Monday, June 13, 2011

ফুটন্ত কড়াই by গওসল আযম

রব বিশ্বের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো তাদের ধর্ম একটি ইসলাম এবং ভাষা আরবি। একই ধর্ম এবং ভাষার কারণে, আরবদের ইস্পাত দৃঢ় ঐক্য থাকার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি শিক্ষাক্ষেত্রে অনগ্রসরতার কারণে। তাদের পশ্চাৎপদতার কারণে আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞান এবং নিত্যনতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন এবং প্রয়োগকে আত্মস্থ করতে ব্যর্থ হয়েছে। অথচ এদের মাটিতে জন্ম নিয়েছিল অনেক সভ্যতা।
এতদসত্ত্বেও এদের শিক্ষার অভাব এবং ধর্মের অভ্যন্তরে অনেক অপব্যাখ্যাকে পুঁজি করে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি তাদের স্বার্থকে অব্যাহতভাবে ধরে রাখার জন্য বিভক্ত করেছে। ইহুদি রাষ্ট্রের জন্মের পর থেকেই রাষ্ট্রটির কর্ণধাররা বলে আসছে, যুদ্ধ ছাড়া শান্তির প্রত্যাশা অমূলক। তাদের দর্শনের চালিকাশক্তি সাম্রাজ্যবাদী শক্তির অব্যাহত নির্লজ্জ সাহায্য এবং মারণাস্ত্রের সরবরাহ। তাদের তেল স্বার্থ সংরক্ষণের কারণে তারা বেহায়াভাবে ইরাকের মানববিধ্বংসী অস্ত্র আছে অজুহাত তুলে ইরাক আক্রমণ করে তাদের ক্রমঅগ্রসরমাণ অর্থনৈতিক অবস্থাকে বিপর্যস্ত করেছে। মেরেছে হাজার হাজার ইরাকি জনসাধারণ। আরবের রাজারা রাজতন্ত্রের রক্ষা, স্বৈরশাসকরা স্বৈরতন্ত্র রক্ষার জন্য আরব স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির পদলেহন করেছে। গণতন্ত্র, সৌভ্রাতৃত্ব, সমতা , ব্যক্তি স্বাধীনতা প্রভৃতির কথা সাম্রাজ্যবাদী শক্তি মুখে বললেও, আরব বিশ্বের জ্বালানি শক্তি যতদিন থাকবে, ততদিন তারা রাজতন্ত্র এবং স্বৈরশাসকদের সমর্থন দিয়ে যাবে। এ জন্য যে কোনো মূল্যে, ইহুদি রাষ্ট্রটিকে সম্মিলিত আরব শক্তির চেয়ে অব্যাহতভাবে শক্তিধর রাখবে। অন্য কথায়, আরব বিশ্বের তেল নিঃশেষ না হওয়া পর্যন্ত সাম্রাজ্যবাদী শক্তি আরব বিশ্বে গণতন্ত্রের হাওয়া বইতে দেবে না। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ বাহরাইনে স্বৈরশাসকের সমর্থনে সৌদি আরব সৈন্য পাঠিয়েছে গণতন্ত্রীদের দমনের জন্য। অন্যদিকে লিবিয়ার স্বেচ্ছাচারী শাসককে উৎখাত করার জন্য রাষ্ট্রসংঘ লিবিয়াকে নো-ফ্লাই জোন ঘোষণা করিয়ে নির্লজ্জভাবে বিদ্রোহীর সাহায্য করেছে আকাশ থেকে বোমা এবং স্থল থেকে কামান দাগাতে।
এখানে একটা কথা বলে রাখা যেতে পারে, আরবদের দাবিয়ে রাখার জন্য আমেরিকাকে সামরিক এবং অর্থশক্তি জোগান দিতে হয় ইসরায়েলকে। ইসরায়েলের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য ভারসাম্য বজায় রেখে অস্ত্র দিতে হয় আরব রাজশক্তি এবং কিছু কিছু স্বৈরশাসককে। অভিজ্ঞতা থেকে আশঙ্কা এই, অস্ত্রগুলো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত না হয়ে ব্যবহৃত হবে আরবের গণতন্ত্রকামী মানুষের বিরুদ্ধে এবং হয়েছেও তা-ই। বারাক ওবামা প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর দ্ব্যর্থহীনভাবে মধ্যপ্রাচ্যের শান্তির ব্যাপারে খোলামেলা আলোচনা শুরু করেছিলেন বিশ্বের মুসলমানদের আস্থাভাজন হওয়ার জন্য। মর্মস্পর্শী বক্তৃতা দিয়েছিলেন মিসরে। তারপর একদিন সম্ভবত মুখ ফসকে বলেছিলেন যে মধ্যপ্রাচ্যের শান্তির বীজ নিহিত ১৯৬৭ সালের যুদ্ধ-পূর্ববর্তী অবস্থায় ইসরায়েলের ফিরে যাওয়ায়। আর যায় কোথায়, শুরু হলো তার ওপর চাপ। এ চাপের প্রয়োগ করল আমেরিকার ইহুদি লবি। কারণ আমেরিকার সর্বস্তরে ইহুদিরা এত ক্ষমতাধর যে তারা দিনকে রাত আর রাতকে দিন করতে পারে। বারাক ওবামা মধ্যপ্রাচ্যের ব্যাপারে এখন বেশ নীরব। এরপরও তিনি মধ্যপ্রাচ্যে গণতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তার কথা বলতেন। কিন্তু ইসরায়েল বলল, মধ্যপ্রাচ্যে সামগ্রিকভাবে গণতন্ত্রের বিজয় ইসরায়েলের জন্য অশনিসংকেত। কারণ এতে ক্ষমতার বর্তমান ভারসাম্যের পরিবর্তন ঘটবে, যা ইসরায়েলের জন্য হবে মরণফাঁদ।
ওবামা নড়েচড়ে বসলেন, মোবারককে হটিয়ে তাদের পোষা লোকজনকে ক্ষমতায় বসালেন। ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট দেশত্যাগ করলেও ক্ষমতা পশ্চিমা বিশ্ব প্রভাবিত ব্যক্তিদের হাতে। তিউনিসিয়া এখন পশ্চিমা শক্তির তাঁবেদারদের হাতে। সিরিয়ার বাশার আল আসাদের ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার নেপথ্য শক্তি পশ্চিমারা বলে অনেকেই মনে করেন। অন্য কথায়, গণতন্ত্রের ধ্বজাধারীরা গণতন্ত্রের খেলা খেলবে। মধ্যপ্রাচ্যে সার্বিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করবে না যতদিন না মধ্যপ্রাচ্যের তেল সম্পদ নিঃশেষ হয়।

No comments:

Post a Comment