Friday, December 10, 2010

গণমাধ্যমের সহযোগিতায় গণতন্ত্র শক্তিশালী হয়: সৈয়দ আশরাফ

ওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম। তিনি বলেন, মিডিয়া ছাড়া গণতন্ত্র টিকে থাকতে পারে না। স্বাধীন মিডিয়ার ওপর নির্ভর করে দেশের গণতন্ত্র। আজ শুক্রবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সৈয়দ আশরাফ এ কথা বলেন।

সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আরও বলেছেন, দলীয় কর্মীদের ওপর নির্ভর করে দেশের উন্নয়ন ও সরকারের সাফল্য। তাই দেশ পরিচালনা ও নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নে দল ও সরকারকে একযোগে কাজ করতে হবে।
মহানগর আওয়ামী লীগকে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সৈয়দ আশরাফ বলেন, রাজনীতির মূল কেন্দ্র হলো ঢাকা এবং আওয়ামী লীগের মূল কেন্দ্র মহানগর আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রীয় কমিটি মহানগর আওয়ামী লীগের ওপর নির্ভর করে। তাই বিজয় দিবসের সব কর্মসূচি সফল করার জন্য মহানগর আওয়ামী লীগসহ সবার সহযোগিতা দরকার। দল এবং সরকার একত্রে আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের শোভাযাত্রায় অংশ নেবে বলে তিনি জানান।
মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজের সভাপতিত্বে বর্ধিত সভায় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাংসদ আসলামুল হক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া প্রমুখ।

নির্বাহী বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা ও ক্ষমতা যথেষ্ট নেই ___বিচারপতি হাবিবুর রহমান

বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেছেন, ‘মানবাধিকার সংরক্ষণ করা যাদের প্রধান দায়িত্ব সেই নির্বাহী বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দক্ষতা ও ক্ষমতা যথেষ্ট নেই। অনেক সময় প্রস্তুতিও থাকে না।’ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘মানবাধিকার পাওয়ার জন্য আদালতে যাবেন, সেখানে বিলম্ব কাটিয়ে কখন মামলার নিষ্পত্তি হবে, তা ভগবান জানেন।’ আজ শুক্রবার বাংলাদেশ জাতিসংঘ সমিতির আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাবিবুর রহমান এসব কথা বলেন।
হাবিবুর রহমান বলেন, ১৯৭১ সালে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে অনেক বেশি। এর বিচার শুরু হয়েছে। তবে নানা কারণে বিলম্ব হচ্ছে। দাঁতভাঙা তথ্যপ্রমাণ পাওয়ার জন্য অনন্তকাল অপেক্ষা না করে যেটুকু প্রমাণ আছে, তা দিয়ে বিচার শুরু করতে হবে। কোনো আক্রোশের কারণে যাতে এ বিচার না হয়, সেটাও দেখতে হবে। অন্যদিকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকার পরও স্নেহের পাত্র বলে কাউকে যাতে অনুগ্রহ দেখানো না হয়, তা-ও দেখতে হবে।
হাবিবুর রহমান দেশে মানবাধিকার কমিশনের গঠনকে সুসংবাদ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক (জাতিসংঘ ডেস্ক) ইশরাত জাহান আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক ১৬টি সনদে এ পর্যন্ত অনুস্বাক্ষর করেছে। দেশের জনগণ কথা বলা, লেখা ও সংগঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে যে স্বাধীনতা ভোগ করছে, তা অনেক দেশের জনগণের পক্ষেই সম্ভব হচ্ছে না।

সব পক্ষের দায়িত্বশীলতা ও সতর্কতা কাম্যঃ শেয়ারবাজারে হঠাৎ কালো মেঘ

ত বুধবার শেয়ারবাজারে যে অস্বাভাবিকতা দেখা গিয়েছিল, তাতে ঘাবড়ে যাওয়ার কারণ নেই। কিন্তু একই সঙ্গে এটাও সত্য যে, মাত্র এক ঘণ্টার এই অভূতপূর্ব দরপতন বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের অতস্ফীিতি বনাম দুর্বল ভিত্তির ফসকা গেরোকেই উন্মোচন করেছে। যা ঘটেছে তা বাজারের স্বয়ংক্রিয় নিয়মে ঘটেনি, এটা বলারও কারণ রয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার সমন্বয়হীনতা, ব্যক্তির খামখেয়াল এবং বাজারকে প্রভাবিত করায় কারও কারও চেষ্টার মিলিত ফল হলো শেয়ারবাজারে হঠাৎ এই কালো মেঘের উদয়।

