Friday, January 14, 2011

দূরতম ছায়াপথরাজি

হাকাশবিজ্ঞানের পরিধি বাড়ছে উল্লেখযোগ্যহারে। আর এতে নবতর সংযোজন হচ্ছে, বিজ্ঞানীরা এবার মহাকাশে সবচেয়ে দূরের ছায়াপথপুঞ্জের সন্ধান পেয়েছেন। পৃথিবী থেকে কসমস-আজটেক-৩ নামের ওই ছায়াপথপুঞ্জের দূরত্ব মাত্র ১২.৬ বিলিয়ন আলোকবর্ষ! আর এর ভর প্রায় ৪০০ বিলিয়ন, সূর্যের মোট ভরের চেয়েও বেশি!

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, আজটেক-৩ এ পর্যন্ত সন্ধান পাওয়া অন্য পুঞ্জগুলোর তুলনায় বয়সে একেবারেই নবীন। কিছুদিন আগেই আবিষ্কৃত একটি ছায়াপথের বয়স ধরা হয়েছে কয়েক বিলিয়ন বছর। অন্যগুলোর বয়স এর কাছাকাছিই বা এরচেয়ে আরো অনেক বেশি। আর আজটেক-৩-এর
জন্ম খুব বেশি হলে কয়েক শ মিলিয়ন বছর আগে। বিজ্ঞানীদের ভাষ্য, কয়েক বিলিয়ন বছরে অসংখ্য ছায়াপথের সম্মিলনে একেকটি ছায়াপথপুঞ্জের জন্ম হয়। তুলনামূলকভাবে অনেক আগেভাগেই এর সন্ধান পাওয়ার ফলে এর জন্মরহস্য ও গাঠনিক পরিবর্তনের এমন সব চিত্র পাওয়া যাচ্ছে, যা আগে সম্ভব হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির মহাকাশবিজ্ঞানী পিটার কাপাক জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত এটি বিবর্তমান। ক্রমান্বয়ে এটি পরিণত হবে। তবে নবীন এ পুঞ্জটির সন্ধান পেয়ে গবেষকদের পক্ষে গোটা প্রক্রিয়ার একেবারে মূলের কিছু চিত্র সম্পর্কে বাস্তব তথ্য জানা সম্ভব হচ্ছে। সূত্র : বিবিসিনিউজঅনলাইন।

আগামী দুই বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল থাকবে : বিশ্বব্যাংক

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সম্ভাবনাসংক্রান্ত বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, আগামী দুই বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল থাকবে।

ওয়াশিংটন ডিসিতে গতকাল প্রকাশিত 'গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টাস ২০১১ : নেভিগেটিং স্ট্রং কারেন্টস' শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১১ ও ২০১২ সালে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে মন্থর হবে। তবে একই সময়ে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারে ঊর্ধ্বমুখী ধারা বজায় থাকবে বলে প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দেওয়া হয়। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১০ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতি ৩.৯ শতাংশ বাড়লেও ২০১১ সালে ৩.৩ শতাংশ এবং ২০১২ সালে ২.৩ শতাংশে নেমে আসবে। তবে চলতি বছরের শেষ নাগাদ বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি গত বছরের ৫.৮ শতাংশ থেকে ৬.১ শতাংশে এবং ২০১২ সালে ৬.৩ শতাংশে বৃদ্ধি পাবে।
রিপোর্টে বলা হয়, ২০১১ সালে ভারতের অর্থনীতি ৮.৭ শতাংশে এবং ২০১২ সালে ৯.৫ শতাংশে বৃদ্ধি পাবে। ২০১১ সালে পাকিস্তানের অর্থনীতি গত বছরের ৪.৪ প্রবৃদ্ধির প্রায় অর্ধেক হ্রাস পেয়ে ২.৬ শতাংশে নেমে আসবে। তবে ২০১২ সালে দেশটির অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে ৩.৮ শতাংশে দাঁড়াবে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারি ঘাটতি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশগুলো এমনকি ভারতের চেয়েও ভালো করবে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারি ঘাটতি ব্যবস্থাপনায় ভালো করছে, যা প্রায় ২.৫ শতাংশ। এ হার মালদ্বীপ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও ভুটানের তুলনায় কম। তবে প্রতিবেদনে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ হ্রাস পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে বিদ্যুৎ সংকটকে দেশের অধিকতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রধান বাধা হিসেবে উল্লেখ করে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয় যে এটি দেশের অর্থনীতির কাঙ্ক্ষিত বৃদ্ধি ঠেকিয়ে রাখতে পারে।

জাহাজভাঙা শিল্প বনাম পরিবেশ ও মানুষ

জাহাজভাঙা শিল্প নিয়ে বিতর্কের গ্রহণযোগ্য একটি মীমাংসা করেছে উচ্চ আদালতের একটি রায়। শিল্পটি থাকবে; কিন্তু পরিবেশের দূষণ ও শ্রমিকদের প্রাণহানি দুটোই বন্ধ হবে—গত বুধবার দেওয়া উচ্চ আদালতের রায়ের সারমর্ম এটাই।

জাহাজভাঙা শিল্পের মালিকদের ক্রমাগত আইন ভঙ্গ এবং পরিবেশ ও শ্রমিকস্বার্থের মধ্যকার দ্বন্দ্বের সুরাহা করার আইনি ভিত্তি এর মাধ্যমে গঠিত হলো। এখন শিল্পটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার এবং সরকারের পরিবেশ, শিল্প ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব হচ্ছে, নিজ নিজ ক্ষেত্রে রায়টির প্রতিফলন হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করা। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) দায়ের করা এক আবেদনের ভিত্তিতে উচ্চ আদালত এই রায় দেন। রায়ের অন্য অংশগুলোও গুরুত্বপূর্ণ। তাতে এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে রসায়নবিদ, পরিবেশবিদ, পদার্থবিদ, আইনবিদ, সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই কমিটিতে যাতে শ্রমিক ও মালিক-প্রতিনিধিরাও থাকেন, তা-ও নিশ্চিত করতে হবে।
বিশ্বের অনেক দেশেই জাহাজভাঙা শিল্প নিষিদ্ধ। ইউরোপ-আমেরিকাসহ সেসব দেশের বাতিল ও বিষাক্ত জাহাজের কবল থেকে রেহাই পাওয়ার লাভজনক পথ হলো বাংলাদেশে তা বিক্রি করা। জাহাজ কেটে লোহা বের করার প্রক্রিয়ায় এসব বর্জ্য ও রাসায়নিক সাগর, মাটি ও বায়ুকে ভয়ানকভাবে দূষণ করে। অন্যদিকে জাহাজ কাটতে গিয়ে বিস্ফোরণ ও গ্যাসের শিকার হয়ে শ্রমিকদের মৃত্যু হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশ কেন উন্নত বিশ্বের বাতিল জাহাজ ও বর্জ্যের ভাগাড় হবে। অন্য দিক থেকে এই শিল্পের মাধ্যমেই দেশের ইস্পাতশিল্প দাঁড়িয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশের লোহা ও ইস্পাতের চাহিদাও তারা মেটাচ্ছে। সে কারণে শিল্পটির টিকে থাকাও প্রয়োজন এবং তার জন্যই প্রয়োজন একে যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রণ করা।
এ কারণেই উচ্চ আদালতের নির্দেশ, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় থেকে ছাড়পত্র নেওয়ার বিধান এবং পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ২০১০-এর পরিবেশসম্মত ব্যবস্থাপনাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পাশাপাশি বাতিল জাহাজ আমদানির সময় রপ্তানিকারক দেশ থেকেই সেসবের বর্জ্য পরিশোধনের নির্দেশও দেওয়া হয়। পরিবেশ ও মানুষের কম ক্ষতি করেও এই শিল্প লাভজনকভাবে চলতে পারে। উচ্চ আদালত তা-ই দেখিয়ে দিল। আইনের ফাঁকফোকর গলে যাতে কোনোভাবেই বিষাক্ত বর্জ্যবাহী জাহাজ এ দেশে আসতে না পারে, কিংবা শ্রমিকদের অনিরাপদ কর্মপরিবেশ চলতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে মন্ত্রণালয়গুলোকেই।

ব্রাজিলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃতের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়েছে

ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো শহরের কাছে পার্বত্য এলাকায় গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় ও ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়েছে। দেশটিতে স্মরণকালের ভয়াবহ এ প্রাকৃতিক দুর্যোগে আরও বহু লোক নিখোঁজ রয়েছে। দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা আজ শুক্রবার এ কথা জানিয়েছেন ।

উদ্ধারকারীরা উপদ্রুত এলাকায় নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধানে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। এ অভিযানে উদ্ধারকারীদের সঙ্গে নিখোঁজদের স্বজনেরাও যোগ দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত এ প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রায় ১৪ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়েছে। পুলিশ বলছে, ভবিষ্যতে মৃত্যের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। বন্যা ও ভূমিধসে রাস্তাঘাট ও সেতু বিধ্বস্ত হওয়ায় দুর্যোগ-কবলিত এলাকায় যোগাযোগ রক্ষা ও উদ্ধারকাজ কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে ক্ষতির সঠিক পরিমাণ এখনো জানা যায়নি। কয়েকটি এলাকায় টেলিফোন সংযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
১৯৬৭ সালের পর ব্রাজিলের মানুষ এমন ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর দেখেনি। ব্রাজিলের নতুন প্রেসিডেন্ট দিলমা রোসেফ আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন করে সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে বন্যা-কবলিত এলাকায় ৪২ কোটি ডলারের জরুরি ত্রাণ সাহায্য পাঠানো হয়েছে।
বন্যা ও ভূমিধসে রিও ডি জেনিরোর পার্শ্ববর্তী নোভা ফ্রিবুরগো, সেরানা, পেট্রোপোলিস ও তেরেসোপোলিস সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত নোভা ফ্রিবুরগো এলাকায় প্রাণ হারিয়েছেন ২০১ জন, তেরেসোপোলিসে ১৭৫ জন এবং পেট্রোপোলিসে ৩৯ জন। বন্যাক্রান্ত অন্যান্য এলাকায় বাকি প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
আবহাওয়াবিদেরা জানিয়েছেন, ব্রাজিলের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী কয়েক দিনে আরও বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। বিবিসি ও আল-জাজিরা।

বেসামরিক পরমাণু কর্মসূচি শুরু করতে পারবে ইরাক

রাকের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। ১৯ বছর আগে সাদ্দামের শাসনামলে এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। এর ফলে দেশটি এখন বেসামরিক পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে যেতে পারবে। এ ছাড়া তেলের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচিও বাতিল করা হয়েছে।
গত বুধবার নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের সর্বসম্মতিতে এই সিদ্ধান্ত হয়। ইরাকের রাজনৈতিক অগ্রগতির স্বীকৃতি হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ১৫ সদস্যবিশিষ্ট জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ একটি প্রস্তাবে পরমাণু, রাসায়নিক ও জীবাণু বোমা তৈরির কর্মসূচি থেকে ইরাককে বিরত রাখাসংক্রান্ত একটি নিষেধাজ্ঞা বাতিল করেছে। এর ফলে দেশটির বেসামরিক পরমাণু কর্মসূচি গ্রহণের পথ উন্মুক্ত হলো। সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন গণবিধ্বংসী অস্ত্র তৈরি করছেন—এই অজুহাত তুলে ২০০৩ সালে ইরাকে আগ্রাসন চালায় যুক্তরাষ্ট্র। যদিও ইরাক থেকে সেই ধরনের কোনো অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি মার্কিন বাহিনী। এর আগে ১৯৯১ সালে ইরাক প্রতিবেশী রাষ্ট্র কুয়েত দখল করে নিলে দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে নিরাপত্তা পরিষদ। সাদ্দামের পতনের পর ২০০৩ সালে অবশ্য বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও গতানুগতিক কিছু অস্ত্রসংক্রান্ত কিছু নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়।
নিরাপত্তা পরিষদের অপর একটি প্রস্তাবের মাধ্যমে ইরাকের খাদ্য কেনার জন্য তেলের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় সাদ্দাম হোসেন ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত খাদ্য ও ওষুধ কেনার জন্য তেল বিক্রি করেন। এ ছাড়া এতে ইরাকের তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস সরকারের নিয়ন্ত্রণে ছেড়ে দেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তৃতীয় প্রস্তাবে ইরাকের উন্নয়ন তহবিলের মেয়াদ আরও ছয় মাসের জন্য বাড়ানো হয়েছে। দেশটির তেল ও রাজস্ব বিভিন্ন বিষয় পরিচালনার জন্য ২০০৩ সালে ওই তহবিল গঠন করা হয়।
খাদ্য কেনার জন্য তেল বিক্রিসংক্রান্ত প্রস্তাবের ক্ষেত্রে ফ্রান্স ভোট দানে বিরত থাকে। তবে অন্য সব প্রস্তাব সর্বসম্মতিতে পাস হয়।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এক বিবৃতিতে বলা হয়, যে পরিস্থিতিতে ইরাকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল, এখন দেশটির পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন।
জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন ও মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইরাকের গণতান্ত্রিক অগ্রগতির প্রশংসা করেন। বান কি মুন বলেন, ইরাকের ওপর থেকে সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের উদ্যোগ ইরাককেই নিতে হবে। দেশটিকে কুয়েতের সঙ্গে সীমানা নিশ্চিত করা ও যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও উদ্যোগ নিতে হবে।
বাগদাদ এখনো তার তেল বিক্রির শতকরা পাঁচ ভাগ অর্থ যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ হিসেবে কুয়েতকে দিয়ে যাচ্ছে। কুয়েত যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ইরাকের কাছ থেকে দুই হাজার ২০০ কোটি ডলার দাবি করেছে।
ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ইরাকে ভয়াবহ হামলার সংখ্যা কমে গেছে। তিনি আরও বলেন, ইরাক এখন স্থিতিশীল ও নিজের ওপর আস্থাশীল একটি জাতিতে পরিণত হচ্ছে।
ইরাকের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসায়ের জেবারি বলেন, ইরাকের নতুন সরকার কুয়েতের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করাকে গুরুত্ব দেবে। তিনি বলেন, ‘আগের শাসনামলে যুদ্ধ ও অবিশ্বাসের কারণে ইরাকের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল তা থেকে আমরা বেরিয়ে আসব।’ বিবিসি, এএফপি, এপি অনলাইন।

বিয়ের বয়স পিছিয়ে যাচ্ছে মার্কিনদের

র্থনৈতিক মন্দা ও বেকারত্বের হার বৃদ্ধির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের পারিবারিক ঐতিহ্য ভেঙে পড়েছে। দেশটির তরুণ-তরুণীরা আগে যে বয়সে বিয়ে করে মা-বাবাকে ছেড়ে আলাদা সংসার করত, সেই বয়স পিছিয়ে যাচ্ছে। এমনকি বেকার হয়ে যাওয়া অনেক তরুণ-তরুণী আবার মা-বাবার কাছে ফিরতে শুরু করেছে।

নতুন একটি গবেষণায় এসব তথ্য জানা গেছে। ন্যাশনাল সেন্টার ফর চিলড্রেন ইন পোভার্টি নামের একটি প্রতিষ্ঠান এ গবেষণা চালিয়েছে। এতে দেখা গেছে, আর্থিক সংকটের কারণে অনেক তরুণ-তরুণী আবার মা-বাবার কাছে ফিরে এসেছে। গত বছর ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী ৫২ দশমিক ৮ শতাংশ মার্কিন তরুণ-তরুণী মা-বাবার সংসারে ফিরে এসেছে, যা বিগত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। ১৯৭০ সালে এই হার ছিল ৪৭ দশমিক ৩ শতাংশ।
গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ গবেষক ভ্যানেসা উইট বলেন, ‘চাকরির বাজারে অস্থিরতা চলার কারণে তরুণ-তরুণীরা স্কুল ও শিক্ষামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। তারা সেখান থেকে উপার্জন করছে।’ তিনি বলেন, আর যেসব তরুণ-তরুণী স্বাবলম্বী হতে পারছে না, তারা মা-বাবার সঙ্গে থাকছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি সাতজনের মধ্যে একজন তরুণ অথবা তরুণী প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছে না। এই পর্যায়ে পৌঁছাতে তাদের বিগত দশকগুলোর তুলনায় অনেক বিলম্ব হচ্ছে। আগে তরুণ-তরুণীদের প্রাপ্তবয়স্ক মানেই ছিল বিয়ে করে মা-বাবার ঘর ছেড়ে আলাদা হওয়া।
যুক্তরাষ্ট্রের পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ থেকে তথ্য নিয়ে এ গবেষণা করা হয়েছে। এতে আরও দেখা গেছে, তরুণ-তরুণীরা বিয়ে করে সংসারজীবন শুরু করতে দেরি করছে। ১৯৭০-এর দশকের তুলনায় এই হার ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৭০-এর দশকে মার্কিন তরুণীদের প্রথম বিয়ের ক্ষেত্রে গড় বয়স ছিল ২০ বছর এক মাস। পক্ষান্তরে তরুণদের জন্য ছিল ২৩ বছর দুই মাস। অথচ ২০০৯ সালে এই বয়স দাঁড়িয়েছে তরুণীদের জন্য ২৫ বছর নয় মাস ও তরুণদের জন্য ২৮ বছর এক মাস।
নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভ্যানেসা উইট বলেন, সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করলে এ অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব। তিনি বলেন, ‘যথোপযুক্ত সময়ে তরুণ-তরুণীদের বিয়ের ব্যাপারে আমাদের মনোযোগী হতে হবে। আর যারা এরই মধ্যে সংসার সাজাতে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের ব্যাপারেও মনোযোগী হতে হবে।’ রয়টার্স।

অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার ঘোষণা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও দেশটির ব্যবসায়ী নেতারা অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন। গত বুধবার ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্ট ওবামার সঙ্গে ব্যবসায়ী নেতাদের এক বৈঠকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী রুদ্ধদ্বার এই বৈঠকে প্রেসিডেন্ট ওবামা ও ব্যবসায়ী নেতারা একমত হয়েছেন যে প্রত্যাশা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক গতি সঞ্চারিত হচ্ছে না। বড় বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের অলস অর্থ নতুন বিনিয়োগে ব্যবহূত হচ্ছে না। তাঁরা বলেন, প্রায় ১০ শতাংশ জনগোষ্ঠী এখনো কর্মহীন। বড় বড় প্রতিষ্ঠান ব্যাপকভাবে কর্মী নিয়োগে উদ্যোগ গ্রহণ করছে না।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের পর বারাক ওবামার সঙ্গে মার্কিন ব্যবসায়ীদের সম্পর্ক শীতল হয়ে ওঠে। ওবামার একাধিক সংস্কার উদ্যোগ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে নানামুখী প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায়। বিশেষ করে সর্বজনীন স্বাস্থ্যবিমা সংস্কার নিয়ে বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষুব্ধ। এ জন্য গত মধ্যবর্তী নির্বাচনে বড় ব্যবসায়ীদের উল্লেখযোগ্য একটা অংশ রিপাবলিকানদের সমর্থনে প্রকাশ্যে অর্থ ব্যয় করেছে। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গুগল, জেনারেল ইলেকট্রিক, আমেরিকান এক্সপ্রেস ও উড়োজাহাজ সংস্থা বোয়িংয়ের নির্বাহী প্রধানেরা।
বৈঠক শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেন, ‘ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি সম্ভব হবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।’ বোয়িংয়ের নির্বাহী প্রধান জিম ম্যাকনারনি বলেন, ‘সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আমরা মতৈক্যে পৌঁছেছি।’
প্রেসিডেন্ট ওবামা ইতিমধ্যে উচ্চ আয়ের লোকজনের জন্য কর রেয়াতের মেয়াদ বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছেন। এ নিয়ে নিজ দল ও উদারনৈতিক মহলের তীব্র সমালোচনায় পড়েছেন। রিপাবলিকান দলের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে উচ্চ আয়ের লোকজনের জন্য কর রেয়াতের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। কর রেয়াতের মেয়াদ বৃদ্ধির এ রাজনৈতিক সমঝোতাটি ব্যবসায়ী নেতাদের স্বার্থের অনুকূলে। ব্যবসায়ী নেতারা কর রেয়াতের মেয়াদ বৃদ্ধির উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন।
বড় বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের অলস অর্থের বিনিয়োগ, অধিদপ্তর কর্মী নিয়োগ ও রপ্তানি বৃদ্ধিসহ অর্থনৈতিক জরুরি বিষয় নিয়ে ব্যবসায়ীদের উদ্যোগ কামনা করেছেন প্রেসিডেন্ট ওবামা। বৈঠক শেষে মটোরোলা কোম্পানির নির্বাহী প্রধান গ্র্যাগ ব্রাউন বলেন, ‘বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও রপ্তানি বৃদ্ধিসহ অর্থনীতিতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করাই আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য।’

অশ্রুর বদলে ঝরছে রক্ত

ন্য দশজনের মতোই সাধারণ মানুষ তাঁরা। ব্যতিক্রম শুধু কান্নায়। চোখ থেকে তাঁদের নোনা অশ্রু ঝরে না, ঝরে রক্ত। চিকিৎসকেরা অনেক চেষ্টা করেও এর কারণ খুঁজে পাননি।

অশ্রুর বদলে রক্ত ঝরা হাতে গোনা কয়েকজনের একজন ক্যালভিন ইনম্যান। ১৭ বছর বয়সী এই তরুণের বাড়ি যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি অঙ্গরাজ্যের নক্সভিলে। যখন তখন তাঁর চোখ থেকে অশ্রুর মতো রক্তের ধারা নামে। মাঝে মধ্যে চোখের সঙ্গে নাক থেকেও রক্ত ঝরে। রক্ত ঝরার স্থায়িত্ব কখনো বা এক ঘণ্টায়ও গড়ায়। ব্যাপারটি কখনো তিনি টের পান, কখনো পান না। যখন টের পান না, তখন আশপাশের লোকজনের ছানাবড়া দৃষ্টি এ ব্যাপারে তাঁকে সচেতন করে। শুরুতে চিকিৎসকেরা ভেবেছিলেন, তাঁর বংশানুক্রমিক কোনো ত্রুটি আছে বা শরীরে কোথাও টিউমার দেখা দিয়েছে, যা এই রক্ত ঝরার নেপথ্য কারণ। কিন্তু ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েও এ ব্যাপারে তাঁরা নিশ্চিত হতে পারেননি। তবে কারণ অনুসন্ধানে এখনো চেষ্টা চলছে তাঁদের।
ইনম্যান বলেন, ‘আমার চোখ থেকে রক্ত ঝরা দেখে লোকজন ভাবে আমাকে ভূতে ধরেছে। বাড়িতে ও স্কুলে যখনই রক্ত ঝরে, ব্যাপারটি সাধারণত আমি টের পাই না। মাঝে মধ্যে অবশ্য চোখ জ্বালা করে। তখন টের পাই। রক্ত ঝরা শেষ হলে আমার মাথার বাঁ-পাশে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হয়। মনে হয়ে কেউ যেন সেখানে হাতুড়ি মারছে। রাতে ঘুমাতে পারি না। কয়েকটি ঘণ্টা স্রেফ আলো নিভিয়ে পড়ে থাকি।’
ইনম্যানের উদ্বিগ্ন মা টেমি মাইন্যাট বলেন, ‘নিউইয়র্ক, মেমফিস ও আটলান্টা পর্যন্ত প্রায় ১৫ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে ছেলেকে নিয়ে গেছি। কিন্তু লাভ হয়নি। মনে হচ্ছে, এই সমস্যার কোনো সমাধান নেই তাঁদের কাছে।’
মেমফিসের হ্যামিলটন আই ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ জন ফ্লেমিং বলেন, ‘চোখে সংক্রমণজনিত কারণ বা শরীরে কোথাও টিউমার হলে এভাবে রক্তক্ষরণ হতে পারে। এমন কয়েকজনকে আমরা পেয়েছি। কয়েক মাস বা কয়েক বছর ধরে এভাবে চোখ থেকে রক্ত ঝরে আপনাআপনি বন্ধ হয়ে গেছে।’ ডেইলি মেইল অনলাইন।

ভারত ও চীনের এক হাজার ৬০০ কোটি ডলারের বাণিজ্য চুক্তি

ক হাজার ৬০০ কোটি ডলারের বাণিজ্যচুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে ভারত ও চীন সহযোগিতামূলক সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন জিয়াবাও প্রায় ৪০০ ব্যবসায়ী প্রতিনিধি নিয়ে গত বুধবার তিন দিনের ভারত সফরে আসার পর ওই দিনই প্রায় ৫০টি বাণিজ্য চুক্তি হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার জিয়াবাও ও মনমোহন বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে পারস্পরিক উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। পারস্পরিক অবিশ্বাসের সম্পর্কের মধ্যেই বাণিজ্য সহযোগিতা আরও বাড়াতে জিয়াবাও ভারত সফরে এসেছেন। এর মাধ্যমে পারস্পরিক অবিশ্বাস কমানো তাঁর প্রধান লক্ষ্য বলে মনে করা হচ্ছে। বুধবার সন্ধ্যায় জ্বালানি, টেলিযোগাযোগ, ইস্পাত, বায়ুশক্তি, নৌসংক্রান্ত যন্ত্রপাতি ও খাদ্যসহ বিভিন্ন খাতে দুই দেশের কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রায় এক হাজার ৬০০ কোটি ডলারের ৫০টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
বুধবার দিল্লিতে পৌঁছে জিয়াবাও বলেন, ভারত ও চীন পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। তারা একে অপরের সহযোগী।
এ মন্তব্যের মধ্য দিয়ে জিয়াবাও দুই দেশের মধ্যে বিরাজমান অবিশ্বাস দূর করার উদ্যোগ নিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
মনমোহন ও জিয়াবাওয়ের বৈঠক শেষে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, চীন ও ভারতের সামনে উন্নয়নের যথেষ্ট সুযোগ আছে। পরস্পরকে সহযোগিতা করার মতো বহু ক্ষেত্রও তাদের সামনে খোলা রয়েছে। বৈঠকে বিশ্ববাণিজ্য, বৈশ্বিক উষ্ণতা, দুই দেশের সীমান্ত সমস্যা, তিব্বতের আধ্যাত্মিক নেতা দালাই লামার ভারতে অবস্থান এবং পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কসহ বেশ কিছু সংবেদনশীল বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজি এবং ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন যে আড়ম্বরতা নিয়ে ভারত সফরে এসেছিলেন, জিয়াবাওয়ের সফর তাঁদের সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। ওবামার সঙ্গে ২১৫, সারকোজির সঙ্গে ৬০ এবং ক্যামেরনের সঙ্গে ৪০ জন ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ছিলেন। ওবামা এসে এক হাজার কোটি ডলারের চুক্তি করেছিলেন। তাঁদের সবাইকে পেছনে ফেলে জিয়াবাও ৪০০ ব্যবসায়ীর বিশাল দল নিয়ে দেড় হাজার কোটি ডলারের বেশি অর্থের চুক্তি করেছেন। এশিয়ায় চীনের প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে জিয়াবাওয়ের এ সফর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত পাঁচ বছরের মধ্যে কোনো চীনা প্রধানমন্ত্রীর এটাই প্রথম ভারত সফর। জিয়াবাও গতকাল কংগ্রেস পার্টি প্রধান সোনিয়া গান্ধী ও ভারতীয় পররাষ্টমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণার সঙ্গেও বৈঠক করেন। আজ শুক্রবার জিয়াবাওয়ের দুই দিনের সফরে পাকিস্তান যাওয়ার কথা রয়েছে। বিবিসি অনলাইন।

পদ্মা সেতু: তদারক কমিটি গঠনের পরামর্শ বিশ্বব্যাংকের

প্রস্তাবিত পদ্মা সেতু নির্মাণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে স্বাধীন তদারকি কমিটি গঠনের পরামর্শ দিয়েছে দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক। এ কমিটি গঠন করা হলে সেতুর কাজ দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করা সম্ভব বলে মনে করে সংস্থাটি।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ্বব্যাংক কার্যালয়ে ‘পদ্মা সেতুর অর্থায়ন ও কাজের গুণাগুণ’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির বাংলাদেশ প্রধান অ্যালেন গোল্ডস্টেইন ওই পরামর্শ দেন। সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য দেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব আরস্তু খান ও বিশ্বব্যাংকের পানিসম্পদবিষয়ক বিশেষজ্ঞ মাসুদ আহমেদ।
সংবাদ সম্মেলনে গোল্ডস্টেইন বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের সামগ্রিক কেনাকাটাসহ অন্য সব কাজের তদারক করতে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে তৃতীয় পক্ষ থেকে একটি স্বাধীন তদারকি কমিটি গঠন করা যেতে পারে। এ ছাড়া পদ্মা সেতু নিয়ে সরকার ও দাতা সংস্থাগুলোর কাজ এবং পদ্মা সেতুর কাজের অগ্রগতিসংক্রান্ত তথ্যাদি জনগণকে জানাতে দেশের গণমাধ্যমে প্রচারসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা উচিত। স্বাধীন কমিটি করা হলে তাতে কাজের প্রতি জবাবদিহিতা ও অগ্রগতি বাড়বে।
সেতু নির্মাণ নিয়ে সরকারের প্রতি অনাস্থা থেকে এ পরামর্শ কি নাÑসাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে গোল্ডস্টেইন বলেন, সরকারের প্রতি আমাদের অনেক বেশি আস্থা আছে। তবে এ ধরনের বড় ও জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের প্রতি জনসাধারণের আগ্রহ থাকে বেশি। তাই বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে এ ধরনের পরামর্শ। পদ্মা সেতু নির্মাণে যে ব্যয় ধরা হয়েছে, এর মধ্যে ১২ হাজার কোটি টাকা দেবে বিশ্বব্যাংক। আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বিশ্বব্যাংকের বোর্ড সভায় এ প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হবে। বিশ্বব্যাংকের এ ঋণের টাকা ৪০ বছরে দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে পরিশোধ করতে হবে। এর বাইরে আরও ১০ বছর অতিরিক্ত সময় দেওয়া হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে এক হাজার ১২৫ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করা হবে ১২ কিলোমিটার। ২০১৩ সালে এ সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রকল্প শুরুর সময়ে যে ধরনের ব্যয় ধরা হয়েছিল, ব্যয় এর চেয়ে অনেক বেশি বেড়েছে। বাড়তি এ ব্যয়ের বড় একটি অংশ পরামর্শকদের পেছনে ব্যয় করা হচ্ছে কি নাÑসাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে গোল্ডস্টেইন বলেন, শুধু বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ফি-ই নয়, মূল সেতুর দৈর্ঘ্য বাড়ানো, দ্বিতল সেতু নির্মাণ ও ভূমির মূল্য বৃদ্ধিসহ সব ধরনের খরচ বাড়াতে পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় বাড়ছে। প্রথমে যখন নকশা করা হয় তখন এ ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। তবে গত ১০ জানুয়ারির হিসাব অনুযায়ী এর ব্যয় দাঁড়াবে ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
পদ্মা সেতু নির্মাণের অর্থের ১২ হাজার কোটি টাকা দেবে বিশ্বব্যাংক, চার হাজার কোটি টাকা দেবে জাপান, এক হাজার চার কোটি টাকা দেবে ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক দেবে ছয় হজার ১৫ কোটি টাকা।
১২ হাজার কোটি টাকা প্রকল্প সাহায্য এ যাবৎকালে বাংলাদেশের জন্য বিশ্বব্যাংকের সর্ববৃহৎ প্রকল্প বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। সাংবাদিকদের আরো বলা হয়, সেতুটির নির্মাণ শেষ হলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এতে জিডিপির প্রবৃদ্ধিও বাড়বে।

আওয়ামী এমপির গাড়িবহরে অস্ত্র: যশোরে তোলপাড়

শোরের শার্শায় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিনের ‘গাড়িবহরে’ থাকা একটি প্রাইভেট কার থেকে অবৈধ অস্ত্র, গুলি, টাকাসহ আটক যুবলীগের পাঁচ নেতা-কর্মীকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার আদালতে নেওয়া হলে আদালত তাদের জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

