর ইকবাল জানান, "ছিনতাই হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই উদ্ধারকারী হেলিকপ্টার থেকে 'মারিয়া মার্গারেট' এর ক্যাপ্টেনের সাথে যোগাযোগ করা হয়। তবে ততক্ষণে জলদস্যুদের আগ্নেয়াস্ত্রের সামনে জাহাজের চার কর্মকর্তা। জাহাজ চলতে শুরু করেছে সোমালিয়া উপকূলের দিকে।

মৃত্যু ভয়ের মুখোমুখি আট মাস
দীর্ঘ আটমাস সোমালি জলদস্যুদের হাতে বন্দি ছিলেন 'মারিয়া মার্গারেট' এর ২২ নাবিক। প্রথম চার মাস জাহাজের চার কর্মকর্তাকে ব্রিজে ও বাকিদের নিচের কেবিনে আটকে রাখা হয়েছিল। পরে সবাইকে নিয়ে আসা হয় ব্রিজে।

জাফর ইকবাল জানান, "ক্যাপ্টেন, প্রধান প্রকৌশলী, দ্বিতীয় প্রকৌশলী ও প্রধান কর্মকর্তা সব সময় থাকতেন জলদস্যুদের তাক করা বন্দুকের মুখে। জলদস্যুদের সবার কাঁধে থাকত একে-৪৭ রাইফেল বা মেশিনগান আর দুই পকেটে দুটি করে রিভলবার।" যে কোন সময় ট্রিগারে চাপ পড়লে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার আশঙ্কা ছিল উল্লেখ করে জাফর ইকবাল বলেন, "আট মাসের প্রতিটি দিন ছিলাম মৃত্যু ভয়ে।"

জাহাজে সবসময় কমপক্ষে ৫০ জন জলদস্যু থাকত জানিয়ে জাফর ইকবাল বলেন, "অন্য কোন জলদস্যু দল বা উদ্ধারকারী দল হামলা চালাতে পারে এ ভয়ে সার্বক্ষণিক কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখত তারা। আর আমাদের সময় কাটত আড্ডা দিয়ে।'

তারা জানান, জাহাজ ছিনতাইয়ে নিয়োজিত জলদস্যুদের বেশিরভাগই পেশায় জেলে। জলদস্যুরা ছিনতাই কাজের জন্য 'গর্ববোধ' করে জানিয়ে জাফর ইকবাল বলেন, "তাদের কাছে এটা আর দশটা পেশার মতই। কোন অপরাধ নয়।"

মুক্তিপণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মুক্তি
জলদস্যুরা কখনোই বন্দি নাবিকদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে নি। জাহাজে খাবার শেষ হয়ে গেলে তারা খাবার সরবরাহ শুরু করে। তাজা শাক-সবজির পাশাপাশি নিয়মিত ছাগল জবাই করে মাংস দেওয়া হতো বলে জানান জাফর ইকবাল।

দ্বিতীয় প্রকৌশলী গিয়াস উদ্দিন জানান, "গত ২৭ ডিসেম্বর সকালে জাহাজের মালিকপক্ষ জলদস্যুদের কাছে মুক্তিপণের ৫৫ লাখ মার্কিন ডলার পৌঁছে দেয়। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ২৮ ডিসেম্বর জাহাজের ২২ নাবিকসহ জাহাজটি ছেড়ে দেয় তারা।"

'চার নটিক্যাল মাইল দূরে এমভি জাহান মনি'

গত ৫ ডিসেম্বর ভারত মহাসাগরে ছিনতাই হয় বাংলাদেশি জাহাজ এমভি জাহান মনি। ২৬ বাংলাদেশীসহ জাহাজটিকে সোমালিয়ায় নিয়ে গেছে জলদস্যুরা।

জাফর ইকবাল বলেন, "গারাকাডে যেখানে আমাদের জাহাজটি রাখা হয়েছিল সেখান থেকে চার নটিক্যাল মাইল দূরে রাখা হয়েছে জাহান মনিকে।" মুক্তি পাওয়ার ১৫ দিন আগে জলদস্যুদের অনুরোধ করে স্যাটেলাইট টেলিফোনে জাহান মনির প্রধান কর্মকর্তার সাথে কথা হয় জাফরের। তিনি জানান, "তার সাথে কথা বলে জেনেছি, জাহান মনির সবাই ভাল আছেন। তবে তাদের খাবারের মজুদ শেষ পর্যায়ে ছিল।'