দেশের শেয়ারবাজার যেভাবে ফুলে-ফেঁপে উঠছে, তাতে ঝুঁকির মাত্রাও অনেক বেড়ে গেছে। আর ফুলে-ফেঁপে ওঠার অন্যতম কারণ হলো অতিমুনাফার প্রলোভন। বড় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বড় বিনিয়োগ ও স্ফীত মুনাফা অন্যদের এমন ধারণাই দিচ্ছে যে শেয়ারবাজারে টাকা খাটালেই তা দ্বিগুণ বা ত্রিগুণ হয়ে ফেরত আসবে। আর তাই ঝুঁকির মাত্রা যথাযথভাবে বিবেচনা না করে অনেকেই বিনিয়োগ করে ফেলছেন। জড়িয়ে পড়ছেন ফাটকা খেলায়। শেয়ারবাজারের বৈশিষ্ট্যগত কারণেই এখানে ফাটকাবাজি হয়ে থাকে। তবে তারও সীমা টানতে হয়। না হলে তা বাজারকে বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে ফেলে দেয়। বাংলাদেশেও এখন ঝুঁকির জায়গাটা বেড়ে যাচ্ছে। কিছু কিছু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আগ্রাসীভাবে বিনিয়োগ করে এই ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।
এ রকম একটি অবস্থায় বাজারবহির্ভূত কোনো শক্তির পক্ষে বাজারকে প্রভাবিত করায় চাল চালা সম্ভব হয়। প্রথম আলোর এ-বিষয়ক গত বৃহস্পতিবারের সংবাদে দেখা যায়, একদিকে যখন বাজার সংশোধনের ধারায় ছিল, সে রকম সময়ে এসইসির একটি প্রজ্ঞাপন বাজারের অস্থিতিশীলতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। বাজার বাজারের নিয়মে চলবে, কিন্তু সরকারি সংস্থার দায়িত্ব যেকোনো দুর্ঘটনার আশঙ্কা কমিয়ে আনা। এ ক্ষেত্রে সেটির অভাব দেখা গেছে। কিন্তু সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন যা করার তা না করে খুঁটিনাটি নিয়ে আছে।
দেশে উৎপাদনি বিনিয়োগের সুযোগ কম থাকা, নতুন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিকাশ না ঘটা ইত্যাদি কারণে মানুষের সামনে বিনিয়োগের সুযোগ কম। বিপুল অলস পুঁজি পড়ে থাকার এ সময়ে সীমিতসংখ্যক শেয়ারের পেছনে ছুটছেন বিপুলসংখ্যক বিনিয়োগকারী। এতে শেয়ারবাজারে বিরাজ করছে মুদ্রাস্ফীতির মতো পরিবেশ। বিনিয়োগকারীর সংখ্যাবৃদ্ধির সঙ্গে ভারসাম্য রাখতে শেয়ারের সংখ্যাবৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। যত দ্রুত তা হয় ততই মঙ্গল।
নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে শেয়ারবাজারের বিশাল জোয়ারবিধ্বংসী ভাটা ডেকে এনেছিল। তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন অভিজ্ঞতাহীন অগণিত নব্য বিনিয়োগকারী। বলা যায়, মধ্যবিত্ত তার পুরো সঞ্চয়ই হারিয়ে ফেলেছিল এবং ফুলে-ফেঁপে উঠেছিল একশ্রেণীর ফাটকাবাজ। সে সময়ের তুলনায় অবশ্য এখনকার বাজার আরও সংহত, প্রস্তুত ও গভীর। দীর্ঘ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বিনিয়োগকারীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি, প্রাতিষ্ঠানিক প্রস্তুতি এবং তথ্যপ্রযুক্তির সমারোহও বিস্তৃত। ফলে দেড় দশক আগের দুঃস্বপ্ন ফিরে আসবে, এমন আশঙ্কা কম। তার পরও বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা, সরকার এবং বিনিয়োগকারীদের দায়িত্বশীল ও সংযত আচরণই বড় রক্ষাকবচ।

প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের অর্থের উৎস জানতে চাইলেন দেলোয়ার

প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের অর্থের উৎস জানতে চেয়েছেন বিএনপির মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন। আজ শুক্রবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সম্পদের হিসাব চেয়ে যে বক্তব্য দেন তার জবাব দিতে বিএনপি আজ এই সংবাদ সম্মেলন ডাকে।

খোন্দকার দেলোয়ার বলেন, ‘সংসদের একটি ভাষা আছে; যাকে বলা হয় সংসদীয় ভাষা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যে ভাষায় সংসদে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটা সংসদীয় ভাষা নয়। প্রধানমন্ত্রী নিম্ন রুচির পরিচয় দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী যে ভাষায় বক্তব্য দিয়েছেন, তা শিষ্টাচার-বহির্ভূত ও কুরুচিপূর্ণ।’
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি খোন্দকার দেলোয়ার প্রশ্ন রাখেন, ‘আপনার স্বামী সাধারণ পরিবারের সন্তান ছিলেন। সরকারি চাকরি করে তিনি কীভাবে ধানমন্ডির মতো জায়গায় বাড়ি বানিয়েছেন? শেখ রেহানা কীভাবে লন্ডনে বাড়ি করে থাকেন?’ তিনি বলেন, সময় হলে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সম্পদের বিবরণীও দেখা হবে।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সম্পদের হিসাব চান । এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রীকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘আয়কর বিভাগ তদন্ত করে দেখুক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দেওয়া হিসাবের সঙ্গে তা সংগতিপূর্ণ কি না। তাঁর আয়কর ফাইল খতিয়ে দেখা হোক। কারণ, সেনানিবাসের বাসভবনের যেসব অতি মূল্যবান জিনিসপত্র তিনি নিজের বলে দাবি করছেন, সেগুলো সম্পর্কে কোনো তথ্য সেখানে আছে কি না।’

মানবাধিকার দিবসঃ মানুষের অধিকার ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা by কাজী ফারুক আহমেদ