গত বুধবার র‌্যাব প্রাইভেট কারটি তল্লাশি করে একটি নাইন এমএম পিস্তল, একটি শাটারগান, নির্বাচনী পোস্টার ও এক লাখ
৭২ হাজার টাকা উদ্ধার করে। আটক করা হয় শার্শা উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন, কর্মী বাবলু রহমান, রুহুল আমিন, জাকির হোসেন ও সাইফুল ইসলাম। এর আগে চৌগাছা থেকে মঙ্গলবার রাতে একটি নাইন এমএম পিস্তলসহ আটক করা হয় আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী সাইফুর রহমান বাবুলের চাচাতো ভাই রুবেল ও তার সঙ্গী রায়হানকে। তারা দুজনই স্থানীয় ছাত্রলীগের কর্মী।
পৌরসভা নির্বাচনের আগে অস্ত্র ও গুলিসহ ক্ষমতাসীন দলের যুব ও ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মী আটকের ঘটনায় যশোরে তোলপাড় শুরু হয়েছে। নির্বাচনী এলাকাগুলোতে আতঙ্কও দেখা দিয়েছে। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাবেরুল হক সাবু অভিযোগ করেন, ‘আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী আশরাফুল আলম লিটনের পক্ষে সন্ত্রাস সৃষ্টি এবং টাকা দিয়ে ভোট কেনার জন্য আটক যুবলীগ নেতা-কর্মীরা বেনাপোলে যাচ্ছিল। নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য অস্ত্রসহ যুবলীগ নেতাকে আটকের ঘটনায় আমরা প্রশাসনকে স্বাগত জানাচ্ছি।’
র‌্যাব-৬-এর যশোর ক্যাম্প ইনচার্জ লে. কমান্ডার নূর মোহাম্মদ তারিক আজিজ জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দুপুর আড়াইটার দিকে শার্শা বাজার এলাকা থেকে কারসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে একটি নাইন এমএম পিস্তল, একটি শাটারগান, নাইন এমএম পিস্তলের চারটি গুলি, একটি ম্যাগাজিন ও টাকা উদ্ধার করা হয়। এরপর আটককৃতদের যশোর র‌্যাব ক্যাম্পে আনা হয়। রাতেই তাদের শার্শা থানায় সোপর্দ করা হয়।
শার্শা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল আজিজ বলেন, আটককৃতদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে একটি মামলা হয়েছে। পুলিশ ঘটনাটির তদন্তে নেমেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শার্শার এমপি শেখ আফিল উদ্দিনের গাড়িবহরের শেষে সোহরাবের গাড়িটি ছিল। তারা পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে বেনাপোলে যাচ্ছিল। ওই গাড়ি থেকেই র‌্যাব অস্ত্র, টাকা ও নির্বাচনী পোস্টারসহ যুবলীগ নেতা-কর্মীদের আটক করে। তবে সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, ‘আমার কোনো গাড়িবহর ছিল না।’
ঘটনা সম্পর্কে যশোর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম রেন্টু চাকলাদার বলেন, ‘সোহরাব হোসেন শার্শা থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। অস্ত্রসহ তার আটকের কথা আমরা শুনেছি। বিষয়টি সত্য হলে তার বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
র‌্যাব আরো জানায়, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে চৌগাছা সোনালী ব্যাংকের কাছ থেকে রুবেল ও রায়হানের দেহ তল্লাশি করে একটি নাইন এমএম পিস্তল পাওয়া যায়। এ ঘটনায় তাদের আটক করা হয়। এ ব্যাপারে চৌগাছা থানায় অস্ত্র আইনে মামলা হয়েছে।
আটককৃত রুবেলের চাচা উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম হাবিব বলেন, ‘ঘটনাটি সাজানো নাটক।’

দ্রুততম সময়ে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দিতে চায় ভুটান

বাংলাদেশকে সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে বিদ্যুৎ দেওয়ার চেষ্টা করবে ভুটান। তবে এর জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় আলোচনা প্রয়োজন। পাশাপাশি ভুটান এ দেশের চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করতে আগ্রহী। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় সোনারগাঁও হোটেলের সুরমা হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লিয়ন চোয়েন জিগমে ওয়াই থিনলে এসব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লিয়ন চোয়েন জিগমে ওয়াই থিনলে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভয়াবহ বিদ্যুৎ ঘাটতির কথা ভুটান সরকার জানে। ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকেও এ ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। ভুটান বাংলাদেশকে এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। ভুটানে এখন চাহিদার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ রয়েছে এবং ২০২০ সালের মধ্যে আরো ১০ টি বড় বিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ হচ্ছে। তবে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দিতে হলে ভারতকে সঙ্গে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় আলোচনার প্রয়োজন। ভুটান সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দেওয়ার চেষ্টা করবে বলে তিনি জানান।
চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দর এবং আঞ্চলিক যোগাযোগ বিষয়ে তিনি বলেন, এ অঞ্চলের যোগাযোগ সন্তোষজনক নয়। এ বিষয়ে আরো সহযোগিতা প্রয়োজন। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করে ভুটান লাভবান হতে চায়। বন্দর দুটির ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করতে শিগগিরই ভুটান থেকে এ দেশে প্রতিনিধি পাঠানো হবে বলে তিনি জানান।
বাণিজ্য সহযোগিতা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী জিগমে বলেন, ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বাণিজ্য বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বর্তমানে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিধি ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বাড়িয়ে ১০০ মিলিয়নে উন্নীত করার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।
সার্কের চেয়ারপারসন হিসেবে তাঁর চলতি মেয়াদে আঞ্চলিক এ সংস্থার অগ্রগতি প্রসঙ্গে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী জানান, তিনি সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর সম্মেলনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের দুই শতাধিক বৈঠক হয়েছে। এসব বৈঠকের মাধ্যমে সার্ককে আরো গতিশীল করার প্রয়াস চলছে। একই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সার্ক ঘোষণায় এসেছে। তিনি বলেন, জলবায়ু সমস্যা শুধু হিমালয় অববাহিকায় নয়, এর বিস্তার এখন উপকূল পর্যন্ত। এ অঞ্চল সার্কের মাধ্যমে মেক্সিকোর কানকুন জলবায়ু সম্মেলনে অভিন্ন অবস্থান নিতে সক্ষম হয়েছে।
বাংলাদেশের সঙ্গে স্বাক্ষরিত দুটি সমঝোতা স্মারক প্রসঙ্গে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভুটান সরকার বাংলাদেশ থেকে দক্ষ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিতে আগ্রহী। স্বাস্থ্য খাতে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক বাংলাদেশ থেকে ভুটানে চিকিৎসক নিয়োগের সুযোগ করে দেবে। অন্যদিকে সংস্কৃতি বিনিময়বিষয়ক সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে আগামী বছরগুলোতে আরো বেশি ভুটানি শিক্ষার্থী বাংলাদেশে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাবে বলে তিনি আশা করেন।
এ ছাড়া সংগীত, চলচিত্র, গ্রন্থ ও সাংবাদিকদের সফর বিনিময়ের সুযোগ থাকবে এ স্মারকের মাধ্যমে, যা দুই দেশের সম্পর্ক আরো জোরদার করবে বলে মনে করেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী জিগমে। তিনি গণমাধ্যমকে ভুটানের চতুর্থ স্তম্ভ উল্লেখ করে বলেন, অন্য তিন স্তম্ভের মতো গণমাধ্যমকেও নিরপেক্ষ হতে হবে এবং কেবল আর্থিক লাভের দিকে না ঝুঁকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করার মানসিকতা থাকতে হবে।
ভুটানের ‘গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস’ নীতি সম্পর্কে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী জিগমে বলেন, বিশ্ব পুঁজিবাদের দিকে ঝুঁকলেও এর অগ্রগতি স্থায়ী নয়। এ ক্ষেত্রে ভুটান সরকারের নীতি হলো মানুষের শরীর ও মন উভয়ের প্রশান্তি অর্জন। আর এ দুইয়ের সমন্বয়েই স্থায়ী সমৃদ্ধি অর্জন সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
উল্লেখ্য, পাঁচ দিনের সফর শেষে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী আজ শুক্রবার সকালে দেশে ফিরে যাবেন। বাংলাদেশে তাঁর এ সফরকে অত্যন্ত সফল ও ফলপ্রসূ আখ্যায়িত করে সংবাদ সম্মেলন শেষে তিনি দাঁড়িয়ে বলেন, আরো জোরালো বন্ধুত্বের বার্তা নিয়ে তিনি দেশে ফিরছেন। আবারও এ দেশে তিনি আসতে চান।

বিশ্বের কয়েকটি দেশে বন্যা ব্রাজিলে নিহত ৩৫৬, ফিলিপাইনে ৪২

বিশ্বের কয়েকটি দেশে বন্যা এবং এতে মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতি প্রকট আকার নিয়েছে। ব্রাজিলের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে অন্তত ৩৫৬ জন মারা গেছে। ফিলিপাইনে মারা গেছে ৪২ জন। গৃহহীন হয়েছে চার লাখ মানুষ। শ্রীলঙ্কায় মারা গেছে অন্তত ২১ জন। বাস্তুচ্যুত হয়েছে ১০ লাখের বেশি। আর অস্ট্রেলিয়ায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে।

ব্রাজিল : কর্মকর্তারা জানান, রিও ডি জেনিরিও প্রদেশের পাহাড়ি এলাকাগুলোতে কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যা ও ভূমিধস হয়েছে। টেরেসোপোলিস শহরে ভূমিধসে অন্তত ১৪৬ জন মারা গেছে। নোভো ফ্রিবার্গো শহরে মারা গেছে ১৫৫ জন। তাদের মধ্যে অন্তত তিনজন অগি্ননির্বাপণকর্মী। পেট্রপোলিস শহরে ৩৪ জন মারা গেছে। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। টেরেসোপোলিসে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। টেরেসোপোলিসের পার্শ্ববর্তী নদীর পানি উপচে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। টেরেসোপোলিসের মেয়র জর্জ মারিও সেডল্যাসেক বলেন, 'এটা মহাবিপর্যয়, বড় দুর্যোগ।' ব্রাজিলের টেলিভিশনগুলোর ফুটেজে দেখা যায়, বন্যার পানির তোড়ে বাড়িঘর এবং রাস্তায় থাকা গাড়ি ভেসে যাচ্ছে।
টেরেসোপোলিসের বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা গতকাল জানান, তাঁরা ২৪ ঘণ্টায় ১৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছেন। এটি পুরো জানুয়ারির স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের চেয়ে অনেক বেশি। দুর্গত তিনটি শহরেই বিদুৎ ও টেলিফোন লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দেখা দিয়েছে ট্রাফিক বিশৃঙ্খলা। টেরেসোপোলিসের এক ব্যক্তি বলেন, 'আমি এখানে ২৫ বছর ধরে বাস করছি। কিন্তু এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি কখনো হইনি।'
কর্মকর্তারা জানান, দুর্গত এলাকায় পানিবাহিত রোগ-বালাই ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আট শতাধিক উদ্ধারকর্মী দুর্গত এলাকায় তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। ব্রাজিলের সদ্য দায়িত্ব নেওয়া প্রেসিডেন্ট দিউমা হুসেফের গতকাল দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে যাওয়ার কথা।
ফিলিপাইন : মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে ৪২ জন নিহত হয়েছে। গৃহহীন হয়েছে চার লাখ মানুষ। দুর্যোগ মোকাবিলা বিভাগের কর্মকর্তারা গতকাল জানান, অবকাঠামো ও শস্যের ক্ষতি হয়েছে দুই কোটি ৩০ লাখ ডলার অর্থের বেশি। বিভাগের প্রধান বেনিতো রামোস বলেন, 'ডিসেম্বরের শেষদিকে প্রবল বৃষ্টিপাত শুরু হয়। সে থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় চার লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এ ছাড়া উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান চাল ও অন্যান্য শস্য উৎপাদক অঞ্চল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেনারা হেলিকপ্টারে করে দুর্গত অঞ্চলে ত্রাণ সরবরাহ করছেন। নিহতদের অধিকাংশই বন্যার পানিতে ডুবে অথবা মাটির নিচে চাপা পড়ে মারা গেছে।'
রামোস জানান, ৮০টি প্রদেশের অধিকাংশই টানা বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আজ শুক্রবার প্রেসিডেন্ট বেনিনো অ্যাকুইনো মধ্যাঞ্চলের বন্যাদুর্গত বেশ কিছু এলাকা পরিদর্শন করবেন।
শ্রীলঙ্কা : মধ্য ও পূর্বাঞ্চলে কয়েক দিন ধরে চলা বন্যায় অন্তত ২১ জন মারা গেছে। দেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রের (ডিএমসি) এক মুখপাত্র বলেন, 'গত সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া বন্যায় ১০ লাখ ৬৬ হাজার মানুষ ঘরহারা হয়েছে। শুধু পূর্বাঞ্চলের বাত্তিকালোয়া জেলায় বাস্তুচ্যুত হয়েছে পাঁচ লাখ ৩৩ হাজার মানুষ। গৃহহীনদের জন্য ২২৫টি আশ্রয় শিবির খোলা হয়েছে। এতে আড়াই লাখের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। বাকিদেরও আশ্রয় দেওয়ার চেষ্টা চলছে।'
অস্ট্রেলিয়া : আবহাওয়াবিদরা অস্ট্রেলিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে একটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পূর্বাভাস দেওয়ায় তৃতীয় বৃহত্তম শহর ব্রিসবেনে নতুন করে বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যেই শহরটিতে বন্যার পানি সর্বোচ্চ বিপৎসীমায় পেঁৗছে গেছে। কর্মকর্তারা জানান, ব্রিসবেন নদীর তীর উপচে গতকাল পর্যন্ত ৩৫টি শহরতলির ১২ হাজার বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে এবং এক লাখ ১৮ হাজার ভবনে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ব্রিসবেনের অধিকাংশ এলাকার রাস্তাগুলোয় এখন নৌকা চলছে। শহর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুড়ছেন হাজার হাজার মানুষ।
সূত্র : বিবিসি ও এএফপি।

দলীয় কোন্দলে ক্ষুব্ধ হাসিনা by পার্থ প্রতীম ভট্টাচার্য্য

রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপর্যয়ে ক্ষুব্ধ দলের সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে এ ধরনের ফলাফল এড়ানোর জন্য ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের পৌর নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের এখনই নিষ্ক্রিয় করতে এবং দল ঘোষিত প্রার্থীদের পক্ষে তাঁদের সমর্থন আদায়ে সব রকমের ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

গত বুধবার অনুষ্ঠিত দুই বিভাগের ৭২ পৌরসভায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জন না করায় এবং পরবর্তী নির্বাচনে পরাজয়ের আশঙ্কা থেকেই দলের হাইকমান্ড বিদ্রোহী প্রার্থীদের দমনে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন বলে দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার এবং দল ঘোষিত প্রার্থীদের পক্ষে সমর্থন আনতে ব্যর্থ হওয়ায় বুধবার অনুষ্ঠিত দুই বিভাগের পৌরসভা নির্বাচনে প্রত্যাশিত ফল আসেনি বলে মনে করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
পাশাপাশি দল ঘোষিত প্রার্থীদের পক্ষে স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রীদের সমর্থন না থাকাকেও পরাজয়ের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ নেতারা।
জানা গেছে, গত বুধবারের দুটি বিভাগের পৌরসভা নির্বাচনের ফলাফলে অখুশি শেখ হাসিনা গতকাল বৃহস্পতিবার গণভবনে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহর সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন এবং নির্বাচনের ফলাফলে তাঁর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি সাধারণ সম্পাদককে নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়া বাকি বিভাগের পৌরসভা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের নির্বাচনের মাঠ থেকে সরানোর জন্য সব রকমের ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।
সূত্র জানায়, বৈঠকে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা যেসব পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জয়ী হয়েছেন, তাঁদেরকে দলে ফিরিয়ে নেওয়া হবে না এবং বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার কারণে যাঁদেরকে দল থেকে ইতিমধ্যে বহিষ্কার করা হয়েছে, তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হবে না বলেও তাঁর অবস্থান জানিয়ে দিয়েছেন।
বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছেন, বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে যেসব মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নেতারা সংশ্লিষ্ট, তাঁদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে দল। এ ছাড়া কোনো বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে যদি সেই জেলার নেতারা জড়িত থাকেন, সে ক্ষেত্রে জেলা কমিটি বাতিলেরও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে, সারা দেশের পৌরসভা নির্বাচন শেষ হলে নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ চিহ্নিত করে বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকদের কাছে এ ব্যাপারে রিপোর্ট চাওয়া হবে।
পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির সমঝোতা হয় এবং কেন্দ্রীয়ভাবে একক প্রার্থী ঘোষণা করে দলটি। সে সময় ঘোষণা দেওয়া হয়, দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে বিদ্রোহী প্রার্থী হলে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে এবং কিছু কিছু জায়গায় বহিষ্কারের ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু এত কিছুর পরও দলটি বিদ্রোহী প্রার্থীদের নির্বাচনের মাঠ থেকে সরাতে পারেনি।
এ ছাড়া গতকাল সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকেও শেখ হাসিনা দলের পরাজয়ের জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদের দায়ী করেছেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। তবে বরিশাল বিভাগের পৌর নির্বাচনের ফলাফলে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি।
বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরই দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের পক্ষ থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের পৌর নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের নির্বাচনের মাঠে নিষ্ক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফের বাসায় কেন্দ্রীয় নেতাদের বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষাবলম্বন করায় এরই মধ্যে কয়েক জায়গায় বহিষ্কার এবং শোকজের ঘটনাও ঘটেছে। কক্সবাজার পৌরসভায় বিদ্রোহী প্রার্থীকে বহিষ্কার এবং নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোহাম্মদুল্লাহ এবং সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীকে শোকজ করা হয়েছে বলে দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে।
প্রথম দিনের নির্বাচনের ফলাফলের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রায় সব পৌরসভায় আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী ছিলেন। মূলত এ কারণে দল প্রত্যাশিত ফল পায়নি। পাশাপাশি দল ঘোষিত প্রার্থীদের ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রীরা অনেক ক্ষেত্রে একমত হতে পারেননি। তাঁরা দল সমর্থিত প্রার্থীকে সহযোগিতা করলে প্রত্যাশিত ফল পাওয়া সম্ভব হতো বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে দল পৌর নির্বাচনে কাক্সিক্ষত ফল পায়নি। তিনি বলেন, ‘দলীয়ভাবে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করা হলেও প্রায় প্রতিটি পৌরসভায়ই বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। আমরা বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিষ্ক্রিয় করতে এবং তাঁদের সমর্থন দল ঘোষিত প্রার্থীর পক্ষে আনতে পারিনি।’
উল্লেখ্য, রংপুর বিভাগে মোট ২২টি পৌরসভা নির্বাচনে শুধু দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জ ছাড়া সব পৌরসভায়ই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন।

