Monday, June 13, 2011

রমজানে নিত্যপণ্য আমদানির লক্ষ্যে ২১ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে টিসিবির চুক্তি

মজানে নিত্যপণ্য আমদানির লক্ষ্যে ২১ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে টিসিবি। রোজা শুরু হওয়ার আগেই এসব প্রতিষ্ঠানের পণ্য সরবরাহের কথা রয়েছে। তবে সময়মতো এসব প্রতিষ্ঠান পণ্য সরবরাহ করবে কিনা এ নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। কারণ এরমধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান চুক্তির বাইরে নতুন করে পণ্যের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। কিছু প্রতিষ্ঠান এখনও পারফরম্যান্স গ্যারান্টি জমা দেয়নি।

সূত্র জানায়, রমজানে ভোজ্যতেল, চিনি ও ছোলার দাম সহনীয় রাখতে এ ৩টি পণ্য আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবি। ভোজ্যতেল, চিনি ও ছোলা মিলিয়ে মোট ১ লাখ ৩৯ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন পণ্য সংগ্রহ করা হবে। টিসিবি থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে এ চিত্র উঠে এসেছে।
ওই চিঠিতে দেখা যায় রমজানের আগে পণ্য সরবরাহের লক্ষ্যে কয়েক মাস আগে পণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তি করা হলেও এখনও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান পারফরম্যান্স গ্যারান্টি দেয়নি। এছাড়া কিছু প্রতিষ্ঠান চুক্তির বাইরে পণ্যের দাম বাড়ানোর আবেদন করেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, চুক্তির পর কোন পণ্যের দাম বাড়ানো নিয়মবহির্ভূত। এ কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের চুক্তি বাতিল হতে পারে।
চুক্তি অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো রোজার আগেই টিসিবিকে ২৬ হাজার ২০০ মেট্রিক টন ভোজ্যতেল, ১ লাখ ১২ হাজার মেট্রিক টন চিনি এবং ১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন ছোলা সরবরাহ করার কথা। আগস্টের প্রথম সপ্তাহে রমজান শুরু হবে।
টিসিবি সূত্রে জানা গেছে, সাড়ে ১০ হাজার মেট্রিক টন চিনি সরবরাহের জন্য নেপচুন ট্রেডিং করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি করেছে টিসিবি। ৫১ টাকা ৫৮ পয়সা দরে প্রতিকেজি চিনি সরবরাহের সময় দেয়া হয়েছে আগামী ২০ জুলাই। একইভাবে প্রতিকেজি ৫১ টাকা ৫৮ পয়সা কেজি দরে সাড়ে ১০ হাজার মেট্রিক টন চিনি সরবরাহে ইসলাম গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানটিরও ২০ জুলাই পণ্য সরবরাহের কথা। ৪৮ টাকা ৯৬ পয়সা প্রতিকেজি দরে ১০ হাজার মেট্রিক টন চিনি সরবরাহে চুক্তি হয় গালফ টেকনিক্যালের সঙ্গে। পণ্য সরবরাহের সময় দেয়া হয় ২০ জুলাই। সাড়ে ১২ হাজার মেট্রিক টন চিনি ৫১ টাকা ৫৮ পয়সা কেজি দরে আগামী ২০ জুলাইয়ের মধ্যে সরবরাহের সময় দিয়েছে ইটিসি গ্রুপ। মুন ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে আরও সাড়ে ১২ হাজার মেট্রিক টন চিনি প্রতিকেজি ৪০ টাকা ৪৯ পয়সা দরে সরবরাহের লক্ষ্যে চুক্তি করেছে টিসিবি। তবে এই পণ্য আগামী ২১ জুনের মধ্যে জাহাজীকরণ করা না হলে চুক্তি বাতিলের শর্ত দিয়েছে টিসিবি।
এছাড়া ৪১ টাকা ৩৯ পয়সা কেজি দরে আরও সাড়ে ১২ হাজার মেট্রিক টন চিনি সরবরাহে সিলিকন এন্টাপ্রাইসের সঙ্গে চুক্তি করা হয়। রোজার আগে চিনি সরবরাহের কথা রয়েছে। আল আমিন এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে সাড়ে ১২ হাজার মেট্রিক টন চিনি সরবরাহের চুক্তি হয় প্রতিকেজি ৩৯ টাকা ৮৩ পয়সা দরে। তবে মূল্য বৃদ্ধির আবেদন জানিয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটি। মূল্য বৃদ্ধি গ্রহণযোগ্য নয় বলে ওই প্রতিষ্ঠানকে গতকাল একটি চিঠি দিয়েছে টিসিবি। ১০ হাজার মেট্রিক টন চিনি সরবরাহের লক্ষ্যে মেঘনা গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি করা হয়। প্রতিকেজির মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৫০ টাকা ৪২ পয়সা। এ প্রতিষ্ঠান পারফমেন্স গ্যারান্টি পেশ না করায় টিসিবি থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে গতকাল। একইভাবে চিঠি দেয়া হচ্ছে লারাকান ইন্টারন্যাশনালকে। তারা ৫০ টাকা ৪২ পয়সা দরে আড়াই হাজার মেট্রিক টন চিনি সরবরাহের চুক্তি করে। ৫৫ টাকা ২৪ পয়সা প্রতিকেজি দরে সাড়ে ৮ হাজার মেট্রিক টন চিনি সরবরাহের লক্ষ্যে ইউনাইটেড সুগার মিলসের সঙ্গে চুক্তি করা হয়। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে চিনি সরবরাহের কথা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। ১০ হাজার মেট্রিক টন চিনি ৪৮ দশমিক ৯৬ টাকা কেজি দরে সরবরাহের লক্ষ্যে চুক্তি করা হয় আরব বাংলা কনটেইনার নামক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও পারফরমেন্স গ্যারান্টি জটিলতা তৈরি হয়েছে। চূড়ান্ত মতামত দিতে ৫ দিন সময় দিয়েছে টিসিবি।
