Saturday, March 03, 2012

ইনানীর আকাশে রাজা-রানি সাপ-কাঁকড়া

কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে পাথুরে সৈকত ইনানী।
এই সমুদ্রসৈকতের বিশাল আকাশজুড়ে গতকাল শুক্রবার ছিল বুনো অজগর, জলচর হাঙর, ডলফিন, জেলিফিশ, জলকন্যা, কাঁকড়ার ওড়াউড়ি।


এ ছাড়া সেই আকাশে ভেসে বেড়াতে দেখা যায় ডাঙাবাসী রাজা-রানিসহ আরও অনেককে। সাদা মেঘের আকাশে রংবেরঙের প্রাণিকুল যেন কিছুক্ষণের জন্য আলো ছড়াচ্ছিল। সৈকতে আসা বিপুলসংখ্যক পর্যটক যেন মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে সেই রাঙা আলোয়।
ইনানী সৈকতে অষ্টম বারের মতো ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন করে ঢাকার চারুশিল্পীদের সংগঠন ‘ছবির হাট’। জাতীয় সংগীত পরিবেশন শেষে গতকাল বেলা তিনটায় ঘুড়িয়ালরা নেমে পড়ে সৈকতে। প্রত্যেকের হাতে ছিল মাছ, সাপ, কাঁকড়া, প্রজাপতি, জাতীয় পতাকাসহ বিভিন্ন আকার-আকৃতির নানা রঙের আকর্ষণীয় ঘুড়ি। বালুচরে দাঁড়িয়ে তারা শুরু করে ঘুড়ি প্রতিযোগিতা। সন্ধ্যা পর্যন্ত আকাশে অব্যাহত থাকে অজগর, হাঙর, ডলফিন, লবস্টার, জেলিফিশ, মৎস্যকন্যা, কাঁকড়া, প্রজাপতিসহ উড়ন্ত মাছেদের দৌড়ঝাঁপ।
‘ছবির হাটের’ ২১ ‘ঘুড়িয়াল’ আর ৬০ জন ‘উড়াল’ ছাড়াও স্থানীয় বহু শিশু-কিশোর, পর্যটক ইচ্ছেমতো ঘুড়ি ওড়ানোর আনন্দে অংশ নেয়। বালুচরে দাঁড়িয়ে প্রজাপতি ঘুড়ি ওড়াচ্ছিল উখিয়ার জালিয়া পালং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র মনিরুল ইসলাম। বাবার হাত ধরে সে এই উৎসবে গত বছরও এসেছিল। তবে এ বছর সে নিজের হাতে ঘুড়ি উড়িয়েছে।
ছবির হাটের সদস্য গিয়াস আহমদ বলেন, উৎসবের আগে ইনানী সৈকতে পাঁচ দিনব্যাপী ঘুড়ি ওড়ানো প্রশিক্ষণ কর্মশালা সম্পন্ন হয়। তৈরি করা হয় দুই শতাধিক ঘুড়ি। এসব ঘুড়ি উৎসবের শেষ দিনে গতকাল সৈকতে ওড়ানো হয়। ‘ঘুড়ির সঙ্গে শিশু মনের স্বপ্ন উড়ুক’—এই হলো ঘুড়ি উৎসবের লক্ষ্য। আর তাই ঘুড়ি ওড়াতে বেশি উৎসাহিত করা হচ্ছে শিশুদের।
ছবির হাটের সদস্য ও উৎসবের সমন্বয়কারী কার্টুনিস্ট বিপুল শাহ্ বলেন, ‘ঘুড়ির ঐতিহ্য ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে দেশ থেকে। হারিয়ে যাচ্ছে শিশুদের মুক্ত মনে উড়ে বেড়ানোর স্বপ্নটাও। আমরা চাই, শিশু মনে স্বপ্ন বিকাশের পরিবেশ। এই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নই ঘুড়ি উৎসবের লক্ষ্য।’

লোকজ উৎসবে মাতল সৈকত

মারমা, চাকমা, খেয়াং, ত্রিপুরা, মণিপুরি, খাসিয়া, তঞ্চঙ্গ্যা, বম, ম্রো, পাংখোয়া, রাখাইন ও লুসাই সম্প্রদায়ের এক অর্পূব মিলনমেলা বসেছিল
গতকাল শুক্রবার কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে।