চাল-ডালসহ পাঁচ পণ্যের মজুদ বাড়াবে সরকার

বাজারের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পাঁচটি পণ্যের মজুদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে প্রয়োজনীয় চাল ও গম আমদানি করবে সরকার।

এ ছাড়া টিসিবির মাধ্যমে ভোজ্য তেল, চিনি, ডাল ও ছোলা আমদানি করা হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জরুরি সমন্বয় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় আশা প্রকাশ করা হয়, এ আমদানির ফলে আগামী এপ্রিল মাসে বোরো মৌসুম শুরুর সময়ও সরকারের গুদামে সাত লাখ টনের বেশি চাল ও গম মজুদ থাকবে। টিসিবি যাতে এসব পণ্য কিনতে পারে, সে জন্য সরকারের কাছে এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হবে। সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান ও খাদ্যমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাকসহ দুই মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, এ বছর সরকারের তিন লাখ টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত ছিল। বিশ্ব খাদ্য সংকটের প্রেক্ষাপটে সরকারিভাবে অতিরিক্ত ৯ লাখ টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সাড়ে ছয় লাখ টন চাল আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে। সরকার শুরুতে এ বছরের জন্য সাড়ে সাত লাখ টন গম আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এখন তা বাড়িয়ে ১০ লাখ টন করা হচ্ছে। এ ছাড়া বেসরকারি উদ্যোক্তারা গতবারের মতো এবারও প্রায় ৩০ লাখ টন গম আমদানি করবেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী আরো জানান, ভোজ্য তেলের বাজার স্বাভাবিক রাখতে টিসিবির মাধ্যমে দুই লাখ টন সয়াবিন ও পাম অয়েল আমদানি করা হবে। খাদ্য ও চিনিকল করপোরেশনের আওতাধীন চিনিকলগুলোতে এ বছর গতবারের তুলনায় উৎপাদন দ্বিগুণ হবে আশ্বাস দিয়ে মন্ত্রী বলেন, এর ফলে অভ্যন্তরীণভাবে এক লাখ টন চিনি পাওয়া যাবে। টিসিবির মাধ্যমে আরো দুই লাখ টন চিনি আমদানি করা হবে। মন্ত্রী জানান, টিসিবির গুদামে প্রায় ২৫ হাজার টন ডাল মজুদ রয়েছে। এর বাইরে আরো ১০ হাজার টন ডাল আমদানি করা হবে। এ ছাড়া আগামী রমজান মৌসুমের জন্য আগাম প্রস্তুতি হিসেবে ২০ হাজার টন ছোলা আমদানি করবে টিসিবি। এসব পণ্য খাদ্য মন্ত্রণালয়ের গুদামে রাখা হবে। পণ্য আমদানির খরচ বাবদ সরকারের কাছে এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার প্রভাব দেশের বাজারেও পড়ছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) ভবিষ্যতে খাদ্য সংকট আরো প্রকট হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকার বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। বিশ্ব খাদ্য সংকটের নেতিবাচক প্রভাব যাতে দেশের বাজারে না পড়ে, সে জন্য সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে বিদেশ থেকে খাদ্য আমদানি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
খাদ্যমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক বলেন, চাল ও গমের দাম বেশি হওয়ায় শ্রমজীবী মানুষের কষ্ট হচ্ছে। সরকার আমদানি বাড়িয়ে দাম সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে। এ ছাড়া খোলা বাজারে চাল বিক্রি (ওএমএস) ও ফেয়ার প্রাইস পদ্ধতিতে দরিদ্রদের মাঝে কম দামে চাল ও গম সরবরাহ করা হচ্ছে।
চালের দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, এ বছর ধানের উৎপাদন বেড়েছে। কিন্তু দেশের প্রকৃত জনসংখ্যার হিসাব নেই। তা ছাড়া অনেক কৃষকের ঘরে ধান ও চাল মজুদ রয়েছে। কয়েক মাস পরে দেশে চালের দাম আরো বাড়বেÑএ আশায় মিলমালিকরা ধান ও চাল মজুদ করছে। তা ছাড়া গম ও আটার দাম বাড়ার কারণে চালের ওপর বেশি চাপ পড়ছে। খাদ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ভারতের গুদামে দুই কোটি ৫৬ লাখ টন চাল মজুদ থাকার পরও দেশটির সরকার দাম কমাতে পারছে না।
সরকারের গুদামে এখন আট লাখ ২২ হাজার টন গম ও চাল মজুদ রয়েছে উল্লেখ করে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যেই আরো ছয় লাখ টন চাল ও পাঁচ লাখ টন গম দেশে এসে পৌঁছবে। আর এ সময়ে খরচ বাদ দিলেও সরকারের মজুদ থাকবে সাত লাখ ২২ হাজার টন চাল ও গম মজুদ থাকবে। আর তত দিনে বোরোর চাল বাজারে পাওয়া যাবে।
ছয় লাখ টন চাল আমদানির এলসি খোলা হয়েছে জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, আরো আড়াই লাখ টন চাল আন্তর্জাতিক টেন্ডারে সংগ্রহ করা যাবে। অবশ্য ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড ছাড়া আর কোনো দেশে চাল পাওয়া যাচ্ছে না। এসব দেশ থেকে চীন, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন প্রচুর চাল আমদানি করেছে। ভারত থেকে তিন লাখ টন চাল আমদানির আলোচনা হচ্ছে। সেখান থেকে পাওয়া না গেলেও কোনো না কোনো দেশ থেকে তা সংগ্রহ করা যাবে।
সভায় বাণিজ্যসচিব মো. গোলাম হোসেন, খাদ্যসচিব বরুণ দেব মিত্র, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ টি এম মুর্তজা রেজা চৌধুরী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডাব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক অমিতাভ চক্রবর্তী, টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সারোয়ার জাহান, খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আহমদ হোসেন খান, খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিটের মহাপরিচালক নাসের ফরিদসহ উভয় মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বিশেষ নিরাপত্তায় সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত রাখার সিদ্ধান্ত

বিশ্বকাপ ক্রিকেট চলাকালীন যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলা ও জরুরি প্রয়োজনে সেনাবাহিনীকে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ জন্য সশস্ত্র বাহিনীর কাছে সহযোগিতা চেয়ে দু-এক দিনের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেওয়া হবে।
অন্যদিকে খেলা দেখতে বিভিন্ন দেশের যে ১৩ জন রাষ্ট্রপ্রধানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, তাঁদের এবং খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের নামের তালিকা দ্রুত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও গোয়েন্দা বিভাগের কাছে পাঠাতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিশ্বকাপ ক্রিকেট-২০১১ নিরাপত্তা জাতীয় উপকমিটির বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ইকবাল খান চৌধুরীর সভাপতিত্বে সম্প্রতি এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বকাপ ক্রিকেট সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে আয়োজন করতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ২৩ সদস্যবিশিষ্ট এ নিরাপত্তা কমিটি গঠন করে। বৈঠকে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও খুলনার মেয়রকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কমিটির প্রধান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্বকাপ উপলক্ষে নিরাপত্তা সরঞ্জাম কেনার জন্য প্রায় ৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। আমরা এ মাসের মধ্যে নিরাপত্তা সরঞ্জাম কেনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি। এ ছাড়া ভিভিআইপি রোডের আশপাশে যেসব বাড়ি রয়েছে, তা রং করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইভাবে নারায়ণগঞ্জের কিছু স্থাপনায় রং করার জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানানো হয়েছে।’
জানা গেছে, বিশ্বকাপের খেলা চলার সময় ভেন্যুগুলোকে ‘নো ফ্লাই জোন’ ঘোষণা করা হয়েছে।
এ ছাড়া নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের ঢাকা সেনানিবাসের ভেতর দিয়ে যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হবে। জরুরি উদ্ধার তৎপরতার জন্য হেলিকপ্টার সহায়তা দেওয়া হবে। পুলিশকে যানবাহন ও সরঞ্জাম সহায়তা দেওয়া এবং সিএমএইচকে জরুরি চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত রাখা হবে।
জানা গেছে, পুলিশ সেনাবাহিনীর কাছ থেকে কী কী যানবাহন ও সরঞ্জাম সংগ্রহ করবে, তার একটি চাহিদাপত্র পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তালিকা পেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে পাঠাবে। এ ছাড়া বিশ্বকাপ ক্রিকেট উপলক্ষে সংগৃহীতব্য পুলিশের সব যানবাহন ও সাজসরঞ্জাম ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সংগ্রহ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী ও যানবাহন বিশ্বকাপ ক্রিকেট উপলক্ষে দায়িত্ব পালন করবে, তাদের আগাম নিরাপত্তাব্যবস্থা করতে হবে। এ বিষয়ে বিসিবি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এ ছাড়া ভেন্যুতে যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ব্যক্তি সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করবেন, তাঁদের পরিচয়পত্র দিতে হবে। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ভেন্যু ও হোটেলের অগ্নিনিরাপত্তা সম্পর্কে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স যে সুপারিশ করেছে, তা বাস্তবায়িত হয়েছে কি না, তা সরেজমিন পরিদর্শন করা হবে।
খেলা দেখতে আসা বিদেশি অতিথি ও দর্শকদের হোটেলে নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে যাতায়াত ও থাকার সুবিধার্থে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, হজরত শাহ আমানত বিমানবন্দর ও পুলিশ যেসব হোটেলের নিরাপত্তা দিয়েছে, সেসব হোটেলে অভ্যর্থনা ডেস্ক ও ট্যাক্সি সার্ভিসের কাউন্টার বসানো হবে।
প্রসঙ্গত, আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে। ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত খেলা চলবে।

ভারতে ট্রানজিট পেতে বাংলাদেশ-ভুটানের বাধা নেই

বাণিজ্য সম্প্রসারণে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে পারে বাংলাদেশ ও ভুটান। এ ক্ষেত্রে ভারতকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহারে দুই দেশের কোনো বাধা নেই। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী জিগমে ওয়াই থিনলে আজ বৃহস্পতিবার ওই মন্তব্য করেন। রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত ওই সাংবাদিক সম্মেলনে তিন দেশের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি ওই মত দেন।
আঞ্চলিক যোগাযোগের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সড়ক, রেল ও বিমানপথে যোগাযোগের ব্যাপারে এ অঞ্চলের দেশগুলোতে যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। গতকাল বুধবার আমি মংলাবন্দর ঘুরে দেখেছি। বর্তমানে বন্দরটিতে যে সুবিধা রয়েছে, তাতে আমি মুগ্ধ। চট্টগ্রাম ও মংলাবন্দর কীভাবে সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করা যায়, এটি খতিয়ে দেখতে দেশে ফিরে আমি একটি প্রতিনিধিদল পাঠাব।’
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী জানান, বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে বছরে ৩০ মিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়ে থাকে। দ্বিপক্ষীয় এ বাণিজ্যকে তাঁর দেশ ১০০ মিলিয়ন ডলারে নিয়ে যেতে চায়। তিনি বলেন, ‘শুধু অর্থনৈতিক কারণেই নয়, দুই দেশের জনগণের স্বার্থে বাণিজ্যের পরিমাণ আমরা বাড়াতে চাই। এ বিষয়টি গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। ট্রানজিটের বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের যে চুক্তি হয়েছে, তাতে প্রতিবেশী অন্য দেশও লাভবান হতে পারে। এ মুহূর্তে ভারতকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহারে বাংলাদেশ ও ভুটানের কোনো বাধা আছে বলে আমি মনে করি না।’
বাংলাদেশের কাছে বিদ্যুত্ বিক্রির সম্ভাবনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি-সংকটের বিষয়টি বিবেচনা রেখে আমরা বাংলাদেশকে বিদ্যুত্ দিতে চাই। বিষয়টি দুই ভাবে হতে পারে। প্রথমত ভুটানের বিদ্যুত্ খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশ অংশীদারির ভিত্তিতে বিদ্যুত্ পেতে পারে। আবার ভুটান থেকে সরাসরিও বিদ্যুত্ কিনতে পারে বাংলাদেশ।
থিনলে বলেন, ‘বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে ভুটান ও ভারতকে নিয়ে তিন দেশের আলোচনায় বসা উচিত। এ ব্যাপারে যত শিগগির সম্ভব আমরা বাংলাদেশকে সহায়তা দিতে রাজি আছি।’

কাতারকে যৌথভাবে বিশ্বকাপ আয়োজন করতে বললেন প্লাতিনি

০২২ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল কাতারে আয়োজিত হবে—খবরটা পুরোনোই হয়ে গেছে। নতুন খবর হচ্ছে, ফিফার সহসভাপতি ও উয়েফার প্রেসিডেন্ট মিশেল প্লাতিনি সেই বিশ্বকাপ অন্যান্য আরব দেশের সঙ্গে যৌথভাবে আয়োজনের অনুরোধ জানিয়েছেন। তবে যৌথভাবে কাতার কোন কোন আরব দেশের সঙ্গে বিশ্বকাপ আয়োজন করবে, সে ব্যাপারে অবশ্য কোনো দিক-নির্দেশনা দেননি প্লাতিনি।