এদিকে ২৬ হাজার ২০০ মেট্রিক টন ভোজ্যতেল (সয়াবিন ও পামঅয়েন) সরবরাহের লক্ষ্যে সাতটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রতিকেজি ৮০ টাকা ৫৬ পয়সা মূল্যে ২ হাজার মেট্রিক টন সয়াবিন তেল সরবরাহে চুক্তি হয় মুন ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে। প্রতিষ্ঠানটি চুক্তির পর নতুন করে দাম বাড়াতে বলছে। আদনান ট্রেডার্সের সঙ্গে ৩ হাজার মেট্রিক টন সয়াবিন ৮০ টাকা ৫৬ পয়সা কেজি দরে সরবরাহের কথা থাকলেও একইভাবে এই প্রতিষ্ঠানও দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব পাঠিয়েছে। সোয়ান ট্রেডার্সের সঙ্গে ৫ হাজার মেট্রিক টন সয়াবিন ৮৫ টাকা ৭৩ পয়সা প্রতিকেজি দরে সরবরাহের চুক্তি হয়। রোজার আগে ওই তেল সরবরাহের কথা রয়েছে। ইলেক্স ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে ৪ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন সয়াবিন সরবরাহের চুক্তি হয়, দাম নির্ধারণ করা হয় ৯৪ টাকা ০৬ পয়সা। ২০ জুলাইয়ের মধ্যে এ তেল সরবরাহের কথা রয়েছে। দীপা ফুডসের সঙ্গে চুক্তিতেও একই সময় তেল দেবার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। ৩ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন সয়াবিন সরবরাহে প্রতিকেজির মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১০৬ টাকা। এছাড়া পাম সয়াবিন সরবরাহে চুক্তি হয় দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। এর মধ্যে প্রাইম এডিবল ৯২ টাকা ৩৯ পয়সা প্রতিকেজি দরে তিন হাজার ৮০০ মেট্রিক টন পাম তেল সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দেয়। তারা এলসি খুলেছে বলে টিসিবিকে অবহিত করেছে। অপর প্রতিষ্ঠান আনিসা ফুড ৪ হাজার মেট্রিক টন তেল ৯২ টাকা ৬৯ পয়সা প্রতিকেজিতে সরবরাহের জন্য চুক্তি করে। অন্যদিকে, ছোলা সরবরাহে চুক্তিকৃত দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দানিয়া জামান ফুড ৭৫০ মেট্রিক টন ছোলা ৫৪ টাকা ২৫ পয়সায় এবং রোয়ো ফুড ৭৫০ মেট্রিক টন ছোলা ৫৪ টাকা ২৫ পয়সা কেজি দরে সরবরাহের চুক্তি করেছে। উভয় প্রতিষ্ঠানই আগামী শবেবরাতের আগে পণ্য সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অতীতে অনেক প্রতিষ্ঠান টিসিবির সঙ্গে চুক্তি করেও সময়মতো পণ্য সরবরাহ করেনি। এমন অনেক প্রতিষ্ঠান চুক্তি করেছে যে শেষে তাদের ঠিকানাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। সে ধরনের কিছু ঘটলে সংকট হতে পারে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে দেখাগেছে ৩১টি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সময়ে টিসিবিকে পণ্য সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা দেয়নি। প্রতিবছরই এসব প্রতিষ্ঠান সিন্ডিকেট করে টিসিবির উদ্যোগকে বানচাল করে। সূত্র জানায়, সম্প্রতি টিসিবি কার্যালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী এসব প্রতিষ্ঠান প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করে ভবিষ্যতে অনাকাঙ্ক্ষিত এমন ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য সতর্ক করেছেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান বলেন, রমজানে নিত্যপণ্যের বাজার সহনীয় রাখতে টিসিবির মাধ্যমে পণ্য আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সময়মতো এসব পণ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। তবে আমরা চাই নতুন নতুন উদ্যোক্তা গড়ে ওঠুক। আর এজন্য টিসিবি'র পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে নতুনদের সুযোগ দেয়া হচ্ছে।

No comments:

Post a Comment