Friday, May 04, 2012

কুতুবদিয়া আদালতে পাঁচ মাস ধরে হাকিম নেই

কক্সবাজারের সাগরদ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া বিচারিক আদালতে প্রায় পাঁচ মাস ধরে হাকিম নেই। ফলে আদালতে বিচারাধীন মামলার কয়েক হাজার বিচারপ্রার্থীকে প্রতিদিন সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ২৫ কিলোমিটার দূরে চকরিয়া অথবা ৭০ কিলোমিটার দূরে কক্সবাজার আদালতে যাতায়াত করতে হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকটি মামলার বিচারপ্রার্থীরা জানান, এই আদালতে সাড়ে চার মাসের বেশি সময়েও একজন হাকিম দেওয়া হয়নি। কিছুদিন পর শুরু হচ্ছে বর্ষাকাল, বঙ্গোপসাগর উত্তাল হয়ে পড়বে। তখন সাগর পাড়ি দিয়ে চকরিয়া অথবা কক্সবাজার আদালতে যাতায়াত করা কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ, এ সময় সমুদ্রপথে ট্রলার চলাচল বন্ধ থাকে। দু-একটি ট্রলার চলাচল করলেও চরম ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে। তাই বর্ষার আগেই এই আদালতে অস্থায়ী ভিত্তিতে একজন হাকিম নিয়োগ দেওয়া খুবই জরুরি।
কুতুবদিয়া আদালতের আইনজীবী আইয়ুব হোছাইন জানান, ২০১১ সালের ২০ ডিসেম্বর কুতুবদিয়া আদালতের বিচারিক হাকিম তেহমিন ইফতেখার উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য অস্ট্রেলিয়া গেছেন। এরপর প্রায় পাঁচ মাস হতে চলেছে, কিন্তু এই পদে এখন পর্যন্ত কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বর্তমানে এই আদালতের অতিরিক্ত হাকিম হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন চকরিয়া আদালতের বিচারিক হাকিম।
আইনজীবী শফিউল আলম জানান, কুতুবদিয়া বিচারিক হাকিমের আদালতে বর্তমানে ৮৫৬টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এসব মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রায় অর্ধ লাখ মানুষ। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে বিচারক না থাকায় এসব মানুষ চরমভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে। এখন প্রতিজন বিচারপ্রার্থীকে এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা খরচ করে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে কুতুবদিয়া থেকে চকরিয়ায় হাজিরা দিতে হচ্ছে। আবার অনেক সময় চকরিয়া আদালতের হাকিম ছুটিতে বা সরকারি অন্য কাজে ব্যস্ত থাকলে যেতে হয় ৭০ কিলোমিটার দূরে কক্সবাজারের আদালতে।
কুতুবদিয়ার লেমশিখালীর গৃহবধূ ও একটি নারী নির্যাতন মামলার বাদী জাহান আরা বেগম জানান, আদালতের হাকিম না থাকায় দুই শিশুসন্তান নিয়ে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে চকরিয়া আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে। এতে অতিরিক্ত খরচের জোগান দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুতুবদিয়া থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, অপরাধ দমন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে এবং বিভিন্ন মামলার পলাতক আসামি ধরা পড়লে তাঁদের চরম ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে চকরিয়ায় যেতে হয়। বর্ষার সময় যখন সাগর উত্তাল হবে, অথবা ঝড় দুর্যোগের কবলে যখন ট্রলার চলাচল বন্ধ থাকে, তখন চকরিয়া আদালতে অপরাধীদের যাতায়াত কঠিন হয়ে পড়বে। আবার বন্ধের দিন কোনো অপরাধী ধরা পড়লে তাদের নির্দিষ্ট সময়ে আদালতে হাজির করা দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে।