Friday, January 14, 2011

দ্রুততম সময়ে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দিতে চায় ভুটান

বাংলাদেশকে সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে বিদ্যুৎ দেওয়ার চেষ্টা করবে ভুটান। তবে এর জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় আলোচনা প্রয়োজন। পাশাপাশি ভুটান এ দেশের চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করতে আগ্রহী। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় সোনারগাঁও হোটেলের সুরমা হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লিয়ন চোয়েন জিগমে ওয়াই থিনলে এসব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লিয়ন চোয়েন জিগমে ওয়াই থিনলে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভয়াবহ বিদ্যুৎ ঘাটতির কথা ভুটান সরকার জানে। ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকেও এ ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। ভুটান বাংলাদেশকে এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। ভুটানে এখন চাহিদার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ রয়েছে এবং ২০২০ সালের মধ্যে আরো ১০ টি বড় বিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ হচ্ছে। তবে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দিতে হলে ভারতকে সঙ্গে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় আলোচনার প্রয়োজন। ভুটান সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দেওয়ার চেষ্টা করবে বলে তিনি জানান।
চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দর এবং আঞ্চলিক যোগাযোগ বিষয়ে তিনি বলেন, এ অঞ্চলের যোগাযোগ সন্তোষজনক নয়। এ বিষয়ে আরো সহযোগিতা প্রয়োজন। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করে ভুটান লাভবান হতে চায়। বন্দর দুটির ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করতে শিগগিরই ভুটান থেকে এ দেশে প্রতিনিধি পাঠানো হবে বলে তিনি জানান।
বাণিজ্য সহযোগিতা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী জিগমে বলেন, ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বাণিজ্য বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বর্তমানে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিধি ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বাড়িয়ে ১০০ মিলিয়নে উন্নীত করার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।
সার্কের চেয়ারপারসন হিসেবে তাঁর চলতি মেয়াদে আঞ্চলিক এ সংস্থার অগ্রগতি প্রসঙ্গে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী জানান, তিনি সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর সম্মেলনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের দুই শতাধিক বৈঠক হয়েছে। এসব বৈঠকের মাধ্যমে সার্ককে আরো গতিশীল করার প্রয়াস চলছে। একই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সার্ক ঘোষণায় এসেছে। তিনি বলেন, জলবায়ু সমস্যা শুধু হিমালয় অববাহিকায় নয়, এর বিস্তার এখন উপকূল পর্যন্ত। এ অঞ্চল সার্কের মাধ্যমে মেক্সিকোর কানকুন জলবায়ু সম্মেলনে অভিন্ন অবস্থান নিতে সক্ষম হয়েছে।
বাংলাদেশের সঙ্গে স্বাক্ষরিত দুটি সমঝোতা স্মারক প্রসঙ্গে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভুটান সরকার বাংলাদেশ থেকে দক্ষ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিতে আগ্রহী। স্বাস্থ্য খাতে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক বাংলাদেশ থেকে ভুটানে চিকিৎসক নিয়োগের সুযোগ করে দেবে। অন্যদিকে সংস্কৃতি বিনিময়বিষয়ক সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে আগামী বছরগুলোতে আরো বেশি ভুটানি শিক্ষার্থী বাংলাদেশে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাবে বলে তিনি আশা করেন।
এ ছাড়া সংগীত, চলচিত্র, গ্রন্থ ও সাংবাদিকদের সফর বিনিময়ের সুযোগ থাকবে এ স্মারকের মাধ্যমে, যা দুই দেশের সম্পর্ক আরো জোরদার করবে বলে মনে করেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী জিগমে। তিনি গণমাধ্যমকে ভুটানের চতুর্থ স্তম্ভ উল্লেখ করে বলেন, অন্য তিন স্তম্ভের মতো গণমাধ্যমকেও নিরপেক্ষ হতে হবে এবং কেবল আর্থিক লাভের দিকে না ঝুঁকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করার মানসিকতা থাকতে হবে।
ভুটানের ‘গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস’ নীতি সম্পর্কে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী জিগমে বলেন, বিশ্ব পুঁজিবাদের দিকে ঝুঁকলেও এর অগ্রগতি স্থায়ী নয়। এ ক্ষেত্রে ভুটান সরকারের নীতি হলো মানুষের শরীর ও মন উভয়ের প্রশান্তি অর্জন। আর এ দুইয়ের সমন্বয়েই স্থায়ী সমৃদ্ধি অর্জন সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
উল্লেখ্য, পাঁচ দিনের সফর শেষে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী আজ শুক্রবার সকালে দেশে ফিরে যাবেন। বাংলাদেশে তাঁর এ সফরকে অত্যন্ত সফল ও ফলপ্রসূ আখ্যায়িত করে সংবাদ সম্মেলন শেষে তিনি দাঁড়িয়ে বলেন, আরো জোরালো বন্ধুত্বের বার্তা নিয়ে তিনি দেশে ফিরছেন। আবারও এ দেশে তিনি আসতে চান।

No comments:

Post a Comment