Thursday, May 01, 2014

পশ্চিমবঙ্গে তৃতীয় দফায় ভোট- ব্যাপক বুথ দখল ও সহিংসতা by রজত রায় from কলকাতা @প্রথম আলো

ব্যাপকভাবে বুথ দখল ও হিংসাত্মক ঘটনার অভিযোগের মধ্যে গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত হলো পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা নির্বাচনের তৃতীয় পর্বের ভোট। নির্বাচন কমিশনের আশ্বাস ছিল, বীরভূম, হুগলি ইত্যাদি জেলার উত্তেজনাপ্রবণ এলাকাগুলোতে বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে, যাতে ভোটাররা নির্ভয়ে ভোট দিতে পারেন। কিন্তু বেলা ১১টা থেকেই বিভিন্ন স্থান থেকে বুথ দখলের অভিযোগ উঠতে থাকে।

পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান, বীরভূম, হুগলি ও হাওড়ার মোট নয়টি লোকসভা আসনে ভোট গ্রহণ হয় গতকাল। বিকেল পাঁচটা নাগাদ নির্বাচন কমিশনের সূত্রে পাওয়া হিসাবে জানা যায়, উত্তরবঙ্গের মতোই দক্ষিণবঙ্গেও ভোটের হার বিপুল। ভোট গ্রহণ পর্ব শেষ হওয়ার এক ঘণ্টা আগেই বিকেল পাঁচটার মধ্যে বেশির ভাগ জায়গায় ৮০ শতাংশের বেশি ভোট পড়ে। প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে ভোটারদের প্রায় সব জায়গাতেই অনেকক্ষণ বুথের সামনে লাইনে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। কয়েক ঘণ্টা ভোট চলার পরই বীরভূম জেলার বোলপুর ও বীরভূম কেন্দ্র, হুগলির আরামবাগ এবং বর্ধমান জেলার বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্র থেকে বুথ দখলের অভিযোগ আসতে থাকে। অভিযোগের তির বেশির ভাগটাই রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে।

গতকাল যে চার জেলায় ভোট গ্রহণ করা হয়েছে, সেখানে দক্ষিণবঙ্গের অন্য সব জেলার মতোই তৃণমূল কংগ্রেসের আধিপত্য নিয়ে রাজনৈতিক মহলে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এবার ভোট পর্বের মধ্যেই সারদা চিট ফান্ড কেলেঙ্কারিতে তৃণমূল নেতাদের জড়িত থাকার কথা প্রকাশ্যে আসতে শুরু করায় দলের সর্বোচ্চ স্তরের নেতারাও বেশ অস্বস্তিতে পড়েন। এর সঙ্গে বিজেপির বেড়ে চলা উপস্থিতি এবং নরেন্দ্র মোদি পশ্চিমবঙ্গে প্রচারে এসে তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সারদা কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ তোলায় তাঁদের সেই অস্বস্তি আরও বেড়ে যায়। এ অবস্থায় তৃণমূল কংগ্রেস কোনো ঝুঁকি না নিয়ে বুধবার ব্যাপক হারে বুথ দখল করে তাদের প্রার্থীদের জয় নিশ্চিত করতে চাইবে, এতে অবাক হওয়ার কিছু দেখছে না রাজনৈতিক মহল।

 ভোটকেন্দ্র দখল করে ভোটে কারচুপি করার পদ্ধতিটা মোটামুটি সব জেলাতেই এক। প্রথমেই বিরোধী দলগুলোর এজেন্টদের বুথ থেকে বের করে দেওয়া হয়। কেউ বেরোতে না চাইলে মারধর করা হয়। এরপর ভোটারদের বুথের পথে পা ফেলতে নিষেধ করা হয় এবং নিষেধাজ্ঞা না মানলে তার পরিণতি কী হবে, সেটাও ভালো করে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। ভোটকেন্দ্রে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী থাকলে এসব এতটা খোলাখুলি করা হয় না। আর যেসব জায়গায় বিরোধী এজেন্টদের তাড়িয়ে দেওয়ার পরেও ভোটারদের ঢুকতে দেওয়া হয়, সেখানে দলীয় নেতারা বুথে উপস্থিত থেকে নজর রাখেন ভোটদাতারা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) তাঁদের নির্দেশিত দলীয় প্রতীকের পাশের বোতামটিই টিপছেন কি না।

বর্ধমানের কেতুগ্রামে গ্রামবাসী বুথ দখলে তৃণমূল কর্মীদের বাধা দিলে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে গ্রামছাড়া করে বলে অভিযোগ এসেছে। হাওড়া জেলার আমতার নামের একটি গ্রামের স্কুলে দুটি বুথে মোট ৬৮০ জন ভোটার। সেখানে সকাল সাতটায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে নয়টার মধ্যেই সবার ভোট দেওয়া হয়ে যায় বলে ভোট পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন।

কেন্দ্রীয় বাহিনীকে বহু জায়গাতেই টহল দিতে দেখা যায়নি। বাম নেতারা গতকাল বিকেলে সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরির নেতৃত্বে দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের সদর দপ্তরে গিয়ে বীরভূমসহ বেশ কয়েকটি স্থানে বুথ দখল, সন্ত্রাস ও কমিশনের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ এনেছেন। তাঁরা অনেক কেন্দ্রে আবার ভোট গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

এদিকে নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক সুধীর কুমার রাকেশ বিকেলে স্বীকার করেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী যতটা সম্ভব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা সবই ভোটকেন্দ্রের মধ্যে, ভোটকেন্দ্রের বাইরে বেশি কিছু করা যায়নি। তবে নির্বাচন কমিশন রাজ্যে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোটের ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ, তা মানতে চাননি রাকেশ।

বুথ দখলের অভিযোগে সোচ্চার হয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেসের নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্যসহ অনেকেই। তাঁদের ক্ষোভ, নির্বাচন কমিশনের উদাসীনতার সুযোগে এগুলো হয়েছে। বিজেপির রাজ্য নেতা শমীক ভট্টাচার্য ও রীতেশ তেওয়ারি মনে করেন, সারদা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে থাকার খবর প্রকাশ্যে আসায় ঘাবড়ে গিয়ে তৃণমূল হিংসার পথ বেছে নিল। তবে তা সত্ত্বেও বিজেপি নেতাদের আশা, এতে ফলের বিশেষ তারতম্য হবে না। অন্যদিকে তৃণমূল নেতারা ভোটের গতিপ্রকৃতি দেখে স্পষ্টতই খুশি। তবে তাঁরা মমতা কিছু বলার আগে এখনই প্রতিক্রিয়া জানাতে চাইছেন না।

মুসলিমদের মোদিকে ভয় পাওয়ার কারণ আছে:- সাক্ষাৎকারে অমর্ত্য সেন @প্রথম আলো

ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতা ও গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় গেলে সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠীর ভীত হওয়ার কারণ আছে বলে মন্তব্য করেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিতে ভারতে পৌঁছে গত মঙ্গলবার ইংরেজি দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।