এমভি জাহান মনি এবং এমভি মারিয়া মার্গারেট জাহাজ দুটির ছিনতাইকারী জলদস্যুরা আলাদা গ্র"পের হলেও তাদের মধ্যে যোগাযোগ রয়েছে বলে জাফর ইকবাল দাবি করেন। তারা মুক্তি পাওয়ার আগ পর্যন্ত এই জলদস্যু গ্র"পের অধীনে আটটি ছিনতাইকৃত জাহাজ ছিল।

'জাহাজের নিরাপত্তায় প্রয়োজন সেনা প্রহরা'
ছিনতাই করা জাহাজ নিয়েই অন্য জাহাজ ছিনতাই করে সোমালি জলদস্যুরা। তাই উদ্ধারকারী জাহাজ বা হেলিকপ্টার জলদস্যুদের উপর হামলা চালাতে পারে না। মুক্ত দুই নাবিক জানান, ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের (আইএমও) উচিত ভারত মহাসাগর এলাকা অতিক্রমের সময় জাহাজে সশস্ত্র নিরাপত্তা প্রহরী রাখার অনুমতি দেওয়া।

তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এডেন উপসাগরে একটি 'আন্তর্জাতিক ট্রানজিট করিডোর' আছে। একসাথে পাঁচ থেকে ছয়টি জাহাজ ওই এলাকা পার হয়। এসময় আইএমও এবং ন্যাটোর যুদ্ধজাহাজ ও হেলিকপ্টার যৌথভাবে জাহাজগুলোকে পাহারা দেয়।" ওই করিডোরে পৌঁছানোর ঠিক আগ মুহূর্তে মারিয়া মার্গারেট ছিনতাই হয় বলে তারা জানান।

সোমালিয়া উপকূল থেকে দেড় হাজার নটিক্যাল মাইল দূরে ভারত মহাসাগরের অর্ধেক এলাকা এখন ওই দেশের জলদস্যুদের দখলে বলে দাবি করেন গিয়াসউদ্দিন। তিনি বলেন, "ইতিমধ্যে আমাদের জাহাজের মালিকপক্ষ জার্মান সরকারের সাথে যোগাযোগ শুরু করেছে। যাতে ভবিষ্যতে জার্মান পতাকাবাহী কোন জাহাজ ওই এলাকা অতিক্রম করার সময় জার্মান নৌবাহিনীর প্রহরার ব্যবস্থা করা যায়।"

চোখের পরীক্ষায় কী দেখা হয় by ডা. শারমিন হোসাইন

দৃষ্টিশক্তি ও দৃষ্টিসীমার মধ্যে বিভিন্ন দূরত্বের বস্তু সঠিকভাবে নিরূপণ করার ক্ষমতা নির্ধারণের জন্য চক্ষু বিশেষজ্ঞরা কয়েকটি সুনির্দিষ্ট পরীক্ষা করে থাকেন।

কেন প্রয়োজন
- দৃষ্টিশক্তির কোনো সমস্যা থাকলে অর্থাৎ কাছের বা দূরবর্তী কোনো বস্তু দেখতে সমস্যা হলে।
- যেসব রোগে আস্তে আস্তে চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে (গ্লুকোমা), তা প্রাথমিক অবস্থায় চিহ্নিত করতে।
- কোনো শারীরিক ব্যাধি (যেমন_ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ) চোখকে কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, তা নির্ধারণে।
- কোনো ধরনের টিউমার চোখকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে কি না (যেমন_রেটিনোব্লাস্টোমা)।
- মস্তিষ্কের কোনো সমস্যা, মাথার ভেতরের প্রেশার বেড়ে যাওয়া অথবা মস্তিষ্কের কোনো রক্তনালির সমস্যা প্রভৃতি চোখ পরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা যায়।
- চোখে ছানি পড়েছে কি না, পড়লে তা কোন পর্যায়ে আছে সেটি দেখতে।
কখন করাবেন
- সব শিশুকে ছয় মাস বয়সে অবশ্যই চোখ পরীক্ষা করানো প্রয়োজন।
- বাচ্চাকে স্কুলে ভর্তি করার আগে চোখ পরীক্ষা করে নিন।
- স্কুলে পড়ার সময় বোর্ডে লেখা পড়তে সমস্যা হলে বা চোখে ঝাপসা দেখলে বা মাথাব্যথা হলে।
- ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়লে অন্যান্য পরীক্ষার পাশাপাশি চোখও পরীক্ষা করান।
- ৪০ বছরের পর প্রতি দুই বছর অন্তর চোখ পরীক্ষা করান।
- চোখে বা মাথায় কোনো আঘাত পেলে চোখ পরীক্ষা করান।

