Sunday, January 09, 2011

আতঙ্কের রাজত্ব কায়েম হয়েছে __খালেদা জিয়া

বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া বলেছেন, মহাজোট সরকারের দুই বছরে দেশে আতঙ্কের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। কাউকে প্রতিবাদ করতে দেওয়া হচ্ছে না। সরকারের দুই বছরের কার্যক্রমের মূল্যায়ন নিয়ে রোববার বিকালে দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণে এ কথা বলেন তিনি।

গুলশানে নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মাধ্যমে দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। দুই বছরে সরকার সফল- এ দাবি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার তিনদিন পর খালেদা বিরোধী দলের মূল্যায়ন নিয়ে জাতির সামনে হাজির হলেন।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে বিরোধী নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে দেশের বাস্তব চিত্র উঠে আসেনি। শাসক দলের উৎপীড়ণে দেশের মানুষ আজ বিপর্যস্ত। প্রধানমন্ত্রী অনেক কথা বললেও এমন কোনো উন্নয়ন কার্যক্রম দুই বছরে দেখা যায়নি। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে মহাজোট সরকারের শাসনামলকে চারদলীয় জোটের শাসনামলের সঙ্গে তুলনা করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।

এর জবাবে এ দুই সময়ে দ্রব্যমূল্যের একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেন খালেদা। তিনি বলেন, "খুব বেশি জবাব দেওয়ার কিছু আছে বলে আমার মনে হয় না। দেশের মানুষ বাজারে গেলেই তা দেখে।" "নানা উসিলায় দাম বাড়িয়ে সরকারের লোকেরা ফায়দা লুটছে- এটা মানুষ জানলেও প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে কিছু নেই", বলেন খালেদা।

বক্তব্যের শুরুতেই দেশে সাংবাদিক নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন বিরোধীদলীয় নেতা। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে ভিন্ন মত এবং সমালোচনা বন্ধ করার প্রক্রিয়া সরকার চালু রেখেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

দক্ষিণ সুদান স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত নয়

ণভোটের মাধ্যমে দক্ষিণ সুদান স্বাধীন হলে সেখানে নিশ্চিতভাবেই বড় ধরনের সহিংসতা ও অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশির। ভোট শুরুর ঠিক আগ মুহূর্তে গত শুক্রবার এক সাক্ষাৎকারে এ আশঙ্কার কথা জানান তিনি।

বশির বলেন, 'প্রতিবেশীর ঘরে যুদ্ধ লাগলে আপনি, আমরাও শান্তিতে থাকতে পারব না।' এদিকে গতকালই বিদ্রোহীদের হামলায় দক্ষিণ সুদানের চার সেনা নিহত হওয়ার খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থাগুলো।
শুক্রবার সাক্ষাৎকারে দক্ষিণ সুদানের স্বাধীনতা নিয়ে নিজের সুরও পাল্টে ফেলেন বশির। তিনি বলেন, 'দক্ষিণ সুদান এখনো স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত নয়। তাদের ধারণা, উত্তর সুদান থেকে পৃথক হলেই সেখানকার সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবতা তেমন নয়। দক্ষিণ সুদানের অনেক সমস্যা আছে। পৃথক রাষ্ট্র গড়ার মতো অবকাঠামো তাদের নেই।' পশ্চিমা পর্যবেক্ষকরা আগে থেকেই শান্তিপূর্ণ গণভোটের প্রধান বাধা হিসেবে মনে করছেন বশিরকে। কিন্তু গত সপ্তাহে দক্ষিণ সুদান সফরে গিয়ে বশির গণভোটের ফল মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন। তখন তিনি বলেন, সুদান থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার অধিকার আছে দক্ষিণের মানুষের।
শুক্রবার উত্তর সুদানে বসবাসকারী দক্ষিণ সুদানিদের ব্যাপারেও কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেন বশির। তিনি বলেন, 'স্বাধীন হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে স্বাভাবিকভাবেই তারা আমার দেশে উত্তর সুদানিদের সমান সুযোগ-সুবিধা পাবে না। আর যে দেশের বিরুদ্ধে তারা বঞ্চনার অভিযোগ করছে, সেই দেশে তারা থাকবেই বা কেন।' উত্তর সুদানে বর্তমানে প্রায় ১৫ লাখ দক্ষিণ সুদানি বাস করে। বশির জানান, স্বাধীন হয়ে গেলে উত্তর সুদানের সরকারি চাকরি থেকেও বাদ দেওয়া হবে দক্ষিণ সুদানিদের। বর্তমানে দেশটির সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ২০ ভাগই দক্ষিণ সুদানের। বশির শুরু থেকেই দক্ষিণ সুদানের স্বাধীনতার বিরোধিতা করছেন। কারণ সুদানের ৭৫ ভাগ তেলখনিসহ বেশির ভাগ প্রাকৃতিক সম্পদই দক্ষিণ সুদানে অবস্থিত। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এসব সম্পদের ভাগাভাগি নিয়ে গণভোট-পরবর্তী সময়ে দুই সুদানের মধ্যে সংঘাত শুরু হতে পারে।
এদিকে শান্তিপূর্ণভাবে গণভোট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার বিনিময়ে বশিরকে কিছু সুবিধা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকরা। ওসামা বিন লাদেনকে আশ্রয় দেওয়া ও দারফুরে গণহত্যার কারণে বর্তমানে সুদান যুক্তরাষ্ট্রের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী দেশ। দেশটির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অনেক অবরোধও আছে। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর জন কেরি ইঙ্গিত দেন, শান্তিপূর্ণ গণভোটে সহযোগিতা করলে সুদানের অবরোধ শিথিল করা হবে এবং ওয়াশিংটনের সন্ত্রাসী তালিকা থেকেও দেশটিকে বাদ দেওয়া হবে। সূত্র : এএফপি।

দখলদারদের প্রতিহত করুন ___মুকতাদা

যুক্তরাষ্ট্রের 'দখলদার' শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানালেন ইরাকের কট্টরপন্থী শিয়া ধর্মীয় নেতা মুকদাতা আল সদর। গতকাল শনিবার নিজ শহর নাজাফে দেওয়া ভাষণে এ আহ্বান জানান তিনি। গত বুধবার দেশে ফেরার পর এটাই তাঁর প্রথম ভাষণ।

সমর্থকদের উদ্দেশে মুকতাদা বলেন, 'আমরা এখনো দখলদারদের প্রতিরোধ করে যাচ্ছি। সামরিক ও অন্য সব উপায়ে প্রতিরোধ করছি তাদের।' তাঁর ভাষণ শোনার জন্য গতকাল নাজাফে জড়ো হয়েছিল ১০ হাজারের বেশি মানুষ। তাদের সবার হাতে ছিল ইরাকি পতাকা ও সদরের ছবি।
মুকতাদা ২০০৬ সালের শেষের দিকে ইরানে পালিয়ে যান। সেখানে চার বছরের স্বেচ্ছা নির্বাসনের পর গত বুধবার তিনি ইরাকে ফিরে আসেন। মুকতাদা বলেন, 'ইরাক কঠিন সময় পার করছে। ইরাকের এ পরিস্থিতিতে আমাদের শত্রু আমেরিকা, ইসরায়েল ও ব্রিটেনই খুশি হয়েছে। কাজেই সবাই আমেরিকাকে না বলুন।' তিনি বলেন, 'আপনারা কি আমেরিকাকে ভয় পান?' জবাবে সমর্থকরা 'আমেরিকা নয়, ইসরায়েল নয়' বলে প্রত্যুত্তর দেয়। ইরাকি বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য দেশটিতে বর্তমানে ৫০ হাজার মার্কিন সেনা রয়েছে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ এসব সেনা প্রত্যাহার করার কথা ওয়াশিংটনের। তিনি আমেরিকার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, 'কোনো ইরাকিকে আমরা আঘাত করব না। দখলদাররাই আমাদের লক্ষ্য।' তিনি বলেন, 'ইরাকের ঐক্য ধরে রাখার জন্য আমার সঙ্গে বলুন, ইরাকের জন্য, দেশের শান্তির জন্য এবং ঐক্যের জন্য হ্যাঁ। ঐক্যের মাধ্যমে আমরা ইরাকিদের ভোগান্তি দূর করতে চাই।
ইরাকের নতুন সরকারে মুকতাদার দল গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে আছে। পার্লামেন্টে ৩৯টি আসন রয়েছে তাঁর দলের এবং পাশাপাশি সাতটি মন্ত্রণালয়ে নিজেদের অবস্থান পাকা করেছে তারা। আগের সব ভুল শুধরাতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার এবং নতুন সরকারকে সাহায্য করার জন্য আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নতুন সরকার দেশের জনগণের জন্য কাজ করছে_এটি প্রমাণের রাস্তা করে দেওয়া হোক।
ইরাকে ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনী অভিযান চালানোর পর মুকতাদার জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। ইরাকি নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তাঁর জঙ্গি দল মাহাদি আর্মির সংঘর্ষ হয় বেশ কয়েকবার। ২০০৬ সালে পেন্টাগন মুকতাদাকে ইরাকের স্থিতিশীলতার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি বলে উল্লেখ করে। এরপর তিনি
দেশ ছেড়ে ইরানে পালিয়ে যান।
সূত্র : বিবিসি ও এএফপি।

সুদানের ভাগ্যনির্ধারণী ভোট দিচ্ছেন দক্ষিণের মানুষ

ন্তর্জাতিক মহলের সতর্ক নজরদারি ও ব্যাপক নিরাপত্তার মধ্যে আজ থেকে শুরু হচ্ছে দক্ষিণ সুদানের গণভোট। অঞ্চলটি অবিভক্ত সুদানের অংশ থাকবে, না বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে_এর নিষ্পত্তি হবে এ গণভোটের মাধ্যমে।

সুদানের ভাগ্যনির্ধারণী এ ভোটে অংশ নিতে নিবন্ধন করেছেন প্রায় ৩৮ লাখ দক্ষিণ সুদানি। বিশ্লেষকরা মোটামুটি নিশ্চিত, গণভোটের মাধ্যমে আফ্রিকার সর্ববৃহৎ দেশ সুদান দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যাবে।
পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত শান্ত থাকলেও গণভোটকে কেন্দ্র করে যেকোনো মুহূর্তে সুদানে সহিংসতা শুরুর আশঙ্কা করছেন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা। ভোট চলাকালে সুদানে নিজ দেশের নাগরিকদের ভ্রমণের ওপর সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গণভোটের কর্মকাণ্ড ও সেনাদের গতিবিধি সার্বক্ষণিক তদারক করার জন্য স্যাটেলাইটেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গতকাল শনিবার ভোটের আগের দিনও শেষ মুহূর্তের তৎপরতা চালিয়েছেন বিদেশি দূতরা। সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশিরের অতীত কর্মকাণ্ডের কারণেই শান্তিপূর্ণ গণভোটের ব্যাপারে আশ্বস্ত হতে পারছেন না তাঁরা। হঠকারী কোনো সিদ্ধান্ত থেকে বশিরকে বিরত রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার, সিনেটর জন কেরি, বিশেষ দূত স্কট গ্রাশন, দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট থাবো এমবেকিসহ প্রভাবশালী অনেকে দক্ষিণ সুদানে জড়ো হয়েছেন। গণভোটের ফল মেনে নেওয়ার বিনিময়ে বশিরকে কিছু সুবিধা দেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
১৯৫৬ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর থেকেই দেশটির মুসলিমপ্রধান উত্তর ও খ্রিস্টানপ্রধান দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে সঙ্ঘাত লেগে আছে। ১৯৮৩ সালে সরকার শরিয়া আইন জারি করলে সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে দক্ষিণের বিদ্রোহীরা। ২২ বছরব্যাপী এ গৃহযুদ্ধে প্রায় ২০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত এক শান্তিচুক্তির মাধ্যমে গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটে। এ চুক্তির প্রধান শর্ত ছিল ২০১১ সালের জানুয়ারিতে গণভোটের মাধ্যমে নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবেন দক্ষিণ সুদানিরা। এ শর্ত অনুসারেই আজ থেকে গণভোট শুরু হতে যাচ্ছে। ভোটগ্রহণ চলবে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। বিদেশে এবং উত্তর সুদানে অবস্থানকারী দক্ষিণ সুদানিরাও এতে ভোট দেবেন। শান্তিচুক্তি অনুসারে অন্তত ৬০ শতাংশ ভোট না পড়লে গণভোটের ফল গ্রহণযোগ্য হবে না। গণভোটে স্বাধীনতার পক্ষে রায় পড়লেও সব প্রক্রিয়া শেষে স্বাধীন দেশ হিসেবে দক্ষিণ সুদানের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে জুলাই মাসে।
এদিকে, গণভোটকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ সুদানে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। সেখানকার রাজধানী জুবায় স্বাধীনতার পক্ষে শুক্রবার বিশাল মিছিল হয়। গণভোটে অংশ নিতে উত্তর সুদানে বসবাসকারী বিপুলসংখ্যক দক্ষিণ সুদানিও জুবায় ফিরেছেন। জাতিসংঘের হিসাব মতে, গত কয়েক দিনে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার দক্ষিণ সুদানি উত্তর সুদান থেকে ফিরেছেন। এঁদেরই একজন লোপেজ লোমং বলেন, 'এটি আমাদের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। পাঁচ দশকের প্রতীক্ষা শেষে এবার দক্ষিণ সুদান স্বাধীন হতে চলেছে।'
'পেন্ডোরার বাঙ্' খুলে যাবে!
এদিকে জাতিসংঘে নিযুক্ত সুদানের দূত দাফা আলি ওসমানও দক্ষিণ সুদানের স্বাধীনতা প্রশ্নে গণভোটের সমালোচনা করেন। শুক্রবার তিনি বলেন, 'এ গণভোট দুঃখজনক। এর মাধ্যমে আফ্রিকায় পেন্ডোরার বাঙ্ খুলে যাবে।' তিনি গণভোটের উদ্যোগ নেওয়ায় জাতিসংঘ, আফ্রিকান ইউনিয়ন ও পশ্চিমা শক্তিগুলোর মূল উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ওসমান বলেন, 'কেন এমন ক্ষতিকর একটি বিষয়কে সমঝোতার উপায় হিসেবে বাছাই করা হলো, তা আমার বোধগম্য নয়। এটা কেবল সুদান নয়, পুরো আফ্রিকায়ই বিপর্যয় ডেকে আনবে।' উল্লেখ্য, আফ্রিকার বেশির ভাগ দেশেই বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন রয়েছে। সূত্র : এএফপি, নিউইয়র্ক টাইমস।

আসাম-মেঘালয় সীমান্তে গারো ও রাভাদের সংষর্ঘে নিহত ১০

ভারতের আসাম ও মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই আদিবাসী গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষে গত তিন দিনে অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছে। বাস্তুহারা হয়েছে ৪০ হাজার মানুষ।

রাজ্য দুটির কর্মকর্তারা গতকাল শনিবার জানান, গারো আদিবাসীরা স্বায়ত্তশাসিত স্থানীয় সরকার কাউন্সিল গঠনের দাবি করায় প্রতিদ্বন্দ্বী রাভা আদিবাসীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে। আসামের ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী ভূমিধর বর্মণ বলেন, জাতিগত সংঘর্ষে গত তিন দিনে উভয় সম্প্রদায়ের অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরো ২০ জন। আসামের প্রধান শহর গুয়াহাটির স্থানীয় কর্মকর্তারা জানান, সহিংসতার কারণে প্রায় ৩২ হাজার মানুষ বাড়ি-ঘর ছেড়েছে। তাদের খেলার মাঠ, সরকারি স্কুল ও দপ্তরগুলোতে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। মেঘালয়ের কর্তৃপক্ষ জানায়, সংঘর্ষে তাদের অংশের প্রায় আট হাজার মানুষ বাস্তুহারা হয়েছে। রাজ্য দুটির সরকার হামলার ভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে আসা মানুষকে বাসস্থান, খাদ্য, বস্ত্র ও ওষুধ সরবরাহ করতে ত্রাণ শিবির খুলেছে। কর্মকর্তারা বলছেন, এ দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে আগেও উত্তেজনার নজির রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাজ্য দুটির কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থলে কারফিউ জারি করে। গতকাল কারফিউ ছয় ঘণ্টার জন্য শিথিল করা হয়। আসামের ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা লুইস আইন্ড বলেন, 'নতুন করে সহিংসতা মোকাবিলায় আমরা অধাসামরিক বাহিনীর শতাধিক সদস্য ও সেনা মোতায়েন করেছি।' সূত্র : এএফপি।

'আমি রাজনৈতিক এতিম'

'আমি আবদুল আজিজ মোল্লা ১৮ বছর আগে আপনাদের ভোট পেয়ে জয়পুরহাট পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলাম। নির্বাচনে জয়লাভ করে এ পৌরসভাকে আধুনিক পৌরসভায় রূপান্তর করেছি। কাজের বিনিময়ে জীবনে একটি টাকাও কারো কাছ থেকে নিইনি।

প্রতিপক্ষ প্রার্থীরা বিভিন্ন দলের ব্যানারে শত শত নেতা-কর্মী নিয়ে কাজ করছেন। আমার সম্পর্কে নানা কুৎসা রটিয়ে বক্তব্য রাখছেন। আমার কোনো দল নেই। আমি রাজনৈতিক এতিম। আমার অতীত কাজের মূল্যায়ন করে আপনারাই সিদ্ধান্ত নেবেন আগামী ১২ জানুয়ারির নির্বাচনে।' অত্যন্ত আবেগী ভাষায় শুক্রবার রাতে স্থানীয় চিনিকল সড়কে নির্বাচনী পথসভায় এ কথাগুলো বলেন স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী আবদুল আজিজ মোল্লা।
জয়পুরহাট সদর পৌরসভায় এবার মেয়র পদে লড়ছেন চারজন প্রার্থী। তাঁদের মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের দেয়াল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে এবার প্রথম মেয়র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা নন্দলাল পার্শী। বিএনপির প্রার্থী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান মেয়র ফজলুর রহমান। তাঁর প্রতীক তালা। জামায়াতের পক্ষে নির্বাচন করছেন নতুন প্রার্থী অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। তাঁর প্রতীক কাপ-পিরিচ। আর স্বতন্ত্র থেকে আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন সাবেক পৌর চেয়ারম্যান আবদুল আজিজ মোল্লা।
চারজনের মধ্যে বয়সে তরুণ আওয়ামী লীগের প্রার্থী। তাঁর পক্ষে প্রচারণা চালাতে মাঠে নেমেছেন কেন্দ্রীয় ও জেলা আওয়ামী লীগের সহস্রাধিক নেতা-কর্মী। দিনরাত গণসংযোগের পাশাপাশি চলছে পথসভা। একইভাবে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ফজলুর রহমানের পক্ষে প্রচারণা চালাতে জেলা বিএনপির সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য মোজাহার আলী প্রধান শত শত নেতা-কর্মী নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। তাঁরা তাঁদের প্রার্থীর নানা সফলতা তুলে ধরে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন। বসে নেই জামায়াত নেতা-কর্মীরাও। বিএনপির একাংশের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন এলাকার কয়েক শ জামায়াত নেতা-কর্মী তাঁদের প্রার্থী অধ্যাপক নজরুল ইসলামের সমর্থনে মাঠে নেমেছেন। প্রতিদিন চলছে তাঁদেরও পথসভা।
দলীয় পরিচয়ে সদলবলে নেতা-কর্মীদের নিয়ে তিন প্রার্থীর প্রচারণার পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল আজিজ মোল্লা ভোটারদের কাছে তুলে ধরছেন তাঁর একাকীত্বের কথা। গণসংযোগের পাশাপাশি জনাকীর্ণ পথসভায় নিজের সততার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে পৌরবাসীর কাছে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যার মাধ্যমে দল-মত নির্বিশেষে বিবেচনার আহ্বান জানাচ্ছেন।

আওয়ামী লীগ-বিএনপিতে তুষের আগুন

তৃণমূলের মতামত না নিয়ে দিরাই পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মেয়র প্রার্থীকে দলীয় সমর্থন জানানোয় এ দুটি দলে জ্বলছে তুষের আগুন। প্রকাশ্যে বিরোধিতা না করলেও আওয়ামী লীগ-বিএনপির দুটি অংশ নির্বাচনী প্রচারণা থেকে কৌশলে দূরে রয়েছে।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য নাছির উদ্দিন চৌধুরী নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এখন এ দুই হেভিওয়েটের পছন্দের প্রার্থীর বিজয় নিজেদের বিজয় হিসেবেই দেখছেন এলাকাবাসী।
প্রার্থী নির্বাচনে পক্ষপাত ও একক সিদ্ধান্তের কারণে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও দিরাই উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ আবদুল কুদ্দুছ ইতিমধ্যে সভাপতির পদ ত্যাগ করেছেন। পদত্যাগের পর তিনি বলেন, 'যে দলের প্রার্থী নির্বাচনে তৃণমূলের প্রত্যাশা পূরণ হয় না, গণতন্ত্র নেই, সেখানে থাকলে ব্যক্তিত্বই প্রশ্নের সম্মুখীন হবে।' এদিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত হাফিজুর রহমান মাস্টারকে প্রার্থী না করায় সমর্থকরা বিক্ষোভ করেন। পরে তিনি ও বিএনপির অপর প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কাইয়ুম মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে শেষ পর্যন্ত প্রত্যাহার করে নিলেও দলীয় প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন না। জানা গেছে, উপজেলা বিএনপির রাজনীতিতে নাছির উদ্দিন চৌধুরীর প্রধান সহযোগী হিসেবে পরিচিত উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুছ। পৌর নির্বাচনে তিনি চাইছিলেন তাঁর ছোট ভাই সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুল কাইয়ুমকে প্রার্থী করতে। কিন্তু নাছির উদ্দিন চৌধুরী তাঁর ভাই মইনুদ্দিন চৌধুরী মাসুককে প্রার্থী ঘোষণা করলে তিনি অভিমানে দল থেকে পদত্যাগ করেন। পদত্যাগের পরে দলীয় কার্যক্রম থেকে বিরত রয়েছেন।

টাঙ্গাইলে দুই মেয়র প্রার্থীর বিরুদ্ধে ৫৩ মামলা

টাঙ্গাইল পৌরসভায় দুই মেয়র প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় ৫৩টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে হত্যা, সন্ত্রাস, বিস্ফোরক ও মারামারির মামলাও রয়েছে। অতীতে দায়ের হওয়া ফৌজদারি মামলায় অব্যাহতি এবং বিচারে খালাস দেওয়া হয়েছে।