২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গায় মোদির সম্পৃক্ততার যে অভিযোগ রয়েছে, সেই প্রসঙ্গ তুলে অমর্ত্য সেন বলেন, 'ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে একটি বিষয় রয়েছে। এটা সত্যি যে একজন বিচারক মোদিকে নির্দোষ বলেছেন, কিন্তু মোদির বিরুদ্ধে এখনো অনেক অভিযোগেরই নিষ্পত্তি হয়নি। তাই মোদি ক্ষমতায় গেলে সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠী যদি ভীত হয়, তাহলে এই ভীত হওয়ার পেছনে অনেক যৌক্তিক কারণ রয়েছে।'

অধ্যাপক অমর্ত্য বলেন, যদিও 'ভালো অবস্থানে আছেন'—এমন অনেক মুসলিম হয়তো এটা মনে করেন না। এমন কেউ হয়তো মোদির সঙ্গে যোগও দেবেন। গত বছরের জুলাইয়ে একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অমর্ত্য সেন বলেছিলেন, 'একজন ভারতীয় নাগরিক হিসেবে আমি কখনোই চাই না, মোদি আমার প্রধানমন্ত্রী হোন।'

'মোদি সমাজসেবায় আত্মোৎসর্গ করছেন': ভারতের বিশিষ্ট অল্প কয়েকজন অর্থনীতিবিদদের মধ্যে জগদীশ ভগবতী একজন বলে বিবেচনা করা হয়। সেই জগদীশ গুজরাটে মোদির উন্নয়ন মডেলের অন্যতম সমর্থক। তিনি বলেন, মোদির ভিশন হলো 'তিনি আমাদের কোথায় নিয়ে যাবেন'। তাঁর শাসনের রীতি হলো, তিনি সমাজসেবায় আত্মোৎসর্গ করছেন।

উন্নয়নের গুজরাট মডেলের প্রশংসা করে জগদীশ বলেন, গুজরাট মডেল শুধু সমৃদ্ধির মডেল নয়, এটা সম্পদের উৎকৃষ্ট ব্যবহার নিশ্চিত করার মডেল, সামাজিক ব্যয় বৃদ্ধি করার মডেল। এই মডেলের ফলে গুজরাটে ব্যক্তিগত সামাজিক দায়বদ্ধতা কাজ করছে। টাইমস অব ইন্ডিয়া।

আ. লীগও অপহরণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায়

গুম, অপহরণ, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায় আওয়ামী লীগ। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের এই অবস্থান তুলে ধরেন প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ। দেশবাসীর উদ্দেশে আওয়ামী লীগের পক্ষে হাছান মাহমুদ বলেন, 'অপরাধীদের যেখানেই পাবেন, তাঁদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেবেন। তাঁদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নেবে।' আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক দাবি করেন, অপহরণ, হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্যের সঙ্গে যে-ই জড়িত হোক, যে দলেরই হোক—তাদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে আওয়ামী লীগ ও সরকার বদ্ধপরিকর।

অপহরণ ঠেকাতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন হাছান মাহমুদ। তিনি জানান, ১০ মে থেকে মাইক্রোবাসে কালো গ্লাস ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শহরে সিসি (ক্লোজ সার্কিট) ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই অপরাধীদের পার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

গুম ও অপহরণে সরকারি দল জড়িত বলে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার করা অভিযোগের জবাব দেন হাছান মাহমুদ। তিনি দাবি করেন, 'নিজেদের অপরাধ অন্যের ওপর চাপানো খালেদা জিয়ার পুরোনো অভ্যাস। প্রকৃতপক্ষে বেগম খালেদা জিয়া হচ্ছেন সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের নেত্রী। হত্যা, গুমের সঙ্গে অতীতের মতো বর্তমানেও বিএনপির নেতৃবৃন্দ জড়িত।'

বিভিন্ন তথ্য দিয়ে হাছান মাহমুদ দাবি করেন, জিয়ার আমলে দেশে প্রথম গুমের ঘটনার শুরু হয়। ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ বাবুকে জিয়ার নির্দেশে গুম করা হয়। একইভাবে জিয়ার আমলে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাদের রাতের অন্ধকারে তুলে নেওয়া হতো। তাঁরা আর ফিরত না। পরেও একই ধারা চলে আসে। খালেদা জিয়াও গুম-অপহরণের নির্দেশদাতা।' ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ২১ হাজার নেতা-কর্মী হত্যা ও গুমের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেন হাছান মাহমুদ।

দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, যাঁরা দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্র ধ্বংস করতে চায়, অতীতের মতো হত্যা, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করতে চায়, তাঁদের ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়ান। শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হন। হত্যা, সন্ত্রাস, গুম, অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আপনাদের পাশে আছে।

গুম করতে এলে আটকে রাখবেন:- শ্রমিক দলের গণজমায়েতে খালেদা জিয়া

সারা দেশে 'সাংগঠনিক রেড অ্যালার্ট' জারি করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ, সতর্ক ও প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, 'যারা গুম করতে আসবে, ঘেরাও করে আটকে রাখবেন, র‌্যাব হোক, পুলিশ হোক, তাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেবেন।' আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মে দিবসের সমাবেশে খালেদা জিয়া এই সাংগঠনিক সতর্কাবস্থা জারির ঘোষণা দেন। শ্রমিক দল মে দিবস উপলক্ষে শ্রমিক গণজমায়েতের আয়োজন করে।

সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারা, খুন-গুমে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া বলেন, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তিনি রাজপথে নামবেন। নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'সারা দেশে সাংগঠনিক রেড অ্যালার্ট জারি করলাম। সময়মতো ডাক পড়লে হাজির হবেন।' নারায়ণগঞ্জে সাতজন গুম ও পরে খুনের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর দায় চাপিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, 'হাসিনাকে এর জবাব দিতে হবে। কারণ হাসিনা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাকে দায় নিতে হবে।'

সবখানে শুধু লাশ আর লাশ
খালেদা জিয়া বলেন, প্রতিদিন মানুষ গুম হচ্ছে। লাশ ভেসে উঠছে। নদীতে লাশ, বনে-জঙ্গলে লাশ। সবখানে শুধু লাশ আর লাশ। ড্রাকুলা সরকার রক্ত চুষে চুষে শেষ করে দেবে।

সাদা পোশাকে এরা কারা?
সাম্প্রতিক সময়ের গুম-খুনের সমালোচনা করে বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, এখন দেশের যে অবস্থা, স্বাধীনতার পরপর একই অবস্থা ছিল। রক্ষীবাহিনী, লাল-নীল বাহিনী করে হত্যা-গুম করা হয়েছিল। খালেদা জিয়া প্রশ্ন রাখেন, এখন সাদা পোশাকে কারা এরা? বাড়ি থেকে যুবকদের ধরে নিয়ে যায়।

