Saturday, January 15, 2011

আফগান নারীদের ক্ষমতায়নে ক্ষুদ্রঋণের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত

ক্ষুদ্রঋণের মধ্য দিয়ে আফগান নারীদের ক্ষমতায়নের প্রচেষ্টা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছে। অপ্রতুল নিরাপত্তা, দক্ষ লোকবলের অভাব, গ্রামাঞ্চলে পৌঁছানোর সমস্যা ও সুদের ব্যাপারে ধর্মীয় বিধি-নিষেধের কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ক্ষুদ্রঋণের প্রসার। ত্রিশ বছরের গৃহযুদ্ধে আফগানিস্তানের অবকাঠামোসহ অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে গেছে। যুদ্ধ রেখে গেছে ভয়াবহ দারিদ্র্য ও দুই-তৃতীয়াংশ নিরক্ষর নাগরিক।

হতাশাজনক এই পরিবেশে ২০০৩ সাল থেকে আফগানিস্তানে যাত্রা শুরু করে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম । আফগান সরকার গঠন করে জাতীয় ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি 'মাইক্রোফিন্যান্স ইনভেস্টমেন্ট সাপোর্ট ফ্যাসিলিটি ফর আফগানিস্তান' (মিসফা)। মিসফার সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করে ব্র্যাক আফগানিস্তান, ফিনকা আফগানিস্তান ও আগাখাঁন ডেভেলপমেন্ট নেটওয়াকের 'আফগানিস্তান রুরাল মাইক্রোক্রেডিট প্রোগ্রাম' (এআরএমপি)।

গত সাত বছরে এই ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির আওতায় দেড় লাখ ঋণগ্রহীতাকে ৮৩ কোটি ১০ লাখ ডলার ঋণ দেয়া হয় বলে জানায় মিসফা। জাহারা নামে একুশ বছরের এক তরুণী এই ঋণ গ্রহীতাদের একজন। সে ১০ বছর বয়স থেকে কার্পেট বোনার কাজ শুরু করে। কাজের জন্য সে স্কুলে যেতে পারেনি। ১৮ মাস আগে ব্র্যাক আফগানিস্তান থেকে ১১০০ ডলার ঋণ নিয়ে সে নিজের ব্যবসা শুরু করে। এরপর সে আরো দু'বার ৩৩০ ডলার করে একই প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেয়। সে জানায়, প্রথম ঋণ নেয়ার পর সে ছোট ছোট কার্পেট তৈরি করত। আর এখন সে বড় বড় কার্পেট তৈরি করছে। সে জানায়,'আগে আমি কার্পেট বুনতাম মালিকের জন্য আর এখন বুনি নিজের (ব্যবসার) জন্য'।

কাবুলে প্রতিবেশীর কাছ থেকে সে প্রথম ক্ষুদ্রঋণের কথা শোনে। মিসফা জানায়, আফগানিস্তানের ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাদের ৬০ শতাংশ নারী। ব্র্যাক আফগানিস্তানের প্রধান ফজলুল হকও জানান, তাদের ঋণ গ্রহীতাদের ৮০ শতাংশই নারী। কিন্তু আফগানিস্তানের স্বাধীন 'আফগানিস্তান রিসার্চ এন্ড ইভালু্যয়েশন ইউনিট' (এআরইউ) জানায়, নারীর সামাজিক ও পারিবারিক ক্ষমতায়নে এখনও অনেক বাধা রয়ে গেছে।

তালেবান শাসনের নয় বছর পরও আফগান নারীদের অধিকার সীমাবদ্ধ হয়ে আছে। তালেবান শাসনের সময় আফগান নারীরা কার্যত বোরখাবন্দি ছিল। কোন উপলক্ষে তাদের বাড়ির বাইরে আসা ছিল বিরল ঘটনা। এ মাসের প্রথম দিকে প্রকাশিত জাতিসংঘের এক রিপোর্টে জানা যায়, আফগান নারীরা এখনও বাল্যবিবাহ, 'সম্মানিক' হত্যার মত ঐতিহ্যগত রীতির শিকার। আর আইনও তাদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হচ্ছে।

ক্ষুদ্রঋণকে ধর্মীয় বিধি-নিষেধের মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাই কিছু ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান এই বিধি-নিষেধের মুখে কৌশল পরিবর্তন করে সুদকে সার্ভিস চার্জ বা প্রাতিষ্ঠানিক ফি হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছে। মিসফা ইসলাম ভিত্তিক ঋণ পদ্ধতি গড়ে তোলার জন্য কাজ করছে। আর কিছু ছোট ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান যেমন ফিনকা, ইতিমধ্যে ইসলামিক ঋণ পদ্ধতি চালু করেছে। ফিনকার ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা প্রায় নয় হাজার।

দার্শনিক-শিক্ষক অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আজরফ

সিলেট শহরে হজরত শাহজালালের মাজারের পাশে অবস্থিত অতি প্রাচীন একটি প্রতিষ্ঠান। তার নাম কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ। এর নাম শুনে নাই, সিলেটে এমন কাউকে হয়ত খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু আসাম-বাংলা অঞ্চলে ইতিহাস, সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চায় এর অবদান ও গুরুত্ব অনেকেরই অজনা।

কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ, তার গ্রন্থাগার এবং তার সাহিত্য পত্রিকা-আল ইসলাহ্ সিলেটের অমূল্য সম্পদ। ম্যাট্রিক পাস করে ১৯৬৯ সালে যখন সিলেট মুরারী চাঁদ উচ্চমাধ্যমিক কলেজে ভর্তি হই, তখন আমিও এর গুরুত্ব জানতাম না এবং বুঝতাম না। ইংরেজীর ক্লাসে, একদিন আমাদের প্রিয় শিক্ষক অধ্যাপক আব্দুস সেলিম বলেছিলেন, "সিলেট শুড বি প্রাউড অফ ইটস্ কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ, ইটস্ লাইব্রেরী এন্ড আল ইসলাহ্"। তারপর বুঝতে শুরু করি সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের গুরুত্ব, মর্যাদা, ও অবদান। আজও দেশ বিদেশের অনেক ইতিহাস, সাহিত্য, ও সংস্কৃতিপ্রেমী গবেষক সিলেটে ছুটে আসেন কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ গ্রন্থাগারে লেখাপড়া ও গবেষণা করার জন্য। কারণ এখানে অনেক পুরনো ও দুর্লভ বইপুস্তক সযত্নে রক্ষিত আছে, যা দেশের অন্য কোথাও নেই। তবে এই নিবন্ধের বিষয়বস্তু সিলেটের কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ নয়, বরং তারই একজন নিবেদিতপ্রাণ প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ আজরফ।

অধ্যক্ষ আজরফ নামে পরিচিত হলেও, তাঁর পুরো নাম দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ। বৃহত্তর সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলার তেঘরিয়া গ্রামে নানার বাড়িতে দেওয়ান আজরফের জন্ম হয় ১৯০৮ সালেরা জানুয়ারি। প্রাথমিক লেখাপড়াশেষে তিনি ভর্তি হন দোহালিয়া মাধ্যমিক ইংলিশ স্কুলে। এ্যন্ট্রন্সে পাস করে ১৯২৬ সালে আসেন সিলেট মুরারী চাঁদ কলেজে। সেখান থেকে ডিস্টিংশনসহ বিএ পাস করেন ১৯৩০ সালে। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনশাস্ত্রে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৩২ সালে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে দেওয়ান আজরফ অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তবে 'বইএর পোকা' বলতে যা বুঝায়, তিনি কখনোই তা ছিলেন না। ছাত্র অবস্থায়, পাঠ্য পুস্তকের বাইরের জগতের সাথে তাঁর কর্মতৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মত।

তিরিশের দশকে আসাম-বাংলায় শিক্ষিত মুসলমান যুবক ছিল হীরা জহরতের মতই দুর্লভ। ভাল রেজাল্ট নিয়ে এমএ পাস করে দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ পছন্দমত যেকোন পেশা বেছে নিতে পারতেন। কিন্তু অল্প বেতন ও কম সুযোগ সুবিধা জেনেও, আদর্শবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি শুরু করেন কলেজে অধ্যাপনা। তারই এক পর্যায়ে, তিনি সুনামগঞ্জ কলেজে যোগ দেন ১৯৪৮ সালে এবং কলেজের অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব নেন ১৯৫৪ সালে। কিন্তু এ পদে তিনি এক বছরও থাকতে পারেন নি। ১৯৫২'র ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখার জন্য কিছুদিনের মধ্যেই তাঁকে কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। পরে তিনি দেশের বিভিন্ন কলেজে চাকরি করেন। ১৯৬৭ সালে ঢাকায় স্থাপিত হয় আবুজর গিফারী কলেজ। এই নতুন কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ হিসাবে প্রতিষ্ঠানটিকে গড়ে তোলার গুরু দায়িত্ব পড়ে দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফের ওপর। তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম আর সুযোগ্য নেতৃত্বে, আবুজর গিফারী কলেজ অল্পদিনেই একটি প্রথম শ্রেণীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। ১৯৮০ সাল পর্যন্ত এক নাগাড়ে তিনি এই কলেজের দায়িত্বে ছিলেন। আবুজর গিফারী কলেজের অধ্যক্ষ থাকা অবস্থায় দেওয়ান আজরফ ১৯৭৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত একসাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন এবং ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে পড়িয়েছেন। ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে একজন জাতীয় অধ্যাপকের মর্যাদায় ভূষিত করে।

দর্শনশাস্ত্রের শিক্ষায় ও গবেষণায় অধ্যক্ষ আজরফ ছিলেন এক নিবেদিত প্রাণ পুরুষ। তিনি পাকিস্তান ফিলোসফিক্যাল কংগ্রেসের সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং দীর্ঘদিন ওই প্রতিষ্ঠানের কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর, ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ ফিলোসফিক্যাল সমিতির সভাপতি ছিলেন।

শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য তিনি অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। তারমধ্যে উলেস্নখযোগ্য হল - স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার, আন্তর্জাতিক মুসলিম সংহতি পুরস্কার, একুশে পদক, ইসলামী ফাউন্ডেশন পুরস্কার, শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর পুরস্কার, বাংলাদেশ মুসলিম মিশন পুরস্কার ইত্যাদি। ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে অধ্যক্ষ দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ একজন মিতভাষী, হূদয়বান ও ধার্মিক মানুষ ব্যক্তি ছিলেন। দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের শেষে ৯১ বছর বয়সে ১৯৯৯ সালে এই মহান শিক্ষাবিদ, দার্শনিক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ ও লেখকের জীবনাবসান ঘটে।

শিরক ইমানকে ধ্বংস করে দেয়

'শিরক' তাওহিদের সম্পূর্ণ বিপরীত। তাই তাওহিদ বিষয়ের আলোচনায় প্রাসঙ্গিক হিসেবেই 'শিরক' চলে আসে। তাওহিদবিষয়ক জ্ঞান ব্যক্তিজীবনে মহান আল্লাহর সবচেয়ে বড় নিয়ামত। আর শিরক হলো নিজের সত্তার ওপর সীমাহীন জুলুম ও মহান আল্লাহর সঙ্গে বিদ্রোহের শামিল।

মহান আল্লাহর সত্তা, গুণাবলি, ক্ষমতা ও কার্যাবলিতে অন্য কাউকে শরিক করা বা সমকক্ষ মনে করাই শিরক। কারো অনুগ্রহের কথা ভুলে গেলে যদি নিমকহারাম বলা যায়, মা-বাবার আদেশ অমান্য করলে যদি অবাধ্য সন্তান বলা যায়, তাহলে যিনি জীবন দান করলেন, অতঃপর জীবনধারণের যাবতীয় উপাদান প্রয়োজানুপাতে পরিমিতহারে সরবরাহ করছেন, জীবনের চূড়ান্ত পরিণতি যাঁর ইচ্ছার ওপর নির্ভর করছে, সেই মহান সত্তার অবাধ্যতা কত বড় অপরাধ, বিবেকবান মানুষের জন্য তা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। সুরা 'আর রাহমান'-এর মধ্যে মহান আল্লাহ বারবার স্বীয় অনুগ্রহের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, 'ফা বিআয়্যি আলা-য়ি রাবি্বকুমা তুকাজ্জিবান'_অতএব, তোমরা উভয়ে (মানুষ ও জিন) তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে? পবিত্র কোরআনের অন্যত্র এরশাদ হয়েছে_'আচ্ছা বলো দেখি, কে এই শূন্য জগত সৃষ্টির দ্বারা পূর্ণ করেছেন আর বারবার তার পরিবর্তন ঘটাচ্ছেন? আর কে আকাশ ও পৃথিবী থেকে তোমাদের খাবার জোগাচ্ছেন। আল্লাহ ছাড়া আরো কোনো প্রভু তোমাদের আছে কি? হে রাসুল! আপনি বলে দিন, যদি তোমরা সত্যবাদী হও, (জগৎজোড়া সৃষ্টির প্রমাণের বিরুদ্ধে) তোমাদের যদি কোনো প্রমাণ থাকে, তাহলে তা পেশ করো।' (সুরা নামল, ৬৪ আয়াত) বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী অসকার লিও ব্রাউয়ার লিখেছেন_'সৃষ্টিকর্তা হিসেবে আল্লাহকে স্বীকৃতি দান এবং এর ফলে মহাবিশ্বের সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক হিসেবে আল্লাহকে মেনে নেওয়ার মাত্র একটা অর্থ থাকতে পারে, আর তা হলো_মানুষের প্রতি অমানুষি আচরণের পরিসমাপ্তি। এর অর্থ হবে, মানুষের মধ্যে নতুন প্রেরণা, একটি সংবেদনশীল বিবেক এবং একটি শুদ্ধ সিদ্ধান্তের অস্তিত্ব। এর অর্থ হবে প্রেম আর পবিত্রতা। নাস্তিকতার অর্থ হচ্ছে_দ্বন্দ্ব আর যুদ্ধ। বৈজ্ঞানিক হিসেবে আমি এর কোনোটিই চাই না। থিওরি হিসেবে আমি নাস্তিকতাকে অযৌক্তিক ও ভ্রান্ত মনে করি। বাস্তব দিক থেকে আমার মতে তা মারাত্মক ক্ষতিকর।' বস্তুত শিরক মানুষকে স্বার্থপর, হিংস্র, সংকীর্ণ দৃষ্টি, ভীত ও হীন মানসিকতাসম্পন্ন করে তার জীবনীশক্তি ধ্বংস করে দেয়। কারণ মুশরিক ব্যক্তির আকিদা-বিশ্বাস সৃষ্টির অতি ক্ষুদ্রতম অংশের মধ্যে নিবদ্ধ থাকে।
শিরক প্রধানত দুই প্রকার। শিরকে আকবার ও শিরকে আসগার। আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক বানানো, আল্লাহর জন্য স্ত্রী, পুত্র ও কন্যা সাব্যস্ত করা শিরকে আকবার। যেমন পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে, 'তারা জিনকে আল্লাহর শরিক স্থির করে। অথচ তিনিই তাদের সৃষ্টি করেছেন। আর তারা না জেনে আল্লাহর জন্য পুত্র-কন্যা সাব্যস্ত করে। তিনি অত্যন্ত পবিত্র, তারা যা বলে তা থেকে অনেক ঊধর্ে্ব।' (সুরা আনআম, ১০০ আয়াত) আল্লাহর কাছে মুনাজাত করার মতো জীবিত বা মৃত কারো কাছে বা কারো কবর বা মাজারে প্রার্থনা করা শিরকে আকবার। যেমন_ইয়া গাউসুল আযম বা ইয়া খানজাহান বা ইয়া খাজা গরীবে নেওয়াজ আমাকে একটি সন্তান দান করো, বিপদমুক্ত করো, ব্যবসায় উন্নতি দাও অথবা এ জাতীয় প্রার্থনাই শিরকে আকবারের শামিল। কোনো পীর, ফকির, দরবেশ, কবর বা মাজারের নামে মানত করা, কোনো পীরকে বা মাজারকে সিজদা করা, মাজার ছুঁয়ে শরীরে মর্দন করা, মাজারে বসে তপ-জপ করা, কোনো পীরের নামের তাসবিহ পাঠ করা শিরকে আকবার। খুব ভালোভাবে স্মরণ রাখা দরকার, ইবাদত বন্দেগির একমাত্র হকদার আল্লাহ। কোনো পীর, ফকির, দরবেশ বা বুজুর্গের বিন্দুমাত্র ক্ষমতা নেই যে অন্যের জন্য মঙ্গল বা অমঙ্গল কিছু করতে পারে। পবিত্র কোরআনে বহু আয়াতে এ বিষয়টি স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন বলা হয়েছে_'আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্তার কাছে প্রার্থনা কোরো না, যে তোমার কোনো উপকার করতে পারে না এবং কোনো ক্ষতিও করতে পারে না। যদি তুমি এমনটি করো, তাহলে তুমি নিশ্চয়ই জালিমদের (মুশরিকদের) অন্তর্ভুক্ত হবে। আর আল্লাহ যদি তোমাকে কোনো বিপদে আক্রান্ত করেন, তাহলে তিনি ছাড়া অন্য কেউ তোমাকে তা থেকে উদ্ধার করতে পারবে না।' (সুরা ইউনুস ১০৬, ১০৭ আয়াত) কোনো পীর বা দরবেশের এ ক্ষমতাও নেই যে মৃত্যুর পর আল্লাহর আজাব থেকে কাউকে মুক্ত করবে বা কবরের আজাব সামান্য কমিয়ে দেবে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, যখন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর 'অ-আন্যির আশিরাতাকাল আকরাবীন' অর্থাৎ আপনার নিকটাত্মীয়দের সতর্ক করুন_আয়াতটি নাজিল হলো, তখন তিনি আমাদের কিছু বলার জন্য দাঁড়ালেন, এরপর তিনি বললেন, 'হে কোরাইশ বংশের লোকেরা, তোমরা তোমাদের জীবনকে খরিদ করে নাও (শিরক পরিত্যাগ করো) আল্লাহর কাছে জবাবদিহির ব্যাপারে আমি তোমাদের কোনো উপকার করতে পারব না।
হে আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব, আল্লাহর কাছে জবাবদিহির ব্যাপারে আমি তোমাদের কোনো উপকার করতে পারব না। হে রাসুলের ফুফু সাফিয়্যাহ, আল্লাহর দরবারে জবাবদিহির ব্যাপারে আমি আপনার কোনো উপকার করতে পারব না। হে মোহাম্মদের কন্যা ফাতিমা, আমার সম্পদ থেকে তুমি যা খুশি চাও, কিন্তু আল্লাহর সমীপে জবাবদিহির ব্যাপারে আমি তোমাকে কোনো উপকার করতে পারব না।' কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা সংগঠনকে জীবনবিধান প্রণয়নকারী হিসেবে মান্য করা ও বিশ্বাস করা শিরকে আকবার। আরবের বিখ্যাত দানবীর 'হাতেম তাই'-এর পুত্র আদি ইবনে হাতেম থেকে ইমাম আহমাদ, ইমাম তিরমিজি ও ইমাম ইবনে জারির বর্ণনা করেছেন, আদি ইবনে হাতেম প্রথম রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর খিদমতে উপস্থিত হলে তার গলায় রৌপ্যনির্মিত একটি ক্রুশ ঝুলতে দেখে রাসুলুল্লাহ (সা.) পবিত্র কোরআনের আয়াত পাঠ করলেন_'তারা আল্লাহকে ছেড়ে তাদের পণ্ডিত ও সংসারবিরাগীদের (পুরোহিতদের) রব হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং মাসীহ ইবনে মারইয়াকেও। অথচ তারা আদিষ্ট হয়েছিল এক ইলাহ (আল্লাহ)-এর ইবাদত করতে। তিনি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। তারা যা কিছু শরিক করে তিনি তা থেকে কতই না পবিত্র।' (সুরা তওবা ৩১ আয়াত) আদি ইবনে হাতেম বলেন, আমি তখন বললাম, তারা পাদ্রি-পুরোহিতদের মাবুদ বানায়নি। তখন রাসুল (সা.) বললেন, তারা নিশ্চয়ই পাদ্রি-পুরোহিতদের মাবুদ বানিয়েছে। পাদ্রি-পুরোহিতরা তাদের জন্য মহান আল্লাহর হালাল করা বিষয়কে হারাম বানিয়েছে এবং আল্লাহর হারাম করা বিষয়কে হালাল বানিয়েছে। আর তারা সেসব বিষয়ে পাদ্রি-পুরোহিতদের বিধি-ব্যবস্থাকে মেনে নিয়েছে। এটাই হলো পাদ্রি-পুরোহিতদের তাদের মাবুদ বানিয়ে নেওয়া। বান্দার যেসব চিন্তা-ভাবনা, কামনা-বাসনা, কাজ-কর্ম শিরকে আকবারের দিকে উৎসাহিত ও ধাবিত করে সেগুলো শিরকে আসগার।
শিরক ইমানকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়। মুশরিক ব্যক্তি তার কোনো আমলেরই বিনিময় আল্লাহর কাছে পাবে না। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে_'যদি তুমি আল্লাহর সঙ্গে শরিক করো তাহলে তোমার সব আমলই বরবাদ হয়ে যাবে আর তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।' (সুরা জুমার, ৬৫ আয়াত) পবিত্র কোরআনের অন্যত্র এরশাদ হয়েছে_'যে আল্লাহর সঙ্গে শরিক করে নিশ্চয়ই আল্লাহ তার জন্য জান্নাতকে হারাম করে দিয়েছেন।' (সুরা মায়েদা, ৭২ আয়াত) মানুষের জীবনে গুনাহ বা পাপ সংঘটিত হওয়া খুবই স্বাভাবিক বিষয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন, রহমান ও রহিম। তিনি বান্দার গুনাহ মাফ করবেন। কিন্তু শিরক এমন জঘন্য পাপ যা মহান আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। মহান আল্লাহর ঘোষণা, 'নিশ্চয়ই আল্লাহ কখনো তাঁর সঙ্গে শরিক করার গুনাহ ক্ষমা করবেন না। এ ছাড়া অন্য সব গুনাহ যাকে ইচ্ছা তাকে তিনি ক্ষমা করবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে অংশীদার বানাল সে একটি মহাপাপে নিজেকে জড়াল।' (সুরা নিসা, ৪৮ আয়াত) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা অবস্থায় মারা যাবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।' প্রত্যেক মুমিন ব্যক্তির উচিত ইমানকে খাঁটি করার জন্য আকিদা-বিশ্বাস, কথা-কাজ ও ইবাদত-বন্দেগি সব ক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে নিখুঁতভাবে অনুসরণ করা। যাতে অজ্ঞতাবশত শিরকের স্পর্শে জিন্দেগির সব আমল বরবাদ হয়ে না যায়।

পতিত জমিতে সবজি চাষে সুনিল-অলির চমক

সুনিল চন্দ্র সিকদার ও মো. অলি কারিগর। সুনিল পয়ষট্টিতে পেঁৗছেছেন। আর অলি ত্রিশ বছরের যুবক। বয়সের বাধা পেরিয়ে তাঁরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। গড়েছেন নতুন অধ্যায়। কঠোর পরিশ্রম দিয়ে পতিত জমিতে নজরকাড়া সবজি চাষ করে পটুয়াখালীতে হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন।

উভয়েই কৃষক পরিবারের সন্তান। কিন্তু অভাবের তাড়নায় তাঁদের সে পরিচয় ফিকে হয়ে যাচ্ছিল। অভাবগ্রস্ত সুনিল ও অলি পৈতৃক কৃষি পেশার পুরনো ঐতিহ্যকে জেগে তুলেছেন সবজি চাষে। নানা জাতের সবজি চাষ করে এখন আদর্শ কৃষক হিসেবে নিজেদের পরিচয় নতুনভাবে গড়েছেন। সেই সবজি বিক্রি করে দুই হাতে আয় করছেন কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। পতিত জমিতে তাঁদের দৃষ্টিনন্দন সবজি উৎপাদনের সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ায় অনেকেই এসে ঘুরে দেখছেন বাগান।
বরিশাল বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণের অতিরিক্ত পরিচালক মো. শাহ আলম এবং পটুয়াখালী জেলা খামারবাড়ির উপপরিচালক নিখিল রঞ্জন মণ্ডল বলেন, পতিত জমির সবজি বাগান দেখে উচ্ছ্বসিত না হয়ে থাকা যায় না।
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কনকদিয়া ইউনিয়নের দ্বিপাশা গ্রামের আদি বাসিন্দা সুনিল এবং অলি। তাঁদের বাড়ি দ্বিপাশা-বীরপাশা রাস্তার মাঝামাঝি স্থানে। আর ওই রাস্তার দুই পাশজুড়ে পতিত জমিতে গড়ে তুলেছেন টমেটো, করলা, বেগুন, শালগম, শসা, লাউ, চিচিঙ্গা, ফুলকপি, বাঁধাকপি এবং মরিচসহ নানা জাতের সবজির বাগান। যেকোনো আগন্তুক ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ফলন্ত সবজিবাগান দেখে থমকে দাঁড়ান। কারণ ওই রাস্তার পাশের পতিত জমিগুলো বরাবরই ছিল অযত্নে-অনাবাদি। সেই জমিতে এখন শোভা পাচ্ছে নানা জাতের সবজির গাছ। আর গাছে ঝুলে আছে হরেক রকম সবজি। এমন দৃশ্য পথিককে থামিয়ে চোখ বোলাতে বাধ্য করে। শুধু রাস্তার পাশের পতিত জমিই নয়, চাষের আওতায় নেওয়া হয়েছে ধান ক্ষেতের আইল এবং আশপাশের সব পরিত্যক্ত ভিটে এবং পুকুরপাড়। দুজনে প্রায় সাড়ে ৪ একর পতিত জমিতে সবজি ফলিয়েছেন।
জানা যায়, স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর প্রান্তিক কৃষকসহ বেকার যুবকদের সবজি চাষে উদ্বুদ্ধকরণ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৪০০ কৃষককে প্রশিক্ষণসহ পরামর্শ প্রদান করেন। এদের মধ্যে ১১০টি সবজি খামার গড়েছেন কৃষকরা। তবে তাঁরা সবাই চাষের জন্য বেছে নিয়েছেন আবাদি জমি। কিন্তু পতিত জমিতে ব্যতিক্রম এ উদ্যোগ নিয়ে সফল হয়েছেন সুনিল ও অলি। প্রতিদিন তাঁদের বাগানের সবজি যায় স্থানীয় বগা, বাহেরচর, কালিশুরী, কাছিপাড়া, নুরাইনপুর, কনকদিয়া, বীরপাশা, বাউফল, পাড়েরহাট, আয়লা ও বিলবিলাস বাজারে। এরই মধ্যে এসব বাগান থেকে সবজি বিক্রি করেছেন প্রায় এক লাখ টাকার। বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হলে চলমান প্রকল্প থেকে আরো তিন লাখ টাকার অধিক সবজি বিক্রির সম্ভাবনার কথা জানান তাঁরা। অথচ ছয় মাস আগেও অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করে সংসার চালিয়েছেন সুনিল ও অলি। এখন তাঁরা বেশ খুশি। তবে অনুযোগও রয়েছে। সবজি চাষে অর্থের জোগান পেয়েছেন উচ্চ সুদে বিভিন্ন এনজিওর কাছ থেকে। এ কারণে লাভের একটা বড় অংশ দিয়ে পরিশোধ করতে হয় ঋণের টাকা। তাই এ উদ্যোগের ব্যাপক প্রতিফলনের জন্য সাধারণ কৃষককে সরকারি ব্যাংক থেকে জমির নিরাপত্তা ছাড়া স্বল্প সুদে ঋণের দাবি তাঁদের।
সুনিল চন্দ্র সিকদার বলেন, 'চিন্তাও করি নাই এত ভালো ফলন অইবে। বাবা, এহন বাগানের দিগে চাইলে পরানডা জুড়াইয়া যায়। সরকার যদি আমাগো মোত গরিবেরে কোম সুদে লোনের ব্যবস্থা কইর‌্যা দেতে, তাহেলে অনেক মানুষ সবজি ফলাইতে, অভাব কোমতে গ্রামের মাইনস্যের।'
মো. অলি কারিগর বলেন, 'আমাগো সবজি দেইক্যা সবাই আমাগো সুনাম কয়, ভালো টাহাও পাই বেইচ্যা, সংসারে অভাবও নাই, কিন্তু লোনের লইগ্যা সুদে লইয়া যায় ব্যামালা টাহা'।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, পটুয়াখালীর উপপরিচালক নিখিল রঞ্জন মণ্ডল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সাধারণ মানুষ এবং প্রান্তিক চাষিদের উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে অনাবাদি থাকা পতিত জমি চাষের আওতায় নেওয়া গেলে অনেকেই সুনিল এবং অলির মতো উদাহরণ সৃষ্টিকারী হতে পারত। গ্রামাঞ্চলে অভাবী মানুষের সংখ্যা কমে যেত। এ ছাড়া সবজির দামও সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে চলে আসত। সুনিল-অলি কৃষি সেক্টরে অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত'।

কাশ্মীরে সেনা হ্রাসের কথা ভাবছে ভারত

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সেনাসংখ্যা কমানোর কথা চিন্তাভাবনা করছে নয়া দিল্লি। এ ছাড়া পাকিস্তানিদের ভারতে অবস্থানের অনুমতির মেয়াদ বাড়ানোরও পরিকল্পনা রয়েছে দিল্লির। রাজনৈতিকভাবে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করতেই এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব জি কে পিল্লাই গতকাল শুক্রবার এসব কথা জানিয়েছেন।

তবে কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারা বলেছেন, উপত্যকায় শান্তিরক্ষার স্বার্থে সেখানে সেনা হ্রাস করা হলে চলবে না, সেনাবাহিনীকে পুরোপুরি প্রত্যাহার করতে হবে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পিল্লাই বলেন, কাশ্মীর থেকে আগামী এক বছরে ২৫ শতাংশ সেনা হ্রাসের কথা ভাবছে সরকার।
ভারতের ভূস্বর্গখ্যাত মুসলিম-অধ্যুষিত কাশ্মীর উপত্যকা থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছে সেখানকার জনগণ। গত জুন মাস থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভে সেখানে শতাধিক মানুষ নিহত হয়।
সরকার চলমান এ সংকট রাজনৈতিকভাবে সমাধানের আশ্বাস দিলে কাশ্মীরি জনগণ আপাত শান্ত হয়।
পিল্লাই বলেন, কাশ্মীরের জনগণ যদি সেখানে সেনা উপস্থিতিকে তাদের হয়রানি মনে করে, আর যদি স্থানীয় পুলিশের সাহায্যে ওই এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা সক্ষম হয়, তাহলে সেখান থেকে সেনাসংখ্যা কমিয়ে আনা যেতে পারে। রয়টার্স।

শিশুদের অঙ্গহানির মাধ্যমে ভিক্ষাবৃত্তি চক্রের 'গডফাদার' গ্রেপ্তার

কোমলমতি শিশুদের অঙ্গহানির মাধ্যমে ভিক্ষাবৃত্তিতে নামানোর সঙ্গে জড়িতদের 'গডফাদার' ওমর ফারুককে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার একটি বিশেষ দল গতকাল শুক্রবার কেরানীগঞ্জের এক বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।

