Sunday, September 18, 2011

হারিয়ে যাচ্ছে নৌপথ by অরূপ দত্ত

৯৭৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ২৪ হাজার কিলোমিটার নৌপথ ছিল। সেই নৌপথ কমতে কমতে এখন প্রায় ছয় হাজার কিলোমিটারে নেমেছে। শুকনো মৌসুমে আরও কমে হয় তিন হাজার ৮০০ কিলোমিটার। অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নদী সংরক্ষণ বিভাগ এই হিসাব দিয়েছে।
১৯৬৫ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত নেদারল্যান্ডের নদী বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতায় জরিপ করে তৈরি করা ‘নেডেকো রিপোর্ট’ এবং ১৯৭৫ সালে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) প্রকাশিত নদীর দূরত্ববিষয়ক প্রতিবেদন থেকে দেশে ২৪ হাজার কিলোমিটার নৌপথ থাকার তথ্য পাওয়া যায়।
পলি ও বালু পড়ে নদীর নাব্যতা কমে যাওয়া এবং দখল ও দূষণের কারণে প্রায় ১৮ হাজার কিলোমিটার নদীপথ বন্ধ বা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক স্থানে নদীতে পানির গভীরতা নেমে এসেছে তিন ফুটেরও নিচে।
বর্তমানে নাব্যতার সংকট এতটাই তীব্র যে মাঝেমধ্যেই ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। চলতি মাসের শুরুতে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া চ্যানেলে অন্তত পাঁচটি ফেরি বেশ কয়েকবারে প্রায় আড়াই শ ঘণ্টা ডুবোচরে আটকে ছিল। অসংখ্য ডুবোচরের ফাঁক দিয়ে কোনোমতে ফেরি চলছে।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে খননকাজে প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয় দেখানো হয়। ওই সময় শুকনো মৌসুমে নদীপথ কমতে থাকে বেশি হারে। তখন পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া-গোদাগাড়ী চ্যানেলে পদ্মা, দৈ-খাওয়ায় যমুনা; ছাতক ও লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরীর ঘাটে মেঘনায় ৩৬ লাখ ঘনমিটার নদী খননকাজের নামে ৪৬ কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এই অভিযোগের তদন্ত করছে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে খননকাজের জন্য ২৪ হাজার কোটি টাকার পরিকল্পনা নিলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। বলা হচ্ছে, খননকাজে ১২৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। অথচ বিআইডব্লিউটিএ সূত্রের হিসাব অনুযায়ী, গত দুই বছরে ৪০৭ কিলোমিটার নৌপথ এবং ১২টি ঘাট বন্ধ হয়ে গেছে। নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে এখন অন্তত ৫০টি ড্রেজার বা খননযন্ত্র প্রয়োজন। আছে মাত্র ১০টি। ভাড়া করা হচ্ছে ১৫টি।
প্রথম শ্রেণীর নদীপথ মাত্র ৬৮৩ কিলোমিটার: বর্তমানে দেশে পাঁচ হাজার ৯৯৫ কিলোমিটার নৌপথের মধ্যে ১২-১৩ ফুট গভীরতার প্রথম শ্রেণীর নৌপথ আছে মাত্র ৬৮৩ কিলোমিটার। চট্টগ্রাম-ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ-ভৈরব, আশুগঞ্জ, বরিশাল-মংলা ও খুলনায় সংযোগকারী নৌপথগুলো এই শ্রেণীভুক্ত। সাত-আট ফুট গভীরতার দ্বিতীয় শ্রেণীর নৌপথ আছে প্রায় এক হাজার কিলোমিটার। পাঁচ-ছয় ফুট গভীরতার তৃতীয় শ্রেণীর নৌপথ আছে এক হাজার ৮৮৫ কিলোমিটার। পাঁচ ফুটের নিচে বাকি নৌপথ নৌযান চলাচলের অযোগ্য।
এখন প্রায়ই ফেরি আটকে যাচ্ছে: ১০ সেপ্টেম্বর সকাল সাতটা থেকে দৌলতদিয়া ঘাটের কাছে নৌযান চলাচলকারী চ্যানেলে একে একে সাতটি ফেরি আটকা পড়ে। এতে মানিকগঞ্জ-পাটুরিয়া হয়ে রাজধানীর সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগ নয় ঘণ্টা বন্ধ থাকে। পদ্মা ও যমুনা নদীর সংযোগস্থল বরাবর দুই তীরে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাটে কয়েক শ যাত্রীবাহী যানবাহন আটকা পড়ে।
বিআইডব্লিউটিএর স্থানীয় কর্মকর্তারা স্বীকার করেন যে সেখানে চ্যানেলের প্রশস্ততা ও নাব্যতা কম। খননকাজের জন্য চ্যানেলে খননযন্ত্র স্থাপন করা হলে ফেরি চলাচল বিঘ্নিত হয়। এসব কারণে খননকাজ বন্ধ রাখতে হয়।