চার্টের মাধ্যমে দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা
দূরে ও কাছে কেন্দ্রীভূত করার ক্ষমতা নির্ধারণী পরীক্ষা একসঙ্গে দুই চোখই পরীক্ষা করা হয়। স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তির একজন মানুষের একটি স্ট্যান্ডার্ড আকৃতির বস্তুর জন্য দৃষ্টিক্ষমতা হলে ৬/৬, এই চার্ট আসলে একটি পোস্টার, যেখানে কয়েক লাইনে বিভিন্ন আকৃতির অক্ষর থাকে এবং প্রতিটি লাইনের পাশে নম্বর দেওয়া থাকে, যা দ্বারা বোঝা যায় একটি স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তির মানুষ কত দূর থেকে ওই লাইন পড়তে পারবে। যে ব্যক্তির চোখ পরীক্ষা করা হবে, তার থেকে ২০ ফুট দূরে চার্টটি রাখা হয় ও পড়তে দেওয়া হয়। সবচেয়ে ক্ষুদ্র লাইনটি যদি ওই ব্যক্তি পড়তে না পারে, তবে ওই ব্যক্তি সঠিকভাবে যে ক্ষুদ্র লাইনটি পড়তে পারে তার সঙ্গে স্বাভাবিক মানুষের চোখের একটি অনুপাত তৈরি করা হয়। যেমন_অনুপাত যদি ২০/৪০ হয়, তবে বুঝতে হবে যে জিনিস একজন স্বাভাবিক মানুষ ৪০ ফুট দূর থেকে দেখতে পায় তা ওই ব্যক্তি ২০ ফুট দূরে থাকলে দেখতে পায়।
- ওই ব্যক্তি যদি সবচেয়ে বড় অক্ষরগুলোও পড়তে না পারে, তবে তাকে চার্টের দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে হবে যতক্ষণ না সে সবচেয়ে বড় লাইনটি পড়তে পারে।
- একেবারেই পড়তে না পারলে অন্তত লাইনগুলো আলাদাভাবে চিনতে পারে কি না তা দেখতে হবে।
- তা-ও করতে না পারলে ডাক্তার তার আঙুলগুলো গুনতে বলেন বিভিন্ন দূরত্ব থেকে এবং তার ভিত্তিতে তার দৃষ্টিশক্তি নির্ধারণ করেন।
আলোর সংবেদনশীলতা পরীক্ষা
একই সঙ্গে টর্চলাইটের আলো বিভিন্ন দিক থেকে চোখে ফেলে ওই ব্যক্তিকে আলোর উৎস কোথা থেকে তা নির্দিষ্ট করতে বলা হয়। এর মাধ্যমে তার চোখের আলোর সংবেদনশীলতা দেখা হয়।
চোখের মণির পরীক্ষা
এটি স্লিট ল্যাম্পের মাধ্যমে করা হয়। এই ল্যাম্প একটি বিশেষ ধরনের মাইক্রোফোন, যার একটি আলোক উৎস থাকে এবং একে প্রয়োজন অনুসারে পরিবর্তন করা যায়। এর সাহায্যে চোখের পাতা, কর্নিয়া, চোখের মণি, কনজাংটিভা, আইরিস ইত্যাদি দেখা হয়। এটি কনট্যাক্ট ল্যান্সের অবস্থা পর্যবেক্ষণে ব্যবহৃত হয়।
চোখের ত্রুটি নির্ধারণ
যাদের চোখের ক্ষমতা ৬/৬ এর কম তাদের ত্রুটি পরিমাণ করে চশমা বা লেন্স দেওয়ার জন্য এটি করা হয়, ফরপটার নামক একটি যন্ত্রের পেছনে ব্যক্তিকে বসতে হয়। এতে অনেক ধরনের লেন্স ব্যবহৃত হয় এবং সমন্বয় করে দেখা হয় কোন চোখে কোন লেন্স দিয়ে রোগী সবচেয়ে ভালো দেখতে পাচ্ছে।
বর্তমানে অটোম্যাটেড রিফ্লেক্টিং যন্ত্র দিয়ে চোখে আলো প্রবেশ করিয়ে প্রয়োজনীয় চশমা লেন্সের ধারণা পাওয়া যায়।
কোনো কোনো সময় এ পরীক্ষার আগে চোখে ড্রপ ব্যবহার করে চোখের পেশিকে শিথিল (relax) করা হয়।
অপথালমোস্কোপ পরীক্ষা
এ পরীক্ষায় চোখের মণিকে বড় করে অপথালমোস্কোপের সাহায্যে ১৫ গুণ বড় করে চোখের পেছনের দিকে ফান্ডাস, রেটিনা, রক্তনালি, অপটিক নার্ভ ইত্যাদি দেখা হয়। উভয় চোখের পরীক্ষাই করতে হয়। পরীক্ষার শুরুতে ঘর অন্ধকার করে নিতে হবে।

