Wednesday, January 12, 2011

চোখের পরীক্ষায় কী দেখা হয় by ডা. শারমিন হোসাইন

দৃষ্টিশক্তি ও দৃষ্টিসীমার মধ্যে বিভিন্ন দূরত্বের বস্তু সঠিকভাবে নিরূপণ করার ক্ষমতা নির্ধারণের জন্য চক্ষু বিশেষজ্ঞরা কয়েকটি সুনির্দিষ্ট পরীক্ষা করে থাকেন।

কেন প্রয়োজন
- দৃষ্টিশক্তির কোনো সমস্যা থাকলে অর্থাৎ কাছের বা দূরবর্তী কোনো বস্তু দেখতে সমস্যা হলে।
- যেসব রোগে আস্তে আস্তে চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে (গ্লুকোমা), তা প্রাথমিক অবস্থায় চিহ্নিত করতে।
- কোনো শারীরিক ব্যাধি (যেমন_ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ) চোখকে কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, তা নির্ধারণে।
- কোনো ধরনের টিউমার চোখকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে কি না (যেমন_রেটিনোব্লাস্টোমা)।
- মস্তিষ্কের কোনো সমস্যা, মাথার ভেতরের প্রেশার বেড়ে যাওয়া অথবা মস্তিষ্কের কোনো রক্তনালির সমস্যা প্রভৃতি চোখ পরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা যায়।
- চোখে ছানি পড়েছে কি না, পড়লে তা কোন পর্যায়ে আছে সেটি দেখতে।
কখন করাবেন
- সব শিশুকে ছয় মাস বয়সে অবশ্যই চোখ পরীক্ষা করানো প্রয়োজন।
- বাচ্চাকে স্কুলে ভর্তি করার আগে চোখ পরীক্ষা করে নিন।
- স্কুলে পড়ার সময় বোর্ডে লেখা পড়তে সমস্যা হলে বা চোখে ঝাপসা দেখলে বা মাথাব্যথা হলে।
- ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়লে অন্যান্য পরীক্ষার পাশাপাশি চোখও পরীক্ষা করান।
- ৪০ বছরের পর প্রতি দুই বছর অন্তর চোখ পরীক্ষা করান।
- চোখে বা মাথায় কোনো আঘাত পেলে চোখ পরীক্ষা করান।