ওই দিন ভোর চারটার দিকে যানবাহন ও যাত্রী নিয়ে ফেরি কেরামত আলী পাটুরিয়ার উদ্দেশে দৌলতদিয়া ঘাট ছাড়ার পর চ্যানেলের মুখে আটকা পড়ে। এর প্রায় দুই ঘণ্টা পর পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়ায় যাওয়ার পথে একই স্থানে আটকা পড়ে ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান। প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টা করে সংস্থার উদ্ধারকারী জাহাজ আইটি-৩৯৮-এর সাহায্যে সকাল সাড়ে আটটার দিকে ঘাটে ফিরিয়ে আনা হয় কেরামত আলীকে। আটকে পড়া হামিদুর রহমানকে উদ্ধার করা হয় সকাল ১০টায়। এরপর পাটুরিয়া থেকে ছেড়ে যাওয়া ফেরি শাহ মখদুম, শাহ আলী, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান, আমানত শাহ ও হামিদুর রহমান দৌলতদিয়া চ্যানেলের মুখে পর্যায়ক্রমে আটকা পড়ে। এসব ফেরিতে আটকা পড়ে প্রায় ১০০ যানবাহন আর বিপুলসংখ্যক যাত্রী।
১১ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টার দিকে মাত্র আটটি যানবাহন নিয়ে দৌলতদিয়া ঘাট থেকে পাটুরিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কয়েক মিনিট পরই ফেরি খানজাহান আলী চরে আটকে যায়। কিছুক্ষণ পর আটকে পড়ে শাহ মখদুমসহ আরও দুটি ফেরি। আধা ঘণ্টা চেষ্টা করে ফেরির মাস্টাররা দুটি ফেরি নিয়ে পাটুরিয়া ঘাটে ভিড়তে সক্ষম হলেও ফেরি খানজাহান আলী আটকে থাকে। পরে বিআইডব্লিউটিএর উদ্ধারকারী জাহাজ ‘আশা’ দুপুর একটার দিকে ফেরিটি উদ্ধার করে। রাত ১২টার দিকে ছোট ফেরি কুমারী দৌলতদিয়া থেকে পাটুরিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর ডুবোচরে আটকা পড়ে।
১২ সেপ্টেম্বর মাওয়া-কাওরাকান্দি ও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাটে নাব্যতার সংকট তীব্র হয়ে ওঠে। দুটি ফেরিপথে ধারণক্ষমতার কম যানবাহন নিয়েও ডুবোচরে একের পর এক ফেরি আটকে যায়। মাওয়া-কাওরাকান্দি ফেরিপথে নাওডোবা-হাজরা-মাগুখণ্ড সরু চ্যানেল দিয়ে ধারণক্ষমতার অনেক কম যান নিয়ে চলতে হয় ফেরি। এ সময় শুধু যাত্রীবাহী যান ও কাঁচামালবাহী ট্রাকই চলাচল করছিল। পণ্যবাহী ট্রাককে পারাপারের জন্য তিন দিন পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হয়। এই পরিস্থিতিতে টাস্কফোর্স গঠন করা হলেও অবস্থার তেমন পরিবর্তন হয়নি।
যোগাযোগ করা হলে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল মান্নান হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, গত মাসে কিছু সমস্যা হলেও এখন নৌপথে ফেরি চলাচল অনেকটা ভালো অবস্থায় এসেছে। নাব্যতা সংকট কমাতে নিরন্তর চেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় যথেষ্ট সতর্ক রয়েছে। এ-সংক্রান্ত প্রকল্পও বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান তিনি।
দুই বছরে ৪০৭ কিলোমিটার নৌপথ বন্ধ: বিআইডব্লিউটিএর নদী সংরক্ষণ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, গত দুই বছরে পানির গভীরতা পাঁচ ফুটের নিচে নেমে আসায় ৪০৭ কিলোমিটার নদীপথ বন্ধ হয়ে গেছে। এগুলো হচ্ছে কিশোরগঞ্জের পাগলামোড়-মোহনগঞ্জে কংস নদে ৪৩ কিলোমিটার, খুলনা-কালিকাপুর রুটে মধুমতী নদীতে ১৩৮, কালিকাপুর-মাদারীপুর-নন্দীপাড়ায় মধুমতী নদীতে ৫৬, যশোরে কপোতাক্ষ-টেপাখালীতে ৮৫ এবং পাইকগাছা-আশাশুনি-প্রতাপনগরে ৮৫ কিলোমিটার নৌপথ।
বন্ধ ১২টি ঘাট: নাব্যতা সংকটের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে ১২টি ঘাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে— গোয়ালন্দঘাট, ভাগ্যকুল, জসিলদিয়া, গৌরগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, সরিষাবাড়ী, গোদাগাড়ী, রাজশাহী, মিরকুটিয়া, পাকশী, জগন্নাথগঞ্জ ও ফুলছড়ি বন্দর।