নারী-পুরুষ নির্বিশেষে খাদ্য নিরাপত্তা, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান, কর্মসংস্থান নিশ্চিতকরণের আকাঙ্ক্ষার প্রেক্ষাপটে পরিবারে কন্যাসন্তানের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ ও স্কুল-কলেজগামী ছাত্রীসহ নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ, একাত্তরে শিক্ষক-বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গকে প্রাধান্য দিয়ে এবং সেই সঙ্গে সম্প্রতি গঠিত জাতীয় মানবাধিকার কমিশন মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধে কতটা কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছে, সেসব বিবেচনায় নানামুখী সামাজিক বৈপরীত্যের মধ্যে আজ বাংলাদেশে সর্বজনীন মানবাধিকার দিবস পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশসহ জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোয় দিবসটি পালন করা হচ্ছে 'বৈষম্য নিরসনে নিবেদিতপ্রাণ, মানবাধিকার রক্ষায় সদা সচেষ্ট মানুষের প্রতি অবিচল সমর্থন ও সংহতি' ব্যক্ত করে।
এ কথা সত্য, সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষ তার অধিকারের সপক্ষে এবং তা হরণের বিরুদ্ধে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কখনো এককভাবে, কখনো দলবদ্ধ হয়ে অবস্থান নিয়ে আসছে। তবে ইতিহাসের পর্যায়ক্রমিক ধারাবাহিকতায় ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর প্যারিসে সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা গৃহীত হওয়ার পর থেকে তা সংগঠিত আনুষ্ঠানিক রূপপরিগ্রহ করে। সে জন্যই আপাত দৃষ্টিতে সাধারণ মনে হলেও বিশ্বব্যাপী কিছু মানুষ অধিকার রক্ষায় অসাধারণ কর্মকাণ্ডে নিজেদের ব্যাপৃত রেখে চলেছেন। তাঁদের কর্মতৎপরতার খণ্ডচিত্র উপস্থাপনও সহজ নয়। তাঁরা কাজ করেন বৈষম্য, বঞ্চনা ও সন্ত্রাসের অবসানকল্পে। ধর্ম, বিশ্বাস, বর্ণ, অস্পৃশ্যতা, আঞ্চলিকতা, সংখ্যালঘুত্বের কারণে, আদিবাসী ও নারীর প্রতি বৈষম্য নিরসনে নিরলস তাদের প্রয়াস, অপরিহার্য কর্মসূচি। সুবিচার প্রতিষ্ঠায়, মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার নারী-পুরুষের পাশে দাঁড়িয়ে বরাভয় দান, সরকারের কর্মকাণ্ড পরিচালনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় বিভিন্নমুখী বাধা ও প্রতিকূলতার মধ্যেও তাঁরা সোচ্চার। বাংলাদেশের মানবাধিকারের প্রসঙ্গটি এলেই দীর্ঘদিন ধরে বিরাজমান নানামুখী সামাজিক বৈপরীত্যের ছবি উঠে আসে। আমাদের জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী এবং যার মধ্যে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা দুজনই। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে ছেলেদের চেয়ে এখন মেয়েরাই সংখ্যায় বেশি। শিক্ষকতায়, বিশেষ করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে তাদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের মানুষের জীবনে ডিসেম্বর মাস ঘটনাবহুল। বেদনা ও বিজয়_দুই কারণেই অনন্যসাধারণ। এ মাসেই বরেণ্য শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিকসহ দেশের মেধাসম্পন্ন সেরা সন্তানদের পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রভুদের যোগসাজশে এ দেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধ শক্তি মানবাধিকারও ভূলুণ্ঠিত করে। বিলম্বে হলেও সেই বর্বরতার বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। একটা কথা মনে রাখা দরকার, মানুষের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা ও অধিকার যেমন চিরন্তন তেমনি অপ্রতিরোধ্য।

পুঁজিবাজারে অস্থিরতা

বেশ কিছুদিন ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকার পর গত তিন দিনে দেশের শেয়ারবাজারে উল্লেখযোগ্য দরপতন ঘটে। সোমবার শুরু হয়ে মঙ্গলবার ঢাকা ও চট্টগ্রামের শেয়ারবাজারে লেনদেন হওয়া কম্পানিগুলোর ৮৫ শতাংশের দরপতন হয়। বুধবারও তা অব্যাহত থাকায় বিনিয়োগকারীরা অস্থির হয়ে ওঠেন এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এঙ্চেঞ্জ কমিশন ও ঢাকা স্টক এঙ্চেঞ্জ অবরোধসহ ভাঙচুর-অগি্নসংযোগে নেমে পড়েন। আপাতদৃষ্টিতে এ দরপতনের কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে, গত সোমবার সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এঙ্চেঞ্জ কমিশন (এসইসি) দেশের দুই স্টক এঙ্চেঞ্জের সঙ্গে বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত দেয় যে বিও হিসাবে জমা দেওয়া চেকের টাকা নগদ না হওয়া পর্যন্ত শেয়ার কেনা যাবে না এবং মঙ্গলবার প্রচলিত নেটিং বন্ধ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করা হয়।