দু'জন প্রার্থীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সহিদুর রহমান খান মুক্তির বিরুদ্ধে। অতীতে হত্যা, সন্ত্রাস সৃষ্টিসহ বিভিন্ন সময় তাঁর বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে টাঙ্গাইল থানায় ৩১টি এবং ঢাকার তেজগাঁও থানায় একটি। এর সব মামলায় তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন। বর্তমানে সহিদুর রহমান খান মুক্তি চারটি ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত আছেন। এর প্রথম তিনটিই হত্যা মামলা। এই চারটি মামলার দুটি বিচারাধীন এবং দুটি হাইকোর্ট কর্তৃক স্থগিত রয়েছে।
অপর মেয়র প্রার্থী জামিলুর রহমান মিরনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ১৭টি। টাঙ্গাইল থানায় দায়ের করা ১০টি মামলায় তিনি বিচারের মাধ্যমে খালাস পান। বর্তমানে তাঁর বিরুদ্ধে হত্যাসহ সাতটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি হাইকোর্ট কর্তৃক স্থগিত এবং বাকি ছয়টি বিচারাধীন।

আওয়ামী মেয়র প্রার্থী তাহেরের বিরুদ্ধে পেশিশক্তি ব্যবহারের অভিযোগ

পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে লক্ষ্মীপুরের পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। লক্ষ্মীপুর পৌরসভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আবু তাহেরের বিরুদ্ধে হুমকি-ধমকি ও পেশি শক্তি ব্যবহারের পৃথক অভিযোগ করেছে বিএনপি প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। এ পরিস্থিতিতে নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তাঁরা। তাই নির্বাচনের সাত দিন আগেই এখানে সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন এসব প্রার্থী।

শনিবার দুপুরে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাসানুজ্জামান চৌধুরী মিন্টু তাঁর বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলেন, 'আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবু তাহেরের বড় ছেলে ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত ফেরারি আসামি বিপ্লব ও তাদের সমর্থক ক্যাডার বাহিনীর সদস্য মারজুসহ অনেকে নামে-বেনামে মোবাইল ফোনে গত কয়েক দিন থেকে তাঁর নির্বাচনী নেতা-কর্মীদের হুমকি-ধমকি প্রদান করছে। মোবাইল ফোনে তারা আবু তাহেরের নির্বাচন না করে অন্য কোনো প্রার্থীর নির্বাচন করলে পরিণতি খারাপ হবে বলে শাসাচ্ছে। এ পর্যন্ত বিএনপি নেতা শাহাজাহান মেম্বার, আবিদ মিয়া, করিম, যুবদল নেতা জুয়েল, ছাত্রদল নেতা হারুনসহ অনেককে মোবাইল ফোনে হুমকি দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া তিনি নিজে পৌর এলাকার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগকালে আওয়ামী লীগ ক্যাডার ইসমাইল, আজিজ, জয়নালের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা তাঁকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর হুমকি-ধমকি প্রদান করে। হুমকিদাতারা কাউকে কাউকে এলাকাছাড়া করার হুমকি দেয় বলেও সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়। তা ছাড়া নির্বাচনী লিফলেটে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নের কথা লিখে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। এ সময় তিনি আরো বলেন, নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠ হলে জনগণের ভোটে তিনি নির্বাচিত হবেন। কিন্তু হুমকি-ধমকি দিয়ে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করে জয় ছিনিয়ে নিতে আওয়ামীলীগ প্রার্থী আবু তাহের ও তার ক্যাডার বাহিনী এখন সক্রিয়।' এ পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে তিনি প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লক্ষ্মীপুরের সংসদ সদস্য শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, 'বিগত আওয়ামী লীগ শাসনামলে আবু তাহের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের পৌর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেননি। সবাইকে এলাকা ছাড়া করে তিনি চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। এরপর সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, হত্যা, লুণ্ঠনসহ বিভিন্ন অপকর্মের মাধ্যমে লক্ষ্মীপুরকে অশান্ত জনপদে পরিণত করেছেন। এখন আবার সে পথেই এগোচ্ছেন তিনি।' নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করে সাধারণ ভোটারদের ভোটদানে উৎসাহিত করতে সাত দিন আগেই সেনা মোতায়েনের দাবি জানান তিনি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাহাব উদ্দিন সাবু, যুগ্ম সম্পাদক আবুল হাশেম, হারুনুর রশিদ বেপারীসহ সভাপতি ছায়েদুর রহমান ছুট্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাছিবুর রহমান, বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান মানিক প্রমুখ।
এদিকে একই সময় লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আ ন ম ফজলুল করিম পৃথক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবু তাহেরের বিরুদ্ধে তাঁর নির্বাচনী কর্মীদের হুমকি-ধমকি প্রদানের পৃথক অভিযোগ করেন। নির্বাচনে আবু তাহের ও তাঁর ক্যাডার বাহিনীর প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ এনে তিনিও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন।

৩ কোটি টাকায় সাকিবকে কিনল নাইট রাইডার্স

ইপিএলের নিলামে আগেরবারও ছিলেন তিনি। ওয়ানডে র‌্যাংকিংয়ে বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার হিসেবেই। কিন্তু সেবার কোনো দলই কেনেনি তাঁকে। বাংলাদেশ অধিনায়কের সেই দুঃখ এবার ঘুচেছে। চতুর্থ আইপিএলের নিলামে চার লাখ ২৫ হাজার ডলারে (প্রায় তিন কোটি টাকা) এ অলরাউন্ডারকে কিনে নিয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স।

নিলামের প্রথম দিনে সাকিবের সঙ্গে ওঠানো হয়েছিল তাঁর ডেপুটি তামিম ইকবালকেও, তবে তাঁকে কেনেনি কোনো দল। গতবার এই কলকাতা নাইট রাইডার্সই ছয় লাখ ডলারে কিনেছিল বাংলাদেশের অলরাউন্ডার মাশরাফি বিন মুর্তজাকে। এবার নিলামেই ছিলেন না তিনি। তবে বাংলাদেশের সাবেক কোচ ডেভ হোয়াটমোরের দলে ঠিকই থাকছেন আরেক বাংলাদেশি। শুধু সাকিবকে কিনেই নয়, কালকের নিলামে নানা কারণেই সবচেয়ে আলোচিত দল ছিল কেকেআর। নতুন রেকর্ড গড়ে ২৪ মিলিয়ন ডলারে তারা কিনেছে ভারতের ওপেনার গৌতম গম্ভীরকে, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১ মিলিয়ন ডলারে ইউসুফ পাঠানকেও। শাহরুখ খানের দলে সাকিব সতীর্থ হিসেবে পাচ্ছেন দক্ষিণ আফ্রিকার অলরাউন্ডার জ্যাক ক্যালিসকেও। তবে কেকেআরের আইকন সৌরভ গাঙ্গুলীকে হয়তো দর্শক হয়েই থাকতে হবে এবার। কেউ কেনেনি তাঁকে, দুই ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ব্রায়ান লারা আর ক্রিস গেইলও কোনো দল পাননি।

শঙ্কা মুক্তির প্রত্যাশা বিনিয়োগকারীদের by সুজয় মহাজন

রপতনের মধ্য দিয়ে নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহ পার করল দেশের শেয়ারবাজার। গত সপ্তাহের পাঁচ লেনদেন দিবসের মধ্যে চারদিনই শেয়ারের দরপতন ঘটেছে। সপ্তাহশেষে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এঙ্চেঞ্জের (ডিএসই) সাধারণ মূল্যসূচক নেমে এসেছে সাত হাজার ৭৩৫ পয়েন্টে।

মূল্যসূচকের পাশাপাশি শেয়ারের মূল্য ও লেনদেন দুই-ই কমেছে ঢাকার বাজারে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে প্রতিদিনের গড় লেনদেন নেমে এসেছে প্রায় এত হাজার ২২৮ কোটি টাকায়। অথচ বিদায়ী বছরের শেষ সপ্তাহে প্রতিদিনের গড় লেনদেন ছিল এক হাজার ৫১৪ কোটি টাকার ওপরে। সে হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে গড় লেনদেন কমেছে প্রায় ২৮৬ কোটি টাকা।
২০১০ সালের শুরুটা হয়েছিল সূচকের ঊর্ধ্বগতি দিয়ে। সেখানে দরপতন দিয়ে ২০১১ সালের যাত্রা শুরু হয়। ২০১০ সালের প্রথম সপ্তাহ শেষে ডিএসইর সাধারণ সূচক বেড়েছিল ১৫৪ পয়েন্ট। ওই সপ্তাহে পাঁচ লেনদেন দিবসের প্রতিদিনই শেয়ারের দাম ও সূচক একটু একটু করে বেড়েছিল। আর ২০১১ সালের প্রথম লেনদেন দিবসটি শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধি ও সূচকের ঊর্ধ্বগতি দিয়েই শুরু হয়েছিল। কিন্তু পরের চার দিনের ধারাবাহিক দরপতন সেই শুভ সূচনাকে ম্লান করে দিয়েছে।
বছরের শুরুতেই টানা দরপতন বিনিয়োগকারীদের মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছে। কয়েক দিনে শেয়ারবাজারের বিভিন্ন শ্রেণীর বিনিয়োগকারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সবাই এখন বাজার নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। শঙ্কামুক্ত হওয়ার মতো কোনো আশার আলো খুঁজছেন।
এ অবস্থায় অনেকে লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন বেশি লোকসানের হাত থেকে বাঁচতে। এদিকে কয়েক দিনের টানা দরপতনে অনেকের পুঁজিতে টান লেগেছে। আবার অনেক বিনিয়োগকারী লাভের একটি বড় অংশই হারিয়ে বসেছেন। যাঁদের লাভের ওপর দিয়ে দরপতনের ঝড় বয়ে যাচ্ছে, তাঁরা পুঁজি হারানোর আগেই বাজার থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার সুযোগ খুঁজছেন। এমনি পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের মনে আত্মবিশ্বাসের চরম ঘাটতি দেখা দিয়েছে। হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে বিনিয়োগকারীরা সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন, তাঁরা সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট বক্তব্য চান।
বাজারের এমনি পরিস্থিতিতে দুশ্চিন্তায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এঙ্চেঞ্জ কমিশনও (এসইসি)। বাজারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে নানামুখী চেষ্টা চালাচ্ছে সংস্থাটি। গত সপ্তাহেই দরপতনের লাগাম টানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা চাওয়া হয়। এসইসির চেয়ারম্যান জিয়াউল হক খোন্দকারের অনুপস্থিতিতে সংস্থাটির সদস্য ইয়াছিন আলী গভর্নর ড. আতিউর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করে এই সহায়তা চান।
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার বিকেলে দেশে ফিরেই জরুরি সভা আহ্বান করেন এসইসি চেয়ারম্যান। আজ রবিবার লেনদেন শুরুর আগেই এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠকে দুই স্টক এঙ্চেঞ্জ, মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনসহ শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্টদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন বলে এসইসি সূত্র জানিয়েছে। এই বৈঠকে বাজারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে করণীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার কথা রয়েছে।
এদিকে টানা চার দিনের দরপতনকে কেন্দ্র করে গত সপ্তাহে রাজধানীতে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। পুঁজি হারিয়ে শত শত বিনিয়োগকারী রাজপথে নেমে আসেন। বুধ ও বৃহস্পতিবার পরপর দুদিন বিনিয়োগকারীরা রাজধানীর মতিঝিলে ডিএসই ভবনের সামনের সড়কে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তাঁরা বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর ও রাস্তায় অগি্নসংযোগের ঘটনা ঘটান। তাতে ওই সড়কে দুদিন যান চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বিনিয়োগকারীদের ওপর লাঠিচার্জ, টিয়ার সেল নিক্ষেপ ও জলকামান ব্যবহার করে। বৃহস্পতিবার বিক্ষোভকালে মতিঝিল থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ছয়জনকে আটক করে নিয়ে যায়। আটক ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
বাজার চিত্র : সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সপ্তাহ শেষে ডিএসইতে প্রায় ছয় হাজার ১৪১ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের সপ্তাহে এর পরিমাণ ছিল সাত হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন কমেছে এক হাজার ৪২৮ কোটি টাকা বা প্রায় ১৯ শতাংশ। এক সপ্তাহে ডিএসইর সাধারণ সূচক কমেছে প্রায় ৫৫৫ পয়েন্ট। শতাংশ হিসাবে যা ৭-এর কাছাকাছি। আট হাজার ২৯০ পয়েন্টের অবস্থান থেকে গত সপ্তাহের লেনদেন শুরু হয়। আর সপ্তাহ শেষে সেটি নেমে আসে সাত হাজার ৭৩৫ পয়েন্টে। পাশাপাশি লেনদেন হওয়া শেয়ারের দরপতন তো ছিলই। গত সপ্তাহে ডিএসইতে ২৫১ কম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়। তার মধ্যে দাম বেড়েছে কেবল ১৪টির। আর ২৩৫টি কম্পানিরই শেয়ারের দাম কমেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। গত সপ্তাহের প্রথম দিনে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল প্রায় তিন লাখ ৫১ হাজার কোটি টাকা। সপ্তাহশেষে সেটি কমে দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকায়।