ফারুক কামরাঙ্গীরচর থানার একটি ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি। র‌্যাব জানায়, এ চক্রের সঙ্গে বিএনপির এক ইউপি চেয়ারম্যানের স্ত্রী ও পুলিশের কিছু সদস্যও জড়িত। র‌্যাব-১ কার্যালয়ে গতকাল বিকেলে সাংবাদিকদের সামনে ফারুককে হাজির করা হয়। এ সময় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ চক্রের সর্বশেষ শিকার শিশু নিয়ামুল ও তার দরিদ্র মা-বাবাও উপস্থিত ছিলেন। শিশুটি তার ওপর নির্যাতনের ভয়াবহ বিবরণ দেয়।
দরিদ্র রিকশাচালক উমেদ আলীর ছেলে শিশু নিয়ামুল জানায়, একদিন দুপুরের দিকে সে বাড়ির বাইরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল। সে সময় কোরবান, রমজান ও সাদ্দাম তাকে ডেকে নিয়ে কামরাঙ্গীরচর পাকাপুল রোডের বেড়িবাঁধের পাশে একটি পরিত্যক্ত ভবনে যায়। পরে ওই তিনজন নিয়ামুলের হাত ও পা জাপটে ধরে ব্লেড দিয়ে পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলে।
গ্রেপ্তার হওয়া ফারুক সাংবাদিকদের জানায়, সে কামরাঙ্গীরচর থানা আওয়ামী লীগের সাত নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান লিয়াকতের স্ত্রী ও তার দূরসম্পর্কের ফুফু নাজমার হাত ধরে সে এ ঘৃণ্য পেশায় সম্পৃক্ত হয়। নাজমা এ চক্রের প্রধান হোতা। তার নেতৃত্বে শুধু শিশুদের অঙ্গহানিই নয়, রাস্তা থেকে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে নারীদের উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে পতিতাবৃত্তিতে নামতে বাধ্য করা হয়। এ ছাড়া নাজমা সহযোগীদের দিয়ে কামরাঙ্গীরচরের বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে বিভিন্ন পথচারীর সর্বস্ব ছিনিয়ে নিয়ে হত্যা করে তাদের লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়।
ফারুক জানায়, নাজমাকে সহযোগিতা করছে তার ছেলে জনিসহ ওই এলাকার খোকন, ইউসুফ, জাহাঙ্গীর, সোহেল, কোরবান, সাদ্দাম ও রাসেল। কামরাঙ্গীরচর থানা পুলিশের সহযোগিতায় তারা গত বছর থেকে এ কাজ করছে। এসব অপকর্ম করে নাজমা এখন চারটি বাড়ির মালিক।
র‌্যাব সূত্র জানায়, এর আগে গ্রেপ্তার হওয়া কোরবান জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছিল, তাদের সন্ত্রাসীচক্রে ৮-৯ জন সদস্য রয়েছে। তাদের নেতা ওমর ফারুক। দলের সবাই তার কথামতো সব কিছু করে। কামরাঙ্গীরচরের আশ্রাফাবাদ নতুন গলিতে স্কুলের ডান পাশে রয়েছে ওমর ফারুকের ক্লাবঘর। সে দিনের বেলায় ঘুমায়, আর সন্ধ্যার পর ক্লাবে এসে এলাকার বিচার-সালিসের নামে চাঁদাবাজি করে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মোহাম্মদ সোহায়েল সাংবাদিকদের জানান, একটি বেসরকারি টেলিভিশনের অনুষ্ঠানের সূত্র ধরে তাঁরা এ চক্রের সন্ধান পান। বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এলিনা খান ও ব্ল্যাক ট্র–থ প্রডাকশনস সেন্টারের পরিচালক অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী ওই অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিলেন। তাঁদের অনুষ্ঠানে ওই চক্রের হোতারা নিজেদের কর্মকাণ্ড তুলে ধরে। এরপর তথ্য-প্রমাণসহ অনুষ্ঠানের আয়োজকরা বিষয়টি র‌্যাবকে জানান।
এ চক্রের শরীফুল ইসলাম কোরবানকে গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরের খালপাড় এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় মামলা হলে আদালত রুল জারি করেন। আদালতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে তলব করা হয়। নাজমাসহ ঘটনায় জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রে ইচ্ছামতো ফি আদায়

বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং রোগ নির্ণয় কেন্দ্রগুলো রোগীদের কাছ থেকে ইচ্ছামতো ফি আদায় করছে। একেকটি সেবার ফি একেক স্থানে একেক রকম। ফলে ভোগান্তি হচ্ছে জনমানুষের। এ বিষয়ে তিন দশকের পুরনো একটি আইন আছে। তবে তা কেউ মানে না। আইনটি যুগোপযোগী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এ পর্যন্ত সাতবার। তবে তা করতে দেয়নি ‘সুবিধাভোগী গোষ্ঠী’। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, বাংলাদেশের শতকরা ৬৮ ভাগ লোক বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোয় চিকিৎসা নেয়। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।
বিষয়টি স্বীকার করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হকও। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, স্বাস্থ্যসেবা নিতে গিয়ে মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে, এটা দুঃখজনক। স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ‘বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা পরিস্থিতি আমার নজরে আছে। এ বিষয়টি নিয়ে আমিও ভাবছি। যার যা খুশি করবে, ফি আদায়ের ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম-শৃঙ্খলা থাকবে না, এটা হতে পারে না।’ মন্ত্রী জানান, সরকার পুরো স্বাস্থ্যসেবা খাতকে একটা সুশৃঙ্খল অবস্থায় নিয়ে যেতে চায় এবং তা নিয়ে কাজ হচ্ছে।
ফির রকমফের : রাজধানীর বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজে ইকোকার্ডিওগ্রাম (সাদাকালো) করতে ৭০০ টাকা নেয়। একই পরীক্ষা করাতে কমফোর্ট হাসপাতালে এক হাজার, স্কয়ার হাসপাতালে ১২২৭, ল্যাবএইডে ১০০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। আলট্রাসনোগ্রাম (ফুল অ্যাবডোমেন, রঙিন) করাতে কমফোর্ট হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে ১২০০ টাকা, ল্যাবএইডে ১২০০ ও স্কয়ারে ১৪৩২ টাকা। এই পরীক্ষাটি বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৮০০ টাকা, গ্রিন রোডের সন্ধানী ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ৬০০ টাকায়ও করানো যায়।
ইটিটি (এক্সারসাইজ টলারেন্স টেস্ট) করতে ল্যাবএইডে খরচ হয় ২০০০ টাকা ও স্কয়ার হাসপাতালে দুই হাজার ১৭৩ টাকা। ল্যাবএইড হাসপাতাল ব্রেনের সিটিস্ক্যান করতে চার হাজার টাকা নেওয়া হয়। এ পরীক্ষাটি করাতে পপুলার হাসপাতালে সাড়ে তিন হাজার ও স্কয়ার হাসপাতালে চার হাজার ৯০ টাকা নেওয়া হয়। ব্রেনের এমআরআই করাতে ল্যাবএইড সাড়ে ছয় হাজার, স্কয়ার সাত হাজার ১৫০, পপুলার ছয় হাজার টাকা নিচ্ছে।
সিমগা মেডিক্যাল, ন্যাশনাল ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্স, সন্ধি ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ফেইথ ল্যাব লিমিটেডÑএ চারটি রোগ নির্ণয়কেন্দ্রের অবস্থান মোহাম্মদপুরে। একই মানের হলেও এসব প্রতিষ্ঠানের সেবার মূল্যে পার্থক্য রয়েছে। রক্তের বিলিরুবিন পরীক্ষা করাতে সিমগা মেডিক্যালে ১৫০ ও ন্যাশনাল ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্সে ১০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। একই পরীক্ষার জন্য ফেইথ ল্যাব লিমিটেড এবং সন্ধি ডায়াগনস্টিক সেন্টার নিচ্ছে ২০০ টাকা। রক্তের সিবিসি (কমপ্লিট ব্ল্যাড কাউন্ট) পরীক্ষাটি করাতে পপুলার হাসপাতালে ৪০০ টাকা নেওয়া হয়, স্কয়ার হাসপাতালে এজন্য লাগে ৪১০ টাকা। আবার একই পরীক্ষা মোহাম্মদপুরের ন্যাশনাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে করানো যাচ্ছে ২০০ টাকায়।
হাসপাতাল ও ক্লিনিকে রোগী ভর্তি ফি ও বেড ভাড়ায়ও পার্থক্য আছে। রোগী ভর্তির আগে অগ্রিম জমা (ডিপোজিট) রাখতে হয় ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালে ১০ হাজার টাকা, পপুলার স্পেশালাইজড হাসপাতালে পাঁচ হাজার এবং এ্যাপোলো হাসপাতালে ৩০ হাজার টাকা। স্কয়ার হাসপাতালে কক্ষের মান অনুযায়ী সর্বনিু ১০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা ডিপোজিট দিতে হয়। ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালে রেজিস্ট্রেশনসহ ভর্তি ফি এক হাজার টাকা। পপুলার হাসপাতালে দিতে হয় ৫০০ টাকা। ল্যাবএইড হাসপাতালের শয্যার সর্বনিু দৈনিক ভাড়া ১৮০০ টাকা। টুইন শেয়ার ক্যাবিনের প্রতি বেডের ভাড়া ৩০০০ হাজার, ডিলাক্স ক্যাবিন পাঁচ হাজার টাকা। স্কয়ার হাসপাতালে সর্বনিু বেড ভাড়া দুই হাজার টাকা, টুইন শেয়ার কক্ষে প্রতি শয্যার ভাড়া সাড়ে তিন হাজার, সিঙ্গেল স্ট্যান্ডার্ড ৫৫০০, সিঙ্গেল ডিলাক্স ক্যাবিনের ভাড়া সাত হাজার ৫০০ টাকা। এ্যাপালো হাসপাতালে স্ট্যান্ডার্ড বেডের দৈনিক ভাড়া ২৫০০ টাকা, সেমি-প্রাইভেট তিন হাজার ৭৫০, সিঙ্গেল প্রাইভেট ক্যাবিনের ভাড়া ছয় হাজার ৭৫০ টাকা। ডিলাক্স ক্যাবিনের দৈনিক ভাড়া আট হাজার টাকা। পপুলার হাসপাতালে সাধারণ ওয়ার্ডের বেড ভাড়া দেড় হাজার টাকা। সম্প্রতি এসব চিকিৎসাকেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
২৪ নভেম্বর বুধবার গ্রিন রোডের কমফোর্ট হাসপাতাল থেকে পাঁচ বছরের জাবের হোসেনকে নিয়ে বেরুচ্ছিলেন ওয়ারির বাসিন্দা আবদুস সাত্তার। হার্নিয়া অপারেশন হয়েছে শিশু জাবেরের। কমফোর্টের সেবা নিয়ে সন্তুষ্ট হলেও সেবার মূল্য নিয়ে অভিযোগ সাত্তারের। তিনি বলেন, ‘অপারেশন করাতে বিকেল ৩টায় হাসপাতালে এসেছি। ছোট্ট একটা অপারেশনের জন্য বিল করেছে সাড়ে ১৩ হাজার টাকা।’ তার মতে, মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য এ অঙ্কটা বেশি। হাসপাতালগুলোর বিভিন্ন ফি’র বিষয়ে সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত।
বেসরকারি হাসপাতালের খরচের বিষয়ে ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালের গণমাধ্যম সমন্বয়ক (মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর) মেসবাহ য়াযাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এটা সত্য আধুনিক হাসপাতালগুলোর খরচ সাধারণ মানুষের কাছে বেশি মনে হয়। নতুন প্রযুক্তি, অত্যাধুনিক মেশিনারিজ ও স্থাপনা ব্যয় মিলে বিনিয়োগ বেশি করতে হচ্ছে। বর্তমান চার্জ আরো কমালে উন্নত সেবা দেওয়া সম্ভব হবে না। নানা কারণে একই মানের হাসপাতালগুলোর সার্ভিস চার্জের তারতম্য হয়। তবে এ বিষয়ে একটা নীতিমালা অবশ্যই তৈরি এবং প্রয়োগ করা উচিত।’
‘পুরনো আইন’ মানে না কেউ : বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের সেবার ফি নির্ধারণ করা আছে ‘মেডিক্যাল প্র্যাকটিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস অ্যান্ড ল্যাবরেটরিজ (রেগুলেশন) অর্ডিন্যান্স, ১৯৮২’- এ। ২৯ হাসপাতাল মালিক ও চিকিৎসকরা বলছেন, আইনটি ‘অবাস্তব’, ‘অচল’Ñতাই মানা যায় না। বিএমএর মহাসচিব ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বর্তমান আইনে অপারেশন এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার নির্ধারিত ফি অবাস্তব। তবে হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো ক্ষেত্রবিশেষে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে।’ তিনি বলেন, ‘আইনটি যুগোপযোগী করতে অনেক চেষ্টা করেছি। তবে বিভিন্ন পক্ষের বাধার কারণে সেটা বাস্তবায়ন হয়নি।’ তবে কার বাধা ছিল তা বলেননি তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. মো. মুমতাজ উদ্দিন ভুইয়া বলেন, ‘প্রচলিত আইনটি অসামঞ্জস্যপূর্ণ। এতে স্বাস্থ্যসেবার যে ফি আছে তা বর্তমানে মানার মতো না। কেউ মানেও না। হাসপাতালগুলো যেভাবে পারছে সার্ভিস চার্জ আদায় করছে।’ এরপরও হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বেসরকারি হাসপাতালের সংখ্যা অনেক। কিন্তু আমাদের লোকবল খুবই সীমিত। তাই অভিযান চালানো যাচ্ছে না। তবে বর্তমান আইনটি সংশোধনে একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, সারা দেশে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে দুই হাজার ৬০৮টি। অন্যদিকে সরকারি হাসপাতালের সংখ্যা ৬০৫টি। শুধু ঢাকা মহানগরীতে রয়েছে ৫৯২টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী সারা দেশে অনুমোদিত বেসরকারি রোগ নির্ণয়কেন্দ্রের সংখ্যা পাঁচ হাজার ১২২টি।
কী আছে বর্তমান আইনে : ‘মেডিক্যাল প্র্যাকটিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস অ্যান্ড ল্যাবরেটরিজ (রেগুলেশন) অর্ডিন্যান্স, ১৯৮২’-এর ৩ ধারায় বেসরকারি হাসপাতালগুলোর সার্ভিস চার্জ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। গল ব্লাডার, পিত্তথলির পাথর ও সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৪০০ টাকা। অ্যাপেনডিক্স ও মূত্রথলি অপারেশনের ব্যয় ১৬০০ টাকা। নরমাল ডেলিভারি জন্য লেবার রুম চার্জসহ ৪০০ টাকা। হার্নিয়া অপারেশনের জন্য সর্বোচ্চ ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৫০ টাকা। এ ছাড়া রক্তের সিবিসি (কমপ্লিট ব্ল্যাড কাউন্ট) পরীক্ষার জন্য ফি ধরা হয়েছে ৩৪ টাকা।
তবে ২৯ বছর আগে নির্ধারিত এ ফি নিয়ে এখন অপারেশন কিছুতেই সম্ভব নয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। কমফোর্ট নার্সিং হোম (প্রা.) লিমিটেডের ব্যবস্থাপক সরকার আহসানুল হক সেলিম বলেন, ‘বর্তমানে ঢাকার যেকোনো হাসপাতালে গল ব্লাডারের অপারেশন করাতে কমপক্ষে ৩০ হাজার ও অ্যাপেনডিক্স অপারেশনে ২০-২৫ হাজার টাকা প্রয়োজন।’
খসড়া হয়, আইন হয় না : স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮২ সালের আইন যুগোপযোগী করতে এ পর্যন্ত সাতবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তৈরি হয়েছে খসড়া আইন। কিন্তু চিকিৎসাসেবায় জড়িত বিভিন্ন সংগঠন ও সরকারের সদিচ্ছার অভাবে তা করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকারের উদাসীনতা এবং এ সেক্টরের লোকজনের কারণে এত দিনেও এ বিষয়ে আইন হয়নি। ব্যবসায়িক কারণে বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিকের মালিকরা আইন বাস্তবায়নের বিপক্ষে বিভিন্ন সময় তৎপর ছিল।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৭, ১৯৯৯, ২০০১, ২০০৩, ২০০৪, ২০০৬ এবং ২০০৭ সালে পুরনো আইনের স্থলে যুগোপযোগী একটি আইন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ ২০০১ সালে ‘বেসরকারি স্থাস্থ্যসেবা আইন-২০০১’ নামে একটি আইনের খসড়া তৈরি করা হয়। তখনো বাস্তবায়ন হয়নি। এরপর এই খসড়ার কিছু পরিবর্তন করে ২০০৩, ২০০৪, ২০০৬ সালে আবার উদ্যোগ নিলেও আইনটি হতে পারেনি।
জাতীয় স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব বলেন, পৃথিবীর প্রায় দেশেই স্বাস্থ্যসেবার একটা মানদণ্ড নির্ধারণ করা থাকে। ফলে মান নিশ্চিত না হলেই মানুষ আইনের আশ্রয় নিতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে সময়োপযোগী আইন না থাকায় এ বিষয়ে কারোর জবাবদিহিতাও থাকছে না। তিনি আরো বলেন, ‘সব সরকারের সময়ই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয় খসড়া তৈরি করে। কিন্তু এরপর তা মন্ত্রিসভা পর্যন্ত যেতে পারে না।’