রাস্তাও পাহারা দিতে পারে না
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, তাঁরা বেডরুম পাহারা দিতে পারেন না। তাঁর ওই বক্তব্য সামনে এনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, 'হাসিনা বলেছিল বেডরুম পাহারা দিতে পারবেন না। এখন তো রাস্তায়ও পাহারা দিতে পারেন না। রাস্তা থেকে মানুষ গুম হচ্ছে।' বিএনপির নেতা ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম গুমের ঘটনা এ সময় তিনি তুলে ধরেন।

'পথে নামব'
খুন-গুমের জন্য সরকারকে দায়ী করে খালেদা জিয়া বলেন, এভাবে চলতে দেওয়া যায় না। এসবের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'জনগণের নিরাপত্তার জন্য আমি পথে নামব।' তিনি সমবেত নেতা-কর্মীদের কাছে জানতে চান, 'আপনারা নামবেন?' এ সময় কর্মীরা তুমুল স্লোগানে তাঁর কথায় সায় দেন। তখন খালেদা জিয়া বলেন, 'আমি নামতে গেলে আওয়ামী লীগ আমার বাড়ির সামনে পুলিশ, ট্রাক দিয়ে আটকে দেয়। তার পরও মানুষের জন্য, এ খুনিদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য নামব ইনশাআল্লাহ।'

জঙ্গিদের সঙ্গে আ.লীগের সম্পর্ক
যুবলীগের নেতার নির্দেশে জঙ্গি ছিনতাইয়ের সংবাদ উদ্ধৃত করে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আবদুর রহমান কার দুলাভাই ছিল? মির্জা আজমের। মির্জা আজম কি বিএনপি করে? আওয়ামী লীগ করে। তাহলে কাদের সঙ্গে জঙ্গি?'

রানা প্লাজায় সাহায্য পায়নি
রানা প্লাজায় হতাহতরা যথাযথ সহায়তা পাননি, এমন অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, রানা প্লাজায় হতাহতদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ অনেক টাকা উঠিয়েছিল। বিদেশ থেকেও অনেক সাহায্য এসেছে। কিন্তু শ্রমিকেরা এখনো যথাযথ সাহায্য পায়নি।

জিন-ভূতের ভোটে ক্ষমতায়
গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে মানুষ ভোটকেন্দ্রে যায়নি, দাবি করে বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, জিন-ভূতের ভোটে এই সরকার এখন ক্ষমতায়।
সমাবেশের একেবারে শেষ পর্যায়ে সমাবেশস্থলে দুপক্ষের মধ্যে বিশৃঙ্খলা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় খালেদা জিয়া বক্তব্য দিচ্ছিলেন। তাত্ক্ষণিক তিনি বলেন, 'সমাবেশে বেইমান ঢুকেছে, গন্ডগোল করার চেষ্টা করছে। দালালরা আসবে, তাদের ধরে চ্যাপ্টা করে ফেলবেন।'
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, শ্রমিক দলের সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম খান, আবদুল্লাহ আল নোমান প্রমুখ বক্তব্য দেন।

জানি না এরপর কে গুম হবে:- গুম-খুন প্রসঙ্গে এরশাদ

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, সবার মনে এখন শুধু আশঙ্কা, ভয়। কারও মনে কোনো শান্তি নেই। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাকরাইলে আয়োজিত এক শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এরশাদ এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর এই বিশেষ দূত বলেন, 'আমি পত্রিকা পড়ে জেনেছি গত চার মাসে ৫৩ জন গুম হয়েছে। কাল সাতটি লাশ উদ্ধার হয়েছে। সবার মনে আশঙ্কা, ভয়। কারও মনে শান্তি নেই। জানি না এরপর কে গুম হবে। কার লাশ পাওয়া যাবে, কারটা পাওয়া যাবে না। সরকারের এক মন্ত্রী বলেন, গুম-খুনের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আমি তাঁকে প্রশ্ন করতে চাই, আপনাদের সীমা কোথায়, সীমাহীন?'

জাপা চেয়ারম্যান তাঁর পাঁচ মিনিটের বক্তৃতায় শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি সব কলকারখানা চালুর অনুরোধ জানান। এ ছাড়া খাদ্যে ভেজাল রোধে কঠোর আইন করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। সমাবেশে উপস্থিত কর্মী সমর্থকদের উদ্দেশে এরশাদ বলেন, 'আমার মন খারাপ। অনেক কিছু বলার ছিল বলতে পারছি না। তোমরা আমার মনের কথা বুঝে নিও। রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছি। দলকে এগিয়ে নেব, সংগঠিত করব। জাতীয় পার্টি আবার সরকার গঠন করবে।' জাতীয় শ্রমিক পার্টির সভাপতি শাহ আলম তালুকদারের সভাপতিত্বে সমাবেশে জাপার মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু ছাড়াও জিএম কাদের বক্তব্য দেন।

ব্রুনাইয়ে কঠোর শরিয়া আইন চালু

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার তেলসমৃদ্ধ দেশ ব্রুনাইয়ে আজ বৃহস্পতিবার থেকে কঠোর শরিয়া আইনের প্রথম পর্যায় কার্যকর হয়েছে। কয়েক ধাপে পুরো আইনটি কার্যকর হবে। এই আইনে বিভিন্ন অপরাধের জন্য অঙ্গকর্তন ও পাথর ছুড়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার বিধান রয়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপির প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, ১ মে থেকে নতুন শরিয়া আইনের প্রথম ধাপ কার্যকরের ঘোষণা দেন ব্রুনাইয়ের সুলতান হাসান আল বলকিয়া। গতকাল বুধবার এ ঘোষণা দেন তিনি। নতুন শরিয়া আইন নিয়ে দেশে-বিদেশে সমালোচনা শুরু হয়েছে।

ওই শরিয়া আইনের প্রথম ধাপ আজ কার্যকর হয়েছে। এই ধাপে আক্রমণাত্মক আচরণ, শুক্রবারের নামাজে অংশ নিতে ব্যর্থতা, অবৈধ সন্তান ধারণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। শরিয়া আইনের দ্বিতীয় ধাপে চুরি, ডাকাতির মতো অপরাধে শাস্তির বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এসব অপরাধের অঙ্গকর্তন ও কশাঘাতের মতো শাস্তির বিধান রয়েছে। চলতি বছরের শেষের দিকে দ্বিতীয় ধাপের আইন কার্যকর হবে। আগামী বছর কার্যকর হবে সমকামিতা ও বিবাহবহির্ভূত যৌন-সম্পর্কের ক্ষেত্রে দণ্ডের বিধান। এসব অপরাধের জন্য পাথর ছুড়ে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