নড়াচড়া বা মোটিলিটি পরীক্ষা
কোনো ব্যক্তি যখন একই জিনিস দুটি দেখে বা যখন চিকিৎসক ধারণা করেন যে তার নিউরোলজিক্যাল কোনো সমস্যা রয়েছে তখন এ পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসক তার আঙুল উভয় পাশে, ওপরে, নিচে ইত্যাদি করে দেখেন যে চোখের নড়াচড়া ঠিক আছে কি না।
ভিসুয়াল ফিল্ড পরীক্ষা
চিকিৎসক ব্যক্তির দুই ফুট দূরে চোখে চোখ রেখে দাঁড়াবেন এবং মাঝখানে একটি আঙুল রেখে ধীরে ধীরে পাশে সরাবেন এবং ওই ব্যক্তি ঘাড় না ঘুরিয়ে কত দূর পর্যন্ত তা সঠিকভাবে দেখতে পায় তা জানতে হবে।

চোখ পরীক্ষার আগে
কোনো রোগ থাকলে, যেমন_উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক, পরীক্ষার আগেই চিকিৎসককে জানান, আপনি কোনো ওষুধ সেবন করতে থাকলে চিকিৎসককে জানান। কারণ এতে ব্যবহৃত চোখের ড্রপ বা পরীক্ষা পদ্ধতির জন্য অসুবিধা হতে পারে। আপনার অ্যাজমা, হার্টের সমস্যা, অ্যালার্জি বা রক্তক্ষরণের সমস্যা থাকলে কিছু বিশেষ পরীক্ষা করা বা ড্রপ ব্যবহার করা না-ও যেতে পারে।
পরীক্ষার পর
পরীক্ষার পর সঙ্গে সঙ্গেই বাসায় ফিরে যেতে পারবেন, তবে চোখে যেহেতু ড্রপ ব্যবহার করা হয় সেহেতু সাময়িক দৃষ্টিশক্তির সমস্যা হতে পারে। তাই ফেরার পথে গাড়ি ড্রাইভ না করাই ভালো।

রেসিডেন্ট, বিএসএমএমইউ, ঢাকা

ফুলকপির ঔষধি গুণ by জেড হক

বুজ-সাদার এক অপূর্ব সৃষ্টি ফুলকপি আমাদের দেশের বেশ জনপ্রিয় শীতকালীন সবজি। খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০ অব্দে ইউরোপে উৎপত্তি হওয়া ফুলকপির আদিস্থান ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা।

ফুলকপি পুষ্টিকর একটি সবজি। সাধারণত ফুলকপির ফুল অর্থাৎ সাদা অংশটুকুই খাওয়া হয় আর সাদা অংশের চারপাশে ঘিরে থাকা ডাঁটা এবং পুরু, সবুজ পাতা দিয়ে স্যুপ রান্না করা হয় অথবা ফেলে দেওয়া হয়। এটি রান্না বা কাঁচা যেকোনোভাবে খাওয়া যায়, আবার এটি দিয়ে আচারও তৈরি করা যায়।
ফুলকপির পাতাও পুষ্টিসমৃদ্ধ। পুষ্টিবিদদের মতে, খাদ্যোপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম ফুলকপির পাতায় যেসব পুষ্টি উপাদান রয়েছে, তা হলো জলীয় অংশ ৮০ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ৩ দশমিক ২ গ্রাম, আঁশ ২ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ৬৬ কিলো ক্যালরি, প্রোটিন ৫৯ গ্রাম, চর্বি ১ দশমিক ৩ গ্রাম, শর্করা ৭ দশমিক ৬ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৬২৬ মিলিগ্রাম ও আয়রন ৪০ মিলিগ্রাম। এতে গরুর দুধের চেয়ে ক্যালসিয়াম ও আয়রনের পরিমাণ যথাক্রমে পাঁচ গুণ এবং ২০০ গুণ বেশি।
- ফুলকপির কচি পাতা শীতকালে ঠাণ্ডায় ত্বকে লালচে হয়ে ফুলে যাওয়া এবং চুলকানি প্রতিরোধ করে।
- ভিটামিন এ-এর পরিমাণ বেশি থাকায় চোখকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে, দেহের কোথাও কেটে গেলে ফুলকপির কচি পাতার রস লাগালে ভালো ফল পাওয়া যায়।
- ফুলকপি পাতার উপরিভাগে ক্যান্সার নিরোধক উপাদান রয়েছে। বাল্টিমোরে জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের গবেষকরা ফুলকপির পাতায় আইসোথায়াসায়ানেটস নামক রাসায়নিক পদার্থ পেয়েছেন, যা দেহে সৃষ্ট জৈব রাসায়নিক পদার্থের স্বাভাবিক বিষক্রিয়া দূর করতে শক্তি জোগায়।
- বিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখেছেন, সপ্তাহে প্রায় দুই পাউন্ড এ-জাতীয় শাকসবজি খেলে মলাশয় ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অর্ধেক কমাতে পারে।
- ফুসফুস রক্ষায় সহায়তা করতে পারে ফুলকপি। নতুন এক গবেষণায় এ তথ্য জানা গেছে, ভয়াবহ ফুসফুস রোগের জন্য যেসব কারণ দায়ী তা প্রতিরোধে ফুলকপি সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। ডায়াবেটিসের কারণে রক্তনালির যে ক্ষতি হয় ফুলকপি তা প্রতিরোধে সহায়তা করে। তা ছাড়া ফুলকপির মতো সবজি হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
তথ্য সহায়তা : তৃপ্তি চৌধুরী
পুষ্টিবিদ, বিএসএমএমইউ, ঢাকা

