Wednesday, January 12, 2011

প্রকল্প বাস্তবায়নে বিদেশি ঋণের ব্যবহার কমছে by রুহুল আমিন রানা

প্রকল্প গ্রহণকালে বৈদেশিক সহায়তা পেতে উৎসাহ ও উদ্যোগের কমতি নেই। অনেক দেন-দরবারের পর নানা শর্তের বেড়াজালে মেলে বিপুল ঋণ। তবে ঋণের বড় অঙ্কের অর্থ সময়মতো কাজে লাগানো যাচ্ছে না। প্রকল্প শুরু করতে বাস্তবায়নকারী সংস্থার ঢিলেমি, নানা ছুতোয় দাতাদের অর্থ ছাড়ে বিলম্ব এবং সরকারের দীর্ঘ অনুমোদন প্রক্রিয়ার কারণে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বৈদেশিক সহায়তার অর্থ ব্যবহারের পরিমাণ কমছে।
এ কারণে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) বৈদেশিক সহায়তা প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা কমে যাচ্ছে। সরকারের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিদ্যুৎ খাতসহ কৃষি, পানিসম্পদ, পরিবহন, স্বাস্থ্য এবং বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে চলতি অর্থবছরের (২০১০-১২) আরএডিপিতে উল্লেখযোগ্যমাত্রায় বৈদেশিক সাহায্য কমতে পারে বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৈদেশিক ঋণ সহায়তা রয়েছে_এমন প্রকল্পে দাতা গোষ্ঠীর শর্তের শেষ নেই। বাস্তবায়নের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দাতাদের নানা পরামর্শ ও সুপারিশ মেনে কাজ করতে হয়। দরপত্র আহ্বান, পরামর্শক ও বিশেষজ্ঞ নিয়োগ, কেনাকাটা এমনকি কোনো দেশ থেকে পণ্য আমদানি করা হবে সেটি নির্ধারণেও দাতাদের শর্ত মেনে চলতে হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রতিটি ধাপে এগুলোকে উটকো ঝামেলা হিসেবেই মনে করে বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো। এসব সমস্যা এড়াতেই বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহ কমছে।
পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তথ্য অনুযায়ী অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে এডিপিতে বরাদ্দ ১৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকার বৈদেশিক সহায়তার বিপরীতে মাত্র দুই হাজার ২৬১ কোটি টাকা ব্যবহার করা সম্ভব হয়েছে। গত অর্থবছরে একই সময়ে ১২ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকার বিপরীতে ব্যয় হয়েছিল দুই হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা। আইএমইডির কর্মকর্তাদের মতে, উন্নয়ন সহযোগীরা নিজস্ব নীতি-নির্দেশনা অনুযায়ী অর্থ ছাড় করছে। এ কারণে প্রশাসনিক জটিলতায় দীর্ঘসূত্রতা বাড়ছে। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের এডিপিতে সরকার নিজস্ব অর্থায়নের বেশ কিছু বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব কারণে এ বছর বিদেশি সহায়তার ব্যবহার কমে গেছে। সরকারের নিজস্ব অর্থে পরিচালিত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে আগ্রহ বেশি মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আরএডিপিতে বৈদেশিক সহায়তা কমলেও প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে আরো প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করেছে। চলতি অর্থবছরে সরকার সাড়ে ৩৮ হাজার কোটি টাকার এডিপি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করে। এর মধ্যে সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে এডিপির ৬০ শতাংশ বা ২৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা এবং বাকি ৪০ শতাংশ বা ১৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা বৈদেশিক সহায়তা হিসেবে জোগান দেওয়ার কথা ছিল। আরএডিপিতে বৈদেশিক বরাদ্দ প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা কমে যাওয়ায় এডিপি বাস্তবায়নে সরকারি তহবিলের হার বাড়ছে বলে কর্মকর্তারা জানান।
অর্থনৈতিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বৈদেশিক সহায়তার ক্ষেত্রে আরএডিপিতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ কমছে বিদ্যুৎ খাতে। এ খাতে এডিপির তুলনায় বৈদেশিক সাহায্য কমছে ৫৩২ কোটি টাকা। এডিপিতে দুই হাজার ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে আরএডিপিতে এ খাতে এক হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া পরিবহন খাতে বৈদেশিক সহায়তা দুই হাজার ৫০৯ কোটি থেকে ৩৪৯ কোটি কমিয়ে আরএডিপিতে দুই হাজার ১৬১ কোটি টাকা, স্বাস্থ্য খাতে ৪৯৬ কোটি টাকা কমিয়ে এক হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা, শিক্ষা ও ধর্ম খাতে এক হাজার ৮৭১ কোটি থেকে কমিয়ে এক হাজার ৭৮৪ কোটি টাকা, কৃষি খাতে ৫১৫ কোটি থেকে কমিয়ে ৪৪৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। অন্য সব খাতের মধ্যে পল্লী উন্নয়ন খাতে এক হাজার ৫৫৩ কোটি থেকে হ্রাস করে এক হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা, পানিসম্পদ খাতে ৫০৫ কোটি থেকে কমিয়ে ৪৩৮ কোটি টাকা, বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তি খাতে ১৯ কোটি টাকা কমিয়ে তিন কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

No comments:

Post a Comment