এসব সিদ্ধান্তের পরপরই শেয়ারবাজারে ভয়াবহ তারল্য দেখা দেয়। উল্লেখ্য, সিকিউরিটিজ আইনে এ নির্দেশনাগুলো আগেই ছিল, কিন্তু এত দিন তা যথাযথভাবে পালন করা হয়নি। শেয়ারবাজারে নানা কারণে তারল্য দেখা দিতে পারে, দরপতন ঘটতে পারে। দেশে কোনো বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে, কোনো আন্তর্জাতিক সংকট তৈরি হলে, এমনকি কোনো জোর গুজব থেকেও শেয়ারবাজারে পতন দেখা দিতে পারে। আবার অনেক সময় কৃত্রিমভাবে সিন্ডিকেটের দ্বারাও আমরা শেয়ারবাজারে পতন ঘটতে দেখেছি। এসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জোর তদন্তের ব্যবস্থা হলো একমাত্র ব্যবস্থা। টোকিও স্টক এঙ্চেঞ্জ, নিউইয়র্ক স্টক এঙ্চেঞ্জের মতো শক্তিশালী বাজারেও ব্যাপক দরপতনের ঘটনা অজস্রবার দেখা গেছে। শেয়ারবাজারের অভ্যন্তরে হাতাহাতি, মারামারিও দেখা যায়। কিন্তু রাস্তায় নেমে মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার ভাঙা একমাত্র বাংলাদেশ ছাড়া কোথাও দেখা যায় না। শেয়ারবাজারকে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করার বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু জনজীবন বিপর্যস্ত করার শেয়ার-ব্যবসায়ীদের এ মনোভাবকে প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়। আমরা লক্ষ করে আসছি, বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে কোনো স্থিতিশীলতা নেই। বাজার হয় অতিমূল্যায়িত হচ্ছে, অথবা বাজারে ধস নামছে। বেশ কিছুকাল ধরেই বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে আসছিলেন বাজার অতিমূল্যায়িত হওয়ার ব্যাপারে। তাঁদের অনেকেই মনে করেন, শেয়ারবাজার অতিমূল্যায়িত হলে ধসের ভয়ও বেড়ে যায়। তাই এ সাময়িক পতনে কেউ কেউ আতঙ্কিত না হয়ে বরং একে বাজার সংশোধন হিসেবে দেখতে চাইছেন। তবে আমাদের শেয়ারবাজারে বেশ কিছুকাল ধরেই অন্য একটি সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। সেটা হলো, শেয়ারবাজার সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকা সত্ত্বেও অসংখ্য মানুষ তার সর্বশেষ পুঁজিও এ বাজারে বিনিয়োগ করছেন। এতে নানা ধরনের সমস্যার আশঙ্কা রয়েছে। শেয়ারবাজারের ওঠানামা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু শেয়ারবাজারের সঙ্গে এমন সব মানুষও জড়িয়ে পড়ছেন যে দরপতন হলে তাঁরা সামাজিক সমস্যা হয়ে দেখা দিতে পারেন। এ জন্য শেয়ারবাজার সম্পর্কে একটি সাধারণ ধারণা সরকারের পক্ষ থেকে প্রচার করার প্রয়োজন। কিন্তু তেমন কোনো উদ্যোগ আছে বলে আমাদের জানা নেই। আমরা আশা করি, দেশের পুঁজিবাজারে স্বাভাবিক অবস্থা যাতে বজায় থাকে, সেদিকে সরকারের সতর্ক দৃষ্টি থাকবে।

মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনা

রসিংদীতে গত বুধবার বিকেল পাঁচটার দিকে দুটি যাত্রীবাহী ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৪ জন নিহত এবং দেড় শতাধিক যাত্রী আহত হয়েছেন। দুটি ইঞ্জিন ও অনেক বগি দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। আহতদের মধ্যে অনেকেরই অবস্থা আশঙ্কাজনক। বুধবার রাতেই ২৫ জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। রাত ৮টার দিকে উদ্ধারকারী ট্রেন ঘটনাস্থলে পেঁৗছে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। তাদের সহযোগিতা করছে সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের জন্য তাৎক্ষণিক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং কমিটি দুটি তাদের কার্যক্রমও শুরু করেছে।

বাংলাদেশে ট্রেন দুর্ঘটনা যেন নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হতে চলেছে। মুখোমুখি সংঘর্ষ, লাইনচ্যুত হওয়া, লেভেল ক্রসিংয়ে অন্যান্য যানবাহনের সঙ্গে সংঘর্ষ ইত্যাকার ঘটনা অনবরত ঘটেই চলেছে। গত এক বছরে এ রকম ৭২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। তাতে কয়েক শ মানুষ হতাহত হয়েছে। কিন্তু কেন এমন হচ্ছে? যতদূর জানা যায়, বাংলাদেশ রেলওয়ের অবস্থা এখন এতটাই শোচনীয় যে এটি রীতিমতো মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। রেলওয়েতে এখন দক্ষ লোকবলের অভাব চূড়ান্ত পর্যায়ে পেঁৗছেছে। প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে অধিকাংশ রেলপথ চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। ট্রেন চলার সময় লাইন মাটিতে দেবে যায়। লাইনের নিচে পাথর প্রায় নেই বললেই চলে। স্লিপারগুলোও ভাঙাচোড়া। অধিকাংশ ইঞ্জিনের আয়ুষ্কাল এক দশক বা আরো বেশি সময় আগেই শেষ হয়ে গেছে। অথচ রেলওয়ের উন্নয়নের কথা বলতে বলতে মন্ত্রী-আমলাদের মুখে ফেনা উঠে যায়। বিগত সরকারের যোগাযোগমন্ত্রী তো আমাদের সুপারসনিক ট্রেন, হাওয়াই ট্রেন, পাতাল ট্রেন_কত রকম স্বপ্নই দেখিয়েছিলেন। সেসব বস্তাপচা কথায় মানুষের আস্থা এখন খুবই কম।
রেলওয়েতে প্রকল্পের পর প্রকল্প নেওয়া হয়, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। ১৪ বছর আগে ৪৯টি ইঞ্জিন কেনার জন্য ৫৫৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল তিন বছর। অথচ এ পর্যন্ত কেনা হয়েছে ৩৭টি। দুই দফা সংশোধনের পর বর্তমানে প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারিত হয়েছে ৯৩৫ কোটি টাকা। রেলওয়েতে এভাবে সময় বাড়ানোর চক্রে বর্তমানে প্রায় ৩৬টি প্রকল্প ঘুরপাক খাচ্ছে। তিন থেকে চার বছর আগে নেওয়া পাঁচটি প্রকল্প রয়েছে, যেগুলোর মেয়াদ আগামী ছয় মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে, অথচ সেগুলোর কোনো কাজই এখনো শুরু হয়নি। ২০০৬ সালে রেলওয়ে সংস্কার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল, যার মেয়াদ শেষ হবে ২০১১ সালের জুনে। অথচ আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে প্রকল্পের অর্ধেক কাজও এখনো শেষ হয়নি। ২০০৪ সালে ১৩টি স্টেশনে সিগনালিং ব্যবস্থা আধুনিকীকরণের প্রকল্পও হাতে নেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু কাজ শুরু না হওয়ায় এর মেয়াদ ২০১৩ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে নেওয়া ২০টি প্রকল্পের মধ্যে মাত্র ছয়টি প্রকল্পের কাজ ইতিমধ্যে শুরু করা গেছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কেন হয়, তা সচেতন যেকোনো নাগরিকেরই জানা কথা। কিন্তু জনগণের বিপুল ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় আসা মহাজোট সরকারের আমলেও এ ধরনের জটিলতা বিদ্যমান থাকবে, এটা কারো কাম্য নয়। নরসিংদীর দুর্ঘটনায় রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতাসহ অনেকেই শোক প্রকাশ করেছেন। জানি না এ শোক হতাহতদের পরিবারকে কতটুকু শান্ত্বনা দিতে পারবে। আমরা চাই, এ খাতটি যেন আর রাষ্ট্রীয় অবহেলার শিকার না হয়।