লিভারের যত অসুখ by ডা. জিয়াউল হক

লিভারের কিছু রোগ বংশগত, কিছু অ্যাকোয়ার্ড বা অর্জিত। কিছু রোগ স্বল্পস্থায়ী যা চিকিৎসায় পুরোপুরি ভালো হয়ে যায়, কিছু রোগ দীর্ঘস্থায়ী, যা চিকিৎসা সত্ত্বেও ভালো হয় না এবং প্রাণহানি ঘটায়।
সাধারণত লিভারের যেসব রোগ হয় তা হলো_১. ভাইরাল হেপাটাইটিস (যা জন্ডিস নামে পরিচিত), ২. লিভার সিরোসিস, ৩. লিভার ক্যান্সার, ৪. লিভারের ফোঁড়া, ৫. লিভারের জন্মগত ও মেটাবলিক রোগ ইত্যাদি।
তবে অসুখ হলেই লক্ষণ প্রকাশ পায় না লিভারের রোগের ক্ষেত্রে যেমনটি অন্য অঙ্গের রোগে দেখা যায়। কারণ লিভারের ১১ ভাগের এক ভাগও যদি ভালো থাকে, তবুও লক্ষণ প্রকাশ না-ও পেতে পারে।

হেপাটাইটিস
হেপাটাইটিস (যকৃতের প্রদাহ), যা সাধারণের মধ্যে জন্ডিস নামে অধিক পরিচিত। ভাইরাস সংক্রমণসহ নানা কারণে এটি হয়ে থাকে। তবে আমাদের দেশে ব্যাপকহারে যে জন্ডিস দেখা যায়, তা ভাইরাসঘটিত। এই ভাইরাসের মধ্যে রয়েছে হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি এবং ই। এর মধ্যে এ ও ই পানি এবং খাদ্যবাহিত ভাইরাস; বি, সি ও ডি রক্ত কিংবা দূষিত সিরিঞ্জ সুচের মাধ্যমে বাহিত হয়। ই-ভাইরাস রক্তের মাধ্যমেও ছড়ায়।
লক্ষণ
দূষিত পানি কিংবা খাদ্যবস্তু গ্রহণের দুই থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে হেপাটাইটিস এ এবং ই দ্বারা আক্রান্ত হলে লক্ষণ প্রকাশ পায়। অপরদিকে হেপাটাইটিস বি এবং সি রোগের লক্ষণ দূষিত রক্ত কিংবা সিরিঞ্জের মাধ্যমে রোগ সংক্রমিত হওয়ার চার থেকে ছয় মাসের মধ্যে প্রকাশ হয়। অনেক ক্ষেত্রে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস রোগীর দেহে বাহক হিসেবে সুপ্ত থাকে। রোগের লক্ষণ দেখে পরীক্ষা ছাড়া বোঝার উপায় নেই কোন ভাইরাস হয়েছে। জন্ডিসের অন্যতম লক্ষণ হলো_হঠাৎ করে বমি বমি ভাব কিংবা তীব্র বমি হওয়া, দুর্বলতা এবং অবসাদ, খাদ্য গ্রহণে অরুচি, অনীহা কিংবা তীব্র দুর্বলতা, শরীর চুলকানো ইত্যাদি। কখনো জ্বর জ্বর ভাব বা জ্বরের মাধ্যমেও রোগের সূত্রপাত হতে পারে। এমনকি পায়ে এবং পেটে পানিও আসতে পারে।
রোগ নির্ণয়
রক্ত পরীক্ষা করে কোন জীবাণুর অ্যান্টিজন বা অ্যান্টিবডি আছে তা জানা যায়। হেপাটাইটিস-বি নির্ণয়ের জন্য রক্তকে এইচবি সারফেস অ্যান্টিজেনের (HBsAg) জন্য টেস্ট করতে হয়। সংক্রমণের ছয় থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে রক্তে এই অ্যান্টিজেন দেখা দেয়। টেস্ট পজিটিভ হলে চিকিৎসক আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবেন।