চোরাগোপ্তা হামলার জন্য বিএনপিকে দায়ি করলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপির এক নেতা বলেছে চোরাগোপ্তা আন্দোলন করবে। চোরাগোপ্তা আন্দোলন করে নাকি সরকারের পতন ঘটাবে। যাদের চুরি করার অভ্যাস, চোর চোর মন, যারা হত্যা ও চোরাগোপ্তার হামলার রাজনীতিতে বিশ্বাস তারাই এসব করে। এখন দেশে যে চোরাগোপ্তা হত্যাকাণ্ড হচ্ছে এর জন্য তারাই যে দায়ি এর মধ্যে আর কোনো সন্দেহ নাই। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে গাজীপুরের ভাওয়াল বদলে আলম সরকারি কলেজ মাঠে জাতীয় শ্রমিক লীগ আয়োজিত এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এ সব কথা বলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে গাজীপুরের ভাওয়াল বদলে আলম সরকারি কলেজ মাঠে জাতীয় শ্রমিক লীগ আয়োজিত এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এ সব কথা বলেন।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নালিশ করে জিএসপি সুবিধা বন্ধ করে করেছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, 'খালেদা জিয়া আমেরিকার কাছে চিঠি পাঠিয়েছিলেন জিএসপি সুবিধা বাতিল করার জন্য। তার চিঠিতেই জিএসপি সুবিধা বন্ধ হয়েছে। নালিশ করলে বালিশ পেতে হয় ভাঙ্গা জুতার বাড়ি খেতে হয়। তাই তিনি আজ বালিশ পেয়েছেন।'

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের রাজনীতি খেটে খাওয়া মানুষের জন্য। বাংলাদেশের মেহনতী মানুষের ভাগ্যউন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। বিএনপি যখন ক্ষমতায় এসেছিল তখন অনেক শিল্পকারখানা বন্ধ করে দিয়েছিল। হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছিল। আমরা বন্ধ কারখানা ফের চালু করেছি।

জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. শুকুর মাহমুদ জনসভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ, গাজীপুর-২ আসনের সাংসদ জাহিদ আহসান, গাজীপুর-৩ আসনের সাংসদ সিমিন হোসেন ও গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজমত উল্লাহ খান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকাল সাড়ে চারটার দিকে জনসভাস্থলে পৌঁছালে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহম্মেদ, মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকসহ গাজীপুরের সাংসদ ও আওয়ামী লীগ নেতারা তাঁকে স্বাগত জানান।

আ.লীগ ক্রীতদাস হয়েছে: খালেদা জিয়া

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে 'ক্রীতদাস' হিসেবে মন্তব্য করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, সীমান্তে যখন হত্যাকাণ্ড হয়, তখন এই ক্রীতদাসরা প্রতিবাদ করতে পারে না। ফেলানীর লাশ ঝুলে থাকলেও ক্রীতদাসরা প্রতিবাদ করে না। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শ্রমিক দলের এক সমাবেশে খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন। সম্প্রতি দেশে ঘটে যাওয়া গুম ও খুনের প্রতি ইঙ্গিত করে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, 'আপনারা কি শুধু মায়ের চোখে পানি দেখবেন, নাকি প্রতিবাদ করবেন। আপনাদের গর্জে উঠতে হবে।'

যুক্তরাষ্ট্রে বেশির ভাগের ‘মে দিবসের’ ধারণা নেই

যুক্তরাষ্ট্র থেকে মে দিবসের শুরু। কিন্তু দেশটির বেশির ভাগ মানুষেরই মে দিবস সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। যে শিকাগো শহরের হে মার্কেট এলাকার  রক্তক্ষয়ী ঘটনা থেকে সারা বিশ্বে শ্রমিক সংহতির জাগরণ, সেই শহরেও মে দিবসের কোনো ছায়া নেই। প্রতিদিনের মতো যুক্তরাষ্ট্রে ১ মে আরেকটি কর্মযজ্ঞের দিন। 'আজ মহান মে দিবস' শিরোনামে কোনো পত্রিকার ক্রোড়পত্রও চোখে পড়েনি। গণমাধ্যমগুলো বহির্বিশ্বের মে দিবস পালনের দায়সারা সংবাদ প্রচার করছে। শিকাগোর হে মার্কেটে ১২৮ বছর আগের রক্তাক্ত সেই ঘটনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আজকের শ্রমিক সমাজ আর তেমন করে ভাবেন না। যুক্তরাষ্ট্রের  বড় বড় শহরে কিছু সাংগঠনিক কর্মসূচি থাকলেও দিবসটির আয়োজনে সাধারণ কর্মজীবীদের তেমন সংশ্লিষ্টতা নেই।

হে মার্কেটে শ্রমিক অসন্তোষের জের ধরে ১৮৯৪ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সরকারিভাবে সেপ্টেম্বরের প্রথম সোমবার 'লেবার ডে' হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। মে দিবসকে 'আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস' হিসেবে গ্রহণের ১২৫ বছর পূর্তি হচ্ছে এবার। সারা বিশ্বে, বিশেষ করে সমাজতান্ত্রিক ঘরানার দেশগুলোতে দিবসটি নিয়ে সাজ সাজ অবস্থা। বিশ্বের শ্রমজীবীরা নিজেদের অধিকার নিয়ে বিশাল সব সমাবেশ থেকে আবার একসঙ্গে আওয়াজ তুলছেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে এর কোনো ছাপ নেই। কলকারখানা থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান—কোথাও চোখে পড়ার মতো কোনো অনুষ্ঠান নেই।

মে দিবস উপলক্ষে নিউইয়র্কের ইউনিয়ন স্কয়ার এলাকায় অকুপাই আন্দোলনের মাত্র ১০ জন সদস্য জড়ো হয়েছেন। মার্টিন হল নামে একজন জানান, যুক্তরাষ্ট্রে এখন আয়ের ভারসাম্য চরমে পৌঁছেছে। মধ্যবিত্তরা দিন দিন বিত্তহীন হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থার পক্ষে নিজের অবস্থান জানাতে তিনি মে দিবসে ইউনিয়ন স্কয়ারে গেছেন। তিনি জানান, তিনি গত তিন বছর কর্মহীন।

নিউজার্সির টেমস রিভার এলাকায় বিশাল শপিং মলে কাজ চলছে নিত্যদিনের মতো। দোকানের কর্মচারী জুডি স্টানকো (৫৮) জানান, মে দিবস মার্কিস্টদের উত্সবের দিন। তিনি জীবনে কখনো মে দিবসের কোনো অনুষ্ঠানে যোগ দেননি।  রেস্টুরেন্টের কর্মচারী টম ব্রাডি বলেন, ৪০ বছরের কর্মজীবনে মে দিবস নামের কোনো অনুষ্ঠানে তাঁকে কেউ ডাকেনি। এ ধরনের কোনো অনুষ্ঠান আয়োজনের বিষয়ে তাঁর কোনো ধারণাও নেই। পেট্রলপাম্পে কাজ করছিলেন পল ডাডলি। অকপটে জানালেন, মে দিবস সম্পর্কে তাঁর কোনো ধারণা নেই। তিনি বলেন, টেলিভিশনে দেখেছেন রাশিয়া, কিউবা ও ভেনেজুয়েলায় মে দিবসের বিশাল সমাবেশ হয়ে থাকে। নিউজার্সির ক্যাবচালক ওমর ওকস্টা জানান,  কৈশোর কেটেছে কিউবায়। পুঁজিবাদের দেশে এসে ৩০ বছর থেকে একনাগাড়ে কাজ করে যাওয়ার কথা জানালেন এ কিউবান অভিবাসী। তবে  নিজের দেশে কলকারখানা বন্ধ রেখে মে দিবসের উত্সবে যোগ দেওয়ার স্মৃতির কথা জানান তিনি। ট্রাকচালক টম ডাফি। মে দিবস কমিউনিস্টদের দেশে পালন করা হয় বলে তিনি জানান।