কাতারের প্রচণ্ড গরমে জুন-জুলাই মাসে বিশ্বকাপ আয়োজনের সংবাদে এরই মধ্যে গায়ে জ্বর ওঠার মতো অবস্থা হয়ে গেছে অনেক ইউরোপীয় দেশেরই। এই তো সেদিন, জার্মান ফুটবল দলের অধিনায়ক ফিলিপ লাম স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন, কাতারে জুন-জুলাই মাসে বিশ্বকাপ আয়োজনের সিদ্ধান্ত একধরনের পাগলামোই। কাতারে বিশ্বকাপ আয়োজন নিয়ে তাই এই মুহূর্তে ফুটবল বিশ্বে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। যেকোনো বিতর্কে মধ্যস্থতায় প্লাতিনির জুড়ি নেই। এই বিতর্কেরও একটা সহজ সমাধান তিনি দিয়ে দিয়েছেন। ফিফাকে পরামর্শ দিয়েছেন, জুন-জুলাইয়ের বদলে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে বিশ্বকাপ আয়োজন করলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়।
১৯৯৮ সালে ফ্রান্স বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই বিশ্বকাপের ফরম্যাটে পরিবর্তন এসেছিল। ২৪টি দেশ থেকে ৩২টি দেশে উত্তরণ সেই বিশ্বকাপেই হয়েছিল। ’৯৮-এর ফ্রান্স বিশ্বকাপে আয়োজক কমিটির প্রধান ছিলেন মিশেল প্লাতিনি। তাই প্লাতিনি যখন নতুন কিছুর পরিকল্পনা দেন, তাকে উড়িয়ে দেওয়ার হিম্মত খুব কম মানুষেরই আছে।
২০২২ বিশ্বকাপ আয়োজক দেশ হিসেবে ফিফা কাতারকে বেছে নেওয়ার পর অনেক কিছু নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। কাতারি মরুর উত্তাপ তো আছেই, ইদানিং প্রশ্ন উঠেছে, বিশ্বকাপে ৩২টি দেশের খেলোয়াড়দের আবাস, অনুশীলন সুবিধাদির নিশ্চিত করা ও শত শত পর্যটককে সামাল দেওয়ার ক্ষমতা কাতারের মতো ছোট্ট একটি দেশের রয়েছে কি না। যে দেশটি কিনা ইউরোপের মন্টেনিগ্রোর চেয়েও ক্ষুদ্র। তাই প্লাতিনি যৌথ আয়োজক হিসেবে অন্য একটি আরব দেশকে বেছে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন বলেই জানিয়েছেন। কাতার অবশ্য বিশ্বকাপ বিডেই মাত্র ৩২ কিলোমিটার দূরত্বে কমপক্ষে ১২টি অত্যাধুনিক স্টেডিয়াম তৈরির ঘোষণা দিয়েছে। ওয়েবসাইট।

ইটভাটার করাল গ্রাসে কৃষিজমি, জনস্বাস্থ্য

ঢাকার দূষিত বায়ুতে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার কারণে প্রতি তিনজন কোমলমতি স্কুলশিক্ষার্থীর মধ্যে দুজনই অ্যাজমায় আক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তাদের কেউই উত্তরাধিকার বা পারিবারিক সূত্রে শ্বাসকষ্টের রোগী নয়। জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির আওতায় পরিবেশ অধিদপ্তর পরিচালিত 'ঢাকার স্কুলশিশুদের মধ্যে বায়ুদূষণের প্রভাব' শীর্ষক গবেষণায় এ ভয়াবহ তথ্য ঘোষণা করা হয়েছে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, রাজধানীর তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণীর ১৮০ ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ৪২ দিন গবেষণা করে ১২০ জনকেই অ্যাজমায় আক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এজাজ হোসেন বলেন, ইটভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়ার আণবিক কণা মারাত্মক ক্ষতিকর। বাতাসে এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে তা মানুষের অ্যাজমাসহ নানা ধরনের জটিল রোগ সৃষ্টি করে। তিনি বুয়েটের এক গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, দেশের বায়ুদূষণের শতকরা ৩০ ভাগের জন্য দায়ী ইটভাটাগুলো।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. তৈমুর এ কে মাহমুদ বলেন, বায়ুদূষণ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য মারাত্দক ক্ষতিকর। এটা কোমলমতি শিশুদের জন্য বিষস্বরূপ। দূষিত বায়ুর পরিবেশে বেড়ে ওঠা মানুষ পেটের পীড়া থেকে শুরু করে কিডনি রোগসহ ফুসফুসের ক্যান্সারেও আক্রান্ত হতে পারে। মহিলারা জন্ম দিতে পারে বিকলাঙ্গ শিশু।

জাতিসংঘের গবেষণা পরিচালনায় যুক্ত পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) কাজী সারোয়ার ইমতিয়াজ হাশমী বলেন, ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা ক্রমেই ভয়াবহ হচ্ছে। সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে বায়ুদূষন রোধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে না পারলে ভবিষ্যতে এর পরিণাম আরো ভয়াবহ হবে। বিশ্বব্যাংকের পরিবেশবিজ্ঞানী ও দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. খলীকুজ্জমান বলেন, ঢাকা মহানগরীর গাড়ির কারণে প্রায় ৭০ শতাংশ আর ৩০ শতাংশ বায়ুদূষিত হয় নগরীর আশপাশের ইটখোলার কারণে।

ফসলি মাটি যাচ্ছে ইটভাটার পেটে : সরকারি হিসাবে দেশে ইটখোলার সংখ্যা চার হাজার ৫১০। এর মধ্যে অবৈধ (পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই) এক হাজার ১৯৯টি। এসব ইটখোলায় প্রতিবছর পোড়ানো হয় তিন হাজার ২৪০ কোটি ইট। প্রতি হাজার ইটের জন্য কাঠ পোড়াতে হয় আট থেকে ১০ মণ। তবে বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতি এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের হিসাবে দেশে ছোট-বড় মিলিয়ে ইটখোলার সংখ্যা প্রায় ছয় হাজার। এসব ইটখোলার প্রতিটিতে উৎপাদন বছরে গড়ে ৭৫ লাখ ইট। এ হিসাবে ছয় হাজার ইটখোলায় উৎপাদন হয় বছরে সাড়ে চার হাজার কোটি ইট। গড় মানের সাড়ে ৯ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য, সাড়ে চার ইঞ্চি প্রস্থ ও তিন ইঞ্চি পুরুত্বের একেকটি ইটে মাটি লাগে তিন কেজি থেকে সাড়ে তিন কেজি। গড়ে তিন কেজি ধরলেও সাড়ে চার হাজার কোটি ইটে মাটি লাগে বছরে সাড়ে ১৩ হাজার কোটি কেজি বা সাড়ে ১৩ কোটি টন, যার পুরোটাই পুড়ে লাল হয়ে যায়।

ইট-শ্রমিকরা জানায়, ভূমির উপরি অংশের এক থেকে দেড় ফুট মাটি কেটে নিয়ে ইট প্রস্তুত করা হয়। ইটখোলায় ব্যবহৃত মাটির অধিকাংশই এঁটেল-দোআঁশ ও বালি-দোআঁশ (ফসলি) মাটি। কৃষিবিদ ও মৃত্তিকা গবেষকরা বলছেন, স্বাভাবিক নিয়মে জমির উপরিভাগে পলি জমে জমে এক ফুট পুরু হতে সময় নেয় তিন থেকে চার দশক। তাঁদের হিসাবে, ইটখোলা যে পরিমাণ ফসলি মাটি ধ্বংস করছে, তা বন্ধ হলে বছরে অন্তত ৫০ লাখ টন খাদ্যশস্য উৎপাদন বাড়ত। তাঁদের হিসাবে, ছয় হাজার ইটখোলার দখলে রয়েছে (প্রতিটি গড়ে সোয়া আট একর) প্রায় ৫০ হাজার একর আবাদি জমি। তাঁরা ইউএনডিপির আওতাধীন স্টকহোমের এনভায়রনমেন্ট ইনস্টিটিউটের গবেষক ড. প্যাট্রিক ও ড. লিসার গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, ইটখোলাসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশ বছরে দশমিক চার বিলিয়ন ইউএস ডলার (প্রায় ২৮০ কোটি টাকার ধান, গম, সয়াবিন ও আলু) সমমূল্যের কৃষি ফসল উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

অন্যদিকে বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতি বলছে, দেশের ছয় হাজার ইটখোলায় বছরে বিনিয়োগ প্রায় চার হাজার কোটি টাকা। এ খাতে কর্মসংস্থান প্রায় ২০ লাখ মানুষের। এ খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আয় বছরে প্রায় ১৭৫ কোটি টাকা, যা ক্রমে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ হারে বাড়ছে। ২০ থেকে ২৫ শতাংশ চাহিদা বাড়ায় এবং ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় বছরে যোগ হচ্ছে দেড় শ থেকে ২০০টি নতুন ইটখোলা। এদিকে পরিসংখ্যান ব্যুরো জমি কমে যাওয়ার ভয়াবহ তথ্য দিয়েছে। তারা বলছে, ১৯৮৬ সালে দেশে আবাদযোগ্য জমি ছিল ৮১ লাখ ৫৮ হাজার হেক্টর। ২০০৩ সালে ৭০ লাখ ৮৭ হাজার হেক্টর। ২০০৭ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৬৭ লাখ ৯০ হাজার হেক্টরে। এভাবে প্রতিবছর গড়ে ৬৫ হাজার হেক্টর জমি কমে গেছে। সর্বশেষ শুমারির উদ্ধৃতি দিয়ে ভূমি জরিপ অধিদপ্তর জানিয়েছে, ১৯৮৬ সালে দেশে এক কোটি ৩৮ লাখ ১৮ হাজার বসতবাড়ি ছিল। ২০০৩ সালে এ সংখ্যা হয়েছে এক কোটি ৭৮ লাখ ৪২ হাজার, আর ২০০৭ সালে প্রায় এক কোটি ৮৭ লাখ ৯০ হাজার। প্রতিবছর গড়ে দুই লাখ ৩৬ হাজার ৭০৫টি বাড়ি নির্মাণ বেড়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০ বছর পর দেশের চাষযোগ্য কৃষিজমি নেমে আসবে মাত্র ৫০ হাজার হেক্টরে। তাদের হিসাবে, ইট তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে প্রতিবছর ব্যবহার হচ্ছে লক্ষাধিক হেক্টর জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি। এ ছাড়া ১৯৭৩ সালে আট লাখ ৩৩ হাজার হেক্টর জমি লবণাক্ত ছিল। ২০০০ সালে তা ১৮ লাখ হেক্টর ছাড়িয়েছে।

ইটখোলার লাইসেন্স বন্ধের সুপারিশ: পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. জাফর আহমেদ খান কালের কণ্ঠকে বলেন, জনবহুল এ দেশের প্রেক্ষাপটে ইটখোলা খুবই ক্ষতিকর। ইটখোলার প্রভাবে শুধু কৃষিজমিই কমছে না, ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়ছে পরিবেশের ভারসাম্য। সব দিক বিবেচনায় নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ইটখোলার লাইসেন্স প্রদান বন্ধের সুপারিশ করা হয়েছে। এ জন্য বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিনিয়তই চাপের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তিনি জানান, অবৈধ ইটখোলার মালিকদের ৩১ আগস্টের মধ্যে সরকারি ছাড়পত্র নিতে বলা হয়েছে; যদিও এরই মধ্যে ইটখোলায় নির্বিচারে কাঠ পোড়ানো এবং ক্ষতিকর পদার্থ নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে পদস্থ কর্মকর্তা, ইটখোলার মালিক ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ১২ সদস্যের 'ন্যাশনাল ব্রিক অ্যাডভাইজরি কমিটি' নামের একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি ইটখোলা স্থাপন, ইট পোড়ানোর পদ্ধতি আধুনিকায়নের পদক্ষেপ, ইটখোলাগুলোর গৃহীত কার্যক্রম এবং আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, অবৈধ ইটখোলাগুলোকে পরিবেশগত ছাড়পত্র নেওয়ার জন্য ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে শিগগিরই গণবিজ্ঞপ্তি জারি হবে। তাঁরা বলেছেন, ইট পোড়ানো (নিয়ন্ত্রণ) আইনের ৫ ধারায় ইট পোড়াতে কাঠ ব্যবহার সম্পূর্ণ পরিহার এবং বায়ুদূষণকারী উচ্চ সালফারযুক্ত কয়লা ব্যবহারও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রাখা হয়েছে আইন অমান্যকারীদের এক বছরের কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান। কিন্তু এ দেশের অধিকাংশ ইটখোলার প্রধান জ্বালানি কাঠ ও সালফারযুক্ত নিম্নমানের কয়লা। কর্মকর্তাদের অভিযোগ, ইটখোলার মালিকদের অধিকাংশই প্রভাবশালী। তারা অর্থের বিনিময়ে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দুর্দান্ত দাপটে ক্রমাগত পরিবেশদূষণসহ কৃষিজমি ধ্বংস করে চলছে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এ সাত্তারের তত্ত্বাবধানে করা এক গবেষণা প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের গবেষণা কর্মকর্তা মো. তহিদুল ইসলাম জানান, ইটখোলার নির্গত ধোঁয়ায় নাইট্রোজেন ও সালফার ডাই-অক্সাইড মিলে ওজোন নামের গ্যাস তৈরি করে, যা পাতাজাতীয় ফসলের সরাসরি ক্ষতি করে। পাতা ফুটো করে দাগ দাগ হওয়াসহ গাছকে রোগাক্রান্ত করে ফেলে। এতে গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে ও প্রয়োজনীয় খাবার শোষণে ব্যর্থ হয়। ফলে ফসল আকারে ছোট হয়, উৎপাদন কমে যায় অন্তত ১৫ থেকে ২০ শতাংশ।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের সাবেক নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. জহুরুল করিম বলেন, কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের ফসলি জমির পরিমাণ খুবই সীমিত। মৃত্তিকা সম্পদ সহজে নষ্ট করা গেলেও তা পুনরুদ্ধার খুবই কঠিন। ইট তৈরিতে মাটির উপরি অংশ ব্যবহৃত হয়। আর ফসলেও পুষ্টি জোগায় ওপরের ছয় ইঞ্চি মাটি। তিনি বলেন, ইটখোলার ধোঁয়া, ধুলাবালির কারণে আবহাওয়া ঘোলাটে থাকে। ফসলি গাছ খাদ্য গ্রহণে ব্যর্থ হয়। ফলে উৎপাদন কমে। কৃষি ও পরিবেশের দিক বিবেচনায় নিয়ে পৃথিবীর বহু দেশ মাটি পুড়িয়ে ইট উৎপাদন বন্ধ করেছে। অথচ অবৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিতে বাংলাদেশে ইট উৎপাদন বাড়ছেই।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সহসভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, 'আমাদের দেশের ইটখোলায় ব্যবহৃত কয়লার অধিকাংশই ভারতের মেঘালয় থেকে আমদানি করা, যা অত্যন্ত নিম্নমানের। এগুলো ব্যবহারে সালফার নির্গত হয় ৭ থেকে ১০ শতাংশ।' তিনি বলেন, জ্বালানি ব্যবহারের দিক থেকে বিবেচনা করলে দেশের প্রায় সব ইটখোলাই নিয়ম ভঙ্গ করছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দ রেজোয়ানা হাসান বলেন, পরিবেশ আইনে ইটখোলা স্থাপনে বসতি ও বনভূমি থেকে যে দূরত্বের কথা বলা আছে, তা মানা হচ্ছে না। নিষিদ্ধ জ্বালানি ব্যবহারসহ নানা দিকে আইন অমান্য করলেও ইটখোলার মালিকদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে না। বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির মহাসচিব মাইজউদ্দিন বলেন, 'অবৈধ ইটখোলাগুলোর বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থাই নেওয়া হোক, আমরা এর পক্ষে আছি।' তিনি বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশেই এসব অবৈধ ইটখোলা চালানো হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, উন্নত বিশ্বের মতো পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে ইট পোড়ানোর চেষ্টা চলছে। তবে ইটখোলার মালিকরা সম্প্রতি ট্রেড লাইসেন্স, টিন, আয়কর, ভূমি উন্নয়ন কর, বিএসটিআই, ফায়ার সার্ভিস, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ নানা ক্ষেত্রের অন্তহীন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তিনি জানান, দেশে এক লাখ আট হাজার থেকে এক লাখ ২৪ হাজার ঘনফুট আয়তনের এক সেকশন, দেড় ও দুই সেকশন ইটখোলার সংখ্যা বেশি। এসব ইটখোলায় বছরে প্রায় সাত মিলিয়ন টন কয়লা পুড়ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. জাফর আহমেদ খান বলেন, ইট পোড়ানোর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সরকারি-বেসরকারি সব পর্যায় থেকে সবাইকে অবগত করতে হবে। পরিবেশের ক্ষতি করে এমন প্রতিষ্ঠান যাতে অর্থ সহায়তা না পায়, সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর-বছিলা হয়ে পশ্চিম দিকে এগোলেই পোড়া মবিলের মতো দেখতে দুর্গন্ধযুক্ত কালো পানির ছোট খাল। কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমরপানির খালটি পেরোলেই শলমাসি, ওয়াসপুর ও আটিগ্রাম। গ্রামগুলো ঘনবসতিপূর্ণ। গ্রামের দুই পাশে অসংখ্য ইটখোলা। বাড়ির উঠানেও ইটখোলা। মাথা তুলে দাঁড়ানো অধিকাংশ চিমনির মুখ থেকে নির্গত হচ্ছে কালো ধোঁয়া। উড়ন্ত ধোঁয়া, ধুলোবালি ও দুর্গন্ধে শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়া কষ্টকর।