হেপাটাইটিস-সির জন্য প্রথমে চেক করা হবে এইচসিভি অ্যান্টিবডি (anti-HCV)। হেপাটাইটিস-সি অ্যান্টিবডিগুলোর রক্তে আবির্ভূত হতে সংক্রমণের পর সাত থেকে ৯ সপ্তাহ সময় লাগে। প্রথম টেস্ট পজিটিভ হলে আরো টেস্ট করতে হয়। যেমন_এইচসিভি আরএনএ। এটিও পজিটিভ হলে হেপাটাইটিস-সি রয়েছে বুঝতে হবে।
চিকিৎসা
হেপাটাইটিস যত তাড়াতাড়ি শনাক্ত করে চিকিৎসা শুরু করা যায়, ততই লিভারের (যকৃত) বিকলতা এবং মৃত্যুর ঝুঁকি এড়ানো যায়। হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হলে_
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে।
- স্বাভাবিক পরিমাণে বিশুদ্ধ পানীয় পান করতে হবে। অ্যালকোহল এড়িয়ে চলতে হবে।
- স্বাভাবিক খাওয়াদাওয়া যেমন_তরিতরকারি, মাছ, মাংস, হলুদ, মরিচ ইত্যাদি খেতে হবে।
- ফল, ডাবের পানি, আখের রস ইত্যাদি খাওয়ানোর প্রয়োজন নেই।
- ঘন ঘন গোসল করানোর প্রয়োজন নেই।
- যকৃতের জন্য ক্ষতিকর ওষুধ বর্জন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, লিভারের কোনো অসুখ হলে বহু ওষুধ এড়িয়ে চলতে হয়। তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া চলবে না।
- দীর্ঘ সময়ব্যাপী এবং দেহের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে এমন শরীরচর্চা এড়িয়ে চলতে হবে
- জন্ডিস হওয়ার এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে যদি রোগের লক্ষণ ভালো না হয়, তবে হাসপাতালে নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। তবে জন্ডিস হওয়ার পর কেউ অস্বাভাবিক অস্থির হলে, অস্বাভাবিক আচরণ করলে বা অজ্ঞান হলে অবিলম্বে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।

ক্রনিক হেপাটাইটিস
লিভারের দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহের ফলে যেসব রোগ হয়ে থাকে তাকে ক্রনিক হেপাটাইটিস বলে। বাংলাদেশে ক্রনিক হেপাটাইটিসের প্রধান কারণ হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাস।
রোগী প্রাথমিক অবস্থায় বুঝতেই পারেন না কখন তিনি বি অথবা সি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। চিকিৎসাবিহীন থাকলে এই সংক্রমণ মাসের পর মাস লিভার ক্ষতি করে। এমনকি লিভার সিরোসিসে রূপ নেয় এবং পরে লিভার ক্যান্সারে রূপান্তরিত হতে পারে।

