Friday, December 10, 2010

খালেদা জিয়ার সম্পদের হিসাব চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সম্পদের হিসাব চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রীকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের সপ্তম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব একথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আয়কর বিভাগ তদন্ত করে দেখুক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দেওয়া হিসাবের সঙ্গে তা সংগতিপূর্ণ কি না। তাঁর আয়কর ফাইল খতিয়ে দেখা হোক। কারণ ক্যান্টনমেন্টের বাসভবনে যেসব অতিমূল্যবান জিনিসপত্র তিনি তাঁর নিজের বলে দাবি করছেন, সেগুলো সম্পর্কে কোনো তথ্য সেখানে আছে কি না।’
বিরোধী দলের সংসদ বর্জনের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিরোধী দলের সদস্যদের সংসদ বর্জনের কারণটা দেশবাসীর কাছে পরিষ্কার নয়। সংসদে কথা বলতে না দেওয়ায় আমরা সংসদ বর্জন করেছিলাম। এখন তো সংসদে কেউ তাঁদের মাইক বন্ধ করে না। তাহলে তাঁরা কেন সংসদে আসছেন না?’
এ সময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে সায় দিতে দেখা যায়। প্রধানমন্ত্রীর আগে বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ।
এরশাদ বিএনপির সংসদ বর্জনের সমালোচনা করে বলেন, ‘সংসদে এসে জনগণের কথা বলুন। হরতাল করে মানুষকে জিম্মি করবেন না। কারও মান-অভিমান দেখার সুযোগ নেই।’
এরশাদের বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওনার ভাবি সাহেবা সংসদে নাই, উনি তো আছেন। ওনার ভাবি সাহেবার মান উনি ভাঙাবেন কি না, উনি ভেবে দেখবেন। তবে ভাবি সাহেবার বদলে উনি এভাবে সংসদে দায়িত্ব পালন করলে গণতন্ত্র রক্ষা করা কঠিন হবে না।’
শেখ হাসিনা বেগম জিয়ার বাসভবন সম্পর্কে বলেন, ‘এরশাদ সাহেব আদর করে ভাবি সাহেবাকে বাড়ি দিয়েছেন, তাই ওটা তোলেন কী করে?
সামরিক বাহিনীর বাড়ি এরশাদ সাহেব এক কলমের খোঁচায় কীভাবে বেগম খালেদা জিয়াকে দিলেন, তার জবাবও হয়তো তাঁকে দিতে হবে। কথা ছিল গুলশানের বাড়ি দেওয়ার পর তিনি ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি ছেড়ে দেবেন। কিন্তু দেননি। ১৬৮ কাঠা দেওয়া হলেও উনি দখলে রেখেছিলেন ২২৮ কাঠা। এখন আদালতের রায় অনুসারে সামরিক বাহিনীর জমি সামরিক বাহিনীর হাতেই চলে যাবে। অথচ এ বাড়ি নিয়ে অনেক হরতাল হলো। মানুষ হত্যা করেছিল।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ওই বাড়িতে ছিল ৪৫টি কামরা, ৬৪টি এসি, ৭১টি সোফাসেট, ১৭টি ফ্রিজ, এক ডজন বাথরুম, ৭ হাজার ২০০ বর্গফুট কার্পেট, রান্নাঘর চারটিসহ অসংখ্য মালামাল। ২৯টি গাড়িতে করে তাঁর মালামাল নেওয়া হয়। এখন আবার বাড়িতে থাকা থাই অ্যালুমিনিয়ামের গ্লাস, দরজা, গ্রিল, কমোড, বেসিন, আয়না, চৌকাঠসহ কাঠের দরজা, পানির ট্যাংক, ইতালিয়ান পর্দা ও কার্পেট, সিঁড়ির হাতলহ অসংখ্য জিনিস খুলে নিয়ে যেতে চান। মানুষ তো বাড়ি ছাড়লে এসব জিনিস নেয় না। নিশ্চয়ই এসব জিনিস অনেক মূল্যবান বলে উনি নিয়ে যেতে চান। বিরোধীদলীয় নেতা নিজেই তো বাড়ি ছাড়ার দিন ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের লোকদের বলেছেন, এসব দামি জিনিস যেন নষ্ট না হয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জিয়াউর রহমান ভাঙা সুটকেস আর ছেঁড়া গেঞ্জি রেখে গেলেন, আর খালেদা জিয়া এসব সামগ্রী কোথা থেকে পেয়ে গেলেন সেটাও তো দেখা প্রয়োজন।’
প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, ‘যেসব সম্পদ নিয়ে গেলেন, এগুলো কি সব ওনার নিজের পয়সায় কেনা? অতিমূল্যমানের জিনিস কেনার অর্থ তিনি কোথায় পেলেন? নিজের টাকায় কেনা হলে এর উত্স জাতিকে জানাতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী সরকারের গত ২৩ মাসের সাফল্যের দাবি করে বলেন, ‘বিএনপি সরকারের প্রথম ২৩ মাসের সঙ্গে এ সরকারের ২৩ মাস মিলিয়ে দেখুন। ওই সরকার ক্ষমতায় এসে প্রথম দুই বছর তো ধর্ষণ, খুন আর জুলুমের দেশে পরিণত করেছিল। আর বর্তমান সরকারের সময় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো আছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ করা শুধু ঘোষণাই নয়, এর বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছে সরকার। গত ২৩ মাসে মঙ্গা এলাকায় এবার কেউ মঙ্গার কথা শোনেনি।’
ঢাকার যানজট প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মাটির নিচ দিয়ে রাস্তা এবং ফ্লাইওভার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলার মানুষকে একটা উন্নত জীবন দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য। এ জন্য খাদ্য নিরাপত্তা ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’
জাতীয় পার্টির প্রাদেশিক সরকারের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দেশে সাত প্রদেশ করে খুব লাভ হবে না। কিছু কর্মকর্তা বাড়বে আর খরচ বাড়বে। এতে করে মাথা ভারী প্রশাসন তৈরি হবে। তিনি বলেন, এর চেয়ে জেলা-উপজেলা পরিষদসহ স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে পারলে বেশি লাভ হবে। ইতিমধ্যে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করে গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

No comments:

Post a Comment