চার্টের মাধ্যমে দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা
দূরে ও কাছে কেন্দ্রীভূত করার ক্ষমতা নির্ধারণী পরীক্ষা একসঙ্গে দুই চোখই পরীক্ষা করা হয়। স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তির একজন মানুষের একটি স্ট্যান্ডার্ড আকৃতির বস্তুর জন্য দৃষ্টিক্ষমতা হলে ৬/৬, এই চার্ট আসলে একটি পোস্টার, যেখানে কয়েক লাইনে বিভিন্ন আকৃতির অক্ষর থাকে এবং প্রতিটি লাইনের পাশে নম্বর দেওয়া থাকে, যা দ্বারা বোঝা যায় একটি স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তির মানুষ কত দূর থেকে ওই লাইন পড়তে পারবে। যে ব্যক্তির চোখ পরীক্ষা করা হবে, তার থেকে ২০ ফুট দূরে চার্টটি রাখা হয় ও পড়তে দেওয়া হয়। সবচেয়ে ক্ষুদ্র লাইনটি যদি ওই ব্যক্তি পড়তে না পারে, তবে ওই ব্যক্তি সঠিকভাবে যে ক্ষুদ্র লাইনটি পড়তে পারে তার সঙ্গে স্বাভাবিক মানুষের চোখের একটি অনুপাত তৈরি করা হয়। যেমন_অনুপাত যদি ২০/৪০ হয়, তবে বুঝতে হবে যে জিনিস একজন স্বাভাবিক মানুষ ৪০ ফুট দূর থেকে দেখতে পায় তা ওই ব্যক্তি ২০ ফুট দূরে থাকলে দেখতে পায়।
- ওই ব্যক্তি যদি সবচেয়ে বড় অক্ষরগুলোও পড়তে না পারে, তবে তাকে চার্টের দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে হবে যতক্ষণ না সে সবচেয়ে বড় লাইনটি পড়তে পারে।
- একেবারেই পড়তে না পারলে অন্তত লাইনগুলো আলাদাভাবে চিনতে পারে কি না তা দেখতে হবে।
- তা-ও করতে না পারলে ডাক্তার তার আঙুলগুলো গুনতে বলেন বিভিন্ন দূরত্ব থেকে এবং তার ভিত্তিতে তার দৃষ্টিশক্তি নির্ধারণ করেন।
আলোর সংবেদনশীলতা পরীক্ষা
একই সঙ্গে টর্চলাইটের আলো বিভিন্ন দিক থেকে চোখে ফেলে ওই ব্যক্তিকে আলোর উৎস কোথা থেকে তা নির্দিষ্ট করতে বলা হয়। এর মাধ্যমে তার চোখের আলোর সংবেদনশীলতা দেখা হয়।
চোখের মণির পরীক্ষা
এটি স্লিট ল্যাম্পের মাধ্যমে করা হয়। এই ল্যাম্প একটি বিশেষ ধরনের মাইক্রোফোন, যার একটি আলোক উৎস থাকে এবং একে প্রয়োজন অনুসারে পরিবর্তন করা যায়। এর সাহায্যে চোখের পাতা, কর্নিয়া, চোখের মণি, কনজাংটিভা, আইরিস ইত্যাদি দেখা হয়। এটি কনট্যাক্ট ল্যান্সের অবস্থা পর্যবেক্ষণে ব্যবহৃত হয়।
চোখের ত্রুটি নির্ধারণ
যাদের চোখের ক্ষমতা ৬/৬ এর কম তাদের ত্রুটি পরিমাণ করে চশমা বা লেন্স দেওয়ার জন্য এটি করা হয়, ফরপটার নামক একটি যন্ত্রের পেছনে ব্যক্তিকে বসতে হয়। এতে অনেক ধরনের লেন্স ব্যবহৃত হয় এবং সমন্বয় করে দেখা হয় কোন চোখে কোন লেন্স দিয়ে রোগী সবচেয়ে ভালো দেখতে পাচ্ছে।
বর্তমানে অটোম্যাটেড রিফ্লেক্টিং যন্ত্র দিয়ে চোখে আলো প্রবেশ করিয়ে প্রয়োজনীয় চশমা লেন্সের ধারণা পাওয়া যায়।
কোনো কোনো সময় এ পরীক্ষার আগে চোখে ড্রপ ব্যবহার করে চোখের পেশিকে শিথিল (relax) করা হয়।
অপথালমোস্কোপ পরীক্ষা
এ পরীক্ষায় চোখের মণিকে বড় করে অপথালমোস্কোপের সাহায্যে ১৫ গুণ বড় করে চোখের পেছনের দিকে ফান্ডাস, রেটিনা, রক্তনালি, অপটিক নার্ভ ইত্যাদি দেখা হয়। উভয় চোখের পরীক্ষাই করতে হয়। পরীক্ষার শুরুতে ঘর অন্ধকার করে নিতে হবে।

নড়াচড়া বা মোটিলিটি পরীক্ষা
কোনো ব্যক্তি যখন একই জিনিস দুটি দেখে বা যখন চিকিৎসক ধারণা করেন যে তার নিউরোলজিক্যাল কোনো সমস্যা রয়েছে তখন এ পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসক তার আঙুল উভয় পাশে, ওপরে, নিচে ইত্যাদি করে দেখেন যে চোখের নড়াচড়া ঠিক আছে কি না।
ভিসুয়াল ফিল্ড পরীক্ষা
চিকিৎসক ব্যক্তির দুই ফুট দূরে চোখে চোখ রেখে দাঁড়াবেন এবং মাঝখানে একটি আঙুল রেখে ধীরে ধীরে পাশে সরাবেন এবং ওই ব্যক্তি ঘাড় না ঘুরিয়ে কত দূর পর্যন্ত তা সঠিকভাবে দেখতে পায় তা জানতে হবে।

চোখ পরীক্ষার আগে
কোনো রোগ থাকলে, যেমন_উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক, পরীক্ষার আগেই চিকিৎসককে জানান, আপনি কোনো ওষুধ সেবন করতে থাকলে চিকিৎসককে জানান। কারণ এতে ব্যবহৃত চোখের ড্রপ বা পরীক্ষা পদ্ধতির জন্য অসুবিধা হতে পারে। আপনার অ্যাজমা, হার্টের সমস্যা, অ্যালার্জি বা রক্তক্ষরণের সমস্যা থাকলে কিছু বিশেষ পরীক্ষা করা বা ড্রপ ব্যবহার করা না-ও যেতে পারে।
পরীক্ষার পর
পরীক্ষার পর সঙ্গে সঙ্গেই বাসায় ফিরে যেতে পারবেন, তবে চোখে যেহেতু ড্রপ ব্যবহার করা হয় সেহেতু সাময়িক দৃষ্টিশক্তির সমস্যা হতে পারে। তাই ফেরার পথে গাড়ি ড্রাইভ না করাই ভালো।

রেসিডেন্ট, বিএসএমএমইউ, ঢাকা

No comments:

Post a Comment