Friday, January 14, 2011

চাল-ডালসহ পাঁচ পণ্যের মজুদ বাড়াবে সরকার

বাজারের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পাঁচটি পণ্যের মজুদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে প্রয়োজনীয় চাল ও গম আমদানি করবে সরকার।

এ ছাড়া টিসিবির মাধ্যমে ভোজ্য তেল, চিনি, ডাল ও ছোলা আমদানি করা হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জরুরি সমন্বয় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় আশা প্রকাশ করা হয়, এ আমদানির ফলে আগামী এপ্রিল মাসে বোরো মৌসুম শুরুর সময়ও সরকারের গুদামে সাত লাখ টনের বেশি চাল ও গম মজুদ থাকবে। টিসিবি যাতে এসব পণ্য কিনতে পারে, সে জন্য সরকারের কাছে এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হবে। সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান ও খাদ্যমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাকসহ দুই মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, এ বছর সরকারের তিন লাখ টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত ছিল। বিশ্ব খাদ্য সংকটের প্রেক্ষাপটে সরকারিভাবে অতিরিক্ত ৯ লাখ টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সাড়ে ছয় লাখ টন চাল আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে। সরকার শুরুতে এ বছরের জন্য সাড়ে সাত লাখ টন গম আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এখন তা বাড়িয়ে ১০ লাখ টন করা হচ্ছে। এ ছাড়া বেসরকারি উদ্যোক্তারা গতবারের মতো এবারও প্রায় ৩০ লাখ টন গম আমদানি করবেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী আরো জানান, ভোজ্য তেলের বাজার স্বাভাবিক রাখতে টিসিবির মাধ্যমে দুই লাখ টন সয়াবিন ও পাম অয়েল আমদানি করা হবে। খাদ্য ও চিনিকল করপোরেশনের আওতাধীন চিনিকলগুলোতে এ বছর গতবারের তুলনায় উৎপাদন দ্বিগুণ হবে আশ্বাস দিয়ে মন্ত্রী বলেন, এর ফলে অভ্যন্তরীণভাবে এক লাখ টন চিনি পাওয়া যাবে। টিসিবির মাধ্যমে আরো দুই লাখ টন চিনি আমদানি করা হবে। মন্ত্রী জানান, টিসিবির গুদামে প্রায় ২৫ হাজার টন ডাল মজুদ রয়েছে। এর বাইরে আরো ১০ হাজার টন ডাল আমদানি করা হবে। এ ছাড়া আগামী রমজান মৌসুমের জন্য আগাম প্রস্তুতি হিসেবে ২০ হাজার টন ছোলা আমদানি করবে টিসিবি। এসব পণ্য খাদ্য মন্ত্রণালয়ের গুদামে রাখা হবে। পণ্য আমদানির খরচ বাবদ সরকারের কাছে এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার প্রভাব দেশের বাজারেও পড়ছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) ভবিষ্যতে খাদ্য সংকট আরো প্রকট হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকার বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। বিশ্ব খাদ্য সংকটের নেতিবাচক প্রভাব যাতে দেশের বাজারে না পড়ে, সে জন্য সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে বিদেশ থেকে খাদ্য আমদানি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
খাদ্যমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক বলেন, চাল ও গমের দাম বেশি হওয়ায় শ্রমজীবী মানুষের কষ্ট হচ্ছে। সরকার আমদানি বাড়িয়ে দাম সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে। এ ছাড়া খোলা বাজারে চাল বিক্রি (ওএমএস) ও ফেয়ার প্রাইস পদ্ধতিতে দরিদ্রদের মাঝে কম দামে চাল ও গম সরবরাহ করা হচ্ছে।
চালের দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, এ বছর ধানের উৎপাদন বেড়েছে। কিন্তু দেশের প্রকৃত জনসংখ্যার হিসাব নেই। তা ছাড়া অনেক কৃষকের ঘরে ধান ও চাল মজুদ রয়েছে। কয়েক মাস পরে দেশে চালের দাম আরো বাড়বেÑএ আশায় মিলমালিকরা ধান ও চাল মজুদ করছে। তা ছাড়া গম ও আটার দাম বাড়ার কারণে চালের ওপর বেশি চাপ পড়ছে। খাদ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ভারতের গুদামে দুই কোটি ৫৬ লাখ টন চাল মজুদ থাকার পরও দেশটির সরকার দাম কমাতে পারছে না।
সরকারের গুদামে এখন আট লাখ ২২ হাজার টন গম ও চাল মজুদ রয়েছে উল্লেখ করে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যেই আরো ছয় লাখ টন চাল ও পাঁচ লাখ টন গম দেশে এসে পৌঁছবে। আর এ সময়ে খরচ বাদ দিলেও সরকারের মজুদ থাকবে সাত লাখ ২২ হাজার টন চাল ও গম মজুদ থাকবে। আর তত দিনে বোরোর চাল বাজারে পাওয়া যাবে।
ছয় লাখ টন চাল আমদানির এলসি খোলা হয়েছে জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, আরো আড়াই লাখ টন চাল আন্তর্জাতিক টেন্ডারে সংগ্রহ করা যাবে। অবশ্য ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড ছাড়া আর কোনো দেশে চাল পাওয়া যাচ্ছে না। এসব দেশ থেকে চীন, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন প্রচুর চাল আমদানি করেছে। ভারত থেকে তিন লাখ টন চাল আমদানির আলোচনা হচ্ছে। সেখান থেকে পাওয়া না গেলেও কোনো না কোনো দেশ থেকে তা সংগ্রহ করা যাবে।
সভায় বাণিজ্যসচিব মো. গোলাম হোসেন, খাদ্যসচিব বরুণ দেব মিত্র, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ টি এম মুর্তজা রেজা চৌধুরী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডাব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক অমিতাভ চক্রবর্তী, টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সারোয়ার জাহান, খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আহমদ হোসেন খান, খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিটের মহাপরিচালক নাসের ফরিদসহ উভয় মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

No comments:

Post a Comment