Friday, January 14, 2011

পদ্মা সেতু: তদারক কমিটি গঠনের পরামর্শ বিশ্বব্যাংকের

প্রস্তাবিত পদ্মা সেতু নির্মাণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে স্বাধীন তদারকি কমিটি গঠনের পরামর্শ দিয়েছে দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক। এ কমিটি গঠন করা হলে সেতুর কাজ দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করা সম্ভব বলে মনে করে সংস্থাটি।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ্বব্যাংক কার্যালয়ে ‘পদ্মা সেতুর অর্থায়ন ও কাজের গুণাগুণ’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির বাংলাদেশ প্রধান অ্যালেন গোল্ডস্টেইন ওই পরামর্শ দেন। সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য দেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব আরস্তু খান ও বিশ্বব্যাংকের পানিসম্পদবিষয়ক বিশেষজ্ঞ মাসুদ আহমেদ।
সংবাদ সম্মেলনে গোল্ডস্টেইন বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের সামগ্রিক কেনাকাটাসহ অন্য সব কাজের তদারক করতে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে তৃতীয় পক্ষ থেকে একটি স্বাধীন তদারকি কমিটি গঠন করা যেতে পারে। এ ছাড়া পদ্মা সেতু নিয়ে সরকার ও দাতা সংস্থাগুলোর কাজ এবং পদ্মা সেতুর কাজের অগ্রগতিসংক্রান্ত তথ্যাদি জনগণকে জানাতে দেশের গণমাধ্যমে প্রচারসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা উচিত। স্বাধীন কমিটি করা হলে তাতে কাজের প্রতি জবাবদিহিতা ও অগ্রগতি বাড়বে।
সেতু নির্মাণ নিয়ে সরকারের প্রতি অনাস্থা থেকে এ পরামর্শ কি নাÑসাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে গোল্ডস্টেইন বলেন, সরকারের প্রতি আমাদের অনেক বেশি আস্থা আছে। তবে এ ধরনের বড় ও জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের প্রতি জনসাধারণের আগ্রহ থাকে বেশি। তাই বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে এ ধরনের পরামর্শ। পদ্মা সেতু নির্মাণে যে ব্যয় ধরা হয়েছে, এর মধ্যে ১২ হাজার কোটি টাকা দেবে বিশ্বব্যাংক। আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বিশ্বব্যাংকের বোর্ড সভায় এ প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হবে। বিশ্বব্যাংকের এ ঋণের টাকা ৪০ বছরে দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে পরিশোধ করতে হবে। এর বাইরে আরও ১০ বছর অতিরিক্ত সময় দেওয়া হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে এক হাজার ১২৫ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করা হবে ১২ কিলোমিটার। ২০১৩ সালে এ সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রকল্প শুরুর সময়ে যে ধরনের ব্যয় ধরা হয়েছিল, ব্যয় এর চেয়ে অনেক বেশি বেড়েছে। বাড়তি এ ব্যয়ের বড় একটি অংশ পরামর্শকদের পেছনে ব্যয় করা হচ্ছে কি নাÑসাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে গোল্ডস্টেইন বলেন, শুধু বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ফি-ই নয়, মূল সেতুর দৈর্ঘ্য বাড়ানো, দ্বিতল সেতু নির্মাণ ও ভূমির মূল্য বৃদ্ধিসহ সব ধরনের খরচ বাড়াতে পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় বাড়ছে। প্রথমে যখন নকশা করা হয় তখন এ ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। তবে গত ১০ জানুয়ারির হিসাব অনুযায়ী এর ব্যয় দাঁড়াবে ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
পদ্মা সেতু নির্মাণের অর্থের ১২ হাজার কোটি টাকা দেবে বিশ্বব্যাংক, চার হাজার কোটি টাকা দেবে জাপান, এক হাজার চার কোটি টাকা দেবে ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক দেবে ছয় হজার ১৫ কোটি টাকা।
১২ হাজার কোটি টাকা প্রকল্প সাহায্য এ যাবৎকালে বাংলাদেশের জন্য বিশ্বব্যাংকের সর্ববৃহৎ প্রকল্প বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। সাংবাদিকদের আরো বলা হয়, সেতুটির নির্মাণ শেষ হলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এতে জিডিপির প্রবৃদ্ধিও বাড়বে।

No comments:

Post a Comment