Saturday, January 15, 2011

শিশুদের অঙ্গহানির মাধ্যমে ভিক্ষাবৃত্তি চক্রের 'গডফাদার' গ্রেপ্তার

কোমলমতি শিশুদের অঙ্গহানির মাধ্যমে ভিক্ষাবৃত্তিতে নামানোর সঙ্গে জড়িতদের 'গডফাদার' ওমর ফারুককে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার একটি বিশেষ দল গতকাল শুক্রবার কেরানীগঞ্জের এক বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।

ফারুক কামরাঙ্গীরচর থানার একটি ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি। র‌্যাব জানায়, এ চক্রের সঙ্গে বিএনপির এক ইউপি চেয়ারম্যানের স্ত্রী ও পুলিশের কিছু সদস্যও জড়িত। র‌্যাব-১ কার্যালয়ে গতকাল বিকেলে সাংবাদিকদের সামনে ফারুককে হাজির করা হয়। এ সময় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ চক্রের সর্বশেষ শিকার শিশু নিয়ামুল ও তার দরিদ্র মা-বাবাও উপস্থিত ছিলেন। শিশুটি তার ওপর নির্যাতনের ভয়াবহ বিবরণ দেয়।
দরিদ্র রিকশাচালক উমেদ আলীর ছেলে শিশু নিয়ামুল জানায়, একদিন দুপুরের দিকে সে বাড়ির বাইরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল। সে সময় কোরবান, রমজান ও সাদ্দাম তাকে ডেকে নিয়ে কামরাঙ্গীরচর পাকাপুল রোডের বেড়িবাঁধের পাশে একটি পরিত্যক্ত ভবনে যায়। পরে ওই তিনজন নিয়ামুলের হাত ও পা জাপটে ধরে ব্লেড দিয়ে পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলে।
গ্রেপ্তার হওয়া ফারুক সাংবাদিকদের জানায়, সে কামরাঙ্গীরচর থানা আওয়ামী লীগের সাত নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান লিয়াকতের স্ত্রী ও তার দূরসম্পর্কের ফুফু নাজমার হাত ধরে সে এ ঘৃণ্য পেশায় সম্পৃক্ত হয়। নাজমা এ চক্রের প্রধান হোতা। তার নেতৃত্বে শুধু শিশুদের অঙ্গহানিই নয়, রাস্তা থেকে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে নারীদের উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে পতিতাবৃত্তিতে নামতে বাধ্য করা হয়। এ ছাড়া নাজমা সহযোগীদের দিয়ে কামরাঙ্গীরচরের বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে বিভিন্ন পথচারীর সর্বস্ব ছিনিয়ে নিয়ে হত্যা করে তাদের লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়।
ফারুক জানায়, নাজমাকে সহযোগিতা করছে তার ছেলে জনিসহ ওই এলাকার খোকন, ইউসুফ, জাহাঙ্গীর, সোহেল, কোরবান, সাদ্দাম ও রাসেল। কামরাঙ্গীরচর থানা পুলিশের সহযোগিতায় তারা গত বছর থেকে এ কাজ করছে। এসব অপকর্ম করে নাজমা এখন চারটি বাড়ির মালিক।
র‌্যাব সূত্র জানায়, এর আগে গ্রেপ্তার হওয়া কোরবান জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছিল, তাদের সন্ত্রাসীচক্রে ৮-৯ জন সদস্য রয়েছে। তাদের নেতা ওমর ফারুক। দলের সবাই তার কথামতো সব কিছু করে। কামরাঙ্গীরচরের আশ্রাফাবাদ নতুন গলিতে স্কুলের ডান পাশে রয়েছে ওমর ফারুকের ক্লাবঘর। সে দিনের বেলায় ঘুমায়, আর সন্ধ্যার পর ক্লাবে এসে এলাকার বিচার-সালিসের নামে চাঁদাবাজি করে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মোহাম্মদ সোহায়েল সাংবাদিকদের জানান, একটি বেসরকারি টেলিভিশনের অনুষ্ঠানের সূত্র ধরে তাঁরা এ চক্রের সন্ধান পান। বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এলিনা খান ও ব্ল্যাক ট্র–থ প্রডাকশনস সেন্টারের পরিচালক অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী ওই অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিলেন। তাঁদের অনুষ্ঠানে ওই চক্রের হোতারা নিজেদের কর্মকাণ্ড তুলে ধরে। এরপর তথ্য-প্রমাণসহ অনুষ্ঠানের আয়োজকরা বিষয়টি র‌্যাবকে জানান।
এ চক্রের শরীফুল ইসলাম কোরবানকে গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরের খালপাড় এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় মামলা হলে আদালত রুল জারি করেন। আদালতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে তলব করা হয়। নাজমাসহ ঘটনায় জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

No comments:

Post a Comment