Monday, June 13, 2011

আলতাফ ও হাফিজ গ্রেপ্তার, অসহায় মানুষ, আতঙ্কে হরতালকারীরা

বিএনপি ও জামায়াতের খুব বেশি নেতা-কর্মী রাজপথে ছিলেন না। কারণ, ভ্রাম্যমাণ আদালতের ভয়। যাঁরা উপস্থিত ছিলেন তাঁরা স্বাভাবিকভাবে মিছিল-পিকেটিং করতে পারেননি। কারণ, র্যাব-পুলিশের অবস্থান ছিল কঠোর। রাজধানী ঢাকায় ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল ছিল না। দোকানপাট ছিল বন্ধ। তবে রিকশা, কিছুসংখ্যক অটোরিকশা, হিউম্যান হলার, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বাস চলাচল করেছে।

বিএনপি-জামায়াতের ডাকে ৩৬ ঘণ্টার টানা হরতালের প্রথম দিন গতকাল রোববারের সংক্ষিপ্ত চিত্র ছিল এমনই। আজ সোমবার সন্ধ্যা ছয়টায় এ কর্মসূচি শেষ হবে।
এরই মধ্যে চিকিৎসা, ব্যক্তিগত বা পেশাগত জরুরি কাজে যাঁদের বাইরে বেরোতে হয়েছে, তাঁদের দুর্ভোগের কোনো সীমা ছিল না। পরিবহনের অভাবে দীর্ঘ সময় বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে তাঁদের। অনেকে বেশি ভাড়া দিয়ে রিকশা বা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় যাতায়াত করেছেন।
হরতালের প্রথম দিনে গতকাল পুলিশ ও হরতাল-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে শতাধিক আহত হয়েছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে ৫৮ জনের। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আটক ব্যক্তিদের মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির দুই ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী ও হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ রয়েছেন। গাড়ি পোড়ানোর মামলায় রাতে তাঁদের দুজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
রাত ১২টায় গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম প্রথম আলোকে বলেন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী ও হাফিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট থানায় রয়েছেন।
একতরফাভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল, সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস মুছে ফেলা, মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে সুসম্পর্কের ধারা বিলুপ্তির অপচেষ্টা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির তীব্র সংকট, শেয়ার-বাজার ধস ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের অর্থ লুণ্ঠনের অভিযোগ তুলে দল দুটি এ হরতাল ডেকেছে। বিএনপি-জামায়াতের পাশাপাশি কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সংগঠনের মোর্চা সম্মিলিত উলামা-মাশায়েখ পরিষদও হরতালে সমর্থন দেয়।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়: হরতালের প্রথম প্রহর থেকে অবরুদ্ধ ছিল নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ২০ জনের মতো কেন্দ্রীয় নেতা দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান নেন। বাইরে থেকে কোনো নেতা-কর্মীকে সেখানে যেতে দেয়নি পুলিশ। আশপাশের এলাকা থেকে বিএনপির কর্মী সন্দেহে সারা দিনে অন্তত ৩৫ জনকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রহমান, মহিলা দলের সভাপতি নূরী আরা সাফা, যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সালাম আজাদ, কৃষক দলের শাহজাহান মিয়া প্রমুখ।
সকাল ছয়টার পর মির্জা ফখরুল ইসলামের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে দিনের প্রথম মিছিল বের করতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। এখানে জয়নুল আবদিন ফারুকের সঙ্গে পুলিশের বাগিবতণ্ডা ও ধস্তাধস্তি হয়। থামাতে গিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম মাটিতে পড়ে যান এবং ডান হাতে ব্যথা পান। পুলিশ সেখান থেকে আট নেতা-কর্মীকে আটক করে।
কিছুক্ষণ পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মিছিলে বাধা ও গ্রেপ্তার অব্যাহত থাকলে লাগাতার হরতাল দেওয়ার হুমকি দেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘পুলিশ যেভাবে আমাদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে, তা চলতে থাকলে প্রয়োজনে আমরা ৭২ ঘণ্টা ও সাত দিনের হরতাল দিতে বাধ্য হব।’ তিনি বলেন, কোনো ধরনের পিকেটিং ছাড়াই জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনে হরতাল পালিত হচ্ছে। জনগণই হরতাল সফল করছে।
সকাল নয়টার দিকে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের একজন হাকিম অবস্থান নেন। বেলা পৌনে ১১টার দিকে মহিলা দলের সভাপতি নূরী আরা সাফা দলীয় কার্যালয়ে যেতে চাইলে তাঁকে আটক করে পুলিশ। তাঁকে টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তোলার ছবি ক্যামেরায় ধারণের সময় সাংবাদিকদের বাধা দেন সাদা পোশাকের কয়েকজন পুলিশ সদস্য। তাঁদের সঙ্গে সাংবাদিকদেরও বাগিবতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে ফটোসাংবাদিকদের লাঠিপেটা করে পুলিশ। আহত হন চ্যানেল আইয়ের মঞ্জুরুল ইসলাম, এটিএন বাংলার মহসিন, দেশ টিভির শিবলী, এনটিভির তাপস ও কালের কণ্ঠ পত্রিকার রফিকুর রহমান।
পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে রাজপথে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন সাংবাদিকেরা। তাঁরা সড়কের ওপর ক্যামেরা ও খাতা-কলম রেখে প্রতিবাদ জানান।
সকাল সাড়ে আটটার দিকে নয়াপল্টনে লা-লুনা রেস্তোরাঁর কাছে দৈনিক আমার দেশ-এর অটোরিকশার চালক রফিকুল ইসলামকে পুলিশ পেটায়। তাঁকে ইসলামী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুরো দিনে বিএনপির কার্যালয়ের আশপাশে ছয়টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। এর মধ্যে সকাল সোয়া আটটায় ফকিরাপুল মোড়ের কাছে তিনটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। বেলা সোয়া ১১টার দিকে মহানগর কার্যালয়ের ছাদে দুটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। বেলা সোয়া একটায় বিএনপি অফিসের সামনে ফের আরেকটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়।
কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, জয়নুল আবদিন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, শহীদ উদ্দিন চৌধুরীসহ বেশকিছু নেতা-কর্মী তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
সকাল সাড়ে আটটার দিকে কাকরাইল মোড় থেকে যুবদলের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের নেতৃত্বে মিছিল বের হলে তাতে বাধা দেয় পুলিশ। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন ও নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিক শিকদারের নেতৃত্বে শান্তিনগর মোড় থেকে মিছিল বের হয়।
বেলা ১১টার দিকে শনির আখড়ায় সালাহ্ উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে শতাধিক নেতা-কর্মী একটি মিছিল বের করলে পুলিশ ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
বিকেলে হরতাল প্রসঙ্গে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম দাবি করেন, গতকাল বিকেল পর্যন্ত সারা দেশে বিএনপির সাত শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আহত হয়েছেন শতাধিক নেতা-কর্মী।
মিরপুর: মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় হরতালের সমর্থনে কাউকে মাঠে দেখা যায়নি। হরতালের বিপক্ষে দিনভর মিছিল ও মোটরসাইকেল মহড়া দিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। মিরপুর ও পল্লবী থানা আওয়ামী লীগের কার্যালয় মোহনা ভবনের সামনে দিনভর ছিল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ভিড়। ভবনটির সামনে দুই পাশের সড়কে প্রচুর মোটরসাইকেল পার্ক করা ছিল বিকেল পর্যন্ত। ওই সব মোটরসাইকেল নিয়ে কিছুক্ষণ পর পর হরতালবিরোধী মিছিল করেছেন নেতা-কর্মীরা। বেলা ১১টার দিকে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর থেকে হরতালবিরোধী প্রথম মোটরসাইকেল মিছিলটি বের হয়। এ মিছিলে ৩৫-৪০টি মোটরসাইকেল ছিল। প্রতিটি মোটরসাইকেলে তিনজন করে লোক ছিল। তারা হঠাৎ একসঙ্গে হর্ন বাজিয়ে স্লোগান দেওয়া শুরু করলে মানুষ কিছুটা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।
তবে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মিরপুর ১ নম্বরের ইয়াংসি চায়নিজ রেস্তোরাঁর সামনে একটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। কয়েক মিনিট পরই মিরপুর ১ নম্বর পুলিশ বক্স থেকে কয়েক গজ দূরে একটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। এ ঘটনা অনুত্তাপ হরতালে সামান্য উত্তাপ তৈরি করে। আওয়ামী লীগের কর্মীরা বোমাবাজির অভিযোগে দুই কিশোরকে আটক করে মারধর করে পুলিশে দেয়। পরে আবার আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারাই তাদের ছাড়িয়ে নেন। পুলিশ জানায়, তারা স্থানীয় রেস্তোরাঁর কর্মী ও শ্রমিক। ঘটনাস্থলে তাদের পেয়ে আওয়ামী লীগের কর্মীরা ধরে আনেন।
সকালে মিরপুর ১৩ নম্বরে দুটি বাস আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় অজ্ঞাত লোকজন। হারম্যান মেইনার স্কুলের সামনে একটি স্টাফবাস ও মিরপুর কমিউনিটি সেন্টারের সামনে মাইলাইন পরিবহনের একটি বাস সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়।
তবে দিনভর মিরপুর থেকে বিভিন্ন রুটের বাস চলাচল করেছে। সংখ্যায় ছিল খুব কম। হিউম্যান হলারগুলো নির্দিষ্ট রুটের বাইরে চলাচল করেছে। সকালে বিপুলসংখ্যক মানুষকে ভ্যান ও পিকআপে করে অফিসে যেতে দেখা গেছে। সকাল আটটা পর্যন্ত গাবতলীতে দু-একটি দূরপাল্লার বাস এসে পৌঁছায়। তবে ওই সব বাসের যাত্রীদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। ব্যাগ-বোঁচকা নিয়ে অনেককে দীর্ঘক্ষণ রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। গাবতলী থেকে কোনো বাস ঢাকার বাইরে ছেড়ে যায়নি।
মহাখালী: মহাখালীতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির দুই ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী ও হাফিজ উদ্দিন আহম্মদসহ ১৫ জনকে আটক করে পুলিশ। সকাল পৌনে ১০টার দিকে মহাখালীর সেতু ভবনের সামনে থেকে দুই নেতাকে পুলিশ ভ্যানে তুলে নিয়ে যায়।
এর আগে সকাল সোয়া নয়টায় মহাখালীর আমতলী এলাকা থেকে স্থানীয় যুবদলের নেতা-কর্মীরা মিছিল বের করলে পুলিশ লাঠিপেটা করে। এতে সাতজন আহত হন। ওই সাতজনকে আটক করেছে পুলিশ। বেলা সাড়ে নয়টায় তিতুমীর কলেজের বিপরীত পাশে মালঞ্চ রেস্তোরাঁর সামনে থেকে পুলিশ শিপু, জসীমউদদীন, মোশাররফ হোসেন নামের বিএনপির তিন কর্মীকে আটক করে। এ সময় আলতাফ হোসেন চৌধুরী ও হাফিজ উদ্দিনের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়।
গ্রেপ্তারের আগে আলতাফ হোসেন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, সরকার একতরফাভাবে সংবিধান সংশোধন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের ষড়যন্ত্র করছে। বিএনপি তা মেনে নেবে না। তাঁর অভিযোগ, সকাল থেকেই পুলিশ তাঁদের মালঞ্চ রেস্তোরাঁয় অবরুদ্ধ করে রেখেছে।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মালঞ্চ রেস্তোরাঁর সামনে থেকে সাদিয়া হক, রুনু, মাধু নামের বিএনপির তিন নারী কর্মীকে পুলিশ আটক করে। তবে সাদিয়া হক জানান, তিনি বাজার করতে বেরিয়েছিলেন। তাঁকে জোর করে ভ্যানে তুলেছে পুলিশ।
পুলিশের গুলশান অঞ্চলের ডিসি খন্দকার লুৎফুল কবির দাবি করেন, পিকেটিংয়ের অভিযোগে মহাখালী এলাকা থেকে নয়জনকে আটক করা হয়েছে।
সকাল থেকে মহাখালী এলাকায় কিছু বাস, মিনিবাস ও সিএনজি অটোরিকশা চলতে দেখা গেছে। সকাল সাড়ে নয়টায় তিতুমীর কলেজের সামনে থেকে হরতালের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি মহাখালী গিয়ে শেষ হয়।
ছাত্রলীগের মিছিলের সামনে ককটেল: ছাত্রদল রাজধানীর ফকিরাপুল এলাকা থেকে দুপুরে একটি মিছিল বের করার চেষ্টা করলেও র্যাব-পুলিশের মহড়ায় করতে পারেনি। তবে হরতালের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ছাত্রলীগ। চারুকলার সামনে সমাবেশ চলাকালে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় দুটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়।
ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ সাকিব অভিযোগ করেছেন, হরতালে যারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায়, তারাই এই কাজ করেছে। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম বলেছেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
জামায়াতের তৎপরতা: সকাল নয়টায় মতিঝিলের সেনাকল্যাণ ভবনের পাশ থেকে আচমকা মিছিল বের করে জামায়াত। সেখানেই তড়িঘড়ি সমাবেশ করে তারা দ্রুত সটকে পড়ে। দলের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য নূরুল ইসলাম বুলবুল সেখানে বলেন, পদত্যাগ করে মধ্যবর্তী নির্বাচন দেওয়া ছাড়া সরকারের সামনে আর কোনো উপায় নেই।
এর খানিক পর পুরানা পল্টনে কালভার্ট রোড থেকে আরেকটি মিছিল বের করে জামায়াত। দলের শ্যামপুর থানা কমিটি সকাল ১০টায় যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে মিছিল বের করে। মিছিলটি দোলাইরপাড় যাওয়ার পথে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়। এতে মিছিলের নেতৃত্বে থাকা থানা কমিটির আমির রুহুল কুদ্দুসসহ নয়জন আহত হয়। জামায়াতের অভিযোগ, ছাত্রলীগের কর্মীরা দুজনকে মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করেছে।
পল্লবীতে মিছিল করার চেষ্টা করলে জাহাঙ্গীর আলম, নূরুল আমীন, জামালউদ্দিন, হাবিবুল্লাহ, হাফেজ হোসাইনসহ ছয়জনকে আটক করে পুলিশ।
এ ছাড়া বেইলি রোড, মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরসহ বিভিন্ন এলাকায় হঠাৎ মিছিল বের করে জামায়াত। বেলা ১১টায় শাহজাহানপুরে একটি হিউম্যান হলারে আগুন দেয় দুষ্কৃতকারীরা।
জামায়াতের সংবাদ সম্মেলন: জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম অভিযোগ করেন, হরতাল বানচাল করার জন্য সরকার কেবল পুলিশ ও র্যাবকেই ব্যবহার করেনি, দলের ক্যাডারদেরও রাস্তায় নামিয়েছে।
গতকাল বিকেল চারটায় মগবাজারে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সকাল নয়টায় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার দোলাইরপাড়ে জামায়াত মিছিল বের করলে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালায়।
জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি বলেন, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য সরকার স্বৈরাচারী আইয়ুব খানের মতো ভ্রাম্যমাণ আদালত চালু করে তাৎক্ষণিক সাজা দিচ্ছে। এ পর্যন্ত জামায়াত-শিবিরের ১৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। দুপুর দুইটা পর্যন্ত সারা দেশে জামায়াত-শিবিরের ৬৯ জনকে পুলিশ আটক করেছে বলে দাবি করেন তিনি।
হরতালে জনদুর্ভোগ বাড়ছে কি না জানতে চাইলে আজহার বলেন, যত তাড়াতাড়ি এ সরকারের পতন হবে, জনদুর্ভোগ তত তাড়াতাড়ি কমবে।
সম্মিলিত উলামা-মাশায়েখ পরিষদ: বেলা পৌনে দুইটায় রাজধানীর সোনারগাঁও রোডে মিছিল বের করলে পুলিশ সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানী ও ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতি মাওলানা আহমদ আলীকে আটক করে।
পুরান ঢাকা: বেলা সোয়া একটার দিকে পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে হরতাল সমর্থনকারীরা একটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটালে এক পথচারী সামান্য আহত হন। সকালে পিকেটিং করার অভিযোগে আকবর হোসেন নামের এক যুবককে আটক করে পুলিশ।
হরতালবিরোধী মিছিল করেন কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সোহ্রাওয়ার্দী কলেজ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী ও সদরঘাটের ঘাট-শ্রমিকেরা। সকাল থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধান ফটক অবরোধ করে রাখেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

No comments:

Post a Comment