বিআইডব্লিউটিএর দাবি: বিআইডব্লিউটিএ দাবি করেছে, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ৪১ কিলোমিটার নৌপথের উন্নয়ন করে প্রথম শ্রেণীভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে কালীগঞ্জ-হিজলায় ২৫ কিলোমিটার এবং সদরঘাট-মিরপুর সেতু পর্যন্ত বুড়িগঙ্গা নদীর ১৬ কিলোমিটার পথ রয়েছে। এ ছাড়া মিরপুর থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার এবং সাহেবের হাট নালার ১২ কিলোমিটার অংশকে খনন করে উন্নয়ন করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এই উন্নয়ন চোখে পড়ে না। সদরঘাট থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত বৃত্তাকার নৌপথের প্রথম ভাগে নাব্যতার অভাবে বড় নৌযান চলতে পারছে না, যে কারণে বর্তমান সরকারের বহুল প্রচারিত ‘ওয়াটার বাস’ চলাচল প্রায় বন্ধ করতে হয়েছে।
খননে অতি খরচ: বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর খননযন্ত্র ভাড়া নেওয়া, কর্মপরিকল্পনা, খননযন্ত্রের খুচরা যন্ত্রাংশ সংগ্রহ ইত্যাদি কাজে মোট ১২৫ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে বলে জানা যায়। ২০০৮-০৯ সালে খরচ হয়েছে ৩১ কোটি ৪১ লাখ টাকা, ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা আর গত অর্থবছরে ৪৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। এসবের সুফল তেমন পাওয়া যায়নি। চলতি অর্থবছরের জন্য খননকাজে বাইরের খননযন্ত্র ভাড়ার জন্য ৩৭ কোটিসহ মোট বাজেট রাখা হয়েছে ৭১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। এদিকে যে খননযন্ত্রগুলো আছে, সেগুলোও সময়মতো কাজে লাগানো হয় না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যেমন, গত জুলাই মাসের শেষ দিকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় নদী খননের জন্য বিআইডব্লিউটিএর পাঁচটি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি খননযন্ত্র পাঠানো হলেও ব্যবহার করা হয়নি। এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর ব্যাখ্যা হচ্ছে, স্রোতের গতি দুই নটিক্যালের বেশি থাকলে খননকাজ করা যায় না। কিন্তু বর্তমানে সেখানে স্রোতের গতি সাড়ে চার নটিক্যাল হলেও খননকাজ করা হচ্ছে। এ অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া আটটায় দৌলতদিয়ায় শাহ আলী নামের একটি ফেরি সেখানে আটকে যায়।
এ ছাড়া গত বছর বেশি স্রোত থাকা সত্ত্বেও বিআইডব্লিউটিএ মাওয়ায় হাজরা শোলে দুই কোটি টাকা খরচ করে খননকাজ করেছিল। বিআইডব্লিউটিএ দাবি করেছে, ওই কাজ একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর আগ্রহে করা হয়েছিল। কিন্তু মাওয়ায় পদ্মা নদীতে, ঢাকায় বুড়িগঙ্গায় ও আরিচায় খননকাজ করার পর নাব্যতা প্রায় আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। আংশিক খননকাজ করে পুরো বিল তুলে নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। চলতি অর্থবছরের জন্য শুধু খননকাজে ৩৭ কোটি টাকা বাজেট রাখা হয়েছে।
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য: বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান আবদুল মালেক মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘ সময়জুড়ে দেশের নদ-নদীকে অবহেলা করে একরকম হত্যাই করা হয়েছে। ময়মনসিংহে ব্রহ্মপুত্র নদ শুকিয়ে গেছে। বাগেরহাটের রামপালে নদীর এমন অবস্থা হয়েছে যে এখন উন্নয়নও করা যাচ্ছে না। আড়িয়াল খাঁ নদের নাব্যতা ফেরানোর চেষ্টা হচ্ছে। অল্প সামর্থ্যের মধ্যে বিআইডব্লিউটিএকে কাজ করতে হচ্ছে। তার পরও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়াসহ যেসব চ্যানেলে এই মুহূর্তে সমস্যা হচ্ছে, সেগুলোতে বিআইডব্লিউটিএর খননকাজ অব্যাহত রয়েছে।
নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে বিআইডব্লিউটিএ কোনো মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে কি না—এ প্রসঙ্গে চেয়ারম্যান বলেন, বিআইডব্লিউটিএ ৫৩টি নদীর উন্নয়নে ১১ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকার প্রকল্প উপস্থাপনের পর ২৪টির বিষয়ে আশ্বাস পেয়েছে। সে ক্ষেত্রে খরচ হবে পাঁচ হাজার ২৭২ কোটি টাকা।
নাব্যতার অভাবে বন্ধ নৌপথ
১৯৭৬ সালের দিকে বিভিন্ন নদীর নাব্যতা কমতে শুরু করে। ১৯৭৭ সালের মধ্যে ২১৬ মাইল নৌপথ বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৭৮ সালে বন্ধ হয় আরও ২১ কিলোমিটার। কুতুবদিয়া ও মহেশখালী হয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ইনার চ্যানেলে পানির গভীরতা ছিল ছয় ফুট। ১৯৮৪ সাল থেকে এই রুটে গভীরতা দু-তিন ফুটে নেমে একরকম বন্ধই হয়ে যায়। ১৯৯৯ সালে মেঘনা নদীর উত্তর দিকে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতিতে চট্টগ্রাম-চাঁদপুর-বরিশালে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ রুট বন্ধ হয়ে যায়, যা আর চালু হয়নি। কক্সবাজার রুটে বাঁকখালী নদীর নাব্যতা কমতে কমতে এখন ১০ কিলোমিটার অংশ শুকিয়ে গেছে। সিরাজগঞ্জ থেকে জামালপুরের সরিষাবাড়ী পর্যন্ত নৌপথটি শুকিয়ে যাওয়ায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আরিচা-নগরবাড়ী রুটটি ১৯৯৫ সালে নাব্যতা কমে শুকিয়ে গেলে পাঁচটি স্থানে ঘাট পরিবর্তন করতে হয়।
বিআইডব্লিউটিএর নদী সংরক্ষণ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, মধুমতী নদী ও আড়িয়াল খাঁ নদের নাব্যতা ভয়াবহভাবে কমে গেছে। আরিচা-রাজশাহী-গোদাগাড়ীতে পদ্মা নদীর নাব্যতাও অর্ধেকের মতো কমে গেছে।
এ ছাড়া বর্তমানে মোহনগঞ্জ-ঠাকুরকোনায় কংস নদের ৪৬ কিলোমিটার অংশ বন্ধ আছে। বড়দিয়া-তালবাড়িয়ায় গড়াই ও মধুমতী নদীর ১৭০ কিলোমিটার, বাঘাবাড়ী-বাদলগাছিতে হুরাসাগর ও বড়াল নদের ১৬৩, বাঘাবাড়ী-উল্লাপাড়ায় করতোয়া নদীর ৩২, সৈয়দপুর-শ্রীনগরে ইছামতী নদীর ১৮, ভৈরববাজার-হোসেনপুর-ময়মনসিংহ-বাহাদুরাবাদে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের ২৪০, আরিচা-পাকশী-রাজশাহী-গোদাগাড়ী-ভোলাহাটে ৩০৭ কিলোমিটার নৌপথ বন্ধ। আরও অনেক স্থানে স্থানীয় নদীগুলোর শত শত কিলোমিটার অংশ বন্ধ হয়ে গেছে। যেমন নরসিংদী-কটিয়াদীতে ৮৪, বৈঠাবাড়িয়া-গাজীপুরে ৯, ছাতক-আটগ্রামে ১৪১, সাভার-নয়ারহাট-ধামরাইয়ে ১০, রোস্তমপুর-কালিয়াকৈরে ১০, মনুমুখ-মৌলভীবাজারে ২০ এবং ইচলী-ফরিদগঞ্জ-চরপাগলায় ৯৩ কিলোমিটার নদীপথ বন্ধ আছে।

মুখর নেতাদের মুখে তালা by পাভেল হায়দার চৌধুরী

রকারের সমালোচক আওয়ামী লীগ নেতাদের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নেতাদের দলীয় ফোরামের বাইরে কথা বলার ব্যাপারে সংযত হওয়ার একটি অলিখিত নির্দেশ জারি করা হয়েছে ইতিমধ্যে। বিভিন্ন সভা-সমাবেশ বা সেমিনারে সরকারের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ বা মন্ত্রীদের কাজের সমালোচনা করে যেসব নেতা সরব ছিলেন, তাঁদের সংযত হয়ে কথা বলার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, সরকারের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ ও মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে সমালোচনা এমন পর্যায়ে পেঁৗছেছে যে বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা ইতিমধ্যে সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীর পদত্যাগ পর্যন্ত দাবি করেছেন।