যুক্তরাষ্ট্রের  শ্রমিক সংগঠন, নাগরিক অধিকার সংগঠন তাদের প্রতিশ্রুতি থেকে দাবি-দাওয়া নিয়ে আওয়াজ তুলে থাকে। এবারের মে দিবসে যুক্তরাষ্ট্রের অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা দেওয়ার দাবি উঠেছে। উদারনৈতিক সংগঠনগুলো তাদের আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের বর্ণবৈষম্য, পুলিশ নির্যাতন, আয়বৈষম্য এবং যুদ্ধবিরোধিতা নিয়ে আওয়াজ তুলেছে।

প্রধান আসামি নূর হোসেনের কার্যালয়ে আগুন

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নূর হোসেনের ব্যক্তিগত কার্যালয় ভাঙচুর করে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার পর এ ঘটনা ঘটে। সিটি করপোরেশনের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও তাঁর চার সহযোগী অপহরণের মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন। শিমরাইলে সিটি করপোরেশনের ট্রাক টার্মিনালের ভেতরে নূর হোসেনের ব্যক্তিগত কার্যালয়টি অবস্থিত। আজ বেলা সাড়ে ১১টার পর বিক্ষুব্ধ জনতা ওই কার্যালয় ভাঙচুর করে ও আগুন দেয়। কার্যালয়ের পাশে থাকা মেলার নামে চলা অশ্লীল নৃত্য ও জুয়ার আসরের প্যান্ডেলও ভাঙচুর করে আগুন দিয়েছে জনতা। এর কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছে। নজরুল ও তাঁর চার সহযোগী অপহূত হওয়ার পর আবারও আলোচনায় আসেন কাউন্সিলর নূর হোসেন। এ ঘটনায় তাঁকে প্রধান আসামি করে মামলা করেছে নজরুলের পরিবার।

কাঁচপুরে শীতলক্ষ্যা নদী দখল করে বালু-পাথরের ব্যবসা, উচ্ছেদে বাধা, পরিবহনে চাঁদাবাজিসহ নানা কারণে বারবার আলোচনায় এসেছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নূর হোসেন। অভিযোগ রয়েছে, কাঁচপুর ও সিদ্ধিরগঞ্জে চাঁদাবাজি, নদী দখল, মাদক ব্যবসাসহ অনেক কিছুরই নিয়ন্ত্রক তিনি ও তাঁর লোকজন। তাঁর বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা থানায় ছয়টি হত্যা মামলাসহ ২২টি মামলা রয়েছে।

গত রোববার দুপুরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়ক থেকে অপহূত কাউন্সিলর নজরুলসহ ছয়জনের লাশ গতকাল বুধবার উদ্ধার করা হয়েছে বন্দর থানার শীতলক্ষ্যা নদী থেকে। একই সড়ক থেকে প্রায় একই সময়ে অপহূত হন নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তাঁর গাড়ির চালক ইব্রাহিম। আওয়ামী লীগ-সমর্থক নজরুলের পরিবারের অভিযোগ, বিরোধের জের ধরে নূর হোসেন ও তাঁর লোকজন এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। রবি ও সোমবার নূর হোসেন এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে মঙ্গলবার থেকে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ থাকায় চেষ্টা করেও তাঁর বক্তব্য নেওয়া যায়নি।

এলাকার লোকজন জানান, ট্রাকের সহকারী (হেলপার) হিসেবে জীবন শুরু করা নূর হোসেন পরে চালক হন। ১৯৯২ সালের পর তিনি কৃষক লীগের সাবেক নেতা ও পরে বিএনপির সাবেক সাংসদ গিয়াসউদ্দিনের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে যোগ দেন বিএনপিতে। সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি শামীম ওসমানের হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এরপর সিদ্ধিরগঞ্জে তিনি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে থাকেন। ওই সময় তাঁর বিরুদ্ধে দাঙ্গা-হাঙ্গামাসহ ১৩টি মামলা হয়। বাংলাদেশ ট্রাকচালক শ্রমিক ইউনিয়ন কাঁচপুর শাখার সভাপতিও হন তিনি। ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি এলাকায় ছিলেন না। ওই সময় তিনি ছিলেন পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তাঁকে ধরিয়ে দিতে ইন্টারপোলে রেড নোটিশও পাঠানো হয়েছিল। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনের পর তিনি এলাকায় ফেরেন। গত বছর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে তিনি ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, রাজধানীতে প্রবেশের অন্যতম পথ শিমরাইল মোড় ও কাঁচপুরে পরিবহনে চাঁদাবাজিসহ সবকিছু এখন নিয়ন্ত্রণ করেন নূর হোসেন ও তাঁর লোকজন।

পরিবহনে চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে ২০১২ সালের আগস্টে নূর হোসেনের বিরুদ্ধে পুলিশ ও র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ দেন ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েতুল্লাহ। র‌্যাবের মহাপরিচালক বরাবর দেওয়া অভিযোগে বলা হয়, অনেক দিন ধরে কাঁচপুর সেতু ও চিটাগাং রোডে স্থানীয় হোসেন চেয়ারম্যানের (নূর হোসেন) নেতৃত্বে কিছু মাস্তান পরিবহনগুলো থেকে প্রতিদিন দু-তিন লাখ টাকা চাঁদা আদায় করছে। চাঁদা না দিলে পরিবহনকর্মীদের মারধর ও গাড়ি ভাঙচুর করা হচ্ছে। চাঁদাবাজির প্রতিবাদে ব্যাটারিচালিত রিকশার চালক ও মালিকেরা নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সমাবেশ করেন ও বিভিন্ন জায়গায় স্মারকলিপি দেন। পরে প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর হস্তক্ষেপে ওই চাঁদাবাজি বন্ধ হয়।

নদী দখল ও বিআইডব্লিউটিএর মামলা
বিআইডব্লিউটিএর সূত্র জানায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় কাঁচপুর সেতুর নিচে শীতলক্ষ্যার তীর দখল করে নূর হোসেনদের গড়ে তোলা বালু ও পাথরের ব্যবসা উচ্ছেদ করা হলেও নবম সংসদ নির্বাচনের পর আবারও নদী দখল করে এ ব্যবসা করছেন তিনি। হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে কাঁচপুর সেতুর নিচে শীতলক্ষ্যার তীর অবৈধভাবে দখল করে বালু-পাথরের ব্যবসা গড়ে তোলার অভিযোগে নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করে ২০১০ সালে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা করেছিলেন বিআইডব্লিউটিএর নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের পোর্ট কর্মকর্তা। মামলায় সরকারি কাজে বাধাদান, সরকারি কর্মকর্তাদের হুমকি দেওয়া এবং নদীতীরের প্রায় ৮০০ শতাংশ জমি দখলের অভিযোগ আনা হয়। গত কয়েক বছরে ওই দখল উচ্ছেদে আট-দশবার অভিযান চালানো হয়। মামলার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ২২টি চিঠি দেওয়া হয়েছে।