২০১০ সালে বিচারবহির্ভূত হত্যা ১২৭, হেফাজতে মৃত্যু ১১০

মানবাধিকার সংস্থা অধিকার বলছে, গত বছর প্রতি তিন দিনে একজন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হেফাজতে মারা গেছে ১১০ জন। অধিকারের সংক্ষিপ্ত বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। খবর বিডিনিউজটুয়েন্টিফোরডটকম।

অধিকার দাবি করেছে, তাদের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী ২০১০ সালে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার ১২৭ জনের মধ্যে তথাকথিত ক্রসফায়ারে ১০১, নির্যাতনে ২২ জন, গুলি করে দুজন এবং দু'জনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
অধিকার বলছে, এদের মধ্যে র‌্যাবের হাতে ৬৮ জন, পুলিশের হাতে ৪৩ জন, র‌্যাব-পুলিশের যৌথ অভিযানে ৯ জন, র‌্যাব-কোস্টগার্ডের যৌথ অভিযানে তিনজন, র‌্যাব-পুলিশ-কোস্টগার্ডের যৌথ অভিযানে তিন এবং বিডিআরের হাতে একজন নিহত হওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে মানবাধিকার সংগঠনটি। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন অধিকারের মহাসচিব আদিলুর রহমান খান। হেফাজতে মৃত্যু প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রসফায়ার, নির্যাতন, গুলি এবং অসুস্থতার কারণে ২০১০ সালে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হেফাজতে থাকা ১১০ জন মারা যায়।
এ ছাড়া এই সময়ে ৬০ জন জেল হেফাজতে অসুস্থতার কারণে মারা গেছে। এ সময়ে দুজন কোর্ট হেফাজতে, দুজন থানায় এবং একজন র‌্যাব হেফাজতে মারা গেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া বিডিআর বিদ্রোহের অভিযোগে আটক ১৫ জন বিডিআর সদস্য জেল ও অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হেফাজতে মারা গেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ১৬ জন গুম হয়েছে বলে দাবি করেছে অধিকার। তাদের পরিবারের অভিযোগ, সাদা পোশাকে আইন প্রয়োগকারী সদস্যরা র‌্যাব কিংবা পুলিশ পরিচয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়।
প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে অধিকারের উপদেষ্টা ফরহাদ মজহার, কলামিস্ট আবুল মকসুদ, সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী, বিএনপির সংসদ সদস্য সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া, সাবেক ডাকসু ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সরকারের সামনে এখন কঠিন চ্যালেঞ্জ __ওবায়দুল কাদের

রকারের মধুচন্দ্রিমাকাল শেষ হয়েছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের এমপি বলেছেন, 'সরকারের সামনে এখন কঠিন চ্যালেঞ্জ। আগামী তিন বছর সরকারের কর্মকাণ্ডের ওপর জনগণ তীক্ষ্ন নজর রাখবে। তাই আমাদের কর্মকাণ্ডে গুণগত পরিবর্তন আনতে হবে। বেপরোয়া বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করে নতুন করে যাত্রা শুরু করতে হবে।'

রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে গতকাল শনিবার বঙ্গবন্ধু আদর্শ মূল্যায়ন গবেষণা সংসদ আয়োজিত 'বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন : বঙ্গবন্ধু ও আজকের বাংলাদেশ' শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
দলের কর্মকাণ্ড পরিচালনায় সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'মনে রাখতে হবে বিরোধী দল আমাদের ততটা ক্ষতি করতে পারবে না, যতটা পারবে চাটুকার ও বেপরোয়া বাহিনী।' ওবায়দুল কাদের বিরোধী দলকে উদ্দেশ করে বলেন, 'ক্রমাগত সংসদ বর্জন করে, অন্ধ আক্রোশের বৃত্তে আবদ্ধ থেকে দেশ বিক্রির তত্ত্ব নিয়ে এগোলে বিরোধী দল বিএনপির আবারও শোচনীয় পরাজয় হবে।'
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরো বক্তব্য দেন জাতীয় সংসদের হুইপ সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি এমপি, প্রকৌশলী এম আনোয়ারুল হক এমপি প্রমুখ।

ঠাকুরগাঁওয়ে সাংবাদিক পেটানো ছাত্রলীগ ক্যাডারদের গ্রেপ্তার দাবি

ঠাকুরগাঁওয়ে সংবাদ সংগ্রহ করার সময় কালের কণ্ঠের নিজস্ব প্রতিবেদক আলী আহসান হাবীবসহ দুই সাংবাদিকের ওপর হামলাকারী ছাত্রলীগ ও যুবলীগ ক্যাডারদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীরা। এ জন্য প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় শহরের চৌরাস্তা মোড়ে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভা থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। ওই সময়ের মধ্যে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করা না হলে বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচির ডাক দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন সাংবাদিকরা।
ছাত্রলীগ ও যুবলীগ ক্যাডারদের হামলার প্রতিবাদে ওই সভা থেকেই কালো ব্যাজ ধারণ করা হয়। তিন দিন ধরে এ কর্মসূচি চলবে। আজ রবিবার সকাল ১১টায় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি দেওয়া হবে।
ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাবের সভাপতি আখতার হোসেন রাজার সভাপতিত্বে ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক লুৎফুর রহমান মিঠু, ডেইলি সানের সাংবাদিক সৈয়দ মেরাজুল হোসেন, ইত্তেফাকের আবদুল লতিফ, প্রথম আলোর মজিবর রহমান, ডেইলি স্টারের রুবায়েত, নয়া দিগন্তের গোলাম সারোয়ার সম্রাট, বৈশাখী টিভির ফজলে ইমাম বুলবুল, ডেসটিনির মাসুদ বিপ্লব, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এনামুল হক প্রমুখ সভায় বক্তব্য দেন।
গত শুক্রবার সন্ধা সাড়ে ৬টায় শহরের কলেজপাড়ার বিএনপি সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী গোলাম সারোয়ার রঞ্জুর নির্বাচনী অফিসে হামলা করে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ ক্যাডাররা। এ সময় ছবি তোলায় ক্যাডাররা আহসান হাবীব এবং দিগন্ত টেলিভিশনের প্রতিনিধি হারুন অর রশিদকে বেধড়ক পেটায়।

অর্পিত সম্পত্তি আইন সংশোধন করে পাস করতে হবে : সুরঞ্জিত

র্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনকে 'মহাকালো' বলে অভিহিত করেছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এবং আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। তিনি দাবি করেছেন, আইনটি কিভাবে সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে বোঝা যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে কিছু আমলা ভূমিকা রেখেছেন বলেও অভিযোগ করেছেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।

সিলেটে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের বিভাগীয় সমাবেশে গতকাল শনিবার প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সংসদের আগামী অধিবেশনেই অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন সংশোধন করে পাস করার দাবি জানান। সিলেট নগরীর চৌহাট্টা এলাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিষদের সিলেট জেলা শাখার সভাপতিমণ্ডলীর প্রধান রামেন্দ্র বড়ুয়া। প্রধান বক্তা ছিলেন পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে বলেন, 'আপনার দুর্দিনে, সব নির্বাচনে জীবন বাজি রেখে সংখ্যালঘুরা আপনাকে ভোট দেয়। তাই বৈষম্যমূলক শত্রু সম্পত্তি আইন বাতিল করে সম্পত্তিতে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।'
রানা দাশগুপ্ত সংসদের আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনের আগে ২১ জানুয়ারি সংসদ ভবনের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ঐক্য পরিষদের সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃত্যুঞ্জয় ধর ভোলার পরিচালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিষদের উপদেষ্টা কর্নেল (অব.) নিরঞ্জন ভট্টাচার্য্য, জয়ন্ত কুমার দেব, নির্মল রোজারিও, নির্মল চ্যাটার্জি প্রমুখ।

চোরের নিশানা থানা থেকে থানা

প্রবাদে আছে 'থানার পাশে কানা হাঁটে না।' কিন্তু চট্টগ্রামের আনিস মাহমুদ (৩০) নামের এক যুবক যেন এর ব্যতিক্রম। না হয়, পুলিশ কর্মকর্তাদের মালামাল চুরি করা তার পেশা হয় কী করে? এক থানা থেকে চুরি করে জামিনে মুক্তি পাওয়ার দুদিনের ব্যবধানে আরেক থানায় গিয়ে ধরা পড়ল সে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় কোতোয়ালি থানা থেকে মালামাল চুরি করার সময় পুলিশ তাকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে।