ফলে দলের অভ্যন্তরে নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে বিশেষভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। সরকারও এই সমালোচনা ও অভিযোগের মুখে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে। এই অবস্থায় দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বলা হয়েছে, নেতারা দলীয় ফোরামের বাইরে কথা বললে অবশ্যই তাঁদের সংযত হয়ে কথা বলতে হবে। জানা গেছে, গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বিষয়টি উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, এটা দলের ও সরকারের জন্য ক্ষতিকর। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নেন এবং তাঁর সঙ্গে একমত প্রকাশ করে বলেন, এটা সরকার ও দলের জন্য খুবই বিব্রতকর। তবে সমালোচনাকারী নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যাঁরা মুক্ত ও স্বাধীনভাবে কথা বলে আসছেন, তাঁরা এর সঙ্গে একমত না হলেও আপাতত কিছুটা চুপ হয়ে গেছেন। তবে কেউ কেউ আবার মুক্ত ও স্বাধীনভাবে কথা বলে যাবেন বলেও মনস্থির করেছেন। জানা গেছে, কিছু নেতার স্বাধীন ও মুক্তভাবে কথা বলার কারণে সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে, পাশাপাশি বিরোধী দলের হাতে ইস্যু তুলে দেওয়া হচ্ছে বলে আওয়ামী লীগের অনেকেই মনে করছেন। আবার যাঁরা সরকারের ভুলত্রুটি নিয়ে কথা বলছেন, তাঁরা এটাকে সমালোচনা হিসেবে ধরে না নিয়ে বরং দলের এবং সরকারের মধ্যে যে গণতন্ত্র চলছে, এটাকে তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে দেখছেন। বেশ কিছুদিন ধরে সরকারের নানা ব্যর্থতা চিহ্নিত করে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, আবদুল জলিল, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ওবায়দুল কাদের, কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ নাসিম সংসদে ও সংসদের বাইরে কঠোর সমালোচনা করে আসছিলেন। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত শেয়ারবাজারের অস্থিরতা নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করে তাঁকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানান। আওয়ামী লীগ সভাপতির এক উপদেষ্টাকে দরবেশ উপাধি দিয়ে তাঁরও কঠোর সমালোচনা করেন। তোফায়েল আহমেদ যোগাযোগব্যবস্থা ও বিদ্যুৎ পরিস্থিতির সমালোচনা করে সংসদে বলেন, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় কে চালায়? মোহাম্মদ নাসিম সরকারের স্বরাষ্ট্র, অর্থ ও বাণিজ্যমন্ত্রীকে বেশি কথা না বলে কাজে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন। বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খানের কম খাওয়ার বক্তব্য নিয়ে বেশ কড়া বক্তব্য দেন সুরঞ্জিত, নাসিম ও ওবায়দুল কাদের। এদিকে শেয়ারবাজার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এক বক্তৃতার বিরুদ্ধাচরণ করে সরকারদলীয় এমপি আ হ ম মোস্তফা কামাল ওরফে লোটাস কামাল বলেছিলেন, এটা প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক বক্তৃতা। লোটাস কামালের এ বক্তব্য সেই সময়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ ঝড় তোলে।
বিশেষ করে শেয়ারবাজার, যোগাযোগব্যবস্থার বেহাল দশা, দলীয় কর্মকাণ্ডে নিষ্ক্রিয়তা, মন্ত্রী-এমপিদের দূরত্ব ইত্যাদি বিষয়ে সমালোচনা উঠে আসে বিভিন্ন সভ-সমাবেশ ও সেমিনারে। এ নিয়ে গত শুক্রবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে এবং বাইরে কথা না বলতে নেতাদের আহ্বান জানানো হয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে। সভা শেষে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, দলের অনেক নেতা সরকারের সমালোচনা করে বাইরে কথা বলছেন, তাতে সরকারের ক্ষতি হচ্ছে। বাইরে কথা না বলে দলে বিভিন্ন ফোরাম রয়েছে, সেখানে কথা বললে দল ও সরকারের জন্য মঙ্গল হবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ নাসিম কালের কণ্ঠকে বলেন, দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এ বিষয়ে কথা হয়েছে। দলের সাধারণ সম্পাদক এ বিষয়ে প্রস্তাব এনে সকল পর্যায়ের নেতাদের দলীয় ফোরামের বাইরে বক্তৃতা-বিবৃতিতে যাতে সমালোচনা না করা হয়, তার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করেছেন। এটা ইতিবাচক উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতে 'শৃঙ্খলা' থাকে। দলের সমালোচনা দলের ফোরামেই করা উচিত। তিনি বলেন, কখনো কখনো এমন সব সমালোচনা হয়, তাতে বিরোধী দলের হাতে অস্ত্র চলে যায়। ওবায়দুল কাদের বলেন, দলীয় ফোরামে কথা বলার ধারা বজায় রাখতে পারলে ভালো। কিন্তু যখন ফোরামের ভেতরের আলোচনা বাইরে চলে আসে, তখন বিষয়টি অতিরঞ্জিত হয়ে যায়। এটা বন্ধ করা উচিত। গত ২৫ আগস্ট সরকারের ব্যর্থতার আওয়াজ তুলে শত্রুর হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার কোনো অর্থ হয় না_জাতীয় সংসদে ভাষণ দিতে গিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে নিজ দলের সমালোচনাকারীদের জবাবে এভাবেই মন্তব্য করেন তিনি।
সেই সব সমালোচনা : ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে 'ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফর নিয়ে আমাদের দায়িত্বশীলদের অতিকথনে অতি আশা জাগলেও প্রত্যাশার তুলনায় প্রাপ্তি আশানুরূপ হয়নি।' তবে ওবায়দুল কাদের সবাইকে আশ্বস্ত করে বলেন, হতাশার কিছু নেই। অচিরেই তিস্তা চুক্তি হবে। ২৩ আগস্ট বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের প্রতি সংসদে আবারও ক্ষোভ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সরকারদলীয় সিনিয়র সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ। সংসদে বাতিল নোটিশের ওপর দুই মিনিটের আলোচনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, 'বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টাকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয় না। কিন্তু আমাদের জবাবদিহি করতে হয়। তাঁকে পাওয়াও যায় না। অন্যদিকে প্রতিমন্ত্রী সংসদে উপস্থিত থাকেন না।' বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় চালায় কে_এমন প্রশ্নও তোলেন তিনি। কৃষি ব্যাংক মিলনায়তনে গত ২০ আগস্ট যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের প্রতি ইঙ্গিত করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, 'আমাদের মন্ত্রীদের চেহারা উজ্জ্বল, রাস্তাঘাটের কেন বেহাল দশা?' তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, বাজেটে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়ার পরও যোগাযোগব্যবস্থা কেন ভেঙে পড়বে? রাস্তাঘাটের অবস্থা কেন এমন হবে? যোগাযোগমন্ত্রী কাজের চেয়ে কথা বেশি বলেন। কিছু হলেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জরুরি বৈঠক কেন? সবই যদি প্রধানমন্ত্রীকে করতে হয়, তাহলে মন্ত্রীদের প্রয়োজন কী? নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, সুচিন্তিতভাবে কথা বলুন। ঈদের আগে যাতে নির্বিঘ্নে মানুষ বাড়ি ফিরতে পারে, তার ব্যবস্থা করার দিকে নজর দিন। এ সময় তিনি সড়ক ও সেতু বিভাগের মধ্যকার বিভেদ দ্রুততার সঙ্গে সমাধানের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, সমস্যা সমাধানের জন্য এ বিভেদ দূর করতে হবে। ১৪ আগস্ট আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের এমপি বলেছেন, 'আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কিছু ধান্দাবাজ মুজিবকোট পরে অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অপকর্ম চালায়। তাদের অপকর্ম বঙ্গবন্ধুর আত্মাকে কলুষিত করছে। এসব মেকি আওয়ামী লীগার ও স্বার্থান্বেষী মহল সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল দশায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কসহ প্রতিটি মহাসড়ক চাঁদের মতো খানা-খন্দে ভরা। সারা দেশের রাস্তাগুলো ভেঙে গেছে। উড়াল সেতু-পাতাল রেলের স্বপ্ন বাদ দিয়ে আগে অধিক প্রয়োজনের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের দিকে বেশি নজর দিয়ে কাজ করতে হবে। মানুষের প্রয়োজন বুঝে মনের কথা ভেবে কাজ করতে হবে। ১৪ আগস্ট