দেশের নৃ-তাত্তি্বক জনগোষ্ঠীর জীবনধারা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য উপস্থাপনা নিয়ে 'পার্বত্য লোকজ মেলা' ছিল এটি। এর আয়োজক বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন ও চ্যানেল আই।
এর আগে তিনবার 'আদিবাসী মেলা' নামে এ আয়োজন হলেও এবারই প্রথমবারের মতো 'পার্বত্য লোকজ মেলা' নামে এ উৎসব হলো। দুপুর ২টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে বিকেল ৪টায় বেলুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত সমুদ্রসৈকতের লাবণী পয়েন্টে এই মেলা চলে।
উদ্বোধনী বক্তব্যে মন্ত্রী ফারুক খান বলেন, 'পর্যটন শিল্পের বিকাশে পার্বত্য লোকজ মেলা বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। আমাদের দেশে বিচিত্র জাতিগোষ্ঠীর বাস। এদের কিছু অংশ নৃ-তাত্তি্বক জনগোষ্ঠী। এই জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতিকে পরিচয় করিয়ে দিতে এ উদ্যোগ বিশেষ ভূমিকা রাখবে।' বর্তমান সরকারকে পর্যটনবান্ধব উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সরকারই উপহার দিয়েছে পর্যটন আইন ২০১০, পর্যটন নীতিমালা ২০১০। এ ছাড়া কক্সবাজারের উন্নয়নে ৮০০ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) খসড়া আইন মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের করা হচ্ছে। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত এখন আর কেবল কক্সবাজারবাসী কিংবা বাংলাদেশের সম্পদ নয়। কক্সবাজার এখন বিশ্ববাসীর অনন্য সম্পদ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান হেমায়েত উদ্দিন তালুকদার, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জয়নুল বারী, চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর ও পরিচালক (বার্তা) শাইখ সিরাজ। কিউট-চ্যানেল আই পার্বত্য লোকজ মেলা প্রকল্পের পরিচালক আবদুর রহমান জানান, ১২টি নৃ-তাত্তি্বক জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা তাঁদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য মেলা মঞ্চে তুলে ধরেছেন। তিনি জানান, বাংলাদেশের 'ক্ষুদ্র নৃ-তাত্তি্বক গোষ্ঠীর' সংস্কৃতিকে আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরার লক্ষ্যে এ মেলায় ৩৫টি স্টল অংশ নেয়। স্টলগুলোতে তাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও শৌর্যবীর্যের বহিঃপ্রকাশ হবে এমন পণ্য উপস্থাপন করা হয়। ক্ষুদ্র নৃ-তাত্তি্বক গোষ্ঠীর প্রাণবন্ত অংশগ্রহণে অপু মাহফুজ ও ফারজানা ব্রাউনিয়া মেলা মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন।

শাহপরীর দ্বীপ ও ইনানিকে বিশেষ জোন করা হবেঃ পর্যটন মন্ত্রী

বেসরকারি বিমান পরিবহণ ও পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খান বলেছেন,
“বিদেশী পর্যটকদের সুবিধার্থে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ও ইনানি সৈকতকে বিশেষ জোন করা হবে।


এছাড়া কক্সবাজারে প্রতি ক্ষেত্রে পরিকল্পিত উন্নয়ন করা হবে।”

শুক্রবার বিকাল চারটায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবনী পয়েন্টে ‘পার্বত্য লোকজ মেলা’র উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন ও বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল আই যৌথভাবে চতুর্থ বারের মতো এই মেলার আয়োজন করেছে।

ফারুক খান আরো বলেন, “সরকার পর্যটন আইন ও পর্যটন নীতিমালা-২০১০ উপহার দিয়েছে। সরকার কক্সবাজারের উন্নয়নে ৮০০ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ২৭ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) খসড়া আইন মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে। স্থানীয় বিমানবন্দরকেও আন্তর্জাতিক মানের করা হচ্ছে।”

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান হেমায়েত উদ্দিন তালুকদার, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জয়নুল বারী, চ্যানেল আই’র পরিচালনা পরিষদের সদস্য আব্দুল গফুর বাবু, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর ও পরিচালক (বার্তা) শাইখ সিরাজ।

দেশের নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর জীবনধারা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরতে এ মেলায় আয়োজন করা হয়েছে। মেলায় দেশের ১৯টি নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠী নিজ নিজ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরে নাচ-গান পরিবেশন করেছে। অনুষ্ঠানে দেশের জনপ্রিয় শিল্পীরা গান পরিবেশন করে। অনুষ্ঠানটি চ্যানেল আই সরাসরি সম্প্রচার করছে।

টেকনাফ জইল্যার দ্বীপ প্রভাবশালীদের চিংড়ি প্রকল্প

টেকনাফের জইল্যার দ্বীপ এখন প্রভাবশালীদের চিংড়ি প্রকল্প। দ্বীপটির চারপাশে নাফ নদী ও বাইন কেওড়া গাছে ভরপুর। দ্বীপটি যেন জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের মডেল। দেশ-বিদেশি ভ্রমণকারীরা ছোট ডিঙি নিয়ে নদী পার হয়ে দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে যেত। সেখানে যেতে হলে অনুমতি প্রয়োজন।


একসময় ওখানে সারি সারি কেওড়া গাছ ছিল। গাছে গাছে বানর, নানান পাখির কলকাকলি, রাতে শিয়ালের ডাক এখন আর শোনা যায় না। সমাজের প্রভাবশালীরা বাগান উজাড় করে চিংড়ি চাষ করছেন। দ্বীপে নানা প্রজাতির মাছ কাঁকড়া, সাপ ও হরেক প্রজাতির রাক্ষসী মাছের উপযুক্ত স্থান ছিল। টেকনাফ উপকূলীয় বন কর্মর্কতা সিরাজুল ইসলাম জানান, দ্বীপে প্রচুর বাইন, কেওড়া বাগান ছিল যা দখলদাররা কেটে ফেলেন।