Saturday, January 15, 2011

আফগান নারীদের ক্ষমতায়নে ক্ষুদ্রঋণের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত

ক্ষুদ্রঋণের মধ্য দিয়ে আফগান নারীদের ক্ষমতায়নের প্রচেষ্টা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছে। অপ্রতুল নিরাপত্তা, দক্ষ লোকবলের অভাব, গ্রামাঞ্চলে পৌঁছানোর সমস্যা ও সুদের ব্যাপারে ধর্মীয় বিধি-নিষেধের কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ক্ষুদ্রঋণের প্রসার। ত্রিশ বছরের গৃহযুদ্ধে আফগানিস্তানের অবকাঠামোসহ অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে গেছে। যুদ্ধ রেখে গেছে ভয়াবহ দারিদ্র্য ও দুই-তৃতীয়াংশ নিরক্ষর নাগরিক।

হতাশাজনক এই পরিবেশে ২০০৩ সাল থেকে আফগানিস্তানে যাত্রা শুরু করে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম । আফগান সরকার গঠন করে জাতীয় ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি 'মাইক্রোফিন্যান্স ইনভেস্টমেন্ট সাপোর্ট ফ্যাসিলিটি ফর আফগানিস্তান' (মিসফা)। মিসফার সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করে ব্র্যাক আফগানিস্তান, ফিনকা আফগানিস্তান ও আগাখাঁন ডেভেলপমেন্ট নেটওয়াকের 'আফগানিস্তান রুরাল মাইক্রোক্রেডিট প্রোগ্রাম' (এআরএমপি)।

গত সাত বছরে এই ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির আওতায় দেড় লাখ ঋণগ্রহীতাকে ৮৩ কোটি ১০ লাখ ডলার ঋণ দেয়া হয় বলে জানায় মিসফা। জাহারা নামে একুশ বছরের এক তরুণী এই ঋণ গ্রহীতাদের একজন। সে ১০ বছর বয়স থেকে কার্পেট বোনার কাজ শুরু করে। কাজের জন্য সে স্কুলে যেতে পারেনি। ১৮ মাস আগে ব্র্যাক আফগানিস্তান থেকে ১১০০ ডলার ঋণ নিয়ে সে নিজের ব্যবসা শুরু করে। এরপর সে আরো দু'বার ৩৩০ ডলার করে একই প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেয়। সে জানায়, প্রথম ঋণ নেয়ার পর সে ছোট ছোট কার্পেট তৈরি করত। আর এখন সে বড় বড় কার্পেট তৈরি করছে। সে জানায়,'আগে আমি কার্পেট বুনতাম মালিকের জন্য আর এখন বুনি নিজের (ব্যবসার) জন্য'।

কাবুলে প্রতিবেশীর কাছ থেকে সে প্রথম ক্ষুদ্রঋণের কথা শোনে। মিসফা জানায়, আফগানিস্তানের ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাদের ৬০ শতাংশ নারী। ব্র্যাক আফগানিস্তানের প্রধান ফজলুল হকও জানান, তাদের ঋণ গ্রহীতাদের ৮০ শতাংশই নারী। কিন্তু আফগানিস্তানের স্বাধীন 'আফগানিস্তান রিসার্চ এন্ড ইভালু্যয়েশন ইউনিট' (এআরইউ) জানায়, নারীর সামাজিক ও পারিবারিক ক্ষমতায়নে এখনও অনেক বাধা রয়ে গেছে।

তালেবান শাসনের নয় বছর পরও আফগান নারীদের অধিকার সীমাবদ্ধ হয়ে আছে। তালেবান শাসনের সময় আফগান নারীরা কার্যত বোরখাবন্দি ছিল। কোন উপলক্ষে তাদের বাড়ির বাইরে আসা ছিল বিরল ঘটনা। এ মাসের প্রথম দিকে প্রকাশিত জাতিসংঘের এক রিপোর্টে জানা যায়, আফগান নারীরা এখনও বাল্যবিবাহ, 'সম্মানিক' হত্যার মত ঐতিহ্যগত রীতির শিকার। আর আইনও তাদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হচ্ছে।

ক্ষুদ্রঋণকে ধর্মীয় বিধি-নিষেধের মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাই কিছু ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান এই বিধি-নিষেধের মুখে কৌশল পরিবর্তন করে সুদকে সার্ভিস চার্জ বা প্রাতিষ্ঠানিক ফি হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছে। মিসফা ইসলাম ভিত্তিক ঋণ পদ্ধতি গড়ে তোলার জন্য কাজ করছে। আর কিছু ছোট ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান যেমন ফিনকা, ইতিমধ্যে ইসলামিক ঋণ পদ্ধতি চালু করেছে। ফিনকার ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা প্রায় নয় হাজার।

No comments:

Post a Comment