মিরপুর বাঙলা কলেজে ঈদকে সামনে রেখে দেশজুড়ে চাঁদাবাজির মহোৎসব চলছে বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, কাঁচাবাজার, ফুটপাত, লঞ্চঘাট থেকে শুরু করে সর্বত্রই ফ্রি-স্টাইলে চাঁদাবাজি চলছে। এ সত্যকে চাপা দিয়ে লাভ হবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীকে এগুলো কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। নিত্যদিনের বেড়ে চলা দুর্ভোগ ও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার পেছনে মন্ত্রী, ছাত্রলীগ ও প্রশাসনের ভূমিকাকে দায়ী করে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'আমাদের দক্ষ টিম লিডার আছেন। কিন্তু শক্তিশালী টিম নেই। জনদুর্ভোগ কমাতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সরকারের দায়িত্বশীলদের সমন্বয় নেই।' পুঁজিবাজারে বিক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীদের ফটকাবাজ বলা বা রমজানে কম খেতে মন্ত্রীদের পরামর্শের সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ফ্রি-স্টাইলে কথা না বলে কাজের কাজ করুন। কম কথা বলে বেশি কাজ করুন। ভুক্তভোগী জনগণ এসবের সরব প্রতিবাদ না জানালেও আগামী নির্বাচনে নীরব ভোটে ক্ষমতাসীন দল এর জবাব পাবে। তিনি সরকারের ভাবমূর্তি কতটা খারাপ হয়ে উঠছে, তা বিবেচনায় নিয়ে দায়িত্বশীলদের সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন।
৫ আগস্ট বাণিজ্যমন্ত্রী মো. ফারুক খানকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে না পারলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অপারগতা প্রকাশ করে চলে যান। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খানকে উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, বক্তৃতা-বিবৃতি নয়, কাজের কাজটি করুন। পাবলিক সেক্টরে কার্যকর ভূমিকা রাখুন। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের আলোচনা সভায় মোহাম্মদ নাসিম সরকারের মন্ত্রীদের সমালোচনা করে বলেন, সরকারের মন্ত্রীরা কাজ করার পর বলবেন ভুল হয়েছে। দুই বছর পর 'ভুল হয়েছে' জনগণ এ কথা শুনতে চায় না। মন্ত্রীদের ভুলের কারণে দল ও জনগণ ভোগান্তির শিকার হবে, এটাও কাম্য নয়। তাই ভুল করার আগে চিন্তা করা উচিত। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আরো কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়ে অন্য একটি অনুষ্ঠানে এ নেতা বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শুধু আদর-সোহাগ করলেই হবে না, শাসনও করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সড়কদ্বীপে এক অনুষ্ঠানে সুরঞ্জিত সেন বলেন, সংসদ নয়। দেশে এখন আইন প্রণয়ন করে আমলারা। অন্য একটি অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, মিলিটারি মেজাজে কথা বললে জিনিসপত্রের দাম কমবে না। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে জনতার প্রত্যাশা আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের টাকা যারা হাতিয়ে নিয়েছে, তারা ঠাণ্ডা মাথার খুনি। শেয়ার কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রসঙ্গে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, 'কয়েকজন স্বার্থান্বেষী দলের বদনাম করবে আর আমরা বসে আঙুল চুষব, তা হতে পারে না। নিম্ন ও মধ্যবিত্তের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা টাকা ফেরত দিতে হবে। লুণ্ঠনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। ইব্রাহিম খালেদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মানহানি মামলার সমালোচনা করে তিনি বলেন, পুঁজিবাজার বিপর্যয়ের ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া উচিত হবে না। গুটিকয়েক নেতার জন্য আওয়ামী লীগ দোষী হতে পারে না। দরবেশ, ইমাম, মোয়াজ্জেন_এরা কারা, তাদের সামনে আনতে হবে।' এসব বিষয়ে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'যেখানে-সেখানে সরকারের সমালোচনা না করার সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। আমাদের যেহেতু উপদেষ্টা পরিষদ, সভাপতিমণ্ডলী, সম্পাদকমণ্ডলী, সংসদীয় দল, কার্যনির্বাহী সংসদ_এ ধরনের বিভিন্ন ফোরাম রয়েছে, তাই দলের ফোরামের বাইরে কথা বলা আমাদের মোটেই সমীচীন হবে না।'