বাংলাদেশ বিমানের প্রতি বৈরী আচরণ পাকিস্তানের

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের প্রতি পাকিস্তান অন্যায় আচরণ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দেশটির ফেডারেল বোর্ড অব রেভিনিউ বিমানের যাত্রীদের আগমন ও নির্গমন উভয় ক্ষেত্রেই কর দাবি করছে। অথচ পাকিস্তানে অবতরণকারী অন্য সব এয়ারলাইনসের কাছ থেকে শুধু নির্গমন কর আদায় করা হয়।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস দ্বিমুখী কর বন্ধ করার দাবি করেছে। কিন্তু তাতে সাড়া দিচ্ছে না সে দেশের বোর্ড অব রেভিনিউ। বিমান সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহম্মদ জাকিউল ইসলাম গত বুধবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পাকিস্তান আমাদের প্রতি অন্যায় আচরণ করছে। সে দেশে অবতরণকারী অন্যান্য এয়ারলাইনসের জন্য এক নিয়ম আর আমাদের জন্য ভিন্ন নিয়ম। বিষয়টি আমরা ফয়সালা করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। সরকারকে কূটনৈতিকভাবে এই সমস্যার সমাধান করার অনুরোধ করেছি।’
বিমান সূত্র জানিয়েছে, পাকিস্তান শুধু সে দেশ থেকে ছেড়ে যাওয়া যাত্রীদের ওপর নির্দিষ্ট হারে সব এয়ারলাইনসের কাছ থেকে কর আদায় করে। অন্যান্য এয়ারলাইনসের মতো বাংলাদেশ বিমানও প্রতিবছরই এই কর পরিশোধ করছে। কিন্তু সম্প্রতি যাত্রীদের আগমন-নির্গমন উভয় করই দাবি করে ফেডারেল বোর্ড অব রেভিনিউ। যাত্রীদের পাকিস্তানে আগমনী কর দাবি করা হয়েছে প্রায় ছয় কোটি ৩১ লাখ ৯৭ হাজার পাকিস্তানি রুপি।
গত সপ্তাহে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস বাংলাদেশ সরকারকে জানিয়েছে, পাকিস্তানের এ দাবি সম্পূর্ণ নীতিবিরোধী। পাকিস্তানের বোর্ড অব এয়ারলাইনস রিপ্রেজেনটেটিভ ইন পাকিস্তানকে সঙ্গে নিয়ে সে দেশের সরকারের কাছে এ ধরনের আচরণ বন্ধের জন্য দ্বিতীয় দফা আপিল করলে তাতেও সাড়া দেয়নি পাকিস্তান।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য এবং এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো দেশেই যাত্রীদের আগমন ও নির্গমন কর নেই। সব দেশই এয়ারলাইনসগুলোর কাছ থেকে তাদের যাত্রীদের নির্গমন কর আদায় করে থাকে। পাকিস্তান বাংলাদেশ বিমানের কাছ থেকে দুই ধরনের কর চাচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল আইনের পরিপন্থী।’
জানা গেছে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস পাকিস্তানের করাচিতে সপ্তাহে দুটি ফ্লাইট পরিচালনা করে। মঙ্গলবার ও শুক্রবার এ ফ্লাইট দুটি চলাচল করে।

আইভরি কোস্টে জাতিসংঘের গাড়িতে আগুন দিল বাগবোর সমর্থকেরা

ইভরি কোস্টের স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট লরা বাগবোর সমর্থকেরা গত বৃহস্পতিবার রাজধানী আবিদজানে জাতিসংঘের গাড়িবহরে হামলা চালায় এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। আইভরি কোস্টের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতাকে কেন্দ্র করে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীকে লক্ষ্য করে বাগবোর ক্রমবর্ধমান সমালোচনার প্রেক্ষাপটে এ হামলা চালানো হলো।

হামলার ঘটনায় ওয়াশিংটন ও জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের পক্ষ থেকে কঠোর নিন্দা জানানো হয়। জাতিসংঘ জানায়, বাগবো বাহিনীর এ আগ্রাসন যুদ্ধাপরাধের শামিল। গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর আইভরি কোস্টে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়। নির্বাচনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাগবো ও বিরোধী নেতা আলাসেন ওয়াতারা উভয়েই নিজেদের বিজয়ী বলে দাবি করেন। তবে জাতিসংঘ ওয়াতারাকে দেশটির বৈধ প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘের সঙ্গে বাগবোর উত্তেজনা বাড়ছে।
জাতিসংঘের মুখপাত্র মার্টিন এক বিবৃতিতে জানান, মহাসচিব বান কি মুন আইভরি কোস্টের ঘটনায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বাগবোর অনুগত নিয়মিত-অনিয়মিত সেনা ও সমর্থকেরা জাতিসংঘের গাড়িতে হামলা চালাচ্ছে এবং আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার সকালের দিকে আবিদজানে এ রকম ছয়টি ঘটনা ঘটে। সেখানে জাতিসংঘ মিশনের গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এমনকি আবিদজানে অ্যাম্বুলেন্স লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটে বলে জাতিসংঘের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
আইভরি কোস্টে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাগবোর সমর্থকদের হামলায় জাতিসংঘের দুটি গাড়ি পুড়ে যায় এবং একটি অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্য তিনটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সময় ওই অ্যাম্বুলেন্সে করে অসুস্থ এক ব্যক্তিকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছিল।’ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাগবোর শিবির বর্তমানে জাতিসংঘ ও শান্তিরক্ষী বাহিনীর শত্রুশিবিরে পরিণত হয়েছে। আগে তারা মৌখিক অপপ্রচার চালাত। কিন্তু এখন সরাসরি হামলা চালাচ্ছে।’
আইভরি কোস্টে নিয়োজিত জাতিসংঘের কর্মকর্তা বলেন, পরিস্থিতি দিন দিন উসকানিমূলক হয়ে উঠছে। বাগবোর অনুসারী সেনারা তাঁদের কৌশল পাল্টে জনতাকে জাতিসংঘের সেনাদের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলছেন। তাঁরা জনতাকে জাতিসংঘের গাড়িতে হামলা চালাতে উৎসাহিত করছেন।
জাতিসংঘের কর্মকর্তারা আরও জানান, জনতার ওপর গুলি চালাতে বাগবো জাতিসংঘের সেনাদের উসকানি দিচ্ছেন, যাতে দেশে জাতিসংঘের সেনাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এবং তাঁরা দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। রয়টার্স, এএফপি।

শেয়ারবাজারে বিকিকিনির নানা কৌশল by সুজয় মহাজন

তুন বছরের শুরুতেই দরপতন আর মূল্যবৃদ্ধির সর্বোচ্চ রেকর্ড দেখেছেন দেশের শেয়ারবাজারের লাখ লাখ বিনিয়োগকারী। তালিকাভুক্ত কোম্পানির অনেকগুলো কখনো দাম কমার নিম্নতম স্তর ছুঁয়েছে। পরের দিনই দাম বাড়ার সর্বোচ্চ মূল্যস্তর ছুঁয়েছে অনেক কোম্পানি। (মূলত সার্কিট ব্রেকার বা মূল্যহার সীমার মাধ্যমে প্রতি শেয়ারের দাম বাড়া-কমার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন স্তর নির্ধারণ করে দেওয়া হয়)।

এতে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানির ক্রেতা-বিক্রেতা শূন্য হয়ে পড়ার দৃশ্যও দেখেছেন বিনিয়োগকারীরা। বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাসকে ঘিরেই বাজারে এমনটি ঘটেছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান।
গত সোমবার দেশের শেয়ারবাজারে ভয়াবহ দরপতন ঘটে। মাত্র ৫০ মিনিটে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ৬৩৫ পয়েন্ট সূচক কমে যায়। ওই দিন লেনদেন হওয়া ২২৩ কোম্পানির মধ্যে ৫০টিরও বেশি কোম্পানির শেয়ারের ক্রেতা ছিল না। আর মঙ্গলবার ঘটে ঠিক উল্টো ঘটনা। ২৪৮ কোম্পানির মধ্যে ১৯৫টি কোম্পানি বিক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ে।
সোমবার ডিএসইতে দাম কমার সর্বনিম্ন স্তর স্পর্শ করেছিল সায়হাম টেক্সটাইল। কোম্পানিটির বাজারদর প্রায় ২০ শতাংশ কমে যায়। কোম্পানিটির ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ারের দাম ১২৮ থেকে কমে ১০১ টাকায় নেমে আসে। এতে কোম্পানির শেয়ার ক্রেতাশূন্য হয়ে যায়। কেননা, ক্রেতারা এই ভেবে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল যে, এভাবে পরের দিনগুলোয় দাম আরও কমবে।
পরের দিন মঙ্গলবার সায়হাম টেক্সটাইলের শেয়ার লেনদেনে উল্টো ঘটনা ঘটে। ওই দিন লেনদেন শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যে বিক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ে। অল্প কিছু শেয়ার লেনদেনের পরই ওই শেয়ারের আর কোনো বিক্রেতা ছিল না। ততক্ষণে অবশ্য কোম্পানির প্রতিটি শেয়ারের দাম ওই দিনের সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ মূল্যস্তর স্পর্শ করে। কিন্তু বিক্রেতাদের মধ্যে প্রত্যাশা জন্মে যায় যে, পরের দিনগুলোয় আরও বাড়বে। তাই ওই দিনের সর্বোচ্চ সীমার দরেও কেউ বিক্রি করতে রাজি হননি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ও ডিএসইর সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) অধ্যাপক সালাহউদ্দিন আহমেদ খান বলেন, ‘আমাদের বাজার এখনো অতিমাত্রায় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীনির্ভর। এ কারণে বাজারে অস্বাভাবিক দরপতন ও মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা ঘটে। বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ যত বেশি শক্তিশালী হবে, এই প্রবণতা ততই কমে আসবে।’
ক্রেতা-বিক্রেতার দরকষাকষি: নিত্যপণ্যের বাজারের মতো শেয়ারবাজারেও প্রতিদিন ক্রেতা-বিক্রেতার দরকষাকষির ঘটনা ঘটে। তবে এটি হয় প্রযুক্তির সহায়তায়, যেখানে ক্রেতা-বিক্রেতা একে অপরকে চেনেন না।
ডিএসইতে ক্রেতা-বিক্রেতার দরকষাকষিতে ব্যবহার করা হয় ‘টেসা’ নামের একটি সফটওয়্যার। কম্পিউটারের পর্দায় যখন এই সফটওয়্যারভিত্তিক লেনদেন চলতে থাকে, তখন এর বাম পাশে থাকে ক্রেতা, আর ডান পাশে বিক্রেতা। ক্রেতা-বিক্রেতার ডান-বাম এই অবস্থানকে ঘিরে শেয়ারবাজারে প্রচলিত আছে ‘ডানে মারেন, বামে মারেন’ প্রবাদ। যাঁরা শেয়ারবাজারে নিত্যদিনের লেনদেনের সঙ্গে জড়িত, তাঁরাই শুধু এর অর্থ বোঝেন। বামে মারেন মানে, কোনো দরাদরি ছাড়াই বিক্রি করে দেওয়া। আর ডানে মারেন মানে, বিক্রেতা দরকষাকষি করতে চান।
স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির এই দরকষাকষিতে কখনো বিক্রেতা আবার কখনো ক্রেতা লাভবান হন। সাধারণ বাজারের মতো এখানেও ক্রেতা-বিক্রেতার বনিবনা হলেই কেনাবেচা হয়। পণ্যবাজারের মতোই শেয়ারবাজারের সরবরাহ তথা বিক্রেতা বেড়ে গেলে দাম কমতে থাকে। একইভাবে ক্রেতা বাড়লে দাম বাড়তে থাকে। স্বাভাবিক এই প্রক্রিয়ার বাইরে কখনো কখনো কৃত্রিমভাবেও দাম বাড়ানোর ঘটনা ঘটে শেয়ারবাজারে। তবে শেয়ারবাজারের দাম নিয়ে দেনদরবারের স্বাভাবিক ধারার সঙ্গে বিনিয়োগকারীর ‘আত্মবিশ্বাসের’ রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি দেখা দিলে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে আর আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে থাকলে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে বাজারে।
গত সোম ও মঙ্গলবার পরপর দুই দিনে দেশের শেয়ারবাজারে এরই প্রতিফলন ঘটেছে। বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলায় সোমবার বাজারে রেকর্ড পরিমাণ দরপতন হয়েছিল। ওই দিন মাত্র ৫০ মিনিটের লেনদেনে ডিএসইতে সূচক ৬৩৫ পয়েন্ট কমে যায়। পতনের এই ভয়াবহতা ঠেকাতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) প্রথমবারের মতো লেনদেন বন্ধ করে দেয়। আর মঙ্গলবার হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরে পান বিনিয়োগকারীরা। ফলে এই দুই দিনে বাজারে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শেয়ার ক্রেতা-বিক্রেতা শূন্য হয়ে পড়ে।
বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, যখন বিনিয়োগকারীদের বেশির ভাগ অংশ ভীত হয়ে শেয়ার বিক্রি করতে শুরু করেন, তখন ক্রেতা কমতে থাকে। ভীতির মাত্রা বেড়ে গেলে একপর্যায়ে ট্রেড সার্ভারের বাঁয়ে থাকা ক্রেতা আর খুঁজে পাওয়া যায় না। একই ঘটনা ঘটে আত্মবিশ্বাসের মাত্রা অনেক বেড়ে গেলে। তখন সার্ভারের ডানে থাকা বিক্রেতাদের মধ্যে শেয়ার ধরে রাখা বা মজুদের প্রবণতা বেড়ে যায়। এখানেও বড় বড় বিনিয়োগকারী অনেকটা সাধারণ বাজারের মজুদদারের মতো আচরণ করেন। মঙ্গলবার লেনদেনের শুরুতেই বেশির ভাগ শেয়ার দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করার পর বেশির ভাগ বিনিয়োগকারীর মধ্যে আরও দাম বাড়বে—এমন প্রবণতা তৈরি হয়।
ডিএসইর সভাপতি শাকিল রিজভীর মতে, ‘বাজারের কয়েক দিনের ভয়াবহ দরপতনের পর মঙ্গলবার বেশির ভাগ শেয়ারের বিক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ার ঘটনাটি খুবই স্বাভাবিক। কারণ, এর আগেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। যাতে বিনিয়োগকারীরা আস্থা ফিরে পেয়েছেন।’
শেয়ারের দাম বাড়া-কমার ব্যবধান নিয়ন্ত্রণে তালিকাভুক্ত প্রতিটি শেয়ারের ওপরই সার্কিট ব্রেকার বা মূল্যস্তর নির্ধারণ করে দেওয়া থাকে। কোম্পানিভেদে এই সীমা ভিন্ন।
দাম বাড়া-কমার মূল্যস্তর: ডিএসইর হিসাব অনুযায়ী, যেসব শেয়ারের বাজারমূল্য ১০০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে, সেসব শেয়ারের সার্কিট ব্রেকার (মূল্যস্তর) থাকে ২০ শতাংশ বা ৩৫ টাকা। অর্থাৎ উল্লিখিত দামের মধ্যে থাকা কোনো কোম্পানির শেয়ার এক দিনে ২০ শতাংশ বা ৩৫ টাকার বেশি কমতে বা বাড়তে পারবে না। এভাবে যেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম ২০১ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে, সেসব শেয়ারের মূল্যস্তর নির্ধারিত সাড়ে ৭৫ টাকা বা ১৭ শতাংশ; ৫০১ থেকে এক হাজার টাকার মধ্যকার কোম্পানির শেয়ারের মূল্যস্তর ১২৫ টাকা বা ১৫ শতাংশ; এক হাজার থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যকার কোম্পানির শেয়ারের মূল্যস্তর ২০০ টাকা বা সাড়ে ১২ শতাংশ; দুই হাজার এক টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকার মধ্যকার কোম্পানির শেয়ারের মূল্যস্তর ৩৭৫ টাকা বা ১০ শতাংশ এবং পাঁচ হাজার টাকার ওপরে বাজারদর এমন কোম্পানির শেয়ারের মূল্যস্তর ৬০০ টাকা বা সাড়ে ৭ শতাংশ।
বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, যখন বাজারে ধারাবাহিকভাবে দরপতন ঘটতে থাকে, তখন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভীতিও বাড়তে থাকে। তখন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার বিক্রির প্রবণতা বেড়ে যায়। কার আগে কে শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে বের হবেন, সেই প্রতিযোগিতা চলতে থাকে।
বাজারের এই বিপরীত চিত্র সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএসইর সভাপতি শাকিল রিজভী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিনিয়োগকারীরা যখন চরম ভীত হয়ে পড়েন, তখন বাজারে বিক্রেতা বেড়ে যায়। তখন বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী নিজের হাতে থাকা শেয়ার অন্যদের আগে বিক্রি করতে চান। এ সময় শেয়ার ধরে রাখার ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন তাঁরা। আবার দাম যখন বাড়তে থাকে, তখন বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাসও অনেক বেড়ে যায়। এতে বেশির ভাগ বিনিয়োগকারীর মধ্যে শেয়ার ধরে রাখার প্রবণতা তৈরি হয়। এই দুই প্রবণতার অসামঞ্জস্যতায় বাজার অস্বাভাবিক আচরণ করে।’
কেনা-বেচার বিশেষ পন্থা: শেয়ারবাজারে যারা বড় বিনিয়োগকারী, তাঁরা সাধারণ বা ছোট বিনিয়োগকারীদের চোখ ফাঁকি দিতে সময়ে সময়ে বিশেষ পন্থা অবলম্বন করেন। তেমনি দুটি পন্থা হলো ফিল অ্যান্ড কিল এবং ড্রিপ। শেয়ার কেনা-বেচা উভয় ক্ষেত্রেই এই দুটি পন্থা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বড় অঙ্কের শেয়ার কেনা-বেচার ক্ষেত্রেই এই পন্থা অবলম্বন করা হয়।
ট্রেড সার্ভারের সামনে বসে থাকা সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যাতে বড় বিনিয়োগকারীদের কেনা-বেচার খেলা সহজে বুঝতে না পারেন, সে জন্য এই দুটি পন্থার ব্যবহার হয়ে থাকে। ফিল অ্যান্ড কিলে একসঙ্গে অনেক শেয়ার কেনা-বেচার সুযোগ থাকে। আর ড্রিপ পন্থায় ধাপে ধাপে শেয়ার কেনা-বেচা হয়। সফটওয়্যারেই এসব পন্থা স্থাপন করে দেওয়া আছে। তবে বড় ধরনের কেনা-বেচার ক্ষেত্রেই এসব পন্থা ব্যবহারের সুযোগ মেলে। এতে করে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বুঝতে পারেন না আরেকজন বড় বিনিয়োগকারী এক আদেশে কী পরিমাণ শেয়ার কিনলেন বা বিক্রি করলেন।
একসঙ্গে অধিক পরিমাণ শেয়ারের ক্রয় বা বিক্রয় আদেশ দেখে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ওই শেয়ার নিয়ে কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়েন। বেশি শেয়ারের ক্রয় আদেশ দেখলে বিক্রেতা সাবধান হয়ে যান। তাঁরা তখন দরকষাকষি করতে থাকেন দাম বাড়ানোর জন্য। আর বড় বিক্রয় আদেশ দেখলে ক্রেতারা দাম কমানোর জন্য দরকষাকষি করেন। এভাবে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যাতে শেয়ার কেনা-বেচায় খুব বেশি দরকষাকষির সুযোগ না নিতে পারেন, সে জন্য ‘ফিল অ্যান্ড কিল’ ও ‘ড্রিপ’ পন্থা অবলম্বন করেন বড় বিনিয়োগকারীরা।
ধরা যাক, একজন বিক্রেতা একটি নির্দিষ্ট দামে (এক হাজার টাকা) কোনো কোম্পানির এক লাখ শেয়ার বিক্রি করতে চান। তখন তিনি ড্রিপ অনুসরণ করবেন। এটা করতে গিয়ে তিনি এক লাখ শেয়ারেরই বিক্রয় আদেশ দেবেন, কিন্তু ড্রিপ দেবেন এক হাজার শেয়ার। অর্থাৎ ক্রেতারা পর্দায় দেখতে পাবেন যে এক হাজার টাকা দরে এক হাজার শেয়ার বিক্রি হবে। এভাবে যতক্ষণ না এক লাখ শেয়ার বিক্রি শেষ হচ্ছে, ততক্ষণ পর্দায় ওই দর ও পরিমাণ ভাসতে থাকবে। তারপর তা অদৃশ্য হয়ে যাবে। ক্রেতারা বুঝতেই পারবেন না যে আসলে এক লাখ শেয়ার বিক্রির আদেশ দেওয়া ছিল। একইভাবে বড় ক্রেতা ড্রিপ দিয়ে বিপুল পরিমাণ শেয়ার কিনতে পারেন।
আবার একজন ক্রেতা এক লাখ শেয়ার কিনতে চান। তখন বাজারে ওই শেয়ারের বিভিন্ন দামে বিভিন্ন পরিমাণ বিক্রির আদেশ রয়েছে। যেমন: ৯০০ টাকায় এক হাজার শেয়ার, ৯২৫ টাকায় দেড় হাজার শেয়ার ইত্যাদি। দেখা গেল, এভাবে ৯০০ থেকে এক হাজার ১০০ টাকায় মোট এক লাখ শেয়ার বিক্রির আদেশ রয়েছে। ফিল অ্যান্ড কিল অনুসরণ করে ক্রেতা এক হাজার ১০০ টাকা দরে ক্রয় আদেশ দিয়ে দেবেন। এতে করে ওই কোম্পানির সব শেয়ার (যেগুলো বিক্রয় আদেশ দেওয়া আছে) ক্রেতার কাছে চলে যাবে। যদি এক লাখ শেয়ারের কম পরিমাণ (যেমন ৭০ হাজার) বিক্রয় আদেশ থাকে, তাহলে ওই ৭০ হাজারই ক্রেতা পাবেন। বাকি ৩০ হাজার ক্রয় আদেশ বাতিল হবে; যাকে বলা হচ্ছে কিল। আর যা পেলেন, তা হলো তার ফিল।

