Saturday, January 15, 2011

মিয়ানমারের আপত্তিতে কনোকো ফিলিপসের সঙ্গে চুক্তি হয়নি

দেশের সমুদ্রসীমায় অন্তত দুটি ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি কনোকো ফিলিপসের সঙ্গে পেট্রোবাংলার যে উৎপাদন অংশীদারি চুক্তি (পিএসসি) হওয়ার কথা ছিল, মিয়ানমারের আপত্তির কারণে সরকার তা স্থগিত রেখেছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, কনোকো ফিলিপসের সঙ্গে পিএসসি স্বাক্ষরের ব্যাপারে পেট্রোবাংলার আলোচনা যখন প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে, তখন মিয়ানমার সরকার তাদের আপত্তি জানিয়ে চিঠি পাঠায়। চিঠিটি মিয়ানমারের ঢাকার দূতাবাস পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পৌঁছে দেয়। মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টি সরকারের উচ্চপর্যায়ে অবহিত করা হলে পিএসসি স্বাক্ষর না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এ কারণে গত অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে কনোকোর সঙ্গে পেট্রোবাংলার আলোচনা হঠাৎ শেষ হয়ে যায়। এ ব্যাপারে দুই পক্ষ আর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। অথচ আলোচনা ভেঙে যাওয়ার কয়েক দিন আগে উভয় পক্ষ একটি খসড়া চুক্তি অনুস্বাক্ষর করেছিল, যাতে গভীর সমুদ্রের ১০ ও ১১ নম্বর ব্লকের যেটুকু এলাকা মিয়ানমার দাবি করছে, সেটুকু বাদ দিয়েই অনুসন্ধান চালানোর ব্যাপারে দুই পক্ষ একমত পোষণ করেছিল।
সরকারি-বেসরকারি সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সরকারি এই সিদ্ধান্তের ফলে দেশের সমুদ্রসীমায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কয়েক বছর পিছিয়ে গেল। কারণ, যেহেতু মিয়ানমারের আপত্তির কারণে চুক্তি স্বাক্ষর স্থগিত রাখা হয়েছে, সেহেতু যে বিরোধ ওই আপত্তির কারণ, তা নিরসন না হওয়া পর্যন্ত অনুসন্ধান কার্যক্রম আর শুরু হবে না। ওই বিরোধ নিষ্পত্তিতে সময় লাগবে। অথচ পেট্রোবাংলার সঙ্গে কনোকো ফিলিপসের আলোচনা এমন পর্যায়ে গিয়েছিল, চলতি শীত মৌসুমেই তাদের ভূকম্পন জরিপ শুরুর প্রস্তুতি ছিল।
সমুদ্রবক্ষে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বাংলাদেশ প্রথম উদ্যোগ নেয় ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়। তখন মডেল পিএসসি ২০০৮-এর অধীনে বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে প্রস্তাব আহ্বান করা হয়। বিশ্বের খ্যাতনামা আটটি কোম্পানি এতে অংশ নেয়। এর মধ্যে গভীর সমুদ্রের আটটি ব্লকে অনুসন্ধান কাজের প্রস্তাবে কনোকো ফিলিপস এবং অগভীর সমুদ্রের দুটি ব্লকের জন্য ব্রিটিশ কোম্পানি টাল্লো যোগ্য বিবেচিত হয়। ওই সময়েই এসব ব্লকে পিএসসি স্বাক্ষর হয়ে যেত। কিন্তু কোনো কোনো মহলের বিরোধিতাকে আমলে নিয়ে ওই সরকার তা না করে নির্বাচিত সরকারের জন্য রেখে দেয়।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর গভীর সমুদ্রের দুটি ব্লকে (ডিএস-০৮-১০ ও ডিএস-০৮-১১) অনুসন্ধানের ব্যাপারে কনোকো ফিলিপসের কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়। তারা অন্তত তিন দফা আলোচনা করে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছিল। পিএসসি স্বাক্ষর হলে কনোকো অনুসন্ধান কাজে দুই বছরে প্রায় ৩০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের শীর্ষপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলেন, মিয়ানমার ও ভারতের আপত্তির বিষয় ফয়সালা করেই সমুদ্রবক্ষে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান শুরু করা হবে। সরকার বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট তৎপর রয়েছে। কাজেই এতে খুব বেশি সময় লাগবে বলে মনে হয় না।

No comments:

Post a Comment