মেলার নামে অশ্লীল নৃত্য-জুয়া
অভিযোগ রয়েছে, সিদ্ধিরগঞ্জে সিটি করপোরেশনের ট্রাক টার্মিনালে এক বছরের বেশি সময় ধরে মেলার নামে চলছে অশ্লীল নৃত্য ও জুয়ার আসর। মেলায় অবাধে মাদকও বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় কাউন্সিলর নূর হোসেনকে এ মেলা বন্ধ করতে গত ১৬ এপ্রিল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল মজুমদার চিঠি দিলেও মেলা বন্ধ হয়নি।

সূত্রগুলো জানায়, ২০১৩ সালের ১৭ এপ্রিল নূর হোসেনের সহযোগী হিসেবে পরিচিত ফরহাদ হোসেন ওই ট্রাক টার্মিনালে ব্যবসা ও ইনডোর গেমস চালানোর জন্য হাইকোর্টে রিট করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ মেলায় বাধাদান ও হস্তক্ষেপ না করতে রুল জারি করেন এবং ইনডোর গেমসের নামে অবৈধ কর্মকাণ্ড না করার নির্দেশ দেন।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মতিন বলেন, হাইকোর্টের অনুমতি সাপেক্ষে শিমরাইল ট্রাক টার্মিনালে গত বছর থেকে মেলা চলছে। আদালতের সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী আরও দুই মাস মেলা চালানো যাবে। মেলায় জুয়া, মাদক ব্যবসা, অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান জানান, এ মেলা সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না। অপহরণের পরে রবি ও সোমবার নূর হোসেনের ফোন খোলা থাকলেও মামলার পরে মঙ্গলবার থেকে ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তাই এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য নেওয়া যায়নি।

বিয়ে নিয়ে মুলায়মের মন্তব্যে রেগে আগুন মায়াবতী

বিয়ে নিয়ে সমাজবাদী দলের নেতা মুলায়ম সিং যাদবের করা মন্তব্যে রেগে আগুন হয়ে গেছেন বহুজন সমাজবাদী পার্টির (বিএসপি) নেতা মায়াবতী। ক্রুদ্ধ মায়াবতী বলেছেন, 'আগ্রায় মানসিক চিকিত্সাকেন্দ্রে যাদবের চিকিত্সা নেওয়া উচিত।' উত্তর প্রদেশের ফয়জাবাদে এক নির্বাচনী সভায় মুলায়ম সিং যাদব বলেন, 'আমি মায়াবতীকে মিস, মিসেস না সিস্টার বলে সম্বোধন করব, তা বুঝতে পারছি না।' আর এতেই রাগে ফেটে পড়েছেন মায়াবতী। তিনি বলেন, লোকসভা নির্বাচনে হেরে যাওয়ার ভয়ে মুলায়ম সিং যাদব তাঁর মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন। তিনি বলেন, 'আমি যাদবকে আগ্রায় একটি মানসিক চিকিত্সাকেন্দ্রে ভর্তি করানোর জন্য তাঁর পরিবারের সদস্যদের পরামর্শ দেব।' এতেও রাগ কমেনি মায়াবতীর। যাদবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনেও অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। নির্বাচনী প্রচার থেকে যাদবকে নিষিদ্ধ করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

এনডিটিভির খবরে বলা হয়, বেশ কয়েক বছর ধরেই উত্তর প্রদেশের রাজনীতিতে একচ্ছত্র আধিপত্য রয়েছে মুলায়ম সিং যাদব ও মায়াবতীর। গতবারের সাধারণ নির্বাচনে দুই দলই অংশ নেয়। মুলায়ম সিং যাদবের সমাজবাদী পার্টি পায় ২২টি আসন। আর বহুজন সমাজবাদী দল পায় ২১টি আসন। এ বছর দুটি দলই একে অন্যের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছে।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে খুনিদের বিচার দাবি by শরিফুল হাসান @নারায়ণগঞ্জ

'মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার ছেলেকে যদি আজকে গুম করা হতো, আপনি যদি ছেলের লাশ পেতেন, তাহলে কেমন লাগত আপনার? আমি জানি, আমার বাবাকে চক্রান্ত করে খুন করা হয়েছে। আমি খুনিদের ফাঁসি চাই। আর কাউকে যেন এভাবে মরতে না হয়।' আজ বৃহস্পতিবার বাবার জানাজার আগে নারায়ণগঞ্জের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের ছেলে নাঈম ইসলাম কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে কাঁদছিলেন উপস্থিত হাজারো মানুষ। নাঈমের মতো তাঁরাও এই খুনের বিচার আর গুম-খুনের সংস্কৃতি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। জানাজা শেষে 'খুনিদের বিচার চাই' দাবিতে স্লোগান তোলেন তাঁরা।

সিদ্ধিরগঞ্জেই বাড়ি বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইমরান হোসেনের। জানাজা শেষে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, 'নারায়ণগঞ্জে একের পর এক খুন, অপহরণ হচ্ছে। এভাবে তো চলতে পারে না। এই নোংরা খুনের রাজনীতি বন্ধ হোক। আর যারা সাতজনকে এভাবে মারল, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। এই খুনিদের বের করা গেলেই সব বেরিয়ে আসবে।' ইমরানের পাশে থাকা সিদ্ধিরগঞ্জের ব্যবসায়ী নূরুন্নবীও বলেন, 'এই সাতজনকে কারা হত্যা করল, তা আমরা জানতে চাই।'

জানাজার আগে নারায়ণগঞ্জের সাংসদ নজরুল ইসলাম বলেন, '২২ বছর ধরে নজরুল ভাইয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক। যারা তাঁকে খুন করেছে, তাঁদের বিচার করতেই হবে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চাই। তারা যত শক্তিশালীই হোক, বিচার হতেই হবে।' নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, 'নজরুল বেশ কিছুদিন ধরেই আতঙ্কে ভুগছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমরা দলীয় নেতা, পুলিশ, র্যাব—সবাইকে জানিয়েছিলাম। তারা যদি ব্যবস্থা নিত, এই খুন হতো না।'

নারায়ণগঞ্জ শহরে কথা হয় কলেজছাত্র আমিনুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'এত নৃশংসভাবে কোনো মানুষ কি মানুষকে খুন করতে পারে?' নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই অভিমত দেন, কোনো সাধারণ খুনি কিংবা খুনির দল প্রকাশ্যে সাতজন লোক গুম করার সাহস করবে না। এর সঙ্গে প্রভাবশালী কোনো বাহিনী জড়িত। কাজেই রাষ্ট্রকেই এ ধরনের গুম-খুন বন্ধ করতে হবে।

