Monday, June 13, 2011

রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব কোন্দল ৫ মাসে ১৫শ' খুন

রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-কোন্দল আর প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। গত ৫ মাসেই সারাদেশে খুন হয়েছেন ১৫'শ জন। ঘটেছে একাধিক রাজনৈতিক সহিংস ঘটনাও। এসব ঘটনায় জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে এসব ঘটনা পুলিশকে জানাতে গিয়েও হয়রানির শিকার হচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। ফলে অভিযোগ ও মামলা করতে এক ধরনের অনীহা দেখা দিয়েছে অনেকের মধ্যেই। এ তথ্য সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

তবে পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার সংবাদ'কে জানিয়েছেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ইউপি নির্বাচনে ২/১টি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে। এখন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়েও ভালো বলে মন্তব্য বরেছেন তিনি।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত মে মাসে সারাদেশে ৩২৫ জন খুন হয়েছেন। এরমধ্যে রাজধানীতে ২৩, চট্টগ্রাম শহরে ৫, খুলনা শহরে ৩, রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট শহরে ১, ঢাকা বিভাগে ৯৫, চট্টগ্রাম বিভাগে ৬৫, সিলেট বিভাগে ২৬, খুলনায় ৩৪, রাজশাহী বিভাগে ৩৮ রয়েছে। এছাড়াও মে মাসে বড় ধরনের ডাকাতির ঘটনা ৫১, দস্যুতা ৮৭, অপহরণ ৬৫, চুরি সাড়ে ৭শ', অন্য অপরাধ ৭ হাজার ১শ৩৫, চোরাচালানী ৪শ'র বেশি। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
এপ্রিল মাসে সারাদেশে ৩২৭ খুনের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে ঢাকায় (শহরে) ২২, চট্টগ্রাম শহরে ৮, খুলনা, রাজশাহী বরিশালে ৬, সিলেটে ৩, ঢাকা বিভাগে ১০৭, চট্টগ্রাম বিভাগে ৪৬, সিলেট বিভাগে ১৯ জন, খুলনা বিভাগে ৩৯, রাজশাহী বিভাগে ৬৩ রয়েছে। সূত্রমতে, এপ্রিল মাসে ৩৬ বড় ধরনের ডাকাতি ও ৯০ দস্যুতার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও আরও অনেক ডাকাতি ও দস্যুতার ঘটনা ঘটলেও ঝামেলা এড়াতে অনেকেই থানায় অভিযোগ করেনি। ডাকাতি ছাড়াও অপহরণ ৮২, পুলিশ নির্যাতনের ঘটনা ৭৪ ঘটেছে বলে পুলিশ জানায়। মার্চ মাসে সারাদেশে ৩১৬ হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে রাজধানীতে ২৬, চট্টগ্রামে ১০, চট্টগ্রাম রেঞ্জে (বিভাগ) ৪৪, সিলেট রেঞ্জে (বিভাগ) ৩০, খুলনা রেঞ্জে ৩১, রাজশাহী রেঞ্জে ৫৯ ঘটনা ঘটছে। সবচেয়ে বেশি খুনের ঘটনা রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলায় ঘটেছে। এছাড়াও মার্চ মাসে ৬২ ডাকাতি, ৮৪ দস্যুতার ঘটনা ঘটছে। এমন আরও অনেক ঘটনা রয়েছে তার অভিযোগ থানায় পেঁৗছেনি। আবার কেউ পুলিশি হয়রানি থেকে রক্ষা পেতে ডাকাতির পর আবার মামলা করতে বা পুলিশকে জানালে লাভ হবে না বলে মামলা করতে অস্বীকার করে। এ কারণে ডাকাতির অনেক মামলা ধামাচাপা পড়ে যায়।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে সারাদেশে ২৮০ খুনের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে ঢাকা ২১, ঢাকা বিভাগে ৬৫, চট্টগ্রামে ৭, চট্টগ্রাম বিভাগে ৪৫, রাজশাহী বিভাগে ৬১ খুনের ঘটনা ঘটেছে। একই মাসে সারাদেশে ৬৩ ডাকাতি, ৯৯ দস্যুতার ঘটনা ঘটেছে। শিশুসহ অপহরণের ঘটনা ৬৩।