আনিসের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি থানা ও পুলিশ ফাঁড়িতে ঢুকে চুরির অভিযোগ রয়েছে। সে নেশার টাকা জোগাড় করার জন্যই চুরির অভ্যাস গড়ে তুলেছে বলে দাবি করেছে। তবে থানা বা পুলিশ কর্মকর্তাদের মালামাল চুরিই কেন তার লক্ষ্য_এ প্রশ্নের কোনো জবাব সে দেয়নি। সর্বশেষ গ্রেপ্তার হওয়ার পর সে কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে পুলিশের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছে।
পুলিশের সূত্র জানায়, আনিসের চুরির তালিকায় রয়েছে ইপিজেড পুলিশ ফাঁড়ি ও বন্দর পুলিশ ফাঁড়ির মালামাল এবং হাটহাজারী সার্কেল এএসপি বাবুল আক্তারের ব্যক্তিগত ল্যাপটপ। আর গতকাল সে কোতোয়ালি থানায় ঢুকে এসআই সদীপ কুমার দাশের কম্পিউটার চুরি এবং এসআই সুকান্ত চক্রবর্তীর ফাইল ক্যাবিনেট ভাঙার চেষ্টা করছিল। এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানায় তার বিরুদ্ধে একটি চুরির মামলা দায়ের করা হয়েছে।
কোতোয়ালি থানার সেকেন্ড অফিসার মাসুক করিম সিকদার গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এই যুবক সন্ধ্যার দিকে থানায় এসআই সদীপ কুমার দাশের চেয়ারে বসে কম্পিউটার খোলার চেষ্টা করছিল। এ সময় ওই কক্ষে কেউ ছিল না। আমি প্রথমে তাকে কম্পিউটার ম্যাকানিক মনে করে কিছু বলিনি। পরে সে পার্শ্ববর্তী এসআই সুকান্ত চক্রবর্তীর ফাইল ক্যাবিনেট খোলার চেষ্টা করলে আমার সন্দেহ হয়। তাৎক্ষণিকভাবে আমি অন্য পুলিশ সদস্যদের ডেকে এনে তাকে আটক করি।'
গ্রেপ্তার হওয়া আনিস মাহমুদ প্রথমে চুরির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করলেও পরে কালের কণ্ঠকে জানায়, ফেনসিডিলের নেশায় আসক্ত হয়ে সে এ ধরনের চুরির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। তার দাবি, সে আগে ইস্টার্ন ওভারসিজ শিপিং লাইনে প্রধান নির্বাহী হিসেবে চাকরি করত। নেশার কারণে তার চাকরি চলে যায়। এখন সে নেশা ছেড়ে দিয়েছে; কিন্তু বাঁচার প্রয়োজনে চুরি করতে হচ্ছে। গত রমজানে হাটহাজারীর সার্কেল এএসপি বাবুল আক্তারের ল্যাপটপ চুরির মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার সে জামিনে মুক্তি পায়। কেন সে বার বার পুলিশ কর্মকর্তাদের মালামাল চুরি করে_এই প্রশ্ন করা হলে কোনো জবাব না দিয়ে চুপ করে থাকে।
কোতোয়ালি থানার এসআই নেজাম উদ্দিন জানান, গ্রেপ্তার হওয়া আনিস ইস্টার্ন ওভারসিজ নামে যে শিপিং লাইনের পরিচয় দিয়েছে প্রকৃত অর্থে সে ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত ছিল না। সে বিভিন্ন কর্মকর্তার কাছে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়ে সখ্যতা গড়ে তোলে। এরপর নিয়মিত ওই অফিসে যাওয়া-আসার ফাঁকে সুযোগ বুঝে মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়।

সহজে ব্যাংক ঋণ পেয়ে ধান মজুদের হিড়িকঃ চালের দাম বাড়ছেই

ধান-চাল উৎপাদনের প্রধান জেলাগুলোতে এখন ব্যাংক ঋণের ছড়াছড়ি চলছে। ব্যাংকগুলো প্রতিযোগিতা করে কৃষক পর্যায় পর্যন্ত ঋণ বিতরণে মেতে উঠেছে। মূলত এই ব্যাংক ঋণের কল্যাণে শুরু হয়েছে ধানের নতুন এক ধরনের মজুদদারি। আর এতেই বেড়ে যাচ্ছে চালের দাম।

জেলাপর্যায়ে ও রাজধানীর চালের আড়তে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চালের দাম বাড়ার মূল কারণ হাটবাজারে ধানের দাম বেশি। মজুদদারি, ধান কেনার জন্য মিলগুলোর প্রতিযোগিতা এবং ব্যাংকের দেওয়া ঋণ ধানের দাম বাড়ানোর পেছনে ভূমিকা রেখেছে। ব্যাংক ঋণ ও ক্ষুদ্রঋণ ছোট কৃষকদেরও টাকার চাহিদা পূরণ করছে। ফলে আরো দাম বাড়ার আশায় তাঁরাও ধান বিক্রি করছেন না। তবে তাঁদের মজুদ তুলনামূলক খুবই কম। মূলত মিল মালিক, চাতাল মালিক, ফড়িয়া, ব্যবসায়ী ও বড় কৃষকদের ধান মজুদ প্রবণতার কারণেই এই ভরা মৌসুমেও চালের দাম বেড়ে চলেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ পরিশোধের সময়সীমা কমিয়ে দিয়েও এ ক্ষেত্রে সুফল পাচ্ছে না। কারণ এক ব্যাংকের ঋণ শোধের সময় হলে অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে মজুদদাররা টাকার চাহিদা পূরণ করছেন। আর ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতার কারণে ঋণ খুবই সহজলভ্য হয়ে গেছে। অভিযোগ রয়েছে, মিলের সম্পত্তির দামের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি ঋণ দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। ফলে ধানের বাজারদর অনেক বেশি পড়ছে। বেশি দামের ধান থেকে তৈরি চাল আরো কয়েক দফা হাতবদল হয়ে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে অনেক বেশি দামে।
উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে প্রচুর চালকল গড়ে উঠেছে। কিন্তু আমন মৌসুমে জেলাগুলোতে মোট ধানের উৎপাদন মিলগুলোর চাহিদার তুলনায় কম। মৌসুম শেষ হয়ে যাওয়ার পরও মিল চালু রাখতে ধানের মজুদ করেন মালিকরা। এ জন্য তাঁরা অন্যের চেয়ে বেশি দামে হলেও ধান কিনতে চান। এতেও চালের দাম বাড়ে।
এসব বিষয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আহমেদ হোসেন খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চালের দাম বাড়ার একটা কারণ হতে পারে মিলারদের কারসাজি। তাঁরা ধান কিনে মজুদ করে রাখছেন। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তাঁরা বিপুল পরিমাণ ধান কিনছেন। এ ধান বাজারে না ছাড়া হলে স্বাভাবিকভাবেই দাম বাড়বে।’
আহমেদ হোসেন খান বলেন, ‘ধান-চালের দাম বাড়ার সুফল কৃষকও পাচ্ছেন। এখন কৃষকরা অনেক সচ্ছল। তাঁরা দাম না বাড়লে ধান বিক্রি করছেন না।’
দুই মাস ধরে বাড়ছে দাম : গতকাল শনিবার রাজধানীর কাজীপাড়া বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ৩৬ টাকা দরে। কারওয়ান বাজারে চালের সর্বনিু দাম রাখা হচ্ছে ৩৫ টাকা। আর বাবুবাজার-বাদমতলীর আড়তে প্রতি কেজি মোটা চালের পাইকারি দর ৩৩-৩৪ টাকা। উত্তরাঞ্চলে মোটা চালের ধানের দাম মণপ্রতি ৮০০-৮৫০ টাকা। মৌসুমের শুরুতেই এ দাম ১০০-১৫০ টাকা বেড়ে গেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
কারওয়ান বাজারের লাকসাম ট্রেডার্সের বিক্রেতা আমান উল্লাহ জানান, প্রতি সপ্তাহেই কমবেশি হারে চালের দাম বাড়ছে। এমনকি সকালে একদরে বিক্রি হলে বিকেলেই তা বেড়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে বাজারে এ অবস্থা চলছে। তিনি বলেন, ‘ক্রেতা এলে আমাদের খুব খারাপ লাগে। কারণ তাদের কথা দিয়ে কথা রাখতে পারি না। সকাল-বিকেল দাম বেড়ে যায়।’
বাবুবাজারের শিল্পী রাইস এজেন্সির বিক্রেতা কাওসার হোসেন বলেন, দুই মাস ধরে প্রায় প্রতিদিন চালের দাম মণপ্রতি ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা করে বাড়ছে। এভাবে দুই মাসে মণপ্রতি বেড়েছে প্রায় ২০০ টাকা।
ঢাকার বাইরে নওগাঁয় গতকাল খুচরা বাজারে মোটা চাল ৩৩ থেকে ৩৪ টাকা এবং চিকন জিরা শাইল ও নাজির ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে। শেরপুরে পাইকারি বাজারে মোটা চাল ৩১.৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্য রকম মজুদদারি : ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ার কারণ অনুসন্ধান করে জানা গেছে, এর পেছনে চাতালমালিক, মিলমালিক, ফড়িয়া ও বড় কৃষকদের মজুদ প্রবণতাই দায়ী। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তাঁরা বিপুল পরিমাণ ধান মজুদ করেছেন। বাজারে সরবরাহের চেয়ে ক্রেতা বেশি হয়ে যাওয়ায় দাম বেড়ে গেছে। আর কৃষকরা লাভের আশায় কিছু কিছু ধান ধরে রাখছেন। এর সুফলও তাঁরা পাচ্ছেন।
দিনাজপুর চালকল মালিক গ্র“পের সাধারণ সম্পাদক শহীদুর রহমান পাটোয়ারী মোহন কালের কণ্ঠকে জানান, অটোমিলগুলো ব্যাংক থেকে দু-তিন কোটি টাকা করে প্লেস লোন নিয়েছে। অন্য মিলগুলোর ঋণ আছে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা করে।
দিনাজপুরের বাহাদুর বাজারের পাইকারি চাল বিক্রেতা গোলাম মোস্তফা কালের কণ্ঠকে জানান, ঋণের টাকায় ধান মিলে মিলাররা গড়ে তুলেছেন বিশাল মজুদ। স্থানীয় পাইকারি বিক্রেতাদের হাতে তেমন চাল নেই। যত চাল ছাঁটাই হয়, তার বেশির ভাগের ক্রেতা জেলার বাইরের ব্যবসায়ীরা। আগাম টাকা দিয়ে ধান কিনে তাঁরা ইচ্ছেমতো চাল ছাঁটাই করে বাজারে ছাড়েন। এ জন্য স্থানীয় অটোমিলগুলোর অধিকাংশের নিয়ন্ত্রণ তাঁদের হাতে। মিলারের ঘরে মজুদ দেখা গেলেও এসবের মালিক বাইরের ব্যবসায়ীরা। সিন্ডিকেট চাইলে বাজারে চাল ওঠে। দাম বাড়ে পাইকারি এবং খুচরা বাজারে। আলোচনার বাইরে রয়ে যায় ব্যাংকের প্লেস লোন এবং মজুদদার ব্যবসায়ীদের ভূমিকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যবসায়ী জানান, দিনাজপুর শিল্প কারখানায় উন্নত নয়। অথচ গত কয়েক মাসে জেলা শহরে শাখা খুলে বসেছে প্রায় এক ডজন বেসরকারি ব্যাংক। মূলত চালকলভিত্তিক সেক্টরে মৌসুমি বিনিয়োগ থেকে লাভের আশায় ব্যাংকের শাখা খোলার হিড়িক চলছে দিনাজপুরে।
নওগাঁ পৌর চাল বাজারের ক্ষুদ্র চাল ব্যবসায়ী রিংকু সাহা জানান, নওগাঁর প্রতিটি মিলেই কিছু না কিছু চাল মজুদ থাকেই। এর পরিমাণও বিপুল। ওই মজুদ যদি বের করে আনা যায়, তবে চালের দাম অনেকটাই কমে যাবে।
একই এলাকার এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘মিলমালিকদের ঋণ দিতে ব্যাংকগুলো প্রতিযোগিতায় নেমেছে। একই সম্পত্তির ওপর এক ব্যাংক যে পরিমাণ ঋণ দেয়, আরেকটি ব্যাংক প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে সেই ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। উদ্বৃত্ত ঋণের টাকা দিয়ে ব্যবসায়ীরা সহজলভ্য হিসেবে ধান-চাল মজুদ করছেন। এতে বেড়ে যাচ্ছে চালের বাজার।
ঢাকার বাবুবাজারের চাল ব্যবসায়ী কাওসার হোসেন বলেন, ‘বাস্তবতা হলো ধানের মজুদ এখন ফড়িয়া ও মিলমালিকদের দখলে। তাঁরাই দাম নিয়ন্ত্রণ করছেন। বাজারে চালের কোনো ঘাটতি নেই যে ওই কারণে দাম বাড়বে।’
শেরপুর জেলা রাইস মিলমালিক সমিতির সভাপতি আশরাফুল আলম তালুকদার সেলিম বলেন, এখন মিলের সংখ্যা অনেক বেশি। সবাই বাজারে ধান কিনতে যায়। কিন্তু দেখা যায়, বাজারে ২৫ জনের ধান আছে, ব্যবসায়ীর সংখ্যা ৫০ জন। স্বভাবতই প্রতিযোগিতার কারণে ধানের দাম বাড়ছে। আর উৎপাদন খরচ বাড়ার কারণে চালের দামও বাড়ছে। তিনি জানান, অনেক মিল মালিক এবং ধান-চাল ব্যবসায়ী আছেন, যাঁরা এখন ধান কিনে রাখছেন, তিন চার মাস পর চাল করে বিক্রি করবেন। তা ছাড়া কৃষকরাও এখন সচেতন। তাঁরা যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু ধান বিক্রি করে বাকি ধান গোলায় ধরে রাখছেন। এসব কারণেই মূলত চালের দাম বাড়ছে।
ঋণের টাকায় ধান-চাল মজুদ ঠেকাতে গত ২৯ ডিসেম্বর ঋণ পরিশোধের সময়সীমা কমিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই দিন এক সার্কুলারে ধান, চাল বা চাতাল ব্যবসায়ীদের ঋণ পরিশোধের সীমা কমিয়ে ৩০ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। আগে মিলমালিকদের ক্ষেত্রে এ ঋণ পরিশোধের সর্বোচ্চ সীমা ছিল ৪৫ দিন এবং ধান বা চাল ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩০ দিন ছিল।
---
রাজীব আহমেদ (ঢাকা), সালাহ উদ্দিন আহমেদ (দিনাজপুর), ফরিদুল করিম (নওগাঁ) ও হাকিম বাবুল (শেরপুর)