নারায়ণগঞ্জে সবই আওয়ামী লীগ! by সোহরাব হাসান

সারা দেশের মানুষ যখন মে দিবসের আনন্দ ও ছুটি ভাগ করে নিচ্ছে, তখন নারায়ণগঞ্জবাসীর মনে আনন্দ নেই। ছুটি কাটানোর অবকাশ নেই। শ্রমিক সমাবেশে উদ্দীপ্ত স্লোগান নেই। মে দিবসে তাঁরা চোখের জলে বিদায় জানালেন ছয়জন প্রিয় মানুষকে। আগের দিন শীতলক্ষ্যায় যাঁদের লাশ উদ্ধার করা হয়। তাঁরা কেমন মানুষ ছিলেন সেই বিচার এখানে করছি না। তাঁরা ভালো মানুষ হতে পারেন, আবার তাঁদের মধ্যে কেউ খারাপ মানুষও থাকতে পারেন। কিন্তু স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি কেন থাকবে না? কোনো অপরাধ করলে তার বিচার হতে পারত। বিচারের আগেই এ রকম মৃত্যু কিসের ইঙ্গিত দেয়?
গত রোববার নারায়ণগঞ্জ সিটি কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ সাতজনকে গুম করা হয়। কোথায় কারা ও কেন গুম করেছে, জানাতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এমনকি তাঁরা প্রথমে মামলাটিও নিতে চাননি। তাঁরা নাকি আশ্বাস দিয়েছিলেন, অপহূত ব্যক্তিদের উদ্ধারে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টার ফল দেখলাম নদীতে ছয়টি লাশ উদ্ধারের মধ্য দিয়ে। কেউ জীবিত ফিরে এলেন না। বুধবার শীতালক্ষ্যায় ছয়টি লাশ ভেসে উঠল। পরদিন মে দিবসে আরও একটি। এ যেন কোলাহলমুখর কোনো জনপদ নয়। নীরব-নিথর মৃত্যুপুরী। লাশের পাশে স্বজনদের আহাজারি ও বুকফাটা আর্তনাদে আকাশ ভারী হয়ে ওঠে। কিন্তু ঘাতকের সন্ধান মেলে না। তারা কি সরকারের চেয়েও ক্ষমতাবান?

নারায়ণগঞ্জে কারা লাশ হচ্ছেন, সেটি জানা গেলেও কারা লাশ করছেন, সেটি কখনো জানা যাবে কি না—আমরা জানি না। জানে না নারায়ণগঞ্জের মানুষও। এ পর্যন্ত এই বন্দরনগরে এ ধরনের খুনের বিচারের নজির নেই। আসামি ধরা পড়লেও জামিনে বেরিয়ে যায়। খুনির পক্ষে নানা তদবির চলে। দোষ স্বীকার করার পরও অভিযুক্ত উচ্চ আদালতে জামিন পেয়ে যায়। তাই প্রশাসনের আন্তরিকতা নিয়ে, সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে—আদৌ সাত হত্যার বিচার হবে কি না? ঘাতকেরা শাস্তি পাবে কি না?

২.
দেশের অন্যান্য স্থান থেকে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতির চালচিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানে জামায়াতে ইসলামী বা অন্য কোনো মৌলবাদী দলের তেমন তত্পরতা নেই। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি বহুদিন ধরেই নিষ্ক্রিয়। এমনকি অনেক সময় তাদের রুটিন কর্মসূচিও পালিত হয় না। তারা করতে সাহস পায় না। সে ক্ষেত্রে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি বা প্রধান বিরোধী দলের পক্ষে এখানে সাতটি মানুষকে 'নাই' করে দেওয়ার আশঙ্কা একেবারেই শূন্য। এমনকি  সাত খুনের ঘটনার পর সে রকম অভিযোগ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও কেউ করেননি।

প্রকৃত প্রস্তাবে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের বাইরে কিছুই নেই। এখানকার প্রশাসন আওয়ামী লীগের অনুগত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আওয়ামী লীগের প্রভাবশালীদের কথায় উঠবস করে। অধিকাংশ ব্যবসায়ী আওয়ামী লীগের নেতাদের দিনে-রাতে সালাম দেন। এখানে পাঁচটি নির্বাচনী এলাকার তিনটিতে বিজয়ী আওয়ামী লীগ এবং দুটিতে এরশাদের জাতীয় পার্টি। এখানে উপজেলা চেয়ারম্যানেরা সব আওয়ামী লীগেরই।

তাহলে নারায়ণগঞ্জে এসব গুম-খুন কারা করছে? আওয়ামী লীগের ভেতরেরই কোনো শক্তি বা অপশক্তি? নিহত সিটি কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত কাউন্সিলর। তিনি আওয়ামী লীগের নেতা। আবার তাঁর হত্যার দায়ে যাঁর বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে, সেই নুর হোসেনও একজন কাউন্সিলর এবং আওয়ামী লীগের নেতা। আবার এই কাউন্সিলরই সাংসদ শামীম ওসমানের শিষ্য। দুই শিষ্যের মধ্যে কে কতটা ভালো, কতটা খারাপ, সেটি তাঁদের রাজনৈতিক গুরুরই ভালো জানার কথা। শামীম ওসমান নজরুল ইসলামকে আওয়ামী লীগের নিবেদিতপ্রাণ কর্মী ও অত্যন্ত আদরের মানুষ বলে অভিহিত করেছেন। তবে অভিযুক্ত নুর হোসেন আদরের কি না, সে কথা তিনি বলেননি।

শোনা যায়, নারায়ণগঞ্জে মাঝেমধ্যে গায়েবি আওয়াজ আসে আগামী অমুক তারিখ জঙ্গি হামলা হবে। অমুক তারিখ অমুকের ওপর হামলা হবে। বিরোধী দলের নেতা নারায়ণগঞ্জে এলে ২০০ লাশ পড়বে। কিন্তু বিরোধী দলের কোনো নেতা বা পাতি নেতা নারায়ণগঞ্জে না এলেও লাশ পড়া বন্ধ হয় না। নদীতে মানুষের লাশ ভেসে ওঠা থামে না। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, নারায়ণগঞ্জে যাঁরা লাশ হন, তাঁরা যেমন আওয়ামী লীগার, তেমনি যাঁদের বিরুদ্ধে মানুষ খুন ও গুম করার অভিযোগ রয়েছে, তাঁরাও আওয়ামী লীগার। এখানে সবই আওয়ামী লীগ। খাঁটি দেশপ্রেমিক।

সোহরাব হাসান: কবি ও সাংবাদিক

বিকৃত করে দেওয়া হয়েছিল লাশগুলো by শরিফুল হাসান @নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার শীতলক্ষ্যা নদী থেকে আজ বৃহস্পতিবার আরও একটি লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশটি কার? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে তিনটি পরিবারের সদস্যদের হিমশিম খেতে হয়েছে। লাশগুলো এতটাই বিকৃত হয়ে গিয়েছিল যে চেনা যাচ্ছিল না। তবে শেষ পর্যন্ত এই লাশটি লিটনের বলে শনাক্ত করা হয়।