ফ্যাটি লিভার
লিভার কোষে অতিরিক্ত চর্বি জমা হলে (গাঠনিক উপাদানের ৫ থেকে ১০ শতাংশ) তাকে ফ্যাটি লিভার বলে। যখন কোনো মানুষ তার দেহের প্রয়োজনের অতিরিক্ত চর্বি খাবারের সঙ্গে গ্রহণ করে, তখন এ চর্বি ধীরে ধীরে তার কলা বা টিসুতে জমতে থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এটি অতিরিক্ত অ্যালকোহল বা মদ্যপানের সঙ্গে সম্পর্কিত। কিন্তু যাঁরা মদ্যপানের সঙ্গে যুক্ত নন, তাঁদেরও এই রোগ হতে পারে।
কারণ
সাধারণত মধ্যবয়সী মহিলাদের দেখা দেয়। স্থূলতা ফ্যাটি লিভারের একটি প্রধান কারণ।
এ ছাড়া ডায়াবেটিস, রক্তে চর্বির মাত্রা বেশি (হাইপার লিপিডেমিয়া), বংশগত, ওষুধ এবং বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য যেমন_মদ বা অ্যালকোহল, স্টেরয়েড, টেট্রাসাইক্লিন এবং কার্বন টেট্রাক্লোরাইড ইত্যাদি কারণে ফ্যাটি লিভার হতে পারে। যাদের ওজন আদর্শ ওজনের ১০ থেকে ৪০ শতাংশ বেশি, তাদের ফ্যাটি লিভার হওয়ার ঝুঁকি বেশি। মুটিয়ে গেলে শিশুদেরও এ রোগ হতে পারে।
লক্ষণ এবং রোগ নির্ণয়
রোগীরা সাধারণত ক্লান্তি, অবসাদ, ওপরের পেটের ডান দিকে ব্যথা নিয়ে ডাক্তারদের কাছে আসেন। পরীক্ষা করলে দেখা যায়, রোগীদের এসজিপিটি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। এদের বিলুরুবিনের মাত্রা স্বাভাবিক থাকে। কারো ক্ষেত্রে দেখা যায়, লিভারে অ্যানজাইমের মাত্রা স্বাভাবিক অথচ লিভারের আল্ট্রাসনোগ্রামে চর্বির মাত্রা বেশি। পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাম, লিভার বায়োপসি পরীক্ষা করলে রোগটি নির্ণয় করা যায়।
ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধে যা করতে হবে
- সুষম খাদ্য খেতে হবে, যাতে সম্পৃক্ত চর্বির পরিমাণ অল্প এবং তন্তু বা আঁশজাতীয় খাবারের পরিমাণ বেশি থাকে।
- অতিরিক্ত ওজনের ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে ওজন কমাতে হবে।
- সপ্তাহে অন্তত চারবার ব্যায়াম করতে হবে। এ ক্ষেত্রে নিয়মিত হাঁটা, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালনা, বাগানে কাজ করা ইত্যাদির অভ্যাস করা যেতে পারে।
- মদ বা অ্যালকোহল এড়িয়ে চলতে হবে।
- ওষুধ খাওয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসরণ করতে হবে।

লিভার সিরোসিস
দীর্ঘস্থায়ী লিভারের প্রদাহ বা রোগের কারণে লিভারের গঠন-কাঠামো নষ্ট হয়ে যায়, কোষগুলো মরে যায়। লিভার তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারায়। ফাইব্রাস টিসু সে স্থান দখল করে জন্ম দেয় সিরোসিস নামক মারাত্মক রোগ। অনেক ক্ষেত্রেই লিভার সিরোসিস থেকে লিভারে ক্যান্সারও দেখা দিতে পারে।
লক্ষণ
প্রথম দিকে সিরোসিস আক্রান্ত রোগী বহু বছর পর্যন্ত কোনো রকম রোগের লক্ষণ ছাড়াই স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন। পরে দুর্বলতা, সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়া, জ্বর জ্বর ভাব, পেটের ডান পাশে ব্যথা, দাঁতের মাঢ়ি বা নাক দিয়ে রক্ত পড়া, ঘন ঘন পেটের সমস্যা হতে পারে। লিভার সিরোসিস আরো জটিল আকার ধারণ করলে পেটে পানি আসা, জন্ডিস হওয়া, অজ্ঞান হওয়া, রক্তবমি, পায়খানার সঙ্গে রক্ত যাওয়া, পুরুষত্বহীনতা, কিডনি ফেইলিওর, শরীরের যেকোনো জায়গা থেকে অনিয়ন্ত্রিত রক্তপাত, লিভার ক্যান্সার হতে পারে।
লিভার সিরোসিসের কারণ
উপমহাদেশে প্রধান কারণ হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস আর এর পরই রয়েছে ফ্যাটি লিভার। ইউরোপ ও আমেরিকায় সিরোসিসের প্রধান কারণ অ্যালকোহল ও হেপাটাইটিস-সি ভাইরাস। ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত প্রায় ৩০ শতাংশ রোগী পরে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়।
রোগ নির্ণয়
রক্তস্বল্পতা, রক্ত জমাট বাঁধার অস্বাভাবিকতা, যকৃতে বেশি পরিমাণে জৈব রসায়ন, বেশি বিলুরুবিন, কম সিরাম অ্যালবুমিন ইত্যাদি সমস্যা ধরা পড়তে পারে। সিরোসিস সম্পর্কে নিশ্চিত পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাম, যকৃতের বায়োপসি করতে হয়।
প্রতিরোধে যা করতে হবে
- হেপাটাইটিস বি ও সি সংক্রমণ ঝুঁকি কমাতে হবে।
- আন্তশিরা ওষুধ ব্যবহার পরিহার অথবা পরিষ্কার সুচ ব্যবহার করা এবং অন্য সরঞ্জাম কখনোই অন্যের সঙ্গে ভাগ করে ব্যবহার না করা।
- মদ্যপান করবেন না।
লিভারকে বলা হয় শরীরের পাওয়ার হাউস। তাই লিভারের অসুস্থতার ফলাফল ক্ষেত্রবিশেষে হতে পারে ব্যাপক ও ভয়াবহ। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণ নিরাময় এবং জটিলতামুক্ত থাকা যায়। লিভার সুস্থ রাখতে আপনার সচেতনতাই আসলে সবচেয়ে বড় চিকিৎসা।