চীনের কৃষক উদ্ভাবন করলেন বৈদ্যুতিক জুতা

চীনের এক কৃষক এক জোড়া বৈদ্যুতিক জুতা উদ্ভাবন করেছেন। তাঁর দাবি, এই জুতা পরে এক দিনে ১০০ মাইলের বেশি পথ পাড়ি দেওয়া সম্ভব। হেনান প্রদেশের উগাং এলাকার বাসিন্দা ওই কৃষকের নাম ঝাও জুয়েকিন।
ঝাওয়ের ভাষ্য, এই বৈদ্যুতিক জুতা আসলে ব্যাটারিচালিত রোলার স্কেটবিশেষ। এতে গাড়ির মতো হেডলাইট ও ইন্ডিকেটর রয়েছে। রয়েছে গতিরোধক (ব্রেক) ও ব্রেক লাইট। এই জুতা পায়ে দিয়ে ছুটে চলার সময় ভারসাম্য রক্ষার জন্য দুটি হাতল রয়েছে। জুতার কাজ পরিচালনার বেলায়ও এই হাতল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ঝাও বলেন, হাতলে বসানো বোতাম টিপে জুতা চালু করা হয়। এতে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৫ মাইল পর্যন্ত গতি তোলা সম্ভব। চীনের বিভিন্ন গ্রামে স্কুলগামী শিশুদের কষ্টের কথা ভেবে এই জুতা উদ্ভাবনে উদ্বুদ্ধ হন তিনি। এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে অনেক শিশুকে বেশ কয়েক মাইল পথ পাড়ি দিয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে হয়।
জুতার উদ্ভাবক বলেন, ‘একটি পাহাড়ি গ্রামে আমার বাড়ি। সবচেয়ে কাছের বিদ্যালয়টি আমাদের গ্রাম থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে। সময়মতো বিদ্যালয়ে হাজির হতে গ্রামের শিশুরা প্রতিদিন শেষরাত তিনটার দিকে রওনা হয়। ওদের এই কষ্ট দেখে ভাবতাম, দ্রুতগামী এক জোড়া জুতা আবিষ্কার করতে পারলে ওরা এই দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পাবে।’
ঝাও বলেন, এই জুতা উদ্ভাবনে তাঁর চার বছরের বেশি সময় লেগেছে। ব্যয় হয়েছে ১৫ হাজার মার্কিন ডলারের বেশি। তবে এখন এই জুতা তৈরিতে কম ব্যয় হবে। ১২ ভোল্টের এক জোড়া ব্যাটারিতে চলে জুতা। একটানা তিন ঘণ্টা চলা যায়। এর বেশি সময় চলতে গেলে বাড়তি ব্যাটারি নিতে হবে। আর এই জুতা পরে চলার ক্ষেত্রে খুব বেশি কসরত করারও প্রয়োজন নেই। অরেঞ্জ অনলাইন।

বোফর্স কেলেঙ্কারি নিয়ে তোপের মুখে সোনিয়া

বোফর্স অস্ত্র কেলেঙ্কারি নিয়ে তোপের মুখে পড়েছেন কংগ্রেসের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। ওই কেলেঙ্কারির হোতা হিসেবে পরিচিত ইতালীয় ব্যবসায়ী অট্টাভিও কাত্রোচ্চির সঙ্গে তাঁর পারিবারিক সম্পর্ক কী, তা স্পষ্ট করার দাবি জানিয়েছে প্রধান বিরোধী দল বিজেপি।

দলের নেতারা বলেছেন, ওই কেলেঙ্কারি সম্পর্কে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে তাঁরা দেশব্যাপী মিছিল-সমাবেশেরও পরিকল্পনা করছেন। সম্প্রতি গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিত বিজেপির নির্বাহী কমিটির বৈঠকেও বিষয়টি স্থান পায়।
অভিযোগ রয়েছে ১৯৮৭ সালে সুইডেনের অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোফর্সের সঙ্গে ভারতীয় সেনাবাহিনীর দেড় হাজার কোটি মার্কিন ডলারের একটি চুক্তি হয়। বোফর্সকে অস্ত্র সরবরাহের এ কাজ পাইয়ে দিতে মধ্যস্থতা পালন করেন ইতালীয় ব্যবসায়ী। বোফর্সের কাছ থেকে তিনি এ বাবদ কমিশন নেন ৫০ লাখ পাউন্ড।
এ ব্যাপারে বিজেপির নেতা এল কে আদভানি বলেন, ‘কংগ্রেস সভানেত্রীর সঙ্গে কাত্রোচ্চির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তিনি সোনিয়ার বাড়িতে নিয়মিত আসা-যাওয়া করতেন, এটা সবারই জানা। আমি কোনো ব্যক্তিকে দোষারোপ করছি না। তবে যে কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে সে ব্যাপারটি সম্পর্কে জনগণ বিস্তারিত জানতে চায়।’
বিজেপির আরেক নেতা নীতিন গাড়কারি বলেন, গান্ধী পরিবারের সঙ্গে ওই ইতালীয় ব্যবসায়ীর সম্পর্ক কী, সেটা আমি সোনিয়ার কাছে জানতে চাই। তিনি বলেন, কংগ্রেস নেতাদের বিষয়টি স্পষ্ট করতে বলা হয়েছে। কিন্তু তাঁরা তা করেননি। এর অর্থ এখানে কোনো সমস্যা আছে।
বিজেপির সাবেক সভাপতি রাজনাথ সিং বলেন, বিদেশি ব্যাংকে অর্থ রাখার অভিযোগ রয়েছে সোনিয়ার বিরুদ্ধে। তাঁর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের তদন্তের ব্যাপারে তিনি যেকোনো সংস্থাকে সহযোগিতা করবেন, এ ধরনের ঘোষণা তাঁর দেওয়া উচিত। টাইমস অব ইন্ডিয়া ও টেলিগ্রাফ।

সমুদ্রের ভাঙ্গন ছোট হচ্ছে কক্সবাজার সৈকত

লছে সমুদ্রের ভাঙ্গন, ছোট হয়ে আসছে সমুদ্র সৈকত। ভাঙ্গছে পাড়, বাড়ছে পানির স্তর। বিশ বছরের মধ্যে এই জানুয়ারিতেই সব থেকে উপরে উঠেছে পানি। সৈকত হারাচ্ছে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য। সমুদ্র সীমানা বাড়ছে, কমেছে স্থলভাগ। পৃথিবীর বৃহত্তম অভঙ্গুর প্রাকৃতিক বালুময় সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের অবস্থা এখন এমনই।
সেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখন স্পষ্ট। কদিন আগেও সেখানে ঝাউবাগান ছিল। ছিল বালুময় প্রান্তর। এখন থৈ থৈ পানি। ঝাউগাছের অস্তিত্ব খুঁজে নিতে হয়। আছে বালি। পাশেই সাগরের গর্জন, ঢেউের পরে ঢেউ। থেটিস সাগরে জেগে ওঠা কোটি বছরের বদ্বীপকে যেন সে আবার নিয়ে নিতে চায়। পলি থেকে জন্ম নেয়া বদ্বীপকে যেন আবার ফিরিয়ে নিতে চায় নিজের মধ্যে। এমনই মনে হয় সমুদ্রের ভাঙ্গন দেখলে। পানি উঠা নামার সম্পর্ক চাঁদের সাথে। চাঁদ ওঠার চার থেকে নয় তারিখ পর্যন্ত মরা কটাল। এসময় সমুদ্রের পানি বাড়েও কম, আবার নামেও কম। অমাবস্যা বা পূর্ণিমার সময় ভরা কটাল। এসময় পানি বাড়ে বেশি, কমেও বেশি। এই ভরা কটালে নেমে যাওয়ার সময়ও সমুদ্রের পানি এখন আগের থেকে বেশি থাকে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ব উষ্ণায়নে যে বরফ গলছে তারই অন্যতম প্রভাব এটি। সমুদ্রের পানি স্তর উচ্চ হওয়ার সাথে সাথে আঘাত হানছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ও। এর ফলে গত ২০ বছরে বঙ্গোপসাগরের পানি বেড়েছে প্রায় ২০ সেন্টিমিটার বা ১০ ইঞ্চি। সার্ক মেট্রোলজিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিলের (এসএমআরসি) হিসাব অনুযায়ী প্রতিবছর কক্সবাজারে ৭.৮ মিলিমিটার করে পানি বাড়ছে। এছাড়া হিরন পয়েন্টে বছরে পানি বাড়ছে চার মিলিমিটার এবং চর চঙ্গায় বাড়ছে ছয় মিলিমিটার করে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কতর্ৃপক্ষের (বিআইডবিস্নউটিএ) হিসাব অনুযায়ী বঙ্গোপসাগর ও কক্সবাজারের বাকখালী নদীর মোহনায় গত ২০ বছরে পানি স্তর বেড়েছে প্রায় ৫০ সেন্টিমিটার। বাকখালী নদীতে ৫ জানুয়ারি সব থেকে উপরে উঠেছে পানি। শীতের সময় এমন পানি কখনো বাড়েনি। এদিনে পানির জোয়ারের উচ্চতা ছিল পাঁচ মিটার যা গত ২০ বছরে কখনো হয়নি। সমুদ্র লাগোয়া এই নদীতে ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পানির উচ্চস্তর ছিল তিন দশমিক ৩৯ মিটার। ১৯৯৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এই উচ্চস্তর ছিল তিন দশমিক ৪৩। একই ভাবে এর পাঁচ বছর পর ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ছিল তিন দশমিক ৭৭, ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিন দশমিক ৫৩ এবং ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিন দশমিক ৮৮ মিটার।

সাগর পাড়ে ভাঙ্গন

সরজমিন কক্সবাজার পরিদর্শন করে দেখা গেছে, কক্সবাজারের ডায়াবেটিক পয়েন্ট থেকে একেবারে ইনানী পর্যন্ত প্রায় ২৪ কিলোমিটার জুড়ে বিভিন্ন স্থানে সাগর পাড়ে ভাঙ্গন হচ্ছে। একই সাথে কমে যাচ্ছে সৈকত। কক্সবাজার সৈকতের এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত আগে হেঁটে যাওয়া যেত। ১২৫ কিলোমিটার লম্বা এই সৈকত পাড়ি দেয়া যেত জিপ গাড়ি নিয়েও। কিন্তু এখন আর তা যাওয়া যায় না। এমনকি হেঁটেও নয়। জোয়ারের সময় তো নয়ই, ভাটার সময়ও অনেক স্থানে পানির উপর দিয়ে যেতে হয়। ভাটার সময়ও পুরো সৈকত হেঁটে পাড়ি দেয়া যায় না। জোয়ারের সময় পানি এসে তলিয়ে দিয়ে যে পানি চলে যেত, এখন আর সে পানি চলে যায় না। জোয়ার শেষ হয়ে ভাটায়ও একটি নির্দিষ্ট স্থান পর্যন্ত পানির অবস্থান স্থায়ী হয়ে গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলেই সাগরের পাড় ভাংছে। ঘনঘন জলোচ্ছ্বাস হচ্ছে। হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে সাগর সংলগ্ন পাহাড়, জনপদ। নানা উদ্যোগেও পাড় রক্ষা করা যাচ্ছে না। চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু তাতে কতদূর নিয়ে যাওয়া যাবে তা নিয়ে সন্দিহান সংশিস্নষ্টরা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, কক্সবাজারসহ আশপাশে প্রায় ৫০ স্থানে সাগর পাড় ভাঙ্গছে। এর মধ্যে কিছু এলাকায় বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। এলাকাবাসী বলছেন, বড় ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা কোন সামুদ্রিক বিপদ সংকেত থাকলে এই এলাকায় বরাবরই পানি এসে তলিয়ে দিয়ে যায়। কিন্তু সে পানি আবার চলে যায় তার নির্দিষ্ট সীমানায়। কিন্তু গত কয়েক বছর একটু একটু করে সৈকত কমে যাওয়ায় বিষয়টি সাধারণ চোখেই স্পষ্ট হয়ে গেছে। নদী ভাঙ্গনের মতো সাগর পাড়ের ঘরও ভাংতে শুরু করেছে। কয়েক বছরে প্রায় ৩০০ ফুট পিছিয়ে আসতে হয়েছে। তবে এ পরিস্থিতি সকল এলাকায় নয়।