আটিগ্রামের চল্লিশোর্ধ্ব কৃষক সোলাইমান আলী, মোশারফ হোসেন ও সামছুল জানান, পাঁচ বছর আগেও এসব মাঠে এত বেশি ইটখোলা ছিল না। সে সময় এ মাঠে গম, পেঁয়াজ, আলুর চাষ হতো। এখন তেমন জমি নেই বললেই চলে। ইটখোলার ফাঁকে ফাঁকে খণ্ড খণ্ড প্লটে দুই বছর ধরে কিছু ফসল উৎপাদনের চেষ্টা করেও লাভ হচ্ছে না। কারণ, ইটখোলার কালো ধোঁয়া আর ইট বহনকারী ট্রাকের ধুলায় ফসলের মাথা ঢেকে যায়। ফলে ফসলের গাছ অঙ্কুরেই মারা যায়। তাঁরা জানান, এসব মাঠে এখন চাষের জমি নেই বললেই চলে। ইট তৈরির প্রয়োজনে জমির ওপরের অংশের মাটি ইটখোলার মালিকরা কিনে নিচ্ছেন। পাশের শলমাসি গ্রামের একসময়ের কৃষক (এখন দিনমজুর) লুৎফর রহমান বলেন, 'ফসল হয় না, তাই জমি চাষ করি না। ১০ কাঠা জমির মাটি দেড় ফুট গভীর করে নগদ ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছি।' একই ধরনের তথ্য জানান তিন গ্রামের অসংখ্য মানুষ।

আটিগ্রামের দিনমজুর আইয়ুব আলী জানান, তাঁর আট বছরের ছেলে আমিন বছিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে। তিন বছর ধরে আমিনের শরীরে খোসপাচড়া লেগেই আছে। এখন প্রায় সারাক্ষণই হাত-পা ও শরীর চুলকায়। তার তিন বছরের মেয়ে আমেনাও হয়েছে প্রতিবন্ধী (এক পা অসম্পন্ন)। সাইফুল, কায়েম, মধু, সালেকসহ অনেকেই জানান, এ গ্রামের অধিকাংশ শিশু রোগাক্রান্ত। লালুর ছয় বছরের ছেলে ফাহিম, মজিদের ১০ বছরের মেয়ে সকিনা, মোহাম্মদ আলীর সাত বছরের মেয়ে করুণার মতো অনেকেই শ্বাসকষ্ট রোগে ভুগছে।

এলাকাবাসী জানায়, বছরের অন্যান্য সময় কিছুটা কম হলেও অক্টোবর-নভেম্বর থেকে মার্চ-এপ্রিলের প্রায় ছয় মাস এ এলাকায় টিকে থাকা কষ্টকর হয়। এ সময় আর্থিক অবস্থা ভালো এমন অনেকেই এলাকা ছেড়ে যান। রাজধানী ঘিরে দেড় হাজার ইটখোলা: জনবসতির তিন কিলোমিটারের মধ্যে ইটখোলা নির্মাণ নিষিদ্ধ থাকলেও রাজধানী ঘিরে গড়ে উঠেছে প্রায় দেড় হাজার ইটখোলা। এসব ইটখোলায় পোড়ানো নিম্নমানের কয়লা, টায়ার, প্লাস্টিক ও রাবারের টুকরার নির্গত কালো ধোঁয়া প্রতিনিয়তই দূষিত করছে ঢাকার বাতাস। ফলে ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকার দেড় কোটি মানুষের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ পড়ছে হুমকির মুখে। অকালমৃত্যুর শিকার হচ্ছে অসংখ্য মানুষ।

পরিবেশ অধিদপ্তরের ক্লিন এয়ার অ্যান্ড সাসটেইনেবল এনভায়রনমেন্ট প্রজেক্টের পরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন জানান, ইটখোলা ও গাড়ির ধোঁয়ার কারণে ঢাকার বাতাসে ভাসমান অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণার পরিমাণ ভয়াবহ আকারে বাড়ছে। এসব বস্তুকণার পরিমাণ শীতকালের ১২০ দিন আরো বেশি থাকে। তিনি বলেন, জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি বিবেচনা করে প্রচলিত সনাতন পদ্ধতির ইট তৈরি পর্যায়ক্রমে বদ্ধ করে পরিবেশবান্ধব ইট ব্যবহারের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, জনবসতির তিন কিলোমিটারের মধ্যে ইটখোলা নির্মাণ নিষিদ্ধ থাকলেও তা মানা হয়নি, এখনো হচ্ছে না। এ ছাড়া নির্ধারিত ১২০ ফুট চিমনিও অনেকে ব্যবহার করছে না। তিনি বলেন, ইটখোলা শুধু বায়ুদূষণই করছে না, সেই সঙ্গে ফসলি জমিকে নিষ্ফলা করছে। ইটখোলার কর্মচারীদের থেকে জানা গেছে, খোলায় কয়লা ও কাঠ পোড়ানো হয়। আগুনের তাপমাত্রা বাড়াতে ও দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী করতে ভারতীয় (নিম্নমান) কয়লার পাশাপাশি শত শত মণ নিষিদ্ধ টায়ার, প্লাস্টিক ও রাবারের টুকরা পোড়ানো হয়। ঝাঁজ ও দুর্গন্ধযুক্ত এসব পোড়ানোয় পুরো এলাকা ধোঁয়ার কুণ্ডলীতে ছেয়ে যায়।

ইটখোলার কয়েকজন মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বীকার করেন, ইটখোলায় আগুন ধরানোর সময় কিছু কাঠ ব্যবহার করা হয়। কয়লার মজুদ ফুরিয়ে গেলেও কাঠ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আবাসন ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এসব এলাকার জমি ও ফ্ল্যাট দামে-দরে পছন্দ হলেও ইটখোলার ধোঁয়ার কারণে অনেকেই কিনতে আগ্রহী হয় না।

রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইবিসিআর) ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুসতাক হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ঢাকার বাতাসে মিশে থাকা কার্বন পার্টিকেল, সালফার, নাইট্রোজেনসহ অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান মানবদেহের ভয়াবহ ক্ষতি করে। দূষিত বায়ুতে নিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাস নিলে নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, হৃদরোগ, শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ, লিভার ও কিডনি অকেজোসহ মূত্রথলি ও খাদ্যনালি ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে। এ ছাড়া নতুন নতুন রোগেরও উপসর্গ দেখা দেয়। এতে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন ঘটে, যা ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের পরিবেশবিজ্ঞানী ড. এম খলীকুজ্জমান বাংলাদেশে বছরে সাড়ে ১২ শতাংশ মৃত্যুর ঘটনা পরিবেশগত কারণে ঘটে উল্লেখ করে বলেন, পরিবেশগত স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমানো গেলে জাতীয় আয়ের সাড়ে ৩ শতাংশ অর্থনৈতিক সুবিধা ভোগ করা সম্ভব। গবেষণার উপাত্ত তুলে ধরে তিনি বলেন, রাজধানীতে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বছরে এক হাজার ২০০ থেকে তিন হাজার ৩০০ মৃত্যু এড়ানো এবং আট কোটি মানুষের গুরুতর অসুস্থতা রোধ করা সম্ভব। এতে জাতীয় আয়ের দশমিক ৩৪ শতাংশ থেকে ১ শতাংশ সাশ্রয় হতে পারে। এ ছাড়া বায়ুদূষণের কারণে সারা দেশে বছরে সাত হাজার ৬০০ থেকে ৩০ হাজার ৪০০ মৃত্যু এড়ানো এবং তিন লাখ থেকে ১২ লাখ পর্যন্ত মানুষের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ সম্ভব। এতে ১১৪ থেকে ৪৫৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সাশ্রয় সম্ভব, যা জাতীয় আয়ের দশমিক ২৩ শতাংশ থেকে দশমিক ৯২ শতাংশ।

জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক আসিফ মুজতবা মাহমুদ বলেন, বায়ুদূষণের কারণে নবজাতক, শিশু, বয়স্ক এবং হুদরোগে আক্রান্তরা সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে থাকে। এতে শিশুরা হাঁপানি ও ব্রঙ্কাইটিসসহ অন্যান্য শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হয়।

ইটের বিকল্প 'কংক্রিট ব্লক' চালু করার উদ্যোগ নেই
সনাতন পদ্ধতির ইটভাটা পরিবেশদূষণের পাশাপাশি কৃষিজমি ক্রমাগত গ্রাস করে চললেও ইটের বিকল্প পরিবেশবান্ধব ও দামে সস্তা 'কংক্রিট ব্লক' চালুর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। ফলে বিকল্প ইট তৈরির জন্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগকারী শিল্পোদ্যোক্তারা হতাশায় পড়েছেন।

জানা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও ১৯৯৯ সাল থেকে কংক্রিটের ব্লক নির্মাণকাজে ব্যবহার শুরু হয়েছে। বসুন্ধরা, কনকর্ড, আলফা, রূপসী, স্কাইভিউ, মীরসহ অর্ধশত প্রতিষ্ঠান হলো ও সলিড কংক্রিটের সিলিং, পেডিং ব্লক, কার্ব স্টোনসহ পরিবেশবান্ধব ইট তৈরি ও বিপণন করছে। কিন্তু সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে প্রচারণা না থাকায় এর কার্যক্রম প্রসারিত হচ্ছে না। পরিবেশ অধিদপ্তরের ক্লিন এয়ার অ্যান্ড সাসটেইনেবল এনভায়রনমেন্ট প্রজেক্টের পরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, ইটখোলার নির্গত কালো ধোঁয়া বায়ুদূষণের পাশাপাশি পরিবেশের মারাত্দক বিপর্যয় ডেকে আনছে। তিনি বলেন, পরিবেশ সংরক্ষণের প্রয়োজনেই কংক্রিট ব্লকের ব্যবহার বাড়ানো জরুরি এবং এটা সময়ের দাবি।

কনকর্ড গ্রুপের রেডিমিক্স অ্যান্ড কংক্রিট প্রোডাক্ট লিমিটেড, মীর রেডিমিক্স অ্যান্ড কংক্রিট প্রা. লি. ও স্কাইভিউ ফাউন্ডেশনের একাধিক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, পোড়ামাটির ইট বাংলাদেশের জন্য যুগোপযোগী নির্মাণসামগ্রী নয়। এর তৈরি প্রক্রিয়া একদিকে যেমন পরিবেশবিধ্বংসী, অন্যদিকে দামেও বেশি। অথচ কংক্রিটের সলিড ও হলো ব্লক আধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি পরিবেশবান্ধব নির্মাণসামগ্রী। এর ব্যয়ও ইটের তুলনায় অর্ধেকেরও কম এবং স্থাপনা দীর্ঘস্থায়ী। কংক্রিট ইট পরিবেশ সংরক্ষণ ও ভূমিকম্প প্রতিরোধক। তাঁরা বলছেন, শুধু প্রচারণার অভাবে কংক্রিট ব্লকের বিকাশ ঘটছে না। অথচ এ খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ শতকোটি টাকার বেশি। সরকার ইচ্ছা করলেই বিশেষ নির্দেশনায় সরকারি স্থাপনাগুলোতে কংক্রিট ব্লক ব্যবহার করতে পারে।

জানা যায়, কংক্রিট ব্লকের স্থাপনা হালকা হওয়ায় লোহার রড ও প্লাস্টার-গাঁথুনিতে সিমেন্ট-বালু কম লাগে। ইলেকট্রিক লাইন স্থাপন সহজ হয়। তাপ ও শব্দ প্রতিরোধক হওয়ায় ঘর তুলনামূলক শীতে গরম ও গরমে ঠাণ্ডা থাকে। অল্প সময়ে নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়। কংক্রিটের ব্লক বিভিন্ন আকৃতির করা যায়। বেশি পরিচিত হিসেবে কাজে লাগে ১৬ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য, ৮ ইঞ্চি প্রস্থ এবং ৪ ও ৬ ইঞ্চি পুরুত্বের হলো ব্লক, যা একটি ইটের প্রায় তিন গুণ। কংক্রিট ব্লকের অন্যতম কাঁচামাল নুড়িপাথর, বালু ও সিমেন্ট। অন্যদিকে ইটের কাঁচামাল কৃষিজমির উপরিভাগের উর্বর ফসলি মাটি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশে প্রতিষ্ঠিত অর্ধশত কারখানায় কংক্রিট ব্লক উৎপাদনের ক্ষমতা বছরে প্রায় এক হাজার কোটি ইটের সমান। কংক্রিট ব্লকের ব্যবহার বাড়লে পোড়ামাটির ইটের চাহিদা কমে আসবে। পরিবেশ-গাছপালা ধ্বংস হবে না। আবাদি জমি কমবে না। পঙ্গু-রোগা শিশু জন্ম নেবে না।

জানা যায়, বিশ্বের প্রায় সব দেশেই কংক্রিট ব্লক ব্যবহৃত হচ্ছে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে একচেটিয়া। বাংলাদেশের বেশ কিছু খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানে কংক্রিট ব্লক ব্যবহৃত হয়েছে। এর মধ্যে বসুন্ধরা পেভিং ব্লক দিয়ে করা হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার ইয়ার্ড, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রাস্তা, রাজশাহী শিশুপার্ক উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া সিলিং ও হলো ব্লকে নির্মিত হয়েছে রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেল, ঢাকা ও চট্টগ্রামের ইউএসটিসি ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা। বসুন্ধরা টেকনোলজিস লিমিটেডে তৈরি হচ্ছে পেভিং ও হলো ব্লক, কনকর্ড রেডিমিক্স অ্যান্ড কংক্রিট প্রা. লি. সিলিং ব্লক, আলফা রেডিমিক্স অ্যান্ড কংক্রিট প্রা. লি. পেভিং ব্লক, রূপসী রেডিমিক্স অ্যান্ড কংক্রিট প্রা. লি. কার্ব স্টোন, মীর রেডিমিক্স অ্যান্ড কংক্রিট প্রা. লি. সলিড ব্লক, স্কাইভিউ ফাউন্ডেশন। এদিকে ইটখোলার মালিকদের অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ইটখোলা পরিবেশ দূষণ করছে, এটা ঠিক; কংক্রিট ব্লকের ব্যবহার বাড়লে এ দূষণ কিছুটা কমবে।

সানমুন কম্পানির ম্যানেজার (মার্কেটিং) জাহিদুল ইসলাম বলেন, 'বিশ্বব্যাপী পরিচিত কংক্রিটের ব্লক আমাদের দেশে বেশি পরিচিত হতে পারেনি। সরকার উদ্যোগ নিলে এ শিল্পের বিকাশ সহজেই ঘটাতে পারে। বিশ্বব্যাংকের ৪৩৫ কোটি টাকা হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা বাংলাদেশে বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ হিসেবে ইটখোলা ও পরিবহন খাতকে চিহ্নিত করে ঢাকা ও এর আশপাশের শহরগুলোর বায়ুদূষণ কমিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত শহর গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ গত বছরের ১২ এপ্রিল ৬২ দশমিক ২০ মিলিয়ন ডলারের একটি প্রকল্প অনুমোদন করে। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যই ছিল বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করা। কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশের পরিবেশের ক্ষতি করে বানানো ইট ভারতে রপ্তানি করার কারণে বিশ্বব্যাংকের অনুদানের প্রায় ৪৩৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা হাতছাড়া হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, এরই মধ্যে বাংলাদেশের পরিবেশ নষ্ট করে ইট রপ্তানির বিষয়ে জানতে চেয়েছে বিশ্বব্যাংক।

ইট রপ্তানির কারণে পরিবেশ দূষণ রোধে বিশ্বব্যাংকের এ কার্যক্রম পরিকল্পিতভাবে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে কি না তা ক্ষতিয়ে দেখার জন্য পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদকে অনুরোধ জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী এ কে এম মাঈদুল ইসলাম। গত ২৪ আগস্ট পরিবেশ প্রতিমন্ত্রীকে লেখা এক চিঠিতে তিনি বলেছেন, ইট উৎপাদন করে কৃষিজমি নষ্ট করবে না বলে ভারত আমদানির পক্ষে কাজ করছে। আর বাংলাদেশ কৃষিজমি ও পরিবেশ নষ্ট করে ইট রপ্তানি করছে। এ ক্ষেত্রে রপ্তানি আয়কেও মুখ্য করে তুলে ধরায় বিভান্তিকর নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ কে এম মাঈদুল ইসলাম ক্ষোভের সঙ্গে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এ দেশে ভালো কাজ করা যাবে না। ভালো কাজের জন্য পদেক্ষপ নিলে সেটাও অনেকের কাছেই অন্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়। আর ইটখোলার মালিকদের মতো যাদের টাকা বেশি তাঁদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে শুধু নিজেকেই কালার করা হয়।'

