Monday, June 13, 2011

বাজেটের পর বাজার

দ্রব্যমূল্য নিয়ে প্রতিদিনই সংবাদমাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের খবর প্রকাশিত হয়। সর্বশেষ খবরটি হচ্ছে 'বাজেট ঘোষণার পর আরেক দফা বেড়েছে জিনিসপত্রের দাম।' ভুক্তভোগীদের কাছে এ খবর সঙ্গত কারণেই অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এমনিতেই উচ্চ দ্রব্যমূল্যের যাঁতাকলে পড়ে লোকজনের ভোগানত্মি বেড়েছে তার ওপর বিভিন্ন ছল ছুঁতোয় যদি জিনিসপত্রের দাম বাড়তেই থাকে তাহলে তারা যাবে কোথায়? বাজেট এলেই একটি প্রবণতা দেখা যায় কোন কোন ব্যবসায়ীর মধ্যে।

বাজেটের আগে ও পরে দুই দফায় জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয় তারা। বাজেটে দাম কমুক বা বাড়ুক সেদিকে কোন ভ্রূৰেপ নেই। সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে বাজেটে দাম বাড়েনি এমন পণ্যের দামও বাড়িয়ে দেয় ব্যবসায়ীরা এবং তা বাজেটের উছিলায়। বাজেটে কোন জিনিসের দাম বাড়লে তাৎৰণিকভাবে তা বাড়িয়ে দেয়া হয় কিন্তু কমলে সেটি কার্যকর হয় অত্যন্ত ধীর গতিতে।
ঘোষিত বাজেটে ভোজ্যতেলের দামের ওপর কোন কর বাড়ানো না হলেও বাজেট ঘোষণার পর পরই দুই থেকে পাঁচ টাকা লিটারপ্রতি দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে সিন্ডিকেট চক্র। ফলে দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এমনিতেই এ বছর দফায় দফায় ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। এমনকি মাত্র এক সপ্তাহ আগেও কোম্পানিগুলো সব ধরনের সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়েছে। কিন্তু এক সপ্তাহ না যেতেই বাজেট ঘোষণার পর আবারও তেলের দাম বাড়ানো হয়। এক লিটারের সয়াবিনের বোতল ১১৬ টাকার স্থলে ১২০ টাকা এবং দুই লিটার ২৩৪ টাকার স্থলে ২৪০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। কোম্পানি ভেদে দামের তারতম্য রয়েছে। সে ৰেত্রে দাম আরও বাড়িয়ে দেয়া হয়।
এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় ২০১০ জুলাই থেকে ২০১১-এর ২৫ মে পর্যন্ত পরিশোধিত ও অপরিশোধিত ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে ১০ লাখ ৫২ হাজার ৫১৮ মেট্রিক টন। যা চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট। অথচ ব্যবসায়ীরা বলছেন সরবরাহ কমে যাওয়ার কথা।
ব্যবসায়ীরা যখন এই ধরনের দাবি তুলছেন তখন আনত্মর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমে আসছে। কিন্তু স্থানীয় বাজারে উল্টো তেলের দাম বাড়ছে। দেখা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে কোন জিনিসের দাম বাড়লে সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় বাজারেও তা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু দাম কমলে তার প্রভাব পড়তে অনেক সময় লাগে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখান আহ্বান জানিয়েছেন। ব্যবসায়ীরাও প্রধানমন্ত্রীকে এ ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন। বিশেষ করে আসন্ন রমজানে যাতে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল থাকে সেটি নিশ্চিত করার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। ব্যবসায়ীরা এ ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন ঠিকই কিন্তু বাজারে তো এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। তাহলে বাজেট ঘোষণার পরপরই জিনিসপত্রের দাম বাড়ল কেন? আনত্মর্জাতিক বাজারে যেখানে ভোজ্যতেলের দাম কমছে সেখানে স্থানীয় বাজারে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এটা তো সদিচ্ছার লৰণ নয়। এখন থেকেই দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়াকে টেনে ধরতে না পারলে রমজানে কি তাকে বাগে আনা যাবে?
মানুষজন বিশ্বাস করতে চায় দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া ব্যবসায়ীদের আশ্বাস কেবল কথার কথা নয়, এজন্য বাজারে এর প্রতিফলন দেখতে চান ভুক্তভোগীরা।

No comments:

Post a Comment