গত সোম ও মঙ্গলবার কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের প্রায় ২০ কিলোমিটার (ডায়াবেটিক পয়েন্ট থেকে ইনানী পেচাদ্বীপ পর্যন্ত) পরিদর্শন করে দেখা গেছে, বেশ কয়েকটি স্থানের পাড় ভেঙ্গে যাচ্ছে। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ সংযোগ সড়কটি এখন হুমকির মুখে। ডায়াবেটিক পয়েন্ট থেকে চরপাড়া পর্যন্ত ঝাউগাছ ছিল। এখন আর নেই। অল্প কিছু যা আছে তার গোড়ায় মাটি নেই । বর্ষায় ৭/৮ ফুট উচ্চতায় পানি আসে। ডায়াবেটিক পয়েন্টে এসে দেখা গেল শেকড় বের হওয়া ঝাউগাছগুলো দাঁড়িয়ে আছে। কোন গাছের গোড়ায় মাটি নেই। শেষ শীতের পাতাঝরা গাছের মতো ঝাউগাছের গুল্মগুলো। পানিতে সব মাটি ধুয়ে গেছে। এখানে ইট দিয়ে একটি পাকা ঘাট করা হয়েছিল। কিন্তু পানির ধাক্কায় ভেঙ্গে গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, যে পরিমাণ ঝাউগাছ এখানে আছে তার থেকে কয়েকগুণ বেশি ছিল। আগামী বর্ষায় অবশিষ্ট গাছগুলোর কি হবে বলা মুশকিল। বর্ষায় বিমানবন্দর পর্যন্ত পানি চলে আসে। পানির এই গতি থাকলে কক্সবাজারের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হুমকির মুখে পড়বে।

কলাতলীতে এসে দেখলাম সৈকত বলে কিছু নেই। ] শীতেই এই অবস্থা। বর্ষায়তো কথাই নেই। সমুদ্রের পানি একেবারে তীরে এসে ঠেকেছে। এখানে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যাওয়ার রাস্তা ছিল 'মেরিন ড্রাইভ রোড'। যে রাস্তায় গাড়ি চলতো সে রাস্তার কোন চিহ্ন নেই। শুধু রাস্তা নয়, রাস্তার পাশে যে ঘরগুলো ছিল তাও নেই। এখন গেলে কেউ বুঝবে না এখানে আগে সৈকত ছিল।

কলাতলীতে বসবাস করেন হুসনে আরা। পরিবারসহ তার ২০ বছর এখানে বাস। বৈশাখী ঝড়ঝঞ্ঝা ছাড়া শান্তিতেই ছিলেন। কিন্তু গত কয়েক বছর সে শান্তি আর নেই। তাকে শুধুই পিছিয়ে আসতে হচ্ছে। কোনরকম টিনের ঘর করে তিনি এখন পরিবারের অন্য সদস্যসহ থাকেন। সতর্ক সংকেত থাকলে চালের উপরে পানি ওঠে। হুসনে আরা জানালেন, 'আমার বাড়িঘর সবই সমুদ্রের পানিতে চলে গেছে। তিনবার ঘর ভেঙ্গেছে। তিনবার পিছিয়ে আসতে হয়েছে। কিন্তু এখন আর পিছানোর জায়গা নেই। থাকছি অন্যের ব্যক্তি মালিকানার জমিতে। সাগর প্রায় ৫০০ ফুট ভেতরে ঢুকে গেছে। গত দুই বছর সাগরের পানি বেশি চলে এসেছে। আর পরিবর্তনটা চোখে ঠেকছে গত কয়েক বছর। আগে এমন ছিল না। আরো ৮/১০টা পরিবার এখানে এখনো বসবাস করছে। অনেকে চলে গেছে এই এলাকা থেকে। একই মন্তব্য করলেন তীরের বাসিন্দা দিনমজুর আলী হোসেনও। সমুদ্রে ভেঙ্গে যাওয়া পাড়ে ' কিং ফিসার কক্স বে রিসোর্ট ' নামে খাওয়ার হোটেল করা হয়েছে। পাশেই বড় বড় হোটেল হচ্ছে। এসব হোটেল কতর্ৃপক্ষ ব্যক্তি উদ্যোগে কিছু এলাকায় পাকা বাঁধ দেয়ার চেষ্টা করছে।

এ পথে সোজা সৈকত দিয়ে আর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। পানি পারাতে হবে। তাছাড়া গাড়ি যাওয়ার তো রাস্তাই নেই। তাই ঘুরেই গেলাম। কিছুটা দূরে কলাতলী মাল্টিপারপাস সাইক্লোন সেন্টার। সাইক্লোন সেন্টার নিজেই ভেঙ্গে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। ফেটে গেছে এই দোতলা ভবন। এটি তৈরি করা হয়েছিল সমুদ্র থেকে অনেকটা দূরে। সৈকত ছাড়িয়ে সমতলে। এখন এর অবস্থান সমুদ্র থেকে দূরে নয়। একেবারে পানিঘেঁষা। জোয়ারের সময় পানি এসে ভাঙ্গা ভবনে ধাক্কা দেয়। এর সামনে সৈকতের অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। দোতলা ভবনের নিচের অংশটা নেই। এর সামনে পাকা দক্ষিণ কলাতলীর ফাইভ স্টার একতা সংঘের একতলা দুটি কক্ষ ভেঙ্গে পড়ে আছে। এরও একটু উত্তর দিকে ছিল মেরিন ড্রাইভ রোড। এই রাস্তার প্রায় এক কিলোমিটারের কোন অস্থিত্ব নেই। এখানে বেড়ে গেছে সমুদ্রের সীমানা, কমে গেছে স্থলভাগ।

কক্সবাজার থেকে ঠিক ৯ কিলোমিটার দূরে পূর্বে হিমছড়ি পাহাড়, মাঝে পাকা রাস্তা। তারপরেই পশ্চিমে সমুদ্র। এখানে রাস্তা ছুঁইছুঁই করছে সমুদ্রের পানি। পাটের অনেক মোটা কাপড়ের (জিউ টেক্সটাইল) মধ্যে বালি ঢুকিয়ে এখানে ঢেউয়ের ধাক্কা রোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু তা থাকছে না। ঢেউয়ের ধাক্কায় এই কাপড়ে জড়ানো বালির বাঁধ ভেঙ্গে যাচ্ছে। পরিস্থিতিটা এখানে আরো খারাপ। কোনরকমে রাস্তা ভাংলেই পাহাড় ভাঙ্গা শুরু হবে। পাকা পিচঢালা এই কক্সবাজার-টেকনাফ সংযোগ সড়কটি এখন হুমকির মুখে। জোয়ারের সময় রাস্তা একেবারেই ছুঁইছুঁই করে পানি। এখন রাস্তা বাড়ানো হচ্ছে পাহাড়ের দিকে। পাহাড় কেটে। একেবারে পাহাড়ের পাদদেশে। এখানে সৈকত ঘেঁষে ছিল ঝাউবাগান, পুকুর। এখন তার কিছুই নেই।

কর্তব্যরত সেনা কর্মকর্তা মো. সামসুল ইসলাম বললেন, এখানে ঝাউবাগান শুধু ন, অনেক জঙ্গলও ছিল। কিন্তু তার কিছুই নেই। সব পানিতে তলিয়ে গেছে। ঝাউবাগান পানিতে তলিয়ে প্রায় ৫০০ মিটার ভেতরে চলে এসেছে সাগরের পানি। চেষ্টা করা হচ্ছে সাগরের ভাঙ্গন ঠেকানোর।

কক্সবাজারের বাসিন্দা সাবেক সিভিল ইঞ্জিনিয়ার মো. আলী রেজা বললেন, 'আমি ৪০ বছর সৈকতে হাঁটি। এখন যেমন ভাঙ্গন হচ্ছে আগে কখনো তা দেখিনি। সুন্দর ঝাউবন ছিল। এখন নেই। আদী সৌন্দর্য হারিয়ে গেছে সৈকতের। একেবারে হিমছড়ি পর্যন্ত চওড়া সৈকত দিয়ে হেঁটে যাওয়া যেত। এখন আর তা যাওয়া যায় না। এখন সৈকতে নামামাত্র সমুদ্র। আগে দূরে ছিল।'

পানি স্তর বেড়েছে

মাকসুদুর রহমান বিআইডবিস্নউটিএ-এর অটোগেজ অপারেটর হিসাবে কর্মরত আছেন। ১৯৭৬ সাল থেকে তিনি কর্মরত। বঙ্গোপসাগর ও বাকখালী নদীর মোহনার একটু দূরে পানির জোয়ার-ভাটার জরিপ করেন প্রতিদিন। কত পানি বাড়ল আর কত পানি কমল তা তিনি মাপেন অটোগেজ যন্ত্রের সাহায্যে। উত্তর নুনিয়াচড়ায় পানি মাপা সরকারি এই যন্ত্র স্থাপন করা আছে। তিনি বললেন, 'সমুদ্রের সৈকত অনেক কমে গেছে। আগে যেখানে পানি ছিল এখন সেখান থেকে অনেকটা চলে এসেছে। শীতে ভাটায়ও এখন আর আগের মতো পানি নেমে যায় না।'

বঙ্গোপসাগর ও বাকখালী নদীর মোহনায় ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পানির উচ্চস্তর ছিল ৩ দশমিক ৩৯ মিটার। একই মাসে পর্যায়ক্রমে ১৯৯৫ সালে ৩ দশমিক ৪৩, ২০০০ সালে ৩ দশমিক ৭৭, ২০০৫ সালে ৩ দশমিক ৫৩ এবং ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে উচ্চস্তর ছিল ৩ দশমিক ৮৮ মিটার। ২০১০ সালের নভেম্বর মাসে ছিল ৪ দশমিক ০১ মিটার।

পানি কেন বাড়ছে

পানি বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত ইত্তেফাককে বলেন, প্রায় ৩০ বছরে আমাদের সমুদ্রের পানিস্তর প্রায় ১০ ইঞ্চি বেড়ে গেছে। এখন আগের থেকে বেশি পানি ঢুকছে কক্সবাজারের বাকখালী নদীতে। উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততা বেড়েছে। স্রোত পরিবর্তন হচ্ছে। সমুদ্র তীরবর্তী নদীতে ক্ষয় বেড়েছে। এসব বিচার করে মনে হয় সমুদ্রের পানি স্তর বেড়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসের পানির হিসাব পর্যালোচনা করাটাই যথাযথ বলে তিনি মন্তব্য করেন।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. গিয়াস উদ্দিন ইত্তেফাককে বললেন, যেখানে পাহাড় কাটা হচ্ছে সেখানেই ভাঙ্গন হচ্ছে। ভাঙ্গন ঠেকাতে আমাদের আরো বৃক্ষায়ন দরকার। পুরো সমুদ্র সৈকতকে আরো সুন্দর করতে ১২০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মহাপরিকল্পনা করা হচ্ছে। জুনের মধ্যে এই পরিকল্পনা শেষ হবে। একই সাথে সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু করা হচ্ছে। সমুদ্রের সীমানাই এখনো ঠিক করা হয়নি। হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী আগামী তিন মাসের মধ্যে সীমানা ঠিক করে অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করা হবে। ইতোমধ্যে ৫৯টি পস্নট বাতিল করা হয়েছে। নতুন পরিকল্পনায় নির্দিষ্ট এলাকায় কোন টিউবওয়েল স্থাপন করা হবে না। বাকখালি নদী থেকে পানি এনে শোধন করে নতুন শহরে দেয়া হবে। পরিবেশের দিকে খেয়াল রেখেই এই পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

নতুন পরিকল্পনা
কক্সবাজার শহরকে রক্ষার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড নতুন করে একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। কক্সবাজার সদরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সৈয়দ সাহিদুল আলম বললেন, প্রায় সাড়ে ১০ কিলোমিটার লম্বা বাঁধ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রকল্পটি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে অন্তভর্ুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু এখনো অর্থ বরাদ্দ করা হয়নি। তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরের আঘাত থেকে কক্সবাজারকে রক্ষা করা এবং পর্যটনকে আকর্ষণীয় করতে এই প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এর ফলে বেলী হ্যাচারী থেকে মেরিন ড্রাইভ হয়ে সুগন্ধা পয়েন্টের সাগর পাড় দিয়ে লাভলী সৈকত দিয়ে ডায়াবেটিক পয়েন্টের বাইরে ঝাউবন ভেতরে রেখে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরকে প্রকল্পের ভেতরে রেখে নুনাছড়ি পর্যন্ত উপকৃত হবে।

অবশ্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্র জানিয়েছে, এখানে যে পরিমাণ বাঁধ নির্মাণ প্রয়োজন তার কিছুই করা হচ্ছে না। এমনকি যে সময় যা করা প্রয়োজন তাও করা হচ্ছে না। সিডর হওয়ার পরে যে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছিল তা এখনো করা যায়নি অর্থের অভাবে। অথচ সিডরের পরে কয়েকবছরে পানির বৈশিষ্টও পরিবর্তন হয়েছে। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলা হচ্ছে না। সংশিস্নষ্টরা জানিয়েছেন, কক্সবাজার ছাড়াও কুতুবদিয়া, চট্টগ্রাম, ফেনীসহ বিভিন্ন জেলায় সমুদ্রের ভাঙ্গন হচ্ছে। কিছু এলাকায় বাঁধ দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। বেশিরভাগ এলাকা অরক্ষিত।

কক্সবাজার

কক্সবাজার বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি শহর। কক্সবাজার প্যানোয়া নামেও পরিচিত যার আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে হলুদ ফুল। এর আরো একটি প্রাচীন নাম হচ্ছে প্যালংকি। আধুনিক কক্সবাজারের নাম রাখা হয়েছে ব্রিটিশ আমলের ভারতের এক সেনা কর্মকর্তা 'ককস' এর নামে। পৃথিবীর সব থেকে বড় অভঙ্গুর বালুময় সমুদ্র সৈকত এখানে। লম্বা ১২৫ কিলোমিটার। ভারত মহাসাগরের উত্তর-পূর্ব অংশে অবস্থিত একটি উপসাগর বঙ্গোপসাগর। এটি অনেকটা ত্রিভূজাকৃতির। এর পশ্চিমে ভারত ও শ্রীলংকা, উত্তরে বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য (এই দুই বাংলায় এর ব্যাপ্তি বলেই এর নাম হয়েছে বঙ্গোপসাগর), থাইল্যান্ডের দক্ষিণাংশ এবং আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ রয়েছে পূর্ব দিকে।

হতভাগ্য ১০ বাংলাদেশি শ্রমিকের লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরলেন স্বজনরা

ফ্রিকার দ্বীপরাষ্ট্র মরিশাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১০ বাংলাদেশির লাশ গতকাল শুক্রবার রাতে ঢাকায় আসার পর তাঁদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পররাষ্ট্র এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে স্বজনরা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লাশ গ্রহণের পর রাতেই তাঁদের গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন।