খালেদা জিয়ার সম্পদের হিসাব চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সম্পদের হিসাব চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রীকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের সপ্তম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব একথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আয়কর বিভাগ তদন্ত করে দেখুক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দেওয়া হিসাবের সঙ্গে তা সংগতিপূর্ণ কি না। তাঁর আয়কর ফাইল খতিয়ে দেখা হোক। কারণ ক্যান্টনমেন্টের বাসভবনে যেসব অতিমূল্যবান জিনিসপত্র তিনি তাঁর নিজের বলে দাবি করছেন, সেগুলো সম্পর্কে কোনো তথ্য সেখানে আছে কি না।’
বিরোধী দলের সংসদ বর্জনের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিরোধী দলের সদস্যদের সংসদ বর্জনের কারণটা দেশবাসীর কাছে পরিষ্কার নয়। সংসদে কথা বলতে না দেওয়ায় আমরা সংসদ বর্জন করেছিলাম। এখন তো সংসদে কেউ তাঁদের মাইক বন্ধ করে না। তাহলে তাঁরা কেন সংসদে আসছেন না?’
এ সময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে সায় দিতে দেখা যায়। প্রধানমন্ত্রীর আগে বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ।
এরশাদ বিএনপির সংসদ বর্জনের সমালোচনা করে বলেন, ‘সংসদে এসে জনগণের কথা বলুন। হরতাল করে মানুষকে জিম্মি করবেন না। কারও মান-অভিমান দেখার সুযোগ নেই।’
এরশাদের বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওনার ভাবি সাহেবা সংসদে নাই, উনি তো আছেন। ওনার ভাবি সাহেবার মান উনি ভাঙাবেন কি না, উনি ভেবে দেখবেন। তবে ভাবি সাহেবার বদলে উনি এভাবে সংসদে দায়িত্ব পালন করলে গণতন্ত্র রক্ষা করা কঠিন হবে না।’
শেখ হাসিনা বেগম জিয়ার বাসভবন সম্পর্কে বলেন, ‘এরশাদ সাহেব আদর করে ভাবি সাহেবাকে বাড়ি দিয়েছেন, তাই ওটা তোলেন কী করে?
সামরিক বাহিনীর বাড়ি এরশাদ সাহেব এক কলমের খোঁচায় কীভাবে বেগম খালেদা জিয়াকে দিলেন, তার জবাবও হয়তো তাঁকে দিতে হবে। কথা ছিল গুলশানের বাড়ি দেওয়ার পর তিনি ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি ছেড়ে দেবেন। কিন্তু দেননি। ১৬৮ কাঠা দেওয়া হলেও উনি দখলে রেখেছিলেন ২২৮ কাঠা। এখন আদালতের রায় অনুসারে সামরিক বাহিনীর জমি সামরিক বাহিনীর হাতেই চলে যাবে। অথচ এ বাড়ি নিয়ে অনেক হরতাল হলো। মানুষ হত্যা করেছিল।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ওই বাড়িতে ছিল ৪৫টি কামরা, ৬৪টি এসি, ৭১টি সোফাসেট, ১৭টি ফ্রিজ, এক ডজন বাথরুম, ৭ হাজার ২০০ বর্গফুট কার্পেট, রান্নাঘর চারটিসহ অসংখ্য মালামাল। ২৯টি গাড়িতে করে তাঁর মালামাল নেওয়া হয়। এখন আবার বাড়িতে থাকা থাই অ্যালুমিনিয়ামের গ্লাস, দরজা, গ্রিল, কমোড, বেসিন, আয়না, চৌকাঠসহ কাঠের দরজা, পানির ট্যাংক, ইতালিয়ান পর্দা ও কার্পেট, সিঁড়ির হাতলহ অসংখ্য জিনিস খুলে নিয়ে যেতে চান। মানুষ তো বাড়ি ছাড়লে এসব জিনিস নেয় না। নিশ্চয়ই এসব জিনিস অনেক মূল্যবান বলে উনি নিয়ে যেতে চান। বিরোধীদলীয় নেতা নিজেই তো বাড়ি ছাড়ার দিন ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের লোকদের বলেছেন, এসব দামি জিনিস যেন নষ্ট না হয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জিয়াউর রহমান ভাঙা সুটকেস আর ছেঁড়া গেঞ্জি রেখে গেলেন, আর খালেদা জিয়া এসব সামগ্রী কোথা থেকে পেয়ে গেলেন সেটাও তো দেখা প্রয়োজন।’
প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, ‘যেসব সম্পদ নিয়ে গেলেন, এগুলো কি সব ওনার নিজের পয়সায় কেনা? অতিমূল্যমানের জিনিস কেনার অর্থ তিনি কোথায় পেলেন? নিজের টাকায় কেনা হলে এর উত্স জাতিকে জানাতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী সরকারের গত ২৩ মাসের সাফল্যের দাবি করে বলেন, ‘বিএনপি সরকারের প্রথম ২৩ মাসের সঙ্গে এ সরকারের ২৩ মাস মিলিয়ে দেখুন। ওই সরকার ক্ষমতায় এসে প্রথম দুই বছর তো ধর্ষণ, খুন আর জুলুমের দেশে পরিণত করেছিল। আর বর্তমান সরকারের সময় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো আছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ করা শুধু ঘোষণাই নয়, এর বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছে সরকার। গত ২৩ মাসে মঙ্গা এলাকায় এবার কেউ মঙ্গার কথা শোনেনি।’
ঢাকার যানজট প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মাটির নিচ দিয়ে রাস্তা এবং ফ্লাইওভার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলার মানুষকে একটা উন্নত জীবন দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য। এ জন্য খাদ্য নিরাপত্তা ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’
জাতীয় পার্টির প্রাদেশিক সরকারের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দেশে সাত প্রদেশ করে খুব লাভ হবে না। কিছু কর্মকর্তা বাড়বে আর খরচ বাড়বে। এতে করে মাথা ভারী প্রশাসন তৈরি হবে। তিনি বলেন, এর চেয়ে জেলা-উপজেলা পরিষদসহ স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে পারলে বেশি লাভ হবে। ইতিমধ্যে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করে গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিদেশের যে মাটিতে প্রথম বাংলাদেশের পতাকা উড়েছিল

বিদেশের মাটিতে ভারতের কলকাতার পাকিস্তানি ডেপুটি হাইকমিশন অফিসে ১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল বাংলাদেশের পতাকা উড়েছিল। পাকিস্তানের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে ডেপুটি হাইকমিশনার এম হোসেন আলী দড়ি টেনে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। তিনিই প্রথম পতাকা উত্তোলনের পাশাপাশি বাংলাদেশের পক্ষে কূটনৈতিক কার্যক্রম শুরু করেন। ফলে স্বাধীনতাযুদ্ধ নতুন মোড় নেয়। বিদেশে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গড়ে ওঠে। কয়েকটি রাষ্ট্র বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধকে সমর্থন জানায়। কিন্তু কলকাতার দূতাবাসে ঐতিহাসিক ওই ঘটনার কোনো তথ্য ও স্মারক নেই।