গত জানুয়ারি মাসে সারাদেশে ২শ' ৭৮ খুনের ঘটনা ঘটছে। এরমধ্যে রাজধানীতে ২৬ ও ঢাকা বিভাগে ৮৫, চট্টগ্রাম বিভাগে ৪৫, রাজশাহী বিভাগে ৫৩ খুনের ঘটনা ঘটছে। এছাড়াও ডাকাতি ৬৯ ও দস্যুতা ৯৩।
সূত্র জানায়, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের কারণে বিভিন্ন ইউনিয়নের আধিপত্যের বিরোধকে কেন্দ্র করে প্রায়ই সহিংস ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনার কারণে সম্প্রতি লক্ষ্মীপুর, নরসিংদীর বিভিন্ন জেলায় একাধিক রাজনৈতি সহিংস ঘটনা ঘটেছে। এ সময় প্রতিপক্ষের হাতে খুনের ঘটনা ঘটেছে। অন্য জেলাগুলোতে রাজনৈতিক সহিংস ঘটনা বাড়ছে। নির্বাচন নিয়ে প্রতিদিন ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন ওয়ার্ডে উত্তেজনা বিরাজ করছে। একপক্ষের ওপর অন্যপক্ষ হামলা করছে। এতে রাজনৈতিক ও আধিপত্যের সংঘাত বাড়ছে। এসব ঘটনার মামলা হয় না। এতে নিরীহ মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। আবার পুলিশ আগের চেয়ে বেপরোয়া হয়ে গেছে। যার কারণে জনগণ থানায় গিয়ে আগের মতো সেবা পাচ্ছেন না। পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে লক্ষ্মীপুরের দত্তপাড়া ইউনিয়নে নির্বাচনকে সামনে রেখে আনোয়ার বাহিনীর প্রধান আনোয়ার খুন হয়েছে। খুনের ঘটনায় ৩/৪ জন জড়িত বলে স্থানীয় লোকজন ধারণা করছে। কিন্তু নির্বাচন উপলক্ষে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে প্রতিহিংসার কারণে নিরপরাধী অনেককেই আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আবার লক্ষ্মীপুর শহরে ইউপি নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় মারপিটের ঘটনায় পুলিশ শামীম বাহিনীর প্রধান শামীমকে গ্রেফতার করেছে। ওই ঘটনার সময় শামীমের সঙ্গে একটি অটোরিকশায় ৩-৪ জন ছিল। অথচ সেই মামলায় নিরপরাধী অনেককেই আসামি করা হয়েছে। যারা ঘটনার সময় দেশেও ছিল না। এমন অভিযোগ রয়েছে। এভাবে দেশের বিভিন্ন জেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে নির্বাচনী সহিংস ঘটনা বাড়ছে। এছাড়াও রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সম্ভব্য ওয়ার্ড কমিশনার প্রার্থীরা আতংকে আছে। অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক হত্যাকা- ছাড়াও পারিবারিক কলহসহ নানা কারণে খুনের ঘটনা ঘটছে। ডাকাতি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজি থেমে নেই।
গত মঙ্গলবার দিনদুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ব্যবসায়ীকে গুলি করে ১৫ লাখ টাকা নিয়ে গেছে। এছাড়াও রাজধানীর বিজয়নগর, উত্তরা, গুলশান, যাত্রাবাড়িতে একাধিক ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।
এ ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। ২-১টি ঘটনা ঘয়েছে। এছাড়াও নির্বাচনের এক প্রার্থীর লোকজন অন্য প্রার্থীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করে। মোটরসাইকেলে মহড়া চলে। তবে নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘনকারীরর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়। ছিনতাই ও খুনের ঘটনায় থানায় মামলা হলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান সংবাদকে জানান, অপরাধ এখন নিয়ন্ত্রণে আছে। অপরাধিদের ধরার জন্য পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত আছে। মাঝে মধ্যে ২-১টি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলে ও তার ক্লু উদ্ঘাটনে তদন্ত চলছে।

No comments:

Post a Comment