জানা যায়, বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় পরিবেশ অধিদপ্তর ইটখোলার মাধ্যমে বায়ুদূষণ রোধে ১২৩ কোটি টাকার 'টেকনোলজি চেঞ্জ' করার উদ্যোগ নিয়েছে। ভারতে ইট রপ্তানি : বাংলাদেশের ফসলি জমির উর্বর মাটি পুড়িয়ে তৈরি করা ইট ভারতে রপ্তানি শুরু হয়েছে। গত বছরের ২০ আগস্ট ভারতের ত্রিপুরায় প্রথমবারের মতো আখাউড়া বন্দর দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ইট রপ্তানির কনসাইনমেন্ট উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরার শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী জিতেন্দ্র চৌধুরী। গত সপ্তাহ পর্যন্ত ইট রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার মে. টন। প্রতিটনের গড় মূল্য সাড়ে ৪১ হাজার টাকা হিসেবে মোট মূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকা।

ইট রপ্তানির আগে গত ১৯ আগস্ট মতিঝিলের ফেডারেশন চেম্বারে ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নতুন এই পণ্যের রপ্তানির সম্ভাবনা তুলে ধরে ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট ও নিটল গ্রুপের স্বত্বাধিকারী আবদুল মাতলুব আহমাদ জানান, ত্রিপুরার দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ইট উৎপাদনে খরচ বেশি পড়ায় সেখানে বাংলাদেশি ইটের ব্যাপক চাহিদা। ত্রিপুরা সীমান্ত-সংলগ্ন বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা ও সিলেটে প্রচুর ইটখোলা রয়েছে। ত্রিপুরার ব্যবসায়ীরা এসব এলাকা থেকে ইট নিতে আগ্রহী। তাঁরা প্রতিটি ইটের দাম সাত টাকা করে দিতে এবং বছরে প্রায় ২৮০ কোটি টাকা মূল্যের ৪০ কোটি পিস ইট নিতে চায়। তাঁর মতে, ইট রপ্তানির সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি বছরে ৩০০ কোটি ডলার কমাতে সহায়তা করবে। এর আগে থেকে ত্রিপুরাসহ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্যে বাংলাদেশের উৎপাদিত সিমেন্ট, প্লাস্টিক পাইপ, সিরামিক ফার্নিচারসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। তিনি অবশ্য বলেন, বাংলাদেশি যেসব ইটখোলার মালিক পরিবেশসম্মতভাবে ইট তৈরি করবেন, কেবল তাঁরাই রপ্তানির সুযোগ পাবেন। বায়ুদূষণ-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে মাতলুব আহমাদ বলেন, যেকোনো শিল্প স্থাপন করলে দূষণ হবে। কিন্তু দেখতে হবে দূষণের মাত্রা কত? বেশি হলে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিতে হবে।

তিন মন্ত্রীর ভাষ্য: কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, 'ইট রপ্তানি হোক--এটা আমিও চাই। তবে কৃষি ও পরিবেশ নষ্ট করে নয়।' তিনি জানান, ইট রপ্তানির আগে কৃষি মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হলে তাতে তিনি বলেছিলেন, 'ইছামতীর ওপারে ভারত ৫২টি ইটখোলার জন্য নদী থেকে মাটি তুলে ইট বানাচ্ছে। বাংলাদেশের ইটখোলার মালিকরা যদি তাঁদের মতো (সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে) নদী থেকে ড্রেজারের সাহায্যে এঁটেল মাটি তুলে ইট বানাতে পারে, তাহলে রপ্তানিতে আপত্তি নেই। কারণ এতে নদীর খননও হয়, আবার বৈদেশিক আয়ও বাড়ে। তিনি আরো জানান, কৃষি মন্ত্রণালয় এখন উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টায় মাঠপর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে। ইটখোলার মালিকদের অনিয়মের বিরুদ্ধে মামলা করার সময় নেই। মন্ত্রী বলেন, 'মাটির টপ সয়েল কাটলে আমি আহত হই।'

ইট রপ্তানির ফলে একদিকে পরিবেশ দূষণ, অন্যদিকে কৃষি জমি ধ্বংস_পরিবেশবাদীদের এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, সরকারের আয় বাড়ানোর চিন্তা থেকেই ইট রপ্তানি শুরু করা হয়েছে। দেশের ইটখোলাগুলো পরিবেশ আইনের আলোকেই পরিচালিত হচ্ছে। পরিবেশ দূষণ যাতে না হয় সেদিকেও দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। পরিবেশ দূষণকারী ইটখোলার মালিকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে জেলা প্রশাসকরা ব্যবস্থা নিচ্ছেন। পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী ডা. হাছান মাহমুদ বলেন, ইটখোলার কালো ধোঁয়া পরিবেশের ক্ষতি করে। তবে পরিবেশ নীতিমালার আওতায় ইটখোলা পরিচালিত হলে এ ক্ষতি কমে আসতে বাধ্য। কালো ধোঁয়া রোধে জিগজ্যাগ ও হোপক্লিনস ব্যবহারের কঠোর নির্দেশনা সম্প্রতি মাঠপর্যায়ে দেওয়া হয়েছে। শিল্পায়নের প্রয়োজনে ইটখোলা লোকালয় থেকে দূর করতে বলা হয়েছে। তিনি মনে করেন, দেশে যে পরিমাণ ইটখোলা রয়েছে তার প্রয়োজন নেই। বরং ইটখোলার সংখ্যা কমিয়ে সেগুলোতে পরিবেশসম্মত পদ্ধতিতে উৎপাদন আরো বাড়ানো যেতে পারে। তিনি বলেন, কৃষি ও পরিবেশ রক্ষার প্রয়োজনে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো কংক্রিট ব্লকের ব্যবহার বাড়ানো উচিত।

রাজশাহী ও রংপুরের ৭২টি পৌরসভা নির্বাচনের চূড়ান্ত বেসরকারি ফল

ত্তরাঞ্চলের দুই বিভাগ রাজশাহী ও রংপুরের ৭২টি পৌরসভার নির্বাচনে গতকাল বুধবার শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। চূড়ান্ত বেসরকারি ফলাফলে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থীরা ৩৫টি পৌরসভায় মেয়র পদে বিজয়ী হয়েছেন। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীরা জিতেছেন ২৩টি পৌরসভায়। পাঁচটি পৌরসভায় জামায়াতে ইসলামী ও দুটি পৌরসভায় জাতীয় পার্টি (এরশাদ) সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। নির্দলীয় প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন সাতটি পৌরসভায়।

সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ চলে। নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন জানিয়েছেন, ভোট গ্রহণকে কেন্দ্র করে আমলে নেওয়ার মতো কোনো অভিযোগ কমিশনের কাছে আসেনি। তবে তীব্র শীতের কারণে ভোটার উপস্থিতি প্রত্যাশার থেকে কিছুটা কম ছিল। প্রধান বিরোধী দল বিএনপিও বলেছে, ভোট মোটামুটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বেসরকারি ফলাফল
রাজশাহী: ভবানীগঞ্জ পৌরসভায় বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী আবদুর রাজ্জাক পাঁচ হাজার ৭১৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের গোলাম মোস্তফা পেয়েছেন তিন হাজার ৯৭৫ ভোট। তাহেরপুরে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লাগের বিদ্রোহী প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ। তিনি পেয়েছেন তিন হাজার ৭৫২ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আবু নঈম শামসুর রহমান পেয়েছেন তিন হাজার ৪৪৭ ভোট। আড়ানিতে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের মিজানুর রহমান। তিনি পেয়েছেন চার হাজার ৩১৩ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির নজরুল ইসলাম পেয়েছেন তিন হাজার ৮৫ ভোট। চারঘাটে নির্দলীয় প্রার্থী নার্গিস খাতুন ছয় হাজার ৯৩৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির বিদ্রোহী জাকিরুল ইসলাম পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৭১০ ভোট। দুর্গাপুরে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী তোফাজ্জল হোসেন পাঁচ হাজার ৫৫৮ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আকবর আলী পেয়েছেন চার হাজার ৪৩০ ভোট। কাটাখালীতে জামায়াত-সমর্থিত প্রার্থী মাজেদুর রহমান পাঁচ হাজার ৬২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম বিএনপির সিরাজুল ইসলাম পেয়েছেন চার হাজার ৪৭০ ভোট। কাকনহাটে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী বর্তমান মেয়র আবদুল মজিদ। তিনি পেয়েছেন তিন হাজার ৪০২ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি-সমর্থিত ইসমাইল খান পেয়েছেন দুই হাজার ৬২০ ভোট। কেশরহাটে বিএনপি-সমর্থিত বিদ্রোহী প্রার্থী আলাউদ্দিন আলো সাত হাজার ৯৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শহিদুজ্জামান শহীদ পেয়েছেন চার হাজার ৩৬৭ ভোট। গোদাগাড়ীতে জামায়াত-সমর্থিত প্রার্থী আমিনুল ইসলাম ছয় হাজার ১৫৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী মনিরুল ইসলাম পেয়েছেন চার হাজার ৪০৯ ভোট।
তানোর পৌরসভায় বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী আবুল হাসনাত মোখলেসুর রহমান ওরফে ফিরোজ সরকার ছয় হাজার ৮৫০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ ওরফে প্রদীপ সরকার পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৩৮৫ ভোট। মুন্ডুমালা পৌরসভায় আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী গোলাম রাব্বানী চার হাজার ৬৪৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী শিশ মোহাম্মদ পেয়েছেন তিন হাজার ২১৪ ভোট।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভায় বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী মাওলানা আবদুল মতিন নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি হারিয়েছেন জামায়াত-সমর্থিত প্রার্থী লতিফুর রহমানকে। রোহনপুরে জিতেছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস। তাঁর কাছে হেরেছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত-প্রার্থী জালালউদ্দিন আকবর। নাচোলে বিজয়ী হয়েছেন নির্দলীয় প্রার্থী আবদুল মালেক চৌধুরী। তিনি পেয়েছেন দুই হাজার ৭৩৩ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী মো. কামরুজ্জামান পেয়েছেন এক হাজার ৩৫০ ভোট। শিবগঞ্জে বিএনপি-সমর্থিত শামীম কবির ১০ হাজার ১৫ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রার্থী আওয়ামী লীগ-সমর্থিত মো. কারিবুল হক পেয়েছেন আট হাজার ১৪ ভোট।
নাটোর: নাটোর পৌরসভায় বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি-সমর্থিত এমদাদুল হক আল মামুন। তিনি পেয়েছেন ২০ হাজার ৬৩০ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ-সমর্থিত কামরুল ইসলাম পেয়েছেন ১০ হাজার ৮০৬ ভোট। নলডাঙ্গায় বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী আব্বাস আলী তিন হাজার ৪৫২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ-সমর্থিত ইয়াকুব আলী পেয়েছেন দুই হাজার ৮৯ ভোট। সিংড়ায় বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি-সমর্থিত শামীম আল রাজি। তিনি পেয়েছেন নয় হাজার ২৬৭ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ-সমর্থিত আসাদুজ্জামান পেয়েছেন সাত হাজার ৪৭২ ভোট। গুরুদাসপুরে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী শাহনেওয়াজ আলী মোল্লা আট হাজার ৪১০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি-সমর্থিত মো. আমজাদ হোসেন পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৬৩৫ ভোট। গোপালপুরে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী মঞ্জুরুল ইসলাম। তিনি পেয়েছেন চার হাজার ১০৩ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নজরুল ইসলাম পেয়েছেন তিন হাজার ৬১১ ভোট। বড়াইগ্রামে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী ইসহাক আলী চার হাজার ৫৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শরিফুল হক পেয়েছেন তিন হাজার ৬৩৮ ভোট।
জয়পুরহাট: জয়পুরহাট পৌরসভায় নির্দলীয় প্রার্থী আবদুল আজিজ মোল্লা ১৩ হাজার ৫৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি-সমর্থিত বর্তমান মেয়র ফজলুর রহমান পেয়েছেন ১০ হাজার ৬৫৬ ভোট। আক্কেলপুরে ছয় হাজার ৩৫ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন বিএনপির বিদ্রোহী প্রাথী মো. আলমগীর চৌধুরী। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী মো. কামরুজ্জামান পেয়েছেন চার হাজার ৮১২ ভোট। কালাইয়ে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী তৌফিকুল ইসলাম তালুকদার দুই হাজার ৮৭৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আনিছুর রহমান তালুকদার পেয়েছেন দুই হাজার ২৯৮ ভোট। পাঁচবিবিতে ৫৫৯ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হাবিবুর রহমান। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী একই দলের সামছুল আলম।
সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জ পৌরসভায় ৩৬ হাজার ৩১৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী মোকাদ্দেস আলী। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ-সমর্থিত কে এম হোসেন আলী হাসান পেয়েছেন ২৪ হাজার ১০২ ভোট। কাজীপুরে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি-সমর্থিত মো. আবদুস সালাম। তিনি পেয়েছেন দুই হাজার ৮৬৭ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী মো. গোলাম মোস্তফা তালুকদার পেয়েছেন দুই হাজার ৪৫৪ ভোট। উল্লাপাড়ায় বিএনপির এম বেলাল হোসেন ১১ হাজার ১৯৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লাগের মারুফ বিন হাবিব পেয়েছেন ১০ হাজার ৯৫২ ভোট। রায়গঞ্জে বিজয়ী হয়েছেন জামায়াত-সমর্থিত প্রার্থী মোশারফ হোসেন সরকার আকন্দ। তিনি পেয়েছেন দুই হাজার ৫২৬। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির নূর সাঈদ সরকার পেয়েছেন দুই হাজার ৪২৬ ভোট। শাহজাদপুরে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম। তিনি পেয়েছেন ১৮ হাজার ২৮৮ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের হালিমুল হক ১৪ হাজার ২৭৬ ভোট পেয়েছেন। বেলকুচিতে আওয়ামী লীগের মফিজ উদ্দীন লাল মিয়া ১২ হাজার ৪১১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মো. আবদুর রাজ্জাক মণ্ডল পেয়েছেন ১১ হাজার ৮৩৪ ভোট।
নওগাঁ: নওগাঁ পৌরসভায় বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী নাজমুল হক ৩৭ হাজার ১৮৮ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের রফিকুল ইসলাম পেয়েছেন ৩০ হাজার ৬০৩ ভোট। নজিপুরে বিএনপির আনোয়ার হোসেন পাঁচ হাজার ২৮৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। নিকটতম আওয়ামী লীগের মো. আমিনুল হক পেয়েছেন চার হাজার ৯৪৩ ভোট।
বগুড়া: বগুড়া পৌরসভায় বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী এ কে এম মাহবুবুর রহমান ৯৬ হাজার ৩৩৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী রেজাউল করীম পেয়েছেন ৫৯ হাজার ৩৫৫ ভোট। সান্তাহারে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী তোফাজ্জল হোসেন। তিনি পেয়েছেন নয় হাজার ৪৯২ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ-সমর্থিত গোলাম মোরশেদ পেয়েছেন ছয় হাজার ৮১০ ভোট। ধুনটে আওয়ামী লীগের এ জি এম বাদশা এক হাজার ৫৯৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী বর্তমান মেয়র আলিমুদ্দিন হারুন মণ্ডল এক হাজার ৪৮৯ ভোট পেয়েছেন। নন্দীগ্রামে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী সুশান্ত কুমার। তিনি পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৫৭৭ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান মেয়র কামরুল হাসান সিদ্দিকি পেয়েছেন দুই হাজার ৬৮৬ ভোট। কাহালুতে দুই হাজার ৮১৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের হেলাল উদ্দিন কবিরাজ। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির বিদ্রোহী আবদুল মান্নান পেয়েছেন দুই হাজার ৩৬০ ভোট। গাবতলীতে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী বর্তমান মেয়র মোরশেদ মিল্টন চার হাজার ৯৫৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থী সাইফুল ইসলাম পেয়েছেন তিন হাজার ৯১৮ ভোট। শিবগঞ্জে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপির মতিয়ার রহমান। তিনি পেয়েছেন সাত হাজার ৩২০ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের তৌহিদুর রহমান পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৬৭৬ ভোট। শেরপুর পৌরসভায় ছয় হাজার ৪০১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী স্বাধীন কুমার কুন্ডু। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী আবদুস সাত্তার পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৮৩৭ ভোট। সারিয়াকান্দিতে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী টিপু সুলতান দুই হাজার ৮৮৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী আবদুল হামিদ পেয়েছেন দুই হাজার ৬৮৩ ভোট।
পাবনা: পাবনা পৌরসভায় বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী কামরুল হাসান ৩৬ হাজার ৬১১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের আবু ইসহাক শামীম পেয়েছেন ১৩ হাজার ৮৯৬ ভোট। ফরিদপুরে আওয়ামী লীগের খ ম কামরুজ্জামান তিন হাজার ৪৮৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী এনামুল হক পেয়েছেন দুই হাজার ৭৯৭ ভোট। সুজানগরে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী তোফাজ্জল হোসেন। তিনি পেয়েছেন চার হাজার ৯১৮ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের আবুল কাশেম পেয়েছেন চার হাজার ৭৮৮ ভোট। চাটমোহরে তিন হাজার ১৯৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি-সমর্থিত হাসাদুল ইসলাম। তাঁর নিকটতম আওয়ামী লীগের মির্জা রেজাউল করিম পেয়েছেন দুই হাজার ৬১৮ ভোট। সাঁথিয়ায় আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী মিরাজুল ইসলাম আট হাজার ৩৭৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী একই দলের বিদ্রোহী মোজাম্মেল হক পেয়েছেন ছয় হাজার ২০৫ ভোট। ঈশ্বরদীতে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী বর্তমান মেয়র মকলেছুর রহমান ১৬ হাজার ৬৪৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের আবুল কালাম আজাদ পেয়েছেন ১২ হাজার ৪০৭ ভোট। ভাঙ্গুড়ায় বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুর রহমান। তিনি পেয়েছেন দুই হাজার ৭২৭ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির নূর মুজাহিদ পেয়েছেন দুই হাজার ৭২০ ভোট।
রংপুর: বদরগঞ্জে আওয়ামী লীগের উত্তম কুমার সাহা পাঁচ হাজার ১৮৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির আজিজুল হক পেয়েছেন তিন হাজার ১৭৫ ভোট। হারাগাছে জাতীয় পার্টি-সমর্থিত প্রার্থী সাদাকাত হোসেন ১১ হাজার ২০০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মোনায়েম হোসেন পেয়েছেন আট হাজার ৩৮৫ ভোট।
গাইবান্ধা: গাইবান্ধা পৌরসভায় নির্দলীয় প্রার্থী শামসুল আলম আট হাজার ৫৮২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী বর্তমান মেয়র আনোয়ার-উল-হাসান ছয় হাজার ৫৯১ ভোট পেয়েছেন। গোবিন্দগঞ্জে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী আতাউর রহমান সরকার। তিনি পেয়েছেন সাত হাজার ৪২৭ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ফারুক আহমেদ পেয়েছেন ছয় হাজার ৮২৯ ভোট। সুন্দরগঞ্জে জামায়াতে ইসলামী-সমর্থিত প্রার্থী বর্তমান মেয়র নুরুন্নবী প্রামাণিক চার হাজার ১২৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টি-সমর্থিত আবদুল মজিদ মণ্ডল পেয়েছেন দুই হাজার ৪৫ ভোট।
লালমনিরহাট: লালমনিরহাট পৌরসভায় আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী রিয়াজুল ইসলাম ১৪ হাজার ২৮০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির হাফিজুর রহমান পেয়েছেন নয় হাজার ৭১৭ ভোট। পাটগ্রামে বিজয়ী হয়েছেন নির্দলীয় প্রার্থী বর্তমান মেয়র শমশের আলী তিন হাজার ৯৮৩ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মোস্তফা সালাউজ্জামান পেয়েছেন তিন হাজার ৯৫৪ ভোট।
কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রাম পৌরসভায় বিএনপি বিদ্রোহী প্রার্থী মো. নূর ইসলাম ৫২৫ ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. কাজীউল ইসলাম। উলিপুরে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী আবদুল হামিদ সরকার। তিনি পেয়েছেন আট হাজার ৯৪৫ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মো. হায়দার আলী পেয়েছেন ছয় হাজার ৯৮১ ভোট। নাগেশ্বরীতে জাতীয় পার্টি-সমর্থিত প্রার্থী আবদুর রহমান সাত হাজার ৫৫২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মো. আবুল কাশেম সরকার পেয়েছেন সাত হাজার ১১০ ভোট।
দিনাজপুর: দিনাজপুর পৌরসভায় বিএনপি সমর্থিত-প্রার্থী সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম ২৪ হাজার ৭৬০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নির্দলীয় মো. আলতাফ উদ্দিন পেয়েছেন ১০ হাজার ৮৪২ ভোট। ফুলবাড়ীতে সাত হাজার ৩২২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন খনিবিরোধী আন্দোলনের নেতা মো. মানিক সরকার। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মো. হবিবর রহমান সরকার পেয়েছেন পাঁচ হাজার ২৫৬ ভোট। বীরগঞ্জে বিজয়ী হয়েছেন জামায়াত-সমর্থিত প্রার্থী মাওলানা মোহাম্মদ হানিফ। তিনি পেয়েছেন তিন হাজার ২৬০ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের মোশাররফ হোসেন পেয়েছেন দুই হাজার ৭৬২ ভোট। বিরামপুরে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী আজাদুল ইসলাম। তিনি পেয়েছেন নয় হাজার ৩০২ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের আক্কাছ আলী পেয়েছেন সাত হাজার ৩৫০ ভোট। হাকিমপুরে বিএনপির মো. সাখাওয়াত হোসেন পাঁচ হাজার ৮৪১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের জামিল হোসেন পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৯২ ভোট।
সেতাবগঞ্জে ছয় হাজার ১১৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত আবদুস সবুর মাস্টার। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি-সমর্থিত মো. আসলাম পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৯৫৭ ভোট।
নীলফামারী: নীলফামারী পৌরসভায় বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী বর্তমান মেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদ। তিনি পেয়েছেন সাত হাজার ১১১ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির জহুরুল আলম পেয়েছেন ছয় হাজার ৩২৬ ভোট। জলঢাকায় বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী আনোয়ারুল কবীর চৌধুরী নয় হাজার ৬৫১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। নিকটতম জাতীয় পার্টির ইলিয়াছ হোসেন আট হাজার ৫১৯ ভোট পেয়েছেন। সৈয়দপুর পৌরসভায় বিএনপি-সমর্থিত আমজাদ হোসেন সরকার ২৬ হাজার ৫০০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টি-সমর্থিত সিদ্দিকুল আলম পেয়েছেন ১০ হাজার ৫৭৬ ভোট।
ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁও পৌরসভায় আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী এস এম এ মঈন ১৫ হাজার ৭৬৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির গোলাম সারওয়ার চৌধুরী ১২ হাজার ২৯০ ভোট পেয়েছেন। রানীশংকৈলে বিজয়ী হয়েছেন নির্দলীয় প্রার্থী মো. মোখলেসুর রহমান। তিনি ভোট পেয়েছেন দুই হাজার ৮৩২টি। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নির্দলীয় প্রার্থী মো. আলমগীর সরকার পেয়েছেন দুই হাজার ৭১৩ ভোট। পীরগঞ্জে বিএনপির রাজিউর রহমান সাত হাজার ১৮৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের মো. একরামুল হক পেয়েছেন ছয় হাজার ২০ ভোট।
পঞ্চগড়: পঞ্চগড় পৌরসভায় ১৩ হাজার ২০৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপির মো. তৌহিদুল ইসলাম। আওয়ামী লীগের জহিরুল ইসলাম পেয়েছেন সাত হাজার ৪৬৮ ভোট।
সামান্য উত্তেজনা, অভিযোগ
সৈয়দপুর পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের মিস্ত্রিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে প্রার্থীদের নির্বাচনের ফলাফল রাত সাড় নয়টার দিকেও ঘোষণা না করায় এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা প্রিসাইডিং অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের অবরুদ্ধ করে রাখে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ জনতার ওপর লাঠিপেটা করে। এ সময় উত্তেজিত জনতা এক পুলিশ কর্মকর্তাকে মারধর করে। তখন জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে কমপক্ষে ১৪টি ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ।
বগুড়া সদর পৌরসভায় শহরের মাটিডালি বিদ্যালয়ের সামনে দুপুর ১২টার দিকে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। তবে পুলিশ দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। দুপুরে মালতিনগর উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে মিজানুর রহমান নামের এক পুলিশ কনস্টেবলের বিরুদ্ধে এক প্রার্থীর পক্ষে প্রচারের অভিযোগ ওঠায় তাঁকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
নাটোরের নলডাঙ্গা পৌরসভার ব্রহ্মপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে শহিদুল ইসলাম নামের এক আনসার সদস্য এক প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাঁকে আটক করেন। ভোট গ্রহণের আগে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে বড়াইগ্রাম পৌর এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পাঁচজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
রাজশাহীর দুর্গাপুর পৌরসভার চৌপুখরিয়া রেজি. বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পরপরই আওয়ামী লীগ-সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তোফাজ্জল হোসেনের সমর্থক ও বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী এস এম আকবর আলীর সমর্থকদের মধ্যে ভোটকেন্দ্রের দখল নিয়ে বিবাদ শুরু হয়। এ সময় ভোটকেন্দ্রের বাইরে তাঁদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগ সমর্থকদের হামলায় বিএনপির সমর্থক খাইরুল ইসলাম (২০) গুরুতর আহত হন। তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ওই কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করার অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক শফিউজ্জামান ভূঁইয়া আওয়ামী লীগ সমর্থক আইয়ুব আলীকে এক হাজার টাকা জরিমানা করেন।
এ ছাড়া দুর্গাপুর পৌরসভার ধরমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী তোফাজ্জল হোসেনের এজেন্টদের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ভোট গ্রহণ এবং প্রতিপক্ষের এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পাবনা পৌরসভার চক ছাতিয়ানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বিকেল তিনটার দিকে একদল যুবক ভোটকেন্দ্রে ঢুকে কিছু ব্যালট পেপার ছিনতাই করে। এরপর ওই কেন্দ্রে ৩০ মিনিট ভোট গ্রহণ বন্ধ ছিল। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা গোলাম সরোয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সিরাজগঞ্জের ছয়টি পৌরসভায় ভোট গ্রহণ শান্তিপূর্ণ হয়েছে। তবে বিনা অনুমতিতে প্রাইভেট কার নিয়ে নির্বাচনী এলাকায় চলাফেরার অভিযোগ এনে সদরের বিএনপির সাংসদ রোমানা মাহমুদের বিরুদ্ধে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছে আওয়ামী লীগ।
কুড়িগ্রাম পৌরসভায় শহরের পশ্চিম কবিরাজপাড়া নূরানী তালিমুল কোরআন ফোরকানিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে বেলা দুইটার দিকে ছাত্রলীগের মমিন, আইয়ুব, সেকেন্দার ও কাইয়ুমসহ অন্যরা একটি বুথে ঢুকে মেয়র পদের ব্যালট পেপারের ৩৫৮৩ নম্বর ক্রমিকের ১০০ পাতার একটি বই ছিনতাই করে নিয়ে যায়। ঘটনার পরপর র্যাব, বিজিবি এবং রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছান।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম জানান, কর্তব্যে অবহেলার জন্য কেন্দ্রের সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আবদুস সালাম হোসেন এবং ওই বুথের পোলিং অফিসার এস এম লিয়াকত আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রানীনগর) আসনের সাংসদ ইসরাফিল আলম ভোট চলাকালে নওগাঁ পৌরসভার আওয়ামী লীগ-সমর্থিত মেয়র প্রার্থীর পক্ষে ভোটারদের প্রভাবিত করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি-সমর্থিত মেয়র প্রার্থী নজমুল হক। রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তাহমিদুল ইসলাম জানান, এক প্রার্থীর কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর সাংসদকে নির্বাচনী এলাকায় ঘোরাঘুরি না করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
পাবনার ঈশ্বরদী পৌরসভার ১৩টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে পাঁচটিতে ফলাফল ঘোষণার পর নারিতা কেন্দ্রে হামলা চালানোর চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। এ নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা)

জ্যাকসনের চিকিৎসককে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে

মাইকেল জ্যাকসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক কনরাড মারেকে বিচারের মুখোমুখি করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। অনিচ্ছাকৃতভাবে হত্যার অভিযোগে তাঁকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। ছয় দিনের বিচার-পূর্ব শুনানি শেষে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস উচ্চ আদালত গত মঙ্গলবার এ রুল জারি করেন। ২৫ জানুয়ারি মারেকে আদালতে হাজির করা হবে। দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর চার বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।

পপ সম্রাট জ্যাকসন ২০০৯ সালের ২৫ জুন মারা যান। ব্যথানাশক ওষুধ 'প্রোপোফোল' বেশি মাত্রায় নেওয়ায় তিনি মারা যান বলে ডাক্তারি পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়। মারের তত্ত্বাবধানে থাকাকালীন জ্যাকসনের মৃত্যু হওয়ায় তাঁর (মারের) চিকিৎসা পেশার অনুমতিপত্র সাময়িকভাবে স্থগিত করে সরকার।
বিচারক মাইকেল প্যাসটর মারেকে বিচারের জন্য কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর নির্দেশ দেন। তবে ৫৭ বছরের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ মারে দাবি করেছেন, তিনি কেবল জ্যাকসনের অনিদ্রা রোগের চিকিৎসা করতেন। তা ছাড়া তাঁর অনুপস্থিতিতে জ্যাকসন অধিক মাত্রায় ঘুমের ওষুধ নিয়েছেন। তাই তিনি এ ঘটনার জন্য দায়ী না। দোষী প্রমাণিত হলে কারাদণ্ডের পাশাপাশি মারের চিকিৎসা পেশার অনুমতিপত্র চিরদিনের জন্য বাতিল হতে পারে।
ছয় দিনের শুনানিতে সরকারপক্ষের কেঁৗসুলিসহ ফরেনসিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, প্যারামেডিক, তদন্তকারী কর্মকর্তা, ওষুধ বিক্রেতা, গোয়েন্দা ও বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী অংশ নেন। লস অ্যাঞ্জেলেসের ফরেনসিক মেডিসিনের প্রধান ক্রিসটোফার রজারস জ্যাকসনের মৃত্যুকে 'হত্যা' আখ্যা দিয়ে আদালতকে বলেন, প্রোপোফোলের তীব্র বিষক্রিয়ায় জ্যাকসন মারা গেছেন। তিনি বলেন, 'মারে নিজে এত বেশি মাত্রার ওষুধ জ্যাকসনকে না দিলে ও বা জ্যাকসনের ওষুধ খাওয়ার সময় তাঁর (মারে) কক্ষের বাইরে থাকার ঘটনা সত্যি হলেও এটিকে আমি হত্যাকাণ্ডই বলব।' তদন্ত কর্মকর্তা এলিসা ফ্লেক জানান, জ্যাকসনের মৃত্যুর পর তিনি তাঁর বাড়ি থেকে ১২ ফাইল প্রোপোফোল খুঁজে পেয়েছেন। ওষুধ বিক্রেতা আদালতকে জানান, জ্যাকসনের মৃত্যুর আগের দুই মাস তিনি জ্যাকসনের বাড়িতে ২৫৫ ফাইল ওষুধ সরবরাহ করেন। পাশাপাশি প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার দিন ৯১১ নম্বরে ফোন করতে দেরি করেন মারে। তিনি যে ওষুধ জ্যাকসনকে দিতেন তা গোপন করার চেষ্টা করেন এবং তিনি জানতেন না জরুরিভিত্তিতে একজন অচেতন মানুষের জ্ঞান কিভাবে ফেরানো যায়। শুনানির ছয় দিনই জ্যাকসনের পরিবার-পরিজনের অনেকেই আদালতে উপস্থিত ছিলেন। শেষ দিন আদালতে ছিলেন দুই বোন জ্যানেট ও লাটোয়া এবং ভাই র‌্যান্ডি। লাটোয়া সাংবাদিকদের জানান, যা হয়েছে তাতে তিনি খুশি।
সূত্র : এএফপি, বিবিসি, টেলিগ্রাফ।