কলকাতার মুজিব সরণির ডেপুটি হাইকমিশন অফিসের কর্মকর্তা হোসেন আলী প্রথম পতাকা তুলেছিলেন_এ কথা জানালেও এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য দিতে পারেননি। আনন্দবাজার পত্রিকা সূত্রে জানা যায়, হোসেন আলী দূতাবাস কর্মীদের নিয়ে নিজে দড়ি টেনে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন ১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল। একই সঙ্গে তিনি কেন্দ্রীয় হলঘর থেকে পাকিস্তানের জাতির পিতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ছবি সরিয়ে বঙ্গবন্ধুর ছবি টাঙিয়ে দেন। হাইকমিশন অফিসের সামনে লেখা 'পাক হাইকমিশন' মুছে লেখেন 'বাংলাদেশ কূটনৈতিক মিশন'। তিনি বাংলাদেশের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য জানিয়ে তাঁর অফিসকে বাংলাদেশ দূতাবাস করে স্বাধীনতার পক্ষে কূটনৈতিক কার্যক্রম শুরু করেন। ১৮ এপ্রিল পতাকা উত্তোলনের সময় উপস্থিত ছিলেন উদীচীর সাবেক সভাপতি নাট্যব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে হাসান ইমাম বলেন, 'ওই সময় আমি বিক্ষুব্ধ শিল্পী সমাজের আহ্বায়ক। ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ আমাদের মগবাজার ওয়্যারলেস মোড়ের বাড়িতে পাকিস্তানি আর্মি হামলা চালায়। তখন আমি ঢাকা থেকে মাগুরা-ঝিনাইদহ হয়ে মেহেরপুরে আসি। এরপর মুজিবনগর হয়ে কলকাতায় যাই। ৫ এপ্রিল তাজউদ্দীন আহমদ দিলি্ল থেকে কলকাতা আসেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলি। এরপর আমি হোসেন আলীর সঙ্গে কথা বলি। ১৮ এপ্রিল তিনি হাইকমিশন অফিসের লনে পতাকা উত্তোলন করেন। পরে দেশ স্বাধীন হলে ১৬ ডিসেম্বর আমরা সেখানে সমাবেশ করি।' পতাকা উত্তোলনের সেই ঐতিহাসিক স্থানের পাশে একটি চাঁপা ফুলগাছে ফুল ফুটেছে। কিন্তু সেখানে কোনো স্মারক নেই। এ ব্যাপারে হাইকমিশন অফিসের ফার্স্ট সেক্রেটারি আবুল হাসান মৃধা বলেন, 'হোসেন আলী সাহেব বিদেশের মাটিতে প্রথম কলকাতার হাইকমিশনে পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। ঐতিহাসিক ওই ঘটনাটির স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।' মুক্তিযুদ্ধের ওই পতাকা উত্তোলনের ঘটনাটি নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিক। এ কারণে এখানে একটি স্মারক নির্মাণ করা হলে নতুন প্রজন্ম বিদেশের মাটিতে প্রথম পতাকা উত্তোলনের ইতিহাস জানতে পারবে।

রেডিও অনুষ্ঠানে শ্রোতাদের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন সু চি

মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চির অংশগ্রহণে একটি প্রশ্ন-উত্তরের অনুষ্ঠান প্রচার করছে রেডিও ফ্রি এশিয়া। বার্মিজ ভাষায় প্রচারিত এ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মিয়ানমারের জনগণ এই প্রথমবারের মতো সু চির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ পেল। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে পরিচালিত ওই রেডিওর এ অনুষ্ঠানে টেলিফোনে কিংবা ই-মেইল পাঠিয়ে প্রশ্ন করা যায়। রেডিও ফ্রি এশিয়ার (আরএফএ) এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘ডাও অং সান সু চি অ্যান্ড দ্য পিপল’ নামের এ অনুষ্ঠান গত ৩০ নভেম্বর প্রচার করা হয়।

প্রথম দিন মিয়ানমারের ছয়জন প্রবাসী নাগরিক প্রশ্ন করেন। প্রশ্নকারীদের মধ্যে চিকিৎসক, কার্টুনিস্ট, ছাত্রনেতা, বৌদ্ধভিক্ষু ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতা রয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে সু চি বলেন, ‘মিয়ানমারের ওপর অবরোধ আরোপ করা হয়েছে। আরও করা হতে পারে। আমরা চেষ্টা করছি, এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটানো যায় কি না।’
আরএফএ বারমিজের পরিচালক নিয়েইন শয়ে বলেন, এখন থেকে প্রতি শুক্রবার সান্ধ্য অধিবেশনে এ অনুষ্ঠান প্রচার করা হবে। মিয়ানমারের প্রাপ্তবয়স্কদের অন্তত ২০ শতাংশ এ অনুষ্ঠান শোনেন। ইতিমধ্যে বহু শ্রোতা টেলিফোনে ও ই-মেইল পাঠিয়ে অনেক প্রশ্ন করেছেন।
শান্তিতে নোবেলজয়ী সু চিকে গত ২১ বছরের মধ্যে অন্তত ১৫ বছর গৃহবন্দী করে রাখে জান্তা সরকার। গত ১৩ নভেম্বর সে দেশের গণতন্ত্রের প্রতীক এ নেত্রীকে মুক্তি দেওয়া হয়। এরপর থেকে তিনি জনসংযোগ করছেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। এবার রেডিও অনুষ্ঠানে শ্রোতাদের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন।
নিয়েইন শয়ে বলেন, মিয়ানমারের সরকারি প্রচারমাধ্যমে এ ধরনের জনমত প্রকাশের কোনো সুযোগ নেই। প্রায় পাঁচ কোটি মানুষের এই দেশে এই প্রথম রেডিওতে প্রচারিত অনুষ্ঠানে সু চির মতো নেত্রীকে প্রশ্ন করার সুযোগ পেয়ে অনেক শ্রোতাই দারুণ আনন্দিত। শ্রোতাদের কেউ কেউ জানিয়েছেন, সু চি আবারও এ ধরনের কোনো অনুষ্ঠানে কথা বলবেন, সু চিকে প্রশ্ন করা যাবে, স্বপ্নেও কল্পনা করেনি সাধারণ মানুষ।
এদিকে মিয়ানমারের সব রাজনৈতিক কারাবন্দীকে মুক্তি দেওয়ার জন্য দেশটির জান্তা সরকারের প্রতি আবারও আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। গত সোমবার এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়।
সম্প্রতি জাতিসংঘের বিশেষ দূত বিজয় নাম্বিয়ার মিয়ানমার সফর করেন। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের ডাকা এক সভায় সোমবার নাম্বিয়ার বক্তব্য দেন। ‘গ্রুপ অব ফ্রেন্ড’-এর এ সভায় বান কি মুন ছাড়াও ব্রিটেন, চীন, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ ১৪টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, সভায় অংশগ্রহণকারীরা মনে করেন, গণতন্ত্রের পথে উত্তরণের জন্য মিয়ানমারের জান্তা সরকারের উচিত, সু চির সঙ্গে আলোচনায় বসা। এ ছাড়া সে দেশের সব রাজনৈতিক কারাবন্দীকে মুক্তি দেওয়া। এএফপি ও পিটিআই অনলাইন।