রংপুরের উন্নয়নের দায়িত্ব নিলেন প্রধানমন্ত্রী

লাকার পুত্রবধূ হিসেবে রংপুরকে নতুনভাবে সাজিয়ে তোলার দায়িত্ব নিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা মিথ্যা আশ্বাসে বিশ্বাসী নই, আমাদের নির্বাচনী প্রতিশ্র“তি ছিল রংপুরকে বিভাগ করব, করেছি। সিটি করপোরেশন, ডিআইজির কার্যালয় গড়ে তোলা এখন সময়ের ব্যাপার। এই রংপুরকে মেট্রোপলিটন নগরীসহ পরিকল্পিত এক নগরী হিসেবে গড়ে তুলব।

আমি নিজেই এই নবপ্রতিষ্ঠিত বিভাগের উন্নয়নের দায়িত্ব নিলাম।’ দেশে গ্যাসের ঘাটতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, উৎপাদন সাপেক্ষে এ অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু রংপুর নয়, সারা দেশের মানুষের জন্য আমাদের যেসব নির্বাচনী প্রতিশ্র“তি ছিল, ক্ষমতা ছাড়ার আগে তার সবটাই আমরা পূরণ করব।’ গতকাল শনিবার রংপুর জিলা স্কুল মাঠে এক বিশাল জনসভায় শেখ হাসিনা এ ঘোষণা দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশকে দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার। প্রত্যেক মানুষ যাতে দুই বেলা পেট পুরে ভালোভাবে খেয়ে-পরে, কাজ করে বেঁচে থাকতে পারে, সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। নির্বাচনের আগে আমরা বলেছিলাম, এ অঞ্চলের মঙ্গা শব্দটি আমরা মুছে ফেলব। ক্ষমতায় আসার এ দুই বছরে কোথাও মঙ্গা দেখিনি। আমরা খাদ্য উৎপাদনব্যবস্থা উন্নীত করার úরিকল্পনা নিয়েছি। মঙ্গা মৌসুমে অধিক ফসল উৎপাদনের জন্য গবেষণা করে নতুন নতুন জাতের ধান আবিষ্কার করেছি। কার্তিক মাসে যখন কাজ থাকে না তখনো নতুন উদ্ভাবিত সেই ধান কেটে মঙ্গা দূরীকরণের ব্যবস্থা নিয়েছি। কৃষক যাতে ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে, আমরা সে ব্যবস্থা নিয়েছি এবং ভর্তুকির টাকা কৃষক যাতে সরাসরি পায়, সে ব্যবস্থাও নিয়েছি।’
১৯৯৮ সালে তাঁর সরকারের সময়ে নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেড প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অচিরেই আমরা সৈয়দপুর রেল কারখানা ও বিমানবন্দর চালু করারও উদ্যোগ নেব।’ তিনি বলেন, বালাসী ঘাট, বাহাদুরাবাদ ঘাটে রেল ও সড়ক সেতু নির্মাণেরও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তিনি রংপুরে একটি আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট স্টেডিয়াম, সুইমিং পুল, নারীদের খেলাধুলার জন্য ইনডোর স্টেডিয়াম ছাড়াও পৃথক স্টেডিয়াম নির্মাণের প্রতিশ্র“তি দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত সমৃদ্ধ ডিজিটাল সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলা হবে। বর্তমান সরকারের দুই বছরের কাজের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকার গঠনের মাত্র দুই বছরের মধ্যে আমরা দুই লাখ বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। ভবিষ্যতে দেশের একজনকেও বেকার রাখব না।’ শিক্ষাব্যবস্থার অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আগে শুধু প্রাথমিক পর্যায়ে বিনা মূল্যে বই সরবরাহ করা হতো। আমরা মাধ্যমিক পর্যায়েও বই দিচ্ছি এবং আগামীতে ডিগ্রি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বই সরবরাহ করব।’ ২০১৪ সালের মধ্যে নিরক্ষরমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার ব্যাপারে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক আবুল মনসুর আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন মহাজোটের অন্যতম শরিক দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ, সংসদ সদস্য রওশন এরশাদ, অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী, খালেদ মাহমুদ, মোজাহারুল হক, জাফর আলী, টিপু মুন্সী ও ইকবালুর রহীম; চৌধুরী খালেকুজ্জামান, গণতন্ত্রী পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি মোহাম্মদ আফজাল, জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত রাঙ্গা, ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা নজরুল ইসলাম হাক্কানী, জাপা প্রেসিডিয়াম সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গা, পৌর মেয়র আবদুর রউফ মানিক প্রমুখ। এ ছাড়া মঞ্চে ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, বেসরকারি বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী জি এম কাদের, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আবদুল আহাদ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন, হামিদা বানু শোভা, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান।
মহাজোট আছে, থাকবে : এরশাদ
জনসভায় এরশাদ বলেন, ‘২০০৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর আমরা মহাজোট গঠন করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছি। মহাজোট ভোটের জন্য নয়, প্রতিশ্র“তি রক্ষার জন্য গঠিত হয়েছে। ভাত ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য মহাজোট আছে এবং থাকবে।’ মহাজোট ক্ষমতায় এসেছে বলেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজও এখন চলছে এবং মহাজোটের সময়েই তাদের বিচার শেষ হবে।’ এ জনসভায় মহাজোট আরো শক্তিশালী হলো উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের পুত্রবধূ, এটা আমাদের গর্ব।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে রংপুরে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহের দাবি জানিয়ে তিনি আরো বলেন, “রংপুরের মানুষ আর ‘মফিজ’ থাকতে চায় না।”
জনসভায় যোগ দেওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী দুপুর ১টায় হেলিকপ্টারযোগে গঙ্গাচড়া উপজেলার পানাপুকুর এলাকায় পৌঁছান। এ সময় সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল মোহাম্মদ আবদুল মুবীন ও ৬৬ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল এহতেশাম উল হক তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীর ৬৬ পদাতিক ডিভিশনের ২২২ পদাতিক ব্রিগেড গ্র“প এবং ডিভিশনের অন্তর্ভুক্ত কয়েকটি ইউনিটের শীতকালীন যৌথ মহড়া প্রত্যক্ষ করেন। সেখানে মধ্যাহ্নভোজ শেষে বিকেলে প্রধানমন্ত্রী বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এ ছাড়া নবনির্মিত বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের উদ্বোধন করেন তিনি।

