Tuesday, February 12, 2013

ব্রীজের রেলিং ভেঙ্গে মহিলা শিশুসহ ১৮ জন চলে গেলেন না ফেরার দেশে

কক্সবাজারের চকরিয়ায় ভয়াবহ সড়ক দূর্ঘটনায় ব্রীজের রেলিং ভেঙ্গে একটি বাস নদীতে পড়ে যাওয়ায় ঘটনাস্থলেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন ১৮জন হতভাগ্য নারী পুরুষ ও শিশু।
এসময় গুরুতর আহত হয়েছেন আরো অন্তত ২৬ জন । আহত ২৬জনকে গুরুতর অবস্থায় চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল ১১ ফেব্রুয়ারী সকাল সাড়ে ৬টায় চকরিয়া পৌরসভার চিরিংগা মাতামুহুরী ব্রীজ থেকে পড়ে গিয়ে এ দূর্ঘটনা ঘটেছে। দূর্ঘটনা কবলিতরা চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে খোশরোজ শরীফে যোগদান শেষে কক্সবাজারে পিকনিকে যাচ্ছিল। ভান্ডারশরীফ জেয়ারত শেষে পিকনিকে আসা হলে না তাদের ।

পুলিশ ও জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, শনিবার রাত আটটায় গাজীপুর পৌরসভায় ৫নং ওয়ার্ড়ের হরিনালা ও নোয়াগাও মহল্লার ভাড়া বাসা থেকে ৪৬ জন যাত্রী নিরাপদ সুপার সার্ভিস (মায়ের দোয়া) নামের একটি চেয়ার কোচে (নং টাঙ্গাইল জ-১১-০০৮০) করে চট্টগ্রামের ফড়িকছড়ি হযরত মাইনুদ্দিন আল হাসানীর ৭৬তম খোশরোজ শরীফে যোগদানের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। ১০ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠানের প্রধান দিবস শেষ করে রাত ২টায় তাদের ৪৪ জন যাত্রী একই গাড়িতে করে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বেড়ানো ও পিকনিকের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। বাসটি সোমবার সকাল সাড়ে ৬টায় কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়া পৌরসভার চিরিংগা মাতামুহুরী নদীর ব্রীজ অতিক্রম করার সময় চালক নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেললে বাসটি রেলিংএ ধাক্কা লেগে নিচে পড়ে যায়। ব্রীজের ৫০ ফুট নিচে বালির চড়ে পড়ে বাসটি ধুমডে চুমড়ে যায়। এতে  ১১জন পুরুষ, ৬ জন মহিলা ও শিশুসহ ১৭জন ঘটনাস্থলে মারা যায়। খবর পেয়ে চকরিয়া দমকল বাহিনী, পুলিশ ও এলাকাবাসি নিহতদের লাশ ও আহতদের  উদ্ধার করে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও জমজম হাসপাতালে নিয়ে যায়। গুরুতর আহত ২৭ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শিল্পী (৩৫) নামের এক মহিলা কাকতালীয় ভাবে অক্ষত রয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরিতদের বেশিরভাগেরই অবস্থা আশঙ্কাজনক।  তবে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথিমধ্যে মারা গেছে আরো ১জন। সর্বশেষ বেলা ১টা পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাড়িয়েছে ১৮ তে।
 কক্সবাজার জেলা প্রশাসক রুহুল আমিন জানান, তিনি গাজীপুর জেলা প্রশাসক নুরুল ইসলামের সাথে কথা বলে ১৭জনের লাশ গাজীপুর পৌরসভায় পৌঁছে দিয়েছেন। দূর্ঘটনার সাথে সাথে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক রুহুল আমিন, পুলিশ সুপার আজাদ মিয়া ও চকরিয়া উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন এবং ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার তৎপরতা ও চিকিৎসায় সহযোগিতা করেন।
গাজীপুরের স্থানীয় সংসদ সদস্য একেএম মোজাম্মেল হক জানান, চট্টগ্রামের ফড়িকছড়ি হযরত মাইনুদ্দিন আল হাসানীর ৭৬তম খোশরোজ শরীফে যাওয়া এসব আশেকানদের বেশিরভাগই স্বল্প আয়ের লোক। তাদেরকে এলাকায় নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রনজিত কুমার বড়–য়া ও গাজীপুরের ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ার হোসেন, কক্সবাজার জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে যেসব নিহতদের নাম জানা গেছে তারা হচ্ছেন, তোয়াজ উদ্দিনের ছেলে আবছার উদ্দিন পালোয়ান (৪৬), মোহর আলীর ছেলে আবদুর রশিদ (৪০), হাসেমের ছেলে ইকবাল (৪০), আবদুল আজিজের ছেলে রাজিব (৩০), সাতাই পালেয়ানের ছেলে মোহাম্মদ (৬৫), আইনাল হোসেনের ছেলে ইকবাল হোসেন (৩৮), অহিজ উদ্দিন (৮০), আবদুল জলিল (৫০), শিউলী আকতার (১৪), তার ভাই আব্দুর রশিদ (৫০), ভগ্নিপতি আব্দু জলিল (৫৫) ও নাতি নুসরাত জাহান(৭), ইদ্রিস আলীর স্ত্রী লতিফা বেগম (৪৫) , আইয়েস আলী (৬০), আব্দুর রউফ (৫০), হানিফ মিয়া (৪৫) ও মোহাম্মদ আলী (৫০)।
বেলা সাড়ে ১২ টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা গেছে লাল মিয়া (৫০)। একই ঘটনায় ঘটনাস্থলে তার দুই স্ত্রী জয়নাব বেগম (৪৮) ও মুফিজা বেগম (৩৮) মারা যান। নিহতদের বাড়ী গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর,নোয়াগাঁও, হাড়িনাল ও শ্রীপুর উপজেলার প্রহলদারপুর গ্রামে বলে জানা যায়।
 আহতদের মধ্যে যাদেরকে চকরিয়া হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে তারা হলেন, আজমত (৪০), বাহার উদ্দিন (৩০), হেনুয়ারা বেগম (৫০), আবদুর রহমান (৫০), সাইদুজ্জামান (৪০), আবুশামা (৩৫), তৌহিন (১৬), হালিম (৫০), সবুজ (২৫), হাবিব (৫০), রমিজ উদ্দিন (৩০), আবদুর রব (৪০), নুরুল ইসলাম (৫০) ও শিশু নুরশাবা (১০), তুহিন, সবুজ, সাইদুজ্জামান মাস্টার ও আব্দুল বাতেন । অন্যান্য আহতদের নাম জানাযায়নি। শিল্পী নামের এক মধ্যবয়সী মহিলা অক্ষত রয়েছে। ওই বাসের অপর দুই যাত্রী মো: শামীম ও আল আামিন অন্য গাড়িতে করে আগেই কক্সবাজার চলে যাওয়ায় তারা দূর্ঘটনা থেকে রক্ষা পান।

No comments:

Post a Comment