তিন দেশের নিরাপত্তা বাড়াতে গোপন পরিকল্পনা করে ন্যাটো

সামরিক জোট ন্যাটো রাশিয়ার যেকোনো হুমকি মোকাবিলায় বাল্টিক রাষ্ট্র এস্তোনিয়া, লাটভিয়া ও লিথুয়ানিয়ার প্রতিরক্ষা-ব্যবস্থা বাড়ানোর গোপন পরিকল্পনা করে। উইকিলিকসে প্রকাশিত নথির বরাত দিয়ে গার্ডিয়ান পত্রিকা গতকাল মঙ্গলবার এ তথ্য প্রকাশ করেছে। এদিকে উইকিলিকসের বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, জঙ্গিদের হাতে যাতে অস্ত্র না পৌঁছায়, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে আরব দেশগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। ইরান ও সিরিয়ায় ইসলামি জঙ্গিদের হাতে অস্ত্র সরবরাহে বাধা দিতে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করে ওয়াশিংটন।

উইকিলিকসের তথ্য অনুযায়ী, ন্যাটো রাশিয়ার ‘হুমকি’ থেকে বাল্টিক রাষ্ট্র এস্তোনিয়া, লাটভিয়া ও লিথুয়ানিয়াকে রক্ষায় গোপন পরিকল্পনা করে। চলতি বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির আহ্বানে ন্যাটোর সদর দপ্তর বেলজিয়ামের ব্রাসিলিয়ায় এ পরিকল্পনার খসড়া করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ওই পরিকল্পনায় স্বাক্ষর করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে ন্যাটো ও রাশিয়ার মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে বলে এই পরিকল্পনা গোপন রাখা হয়। ২০০৮ সালে রাশিয়া-জর্জিয়া যুদ্ধের পর বাল্টিক তিন রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা-ব্যবস্থা জোরদার করতে এই পরিকল্পনা নেওয়া হয়।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র পোল্যান্ডের নিরাপত্তা বাড়ানোরও প্রস্তাব দেয়। রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা-ব্যবস্থা বাড়াতে ওই অঞ্চলের দুটি বন্দরে বিশেষ নৌসেনা মোতায়েনেরও প্রস্তাব দেওয়া হয়।
গার্ডিয়ান-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে গত মাসে অনুষ্ঠিত ন্যাটোর সম্মেলনে জোটের নেতারা খসড়া গোপন ওই পরিকল্পনার অনুমোদন দেন। লিসবন সম্মেলনেই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা-ব্যবস্থা এবং আরও কিছু নিরাপত্তা ইস্যুতে একমত হয় রাশিয়া ও ন্যাটো। এর মধ্য দিয়ে রাশিয়া-জর্জিয়া যুদ্ধের পর ন্যাটোর সঙ্গে রাশিয়ার নতুন সম্পর্কের সূচনা হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের নীতি গ্রহণ করেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পোল্যান্ড ও তিন বাল্টিক রাষ্ট্র আক্রান্ত হলে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, জার্মানি, পোল্যান্ডসহ ন্যাটো জোটের নয়টি ডিভিশন একসঙ্গে অভিযান চালাবে। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী বছর বাল্টিক অঞ্চলে সাময়িক মহড়া চালানোর কথা রয়েছে ন্যাটোর।
এর আগে জার্মানিসহ পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো রাশিয়ার উদ্বেগের কারণে বাল্টিক অঞ্চলে ন্যাটোর ওই পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছিল।
উইকিলিকসের বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস-এর প্রতিবেদনে দেখা যায়, সিরিয়া লেবাননের হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর কাছে গোপনে অস্ত্র সরবরাহ করলে যুক্তরাষ্ট্র এর প্রতিবাদ জানায়।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বলেন, ‘সিরিয়া আমাদের নিশ্চিত করেছে, তারা নতুন করে হিজবুল্লাহর কাছে অস্ত্র সরবরাহ করছে না। আমরা এ ব্যাপারে সচেতন আছি।’ এএফপি, বিবিসি।