নারায়ণগঞ্জ থেকে গত রোববার একসঙ্গে সাত ব্যক্তি অপহূত হন। তাঁরা হলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, তাঁর বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, নজরুলের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দনকুমার সরকার ও তাঁর ব্যক্তিগত গাড়ির চালক ইব্রাহিম।

এর মধ্যে বুধবার দুপুরে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ছয়জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়া প্রতিটি মরদেহের সঙ্গে বেঁধে দেওয়া হয়েছিল বড় বড় কংক্রিটের খণ্ড, যাতে করে মরদেহগুলো নদীতে ডুবে থাকে। মরদেহগুলো হাসপাতালে নিয়ে আসার পর সেখানে স্বজনদের আর্তনাদে ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ। লাশগুলো বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। উদ্ধার শেষে মরদেহগুলো নিয়ে আসা হয় নারায়ণগঞ্জের জেনারেল হাসপাতালে। খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান নারায়ণগঞ্জ থেকে অপহূত ব্যক্তিদের স্বজনেরা।

প্যানেল মেয়র এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের লাশ শনাক্ত করেন তাঁর ভাই আবদুস সালাম। পরে নজরুলের সঙ্গে অপহূত মনিরুজ্জামান স্বপনের লাশ শনাক্ত করেন তাঁর ভাই রিপন। চন্দন কুমার, মনিরুজ্জামান ও ইব্রাহিমের লাশ শনাক্ত করেন পরিবারের সদস্যরা। হাসপাতালে থাকা অপর লাশটি নজরুলের বন্ধু লিটনের বলে ধারণা করা হলেও লিটনের পরিবার সেটি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে।

এর মধ্যে বৃহস্পতিবার সকালে আরেকটি লাশ উদ্ধার হলে লিটন ও জাহাঙ্গীরের দুই পরিবারই নারায়ণগঞ্জের জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। লাশগুলো এতটাই বিকৃত হয়ে গিয়েছিল যে কোনোভাবেই চেনা যাচ্ছিল না। এ পর্যায়ে লিটনের বড় ভাই মুকুল লাশটির গঠন দেখে তাঁর ভাই লিটনের বলে শনাক্ত করেন। তখন ধারণা করা হয় পড়ে থাকা লাশটি বোধ হয় জাহাঙ্গীরের। কিন্তু জাহাঙ্গীরের পরিবার জানায়, লাশটি তাদের নয়। তাদের ধারণা, তাজুলের পরিবার যে লাশটি নিয়ে গেছে, সেটিই বোধ হয় জাহাঙ্গীরের। এরপর পুলিশ তাজুলের পরিবারকে খবর দিলে সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে তারা লাশটি হাসপাতালে আসে। এরপর সেটি জাহাঙ্গীরের লাশ বলে শনাক্ত করা হয়। এরপর এই দুটি লাশ দুই পরিবারকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

পুলিশ ও নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানান, লাশগুলোর সারা শরীরে কোপানো হয়েছে। মুখমণ্ডল গলে বিকৃত হয়ে গেছে। কোনোভাবেই আসলে লাশগুলো চেনা যাচ্ছিল না। তবে পরিবারের সদস্যরা শরীরের গঠন, পোশাক দেখে লাশগুলো শনাক্ত করেছেন। নারায়ণগঞ্জ থানার ওসি মনজুর কাদের জানিয়েছেন, লাশ নিয়ে বিভ্রান্তি কেটেছে। লিটন, জাহাঙ্গীর ও তাজুলের পরিবার এখন যার যার লাশ বুঝে পেয়েছে। তিনি বলেন, অ্যাসিড দিয়ে লাশগুলো বিকৃত করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই চেনার উপায় ছিল না।

নজরুলকে দাফন, জানাজায় মানুষের ঢল by শরিফুল হাসান

বাইরে কারোর প্ররোচনায় বা উসকানিতে অন্যায্য দাবি নিয়ে শ্রমিকদের আন্দোলন না করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে মালিকদেরও শ্রমিকদের প্রতি সুবিচারের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'বাংলাদেশে শ্রমিক না খেয়ে মারা যাবে। আর মালিক বিলাসিতা করবে—এটি হতে দেওয়া হবে না।'
আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে শ্রম মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা বলেন, 'যে শ্রমিকের ঘামে, উপার্জিত আয়ে মালিকদের বিলাসিতা এনে দেয়। সেই শ্রমিকদের সুনজরে আনতে হবে। মালিক-শ্রমিকদের সুসম্পর্ক পারে ভালো কাজের পরিবেশ তৈরি করতে। দেশকে এগিয়ে নিতে।' গৃহকর্মীদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে সরকার ভাবছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব এইচ টি ইমাম, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, শ্রম মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মন্নুজান সুফিয়ান প্রমুখ। এদিকে আজ বিকাল তিনটায় গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ মাঠে জাতীয় শ্রমিক লীগ আয়োজিত শ্রমিক সমাবেশে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নজরুলকে দাফন, জানাজায় মানুষের ঢল by শরিফুল হাসান

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলামের মরদেহ সিদ্ধিরগঞ্জে তাঁর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। এর আগে নজরুল ইসলাম ও তাঁর বন্ধু তাজুল ইসলামের জানাজা সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অনুষ্ঠিত হয়। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে জানাজা হয়। এতে শরিক হতে মহাসড়কে কয়েক কিলোমিটারজুড়ে সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে। পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নজরুল ইসলামের দাফন সম্পন্ন হয়।

আজ সকাল ১০টার দিকে নজরুল ও তাজুলের মরদেহ ট্রাকে করে সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নেওয়া হয়। তাঁদের জানাজায় অংশ নিতে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা হাজার হাজার মানুষ মহাসড়কে অবস্থান নেন। মানুষের ঢল মহাসড়কের কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত ছাড়িয়ে যায়। মহাসড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মহাসড়ক ও সংশ্লিষ্ট এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

জানাজার আগে নজরুলের বন্ধু ও স্বজনেরা এলাকাবাসীর উদ্দেশে কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাঁরা এই হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার দাবি করেন। স্থানীয় লোকজন জানান, এর আগে আজ সকালে নজরুল ও তাজুলের লাশ হাসপাতালের হিমঘর থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ ঈদগাহ ময়দানে নেওয়া হয়। কিন্তু স্থান সংকুলান না হওয়ায় তাঁদের মরদেহ সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মহাসড়কে আনা হয়।

নারায়ণগঞ্জ থেকে গত রোববার একসঙ্গে সাত ব্যক্তি অপহূত হন। তাঁরা হলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলাম, তাঁর বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, নজরুলের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তাঁর ব্যক্তিগত গাড়ির চালক ইব্রাহিম।

গতকাল বুধবার দুপুরে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ছয়জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে পাঁচজনের লাশ শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁরা হলেন নজরুল, চন্দন কুমার, মনিরুজ্জামান, তাজুল ও ইব্রাহিম। অপর লাশটি নজরুলের বন্ধু লিটনের, নাকি গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলমের তা শনাক্ত হয়নি। আজ আরেকটি লাশ পাওয়া গেছে।