জানা যায়, নিহত এসব বাংলাদেশি বৈধভাবে চাকরি নিয়ে গত ৬ ও ৮ ডিসেম্বর মরিশাসে গিয়েছিলেন। গত বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে ফ্লাক অঞ্চলের সেন্ট জুলিয়েন ডি হটম্যান এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তাঁরা। তাঁরা সবাই একটি গার্মেন্ট কারখানায় সিউয়িং মেশিন অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে লাশ হয়ে ফিরে আসতে হলো তাঁদের।
বিমান থেকে একে একে হতভাগ্য শ্রমিকদের লাশ নামিয়ে আনা হলে বিমানবন্দরে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। স্বজনদের আহাজারিতে সেখানকার পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। স্বজনদের পাশাপাশি উপস্থিত অনেক সাধারণ মানুষও তাদের অশ্রু সংবরণ করতে পারেনি।
এ ছাড়া ওই ঘটনায় ইলিয়াছ গাজী নামে আরো এক বাংলাদেশি মারাত্মক আহত হয়ে হাসপাতালে মারা যান। তাঁর লাশও দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।
পুলিশের বিশেষ শাখার এসএস (ইমিগ্রেশন) মাজহারুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে জানান, গতকাল রাত পৌনে ৯টায় কফিনবাহী ইকে-৫৮৫ নম্বরের এমিরেটস এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজটি শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানবন্দর আর্মড পুলিশের সিনিয়র সহকারী সুপার এইচ এম আজিমুল হক কালের কণ্ঠকে জানান, পররাষ্ট্র, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে নিহতদের স্বজনদের কাছে লাশ হস্তাস্তর করা হয়। কুমিল্লার তিতাস উপজেলার কারিকান্দি ইউনিয়নের বান্দারামপুর গ্রামের রেণু মিয়া গত রাতে কালের কণ্ঠকে জানান, ছেলে সেলিমের লাশ গ্রহণের পর রাতেই গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। মাত্র ১৫ দিন আগে তাঁর ছেলে মরিশাসে গিয়েছিলেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নিহতদের প্রত্যেকের বীমা করা ছিল। বীমার চুক্তি অনুযায়ী তাঁদের পরিবার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ক্ষতিপূরণের টাকা পাবে।
নিহতদের মধ্যে সাতজন ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং অন্য তিনজন কুমিল্লা জেলার। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাতজন হলেন সরাইলের সাকাইতির সোলাবাড়িয়া গ্রামের আলি আবজালের ছেলে আকতার, কসবার সাইদাবাদ গ্রামের ইউসুফের ছেলে আল মামুন ও আবদুল হাকিমের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান, মুকুন্দপুরের গোয়ালনগর গ্রামের তাহের মিয়ার ছেলে জয় হোসেন, আশুগঞ্জের বাহাদুরপুরের দুর্গাপুর গ্রামের আলী আফজালের ছেলে রকিবুল হাসান, আখাউড়ার গঙ্গাসাগরের নিলাখাদ গ্রামের রশিদ মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ সাইদুর ও কসবার চান্দহারের চকচন্দ্রপুর গ্রামের জাজু মিয়ার ছেলে সাগর। কুমিল্লার তিনজন হলেন তিতাস উপজেলার নারান্দি ইউনিয়নের সুকান্দা গ্রামের জালাল উদ্দিনের ছেলে জাহিদুল ও সোনাকান্দা গ্রামের মনু মোল্লার ছেলে মোক্তার এবং কারিকান্দি ইউনিয়নের বান্দারামপুর গ্রামের রেণু মিয়ার ছেলে সেলিম।

গ্রিনল্যান্ডে নির্ধারিত সময়ের দুই দিন আগেই সূর্যের উঁকি

জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের সব হিসাবনিকাশ ভুল প্রতিপন্ন করে উত্তর গোলার্ধের এলাকা গ্রিনল্যান্ডে নির্ধারিত সময়ের দুই দিন আগে সূর্যোদয় হয়েছে। হিসাব অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবার সেখানে সূর্য ওঠার কথা ছিল। কিন্তু গত মঙ্গলবার দুপুর একটায় সবাইকে অবাক করে আর্কটিক অঞ্চলের সর্ব পশ্চিমের শহর লুলিসাতে সূর্যদেব উঁকি দেন।

গোলার্ধ অঞ্চলে পৃথিবীর অন্যান্য এলাকার মতো সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত হয় না। দুই মেরু অঞ্চলে ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে দিনের আলো অথবা রাতে অন্ধকার থাকে। এলাকাভেদে সূর্যের আলোর উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির মেয়াদ সেখানে টানা ছয় মাস পর্যন্ত হতে পারে। ‘পোলার সার্কেল’ বা মেরুচক্রের ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় এ মেয়াদ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। মেরুচক্রের সবচেয়ে প্রান্তবর্তী এলাকায় একটানা ছয় মাস দিনের আলো এবং টানা ছয় মাস অন্ধকার থাকে।
বিজ্ঞানীদের গাণিতিক ছক অনুযায়ী এত দিন সূর্য ও পৃথিবীর গতিপ্রকৃতির নির্ভুল হিসাব পাওয়া যাচ্ছিল। সূর্য কখন, কোন অবস্থানে থাকবে, সে হিসাব কখনো ভুল প্রমাণিত হয়নি। কিন্তু গত মঙ্গলবার লুলিসাত শহরে সূর্যের এই ‘অকালবোধন’ বিজ্ঞানীদের ভাবিয়ে তুলেছে।
বিজ্ঞানীদের একটি বড় অংশ মনে করছেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে আর্কটিক এলাকায় হিমশৈল দ্রুত গলে যাওয়ার কারণে দিগন্তসীমা আগের চেয়ে অনেক বেশি নিচু হয়ে গেছে। সে কারণে নির্ধারিত সময়ের দুই দিন আগেই সূর্য দৃশ্যমান হয়েছে। তাঁরা বলেছেন, এই তত্ত্ব সঠিক হলে এটাই প্রমাণিত হবে যে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা মেরু এলাকায় যে মাত্রায় বরফ গলছে বলে এত কাল ধারণা করে আসছেন, সে ধারণার চেয়ে অনেক গুণ বেশি গতিতে বরফ গলছে। তবে সূর্যের এই ‘আগাম উপস্থিতি’র এটাই যে মূল কারণ, সেটা তাঁরা নিশ্চিত করে বলেননি। এ ঘটনার নিশ্চিত ব্যাখ্যা না পাওয়ার কারণে তাঁরা চিন্তিত রয়েছেন।
ভিয়েনায় অবস্থিত সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট ফর মেটেরোলজির ভূ-পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের পরিচালক উলফ্যাং লেনহার্থ বলেছেন, নক্ষত্রপুঞ্জে কোনো অবস্থানগত পরিবর্তন আসেনি। তেমনটি হলে সারা পৃথিবী লন্ডভন্ড হয়ে যেত। পৃথিবীর কক্ষপথ ও সেখানে তার পরিভ্রমণ-সম্পর্কিত তথ্য-উপাত্ত প্রতি মুহূর্তে বিজ্ঞানীরা সংগ্রহ করছেন, গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থানের খোঁজখবর রাখছেন। সে সব তথ্যে কোনো অনিয়মের আভাস পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় দুই দিন আগে সূর্যের উপস্থিতি তাঁদের ভাবিয়ে তুলেছে।
গ্রিনল্যান্ডের থমাস পোচ শহরে অবস্থিত ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞান-বিষয়ক ইনস্টিটিউট বলেছে, বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে বরফের পাহাড়গুলো গলে ক্রমেই উচ্চতা হারাচ্ছে। এতে দিগন্তের উচ্চতাও কমে এসেছে। ফলে সূর্য নির্ধারিত সময়ে উদিত হলেও দিগন্তসীমা নিচু হওয়ার কারণে তাকে আগেভাগে দেখা গেছে। ডেইলি মেইল অনলাইন।

মিয়ানমারের আপত্তিতে কনোকো ফিলিপসের সঙ্গে চুক্তি হয়নি

দেশের সমুদ্রসীমায় অন্তত দুটি ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি কনোকো ফিলিপসের সঙ্গে পেট্রোবাংলার যে উৎপাদন অংশীদারি চুক্তি (পিএসসি) হওয়ার কথা ছিল, মিয়ানমারের আপত্তির কারণে সরকার তা স্থগিত রেখেছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, কনোকো ফিলিপসের সঙ্গে পিএসসি স্বাক্ষরের ব্যাপারে পেট্রোবাংলার আলোচনা যখন প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে, তখন মিয়ানমার সরকার তাদের আপত্তি জানিয়ে চিঠি পাঠায়। চিঠিটি মিয়ানমারের ঢাকার দূতাবাস পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পৌঁছে দেয়। মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টি সরকারের উচ্চপর্যায়ে অবহিত করা হলে পিএসসি স্বাক্ষর না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এ কারণে গত অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে কনোকোর সঙ্গে পেট্রোবাংলার আলোচনা হঠাৎ শেষ হয়ে যায়। এ ব্যাপারে দুই পক্ষ আর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। অথচ আলোচনা ভেঙে যাওয়ার কয়েক দিন আগে উভয় পক্ষ একটি খসড়া চুক্তি অনুস্বাক্ষর করেছিল, যাতে গভীর সমুদ্রের ১০ ও ১১ নম্বর ব্লকের যেটুকু এলাকা মিয়ানমার দাবি করছে, সেটুকু বাদ দিয়েই অনুসন্ধান চালানোর ব্যাপারে দুই পক্ষ একমত পোষণ করেছিল।
সরকারি-বেসরকারি সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সরকারি এই সিদ্ধান্তের ফলে দেশের সমুদ্রসীমায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কয়েক বছর পিছিয়ে গেল। কারণ, যেহেতু মিয়ানমারের আপত্তির কারণে চুক্তি স্বাক্ষর স্থগিত রাখা হয়েছে, সেহেতু যে বিরোধ ওই আপত্তির কারণ, তা নিরসন না হওয়া পর্যন্ত অনুসন্ধান কার্যক্রম আর শুরু হবে না। ওই বিরোধ নিষ্পত্তিতে সময় লাগবে। অথচ পেট্রোবাংলার সঙ্গে কনোকো ফিলিপসের আলোচনা এমন পর্যায়ে গিয়েছিল, চলতি শীত মৌসুমেই তাদের ভূকম্পন জরিপ শুরুর প্রস্তুতি ছিল।
সমুদ্রবক্ষে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বাংলাদেশ প্রথম উদ্যোগ নেয় ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়। তখন মডেল পিএসসি ২০০৮-এর অধীনে বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে প্রস্তাব আহ্বান করা হয়। বিশ্বের খ্যাতনামা আটটি কোম্পানি এতে অংশ নেয়। এর মধ্যে গভীর সমুদ্রের আটটি ব্লকে অনুসন্ধান কাজের প্রস্তাবে কনোকো ফিলিপস এবং অগভীর সমুদ্রের দুটি ব্লকের জন্য ব্রিটিশ কোম্পানি টাল্লো যোগ্য বিবেচিত হয়। ওই সময়েই এসব ব্লকে পিএসসি স্বাক্ষর হয়ে যেত। কিন্তু কোনো কোনো মহলের বিরোধিতাকে আমলে নিয়ে ওই সরকার তা না করে নির্বাচিত সরকারের জন্য রেখে দেয়।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর গভীর সমুদ্রের দুটি ব্লকে (ডিএস-০৮-১০ ও ডিএস-০৮-১১) অনুসন্ধানের ব্যাপারে কনোকো ফিলিপসের কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়। তারা অন্তত তিন দফা আলোচনা করে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছিল। পিএসসি স্বাক্ষর হলে কনোকো অনুসন্ধান কাজে দুই বছরে প্রায় ৩০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের শীর্ষপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলেন, মিয়ানমার ও ভারতের আপত্তির বিষয় ফয়সালা করেই সমুদ্রবক্ষে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান শুরু করা হবে। সরকার বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট তৎপর রয়েছে। কাজেই এতে খুব বেশি সময় লাগবে বলে মনে হয় না।

স্বপ্ন ছিনতাই! রফিক অটোভ্যান থেকে উদ্ভাবক রফিককে বিতাড়নের চেষ্টা গ্রামীণ ফান্ডের

রিদ্র ঘরের, লেখাপড়া না-জানা ছেলে রফিকুল ইসলাম ছোটকাল থেকেই অত্যন্ত মেধাবী। যন্ত্রপাতি নিয়ে খুটখাট করা ছিল তাঁর শখ। আর পেটের তাগিদে চালাতেন রিকশাভ্যান। এই করতে করতে একদিন কিশোর বয়সেই তিনি শ্যালো পাম্প মেশিন দিয়ে রিকশাভ্যান থেকে বানিয়ে ফেলেন অটোভ্যান, যা দেখে সবাই অবাক।

একসময় রফিক এই অটোভ্যান বাণিজ্যিকভাবে বানিয়ে নিজের দিনবদলের পালা শুরু করেন। বগুড়ার শেরপুরে তাঁর গ্রামের বাড়ি থেকে ধীরে ধীরে এই অটোভ্যান ভটভটি, নসিমন, করিমন_বিভিন্ন নামে ছড়িয়ে পড়ে উত্তরবঙ্গের পথে পথে। পরে রফিক তাঁর উদ্ভাবিত এই অটোভ্যানকে ফোরস্ট্রোক ইঞ্জিন দিয়ে, আরো কিছু কারিগরি করে সরকার থেকে 'পরিবেশবান্ধব' ছাড়পত্র নিয়ে খেজুরতলায় নিজের বাড়িতে গড়ে তোলেন একটি কারখানা_'মেসার্স রফিক অটোভ্যান ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিজ'।
মেধাবী রফিকের এই সাফল্যগাথা ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। পত্রপত্রিকায় লেখা হয় তাঁকে নিয়ে। স্বপ্নরা ভিড় করে রফিকের মনে। একদিন এই স্বপ্নে রং লাগাতে চলে আসে
গ্রামীণ ব্যাংকের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান 'গ্রামীণ ফান্ড'। রফিককে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে রাজি করায় যৌথভাবে এগোনোর। রফিক-গ্রামীণ ফান্ড চুক্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা হয় 'রফিক অটোভ্যান ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড'। আর এর পর থেকেই শুরু হয় রফিকের উন্নতির বদলে দুর্গতি। রফিকের সব স্বপ্ন ছিনতাই হয়ে যায় গ্রামীণ ফান্ডের কৌশলী তৎপরতার ফাঁদে। স্বপ্নরঙিন রফিক এখন অসহায়, জর্জরিত, দিশেহারা। ভেবে পান না তিনি, কেমন করে, কোথা থেকে, কী হতে কী হয়ে গেল তাঁর সহজ-সরল জীবনে!
রফিকের সেই দিনগুলি : রফিকের বড় ভাইয়েরা ছিলেন দিনমজুর ও ঠেলাগাড়িচালক। রফিকও কখনো ঠেলাগাড়ি, কখনো রিকশাভ্যান চালাতেন। বড় ভাইয়েরা একসময় পুরনো শ্যালো পাম্প মেশিন কিনে তা আবার বিক্রি করার ব্যবসা শুরু করেন। কিশোর রফিকের ভ্যানেও এসব শ্যালো মেশিন তুলে দেওয়া হতো। রফিক এগুলো দেখতেন আর ভাবতেন, কেমন করে ভ্যান চালানোর পরিশ্রম কমানো যায়।
রফিক সাধনা চালাতে থাকেন। ১৯৮৬ সালের একদিন বানিয়ে ফেলেন সেই যন্ত্রচালিত ভ্যান, ছয় হর্স পাওয়ারের শ্যালো মেশিন যার ইঞ্জিন, একসময় যার নাম হয়ে যায় 'রফিক অটোভ্যান'। একের পর এক অটোভ্যান বিক্রি করে তিনি ২৬ শতাংশ জমি কিনে পাকা বাড়ি তৈরি করেন গ্রামে।
আসে গ্রামীণ ফান্ড : রফিকের সাফল্যের কাহিনী জেনে ঢাকা থেকে যান গ্রামীণ ফান্ড, ইসলামী ব্যাংকসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা। রফিককে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন তারা। রফিক ইতিমধ্যে সেরে ফেলেন গাড়ি তৈরির সব ধরনের আইনি বিষয়। অনেক ভেবেচিন্তে রফিক গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
কালের কণ্ঠকে রফিক বলেন, 'ড. ইউনূসকে আমি খুব শ্রদ্ধার চোখে দেখতাম, তাই তাঁর প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই কাজ করার সিদ্ধান্ত নিই। তারাও আমাকে নানা স্বপ্ন দেখায়। বিপুল আশায় বুক বেঁধে, চোখ-কান বুজে ঝাঁপিয়ে পড়ি কাজে। আমি লেখাপড়া জানি না, ইংরেজিতে লেখা চুক্তিপত্রের কিছুই আমি বুঝতাম না। তাই সরল বিশ্বাসে, ওরা যে কাগজ দিয়েছে, সই দিয়ে গেছি সবখানে।'
রফিক জানান, তিনি শুধু জানতেন এই কারখানা তাঁর নামে। এখানে তাঁর শেয়ার ৬০ শতাংশ আর গ্রামীণ ফান্ডের ৪০ শতাংশ। পরে তিনি প্রকৌশলী হাসান রেজাকে ২৪ শতাংশ শেয়ার দিয়ে তাঁর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন যে প্রকৌশলী এই অটোভ্যানের নকশার কারিগরি উন্নয়নে কাজ করবেন।
গ্রামীণ ফান্ডের সঙ্গে চুক্তির পর রফিক অটোভ্যানকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় প্রথমে ৫০টি, পরে আবার পাঁচ হাজার গাড়ি তৈরির অনুমতি দেয়। তবে এই গাড়ির অনুমোদন নেওয়া হয় 'গ্রামবাংলা অটোভ্যান' নামে। এ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহাম্মদ ইউনূস উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন।
চুক্তির পর থেকেই বিপদ : গ্রামীণ ফান্ডের সঙ্গে চুক্তির পরই রফিকের জীবনের চাকা অচল হতে থাকে। খেজুরতলার কারখানায় একসময় বছরে ৪৪০টি গাড়ি তৈরি হতো। আর চুক্তির এক বছরের মাথায়ই উৎপাদনের হার কমে যায়। এখন রফিকের অভিযোগ, অনেকটা ষড়যন্ত্র করে, তাঁর উদ্ভাবন ছিনতাই করতেই কারখানার কার্যক্রম স্তিমিত করা হয়। একই সঙ্গে তাঁকেও অনেকটা একঘরে করে রাখা হয়। কম্পানির বোর্ড সভায় তাঁকে ডাকা হয় না। তাঁর কোনো প্রস্তাবও মানা হয় না।
চুক্তিপত্রেই খাটো রফিক : গ্রামীণ ফান্ডের সঙ্গে রফিক চুক্তিতে আবদ্ধ হন ২০০২ সালের ৬ মার্চ। যৌথভাবে ব্যবসা করার জন্য অংশীদারি চুক্তি হয়। চুক্তিতে গ্রামীণ ফান্ডের পক্ষে কর্মকর্তা এ এ কোরেশী, রফিক অটোভ্যান ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিজের পক্ষে রফিকুল ইসলাম ও প্রকৌশলী হাসান রেজা স্বাক্ষর করেন। তিন চাকার পরিবেশবান্ধব অটোভ্যান প্রস্তুত এবং বাজারজাত একসঙ্গে পরিচালনার জন্য এই চুক্তি হয় ইংরেজিতে। অটোভ্যানের উদ্ভাবক রফিক একজন অশিক্ষিত ব্যক্তি। তাঁর সঙ্গে ইংরেজিতে চুক্তিপত্র সম্পাদন করাটাই শুভঙ্করের ফাঁকি। আইনজীবীদের মতে, চুক্তিপত্র যেকোনো ভাষায় হতে পারে, তবে অবশ্যই তা হতে হবে সহজবোধ্য। দেওয়ানি ও চুক্তি আইনের মামলায় অভিজ্ঞ আইনজীবী রাজীব কুমার চক্রবর্তী কালের কণ্ঠকে বলেন, চুক্তিপত্রের নিচে লেখা থাকে, 'আমরা চুক্তিপত্র পড়িয়া, বুঝিয়া, সজ্ঞানে-সুস্থ মস্তিষ্কে চুক্তিনামায় স্বাক্ষর করিলাম।' কাজেই চুক্তি অবশ্যই সহজবোধ্য হতে হবে।
গ্রামীণ ফান্ড রফিককে তাঁর ব্যবসা, কারখানা আরো বড় করতে সহযোগিতার কথা বলে চুক্তিতে রাজি করায়। কিন্তু ইংরেজিতে লেখা চুক্তিপত্রের প্রথম অনুচ্ছেদেই বলা হয়েছে, 'এই মুহূর্তে তিন চাকার অটোভ্যান উৎপাদনের সুবিধা বগুড়ার শেরপুরে রয়েছে বিধায় সেখানেই উৎপাদনকাজ চলবে। তবে ভবিষ্যতে তা যেকোনো সুবিধামতো স্থানে করা যাবে।'
রফিক বলেন, 'চুক্তিতে যে এ রকম শর্ত আছে, আমি বুঝিনি।' পরে রফিককে না জানিয়েই ঢাকার সাভারে প্রতিষ্ঠা করা হয় আরেকটি কারখানা, আর খেজুরতলারটি এখন তালাবদ্ধ।
চুক্তিপত্রের ৬ নম্বর অনুচ্ছেদে কম্পানির বোর্ড সদস্যের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে। রফিক কারখানার মূল মালিক হলেও বোর্ডে তাঁকে পরিচালক (উৎপাদন) রেখে তাঁর মাত্র দুজন প্রতিনিধি রাখা হয়। প্রকৌশলী হাসানের রাখা হয় একজন। আর গ্রামীণ ফান্ড চারজন পরিচালক রাখতে পারবে। কম্পানির চেয়ারম্যান থাকবেন গ্রামীণ ফান্ডের মনোনীত একজন, আর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হবেন বোর্ডের মনোনীত কেউ। পরে গ্রামীণ ফান্ডের ইচ্ছায়ই এমডি করা হয় হাসান রেজাকে। যাঁর মেধা ও শ্রমের কল্যাণে দেশে প্রথম পরিবেশবান্ধব অটোভ্যান তৈরি হয়, সেই রফিককে রাখা হয় শুধুই একজন পরিচালক করে।
আবার আগের চুক্তিপত্রের শর্ত ভঙ্গ করে গ্রামীণ ফান্ড ২০০৪ সালের ৬ এপ্রিল আরেকটি চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করায় রফিককে। এটিতে বলা হয়, রফিক তাঁর নিজ খরচে অটোভ্যানের বডি তৈরি করবে, তবে তা নিজের কারখানায় নয়, অন্য কোনো জায়গায়। গ্রহণযোগ্য বডির মূল্য রফিক অটোভ্যান ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড পরিশোধ করবে। এই চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকেই রফিক আর পরিচালক (উৎপাদন) থাকবেন না।
মূলত এই চুক্তির পরই রফিককে কম্পানি থেকে কাগজে-কলমে বের করে দেওয়া হয়। এমনকি রফিককে গাড়ির বডি তৈরির কোনো কার্যাদেশও দেওয়া হয়নি।
ঋণের জালে রফিক: রফিকের কারখানার মালামাল নিয়ে কম্পানিতে তাঁর শেয়ার ধরা হয়; কিন্তু তাঁর মেধার কোনো মূল্য ধরা হয়নি। রফিক গ্রামীণ ফান্ড থেকে যে ঋণ নিয়েছিলেন, এরও কোনো সুরাহা না করেই চুক্তি সম্পাদন করা হয়।
কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে জানা গেছে, গ্রামীণ ফান্ডের সঙ্গে চুক্তির আগে মেসার্স রফিক অটোভ্যান ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিজের নামে রফিকুল ইসলাম ছয় লাখ টাকা ঋণ নেন। পরে পাঁচ কিস্তিতে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা পরিশোধও করেন। গ্রামীণ ফান্ডের সঙ্গে যৌথ ব্যবসা শুরু করার পর তিনি ঋণ পরিশোধ করেননি। ভেবেছিলেন, বড় কারখানা হয়েছে, সঙ্গে যাঁরা আছেন, তাঁরাই ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করবেন; কিন্তু তা হয়নি। ঋণের বিপরীতে সুদ-আসলে সাত লাখ ৯ হাজার ৩৩৩ টাকা দাবি করে গ্রামীণ ফান্ড রফিকের কাছ থেকে একটি ব্যাংক চেক নেয়। ওই চেক ডিসঅনার করিয়ে রফিকের বিরুদ্ধে মামলা পর্যন্ত করে গ্রামীণ ফান্ড। মামলাটি এখন বিচারাধীন ঢাকার ষষ্ঠ যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদালতে। কাল রবিবার এ মামলার চূড়ান্ত শুনানি হওয়ার কথা। রফিকের আইনজীবী জানিয়েছেন, মামলায় রফিকের সাজাও হতে পারে।
রফিকের আইনজীবী ফয়সাল রেজা কালের কণ্ঠকে বলেন, যে প্রতিষ্ঠান রফিককে সহযোগিতা করতে তাঁর সঙ্গে অংশীদারি চুক্তিতে ব্যবসা শুরু করে, সেই প্রতিষ্ঠানই তাঁকে মামলায় জড়িয়ে দিয়েছে। তাঁকে সর্বস্বান্ত করে ছেড়েছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, 'যাঁকে প্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্ব নিয়েছিল গ্রামীণ ব্যাংকের মতো এত বড় একটি প্রতিষ্ঠান, তাঁকে কেন পথে বসতে হচ্ছে?'
চুক্তির কিছুই পাননি রফিক : গ্রামীণ ফান্ডের সঙ্গে রফিকের চুক্তির পর এ পর্যন্ত তাঁকে কোনো লভ্যাংশ দেওয়া হয়নি। এমনকি রফিককে মাসিক ৩০ হাজার টাকা বেতন দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি। রফিককে বাদ দিয়েই গ্রামীণ ফান্ড এ অটোভ্যান তৈরি করে দেশব্যাপী বাজারজাত করছে।
রফিকুল ইসলাম বলেন, 'বিষয়গুলো নিয়ে ড. ইউনূসকে লিখিত ও মৌখিকভাবে জানাই। কিন্তু তিনি আমার কোনো কথা না শুনেই বলেন, এসব নিয়ে আমি কিছু করতে পারব না। গ্রামীণ ফান্ডের এমডির সঙ্গে যোগাযোগের কথা বলেন তিনি। ড. ইউনূসের কাছে অভিযোগ করায় গ্রামীণ ফান্ডের লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে একাধিকবার লাঞ্ছিত করেন। তারপর থেকে ধীরে ধীরে কৌশলে আমাকে বিভিন্ন অপবাদ দিয়ে বিতাড়িত করেন।'
একটি চিঠি : কম্পানির কর্মকর্তা মামুন আলী খানের (এঙ্িিকউটিভ অ্যাকাউন্টস) একটি চিঠি কালের কণ্ঠের হাতে আছে। ওই চিঠিটি ২০০৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর কম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে লেখা হয়েছিল। চিঠিতে উল্লেখ আছে, রফিকের গাড়ি মেরামতের ৯০ হাজার ৩৪৭ টাকার ভাউচার নাকচ করে তাঁর ওই টাকা দেওয়া হয়নি। শেরপুরের কারখানা ভাড়া বাবদ ৯৩ হাজার টাকাও কম্পানির কাছে রফিক পাবেন। ২০০৪ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত রফিকের বেতনও তাদের কাছে পাওনা রয়েছে। ২০০৩ সালের বেতনও রফিককে দেওয়া হয়নি বলে ওই চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে। অবশ্য রফিককে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক দেনাও দেখানো হয়েছে। কারখানা সাভারে স্থানান্তরের পর গ্রামীণ ফান্ড রফিকের কাছে টাকা পাবে বলে দাবি করে আসে।
গোপনে কারখানা সাভারে: গ্রামীণ ফান্ডের একজন কর্মচারীর দেওয়া তথ্য মতে গত ২৮ ডিসেম্বর সরেজমিনে ঢাকার সাভার উপজেলার হেমায়েতপুরের ঋষিপাড়া এলাকায় গিয়ে কথা হয় ষাটোর্ধ্ব আলাউদ্দিন মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, 'গ্রামবাংলা অটোভ্যান নামের গাড়ি ২০০৪ সাল থেকে এ এলাকায় উৎপাদন করা হতো। তবে ২০০৭ সালে কারখানাটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।' আরো খোঁজ নিয়ে ওই দিনই দুপুরে সাভারের রাজাসন এলাকার ডেল্টার মোড়ে গিয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় যুবক মিজানুর রহমান বলেন, ভেতরেই অটোভ্যান তৈরির কারখানা আছে। মোড় থেকে পশ্চিম দিকে এগোতেই সরু একটি গলির মাথায় দেয়ালঘেরা কারখানা। ভেতরে টুংটাং শব্দ। বাইরে নেই কোনো সাইনবোর্ড কিংবা কম্পানির পরিচিতি। ভেতরে ঢুকতেই কারখানার স্টোর ইনচার্জ আনিসুর রহমান খসরু এগিয়ে এসে বলেন, 'এই জমি ও স্থাপনার মালিক আবু নাসের মো. শাহেদ। তাঁর কাছ থেকে প্রতি মাসে ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে কারখানা ভাড়া নিয়েছে রফিক অটোভ্যান ম্যানুফ্যাকচারিং কম্পানি।' 'যাঁর নামে কারখানা, সেই রফিক কি কখনো এখানে এসেছেন?' জবাবে খসরু বলেন, রফিক ছাড়া আর সবাই এসেছেন।
কারখানার ভেতরে উঁকি দিতেই চোখে পড়ে ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক-মিস্ত্রি অটোভ্যান তৈরিতে ব্যস্ত। সাতটি অটোভ্যান বানিয়ে পাশে রাখা হয়েছে। কারখানার ফোরম্যান নায়েব আলী বলেন, এখন মন্দা সময়। মাসে ১৫ থেকে ২০টি গাড়ি তৈরি হয়, তবে জানুয়ারির পর থেকে আরো বেশি হবে। তিনি বলেন, এসব অটোভ্যান মাগুরা, পাবনা, রাজবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকার ক্রেতারা এসে এখান থেকে কিনে নিয়ে যান। তবে টাকা লেনদেন হয় মিরপুরের গ্রামীণ ব্যাংক ভবনের প্রধান কার্যালয়ে।
বক্তব্যের জন্য গ্রামীণ ব্যাংক ভবনে : একই দিনই গ্রামীণ ব্যাংক ভবনের ১৩ তলায় অটোভ্যান কম্পানির কার্যালয়ে গিয়ে কথা হয় এমডি হাসান রেজার সঙ্গে। চুক্তির পর থেকে রফিকের সঙ্গে প্রতারণা এবং তাঁকে কৌশলে কম্পানি থেকে বের করে দেওয়ার প্রসঙ্গ তোলা হলে তিনি বলেন, 'রফিক একটা বাজে লোক। সে কম্পানির লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে।'
'চুক্তি অনুযায়ী রফিককে বেতন না দেওয়া আর গাড়ির বডি তৈরির দায়িত্ব দেওয়ার কথা থাকলেও কোনো অর্ডার দেননি কেন' জানতে চাইলে হাসান রেজা বলেন, 'সে যে গাড়ির বডি তৈরি করে, সেটা কয়েক মাসেই ভেঙে যায়, টেকসই হয় না। কম্পানির বদনাম তো আমরা করতে দিতে পারি না।' 'আগে রফিক অনেক গাড়ি বানিয়ে বিক্রি করেছেন, সেগুলো তো ভালোই চলেছে' বলা হলে হাসান রেজা বলেন, 'এখন যেটা বানাচ্ছি, সেটা ভটভটি, নসিমন নয়_এটা পরিবেশবান্ধব অটোভ্যান।' 'আপনাদের সঙ্গে চুক্তির আগেই তো রফিক পরিবেশ অধিদপ্তর, বিআরটিএ, বুয়েটসহ বিভিন্ন দপ্তর থেকে অনুমোদন এনেছিলেন।' এমডি এবার ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, 'রফিক একজন ভ্যানচালক, সে-ই সব কিছু করেনি, আমি তাকে ওই সময় সহযোগিতা করেছিলাম। রফিক কম্পানির টাকা মেরে গ্রামের বাড়িতে দোতলা বিল্ডিং দিয়েছে, অনেক জমিজমাও কিনেছে।' 'আপনাদের সঙ্গে চুক্তির আগেই তো রফিক বাড়ি করেছেন।' এমডি বলেন, 'ঋণের টাকায় বাড়ি করেছিল, পরে আমাদের টাকা দিয়ে সেই ঋণ শোধ করেছে।'
ফান্ডের পরিচালক ও উপমহাব্যবস্থাপক কাজী সুলতান আহমেদ বলেন, 'কারখানায় লাভ না হলে তো রফিককে বেতন দিতে পারি না।'
গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি ড. ইউনূসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয় না। তবে মহাব্যবস্থাপক (ইন্টারন্যাশনাল প্রোগ্রাম ডিপার্টমেন্ট) জান্নাত-ই কাওনাইন কালের কণ্ঠকে বলেন, '৩০ বছর ধরে ইউনূস স্যারের সঙ্গে কাজ করছি। তিনি কোনো মানুষের খারাপ চাননি। এখন ওনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে।' তিনি বলেন, 'এই রফিক আর করিমরা আগে কোথায় ছিলেন? এখন কেন এসব কথা বলা হচ্ছে?'
রফিকের আকুল আবেদন : কম্পানিতে রফিকের মনোনীত পরিচালক মোশারফ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, কম্পানির এমডি হাসান রেজা ও গ্রামীণ ফান্ডের লোকজন কৌশলে রফিকের সঙ্গে প্রতারণা করে প্রতিষ্ঠানটি হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।
রফিকের মনোনীত আরেক পরিচালক মুস্তাফিজুল করিম মানিকেরও একই কথা। তিনি বলেন, কম্পানির সব কাগজপত্র রফিকের নামে; কিন্তু একটি মাত্র কালো চুক্তি রফিকের সর্বনাশ করেছে।
রফিক বলেন, 'শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের প্রতিষ্ঠান আমার কারখানায় অংশীদার হয়ে আমার শান্তি কেড়ে নিয়েছে। তিনি অনেক ওপরের মানুষ। তাঁর কাছে আমার আকুল আবেদন, আমাকে মুক্তি দিন। আমার শান্তি ফিরিয়ে দিন।'