পুলিশের সঙ্গে 'ডাকাতের সংঘর্ষে' কলেজছাত্র নিহত

রাজধানীতে পুলিশের সঙ্গে 'ডাকাতের সংঘর্ষে' এক কলেজছাত্র নিহত হয়েছে। পরিবার বলছে সে নির্দোষ। তার বিরুদ্ধে থানায় কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। নিহত ওই কলেজছাত্রের নাম ইমতিয়াজ হোসেন আবির (১৭)। রাজধানীর পল্লবীতে সোমবার রাতে পায়ে পুলিশের গুলিতে আহত হন তিনি। ওইরাতেই পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

সোমবার রাতে পুলিশ জানিয়েছিল, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে 'ডাকাত' আবির গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় পুলিশের এক কনস্টেবলের পায়েও গুলি লাগে। আবিরের বাবা কাজি গোলাম ফারুক তিতাসের প্রধান কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক (হিসাব শাখা)। মা মনোয়ারা বেগম একই প্রতিষ্ঠানের মিরপুর শাখার একজন কর্মকর্তা। তারা মিরপুরের রূপনগর আবাসিক এলাকার বাসিন্দা। তার আরো এক ভাই ও এক বোন রয়েছে। বড় বোন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। ছোট ভাই মিরপুর মণিপুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র।

মঙ্গলবার আবিরের চাচা আবু জাফর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আবিরের বিরুদ্ধে থানায় কোনো অভিযোগ নেই। সে মোহাম্মদপুরের নর্দান কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ত।" পল্লবী থানার অপারেশন অফিসার ফিরোজ হোসেন মোল্লা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আবিরের বিরুদ্ধে থানায় কোনো মামলা কিংবা অভিযোগ নেই।"

তবে সোমবার রাতের ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে তিনটি মামলা করেছে বলে জানান ফিরোজ। তিনটি মামলাতেই আবিরকে প্রধান আসামি ও অজ্ঞাত আরো কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। মামলাগুলো হলো- অস্ত্র উদ্ধারের একটি, 'পুলিশকে গুলি করে আহত করার ঘটনায়' একটি এবং ডাকাতির প্রস্তুতির সময় পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে একজন নিহত ঘটনায় একটি মামলা হয়।

পল্লবী থানার ওসি মো. ইকবাল হোসেন সোমবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাউনিয়া বাঁধ বালুর মাঠ এলাকায় কয়েকজন সন্ত্রাসী ডাকাতির প্রস্তুতি নেওয়ার সময় পুলিশ অভিযান চালায়।" "অভিযানের সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে সন্ত্রাসীরা গুলি ছুড়লে পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে," জানিয়ে তিনি বলেন, "এসময় এক সন্ত্রাসী পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়। পরে রাতে জানা যায় তার নাম আবির।"

সন্ত্রাসীদের গুলিতে পুলিশ কনস্টেবল সাইদুর রহমান আহত হন জানিয়ে ওসি ইকবার বলেন, "ঘটনাস্থল থেকে একটি রিভলবার ও দুই রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।" আবিরের চাচা আবু জাফর জানান, সোমবার সন্ধ্যার দিকে মায়ের কাছ থেকে দুশ টাকা নিয়ে সে বাসা থেকে বের হয়। রাতে না ফেরায় তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে অন্য একজন ফোন ধরে কথা না বলে কেটে দেয়।

তিনি জানান, রাত থেকেই আবিরের খোঁজ শুরু করা হয়। পরে মঙ্গলবার সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে আবিরের লাশ শনাক্ত করা হয়। "শুধু পায়ে গুলি লাগার কারণে কিভাবে তার মৃত্যু হতে পারে?" প্রশ্ন তুলে আবু জাফর বলেন, "পুলিশ আন্তরিক হলে তাকে বাঁচানো সম্ভব হতো।" এ ঘটনায় মামলা করা হবে কি না জানতে চাইলে আবু জাফর বলেন, এ বিষয়ে পারিবারিকভাবে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।