জেমকন সাহিত্য পুরস্কার পেলেন পারভেজ হোসেন ও মুম রহমান

০১১ সালের জেমকন সাহিত্য পুরস্কার ও জেমকন তরুণ কথাসাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন কথাসাহিত্যিক পারভেজ হোসেন ও মুম রহমান। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় রূপসী বাংলা হোটেলের বলরুমে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।
পারভেজ হোসেনকে তাঁর 'যে জীবন ফড়িঙের, দোয়েলের' গ্রন্থের জন্য নগদ দুই লাখ টাকা, ক্রেস্ট ও সম্মাননাপত্র এবং মুম রহমানকে তাঁর 'অন্ধকারের গল্পগুচ্ছ' নামে গল্পের পাণ্ডুলিপির জন্য নগদ ৫০ হাজার টাকা, ক্রেস্ট ও সম্মাননাপত্র দেওয়া হয়েছে। জেমকন গ্রুপের চেয়ারম্যান কাজী শাহেদ আহমেদ পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে এ অর্থমূল্য তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে প্রথমেই মনোজ্ঞ সংগীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট শিল্পী অদিতি মহসিন। বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় তিনি গেয়ে শোনান রবীন্দ্রনাথের কিছু গান। এতে সাহিত্য আসরের অন্য রকম আবহ সৃষ্টি হয়েছিল। কেননা, মিলনায়তনের বাইরে তখন গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। গানের পর শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের উপস্থিতিতে শুরু হয় অনুষ্ঠানের মূল পর্ব।
গানের পর মূল অনুষ্ঠানে তরুণ কথাসাহিত্যিক মুম রহমানের গল্প সম্পর্কে আলোচনা ও সম্মাননা পাঠ করেন ভারতের কবি রণজিৎ দাশ। কথাসাহিত্যিক পারভেজ হোসেনের গল্প নিয়ে আলোচনা ও সম্মাননা পাঠ করেন কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। পরে পুরস্কারপ্রাপ্ত দুই লেখককে উত্তরীয় পরিয়ে দেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও কাজী নাবিল আহমেদ।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন জেমকন গ্রুপের পরিচালক ড. কাজী আনিস আহমেদ। তিনি বলেন, 'আমরা ২০০০ সাল থেকে কাগজ সাহিত্য পুরস্কার প্রবর্তন করি। পরে ২০০৭ সাল থেকে তা জেমকন সাহিত্য পুরস্কার নামে প্রতি বছর প্রদান করে আসছি। বাংলা সাহিত্যের সৃজনশীল লেখকদের সম্মানিত করার জন্যই মূলত এ পুরস্কার দেওয়া হয়ে থাকে। জেমকন সাহিত্য পুরস্কার সৃষ্টিশীল লেখকদের প্রেরণা জোগাবে বলে আমার বিশ্বাস।'
পুরস্কারপ্রাপ্তির অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে কথাসাহিত্যিক পারভেজ হোসেন বলেন, পুরস্কার আসলে জোনাকির মতো, ফুর্তি ও উৎসবের মধ্যেই তা শেষ। কিন্তু পুরস্কারপ্রাপ্তি বা স্বীকৃতি লেখককে কঠিন দায়িত্বের মধ্যে ফেলে। আবার এই দায়বোধের পাশাপাশি পুরস্কারপ্রাপ্তি লেখককে আরো নতুন উদ্যমে কাজ করার প্রেরণা জোগায়। তবে লেখকের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার আসলে পাঠকের ভালোবাসা। জেমকনকে ধন্যবাদ জানিয়ে তরুণ কথাসাহিত্যিক মুম রহমান বলেন, 'এ পুরস্কার পেয়ে যেমন আনন্দ অনুভব করছি, তেমনি অনেক বেশি দায়িত্ব মাথার ওপর এসে গেল বলে মনে হচ্ছে। আমি মনে করি, জেমকনের এ পুরস্কার তরুণদের জন্য ভবিষ্যত সৃজনশীল কাজে প্রেরণা জোগাবে।' অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কবি মোহাম্মদ রফিক, কবি কামাল চৌধুরী, কথাসাহিত্যিক মঈনুল আহসান সাবের, কবি খোন্দকার আশরাফ হোসেন, অধ্যাপক ড. রফিকুল্লাহ খান, কবি শামীম রেজা, কথাসাহিত্যিক আহমাদ মোস্তফা কামাল প্রমুখ।