ভারতের সঙ্গে নৌ-প্রটোকলের নবায়নসীমা পাঁচ বছর হচ্ছে by জাহাঙ্গীর শাহ

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান অভ্যন্তরীণ নৌপথ অতিক্রম ও বাণিজ্য প্রটোকল নবায়নের সীমা দুই বছর থেকে বাড়িয়ে পাঁচ বছর করা হচ্ছে। অর্থাৎ একবার নবায়ন হলে প্রটোকল কার্যকর থাকার মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। এই প্রটোকলটি ভারতকে নৌপথে ট্রানজিট দেওয়ার প্রটোকল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত।
সাধারণত বাংলাদেশের নৌপথ ব্যবহার করে ভারতীয় পণ্যবাহী জাহাজ পশ্চিমবঙ্গ তথা কলকাতা থেকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে যায়।
গত ২২ ডিসেম্বর নৌপরিবহনসচিব আবদুল মান্নান হাওলাদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত নৌ-প্রটোকলের নবায়নের মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নবায়নের মেয়াদ পাঁচ বছর করার সিদ্ধান্তের ওপর মতামত চেয়ে গত সপ্তাহে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠি পাওয়ার তিন দিনের মধ্যে মতামত দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়।
১৯৭২ সালে স্বাক্ষরিত এই প্রটোকলের নবায়নের মেয়াদ ছিল দুই বছর। প্রতি দুই বছর পর পর এর মেয়াদ বাড়ানো হতো। সর্বশেষ ২০০৯ সালের ২৪ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠিত দুই দেশের সচিব পর্যায়ের বৈঠকে এই নৌ-প্রটোকলের মেয়াদ দুই বছরের জন্য বাড়ানো হয়, যা একই বছরের ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হয়। আগামী ৩১ মার্চ এর মেয়াদ শেষ হচ্ছে।
কয়েকটি নৌ-রুট ট্রানজিট-সুবিধার আওতায় থাকলেও দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্ত রুট শেখবাড়িয়া থেকে চাঁদপুর ও আশুগঞ্জ হয়ে সিলেটের জকিগঞ্জ রুটটিই বেশি ব্যবহূত হয়।
দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, ভারতের পক্ষ থেকে এই নবায়নের মেয়াদ সাত বছর করার প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় তা পাঁচ বছর করতেই বেশি আগ্রহী।
আবার ভারতকে নৌ, সড়ক ও রেলপথে ট্রানজিট দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার কাজ করছে। এই ট্রানজিট চালু হয়ে গেলে আগামী কয়েক বছরে ভারতীয় পণ্য পরিবহন ব্যাপকভাবে বাড়বে। আর তাই বেশি সময় ধরে প্রটোকল নবায়ন করতে আগ্রহী নয় বাংলাদেশ সরকার।
তার পরও পাঁচ বছর অনেক বেশি সময় বলে মনে করছেন কেউ কেউ। তাঁরা বলছেন, যেখানে ট্রানজিটের বিষয়টি এগিয়ে যাচ্ছে, সেখানে হঠাৎ এই প্রটোকলের মেয়াদ দুই বছর থেকে বাড়িয়ে পাঁচ বছর করা ঠিক হবে না।
এ বিষয়ে শুল্ক কর্মকর্তাদের অভিমত হলো, নৌ-প্রটোকলের নবায়নের মেয়াদ বাড়ানো হলে আগামী পাঁচ বছর নতুন করে নৌপথে পণ্য পরিবহনের জন্য কোনো মাশুল পাওয়া যাবে না। নৌপথে পণ্য পরিবহন বাড়লেও এর সুফল পাবে না বাংলাদেশ। শুধু নাব্যতা রক্ষার জন্য নৌ-প্রটোকলের আওতায় বছরে পাঁচ কোটি ডলার দেবে ভারত। কেননা, ট্রানজিট ও ট্রানশিপমেন্ট বিধিমালা স্থগিত করায় ট্রানজিট মাশুল নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
অবশ্য ট্রানজিট বিশেষজ্ঞ রহমত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নৌ-প্রটোকলের আওতায় পুরোনো নৌ-ট্রানজিট রুটগুলো অন্তর্ভুক্ত হবে। এই রুটগুলোতে পণ্য পরিবহন বেশ সময়সাপেক্ষ; ভারতও আর এই রুট ব্যবহারে আগ্রহী নয়। তাই প্রটোকলের নবায়নের মেয়াদ বাড়ানো হলেও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না বাংলাদেশ।’
রহমত উল্লাহ আরও জানান, আশুগঞ্জ কনটেইনার নৌবন্দর হয়ে ভারতীয় পণ্য ট্রানজিট নিলে সেটা একটি নতুন রুট হিসেবে চিহ্নিত হবে।
তবে তা নৌ-রুট তথা নৌ-প্রটোকলের অন্তর্ভুক্ত হবে কি না, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর অংশ হিসেবে ভারতকে নৌপথের পাশাপাশি সড়ক ও রেলপথেও ট্রানজিট দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ সরকার।
আর অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ভারত বাংলাদেশকে ১০০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে। তবে এটি মূলত সরবরাহকারী ঋণ। এর আওতায় পণ্য ও সেবা ভারতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কিনতে হবে। এর মধ্যে ৮৫ শতাংশ পণ্য সরাসরি ভারতের কাছ থেকে কিনতে হবে, আর অবশিষ্ট ১৫ শতাংশ কিনতে হবে ভারতীয় ঠিকাদারের পরামর্শে। এ ছাড়া ঋণচুক্তির আওতায় যেসব প্রকল্পে অর্থায়ন হবে, তাতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে।
ইতিমধ্যে নৌপথের পণ্য পরিবহন বাড়াতে আশুগঞ্জ কনটেইনার নৌবন্দর স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই বন্দর দিয়ে বছরে প্রায় চার লাখ টিইইউ (২০ ফুট দৈর্ঘ্যের) কনটেইনার পরিবহন করা হবে। ১৯৭২ সালের নৌ-প্রটোকলে এই বন্দরটি ব্যবহারের কথা উল্লেখ রয়েছে। কলকাতা থেকে ভারতীয় পণ্য এসে আশুগঞ্জ কনটেইনার নৌবন্দর ব্যবহার করে তা আখাউড়া ও তামাবিল হয়ে যথাক্রমে ত্রিপুরা ও আসামে যাবে।

কিশোরী হত্যার ৩০ ঘণ্টা পর লাশ হস্তান্তরঃ বিএসএফের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ

ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানী (১৫) নিহত হওয়ার ঘটনায় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী ও নাগেশ্বরী উপজেলায় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করে গতকাল শনিবার হাজার হাজার মানুষ সীমান্তে বিক্ষোভ করে।

৩০ ঘণ্টা পর গতকাল শনিবার বিএসএফ ফেলানীর লাশ ফেরত দিয়েছে। আইনি-প্রক্রিয়া শেষে আজ রোববার স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করার কথা রয়েছে।
বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) ফুলবাড়ীর ভারপ্রাপ্ত কোম্পানি কমান্ডার নায়েক সুবেদার আবদুল জব্বার গতকাল প্রথম আলোকে জানান, পতাকা বৈঠকের পর বিএসএফ লাশ ফেরত দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘ফেলানী হত্যাকাণ্ডের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত ও মানবতাবিরোধী। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে।’
গতকাল ফুলবাড়ীর অনন্তপুর সীমান্তে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে ফেলানীর লাশ দেখার জন্য তীব্র শীত উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষ সেখানে সমবেত হয়েছে। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে লাশ হস্তান্তরের সময় তাঁদের অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাঁরা সবাই বিএসএফের এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন। কাশীপুর গ্রাম থেকে আসা মজিবর রহমান অভিযোগ করেন, সীমান্তে প্রায়ই বিএসএফ বিনা উসকানিতে গুলি করে মানুষ মারে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। সরকারের প্রতিবাদ করা উচিত। দক্ষিণ রামখানা গ্রামের কৃষক আ. হামিদ ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘হামরা গরিব বলি তারা গুলি করি মারবে। প্যাটের ভোকোত মানুষ ভারত যায় কাজ করব্যার, তাই বলি মারি ফেলাবে বাহে। কোনো আইন নাই?’ অনন্তপুরের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী হায়দার আলী বলে, ‘আমরা সবাই এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’
ফেলানীর বাড়ি নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা বানারভিটা গ্রামে শোকের মাতম চলছে। স্থানীয় মানুষজন এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন।
ফেলানীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর বাবা নুরুল ইসলাম শোকে যেন পাথর হয়ে গেছেন। স্বজন ও প্রতিবেশীরা তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘বাবা গো তোমরা হামার বেটির লাশ আনি দেও, নিজ হাত মাটি দেমো। হামরা গরিব মানুষ প্যাটের ভোকোত ভারত গেছিলাম আর কোন দিন যাবার নই...’বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। নুরুল জানান, ফেলানীর মা ভারতে আছেন। তিনি জানেন না মেয়ে মারা গেছেন। ফুলবাড়ীর কুলাঘাট এলাকার এক ছেলের সঙ্গে ফেলানীর বিয়ে ঠিক হয়েছিল। শনিবার বিয়ের দিন ধার্য ছিল। তিনি মেয়ের বিয়ের জন্য ৩০ হাজার টাকা এবং কিছু গয়নাও ভারত থেকে এনেছিলেন। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গতকাল বিডিআর ও বিএসএফের মধ্যে পতাকা বৈঠকের পর দুপুর সোয়া ১২টায় লাশ ফেরত দেয় বিএসএফ। পতাকা বৈঠকে বিডিআরের পক্ষে নায়েক সুবেদার আবদুল জব্বার এবং বিএসএফের ১৮১ নম্বর ব্যাটালিয়নের চৌধুরীহাট ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার রাম ব্রিজ রায় নেতৃত্ব দেন। বৈঠকে বিডিআর এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। জবাবে বিএসএফ দুঃখ প্রকাশ করে ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখবে বলে জানায়। পরে বাংলাদেশের পক্ষে লাশ গ্রহণ করেন নায়েক সুবেদার আবদুল জব্বার। এ সময় নাগেশ্বরী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ছানাউল্ল্যাহ মিয়া ও ফুলবাড়ী থানার এসআই মো. নুরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।
এসআই নুরুজ্জামান জানান, ফেলানীর লাশ থানায় রাখা হয়েছে। রোববার কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্তের পর লাশ স্বজনদের হাতে হস্তান্তর করা হবে।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার নুরুল ও ফেলানী ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে অনন্তপুর সীমান্ত পার হওয়ার চেষ্টা করেন। নুরুল প্রথমে মই বেয়ে কাঁটাতার পেরিয়ে আসেন। ফেলানী মইয়ে উঠলে তার কাপড়চোপড় কাঁটাতারে আটকে যায়। এ সময় সে ভয়ে চিৎকার শুরু করে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিএসএফের বুলেট তার বুক ঝাঁজরা করে দেয়।
নূরুলের পুরো পরিবার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির একটি ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করেন।

অসহনীয় বাজার, অসহায় মানুষ

চালের ভরা মৌসুম। অথচ ৩৫ টাকার নিচে বাজারে মোটা চাল নেই। ভাতের পরিবর্তে এক বেলা রুটি খাওয়ার পরিকল্পনা করেও লাভ নেই। চাল ও আটা এখন সমান দরে বিক্রি হয়। শীতের শাকসবজির বাজারও চড়া।

ধান-চালের দাম বাড়ায় কৃষকেরা আগের চেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছেন। তবে সবজি বিক্রি করে কৃষকেরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। আটা-ময়দা ও ভোজ্যতেল বিক্রি করে ব্যবসায়ীদের পকেট ফুলে-ফেঁপে উঠছে। আর সবার সামনে অসহায় সাধারণ ভোক্তারা। সীমিত আয়ের মানুষ হতাশ ও অসহায়। তাদের আয়ের বড় অংশই চলে যাচ্ছে দুবেলা পেট ভরাতে।
নিম্নবিত্ত লোকজন দিন দিন ভিড় বাড়াচ্ছে খোলাবাজারে চাল বিক্রির (ওএমএস) ট্রাকের সামনে। ফলে চাল কিনতে আসা মানুষের সারি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। মধ্যবিত্তরা পারছে না ট্রাকের সামনে লাইন দিতে। তাই সংকটে তারাই বেশি।
ভরা মৌসুমে চালের দাম কেন বেশি—এ প্রশ্ন সাধারণ মানুষ, বিশেষজ্ঞদের, এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও। সরকারের দুই বছর পূর্তিতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্ত ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে বলেও জানা গেছে।
বরিশাল ছাড়া দেশের বেশির ভাগ এলাকায় আমন ধান কাটা হয়েছে। কৃষক এখন ব্যস্ত বোরোর বীজতলা তৈরিতে। এ সময় বোরোর খরচ তুলতে আমন বিক্রি করেন কৃষক। ফলে বাজারে ধানের জোগান বাড়ে, কমে আসে চালের দর। কিন্তু গত এক সপ্তাহে চালের বাজারে উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে।
এক সপ্তাহে চালের দাম কেজিতে আরও এক টাকা বেড়েছে। আর আমন কাটা শুরু হওয়ার পর এক মাসে দাম বেড়েছে দুই থেকে তিন টাকা। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে বাজারে সবচেয়ে মোটা চালের দাম ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা। মাঝারি ৩৮ থেকে ৪২ এবং সরু চাল ৪২ থেকে ৫০ টাকা। সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে ৬ থেকে ৮ শতাংশ পর্যন্ত।
গতকাল শনিবার খাদ্যমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক রাজধানীর বেশ কিছু স্থানে ওএমএসের চাল বিক্রি কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। ক্রেতারা চালের জন্য সারা দিন দাঁড়িয়ে থেকে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন। খাদ্যমন্ত্রী ট্রাকের সংখ্যা বর্তমানের ১০১টি থেকে বাড়িয়ে ১২৫-এ উন্নীত করা এবং আগামী এপ্রিল মাস পর্যন্ত এ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেন। খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে আজ খাদ্য পরিধারণ ও মূল্যায়ন কমিটির বৈঠক রয়েছে। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে জানা গেছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্ত সংস্থা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, এ বছর আমনে ৫৮ লাখ হেক্টর জমিতে এক কোটি ৩৫ লাখ টন চাল উৎপাদিত হবে। সম্প্রতি সরকারি মহাকাশবিষয়ক সংস্থা স্পারসো স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবি দিয়ে আমনের উৎপাদন এলাকা চিহ্নিত করেছে। স্পারসোর হিসাবে, ৫৭ লাখ হেক্টর জমিতে আমনের চাষ হয়েছে। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের হিসাবে, আমনে গতবারের চেয়ে উৎপাদন ৩ শতাংশ বেড়েছে।
দেশের বৃহত্তর চালকল রশীদ এগ্রো লিমিটেডের মালিক আবদুর রশীদ প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, ধান-চালের যে সরবরাহ ও মজুদ রয়েছে, তাতে বাজারে সংকট সৃষ্টির কোনো আশঙ্কা নেই। চাষিদের কাছে প্রচুর চাল মজুদ রয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। রাজধানীর বৃহত্তর চালের বাজার বাদামতলী ও বাবুবাজারের চাল ব্যবসায়ীরাও জানিয়েছেন, চালের সরবরাহ যথেষ্ট। দাম বাড়ানো হচ্ছে মূলত মোকামগুলোতে।
ঈশ্বরদী (পাবনা) থেকে মাহাবুবুল হক জানান, উত্তরবঙ্গে চালের অন্যতম বৃহৎ মোকাম ঈশ্বরদীতে গত সাত মাসে ১২ দফা চালের দাম বেড়েছে। এখানকার ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাল ব্যবসায়ীরা বলেছেন, মজুদদার ও বড় চাল ব্যবসায়ীরা ব্যাংকঋণ নিয়ে মোকাম থেকে ধান কিনে গুদামে মজুদ করেছেন। ফলে মোকামে ন্যায্য মূল্যে ধান কেনা যায়নি। এর ফলে দুই বছর ধরে ধান-চালের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে।
কথা রাখছেন না ব্যবসায়ীরা: সয়াবিন ও পাম তেল মিলিয়ে মাসে এক লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে দেশে। আমদানি পরিস্থিতিও ভালো। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে আন্তর্জাতিক বাজারদর, পরিবহন খরচ, কর, জাহাজভাড়া, ব্যাংক সুদ, যৌক্তিক মুনাফাসহ সর্বোচ্চ খুচরামূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। কিন্তু বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক করে সচিবালয় থেকে বেরিয়ে গিয়েই তা আর মানেন না ব্যবসায়ীরা।
চট্টগ্রাম কাস্টমস থেকে পাওয়া সূত্রে জানা গেছে, আগামী আড়াই মাস পর্যন্ত ভোজ্যতেলের মজুদ রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গত ছয় মাসে ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে আট লাখ টনের কাছাকাছি। এ ছাড়া টিসিবির হাতেও দেড় হাজার টন সয়াবিন রয়েছে। অর্থাৎ, সরবরাহের কোনো ঘাটতি নেই। কিন্তু ভোজ্যতেলের বাজার মোটেই বাগে আনা যাচ্ছে না। তিন দফা বৈঠক করে দুই দফা দাম বাড়ানোর পরও লিটারে আট থেকে ১০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন ও পাম।
সর্বশেষ ২২ ডিসেম্বরের বৈঠক অনুযায়ী, খোলা সয়াবিন তেলের লিটার হওয়ার কথা ঢাকাসহ সারা দেশে সর্বোচ্চ ৯০ টাকা এবং চট্টগ্রামে ৮৮ টাকা। অন্যদিকে খোলা পাম তেল ঢাকায় ৮৬ টাকা এবং চট্টগ্রামে ৮৫ টাকা। খোলা সয়াবিনের তুলনায় পেট বোতলজাত তেলের দর সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ বেশি হতে পারবে। সে হিসাবে বোতলজাত সয়াবিনের দর ঢাকায় হবে প্রতি লিটার ১০১ থেকে ১০২ টাকা।
গতকাল শনিবার ঢাকায় খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ৯৬ থেকে ৯৮ টাকা অর্থাৎ, নির্ধারিত দরের চেয়েও আট টাকা বেশিতে। আর বোতলজাত সয়াবিন ১০৫ থেকে ১১০ টাকা দরে।
আবারও দর নির্ধারণ: সরকার চেয়েছিল মাসে একবার নতুন দর নির্ধারিত হবে ভোজ্যতেলের। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম হেরফেরের প্রসঙ্গ তুলে ব্যবসায়ীরা ১৫ দিন পরপর বৈঠক করতে সরকারকে রাজি করিয়েছেন। যদিও ট্যারিফ কমিশন ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের পর্যবেক্ষণে ধরা পড়েছে, মাত্র ১৫ দিনের জন্য নির্ধারণ করা দর কার্যকর শুরু হতে হতেই সাত দিন লেগে যায়। আগামী বুধবার আবার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দর নির্ধারণের বৈঠক হবে।
ভোজ্যতেলের সার্বিক বিষয়ে তদারক করতে ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমানকে প্রধান করে সাত সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে গত মাসে। সেই কমিটি আগামী বৈঠকে সুপারিশসংবলিত যে প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে, দর নির্ধারণে তা বিবেচনায় নেওয়া হবে।
মধ্যবিত্ত ও গরিব মানুষ এখন সবজিমুখী: গরিবের বাজারের তালিকায় এখন মাংস থাকে না। ডিম ও সবজিই তাদের প্রধান খাদ্য। কারণ, এক কেজি গরুর মাংসের দাম ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা। গতবার ছিল ২২০ টাকা। আবার এক বছর আগে যে রুই মাছ বিক্রি হয়েছে ১৭০ টাকা কেজি দরে, গতকাল সেই রুই বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ২৪০ টাকায়। মূল্যবৃদ্ধির হার প্রায় ২০ শতাংশ। একইভাবে দেশি মুরগি ২৬ শতাংশ, ইলিশ মাছ ১৬ শতাংশ, খাসির মাংস ১৪ শতাংশ বেড়েছে।
দুবেলা খেয়ে টিকে থাকতে গরিবেরা এখন সবজির দিকে ঝুঁকছে। মধ্যবিত্তরাও একই দলে। গতকাল রাজধানীর গোপীবাগ, মতিঝিল কলোনি বাজার ও কমলাপুর কাঁচাবাজার ঘুরে ক্রেতাদের সবজি কেনার প্রবণতা দেখা গেছে। দুই হাতে সবজি নিয়ে কমলাপুর বাজার থেকে ঘরে ফিরছিলেন ফয়জুন্নেছা বেগম। তিনি প্রথম আলোকে জানান, ‘ভাতের সঙ্গে তরকারি তো কিছু একটা খেতে হয়। মাছ-মাংস এমনকি মসুর ডালও কেনার মতো সাধ্য নেই।’
চাল-আটা সমান সমান: দেশের ইতিহাসে সম্ভবত এই প্রথম আটা ও চাল বিক্রি হচ্ছে একই দামে। আটাও এখন সাধারণ মানুষের নাগালের প্রায় বাইরে। এক কেজি মোটা চাল ও এক কেজি আটার দাম এখন সমান। টিসিবির হিসাবে গত এক মাসেই আটার দাম বেড়েছে প্রায় ১৪ শতাংশ। খুচরা বাজারে প্যাকেটজাত আটা বিক্রি হচ্ছে ৩৩-৩৪ টাকা কেজি দরে। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম এখন কমতির দিকে।
এদিকে শুল্ক প্রত্যাহারের পরও চিনির দর কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা বেড়েছে। টিসিবি ৫৪ থেকে ৫৭ টাকা দরে বিক্রির কথা বললেও সরেজমিনে বাজার ঘুরে দেখা যায়, ভোক্তারা ৬০ টাকার নিচে কেউই চিনি কিনতে পারছে না। অথচ চিনিরও কোনো সরবরাহ ঘাটতি নেই। গত ছয় মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে নয় লাখ টন চিনি খালাস হয়েছে।

গুগল'র বাংলাদেশ ডোমেইন আক্রান্ত

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ওয়েব সার্চ ইঞ্জিন গুগল'র বাংলাদেশ ডোমেইন আক্রান্ত হয়েছে। একটি আইএসপি বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

গুগলডটকমডটবিডি (google.com.bd) ঠিকানায় প্রবেশ করতে চাইলে অনেক ব্যবহারকারী সেখানে নিয়মিত হোমপেজটি পাচ্ছেন না। এর পরিবর্তে সেখানে লেখা দেখছেন Google Bangladesh OwN3D by TiGER-M@TE

হ্যাকার/হ্যাকাররা কোনো কোনো আইএসপি'র ডিএনএস (ডোমেইন নেম সিস্টেম) সেটিংস হ্যাক করেছে। এ কারণে ওইসব আইএসপি'র গ্রাহকরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে গুগলডটকমডটবিডি ঠিকানায় প্রবেশ করতে পারছেন না। কোনো কোনো ব্যবহারকারী গুগলডটকমডটবিডি-এর হোমপেজ দেখতে পাচ্ছেন তাদের ইন্টারনেট ব্রাউজারের ক্যাশে-এর কারণে। তবে হোমপেজ এলেও এতে কোনো সার্চ করা যাচ্ছে না।

শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিক থেকে গুগল'র বাংলাদেশ ডোমেইন গুগলডটকমডটবিডি (google.com.bd) ঠিকানায় প্রবেশে সমস্যায় পড়েন ব্যবহারকারীরা। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে ফোন করে অনেক ইন্টারনেট ব্যবহারকারী এ বিষয়ে জানতে চান। ডোমেইনটি হ্যাক হওয়ার বিষয়টি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে রাত সাড়ে ৮টার দিকে নিশ্চিত করে আইএসপি এডিএন সিস্টেমস।

ডোমেইন আক্রান্ত হওয়া প্রসঙ্গে এডিএন'র প্রধান কারিগরি কর্মকর্তা প্রদীপ দে বলেন, "আরো বেশ কয়েকটি আইএসপি একই সমস্যার অভিযোগ পেয়েছে।" "ডোমেইনটি নিশ্চিতভাবেই আক্রান্ত হয়েছে।" অবশ্য ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে সেবাদানকারী ম্যাঙ্গো টেলিসার্ভিস এর আগে জানায় প্রতিষ্ঠানটি ডটকমডটবিডি ডোমেইনে প্রবেশ করতে পারছিলো।

ম্যাঙ্গো টেলিসার্ভিসের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক মীর মাসুদ কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমার এখান থেকে আমি এ্যাক্সেস পাচ্ছি। তবে অনেকেই ফোন করে এ্যাক্সেস সমস্যার কথা জানিয়েছেন।"